লিখেছেন এম ডি কামরুল হাসান
আজ বুধবার সূপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির মাধ্যমে শুরু হয়েছে। সূপ্রীম কোর্ট অডেটোরিয়ামের সমস্ত প্রবেশ পথ বন্ধ করে আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীরা এরপর নিজেদের ইচ্ছেমত ব্যালট পেপারে সিল মারতে থাকে। এক পর্যায়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবি দলের সমর্থকেরা এই বিষয়ে প্রতিবাদ করলে আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীরা ব্যাপক মারধর শুরু করে এবং পুলিশের মাধ্যমে উপস্থিত সাংবাদিক ও আইনজীবিদের উপর হামলে পড়ে। এই ঘটনায় বি এন পি নেতা জনাব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন মারাত্নক আহত হন এবং একইসাথে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের সাংবাদিকরা গুরুতর আহত হন। এডভোকেট আল ফয়সাল সিদ্দিকী তাঁর ফেসবুকের এক পোস্টে লিখেন যে,
২০-২৫ জন পুলিশ দিয়ে একজন আইনজীবীকে রাইফেলের বাট দিয়ে গরুর মতো পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়ে আপনারা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতে কি প্রতিষ্ঠা করলেন? ২০০-৩০০ জন সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীকে কয়েকশ পুলিশ দিয়ে বের করে ভোট কেন্দ্র দখল করে কি প্রতিষ্ঠা করলেন? আমি আল্লাহর কাছেও বিচার দিবো না। নিজের কষ্ট নিজের মধ্যে জমা রাখলাম।
এদিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অবিলম্বে বন্ধ করে নতুন করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। বুধবার বিকেল ৩টায় সুপ্রিম কোর্টের এনেক্স ভবনের সামনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য (নীল) প্যানেলের আয়োজনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা। সংবাদ সম্মেলনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য (নীল) প্যানেল থেকে সভাপতি প্রার্থী ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেছেন, ‘নতুন করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে হবে। সুপ্রিম কোর্ট বারের একটি ঐতিহ্য আছে। অবৈধভাবে কেউ নির্বাচনের নামে সুপ্রিম কোর্ট বারকে কলঙ্কিত করতে পারে না। সুপ্রিম কোর্ট বারে যেটা হচ্ছে সেটা কোনো নির্বাচন নয়। আমরা প্রধান বিচারপতির কাছে চার বার গিয়েছি। তিনি দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। অবিলম্বে সুপ্রিম কোর্ট বারে নির্বাচনের নামে এ অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করুন। আর যারা আইনজীবী ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেছে তাদের বিচার করতে হবে। আমাদের আন্দোলন চলবে। এটা কোনো নির্বাচন নয়, নতুন নির্বাচন দিতে হবে।
’জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য (নীল) প্যানেল থেকে সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘সারাদেশে যে নির্বাচন নেই তারই ধারাবাহিকতায় সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচনকে অবৈধভাবে কলঙ্কিত করছে সরকার সমর্থকরা। তারা নিজেরা ব্যালট ছাপিয়ে এনেছে। এতে আইনজীবীরা প্রতিবাদ জানিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট বারের ইতিহাসে এই প্রথম পুলিশ প্রবেশ করে আমাদের, আমাদের
বোনদের ও সাংবাদিকদের আহত করেছে।’
সংবাদ সম্মেলনে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন, আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব কায়সার কামাল, সমিতির সাবেক সম্পাদক বদরুদ্দোজা বাদল, সাবেক বিচারপতি ফয়সাল মাহমুদ ফয়েজী, বাংলাদেশ ল‘ইয়ার্স কাউন্সিলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জসীম উদ্দিন সরকার, ড. এ জেড এম ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সভাপতি আবদুল জব্বার ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজলসহ শতাধিক আইনজীবী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে মির্জা ফখরুল বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন (এসসিবিএ) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে ক্ষমতাসীন দলকে “অস্বাভাবিক চোর” বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “তাদের (আওয়ামী লীগের) লক্ষ্য একটাই, চুরি করা। আমরা সাধারণত তাদের ভোট চোর বলি। তারা জাতীয় নির্বাচনে এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও কারচুপি করে। এখন তারা সুপ্রিম কোর্ট ও ঢাকা বারে ভোট কারচুপি করেছে। আসলে, তারা অস্বাভাবিক চোর”। মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আওয়ামী লীগ চুরি ছাড়া কিছুই করে না। “তারা চুরি করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে এবং এটি তাদের পেশা এবং নেশা… তারা চুরির মাধ্যমে দেশের সম্পদও নষ্ট করেছে”।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীন দল ব্যাপক চুরি করে দেশের বিদ্যুৎ খাত ধ্বংস করেছে। সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচনের আগের রাতে (মঙ্গলবার রাতে) ভূয়া ও স্ট্যাম্পযুক্ত ব্যালট পেপার পাওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টে তোলপাড় শুরু হয়। “তারা (আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা) আমাদের সাতবারের নির্বাচিত সুপ্রিম কোর্ট বারের সেক্রেটারিকে (মাহবুবউদ্দিন খোকন) লাঞ্ছিত করে আহত করেছে”।
এ ঘটনায় মাহবুবউদ্দিন খোকনসহ বিএনপিপন্থী ১ হাজার আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলেও জানান তিনি। উল্লেথ্য, বুধবার সকাল ১০টার দিকে এসসিবিএ নির্বাচনে দুই দিনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। এ সময় কিছু বিএনপিপন্থী আইনজীবী একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তির নেতৃত্বে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের দাবিতে বিক্ষোভ করেন।