কম খরচের বিয়েতে বেশি কল্যাণ

নিকাহ আরবি শব্দ। এর বাংলা হচ্ছে বিবাহ। আভিধানিক অর্থে বিবাহ বলে, একত্রিত হওয়া, নারী পুরুষ মিলিত হওয়া। ইসলামি পরিভাষায় যাদের সঙ্গে বিবাহ বৈধ এমন একজন পুরুষ ও একজন নারীর মধ্যে নির্ধারিত শব্দের আদান-প্রদানের মাধ্যমে দু’জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে যে চুক্তি সম্পাদিত হয়, যার মাধ্যমে দু’জনের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কায়েম হয়, যৌন সম্পর্ক বৈধ হয়, একজন আরেকজনের ওপর সুনির্দিষ্ট অধিকার লাভ করে এবং একজনের জন্য অপর জনের ওপর কিছু দায়-দায়িত্ব বর্তায় তাকে বিবাহ বলে।

বিবাহ আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ এক নেয়ামত। এর মাধ্যমে সমাজ গড়ে উঠে। মুসলমানদের ইমানের পূর্ণতা পায়। চারিত্রিক আত্মরক্ষা সম্ভবপর হয়। উত্তম চরিত্র গঠনে সহায়ক হয়। আদর্শ পরিবার গঠনে ভূমিকা রাখে। মানুষের জৈবিক চাহিদা পূরণের সুযোগ হয়। শারীরিক এবং মানসিক প্রশান্তি লাভের ব্যবস্থা হয়। সর্বোপরি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নতের অনুসরণ করা হয়।
এ প্রসঙ্গে কোরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেন, আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো- তিনি তোমাদের মধ্য থেকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জীবনসঙ্গিনী, যাতে তোমরা তাদের নিকট প্রশান্তি লাভ করতে পারো এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। -সুরা রুম, আয়াত ২১।

হাদিসে এসেছে, হজরত আয়েশা রা. থেকে  বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  ইরশাদ করেন, বিয়ে আমার সুন্নত, যে আমার সুন্নত অনুযায়ী আমল করে না, সে আমার দলভুক্ত নয়। তোমরা বিয়ে করো। কেননা আমি উম্মতের সংখ্যা নিয়ে হাশরের মাঠে গর্ব করব। -ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৮৪৬।

অন্য হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নারীকে বিবাহ করা হয় চারটি জিনিস দেখে। তার সম্পদ দেখে, বংশমর্যাদা দেখে। রূপ দেখে এবং দ্বীনদারি দেখে। (হে মুমিন!) তুমি দ্বীনদার নারী বিবাহ করে ধন্য হয়ে যাও। – বুখারি, হাদিস ৫০৯০।

বর্তমান আমাদের সমাজের বিয়েগুলোর দিকে লক্ষ করলেই দেখা যায়, বিবাহ অনর্থক খরচাপাতিতে পরিপূর্ণ। অথচ বিবাহে অতিরিক্ত খরচ ও অত্যধিক চাহিদার কারণে অনেক সময় পারিবারিক অশান্তি ও অকল্যাণ দেখা দেয়। কখনো কখনো বৈবাহিক সম্পর্ক ভেঙে যায়। তাই ইসলাম বিবাহে অধিক খরচ করাকে পছন্দ করে না।

হাদিসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে বিয়ে যত সহজ এবং স্বল্পব্যয়ী হয় সে বিয়ে ততই শান্তি ও বরকতময় হয়। – মিশকাত, হাদিস নং ১৯৫৮।

সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘোষণা অনুযায়ী বিয়েতে যতটুকু খরচ না করলেই নয়, ঠিক সে পরিমাণ ব্যয় করা আবশ্যক। এতেই রয়েছে সবচেয়ে বেশি কল্যাণ ও বরকত।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিয়ানমারের শায়খুল হাদিসের ইন্তেকাল

বাংলাদেশের কক্সবাজারে অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিয়ানমারের প্রবীণ আলেম ও শায়খুল হাদিস মুফতি কারি মুহাম্মদ ইরশাদ হুসাইন কাসেমি ইন্তেকাল করেছেন। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ১১০ বছর। তিনি ছিলেন মংডুর অধিবাসী।

মুফতি ইরশাদ হুসাইন ১৯৬৫ সালের আগ পর্যন্ত মিয়ানমারের সরকারি রেডিওতে কোরআন তিলাওয়াত করতেন বলেও জানা যায়। রাখাইন অঞ্চলে সরকারি বাহিনী অভিযান শুরু করা এবং নিজ দেশের নাগরিকত্ব হারানোর পর তিনি বাংলাদেশে আশ্রয় নেন।

মুফতি ইরশাদ হুসাইন কাসেমি ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া সম্পন্ন করেন এবং আরাকানের মংডুতে অবস্থিত জামিয়া আশরাফিয়ায় কর্মজীবন শুরু করেন। একসময় শায়খুল হাদিস পদে উন্নীত হন। এ ছাড়া তিনি ক্যালিগ্রাফিশিল্পে পারদর্শী ছিলেন।

তিনি সোমবার দুপুর ২টায় বালুখালি আশ্রয় শিবিরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এবং মঙ্গলবার সেখানেই তাঁর জানাজা সম্পন্ন হয়।

জমাদিউল আউয়াল মাসের তাৎপর্য ও আমল

শীত ও গ্রীষ্ম খোদা প্রদত্ত প্রকৃতির অবদান। এর প্রতিটিতে রয়েছে কুদরতের নিদর্শন ও নিগূঢ় রহস্য। কোরআন করিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যেহেতু কুরাইশদের অনুরাগ রয়েছে! তাদের আগ্রহ আছে শীত ও গ্রীষ্মে ভ্রমণের। অতএব তাদের ইবাদত করা উচিত এই (কাবা) গৃহের রবের। যিনি তাহাদিগকে ক্ষুধায় অন্ন দান করেন এবং শঙ্কায় নিরাপত্তা দান করেন।’ (সুরা-১০৬ কুরাইশ, আয়াত: ১-৪)।

আরবের শীতকাল জমাদিউল আউয়াল। আরবি বর্ষপঞ্জি বা হিজরি সনের পঞ্চম মাস হলো ‘জমাদিউল আউয়াল’। এর জোড়া মাস হলো ‘জমাদিউস সানি’, এটি হিজরি আরবি সনের ষষ্ঠ মাস। আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে এই মাস দুটি ‘জমাদিউল আউয়াল’ ও ‘জমাদিউস সানি’ নামে সমধিক পরিচিত। এর বাংলা অর্থ হলো প্রথম জমাদা ও দ্বিতীয় জমাদা বা প্রথম শীত ও দ্বিতীয় শীত; অর্থাৎ শীতকালের প্রথম মাস ও শীতকালের দ্বিতীয় মাস। (আল মুনজিদ)। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘তুমি পর্বতমালা দেখছ, মনে করছ উহা স্থির অচল, অথচ তারা মেঘপুঞ্জের ন্যায় সঞ্চারমান। ইহা আল্লাহরই সৃষ্টি নৈপুণ্য, যিনি সমস্ত কিছুকে করেছেন সুষম। তোমরা যা করো সে সম্পর্কে তিনি সম্যক অবগত।’ (সুরা-২৭ নমল, আয়াত: ৮৮)

‘জমাদা’ শব্দের আভিধানিক অর্থ স্থির, অবিচল, দৃঢ়, কঠিন; জমাটবদ্ধ, নিস্তব্ধ, নীরব, নিথর, পাথর; শুষ্ক, খুষ্ক, নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য, বিশ্বস্ত: শীতল, শীতকাল, শীতবস্ত্র; কার্পণ্য, বদ্ধমুষ্টি; কিংকর্তব্যবিমূঢ়, অস্থির সময়, চিন্তাযুক্ত অবস্থা। যেহেতু আরব দেশে শীতকালে প্রচণ্ড শীতে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে তুষারে পরিণত হয় এবং তরল পানি জমে বরফে পরিণত হয়; জড় পদার্থ জমে কঠিন হয়ে যায়; উদ্ভিদ ও জীব নিথর হয়ে যায়; প্রাণীরা নীরব হয়ে যায়; তাই এই মাসকে এই নামে নামকরণ করা হয়েছে। ইমাম আবু হানিফা (রা.) বলেন, ‘জমাদা’ হলো আরব দেশের শীতকাল, এটি বসন্তের নিকটবর্তী; গ্রীষ্মের পূর্বে। দুই ভূমির সীমানা বা দুই বাড়ির সীমানাকে এবং নিকট প্রতিবেশীকেও ‘জমাদা’ বলা হয়।

এ মাসের ফজিলত সম্পর্কে বিভিন্ন কিতাবে নানা বিষয় বর্ণিত আছে। নেক আমল ও সৎকর্ম দ্বারা সাধারণ সময়ও অসাধারণ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হয়ে ওঠে। আমরা জানি, নতুন বছরে নির্ধারিত দোয়া পড়া হয় এবং নতুন মাসে নির্দিষ্ট দোয়া পড়া হয়। আসলে জীবনের প্রতিটি দিনই নতুন দিন, প্রতিটি সময়ই নতুন; তাই নেক আমলের মাধ্যমে সময়কে মূল্যবান করে তুলতে হবে

মূলত এই মাসের নামের মাঝে যেসব অর্থ বিদ্যমান তা তিন ভাগে বিভাজনযোগ্য। যথা: ইতিবাচক, নেতিবাচক ও মধ্যবর্তী বা ক্রান্তিকালীন। সুতরাং আমাদের করণীয় হবে ইতিবাচক অর্থে উদ্বুদ্ধ হয়ে বেশি বেশি নেক কাজ বা সৎকর্ম সম্পাদনে ব্রতী হওয়া। নেতিবাচক অর্থগুলো অনুধাবন করে নিজের মধ্যে থাকা সব নেতিবাচক অভ্যাস ও বৈশিষ্ট্য পরিত্যাগ করে ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের প্রতি মনোনিবেশ করা। ক্রান্তিকাল বা অন্তর্বর্তীকাল বিবেচনা করে সদা সতর্ক ও সজাগ থাকা এবং ইতিবাচক পরিবর্তন ও সাফল্য লাভের জন্য সদা সক্রিয় থাকা।

এ মাসের আমল হলো নফল নামাজ, নফল রোজা, দান–খয়রাত ইত্যাদি। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পাশাপাশি পাঁচ ওয়াক্ত নফল নামাজ, তথা তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত, জাওয়াল ও আউয়াবিন নামাজ আদায় করা। কাজা রোজা থাকলে পুরা করা; মান্নত রোজা থাকলে তা আদায় করা। মাসের ১ তারিখ, ১০ তারিখ, ২৯ ও ৩০ তারিখ রোজা রাখা এবং চাঁদের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ ‘আইয়ামে বিদ’ বা শুভ্র সময়ের বাবা হজরত আদম (আ.)–এর সুন্নাত রোজা করা। সপ্তাহে প্রতি সোমবার, বৃহস্পতি ও শুক্রবার নফল রোজা পালন করা।

এ মাসের ফজিলত সম্পর্কে বিভিন্ন কিতাবে নানা বিষয় বর্ণিত আছে। নেক আমল ও সৎকর্ম দ্বারা সাধারণ সময়ও অসাধারণ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হয়ে ওঠে। আমরা জানি নতুন বছরে নির্ধারিত দোয়া পড়া হয় এবং নতুন মাসে নির্দিষ্ট দোয়া পড়া হয়। আসলে জীবনের প্রতিটি দিনই নতুন দিন, প্রতিটি সময়ই নতুন; তাই নেক আমলের মাধ্যমে সময়কে মূল্যবান করে তুলতে হবে।

জিকির আজকার, দোয়া–কালাম, দরুদ ও সালাম, তাসবিহ তাহলিল, তাওবা ইস্তিগফার, খতম তিলাওয়াত, সদকা, খয়রাত ইত্যাদি আমলের মাধ্যমে মাস অতিবাহিত করলে নিশ্চিত এর বরকত, ফজিলত ও কল্যাণ লাভ হবে। অন্যথায় সময়ের অপচয়ের জন্য অনুতাপ ও অনুশোচনা করতে হবে। হাদিস শরিফে আছে, পরকালে নেককার মুমিন জান্নাতিদের কোনো আফসোস থাকবে না; তাঁদের আফসোস থাকবে শুধু ওই সময়ের জন্য, যে সময়গুলো তাঁরা নেক আমল ছাড়া অতিবাহিত করেছেন বা বেহুদা কাটিয়েছেন। (তিরমিজি)।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি, সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

ইসলামে শিক্ষার গুরুত্ব ও তাৎপর্য

শিক্ষা ইসলামের প্রাথমিক মৌলিক বিষয়াবলির অন্তর্ভুক্ত। আদি শিক্ষক হলেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। তাই ফেরেশতারা বলেছিলেন, ‘হে আল্লাহ, আপনি পবিত্র! আপনি যা শিখিয়েছেন, তা ছাড়া আমাদের আর কোনো জ্ঞান নেই; নিশ্চয়ই আপনি মহাজ্ঞানী ও কৌশলী।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ৩২)।

শিক্ষা ও জ্ঞানার্জনের জন্য পঠন-পাঠন অন্যতম মাধ্যম। আমাদের প্রিয় নবী (সা.)–এর প্রতি ওহির প্রথম নির্দেশ ছিল, ‘পড়ো, তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টি করেছেন “আলাক” থেকে। পড়ো, তোমার রব মহা সম্মানিত, যিনি শিক্ষাদান করেছেন লেখনীর মাধ্যমে। শিখিয়েছেন মানুষকে, যা তারা জানত না।’ (সুরা-৯৬ আলাক, আয়াত: ১-৫)।

ইসলামি শিক্ষায় অধ্যয়ন ও অধ্যাপনার মূল পাঠ্যগ্রন্থ আল–কোরআন। ‘দয়াময় রহমান (আল্লাহ)! কোরআন শেখাবেন বলে মানব সৃষ্টি করলেন; তাকে বর্ণনা শেখালেন।’ (সুরা-৫৫ রহমান, আয়াত: ১-৪)।

কর্মে ও আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন ও উন্নয়ন সাধন নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে তথ্য প্রদান বা জ্ঞানদান করাকে শিক্ষাদান বা পাঠদান বলে। খলিফা হজরত উমর (রা.)–এর এক প্রশ্নের জবাবে হজরত উবায় ইবনে কাআব (রা.) বলেন, ‘ইলম হলো তিনটি বিষয়, আয়াতে মুহকামাহ (কোরআন), প্রতিষ্ঠিত সুন্নাত (হাদিস) ও ন্যায় বিধান (ফিকাহ)।’ (তিরমিজি)। হজরত উবায় ইবনে কাআব (রা.) বলেন, ‘(শিক্ষিত তিনি) যিনি শিক্ষানুযায়ী কর্ম করেন অর্থাৎ শিক্ষার সঙ্গে দীক্ষাও থাকে।’ (তিরমিজি ও আবু দাউদ)।

ইলম বা জ্ঞান হলো মালুমাত বা ইত্তিলাআত তথা তথ্যাবলি। এটি দুভাবে অর্জিত হতে পারে, (ক) হাওয়াচ্ছে খামছা তথা পঞ্চইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে। যথা: ১. চক্ষু, ২. কর্ণ, ৩. নাসিকা, ৪. জিহ্বা ও ৫. ত্বক। এই জ্ঞানকে ইলমে কাছবি বা অর্জিত জ্ঞান বলে। (খ) ওয়াহি। যথা: (১) কোরআন ও (২) সুন্নাহ বা হাদিস। এ প্রকার জ্ঞানকে ইলমুল ওয়াহি বা ওয়াহির জ্ঞান বলে। ইন্দ্রিয়লব্ধ জ্ঞান সদা পরিবর্তনশীল, ওহির জ্ঞান অপরিবর্তনীয়।

নবী–রাসুলদের দাওয়াতি কাজের মূল ভিত্তি ছিল জ্ঞানের আলো দিয়ে মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসা। হজরত ইব্রাহিম (আ.) দোয়া করেছিলেন: ‘হে আমাদের প্রভু! আপনি তাদের মাঝে এমন রাসুল পাঠান, যিনি তাদের সমীপে আপনার আয়াত উপস্থাপন করবে, কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দেবে এবং তাদের পবিত্র করবে। নিশ্চয়ই আপনি পরাক্রমশালী স্নেহশীল ও কৌশলী।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১২৯)।

বিদ্যা মানে জ্ঞান, শিক্ষা মানে আচরণে পরিবর্তন। সব শিক্ষাই বিদ্যা কিন্তু সব বিদ্যা শিক্ষা নয়; যদি তা কার্যকরী বা বাস্তবায়ন করা না হয়। জ্ঞান যেকোনো মাধ্যমেই অর্জন করা যায়, অধ্যয়ন জ্ঞানার্জনের একটি পন্থা মাত্র। অধ্যয়ন তথা জ্ঞানচর্চা বা বিদ্যার্জন সব সময় শিক্ষার সমার্থক নয়।

ইসলামে শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো আদম সন্তানকে মানুষরূপে গড়ে তোলা। যে শিক্ষা আত্মপরিচয় দান করে, মানুষকে সৎ ও সুনাগরিক হিসেবে গঠন করে এবং পরোপকারী, কল্যাণকামী ও আল্লাহর প্রতি অনুরাগী হতে সাহায্য করে, সে শিক্ষাই প্রকৃত শিক্ষা। শিক্ষা মানুষের অন্তরকে আলোকিত করে, অন্তর্দৃষ্টি উন্মোচিত করে, দূরদর্শিতা সৃষ্টি করে। তাই আল্লাহ তাআলা বাবা আদম (আ.) কে সৃষ্টি করে প্রথমে তাঁর শিক্ষাব্যবস্থা করলেন। কোরআনের বর্ণনায়, ‘আর আল্লাহ তাআলা আদমকে সকল বস্তুর পরিণতি শেখালেন।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ৩১)। যে জ্ঞানের মাধ্যমে মানুষের অন্তর হিংসা, বিদ্বেষ ও ঘৃণা থেকে মুক্ত হয়ে ভালোবাসায় পরিপূর্ণ হয়, তা–ই ইসলামি শিক্ষা।

রাসুলুল্লাহ (সা.)–কে স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামিন শিক্ষাদান করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার রব আমাকে তালিম দিয়েছেন, তা কতই–না উত্তম শিক্ষা এবং আমার রব আমাকে তারবিয়াত করেছেন, তা কতই না শ্রেষ্ঠ প্রশিক্ষণ।’ (মুসনাদে আহমাদ)। মূলত শিক্ষা হলো আত্মজ্ঞান বা আত্মোপলব্ধি। শিক্ষিত মানুষ বিনীত ও নিরহংকার হয়ে থাকেন। শুধু ভাষা জ্ঞান বর্ণ জ্ঞান বা বিষয় জ্ঞানের নাম শিক্ষা নয়। প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর অক্ষরজ্ঞান ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও ওহির শিক্ষায় আলোকিত হয়ে তিনি হয়েছেন বিশ্ব-শিক্ষক।

যে শিক্ষা মানুষের কল্যাণে উপকারে আসে না, তা শিক্ষা নয়। যে শিক্ষা দুনিয়ার শান্তি ও পরকালে মুক্তির সহায়ক, তাই প্রকৃত শিক্ষা। ইসলামি শিক্ষার প্রতিপাদ্য বিষয় হলো বিশ্বভ্রাতৃত্ব, মানবকল্যাণ, ত্যাগ ও বিনয়। যদি কোনো শিক্ষা হিংসা, বিদ্বেষ, ঘৃণা ও অহংকার উদ্রেক করে, সে শিক্ষা মূর্খতা ও অজ্ঞতা ছাড়া কিছুই নয়। সমাজে শান্তি, শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন এবং আদর্শ গুণাবলিসম্পন্ন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তৈরি ইসলামি শিক্ষার উদ্দেশ্য।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী:

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম