মাজেদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় দেশবাসী আনন্দিত: নাসিম

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার হত্যাকারী আব্দুল মাজেদের ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ায় জাতি স্বস্তি পেয়েছে। ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্যতম এই খুনির দণ্ড কার্যকরে দেশবাসী আনন্দিত। আমরাও স্বস্তি পেয়েছি, আমরাও আনন্দিত।’

রোববার এক ভিডিওবার্তায় তিনি এসব কথা বলেন।

বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে মাজেদের দেওয়া সব তথ্য প্রকাশ করার দাবি জানিয়ে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, এখন প্রয়োজন এই খুনির তথ্য অনুযায়ী কারা তাকে মদদ দিয়েছে, সেটা জানা। বিশেষ করে জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়ার আমলে মাজেদ কীভাবে একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করে গেল এবং কীভাবে সরকারি কর্মকর্তা হয়ে ক্যান্টনমেন্টের মত সুরক্ষিত জায়গায় পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করতে পেরেছে- সেগুলোও জানা প্রয়োজন।

চার জাতীয় নেতার অন্যতম শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর ছেলে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘কীভাবে মাজেদ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে দীর্ঘদিন পলাতক ছিল? কে তাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে? এগুলোও দেশবাসীর জানা প্রয়োজন। এটি দেশবাসীকে জানানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

আওয়ামী লীগ সরকারের অবসানে ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তুলুন: সেলিম

কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অবসানে ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তুলুন। বামপন্থিদের নেতৃত্বে দেশপ্রেমিক, আদর্শবাদী দেশ রক্ষায় সরকার কায়েম করতে হবে।

শনিবার বিকেলে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরী মাঠে সিপিবি’র উদ্যোগে বিভাগীয় জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সিপিবি সভাপতি সেলিম বলেন, বিএনপি-জামায়াত দেশকে ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে গিয়েছিল। একইভাবে আওয়ামী লীগ তিন মেয়াদে দেশকে ধ্বংস করে ফেলেছে। এদের হাতে গণতন্ত্র আর নিরাপদ নয়। তাই আমরা নতুন বার্তা নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হয়েছি। জনগণ এখন আওয়ামী লীগের সাথে নেই। তারা জোর করে ক্ষমতায় রয়েছে। আওয়ামী লীগের দূর্নীতি-দুঃশাসন থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে। দেশের জনগণকে নিয়ে দূর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

রংপুর জেলা সিপিবি নেতা কমরেড শাহাদত হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সিপিবি সাধারন সম্পাদক শাহ আলম, সিপিবি নেতা রহিন হোসেন প্রিন্স, শাহিন রহমানসহ কমিউনিস্ট পার্টির রংপুর বিভাগের ৮ জেলার নেতৃবৃন্দরা।

সাহস নিয়ে মাঠে নামতে হবে: আমীর খসরু

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ঢাকার জনগণ ১ ফেব্রুয়ারি ধানের শীষে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতাদের মনেও সন্দেহ নেই। এখন বুক বেঁধে নামতে হবে, সাহস নিয়ে নামতে হবে। যদি নামি, ওরা পরাজিত হবে।

শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক কাউন্সিলের উদ্যোগে ‘২৫ জানুয়ারি বাকশাল প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

আমীর খসরু বলেন, আওয়ামী লীগ খুশি মনে ক্ষমতা থেকে যাবে না। এদেরকে বিদায় করতে হলে সবাইকে জেগে উঠতে হবে। ১ ফেব্রুয়ারি সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে। ১ তারিখের পরেও ভূমিকা রাখতে হবে। বাড়ি চলে গেলে হবে না। যতক্ষণ এই অপশক্তির বিদায় না হয়, সবার জায়গা থেকে সবাইকে সঠিক ভূমিকা পালন করতে হবে।

সিটি নির্বাচনে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা আরও বলেন, সারাবিশ্ব জানে, দেশে কী হচ্ছে। কিন্তু জনগণের ভোটাধিকারের সুযোগটা যাতে একেবারে বন্ধ হয়ে না যায়, তার শেষ চেষ্টা হিসেবে বিএনপি কাজ করছে।

সিটি নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ন্যাড়া একবার বেলতলা গেলেও বিএনপি আবার বেলতলায় যাচ্ছে। ১৯৭৫ সালের মতো আজকে রাষ্ট্র, সরকার ও ক্ষমতাসীন দল একাকার হয়েছে। জনগণকে বাইরে রেখে ভোটবিহীন নির্বাচনে তাদেরকে জয়ী করার জন্য রাষ্ট্রের সব কর্মকর্তাকে সরকারের পক্ষে কাজ করার জন্য বাধ্য করা হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে বিএনপি আরেকটা নির্বাচনে যাচ্ছে, আবার বেলতলায় যাচ্ছে।

সংগঠনের সভাপতি এমএ হালিমের সভাপতিত্বে সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, কেন্দ্রীয় নেতা আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ প্রমুখ বক্তব্য দেন।

ওহি দেয়া বন্ধ করেন, মাস্টার্স বা এমফিল করেন

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উদ্দেশে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ্‌ চৌধুরী বলেছেন, লন্ডনে বসে ‘ওহি’ পাঠাবেন না। স্কাইপের মাধ্যমে দল পরিচালনা করবেন না। তিনি তারেককে লন্ডনে দুই বছর মাস্টার্স বা এমফিলে পড়াশোনা করার পরামর্শ দিয়েছেন।

সোমবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার কোন পথে’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। জাফরুল্লাহ্‌ চৌধুরী বলেন, ‘তারেক আমার খুব প্রিয় মানুষ। ছোটবেলা থেকেই আমি দেখেছি। এত দূর থেকে বসে তোমার মায়ের মুক্তি হবে না। প্লিজ, দুই বছর লন্ডনে একটা মাস্টার্স বা এমফিল করো।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে বাংলাদেশে যারা আছেন, তাদের কাউকে দায়িত্ব দিয়ে দাও। এখানে স্ট্যান্ডিং কমিটির হাত-পা নড়ে না, তাদের একটু বাড়ি দিয়ে পাঠাও। তারা বাড়িতে বসে থাকুন। দুই ঘণ্টা দাঁড়াতে পারে না, তাদের দিয়ে হবে না। আমাদের সময় শেষ হয়ে আসছে। আমাদের দিয়ে হবে না।’

ডা. জাফরুল্লাহ্‌ চৌধুরী বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি না হলে দেশের গণতন্ত্রের মুক্তি প্রায় অসম্ভব। তাকে মুক্ত করতে হলে বসে বক্তৃতা দিয়ে নয়, মাঠে যেতে হবে। তিনি বলেন, বিচারপতিরা জাতির বিবেক, জাতির একমাত্র আশা-আকাঙ্ক্ষার জায়গা। সেখানে তারা একটি জামিনের মামলা শুনতে সাহস পান না। নিম্ন আদালতে খুনের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তকেও সুপ্রিম কোর্ট জামিন দেওয়ার নজির আছে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার কারাবাসের দুই বছর হতে চলল। যারা তাকে কারাগারে রেখেছেন, তারা আইনের দৃষ্টিতে অপরাধী।

বিচার বিভাগ সম্পর্কে জাফরুল্লাহ্‌ চৌধুরী বলেন, আমাদের বিচারপতিরা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়ে দেখেন না। অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, ‘সবচেয়ে বড় অপরাধ বিচার বিভাগকে একাকিত্বে রাখা।’\হঅনুষ্ঠানে উপস্থিত বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারাও ওহি দ্বারা পরিচালিত হচ্ছেন। এটাই এই জাতির চরম দুর্ভাগ্য। আপনাদের ওহি আসছে লন্ডন শহর থেকে, স্কাইপের মাধ্যমে। আপনারা এটা ছাড়েন। আপনাদের মাঝে চৌকস কিছু নেতা আছেন, তাদের দায়িত্ব দিয়ে দেন। দেখবেন দেশবাসী আপনাদের পাশে আছে। পাটকল শ্রমিকরা যেমন এই শীতের মধ্যেও কম্বল গায়ে বসে আছেন, আপনারাও অন্তত দুটো দিন হাইকোর্টের মাঠে বসে থাকুন, দেখুন বিচারপতিদের বুকে সাহস আছে কিনা, তারা (বিচারপতিরা) ন্যায়ের জন্য দাঁড়ান কিনা।’

সেমিনারের প্রধান বক্তা সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলন বলেন, খালেদা জিয়া জেলে থাকলে দেশের গণতন্ত্রও জেলে। বিচারাঙ্গনে বিচার পাচ্ছি না। আইনজীবীরা মানবিক কারণে জামিন চেয়েও খালেদা জিয়ার জামিন পাননি।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের সংগঠন ন্যাশনাল ল’ ইয়ার্স কাউন্সিল (এনএলসি) আয়োজিত সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, বিএনপি নেতা গোলাম মওলা রনি প্রমুখ।

আওয়ামীলীগের একনায়কতন্ত্র চর্চা

এস এম মামুন তালুকদার, যুক্তরাজ্য

বিগত এক দশকের আওয়ামীলীগের শাসন আমলে দেশে তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য দেখা গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের কথা বলেছেন। কিন্তু একইসঙ্গে দেশজুড়ে কার্যত আওয়ামী লীগের স্বৈরাচার কায়েম করা হয়েছে। বিরোধীদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই। কেউ সরকারের সমালোচনা করলেই জামায়াত শিবিরের তকমা লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যেই প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে তারা ক্ষমতায় এসেছে তাতে করে তারা স্বৈরাচারের ধারাবাহিকতাই রক্ষা করেছে। সর্বোপরি দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোটি ভেঙে গিয়েছে।

সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী একচ্ছত্র ক্ষমতার চর্চা করেন৷ সংবিধান প্রধানমন্ত্রীকে একচ্ছত্র ক্ষমতা দিয়েছে৷ অন্যদিকে বেশির ভাগ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে দলীয়করণ ও দুর্নীতি প্রধান সমস্যা৷ এর সঙ্গে নেতৃত্বের অযোগ্যতা ও অদক্ষতার কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না এবং সর্বত্র রাজনৈতিক প্রভাব ও একনায়কতন্ত্রের সুস্পষ্ট ছাপ পরিলক্ষিত হচ্ছে।

একটি শক্তিশালী সংসদীয় রীতির সরকারের ব্যাপারে বাংলাদেশে সাংবিধানিক ও আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকলেও দুর্বল সংসদীয় সংস্কৃতি, নির্বাহী বিভাগের বিস্তৃত নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষমতাসীন দলের আধিপত্য থাকায় সংসদীয় ধাঁচে সরকার পরিচালনার স্পৃহা ও পদ্ধতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ সংসদের মতো নির্বাহী বিভাগও সরকার নিয়ন্ত্রিত। আইনসভা, নির্বাহী ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার বিভাজন পুরোপুরি অসমতল এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রাধান্যকৃত৷

আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে অব্যাহতভাবে রাজনৈতিকভাবে দলীয়করণ হওয়ায় বিতর্কিত নিয়োগ, পদোন্নতি, চাকরিচ্যুতি এবং বিচারকের আচরণের মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সার্বিকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। বিচারবিভাগের পাশাপাশি জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারাও রাজনীতিকীকরণের শিকার হয়েছেন৷ শুধু রাজনৈতিক বিবেচনা থেকে বিপুলসংখ্যক সরকারি কর্মকর্তাকে ক্ষমতাসীন দল ওএসডি করে রেখেছে৷ সরকারি কর্মকর্তাদের সততা ও নিয়োগের প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে৷ তাদের পদোন্নতির ব্যবস্থাও অস্বচ্ছ এবং সরকারি সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল৷

আইনের শাসন সমুন্নত রাখার পরিবর্তে সরকার ও রাজনৈতিক দলের স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে পুলিশ প্রশাসন নির্বিচারে ব্যবহৃত হয়ে আসছে৷ তাদের কর্মতৎপরতায় রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা এবং বিচারের ঊর্ধ্বে থাকার সুযোগ পাওয়ায় এক ধরনের বিচারহীনতার সংস্কৃতির প্রসার ঘটছে৷ রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত হওয়ায় নির্বাচন কমিশনও তার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠায় সফল হয়নি৷ কমিশনের সদস্যদের নির্দলীয় হওয়ার কথা থাকলেও তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে৷

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রাতিষ্ঠানিক ও রাজনৈতিক কারণে জর্জরিত, যা তার সার্বিক দক্ষতা ও কার্যকারিতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে৷ দুদকের সমস্যা হচ্ছে দৃঢ় রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব এবং ক্ষমতাসীন দলের দলীয় লোকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগের ব্যপারে কোনো কার্যক্রম গ্রহণ না করা। দুদকের মতো দুর্বল নেতৃত্ব, পেশাগত দক্ষতার অভাব এবং সরকারি সংস্থাগুলোর অসহযোগিতার কারণে তথ্য কমিশন ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না৷

ক্ষমতাসীন দল জনস্বার্থের নামে দলীয় স্বার্থের সম্প্রসারণে জনগণের সম্পদের ওপর একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে৷ রাজনৈতিক ব্যবস্থা ‘দুর্বৃত্তায়ন’ ও বাণিজ্যিকীকরণের অংশ হয়ে গেছে৷ ভয়ভীতি বা সুবিধা দেওয়ার নামে তারা অস্বচ্ছভাবে দলীয় তহবিল সংগ্রহ করে থাকে৷ আজকে গণমাধ্যম, নামেমাত্র স্বাধীন হলেও নিয়ন্ত্রণমূলক আইনি কাঠামোর কারণে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা, সরকারি গোপনীয়তা ও আদালত অবমাননার মতো বিভিন্ন অজুহাতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কার্যকরভাবে খর্ব করা হয়েছে৷ গণমাধ্যমের পাশাপাশি দেশের ব্যবসা খাতের আইনি কাঠামো অসামঞ্জস্যপূর্ণ৷ সরকারি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে টিকে থাকা কোন ভাবেই সম্ভব নয় এখন। তাই অনেক ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের সঙ্গে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রশ্নবিদ্ধ সম্পর্ক দেখা যায়৷

উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যতীত অন্যান্য সকল ক্ষেত্রেই আজ একচ্ছত্র আধিপত্য আওয়ামীলীগের। ক্ষমতার প্রাচুর্যে তারা একনায়কতন্ত্র তথা বাকশালি রাজনীতি কায়েম করেছে। কোথাও কোন স্বাধীনতা নেই। না জনগনের না কোন সরকারি, বেসরকারি বা ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের।

বিএনপির বিলীনের শঙ্কা রয়েছে: জি এম কাদের

নেতৃত্ব সঙ্কটে বিএনপির বিলীনের শঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন জাতীয় পার্টির (জাপা)  চেয়ারম্যান জি এম কাদের।

শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ মন্তব্য করেন তিনি।

জি এম কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ, বিএনপির পর জাতীয় পার্টিই তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তি। নেতৃত্ব সঙ্কটে বিএনপির বিলীনের শঙ্কা রয়েছে। সেক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের কাছে আওয়ামী লীগে বিকল্প হিসেবে একমাত্র জাপা রাজনীতির মাঠে থাকবে।

সম্মেলনে স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সভাপতি মনোনীত হয়েছেন লিয়াকত হোসেন খোকা আর সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হয়েছেন বেলাল হোসেন।

বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের বলেন, দেশের মানুষ জাপাকে আরো শক্তিশালী দল হিসেবে দেখতে চায়। জাপা কারও ব্যক্তিগত দল নয়, কারও জমিদারিও নয়। জাপা সবার।

জি এম কাদের বলেন, ৯১ সালের পর থেকে জুলুম-নির্যাতন আর হামলা-মামলা দিয়ে জাপাকে দুর্বল করার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু তাতে জেল জুলুমে নয়, জাপা দুর্বল হয়েছে দলের অভ্যন্তরে ষড়যন্ত্রে।

জাপার মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ বলেন, এরশাদ ৯ বছর সফলতার সঙ্গে দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করেছেন, তিনি স্বৈরাচার হতে হতে পারেন না। জাপা সন্ত্রাস লালন করেনি, ক্যাসিনো ব্যবসা করেনি, হুন্ডা-গুন্ডা লালন-পালন করেনি।

সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, গোলাম কিবরিয়া টিপু, এসএম ফয়সল চিশতী, অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া প্রমুখ। এতে অতিথি হিসেবে যোগ দেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ।

পুলিশ ছাড়া এক মিনিটও টিকতে পারবেন না: মির্জা আব্বাস

‘পুলিশ-র‌্যাব-বিজিবি ছাড়া এক মিনিটও ক্ষমতায় টিকতে পারবেন না। বিএনপি আন্দোলন করার আগেই তো আপনারা ভয় পেয়ে গেছেন। কখন কী হবে বুঝতে পারছেন না। তাই বিএনপির কর্মীদের গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মির্জা আব্বাস সোমবার এক প্রতিবাদ সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশ্যে এ কথা বলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবে বরিশাল গৌরনদী উপজেলা ও পৌর এবং আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে দলের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমানের মুক্তির দাবিতে এ প্রতিবাদ সভা হয়। এতে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা গৌতম চক্রবর্তী প্রমুখ।

মির্জা আব্বাস জানান, এ সরকারের সময় বিএনপির ৩৫ লাখ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে তিনি গর্বিত যে, তাদের দলের গ্রেপ্তার হওয়ার মতো এত নেতাকর্মী আছে। তাদের বাবা-মা, ভাই-বোনেরাও রয়েছেন। সুতরাং আওয়ামী লীগের সতর্ক হওয়া উচিত। দেশে কোটি কোটি বিএনপির সমর্থক এবং জনগণ ক্ষিপ্ত হয়ে রয়েছে।

তিনি বলেন, পেটোয়া বাহিনী দিয়ে ক্ষমতায় থাকার সক্ষমতাও এই সরকারের ফুরিয়ে আসছে। গ্রেপ্তারের ভয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা গর্তে লুকিয়ে থাকে না। তাদের এখন ভয়ের কিছু নাই।

খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য ‘ডু অর ডাই’ আন্দোলনে যেতে হবে: গয়েশ্বর

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য নিজেদের ‘ডু অর ডাই’ আন্দোলনে যেতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, কথার ফুলঝুরি দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বা দলের শীর্ষ নেতাদের খুশি করার জন্য যদি ব্যস্ত থাকি তাহলে প্রকৃত অর্থে খালেদা জিয়ার জেল আর তারেক রহমানের দেশান্তর হবে চিরস্থায়ী। সেই কারণেই আজকে মূল দায়িত্ব- ‘ডু অর ডাই’ আন্দোলন। ‘মরি আর বাঁচি’- একটা কিনারা হোক।

বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সম্মিলিত ছাত্র ফোরামের উদ্যোগে তারেক রহমানের ৫৫তম জন্মদিন উপলক্ষে আলোচনা সভায় তিনি এসব বলেন। সভার পর তারেক রহমানের দীর্ঘায়ু কামনা করে মোনাজাত করা হয়।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, দলের সব পর্যায় থেকে একটি দাবি- খালেদা জিয়ার মুক্তির জোরদার আন্দোলন। এখনই খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলনের সিদ্ধান্ত না নেওয়া অপরাধ।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সবাই আন্দোলনের কথা বলছেন। নেতারা আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারছি না। তাহলে আপনারা নেতাদের কথা শুনছেন কেন? আপনারা তাদের বাড়িঘর ঘেরাও করছেন না কেন?

গয়েশ্বর আরও বলেন, একাত্তরে যারা যুদ্ধ করেছেন তারা রক্ত দিয়ে, জীবন দিয়ে একটা দেশ এনেছেন। আজকে আমাদেরও দায়িত্ব ‘ডু অর ডাই’ আন্দোলন করা। মরে গিয়েও যদি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটা ভালো দেশ রেখে যেতে পারি তাহলেই স্বার্থকতা। নতুবা আগামী প্রজন্ম আমাদের চিতা বা কবরের সামনে গিয়ে অভিশাপ দেবে।

বিএনপির এই বলেন, খালেদা জিয়ার মতো একজন আপোষহীন নেত্রী জেলখানায় থাকবেন আর আমরা প্যারোল বা জামিন নিয়ে কোর্টে দৌড়াদৌড়ি করব- তা কেনো? আমরা রাজপথের আন্দোলন করবো। যে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তিনি কারাগার থেকে বেরিয়ে আসবেন। খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলনই সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ।

তিনি আরও বলেন, আমাদের সামনে বেশি সময় নাই। একটা ইস্যুর মধ্যে সব ইস্যু রয়েছে। সেটা হলো গণতন্ত্রের ইস্যু, খালেদা জিয়ার মুক্তির ইস্যু। এই দুইটা ইস্যু যদি ফয়সালা করতে পারি বাকি ইস্যুগুলো ভবিষ্যতে মিটবে। আর এটা যদি মীমাংসা না করতে পারি, গণতন্ত্রের সফলতা যদি দৃশ্যমান না করতে পারি তাহলে প্রতিদিন নয়, প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় ইস্যু হবে। এই সরকার দেশ পরিচালনায় অক্ষম। দুর্নীতি ও ঘুষের মধ্য দিয়ে কোষাগার করেছে খালি। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সবাইকে আন্দোলনের জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

সম্মিলিত ছাত্র ফোরামের আহ্বায়ক নাহিদুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, কেন্দ্রীয় নেতা আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, সাবেরা নাজমুল, জাসাসের শাহরিয়ার ইসলাম শায়লা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

পুলিশ বেশি আওয়ামী লীগ হয়ে পড়েছে: রিজভী

সরকারের নির্দেশনায় পুলিশ বিএনপির নানা কর্মসূচি পালনে বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

শনিবার নারায়ণগঞ্জ জেলা তাঁতী দলের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। স্থানীয় পুলিশের অনুমতি না পেয়ে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে ৫ সদস্যের নতুন কমিটির নামও ঘোষণা করা হয়।

রিজভী বলেন, নারায়ণগঞ্জে বিএনপি, তাঁতী দলসহ কেউ একটু দাঁড়ানোর সুযোগ পর্যন্ত পায় না। এজন্য নারায়ণগঞ্জ তাঁতী দলের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন ঢাকায় করতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, এর কারণ আওয়ামী লীগের চাইতে পুলিশ বেশি আওয়ামী লীগ হয়ে পড়েছে। এতো বেশি আওয়ামী লীগ হয়ে পড়েছে যে, সরকারের নির্দেশনায় বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে এবং কোনও কর্মসূচি পালনে বাধা দিতে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার এবং পুলিশ প্রশাসন এসব করছেন।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদের ওপর পুলিশি নির্যাতনের কথা তুলে ধরে রিজভী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নেওয়ার পর শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় কাজ করেন একজন অধ্যাপক। বিএনপির যেদিন জেলায় কর্মসূচি থাকে সেদিন পুলিশের কনস্টেবল পর্যায়ের সদস্য দিয়ে মামুন মাহমুদের বুকের জামা ধরে টানা হেঁচড়া করা হয়। দেশে শিক্ষিত মানুষ, স্বজ্জন মানুষ, ভদ্রলোক, শিক্ষকদের কোনও মান সম্মান দিচ্ছে না এ সরকার।

তিনি বলেন, দেশে এখন ক্যাসিনোবাজদের মান-সম্মান আছে, জুয়াড়িদের মান-সম্মান আছে কিন্তু যারা সৎ পেশায় থেকে রাজনীতি করে তাদেরকে অপমান অপদস্ত করানো হয়।

জেলা তাঁতী দলের সদ্য সাবেক সভাপতি হাজী মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে বিএনপির তাঁতী বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন ইসলাম খান, বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, তাঁতী দলের কেন্দ্রীয় আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আবদুর রহিম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

দ্বি বার্ষিকী সম্মেলনে জেলার নতুন নির্বাচিত কমিটির নাম ঘোষণা করেন রিজভী আহমেদ। এতে সভাপতি হয়েছেন এমএআর শুক্কুর মাহমুদ এবং সাধারণ সম্পাদক মাসুদ পারভেজ রুবেল। এছাড়া ইসমাইল শিকদার সিনিয়র সহসভাপতি, শফিকুল ইসলাম সহসভাপতি ও হামিদ উল্লাহ মোল্লা সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।

সরকার ও সরকারী দলের কর্মীদের বেপরোয়া আচরণ

এস এম মামুন তালুকদার, যুক্তরাজ্য

সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি সরকার ও সরকারী দলের প্রতিনিয়ত ক্রমবর্ধমান বেপরোয়া আচরণ এবং অসঙ্গতি দেখে  রাষ্ট্র এবং তার অধিকর্তাদের উপর থেকে সাধারণ মানুষের আস্থা উঠে যাচ্ছে। প্রতিমূহুর্তে তারা ধুর্ততার আশ্রয় নিয়ে বলে চলেছে তারা দেশ বাসীকে উন্নতির চরম শিখরে পৌছে দিয়েছে। শুধুমাত্র আত্নতৃপ্তি পাওয়া ছাড়া এতে তেমন কোন ফায়দা হচ্ছে বলে তো মনে হয়না।

সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতির আড়ালে দেশে দুর্নীতি চলছে। ব্যাংকের টাকা লুটপাট হচ্ছে। সোনা তামা হচ্ছে। কয়লার খনি চুরির খনিতে পরিণত হয়েছে। সর্বত্র সরকারের বেপরোয়া আচরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ দেশে অরাজকতা কায়েম করছে। দেশের মানুষ এখন শান্তিতে নেই। এভাবে দেশ চলতে পারে না। দেশের শান্তি ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে বিএনপির বিকল্প নেই।

গণতন্ত্র বিসর্জন দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থাকতে পারে না। আমাদের এখনই সোচ্চার হতে হবে গণতন্ত্র রক্ষায়। গণতন্ত্রের অভাবে দেশে আজ অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মুক্তিযুদ্ধসহ সব আন্দোলন সংগ্রামে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিলো।  অথচ এখন গণমাধ্যমের গলা চেপে ধরা হয়েছে। সরকার এবং সরকারী দলের গুনগান ছাড়া আর কিছুই তারা করতে পারবে না। মত প্রকাশের কিংবা স্বাধীনভাবে সংবাদ প্রকাশের মতো অবস্থা নেই গনমাধ্যমের। তারাও সরকারের কাছে আজ জিম্মি। এভাবে চলতে থাকলে গণমাধ্যমের অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যাবে না। গণতন্ত্রই স্বাধীনতার রক্ষাকবজ। গণমাধ্যম দলীয়ভাবে কাজ করবে সেটা জাতি আশা করে না।  গণতন্ত্র না থাকলে দেশ টিকে থাকবে না, আমাদের অস্তিত্বও খুজে পাওয়া যাবে না।

দেশের অন্যান্য সব ক্ষেত্রের মতো আইন ও বিচার বিভাগেও হস্তক্ষেপ করছে সরকার। সরকার দলীয় নেতা-কর্মীদের কোন বিচার হয়না অথচ প্রতিহিংসার দরুন বিএনপির নেতাকর্মীদের বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় ফাসিয়ে তাদেরকে হয়রানি করা হচ্ছে।  আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও মর্যাদা রক্ষার্থে আইন পেশায় সংশ্লিষ্টদেরই এগিয়ে আসতে হবে। দেশে বিচার বিভাগে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তাকে অরাজকতা বলা যেতে পারে। আইনজীবীরা যদি ঐক্যবদ্ধভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা না করতে পারেন, তবে সামনে বিপর্যয় অপেক্ষা করছে। বেগম খালেদা জিয়াকে সরকারের ইশারায় অন্যায়ভাবে কারাবন্দী করে রাখা হয়েছে। আইন তার নিজস্ব গতিতে চললে তিনি অবশ্যই মুক্তি পাবেন।

সরকার দলীয় রাজনীতি আজ এত বেশী বেপরোয়া এবং দুর্নীতিগ্রস্থ যেকারনে দলীয় বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হচ্ছে না। বিচার বিভাগ আজ প্রশ্নবিদ্ধ। দেশের মানুষকে সব ধরনের অবিচারের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য এবং দেশের মানুষ যাতে দলমত নির্বিশেষে ন্যায়বিচার পায় তার জন্য আইনজীবীদের এখানে ভূমিকা রাখার সময় এসেছে। দেশ এখন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। গণতন্ত্রকে প্রতিনিয়ত হত্যা করা হচ্ছে। দেশে অবৈধ সরকার চেপে বসেছে। এখন গণ-আন্দোলনে যেতে হবে। দেশের মানুষের মুক্তির জন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করা এখন সময়ের দাবি।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের লুটপাট, জনগণের ভোট ডাকাতি, অধিকার হরণ, দেশব্যাপী ভয়াবহ সন্ত্রাস, গুম, খুন ও ধর্ষণের মতো জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। কিন্তু জাতি এ অবস্থা থেকে মুক্তি চায়। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে যে হরিলুট হয়েছে তাতো ইতিহাসে সেরা। ৬ হাজার টাকার বালিশ- এর আগে কোন কোন প্রকল্পে কেনা হয়েছে তা জাতি জানতে চায়।  ২৫০ টাকার বাজার মূল্যে বালিশ ৬ হাজার টাকা-এ এক মহা তুঘলকি কাণ্ড। সর্বত্র সীমাহীন লুটপাট চলছে। শুধু দুর্নীতি-ই নয়, বেড়ে চলেছে বেকারের সংখ্যা ও কৃষকের হাহাকার। এ জন্য সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। নির্বিচারে সরকারের এহেন বেপরোয়া আচরণ কখনোই মেনে নেওয়া যাবেনা। তারা জবাবদিহিতার উর্ধ্বে নয়। তাদেরকে অবশ্যই জনগনের প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।

দেশব্যাপি সরকারের এই দুর্নীতি মহামারি আকার ধারণ করেছে। এখনই প্র‍য়োজন কঠোর হস্তে সরকার ও সরকারের মদদপুষ্ঠদের দমন করা। অন্যথায় দেশ ক্রমশ সংকটময় পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাবে।