সরকারের উসকানিতেই উগ্রবাদের উত্থান হচ্ছে: নুরুল

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার সাম্প্রদায়িকতাকে উসকে দেওয়ায় বাংলাদেশে উগ্রবাদের উত্থান হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক৷

তিনি বলেছেন, ‘জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে গিয়ে সরকার অপপ্রচার করছে। ঠিক একইভাবে বিরোধী দল ও ভিন্নমতের ওপর দমন-পীড়ন ও হামলা-মামলা করে তারা একদলীয় স্বৈরতন্ত্র কায়েম করতে চাইছে৷’

রাজধানীর পল্টন মোড়ে আজ বুধবার রাতে এক প্রতিবাদ সমাবেশে নুরুল হক এসব কথা বলেন। ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচিতে ছাত্র ও অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীদের ওপর ছাত্রলীগ-যুবলীগের অতর্কিতে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে’ তাৎক্ষণিক এই কর্মসূচি করে নুরুলের সংগঠন ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদ।

মানববন্ধনে নুরুল হক অভিযোগ করে বলেন, ‘বর্তমান অবৈধ সরকার যখন সারা বাংলাদেশে বিরোধী নেতা-কর্মীদের ওপর দমন-পীড়নের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোকে কোণঠাসা করে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা করছে, সেই সময়ে ডাকসুর নির্বাচন হয়েছে। ডাকসু নির্বাচনের পর ছাত্র-যুবকদের সংগঠিত করে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে বিনির্মাণের জন্য আমরা রাজনৈতিক সংগ্রাম করে যাচ্ছি। সরকার যখন বুঝতে পেরেছে যে তাদের গদি নড়বড়ে হওয়া শুরু হয়েছে, তখন হামলা ও মিথ্যা মামলা করে আমাদের দমিয়ে রাখতে চাইছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদের কম্বল বিতরণ কর্মসূচিতে হামলা করে কম্বল ছিনতাই করে নিয়ে গেছে ছাত্রলীগ-যুবলীগ। আমরা এর নিন্দা জানাই।’

ছাত্র, যুবক, শ্রমিকসহ সর্বস্তরের জনগণের উদ্দেশে নুরুল বলেন, ‘খুব শিগগির বর্তমান অবৈধ সরকারের পতন ঘনিয়ে আসছে। আপনারা ভয় পাবেন না, সাহস নিয়ে সংগ্রাম চালিয়ে যান, স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য মানুষকে সচেতন করুন।’

সমাবেশের আগে বিজয়নগর মোড় থেকে মশাল মিছিল করেন নুরুলেরা। মিছিলটি গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট ও কাকরাইল মোড় হয়ে পল্টন মোড়ে গিয়ে সমাবেশ করে।

ছাত্র অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খানের সঞ্চালনায় সমাবেশে নুরুল ছাড়াও যুব অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব ফরিদুল হক ও যুগ্ম আহ্বায়ক তারেক রহমান বক্তব্য দেন।

অনুমতি ছাড়া মিছিল-সমাবেশ করলেই ব্যবস্থা

রাজধানী ঢাকাতে অনুমতি ছাড়া মিছিল ও সভা-সমাবেশ করা যাবে না বলে নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। আর এই নির্দেশনা করে কেউ যদি মিছিল ও সমাবেশ করে, তবে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানিয়েছে ডিএমপি।

২ ডিসেম্বর, বুধবার ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই নির্দেশনার কথা জানানো হয়েছে।

ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমানে ডিএমপি এলাকায় যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠন সভা, সমাবেশ, গণজমায়েতসহ নানা কর্মসূচির ঘোষণা দিচ্ছে। ফলে রাস্তায় নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। বিদ্যমান আইনে বৈধ কোনো দল বা গোষ্ঠীর সমাবেশের স্বাধীনতা থাকলেও বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের আরোপিত যুক্তিসংগত বিধিনিষেধ সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হওয়ার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগ দেয়ার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের আছে।

তবে সাধারণ জনগণের নাগরিক সুবিধা অক্ষুণ্ন রাখা, শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করা ও যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুবিধার্থে এ ধরনের কর্মসূচি পালন এবং শব্দযন্ত্র ব্যবহারের জন্য ডিএমপি অধ্যাদেশ অনুসারে ডিএমপি কমিশনারের পূর্বানুমতি নেয়ার বাধ্যবাধকতা আছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

আরো বলা হয়, ডিএমপি ঢাকা মহানগরের নাগরিকদের জানমালের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পূর্বানুমতি ছাড়া কোনো প্রকার মিছিল, সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচির কার্যক্রম গ্রহণ এবং এ জন্য শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করছে। পূর্বানুমতি ছাড়া কেউ এরূপ কার্যকলাপে জড়িত হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও উল্লেখ করা হয়।

ডাকসু ভবনে হামলায় জড়িতদের অব্যাহতির প্রতিবাদে অবস্থান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভবনে হামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের একাংশ। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের ফুটপাতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে তারা।

সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলে। তিন দফা দাবিতে এই অবস্থান কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন সংগঠনটির এই অংশের আহ্বায়ক এ পি এম সুহেল।

দাবিগুলো হলো ডাকসু হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার করা, হামলায় আহত ব্যক্তিদের নামে মামলা প্রত্যাহার করা এবং ওই হামলায় যাঁরা এখনো পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি, তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
এসব দাবির বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

এ পি এম সুহেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডাকসুতে সেদিন আমাদের ওপর হামলা হয়। অথচ ওই হামলায় গুরুতর আহত ও মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করাদের বিরুদ্ধেই মামলা দেওয়া হয়েছে। আমরা ওই মামলা উঠিয়ে নেওয়ার দাবি জানাই।’
২০১৯ সালের ২২ ডিসেম্বর ডাকসু ভবনের নিজ কক্ষে নুরুলের ওপর হামলা হয়। এ সময় নুরুলের সঙ্গে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও কয়েকটি কলেজের কয়েকজন ছাত্রসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের নেতা-কর্মীরা এ হামলা চালিয়েছেন বলে আহত ব্যক্তিরা দাবি করেন।

হামলার দুই দিনের মাথায় পুলিশ বাদী হয়ে এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা করে। মামলায় আসামি করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের সভাপতি আমিনুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আল মামুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত, এফ রহমান হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ইমরান সরকার, জসীমউদ্‌দীন হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ইয়াদ আল রিয়াদ, জিয়া হলের সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম মাহিম এবং মাহবুব হাসানকে। মাহবুব হাসানের পরিচয় জানা যায়নি। আর গ্রেপ্তার মেহেদি হাসান এজাহারভুক্ত আসামি নন। হামলায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাও অংশ নেন। কিন্তু মামলার এজাহারে হামলার জন্য শুধু মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতা-কর্মীদের দায়ী করা হয়েছে। ছাত্রলীগের বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।

পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করার পর ডাকসু ভিপি নুরুল হক ২৫ ডিসেম্বর শাহবাগ থানায় একটি অভিযোগপত্র দেন। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনসহ ছাত্রলীগের ৩৭ জন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করেন তিনি। তাঁর দাবি, এই ছাত্রলীগের নেতারা হামলায় প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিয়েছেন এবং তাঁর সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ২০টি মুঠোফোন ছিনতাই ও তাঁদের পকেটে থাকা ১৫ হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে গেছেন।

স্বাধীনতার ধারণাকে জনপ্রিয় করেন বঙ্গবন্ধু: মুহিত

সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ধারণাকে বঙ্গবন্ধু ধারাবাহিকভাবে সাধারণ মানুষের মাঝে বোধগম্য করে তুলেছিলেন। এভাবে তিনি জাতি গঠন ও রাষ্ট্রের ধারণাকে জনপ্রিয় করেছেন।

বিজয়ের মাসের প্রথম দিনে আজ মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু লেকচার সিরিজের প্রথম দিনের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় আবুল মাল আবদুল মুহিত এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাজধানীর সুগন্ধায় নবনির্মিত ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এ লেকচার সিরিজের আয়োজন করে।

সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছিল সংকল্প, সাহস, উদারতা এবং দরিদ্রদের প্রতি সমবেদনা। বঙ্গবন্ধু দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন, দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলায় পরিণত করার জন্য উর্বর ভূমি, বিশাল জনগোষ্ঠীসহ সবকিছুই তাঁর ছিল। দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে জনকল্যাণের নীতি অনুসরণ করেন জাতির পিতা।

আবদুল মুহিত বলেন, ছোটবেলা থেকে বঙ্গবন্ধুর সাহসী ও নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিত্ব ফুটে ওঠে। বিখ্যাত নেতা সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে তাঁর আজীবন সম্পর্ক ছিল ছাত্র-শিক্ষকের। জাতির পিতা মাত্র তিন বছর সাত মাসে সংবিধান সংশোধনসহ ৫১৯টি আইন পাস বা সংশোধন করেছিলেন, যাতে জনগণের সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনি ১৯৭৪ সালে সমুদ্রসীমা আইন পাস করেছিলেন।

সূচনা বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশের ৬৮টি বৈদেশিক মিশনে বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপন করা হয়েছে। বুদ্ধিজীবী, শিক্ষকসহ প্রবাসীদের অংশগ্রহণে সেমিনার, ওয়ার্কশপ, চলচ্চিত্র প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্বনেতাদের কাছে আমরা বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরতে চাই।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, দুজন বিশিষ্ট কূটনীতিককে সম্মানিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে একজন বাংলাদেশি এবং একজন বিদেশিকে স্বর্ণপদক দিতে ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে নাম ঘোষণা করা হবে।
বঙ্গবন্ধু লেকচার সিরিজের প্রথম দিনের আলোচনায় আলোচক ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী। এ ছাড়া ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। বিদেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, ঢাকায় বিদেশি রাষ্ট্রদূত, বুদ্ধিজীবী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ভার্চ্যুয়ালি ও সরাসরি এ আলোচনায় অংশ নেন।

ফ্যাসিবাদী শক্তির পতন এখন জনগণের ন্যূনতম দাবি: জোনায়েদ সাকি

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, ‘স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের শহীদ নূর হোসেনের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করেছে বর্তমান আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার। এই সরকারের প্রত্যক্ষ প্রশ্রয়ে গুম খুন, লুটপাট, পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু, ধর্ষণ এবং গুণ্ডাতন্ত্রের দাপটে মানুষের জীবনে আজ নাভিস্বাস উঠেছে। এই ফ্যাসিবাদী শক্তির পতন এখন বাংলাদেশের জনগণের ন্যূনতম দাবি।’ তিনি বলেন, জনগণ নূর হোসেনের চেতনায় উদ্দিপ্ত হয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে এই সরকারকে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ‘গলায় গামছা দিয়ে’ ক্ষমতা থেকে টেনে নামাবে।

মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণসংহতি আন্দোলনের সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে জোনায়েদ সাকি এসব কথা বলেন। শহীদ নূর হোসেন দিবসে ‘ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাসরকারের পতনের আন্দোলনে’ জনগণের বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বানে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, ‘নূর হোসেনের আত্মত্যাগের পথ ধরে স্বৈরাচারী এরশাদের পতন হলেও সাংবিধানিক স্বৈরতন্ত্রের কোনো পরিবর্তন হয়নি। বরং জনগণের ওপর চেপে বসেছে রাজনৈতিক নির্বাচিত স্বৈরতন্ত্র। ২০১৪ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচন ও ২০১৮ সালের রাতের আঁধারে ভোট ডাকাতি করে জনগণের সম্মতি ছাড়াই আওয়ামী লীগ সরকার ফ্যাসিবাদী কায়দায় ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রয়েছে। শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশের জনগণের জান-জবান-জমি-জঙ্গল সবকিছু আজ হুমকির মুখে পড়েছে।’

সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী (ভারপ্রাপ্ত) আবুল হাসান রুবেল ও কেন্দ্রীয় নেতা জুলহাসনাইন বাবু। এ সময় দলের কেন্দ্রীয় নেতা তাসলিমা আখতার, বাচ্চু ভূঁইয়া, দীপক রায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

ব্লগার এবং নাস্তিকদের বিচারের দাবিতে দেয়ালে দেয়ালে পোষ্টার এবং মিছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঢাকা: হেফাজতে ইসলামসহ আরো কয়েকটি ইসলামী সংগঠন বেশ কিছুদিন ধরেই সরকারকে ব্লগার এবং নাস্তিকদের আইনের আওতায় এনে তাদের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে চাপ দিয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় ইসলামী দলগুলোকে বাংলাদেশের বিভিন্নস্থানে মিছিল এবং সমাবেশ করে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়। তাছাড়া কোনও কোনও এলাকার অলিতে-গলিতে দেয়ালে দেয়ালে নাস্তিকদের পোষ্টার লাগিয়ে হত্যা করার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার (অক্টোবর-২৯, ২০২০) আরিফ রব্বানী নামের হেফাজতে ইসলামের একজন সক্রিয় কর্মী ‘এথিস্ট এরা’ নামের একটি ম্যাগাজিনের সকল ব্লগার/ নাস্তিকদের নামে মামলা দায়ের করেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত খবর নিয়ে জানা যায় যে, এথিস্ট এরা নামের এই ওয়েবসাইটটি ইসলাম ধর্মকে অত্যন্ত নোংরাভাবে ফুটিয়ে তুলে একটি ম্যাগাজিন প্রকাশিত করে। মূলত যা দেখেই ইসলামী সংগঠনগুলো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে।

এ বিষয়ে মামলার বাদি আরিফ রব্বানীর সাথে কথা হলে তিনি আমাদের বলেন ’’হঠাৎ করেই ফেসবুকের মাধ্যমে এই ম্যাগাজিনটি আমার চোখে পড়ে, আমি কৌতুহল বশত এটি ডাউনলোড করে দেখতে পারি সেখানে ধর্ম, মুসলিম, কোরআন এবং আমাদের প্রাণপ্রিয় নবী মোহাম্মদ (সঃ) কে নিয়ে নানাবিদ কুরুচিপূর্ন  শব্ধ ব্যবহার করে ‘বিনাশ হোক ধর্ম‘ নামে এই মাগাজিনটি প্রকাশিত করে, যা একজন মুসলিম হিসেবে মেনে নিতে পারিনি এবং আমি মনে করি এদেরকে কতল (হত্যা) করা আমার এবং আমাদের সকল মুসলিমদের ওপর ওয়াজিব হয়ে গেছে।

মামলার আসামীদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আমাদের যে কয়টি নাম বলেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েক জন হলেন এথিস্ট এরা’র সম্পাদক এমডি মাহাদি হাসান, সহ সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুজ্জামান, সিনিয়র সহ সম্পাদক মিজানুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ সাইফুজ্জামান ও উমায়েদ হোসেন, স্টাফ রিপোর্টার উম্মা কুলসুম নারগিস বানু, এমডি জিল্লুর রহমান, অনিকা হক মল্লিক,শ্রাবণী শিকদার, মোহাম্মদ ওয়াহিদ হোসেন, মহাম্মদ ফাহিদুল আলম, মুহাইমিনুল বিশ্বাস পারভেজ, জোবায়ের হোসেন, বিপ্লব পাল, এম ডি হাসান তৌহিদ, মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান, নুর মোহাম্মদ, জনি জোসেফ কস্তা, সহ আরো অনেকে।

এদিকে মিছিল এবং সমাবেশে থাকা কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা সাংবাদিকেদের জানান যে, ‘‘বর্তমানে নাস্তিক এবং কিছু নব্য ব্লগারদে উৎপাত এতটাই বেড়েছে যে এগুলো মেনে নেওয়া কোনও মুসলমানদের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে একটা কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমাদের কলিজার টুকরা হযরত মুহাম্মদ সাঃ কে নিয়ে কেউ কিছু বললে তাকে এই পৃথিবী থেকে বিদায় করা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব।‘‘

তাদের মধ্যে আর একজন ইসলামী ব্যক্তিত্ব মুফতি ফজলুর রহমান বলেন, ‘‘নাস্তিকদের গালি দিলে কারও গায়ে লাগলে আমার করার কিছু নাই। আল্লাহর দেশে থাকতে হলে আল্লাহকে না দেখে আল্লাহর অস্তিত্ব মানতে হবে, না হলে তুমি আল্লাহর দেশে থাকতে পারবে না।’’

এদিকে সমাবেশ চলাকালে মুফতি আহমদ উল্লাহ জিহাদী উপস্থিত থাকা দ্বীনদার ভাইদের উদ্দেশে বলেন যে, ‘‘যদি কোন মুসলিম মুরতাদ হয়ে যায় এবং মুরতাদের সকল শর্ত তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় (সুস্থ- মস্তিস্ক, বালেগ, স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির অধিকারী হওয়া) তাহলে তার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হবে এবং ইমাম তথা মুসলমানদের শাসক অথবা তাঁর প্রতিনিধি যেমন বিচারক তাকে হত্যা করবে। তাকে গোসল করানো হবে না, তার জানাযা-নামায পড়ানো হবে না এবং তাকে মুসলমানদের গোরস্থানে দাফন করা হবে না।‘‘

হেফাজেত ইসলামে এক কর্মীর কাছে দেয়ালে পোস্টার লাগানোর বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি আমাদের বলেন যে, ‘‘সমস্ত ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক-মুরতাদ যারা আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহ এবং আমাদের ধর্ম নিয়ে ব্যঙ্গ করবে, গালি-গালাজ করবে, কটূক্তি করবে তারা সবাই আমাদের টার্গেট। ইনশাআল্লাহ আমরা তাদের হত্যা করবো।’’

উল্লেখ্য, হেফাজতে ইসলাম নাস্তিক এবং ব্লগারদের ছবি যেভাবে দেয়ালে দেয়ালে লাগিয়েছে, ২০১৬ সালে ঠিক এভাবেই ফেসবুক পেজে চার ব্লগারের ছবি প্রকাশ করে হত্যার হুমকি দিয়েছে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম। তারা হচ্ছেন আসিফ মহিউদ্দিন, সানিউর রহমান, শাম্মি হক ও অনন্য আজাদ। তারা সবাই এখন প্রবাসী। জঙ্গি হামলার ভয়ে এসব ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট অনেক আগেই দেশ ছেড়েছেন।

আদালত সূত্রে জানা যায় বাদী আরিফ রাব্বানী কর্তৃক আনীত মামলার নম্বর ৪১৮/২০২০। মামলাটি দায়ের করা হয়েছে ঢাকা সাইবার ট্রাইবুন্যালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৫, ২৮, ২৯, এবং ৩১ ধারার অধীনে ২১ জন আসামীর বিরূদ্ধে। মামলাটি তদন্তাধীন।

গুলশানে মারামারির ঘটনায় বিএনপির তদন্ত কমিটি গঠন

রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে ঢাকা-১৮ আসনের উপ-নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে দলটি। শুক্রবার এক সদস্যের এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এতে দলের যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনকে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

গত ১১ সেপ্টেম্বর দেশের চার সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচনের দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকারের দিন ঢাকা-১৮ আসনের দুই পক্ষের সংঘর্ষে ১৭ জন নেতাকর্মী আহত হন। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক কফিল উদ্দিন ও যুবদলের উত্তরের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীরের সমর্থকদের মধ্যে এ মারামারি হয়। কূটনৈতিক পাড়া হিসেবে পরিচিত গুলশান-২ এলাকায় এমন সংঘর্ষের ঘটনা দলটির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এতে দলটির সিনিয়র নেতারা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন। এ ঘঠনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষিদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

খায়রুল কবির খোকন সমকালকে বলেন, তিনি মাত্র দায়িত্ব পেয়েছেন। যে ঘটনা গুলশানে ঘটেছে তার প্রকৃত তদন্ত তিনি করবেন এবং দোষীদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রকে অবহিত করবেন। তিনি কারও পক্ষালম্বন না করে সুষ্ঠু তদন্তের জন্য যা করার দরকার তা করবেন।

কতদিনে এ তদন্ত শেষ করতে বলা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কোন টাইমলাইন তাকে দেওয়া হয়নি। তবে শনিবার থেকেই তিনি কাজ শুরু করবেন বলে জানান।

বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচনে কমিশন গঠনের দাবি

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পেছনে যারা জড়িত তাদের মুখোশ উন্মোচনে একটি কমিশন গঠনের দাবি জানানো হয়েছে। সোমবার ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপকমিটি’ আয়োজিত ‘জাতির পিতার হত্যার বিচার : জাতির প্রত্যাশা এবং রাষ্ট্রের করণীয়’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এ দাবি জানান বক্তারা।

ভার্চুয়াল এ আলোচনা অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে ছিলেন- আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজিবুল্লাহ হিরু এবং বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটির সভাপতি ড. সাইদুর রহমান খান।

আবদুল মতিন খসরু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মাস্টার মাইন্ডদের চিহ্নিত করতে হবে। পনের অগাস্টের চক্রান্ত তো একদিনে হয়নি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। মাস্টার মাইন্ড হিসেবে শাহ মোয়াজ্জেম, ওবায়দুর রহমানসহ আরও নাম আসবে… জাতির অধিকার আছে তাদের ব্যাপারে জানার। হাই পাওয়ারের একটা জাতীয় কমিশন গঠন করে শ্বেতপত্রও প্রকাশ করতে হবে।’

আবদুল মতিন খসরুর বক্তব্যে সায় দিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘এখানে একটা দাবি উঠেছে কমিশনের। আমি অনেক জায়গায় বলেছি, উচ্চ পর্যায়ের এবং জাতীয় পর্যায়ের অত্যন্ত দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের দিয়ে একটা কমিশন গঠন করা প্রয়োজন। আমরা যদি আজকে তাদের চিহ্নিত করতে না পারি, আমরা যদি তাদের মুখোশ উন্মোচিত করে দিতে না পারি এবং তাদের বংশধরদের চিহ্নিত করতে না পারি তাহলে আমাদের এখনকার নতুন প্রজন্ম এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আবারও হুমকির সম্মুখীন হবে। হুমকির মধ্যে রেখে যাওয়া আমাদের জন্য দায়িত্বশীল কাজ হবে না। সে কারণে আমাদের কমিশন করা প্রয়োজন।’

আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কমিশন কী করবে, তা নিয়ে আমি আলাপ-আলোচনা শুরু করেছি। একটা রূপরেখা তৈরি করা… তাহলে ভবিষ্যতে যখন হবে তখন কাজটা অনেকটা এগিয়ে যেতে পারে।’

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী ছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে খুব যে অনেক লোক ছিল তা নয়, গুটিকয়েক লোক করেছে। তাদের মুখোশ উন্মোচিত হওয়া উচিত।’

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘জিয়াউর রহমান ছিলেন সেদিনের ব্লু প্রিন্টের খলনায়ক।’

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘৭৫ এর ১৫ আগস্ট এর পর জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি ছিল আমাদের সবার। এরপর আমরা ৬১টি স্বাক্ষ্য গ্রহণ করে এই হত্যা মামলার বিচার কার্য শুরু করেছিলাম।’

আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানটি আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল ছাড়াও সমকাল, বিজয় টিভি, সময় টিভি, বিডি নিউজ২৪, বাংলা নিউজ২৪, বার্তা২৪, যুগান্তর, ইত্তেফাক, সারাবাংলা, ভোরের কাগজ, জাগো নিউজ২৪, বাংলাদেশ জার্নাল, ঢাকাটাইমস ও অপরাজেয় বাংলার ফেসবুক পেজে সরাসরি সম্প্রচার হয়।

করোনায় সরকারের আত্মতুষ্টি বিপদ ডেকে আনবে: আ স ম রব

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি’র সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেছেন, করোনাভারাসে মৃত্যু ও সংক্রমণ অনেক বেড়ে যাওয়ার পরও নিয়ন্ত্রণে সাফল্যের দোহাই দিয়ে সরকারের আত্মতুষ্টি ভয়ঙ্কর বিপদ ডেকে আনবে। এ আত্মতুষ্টি মানুষের মূল্যবান জীবনকে মৃত্যুর হাতে তুলে দেওয়ার নামান্তর। বুধবার জেএসডির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় এ কথা বলেন তিনি।

আ স ম রব বলেন, ‘ভিয়েতনামে করোনায় একজনও মারা যায়নি, তবুও সে দেশের সরকার আত্মতুষ্টি প্রকাশ করছে না। বরং সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সর্বশক্তি নিয়োগ করছে। অথচ আমাদের দেশে করোনায় হাজার হাজার মানুয়ের মৃত্যু ও করোনা নিয়ন্ত্রণে বেহাল দশার পরও সরকার আত্মতুষ্টিতে ভুগছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘করোনা রোগী প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর চার মাস পূর্ণ হচ্ছে। প্রথমদিকে সংক্রমণ বিস্তারের গতি কম থাকলেও যতই দিন যাচ্ছে এর তীব্রতা ক্রমাগত বাড়ছে। মহামারির জরুরি পরিস্থিতি বিবেচনায় চার মাসে সরকার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। সরকারের ভুল পদক্ষেপের কারণে এখন নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা দুইই কমে যাচ্ছে, যার পরিণতি হবে ভয়াবহ।’

করোনা নিয়ে সরকারের প্রচারিত তথ্য-উপাত্ত জনগণের মাঝে দারুণ বিভ্রান্তি ও অবিশ্বাসের সৃষ্টি করছে মন্তব্য করে আ স ম রব বলেন, ‘সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী সরকার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করায় দিন দিন সংক্রমণ পরিস্থিতি বিপজ্জনক পর্যায়ে উপনীত হচ্ছে। তাই সরকারকে অবশ্যই আত্মতুষ্টির আত্মঘাতী বিবেচনা থেকে সরে আসতে হবে।’

সভায় করোনা মোকাবেলায় জরুরি অবস্থা ঘোষণাসহ জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা, সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ, জাতীয় স্বাস্থ্য কাউন্সিল গঠন ও স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণ, পাটকল শ্রমিকদের স্বেচ্ছায় অবসরে পাঠানোর প্রতিবাদ, বন্যা পরিস্থিতি, বাজেটসহ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক বিষয়াবলীর ওপর আলোচনা করা হয়।

স্থায়ী কমিটির সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- দলের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ছানোয়ার হোসেন তালুকদার, কার্যকরী সভাপতি সা ক ম আনিসুর রহমান খান কামাল, মো. সিরাজ মিয়া, কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, স্থায়ী কমিটির সদস্য তানিয়া রব, অ্যাডভোকেট আব্দুল হাই, তৌহিদ হোসেন ও আব্দুর রহমান মাস্টারসহ অন্যান্য নেতারা।

করোনা পরিস্থিতির অবনতি হলে সরকার আরও কঠোর হবে: ওবায়দুল কাদের

দেশবাসীকে সতর্ক করে দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জনগণের অসচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি না মানায় করোনা পরিস্থিতির অবনতি হলে সরকার আরও কঠোর হবে। পরিস্থিতি জনস্বার্থের বিপরীতে চলে গেলে সরকারকে বাধ্য হয়ে আবারও কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

সোমবার সংসদ ভবনের সরকারি বাসভবন থেকে সেতু বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মত বিনিময়কালে ওবায়দুল কাদের আরও বলেছেন, বিভিন্ন দেশে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা উদ্বেগজনক পর্যায়ে থাকলেও লকডাউন শিথিল করছে। কোথাও কোথাও তুলে নিয়েছে। পবিত্র মক্কা-মদিনা-মসজিদুল আকসাও মুসল্লিদের জন্য ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। জীবনের পাশাপাশি জীবিকা দীর্ঘ মেয়াদে বন্ধ থাকলে জীবনের গতিপথে নেমে আসবে স্তব্ধতা, অর্থনীতি হয়ে পড়বে স্থবির। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদেরও ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান বেছে নিতে হবে।

তিনি বলেন, এই সংকটে অনিবার্য প্রয়োজন সবার সচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। নিজের সুরক্ষা প্রকারান্তরে পরিবার, সমাজ ও সহকর্মীদের সুরক্ষা দেবে। তাই আসুন, প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থানে সচেতন ও সুরক্ষিত থাকি। ঘরকে গড়ে তুলি সুরক্ষার দুর্গ। এমন সংকটে সবার পাশে আছেন সাহসী নেতৃত্ব শেখ হাসিনা। তার প্রতি আস্থা ও ভরসা রাখুন। এ নিদানকাল কাটিয়ে ভোরের আলোয় দশ দিগন্ত আলোকিত হবে, ইনশাআল্লাহ।

গণপরিবহন চালু ও ভাড়া বৃদ্ধি প্রসঙ্গে সেতুমন্ত্রী বলেন, করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসন খালি রেখে গাড়ি চালানো শুরু হয়েছে। সরকার বাস্তবতার প্রয়োজনে ভাড়া সমন্বয় করেছে এবং শর্তসাপেক্ষে গণপরিবহন চলছে। মালিকদের স্বাস্থ্যবিধি ও শর্ত মেনে গাড়ি চালানোর অনুরোধ করছি। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ভিজিলেন্স টিম ও মোবাইল কোর্টসহ টার্মিনাল কর্তৃপক্ষকে অর্ধেক আসন খালি রাখা এবং বর্ধিত ভাড়া ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে তদারকির আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, কেউ অতিরিক্ত যাত্রী হবেন না, অর্ধেক আসন খালি রাখুন। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখুন। সংক্রমণ থেকে বাঁচুন, অপরকে বাঁচান। হুড়োহুড়ি, বাড়তি যাত্রী হওয়া ও স্বাস্থ্যবিধি না মানা এ সংকটকে আরও ঘনিভূত করতে পারে। এই সংকটে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদেরও মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপনের অনুরোধ জানাচ্ছি।

বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আন্দোলন-সংগ্রাম আর নির্বাচনে ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে বিএনপি জনগণের কাছে যেতে ভয় পায়। দুর্যোগে অসহায় মানুষের পাশে না থেকে এবং ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ থেকে দূরে অবস্থান করে নিজেদের জনরোষ থেকে বাঁচাতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছে।

তিনি বলেন, বিএনপির নেতাদের মধ্যেও সমন্বয় নেই। তারা নিজেদের অফিসে নিজেরা আগুন দেন, কর্মীরা নেতাকে পিটান। যারা নিজেরা নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করতে পারেন না, তারা আবার সমন্বয়ের কথা বলেন কীভাবে? এদেশে দুর্যোগ গণমানুষের পাশে সবার আগে আওয়ামী লীগ ছুটে যায়। এটাই আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য। আর নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে হাতের তালু দিয়ে আকাশ ঢাকার অপচেষ্টা আর মিথ্যাচার বিএনপির ঐতিহ্য।

কাদের বলেন, করোনা সংকট সমাধানে শেখ হাসিনা সরকারের সাহসী ও মানবিক প্রয়াস বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে। আর বিএনপি খুঁজে পাচ্ছে সমন্বয়হীনতা। নিজেরা অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে নির্লজ্জভাবে ব্যর্থ হয়ে দায়িত্বহীন বক্তব্য রাখছে। সংকটে দায়িত্বশীল রাজনৈতিক ভূমিকা পালনের জন্য তাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

এ প্রসঙ্গে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সংকটের শুরু থেকে সরকার সব দপ্তর ও সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে সংক্রমণ রোধ, আক্রান্তদের চিকিৎসা এবং টেস্টিং ক্যাপাসিটি বৃদ্ধিসহ ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, আকস্মিক এই সংকট মোকাবিলায় বিশ্বের উন্নত দেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশ সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সংকট সমাধানের সক্ষমতা বৃদ্ধি করছে। সরকার কেন্দ্র থেকে উপজেলা পর্যন্ত চিকিৎসা নেটওয়ার্ক সমন্বয় করাসহ সচেতনতা তৈরিতে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। খাদ্য ও আর্থিক সহায়তাসহ নানা উদ্যোগের ফলে আল্লাহর রহমতে এখন পর্যন্ত একটি মানুষও না খেয়ে মরেনি।

এ সময় সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেনসহ সেতু বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।