আরও ৫ জনের করোনা শনাক্ত

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যু হয়নি। এ পর্যন্ত দেশে করোনায় মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৪৪৬ জনের।
এদিন নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন পাঁচজন। সব মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৩৮ হাজার ২৫০ জন।

মঙ্গলবার (২ মে) বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনা বিষয়ক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, ঢাকা সিটিসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ও বাড়িতে উপসর্গ বিহীন রোগীসহ গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আটজন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ২০ লাখ পাঁচ হাজার ৬৭২ জন। সারা দেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৮৮৫টি ল্যাবে ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৩৯১টি এবং মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৩৯০টি। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে এক কোটি ৫৩ লাখ ৮৯ হাজার ৭৭৪টি।

গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার এক দশমিক ২৮ শতাংশ। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৮ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার এক দশমিক ৪৪ শতাংশ।

এতে আরও জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় তিনজন আইসোলেশনে এসেছেন এবং আইসোলেশন থেকে তিনজন ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ পর্যন্ত মোট আইসোলেশনে এসেছেন চার লাখ ৫২ হাজার ২৯২ জন। আইসোলেশন থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন চার লাখ ২৩ হাজার ৯৮ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ২৯ হাজার ১৯৪ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনা ভাইরাসের প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।

জাহাঙ্গীরের বিষয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না আ.লীগ: মায়া

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেছেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে জাহাঙ্গীর আলমের বিষয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না আওয়ামী লীগ।

মঙ্গলবার দুপুরে আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমন্বয় টিমের বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন।

মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ২৫ মে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন। এই নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাতির নির্বাচনের আগে এ নির্বাচন দেশবাসীর জন্য আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন সুষ্ঠু অবাধ হওয়ার জন্য আমাদের সবার ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, গাজীপুরের ভোটার সংখ্যা প্রায় ১২ লাখের কাছাকাছি, ৯টি থানা, ৪৮০ টি কেন্দ্র, ৫৭ ওয়ার্ড। একটা বিশাল এলাকা। নির্বাচন সুষ্ঠু অবাধ করতে গেলে বিশাল কর্মীবাহিনী দরকার। তাই আমরা গাজীপুরে সর্বস্তরের জনগণ, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতার পক্ষের সব মানুষকে আমরা ঐক্যবদ্ধ করে এই নির্বাচনে জয়লাভ করতে চাই। ভোটের মধ্য দিয়ে আমরা জয়লাভ করতে চাই৷ সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগ, আগুন সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে কেউ যেন নির্বাচনে ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য আমাদের কর্মীদের সতর্ক থাকতে হবে।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আওয়ামী লীগের সমন্বয় টিমের প্রধান সমন্বয়ক আরও বলেন, নির্বাচন পরিচালনার জন্য সেখানে আমাদের একটি কেন্দ্রীয় কার্যালয় থাকবে। সেখান থেকে আমরা এটা নির্বাচন পরিচালনা করব৷ নির্বাচন পরিচালনার জন্য থানা ভিত্তিক আমাদের কমিটি হবে। সেন্টার ভিত্তিকও কমিটি হবে। এবার স্তরে স্তরে আমরা কমিটিগুলো সাজাবো। ৪৮০ কেন্দ্রের মধ্যে বেশিরভাগ কমিটি হয়ে গেছে। আগামী ৯ তারিখের আগে নির্বাচনের সব কাজ আমরা শেষ করতে পারব বলে আশা করছি। প্রত্যেকে যেন ভোট দিতে পারে সেই ব্যবস্থা আমরা করতে চাই। আশা করি আমাদের নৌকার বিজয় হবে।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগের পরামর্শক ব্যয় বাড়লো ৩০১ কোটি টাকা

পদ্মা সেতু রেল সংযোগের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এর ফলে ৩০১ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয় বাড়ানো হয়েছে।

বুধবার (৩ মে) দুপুরে ভার্চ্যুয়ালি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় এ সংক্রান্ত প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান সাংবাদিকদের বলেন, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ’ প্রকল্পে নিয়োজিত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ আর্মি ইন অ্যাসোসিয়েশন উইথ বিআরটিসি, বুয়েটকে মেয়াদ ২০২৪ সালের মে পর্যন্ত বাড়ানোর জন্য ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ৩০১ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয় বাড়ানোর ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, এ ব্যয় বাড়ানোর ফলে এ খাতের মোট ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৪২ কোটি ২৭ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। মেয়াদ বাড়ানোর কারণেই এ ব্যয় বাড়ানো হয়েছে।

এদিকে গত ৪ এপ্রিল পরীক্ষামূলকভাবে পদ্মাসেতু পার হয় ট্রেন। প্রথম যে ট্রেনটি পদ্মা সেতু পার হয়, তার ইঞ্জিন আনা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। সেটি টেনে নিয়ে গেছে চীন থেকে আনা সাতটি কোচ। ইঞ্জিন ও কোচ ফরিদপুরের ভাঙ্গা প্রান্ত থেকে রওয়ানা হয় দুপুর ১টা ২১ মিনিটে। এরপর প্রথম স্টেশন মালিগ্রামসংলগ্ন বগাইলে পৌঁছায় ১টা ৪১ মিনিটে।

ট্রেনটি গড়ে ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার বেগে চলে। ২টা ১০ মিনিটে শিবচরের পদ্মা স্টেশনে এসে পৌঁছায়। ২টা ৪০ মিনিটে পদ্মা সেতুতে ওঠে। পদ্মা সেতু পার হতে ১৬ মিনিট লাগে ট্রেনের। সব মিলিয়ে ভাঙ্গা থেকে মাওয়া স্টেশন—এই ৪২ কিলোমিটার রেলপথে আসতে ট্রেনের সময় লাগে প্রায় দুই ঘণ্টা। এর আগে ভাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনে ফিতা কেটে পরীক্ষামূলকভাবে বিশেষ এ ট্রেন চলাচলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।

পরীক্ষামূলক উদ্বোধনের দিন রেলমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, পুরো প্রকল্পের অগ্রগতি ৭৫ শতাংশের বেশি। আর পুরো প্রকল্পকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। ঢাকা থেকে মাওয়া অংশের অগ্রগতি ৭৪ শতাংশ, মাওয়া থেকে ভাঙ্গা অংশের অগ্রগতি ৯২ শতাংশ এবং ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত অগ্রগতি ৬৮ শতাংশ। তবে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার অংশে আগামী সেপ্টেম্বর যাত্রীবাহী রেল চলাচলের আশা করছেন তিনি।

আগামী বছরের জুনে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেল চলাচল করবে। লেভেল ক্রসিংবিহীন এই রেলপথে ৩২টি রেল কালভার্ট, ৩৭টি আন্ডারপাস এবং ১৩টি রেল সেতুর কাজ শেষ হয়েছে। পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তের রেল স্টেশনসহ নতুন ১৪টি স্টেশন নির্মাণ এবং পুরোনো ছয়টি স্টেশন উন্নয়ন চূড়ান্ত পর্যায়ে।

সূপ্রীম কোর্ট নির্বাচনেব্যাপক কারচুপি,আওয়ামী পুলিশের তান্ডব

লিখেছেন এম ডি কামরুল হাসান

আজ বুধবার সূপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির মাধ্যমে শুরু হয়েছে। সূপ্রীম কোর্ট অডেটোরিয়ামের সমস্ত প্রবেশ পথ বন্ধ করে আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীরা এরপর নিজেদের ইচ্ছেমত ব্যালট পেপারে সিল মারতে থাকে। এক পর্যায়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবি দলের সমর্থকেরা এই বিষয়ে প্রতিবাদ করলে আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীরা ব্যাপক মারধর শুরু করে এবং পুলিশের মাধ্যমে উপস্থিত সাংবাদিক ও আইনজীবিদের উপর হামলে পড়ে। এই ঘটনায় বি এন পি নেতা জনাব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন মারাত্নক আহত হন এবং একইসাথে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের সাংবাদিকরা গুরুতর আহত হন। এডভোকেট আল ফয়সাল সিদ্দিকী তাঁর ফেসবুকের এক পোস্টে লিখেন যে,

২০-২৫ জন পুলিশ দিয়ে একজন আইনজীবীকে রাইফেলের বাট দিয়ে গরুর মতো পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়ে আপনারা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতে কি প্রতিষ্ঠা করলেন? ২০০-৩০০ জন সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীকে কয়েকশ পুলিশ দিয়ে বের করে ভোট কেন্দ্র দখল করে কি প্রতিষ্ঠা করলেন? আমি আল্লাহর কাছেও বিচার দিবো না। নিজের কষ্ট নিজের মধ্যে জমা রাখলাম।

এদিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অবিলম্বে বন্ধ করে নতুন করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। বুধবার বিকেল ৩টায় সুপ্রিম কোর্টের এনেক্স ভবনের সামনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য (নীল) প্যানেলের আয়োজনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা। সংবাদ সম্মেলনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য (নীল) প্যানেল থেকে সভাপতি প্রার্থী ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেছেন, ‘নতুন করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে হবে। সুপ্রিম কোর্ট বারের একটি ঐতিহ্য আছে। অবৈধভাবে কেউ নির্বাচনের নামে সুপ্রিম কোর্ট বারকে কলঙ্কিত করতে পারে না। সুপ্রিম কোর্ট বারে যেটা হচ্ছে সেটা কোনো নির্বাচন নয়। আমরা প্রধান বিচারপতির কাছে চার বার গিয়েছি। তিনি দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। অবিলম্বে সুপ্রিম কোর্ট বারে নির্বাচনের নামে এ অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করুন। আর যারা আইনজীবী ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেছে তাদের বিচার করতে হবে। আমাদের আন্দোলন চলবে। এটা কোনো নির্বাচন নয়, নতুন নির্বাচন দিতে হবে।

’জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য (নীল) প্যানেল থেকে সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘সারাদেশে যে নির্বাচন নেই তারই ধারাবাহিকতায় সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচনকে অবৈধভাবে কলঙ্কিত করছে সরকার সমর্থকরা। তারা নিজেরা ব্যালট ছাপিয়ে এনেছে। এতে আইনজীবীরা প্রতিবাদ জানিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট বারের ইতিহাসে এই প্রথম পুলিশ প্রবেশ করে আমাদের, আমাদের

বোনদের ও সাংবাদিকদের আহত করেছে।’

সংবাদ সম্মেলনে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন, আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব কায়সার কামাল, সমিতির সাবেক সম্পাদক বদরুদ্দোজা বাদল, সাবেক বিচারপতি ফয়সাল মাহমুদ ফয়েজী, বাংলাদেশ ল‘ইয়ার্স কাউন্সিলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জসীম উদ্দিন সরকার, ড. এ জেড এম ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সভাপতি আবদুল জব্বার ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজলসহ শতাধিক আইনজীবী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে মির্জা ফখরুল বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন (এসসিবিএ) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে ক্ষমতাসীন দলকে “অস্বাভাবিক চোর” বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “তাদের (আওয়ামী লীগের) লক্ষ্য একটাই, চুরি করা। আমরা সাধারণত তাদের ভোট চোর বলি। তারা জাতীয় নির্বাচনে এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও কারচুপি করে। এখন তারা সুপ্রিম কোর্ট ও ঢাকা বারে ভোট কারচুপি করেছে। আসলে, তারা অস্বাভাবিক চোর”। মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আওয়ামী লীগ চুরি ছাড়া কিছুই করে না। “তারা চুরি করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে এবং এটি তাদের পেশা এবং নেশা… তারা চুরির মাধ্যমে দেশের সম্পদও নষ্ট করেছে”।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীন দল ব্যাপক চুরি করে দেশের বিদ্যুৎ খাত ধ্বংস করেছে। সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচনের আগের রাতে (মঙ্গলবার রাতে) ভূয়া ও স্ট্যাম্পযুক্ত ব্যালট পেপার পাওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টে তোলপাড় শুরু হয়। “তারা (আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা) আমাদের সাতবারের নির্বাচিত সুপ্রিম কোর্ট বারের সেক্রেটারিকে (মাহবুবউদ্দিন খোকন) লাঞ্ছিত করে আহত করেছে”।

এ ঘটনায় মাহবুবউদ্দিন খোকনসহ বিএনপিপন্থী ১ হাজার আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলেও জানান তিনি। উল্লেথ্য, বুধবার সকাল ১০টার দিকে এসসিবিএ নির্বাচনে দুই দিনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। এ সময় কিছু বিএনপিপন্থী আইনজীবী একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তির নেতৃত্বে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের দাবিতে বিক্ষোভ করেন।

 

ধর্ম অবমাননা সংক্রান্ত রাষ্ট্রীয় আইনকে কটাক্ষ করার অভিযোগে ফৌজদারী আইনে মামলা

গত ২০ নভেম্বর ২০২২ এ রাজধানীর চিফ মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে “এথিস্ট এরা” নামক ম্যাগাজিনের সাম্প্রতিক সংখ্যাকে কেন্দ্র করে ম্যাগাজিনের সম্পাদক মোঃ আরমান হোসাইন সহ আরো ১৯ জন ব্যাক্তির বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার মামলা হয়েছে ফৌজদারী আইনের ২৯৫ ধারার অধীনে। মামলার বাদী মো ইয়াসিন আলম ভূঁইয়া। জানা গেছে এই ম্যাগাজিন দীর্ঘদিন ধরেই অনলাইন সহ অফলাইনে ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে ও বাংলাদেশের যে আইনসমূহ ইসলামী চেতনা ও মূল্যবোধকে গুরুত্ব দেয় সে-সমস্ত আইন ও বাংলাদেশ সরকারের বিরূদ্ধে ষড়যন্ত্র ও কুৎসা রটিয়ে আসছিলো। চীফ মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের ১৬ নং আদালতে বিচারক জনাব আহমেদ হুমায়ূন কবীর এই মামলাটিকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে সঙ্গায়িত করে পুলিশ বুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের পুলিশ সুপারের বরাবরে তদন্তের জন্যে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। জানা গেছে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেবার তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০২২। এদিকে এই মামলাকে ঘিরে গত কয়েক দিন ধরে কিছু এলাকায় চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা লক্ষ্য করা গেছে। মামলার নম্বর – সি.আর – ২৩৪/২০২২।

মামলার অন্য আসামীরা হলেন- তানভীর আহমেদ, কমল চন্দ্র দাস, জিশান তারভীর মোস্তফা, জোবায়ের হোসেন, এম ডি আসাদুজ্জামান খান রণি, জনি চন্দ্র সাহা, এম ডি মহিউদ্দিন মাসুদ, ইমরুল কায়েস,  মোঃ জাকির হোসাইন,  এমডি জহিরুল ইসলাম, রেদোয়ানুর রহমান, এম ডি রাসেল মিয়া, মোহাইমিনুল বিশ্বাস পারভেজ, আসিফ ইসলাম, কে এম মাহফুজুর রহমান, আবু বকর সিদ্দিক, জনি জোসেফ কস্তা, মোহাম্মদ মইন উদ্দীন চৌধুরী, মোঃ আল আমিন কায়সার, এবং এম ডি আব্দুল রাজ্জাক।

এই ব্যাপারে মামলার বাদী মোঃ ইয়াসিন আলম ভূঁইয়ার সাথে কথা বলা হলে তিনি তাঁর আক্রোশ প্রকাশ করেন মামলার বিবাদীদের বিপক্ষে। তিনি বলেন, “আমরা দেশের আইন মেনে মামলায় এসেছি। এরা শুধু যে ইসলামের বিপক্ষে বলে ক্ষান্ত হচ্ছে তা কিন্তু না, এরা একই সাথে বাংলাদেশ সরকার ও আমাদের প্রাণপ্রিয় আওয়ামী সরকারের আইন ও সংবিধান নিয়ে আক্রমণ করছে বিশেষ করে নাস্তিক ও সমকামীদের বিরূদ্ধে বাংলাদেশে যে প্রচলিত সুন্দর আইন-ব্যবস্থা আছে সেটাকে নষ্ট করবার পায়তাঁরা এই কাফিরদের। আওয়ামী সরকারের একজন সমর্থক ও কর্মী হিসেবেই বলছি যে এদের বিরূদ্ধে কঠোর আইনী ব্যবস্থা না নিলে খুব বিপদে পড়ে যাবেন  আমাদের নেত্রী ভবিষ্যতে।” তিনি আরো ইঙ্গিত দেন যে পুলিশ ও আদালত এই ব্যাপারগুলোতে যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে তৌহিদী জনতা নিজেরাই এই কুলাঙ্গারদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। “যথাযথ ব্যবস্থা” বলতে কী বোঝানো হচ্ছে জানতে চাইলে জনাব কাজী এই প্রশ্ন এড়িয়ে যান।

এইদিকে আদালত সূত্রে জানা যায় এই মামলাকে ঘিরে আদালত পাড়ায় ছিলো নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও উপচে পড়া ভীড়। আদালত পাড়ায় বাদীর সাথে যুক্ত হওয়া অনেকেই “নারায়ে তাকবীর আল্লাহ হু আকবর” ধ্বনিতে আদালত প্রাঙ্গন মুখরিত করে রাখেন।

পুলিশ সূত্র বর্তমানে এই ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা জানান। আসামী পক্ষের এইথিস্ট এরা ম্যাগাজিনের সাথে যোগাযোগ করে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

সরকারের তিন পদক্ষেপ ডলার সাশ্রয়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণ, সুদহার বৃদ্ধি, ঋণপ্রবাহ কমানো * ডলারের জোগান বাড়লেই অনেক সমস্যা কেটে যাবে -ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ

বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে দেশের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় মৌলিক তিনটি পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ডলার সাশ্রয়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণ, সুদহার বৃদ্ধি এবং সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির আওতায় ঋণপ্রবাহ কমানো।

এছাড়া আরও কিছু সহযোগী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তবে এর মধ্যে একটি উদ্যোগের কারণে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো ঠিক আছে। ভোগ্যপণ্যের চাহিদা কমানো হচ্ছে। এতে আমদানি ব্যয় কমানোর ফলে রিজার্ভে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। লোডশেডিংয়ের কারণে জ্বালানি আমদানি কমবে। এতেও ডলার সাশ্রয় হবে। অন্যদিকে বাজারে টাকার সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ার নীতি গ্রহণ করা হয়েছে।

ফলে আমদানি খাতে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদাও কমবে। তবে এতে বেসরকারি খাতের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা আছে। যা কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এদিকে ঋণের সুদের হার বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এতে ঋণের খরচ বেড়ে যাবে। ফলে ঋণপ্রবাহ কমবে।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, মূল সমস্যা ডলার। এখন ডলারের জোগান বাড়াতে হবে। এটি বাড়ানো সম্ভব হলেই অনেক সমস্যা কেটে যাবে। কিন্তু ডলারের জোগান বাড়াতে হলে প্রথমে পাচার বন্ধ করতে হবে। তারপর রেমিট্যান্সে হুন্ডি বন্ধ করতে হবে। তাহলে ডলারের জোগান বাড়বে।

এর পাশাপাশি আমদানি নিয়ন্ত্রণ, দেশের ভেতরে আমদানির বিকল্প পণ্য উৎপাদন ও বাজার তদারকি বাড়াতে হবে। তাহলে পণ্যমূল্য কমবে। এতে মূল্যস্ফীতির হারও সহনীয় হবে। কিন্তু ইতোমধ্যে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এতে বেসরকারি খাতের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ফলে কর্মসংস্থান কমবে, মানুষের আয়ও কমবে। যা মূল্যস্ফীতির আঘাতকে আরও বড় করে তুলবে স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষের কাছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে অর্থনৈতিক চাপ কমে আসবে। কেননা ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে পণ্যের দাম কমে যাবে। তখন অর্থনৈতিক চাপও কমবে।

এদিকে রিজার্ভ সাশ্রয় করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় কিছুটা কমানো সম্ভব হয়েছে। কিন্তু চাপ পুরোপুরি কমেনি। আমদানি ব্যয়ের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ হচ্ছে জ্বালানি খাতে। এ খাতে ব্যয় কমাতে লোডশেডিং করা হচ্ছে। জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ করা হয়েছে। ফলে জ্বালানি খাতে ডলার সাশ্রয় হবে।

সূত্র জানায়, করোনার পরে হঠাৎ পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে সব পণ্যের দাম বেড়ে যায়। একই সঙ্গে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা আরও বাধাগ্রস্ত হয়। এতে পণ্যের দামও বাড়ে। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ায় আমদানি ব্যয় বেড়ে যায় লাগামহীনভাবে। আমদানি ব্যয় যেভাবে বেড়েছে সেভাবে রপ্তানি আয় বাড়েনি।

এদিকে রেমিট্যান্স প্রবাহে ঘাটতি দেখা দেয়। এসব মিলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। এতে বাজারে ডলারের দাম হু-হু করে বাড়ছে। গত এক বছরের ব্যবধানে ডলারের দাম ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা থেকে বেড়ে ৯৪ টাকা ৪৫ পয়সায় উঠেছে। ওই সময়ে টাকার মান কমেছে ৯ টাকা ৬৫ পয়সা। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর হিসাবে টাকার মান আরও বেশি কমেছে।

দেশে এখন সবচেয়ে বড় সংকট বৈদেশিক মুদ্রার জোগানে। চাহিদা অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রার জোগান মিলছে না। ফলে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৩৫ কোটি ডলার ঘাটতি হচ্ছে। এ ঘাটতি মেটানো হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ডলার দিয়ে। এতে রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। গত বছরের আগস্টে রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলারে উঠেছিল। এখন তা কমে ৩ হাজার ৯৬০ কোটি ডলারে নেমে গেছে।

এদিকে আগামীতে আমদানির দেনা পরিশোধের চাপ আরও বাড়ছে। কেননা করোনার সময়ে যেসব এলসির বা বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ স্থগিত হয়েছিল সেগুলো এখন দিতে হচ্ছে। এতে চাপ আরও বাড়ছে। বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় করতে আমদানি নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এলসির ঊর্ধ্বগতি কমানো সম্ভব হয়েছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতেও নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

এতে আগামীতে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে বলে আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে রপ্তানি আয় বড় চ্যালেঞ্জে পড়তে যাচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ইউরোপের অর্থনীতিতে ধস নেমেছে। প্রায় সব দেশই সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করছে। ঋণের সুদের হার বাড়াচ্ছে। ইউরোর দাম কমে গেছে। এতে আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। ফলে তারা আমদানি কমানোর দিকে এগোচ্ছে। দেশে রপ্তানি আয়ের ৫৪ শতাংশ ইউরোপ থেকে আসে। ফলে এ খাতে বড় ধাক্কা আসতে পারে।

বেশি দামে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করায় দেশে এসে ওইসব পণ্য মূল্যস্ফীতির হার বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ খাতে মূল্যস্ফীতি কমাতে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে বাজারে টাকার প্রবাহ কমানোর নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে নীতি সুদের হার দুই দফায় কমানো হয়েছে। রপ্তানি ঋণের সুদের হার ১ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।

তবে এখনও ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়ানো হয়নি। তবে এ খাতেও ঋণের সুদের হার বাড়ানোর জন্য প্রচণ্ড চাপ আছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর। কেননা ব্যাংকে এখন আমানত কমে যাচ্ছে। আমানত বাড়াতে হলে সুদের হার বাড়াতে হবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ ও আমানতের ক্ষেত্রে ৯-৬ নীতি (ঋণের সুদ ৯ শতাংশ ও আমানতের সুদ ৬ শতাংশ) গ্রহণ করায় এখন ব্যাংকগুলো আমানতের সুদের হার বাড়াতে পারছে না। আমানতের সুদের হার বাড়লে ঋণের সুদের হারও বাড়াতে হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশে ঋণের সুদের হার কমিয়ে বা বাড়িয়ে ঋণপ্রবাহ বাড়ানো বা কমানো সম্ভব হয় না। কেননা গত দুই বছর ধরে ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তারপরও বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়েনি। করোনার সময় কিছু খাতে প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে ৪ শতাংশ সুদে জামানতবিহীন ঋণ দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেগুলোতেও ঋণপ্রবাহ বাড়েনি।

সাম্প্রদায়িক অপশক্তির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বিএনপি: তথ্যমন্ত্রী

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির প্রধান পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে বিএনপি। সাম্প্রদায়িকতাকে সমূলে বিনাশ করতে হলে এই সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে যারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়, সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে যারা রাজনীতি করে তাদের চিরতরে বর্জন করতে হবে।

শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে ২০০৩ সালে বাঁশখালীর সাধনপুরে সংখ্যালঘু পরিবারের ১১ জনকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় বেঁচে যাওয়া তিনজনের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর ৪৫ লাখ টাকার চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন- বাঁশখালী আসনের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান।

এরপর দুপুরে তথ্যমন্ত্রী মহানগরীর ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় সংরক্ষণে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অবৈধ দখলদারমুক্ত পাহাড়ি ভূমিতে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠনের পর সমগ্র দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর তাণ্ডব চালিয়েছিল। সেই তাণ্ডবের প্রেক্ষিতে সারা দেশ থেকে পালিয়ে আসা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য ঢাকায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আশ্রয় কেন্দ্র খুলতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা কোটালিপাড়া থেকে শুরু করে বরিশালের বানারিপাড়া, মাগুরাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হয়েছে।

তিনি বলেন, নৌকায় ভোট দেওয়ার অপরাধে বাড়ি দখল করে রাতারাতি সেই বাড়ির মধ্যে পুকুর খনন করা হয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষকে ঘরবাড়ি থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। তাদের অপরাধ ছিল তারা অসাম্প্রদায়িক দল আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। বাঁশখালীতেও একই অপরাধে তৎকালীন সংসদ সদস্যের নিকটাত্মীয় বিএনপি নেতা আমিন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে অগ্নিকাণ্ড ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সেদিন সংসদ সদস্যের দায়িত্বে যিনি ছিলেন তিনি এই দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান এ দেশে থাকতে পারে না, সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে সমূলে বিনাশ করতে হবে, তাহলে রাষ্ট্র এগিয়ে যাবে। সাম্প্রদায়িকতার কারণে পাকিস্তান রাষ্ট্র আজকে এগোতে পারছে না। যেখানেই সাম্প্রদায়িকতা আছে সেখানেই রাষ্ট্র এগোতে পারে না।

তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আপনারা জানেন কারা সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে রাজনীতি করে। যারা রাষ্ট্রটাই চায়নি। জামায়াতে ইসলাম বিএনপির প্রধান সহযোগী। তাদের যে ২২ দলের রাজনৈতিক জোট, সেখানে বহু দল আছে যাদের নেতারা আফগানিস্তান গিয়েছিল।

মন্ত্রী বলেন, আদালতের মারপ্যাঁচ ও বিএনপির অনীহাসহ সবকিছু মিলিয়ে আমরা সরকার গঠনের পরও বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হতে ৪০ বছরের মতো সময় লেগেছে। বাঁশখালীর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচারের ক্ষেত্রেও এত দীর্ঘসূত্রিতা কাম্য নয়।

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে মাদার অব হিউমিনিটি উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, যেখানেই মানবতা লঙ্ঘিত হয়েছে সরকারে থাকেন বা না থাকেন তিনি সেখানে ছুটে গেছেন। মিয়ানমারের শরণার্থীদের জন্য বাংলাদেশের দুয়ার খুলে দিয়েছেন। রোহিঙ্গা রিফিউজিদের খাদ্য, চিকিৎসাসহ সমস্ত সুযোগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীকে ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অশালীন, অভব্য এবং প্রাণঘাতী হুমকিস্বরূপ লেখা ও মন্তব্য ছাঁপানোর জের ধরে ডিজিটাল আইনে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-কে নিয়ে দৈনিক নবযুগ নামক একটি অনলাইন পত্রিকায় কটূক্তি ও হত্যার হুমকি প্রদানের দায়ে গত ৩রা অক্টোবর লক্ষীপুরের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (আমলী) আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ বেলায়েত হোসেন (ক্ষমতাপ্রাপ্ত)  ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর অধীনে মামলা গ্রহণ করে আমলে নিয়ে আদেশ জারী করা হয়। আওয়ামী লীগ এর তৃণমূল পর্যায়ের কর্মী ও সমর্থক মোঃ হৃদয় কাজী বাদী হয়ে গত ২৩শে সেপ্টেম্বর ২০২১ এ মামলাটি দায়ের করেন (মামলার নংঃ সি.আর. ৪৭৭/২০২১) যার শুনানী হয় ৩রা অক্টোবরে। উক্ত মামলাতে লেখক, প্রকাশক ও সকল বক্তব্য প্রদানকারীকে আসামী করে মোট ৪৭ জনের বিরুদ্ধে এ মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।

অভিযুক্তদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন – ইসরাত রশিদ (৩৬, সম্পাদক, দৈনিক নবযুগ), জনি জোসেফ ডি কস্তা(৩২, সহ-সম্পাদক, দৈনিক নবযুগ), নুরুল হুদা(২৯, সিনিয়র সহ-সম্পাদক, দৈনিক নবযুগ),  নূর মুহাম্মাদ (সিনিয়র উপদেষ্টা, দৈনিক নবযুগ), আলী আমিন (৩৯, প্রকাশক, দৈনিক নবযুগ), পীরজাদা তানভীর আহমেদ (২৪),  মোহাম্মাদ শহীদুল ইসলাম জায়গীরদার(৩৬), মোঃ আব্দুল রাজ্জাক (২৭), মোঃ মাসুম সাজ্জাদ (৩২), আরিফুল হক আরিফ (২৬), মোঃ জাকির হোসাইন (২৯),  মোঃ রাজিম হোসাইন (৩০), শিপলু কুমার বর্মন (৪২),  মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান, আবু সাঈদ (২৫), মোঃ আল-আমিন কায়সার (৩১),  এম.ডি মারাজ মিয়া (২৭), এম.ডি শাইম (২০),  আহসানুল কবির (৩৫), এমডি তোফায়েল হোসাইন, মোঃ শহীদুল ইসলাম (৩৮), সামিউজ্জামান সিদ্দীক (৪০), এম.ডি সাব্বির হোসাইন (৪০, সম্পাদক, পোর্টাল বাংলাদেশ), এম.ডি জহিরুল ইসলাম (৩৩), আল মাহফুজ (২৪), এম.ডি ওবায়দুর রহমান খান, মোঃ আরাথ হোসেন রনি (২৯), উম্মা কুলসুম নার্গিস বানু (৩৯), নুরুল ফারুক শাকের (৩৫), মোহাম্মাদ নিজামুল হক (৪৬), মোহাম্মদ ফাহিদুল আলম, মোঃ মিজানুর রাহামান, এমডি কানজিদ হাসান সহ আরো অনেকে।

এ মামলার বিষয়ে বাদীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি আমাদের এ প্রতিবেদককে জানান, “এই মামলার আসামীরা প্রত্যেকে দীর্ঘদিন যাবত অনলাইনে সরকার তথা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র ও প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় তারা দৈনিক নবযুগ নামক একটি অনলাইন পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন ছাঁপায় মার্চ ২০২১-এ। সেখানে তারা যাবতীয় কুৎসিত বানোয়াট এবং অসত্য কথা লিখেছিল কিছু সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে যে ব্যাপারে আমি কথা বলতে চাইনা এবং যার প্রেক্ষিতে বোধহয় তাদের বিরূদ্ধে যথোপযুক্ত একটা মামলাও হয়েছিল। সে মামলার ব্যাপারে সঠিক আইনানুগ ব্যবস্থা না নিয়ে এই পত্রিকা আরো একটি লেখা ছাঁপে বেশ কিছু মন্তব্যসহকারে মে-মাসে যেখানে সাধারণ মানুষ ও সংবাদমাধ্যমের বাকস্বাধীনতা রোধ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয় আগের মামলার জের ধরে। মামলা কোর্টে মোকাবিলা না করে গণমাধ্যমে বিচারালয় বসিয়ে দিয়েছে। আর সে লিখাগুলোতে এবং মন্তব্যে সরাসরি আমাদের মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে এবং আমাদের জাতির ঋণ যে পরিবারের কাছে – সে শেখ পরিবারকে নিয়ে যাচ্ছেতাই কথাবার্তা লিখা হয়েছে, প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে। এই প্রতিবেদনে আমাদের সকলের প্রাণপ্রিয়, জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গবন্ধু কন্যা, দেশনেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের কটূক্তি ও মানহানিকর বক্তব্য প্রদান করেছে।”

তিনি আরো বলেন, “তারা শুধু কটূক্তিই করেনি, বরং দেশনেত্রী শেখ হাসিনার সরকার ও তাঁর সমগ্র পরিবারকে উচ্ছেদ করার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছে। যা খুবই ভয়ঙ্কর, আমাদের বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের একটা অংশ ও এতে করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ণ হয়েছে। এসকল লেখকেরা দেশের বিরুদ্ধে নিরন্তর ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। এবং এটি এক ধরনের মহামারি আকার ধারণ করার আগেই বন্ধ করে দিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা উচিত। এজন্যই বিষয়টিতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই মামলাটি করেছি।”

আদালত সূত্রে জানা যায়, মামলাটি দায়ের হওয়ার পর বিজ্ঞ আদালত কমলনগর থানার ওসিকে ৩০ দিন সময় দিয়েছেন মামলার তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার জন্যে।  আগামী ২০শে ডিসেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানীর তারিখ ধার্য করা হয়েছে।

কমলনগর থানার সাথে যোগাযোগ করা হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমাদের প্রতিবেদককে জানান, “অভিযোগ আসার পর থেকেই আমরা দ্রুততার সাথে কাজ করছি। আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পরপরই আমরা একটি ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। আশা করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ তদন্ত সম্পন্ন করতে সক্ষম হবো। আমাদের কাছে বিস্তারিত তদন্ত রিপোর্ট আসলে গণমাধ্যমের মাধ্যমে সবাইকে এ বিষয়ে অবহিত করতে পারবো।”

এ বিষয়ে অভিযুক্তদের সাথে আমাদের এ প্রতিবেদক যোগাযোগ করে তাদের বক্তব্য তুলে ধরার চেষ্টা করলে তাদের কারো সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।

প্রধানমন্ত্রীকে ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নোংরা মন্তব্যের জের ধরে ডিজিটাল আইনে মামলা

বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-কে নিয়ে দৈনিক নবযুগ নামক একটি অনলাইন পত্রিকায় কটূক্তি ও হত্যার হুমকি প্রদানের দায়ে গত বৃহষ্পতিবার চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইবুন্যাল  আদালতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বাদী হয়ে আইনজীবী ও বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ (চট্টগ্রাম) এর সদস্য রাসেল সরকার মামলা দায়ের করেন (মামলার নংঃ ৩২/২০২১)। উক্ত মামলাতে লেখক, প্রকাশক ও সকল বক্তব্য প্রদানকারীকে আসামী করে মোট ২৯ জনের বিরুদ্ধে এ মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।

এ মামলায় অভিযুক্তরা হলেনঃ  ইসরাত রশিদ (সম্পাদক, দৈনিক নবযুগ), আলী আমিন (প্রকাশক, দৈনিক নবযুগ), জনি জোসেফ ডি কস্তা (সহ-সম্পাদক, দৈনিক নবযুগ), নুরুল হুদা (সিনিয়র সহ সম্পাদক, দৈনিক নবযুগ), নূর মোহাম্মদ (উপদেষ্টা), মোঃ শহীদুল ইসলাম, শিপলু কুমার বর্মণ, আবু বকর সিদ্দিকী, মুকিত চৌধুরী, মোঃ আব্দুল রাজ্জাক,  কাজী মোশাররফ হোসাইন, আহসানুল হুদা সরকার, এম ডি শাইম, মোঃ জাকির হোসাইন, মিজানুর রহমান, মুসা আহমেদ জায়গীরদার, আহসানুল কবির, নুরুল ফারুক শাকের, মোঃ রাজিম হোসাইন, আরিফুল হক আরিফ, মোঃ মারাজ মিয়া, মোঃ আশিফ হোসাইন, সুবর্ণা রহমান, মোঃ মাসুম সাজ্জাদ, মুমিনুর রাজা চৌধুরী, মোঃ শহীদুল ইসলাম জায়গীরদার, আবু সাঈদ, মোঃ আল-আমিন কায়সার, এবং আব্দুল ওয়াহিদ চৌধুরী ।

এ মামলার বিষয়ে বাদী রাসেল সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি আমাদের এ প্রতিবেদককে জানান, “এই মামলার আসামীরা প্রত্যেকে দীর্ঘদিন যাবত অনলাইনে সরকার তথা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র ও প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় তারা দৈনিক নবযুগ নামক একটি অনলাইন পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন ছাঁপায় মার্চ ২০২১-এ। সেখানে তারা যাবতীয় কুৎসিত বানোয়াট এবং অসত্য কথা লিখেছিল কিছু সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে যে ব্যাপারে আমি কথা বলতে চাইনা এবং যার প্রেক্ষিতে বোধহয় তাদের বিরূদ্ধে যথোপযুক্ত একটা মামলাও হয়েছিল।

সে মামলার ব্যাপারে সঠিক আইনানুগ ব্যবস্থা না নিয়ে এই পত্রিকা আরো একটি লেখা ছাঁপে বেশ কিছু মন্তব্যসহকারে যেখানে সাধারণ মানুষ ও সংবাদমাধ্যমের বাকস্বাধীনতা রোধ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয় আগের মামলার জের ধরে। মামলা কোর্টে মোকাবিলা না করে গণমাধ্যমে বিচারালয় বসিয়ে দিয়েছে। আর সে লিখাগুলোতে এবং মন্তব্যে সরাসরি আমাদের মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে এবং আমাদের জাতির ঋণ যে পরিবারের কাছে – সে শেখ পরিবারকে নিয়ে যাচ্ছেতাই কথাবার্তা লিখা হয়েছে, প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে। এই প্রতিবেদনে আমাদের সকলের প্রাণপ্রিয়, জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গবন্ধু কন্যা, দেশনেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের কটূক্তি ও মানহানিকর বক্তব্য প্রদান করেছে।

তারা শুধু কটূক্তিই করেনি, বরং দেশনেত্রী শেখ হাসিনার সরকার ও তাঁর সমগ্র পরিবারকে উচ্ছেদ করার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছে। যা খুবই ভয়ঙ্কর, আমাদের বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের একটা অংশ ও এতে করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ণ হয়েছে। এসকল লেখকেরা দেশের বিরুদ্ধে নিরন্তর ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। এবং এটি এক ধরনের মহামারি আকার ধারণ করার আগেই বন্ধ করে দিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা উচিত। এজন্যই বিষয়টিতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই মামলাটি করেছি।”

আদালত সূত্রে জানা যায়, মামলাটি দায়ের হওয়ার পর বিজ্ঞ আদালত সিএমপিকে আগামী জুলাই মাসের মধ্যে এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ৬ই জুনের শুনানিতে।

সিএমপির -এর সাথে যোগাযোগ করা হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমাদের প্রতিবেদককে জানান, “অভিযোগ আসার পর থেকেই আমরা দ্রুততার সাথে কাজ করছি। আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পরপরই আমরা একটি ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। আশা করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ তদন্ত সম্পন্ন করতে সক্ষম হবো। আমাদের কাছে বিস্তারিত তদন্ত রিপোর্ট আসলে গণমাধ্যমের মাধ্যমে সবাইকে এ বিষয়ে অবহিত করতে পারবো।”

এ বিষয়ে অভিযুক্তদের সাথে আমাদের এ প্রতিবেদক যোগাযোগ করে তাদের বক্তব্য তুলে ধরার চেষ্টা করলে তাদের কারো সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।

আল জাজিরা সম্পর্কিত প্রবন্ধ প্রকাশের অভিযোগে রাষ্ট্রদোহীতার মামলায় অভিযুক্ত ২৮ঃকঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আহবান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রালয়কে

আল-জাজিরা ও মুশতাক আহমদ এর কারাগারে মৃত্যুকে কেন্দ্র করে প্রতিক্রিয়া দেশে-বিদেশে  এখনো চলমান। এ-দুটো বিষয়ে প্রবাসী বাংলাদেশীদের মন্তব্য আহবান করে অনলাইন সংবাদপত্রিকা দৈনিক নবযুগ ফেব্রুয়ারীর ২৭ তারিখে। ২২শে মার্চ  ‘আল জাজিরার তথ্যচিত্র, কারাগারে মুশতাকের মৃত্যু ও প্রবাসীদের ভাবনা’ প্রকাশ করে দৈনিক নবযুগ যেখানে অশ্রাব্য ভাষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিচার বিভাগের বিচারকদের বিশেষ করে সাইবার ট্রাইনবুন্যালের বিচারককে আক্রমণ করা হয় এবং হত্যার হুমকি দেয়া হয়। সবচেয়ে আতঙ্ক-জাগানিয়া ব্যাপার ছিল এই লেখায় অনেকেই মত প্রকাশ করেন যে বাংলাদেশে বহির্বিশ্বের বহিরাক্রমণ করা উচিত আওয়ামী সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করবার জন্যে যা নিশ্চিতভাবেই রাষ্ট্রের স্বাধীনতা খর্ব করবে এবং রাষ্ট্রদোহীতার দোষে এরা প্রত্যেকেই দোষী।
 
 

এই পর্যবেক্ষণের সাথে সম্পূর্ণভাবে সহমতকারী এডভোকেট মোঃ রবিউল আলম জুয়েল, যিনি বঙ্গবন্ধু আইন ছাত্র পরিষদ এর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক, বাদী হয়ে গত ২৮ মার্চ রাজধানীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে  রাষ্ট্রদোহীতা ও অন্যান্য অভিযোগে ফৌজধারী আইনের আওতায়  দৈনিক নবযুগ-এর প্রকাশক, সম্পদাক ও উক্ত প্রবন্ধে প্রমুখ মন্তব্যকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

মামলার অভিযোগ প্রসঙ্গে বাদীপক্ষের আইনজীবী এডভোকেট আপেল সাহেব বলেন – ‘এধরণের প্রকাশিত বক্তব্য বাংলাদেশের জন্যে খুবই ক্ষতিকর। বাংলাদেশীদের বিভিন্ন ইস্যুতে অভিযোগ থাকতেই পারে। কোনো সরকার-ই সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। কিন্তু বহিরাক্রমণের জন্যে আন্তর্জাতিক মহলকে এভাবে উন্মুক্তভাবে তদবির করা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা অসীম নয়। এটি একটি কোয়ালিফায়েড অধিকার। রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব এইক্ষেত্রে সবসময় অগ্রাধিকার পাবে। আমি মনে করি এটী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মামলা এবং আমরা আনন্দিত যে বিজ্ঞ আদলাত এই মামলা গুরুত্ব অনুধাবন করে এটি আমলে নিয়েছেন এবং আমরা এখন ডিসি অফিসের সহযোগিতায় এই মামলার তদন্ত পর্যায়ে যাবো আশা করছি।’

আদালত সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে বাদীর জবানবন্দী গ্রহণ করে এবং প্রাসঙ্গিক অভিযোগ পর্যালোচনা করে অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটান  ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ হাসিবুল হক মামলাটি আমলে নেন (সি.আর. – ১২০/২০২১) এবং  বাদীপক্ষকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রালয়কে অন্তর্ভুক্ত করে অভিযোগ পুনর্গঠন ও জমা দেয়ার আদেশ দিয়েছেন।  

  দৈনিক নবযুগ এর সম্পাদক ইসরাত রশিদ সংক্ষিপ্ত জবাবে জানান – ‘আমরা একটি মন্তব্য জরিপ চালিয়েছি এবং এই মন্তব্য জরিপে প্রবাসী বাংলাদেশীদের দৃষ্টিভঙ্গী উঠে এসেছে। নিজের দেশের নাগরিকদের মন্তব্য আওয়ামী সরকার ও এর সমর্থকদের ভালো না-ই লাগতে পারে, কিন্তু এর মানে তো এ নয় যে – সরকার ও বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয়ে মানুষ তাদের নিজেদের চিন্তা মুক্তভাবে তুলে ধরতে পারবেনা! বাংলাদেশে মুক্তচিন্তার স্বাধীনতা তীব্রভাবে সঙ্কুচিত এবং এই ধরণের মামলা সুস্থ ও অবাধ সাংবাদিকতার পরিপন্থী!’  

এটি পরিলক্ষিত যে এই প্রবন্ধে বেশ কিছু বিএনপি-জামায়াত এর নেতা-কর্মী-সমর্থকদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে মন্তব্য-জরিপে এবং আওয়ামী লীগ বা সরকার-সমর্থিত কোনো মন্তব্য দেখা যায়নি।  আদালত ফাইলের নথি ঘেটে দেখা যায়  মামলার বিবাদীরা হলেন – শিপলু কুমার বর্মণ, ইসরাত রশিদ (সম্পাদক, দৈনিক নবযুগ), আলী আমিন (প্রকাশক, দৈনিক নবযুগ), জনি জোসেফ ডি কস্তা (সহ-সম্পাদক, দৈনিক নবযুগ), নুরুল হুদা (সিনিয়র সহ সম্পাদক, দৈনিক নবযুগ), মুকিত চৌধুরী, মোঃ ইমরান হোসাইন, বিপ্লব পাল, নূর মিয়া, আহসানুল হুদা সরকার, মোঃ জাকির হোসাইন, মিজানুর রহমান, উম্মা কুলসুম নার্গিস বানু, আহসানুল কবির, নুরুল ফারুক শাকের, মো; বিন রাজিম, মোঃ রুকন মিয়া, মোঃ আশিফ হোসাইন, মোঃ মাসুম সাজ্জাদ, মোঃ আরাথ হোসেন রনি, মোঃ শহীদুল ইসলাম জায়গীরদার, মোঃ ওবায়দুর রহমান খান, মোঃ আল-আমিন কায়সার, মোঃ সাব্বির হোসাইন প্রমুখ।

মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়-এর জবাব প্রাপ্তির পর।