ঈশ্বরদী পৌরসভায় নৌকার বিজয়

দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ইছাহক আলী মালিথা নৌকা প্রতিকে ২৮ হাজার ৫৮২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছে। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মেয়র প্রার্থী রফিকুল ইসলাম নয়ন ধানের শীষ প্রতিকে ২১৮৫ ভোট পেয়েছেন।

বিজয়ী কাউন্সিলরা হলেন- সাধারণ কামাল হোসেন, মনিরুল ইসলাম সাবু, জাহাঙ্গীর আলম, আমিনুর রহমান, ওয়াকিল আলম, আবুল হাশেম, আব্দুল লতিফ মিন্টু, আবু জাহিদ উজ্জল ও ইউসুফ হোসেন।

সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলার ফরিদা ইয়াসমিন, রহিমা খাতুন ও ফিরোজা বেগম।
ঈশ্বরদী নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও রিটার্নিং কর্মকর্তা পিএম ইমরুল কায়েস এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ঈশ্বরদী নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা রায়হান কুদ্দুস জানান, পৌরসভায় মোট ভোটার ছিল ৫৫ হাজার ৫৬৮। পুরুষ ভোটার ২৭ হাজার ২৪১ এবং নারী ভোটার ২৮ হাজার ৩২৭ জন। মোট বুথ ১৯টি এবং কেন্দ্র ছিল ১৫২টি।

‘নৌকায় সিল মাইরা ব্যালট দিয়া যান’

বৃদ্ধ হাতেম আলী ভোট দিতে কেন্দ্রে আসেন দুপুর ১২টায়। এরপর ১ নম্বর বুথে প্রবেশ করে সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারের কাছ থেকে ব্যালট পেপার নেন। তা হাতে নিয়ে ভোট দেওয়ার উদ্দেশ্যে গোপন কক্ষের দিকে যাওয়ার মুখেই বাধা পান তিনি। সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক যুবক তাঁকে থামিয়ে বলেন, ‘চাচা, কষ্ট করার দরকার নেই; এখানেই নৌকায় সিল দিয়ে ব্যালট আমার কাছে দিয়ে তারপর ভেতরে গিয়ে কাউন্সিলরদের ভোট দেন।’ মুহূর্তেই পরিস্থিতি বুঝে নিয়ে সতর্ক হয়ে যান ওই বয়োবৃদ্ধ ভোটার। তিনি ওই যুবককে উদ্দেশ করে বলেন, ‘ঠিক আছে বাবা; নেও, সিলটাও তুমরায় মার্যি দেও।’ পরে কাউন্সিলরদের ব্যালটেও প্রকাশ্যেই সিল মেরে কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসেন এই ভোটার।

গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফার পৌরসভা নির্বাচনে কুষ্টিয়ার মিরপুর পৌরসভার পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে একটি বুথের চিত্র এটি। একই চিত্র ওই কেন্দ্রের ৫ নম্বর কক্ষেও দেখা গেছে। দুপুর ১টা। একই কেন্দ্র। কয়েকজন পুলিশ সদস্য ছাড়া ভোটার উপস্থিতি তেমন নেই। কিন্তু সমর্থক ও এজেন্টে সয়লাব পুরো ভোটকেন্দ্র। কক্ষের বাইরে তালা মেরে ভেতরে চলে নৌকায় সিল মারার মহোৎসব। এই কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা ভোটার রবজেল হোসেন বললেন, ‘ব্যালট শেষ, তাই ভোট দিতে পারিনি।’ এ সময় এই ঘটনার প্রতিবাদ করায় নৌকার প্রার্থীর লোকজন স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী আরিফুর রহমানের ওপর হামলা চালায়। এলোপাতাড়ি হামলায় তিনি গুরুতর আহত হন। ঘটনার পরপরই পুলিশসহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সেখানে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। এই হামলার ঘটনা ঘিরে কেন্দ্রে কিছু সময়ের জন্য ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে।

রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বে থাকা ইউএনও লিংকন বিশ্বাস এ ব্যাপারে বলেন, ‘কেন্দ্রে হট্টগোল হওয়ার খবর পেয়ে আমি এখানে এসেছি। এই হামলার বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ কেন্দ্র দখল করে নৌকা প্রতীকে সিল মারা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থীর পক্ষ থেকে এমন অভিযোগে পেয়েছি। তবে আমার সামনে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।’

বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী রহমত আলী রব্বান এ সময় বলেন, ‘প্রশাসনের সহায়তায় প্রিসাইডিং অফিসাররা নিজেরাই ভোটার ও অন্য দলের এজেন্টদের বের করে দিয়ে ব্যালট পেপারে নৌকায় সিল মেরে বাক্স ভরছেন।’ সে সময় তিনি ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।

শীত উপেক্ষা করে ভোট কেন্দ্রে নারী ভোটারদের ভিড়

দ্বিতীয় ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে বরগুনার কমলগঞ্জ পৌরসভায় শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ চলছে। শীত উপেক্ষা করে ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হয়েছেন। বিশেষ করে কেন্দ্রগুলোতে পুরুষের চেয়ে নারী ভোটারদের উপস্থিতি বেশি।

কমলগঞ্জ মডেল সরকারী প্রার্থমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে পুরুষ ভোটার চেয়ে নারী ভোটারের উপস্থিতি দেখা গেছে। কেন্দ্রের বাহিরে ছিল দীর্ঘ লাইন। সকাল ৮টার আগেই থেকেই নারীরা ভোট কেন্দ্রে আসতে থাকেন। একই অবস্থা ৩নং কেন্দ্র কমলগঞ্জ সরকারী কলেজ ও মডেল সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে। শত শত নারী ভোটার উপস্থিত হন।

নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত কমলগঞ্জ পৌরসভায় ৯টি কেন্দ্র রয়েছে। নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে প্রতি কেন্দ্রে একজন করে মোট ৯ জন ম্যাজিষ্ট্রেট দায়িত্বে রয়েছেন। মোতায়েন করা হয়েছে  পুলিশ,বিজিবি ও আনসার। তাছাড়া প্রতি কেন্দ্রে ৭-১০ জন পুলিশসহ ১৪ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন।

হত্যার আসামি বাদ নতুন প্রার্থী নৌকার

নরসিংদী পৌর নির্বাচনে নতুন করে প্রার্থী দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। প্রয়াত মেয়র লোকমান হোসেন হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি আশরাফ হোসেন সরকারকে বাদ দিয়ে সেখানে প্রার্থী করা হয়েছে শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন বাচ্চুকে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে মনোনয়নে এই পরিবর্তন আনে আওয়ামী লীগ।

বুধবার রাতে স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভায় আশরাফ হোসেন সরকারকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। তিনি প্রয়াত মেয়র লোকমান হোসেন হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় তিনি লিখিত জবানবন্দিও দিয়েছেন। তাঁকে মনোনয়ন দেওয়ায় গতকাল কালের কণ্ঠে ‘হত্যা মামলার আসামি হলেন নৌকার প্রার্থী’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আশরাফ হোসেন সরকারকে মনোনয়ন দেওয়ার এ ঘটনার পর গতকাল আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে এই মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে চিঠি দেয় নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগ, পৌর আওয়ামী লীগসহ অন্য অঙ্গসংগঠনগুলো। চিঠিতে তারা তৃণমূলের সিদ্ধান্ত বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে প্রয়াত মেয়র লোকমান হোসেনের ছোট ভাই বর্তমান মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. কামরুজ্জামানকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানায়। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, জনপ্রিয় নেতা ছিলেন লোকমান হোসেন, নরসিংদীর উন্নয়নে যাঁর বিশাল ভূমিকা। জামায়াত-বিএনপির অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তিনি। আওয়ামী লীগের এই জনপ্রিয় নেতার হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি কিভাবে পৌর নির্বাচনে মনোনয়ন পান তা তাঁদের বোধগম্য নয়। তাঁরা বলছেন, যিনি একাধিক মামলার আসামি, দলীয় কর্মকাণ্ডে যাঁর এক যুগ ধরে সম্পর্ক নেই, সেই ব্যক্তির মনোনয়ন দলীয় নেতাকর্মীসহ তৃণমূলের সমর্থকরা মেনে নিতে পারছেন না। নেতাকর্মীদের দাবি, বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে ভুল তথ্য দিয়ে এই মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে তিনজন প্রার্থীর নাম পাঠানো হয় কেন্দ্রে। এই তিন নামের মধ্যে এক নম্বরে ছিলেন নরসিংদী শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল। তালিকায় দুই নম্বরে ছিলেন শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন বাচ্চু, তিন নম্বরে ছিলেন শহর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান। কিন্তু আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মকাণ্ডে যাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই, যিনি দলের কোনো পদেও নেই দীর্ঘদিন, সেই বিতর্কিত ব্যক্তি নৌকার মনোনয়ন পাওয়ায় দলের ভেতরে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। আশরাফ হোসেন সরকারের মনোনয়ন বাতিল করে দলের যোগ্য এবং তৃণমূলের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে প্রার্থী দেওয়ার জন্য দলের সভাপতির কাছে আবেদন জানান তাঁরা।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলছেন, তাঁরা মনেপ্রাণে আওয়ামী লীগ করেন। তাঁরা একজন জনপ্রিয় আওয়ামী লীগ নেতার হত্যা মাশলার চার্জশিটভুক্ত আসামির জন্য মানুষের কাছে ভোট চাইতে যাবেন কোন মুখে? দলের সভাপতি যেন বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে লোকমানের ভাই বর্তমান মেয়র কামরুজ্জামানকে মনোনয়ন দেন।

লোকমান হত্যা মামলা : ২০১১ সালের ১ নভেম্বর পৌর মেয়র লোকমান হোসেনকে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এ হত্যার ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই বর্তমান মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান কামরুল বাদী হয়ে ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা করেন। ওই ঘটনায় আশরাফ হোসেন সরকারকে গ্রেপ্তার করা হলে আদালতে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তৎকালীন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ মন্ডল আট মাস তদন্ত শেষে ২০১২ সালের ২৪ জুন সালাহউদ্দিনসহ এজাহারভুক্ত ১১ আসামিকে বাদ দিয়ে তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। তাঁদের মধ্যে মামলার এজাহারভুক্ত তিনজন এবং হত্যার পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে ৯ জন আসামির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এজাহারভুক্ত তিন নম্বর আসামি শহর আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ মোবারক হোসেন, দুই নম্বর আসামি নরসিংদী পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি আবদুল মতিন সরকার, তাঁর ছোট ভাই শহর যুবলীগের সাবেক সভাপতি আশরাফ হোসেন সরকারসহ ১২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। আদালতে দাখিল করা চার্জশিটে বলা হয়, নাজমুল হাসান ওরফে কিলার শরীফ সরাসরি হত্যাকাণ্ড ঘটান। হত্যার পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র করে মোবারক হোসেন ওরফে মোবা, আশরাফুল ইসলাম সরকার, আবদুল মতিন সরকার, হাজি ফারুক ও শাহিন মিয়ার হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পীরজাদা কাজী মো. আলী বলেন, ‘লোকমান হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। সেই কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে আমি এখনো দায়িত্ব পালন করছি। এখন সেই আমি কী করে লোকমান হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি আশরাফ হোসেন সরকারের জন্য মানুষের কাছে ভোট চাইতে যাব? তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এ ঘটনায় আমাদের ধিক্কার দিচ্ছে। কোনোভাবেই মেনে নিচ্ছে না। আশরাফের মনোনয়ন বাতিল করে অন্য কাউকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানিয়ে নেত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছি। আশা করছি আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের চাওয়া তিনি পূরণ করবেন।’

নরসিংদী শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন বাচ্চু বলেন, ‘আশরাফ হোসেন সরকারের মতো একজন ব্যক্তিকে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ায় আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা হতবাক এবং ক্ষুব্ধ। তাঁর এই মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে আমরা কেন্দ্রে চিঠি দিয়েছি। শুধুু হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি নন, তিনি গত ১০ বছরের মধ্যে আওয়ামী লীগের কোনো দলীয় পদে নেই। কোনো কর্মসূচিতেও তাঁকে দেখা যায়নি।’

জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান শামীম নেওয়াজ বলেন, ‘আমার ভাইকে যিনি হত্যা করলেন, আদালতে স্বীকারোক্তিও দিলেন, চার্জশিটও হলো, সেই তিনি এখন নৌকা প্রতীক পেলেন। আর আমি জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হয়ে তাঁর জন্য ভোট চাইতে হবে! আমাদের নেত্রী নিশ্চয়ই বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবেন।’

জেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘শুধু লোকমান হত্যার আসামিই নন, একাধিক মামলার আসামি আশরাফ সরকার। তিনি ১০ বছর ধরে দলের সঙ্গে নেই। এমন ব্যক্তিকে মেনে নিতে পারি না। আমরা নিশ্চিত বঙ্গবন্ধুর কন্যা এমন একজন ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিতে পারেন না।’

নেতৃত্বের ‘দ্বন্দ্ব’ থেকে সহিংসতা

তে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাত বেধেছে এবং পুনরায় সংঘাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। করোনার কারণে স্থগিত হওয়া সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২৭ জানুয়ারি।

দলীয় নেতা–কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্রোহের মূলে রয়েছে নগর আওয়ামী লীগের পুরোনো বিরোধ। একটি পক্ষে সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন এবং অপর পক্ষে রয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। মহিবুল সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে। এবার দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে প্রাধান্য পেয়েছেন মহিবুলের অনুসারীরা। ফলে নাখোশ হন নাছিরপন্থীরা।

পাঠানটুলী ওয়ার্ডেও দলীয় মনোনয়ন পান মহিবুলের পক্ষের নজরুল ইসলাম বাহাদুর। নাছিরের অনুসারী সদ্য সাবেক কাউন্সিলর আবদুল কাদের বিদ্রোহী প্রার্থী হন সেখানে। দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনার পর তা গড়ায় সংঘাতে। পাঠানটুলীর ঘটনায় নিহত আজগরের ছেলে সেজান মাহমুদের বাদী হয়ে করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন প্রার্থী কাদেরসহ ১৩ জন। তাঁদের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এর আগে প্রথম দফা প্রচারণার সময় গত বছরের ১৮ মার্চ দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডে দুই প্রার্থীর রেষারেষিতে জাহিদ তানভির নামের এক যুবক খুন হন। সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. ইসমাইল হোসেন উপমন্ত্রী মহিবুলের অনুসারী। বিদ্রোহী হয়েছেন সদ্য সাবেক কাউন্সিলর নাছিরপন্থী মোরশেদ আকতার চৌধুরী। জাহিদ তানভির সাবেক কাউন্সিলর মোরশেদ আকতারের সমর্থক বলে পরিচিত ছিলেন।

আজগর আলী বাবুল

আজগর আলী বাবুল
ছবি: সংগৃহীত

মঙ্গলবারের খুনের ঘটনার পর গতকাল বুধবার রাতে জরুরি বৈঠকে করেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।

আওয়ামী লীগের নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাংসদ মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্রোহীদের পেছনে কারও কারও ইন্ধন থাকতে পারে। কিন্তু এটা তাঁরা ভুল করছেন। ইন্ধনদাতা অভিভাবকদের উচিত বিদ্রোহীদের দু–তিন দিনের মধ্যে প্রচারণা বন্ধ করে দিতে বাধ্য করা।

বিরোধ সম্পর্কে জানতে চাইলে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে বিদ্রোহের নাম দিয়ে খুনি–সন্ত্রাসীর মাধ্যমে হত্যার রাজনীতি চালু করা হচ্ছে। আমার গ্রুপ বা সাবেক মেয়রের (নাছির) গ্রুপ—যে–ই হোক না কেন, যাঁরা মনোনয়ন পেয়েছেন, তাঁরা সবাই স্বচ্ছ ভাবমূর্তির।’

আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঙ্গে যোগাযোগের একাধিকবার চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও সহিংসতা নিয়ে নির্বাচন কমিশন এবং পুলিশ প্রশাসনও ভাবনায় রয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে কয়েক দিন আগে একটি প্রতিবেদনও সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। বিরোধপূর্ণ ওয়ার্ডগুলোর দিকে নজর রেখেছে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ও।

বাবুল হত্যার নেপথ্যে

নজরুল ইসলাম বাহাদুরের পক্ষ নেওয়ার কারণে বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল কাদেরের সঙ্গে আজগর আলী ওরফে বাবুলের বিরোধ শুরু হয়। এর আগেরবারের নির্বাচনে মহল্লা সরদার আজগর ছিলেন কাদেরের পক্ষে। তখন কাদের বাহাদুরকে হারিয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন।

গতকাল দুপুরে নিহত আজগরের পাঠানটুলী ওয়ার্ডের কাটা বটতল এলাকার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন মেয়ে মিথিলা ও আজগরের মা জোছনা বেগম।

মা জোছনা বেগম বলেন, ‘আমি কাদেরকে ছাড়ব না। তাঁর ফাঁসি চাই। বাহাদুরের পক্ষে এবার আমার ছেলে যাওয়ায় কাদের হুমকি দিয়েছিল।’

এলাকাবাসী জানান, সরদার হওয়ায় আজগরের প্রভাব রয়েছে এলাকায়। এ জন্য কাদের তাঁর ওপর খেপেছেন। এ ছাড়া কাদেরের এবার প্রতীক ছিল ব্যাডমিন্টন। গত মঙ্গলবার সকালে ব্যাডমিন্টন আকৃতির কিছু লোহার র‍্যাকেটসদৃশ অস্ত্র বানানোর সময় বাবুল তা ধরিয়ে দেন। এটাও বাবুলের ওপর কাদেরের ক্ষিপ্ত হওয়ার কারণ। এ ছাড়া বাহাদুরের পক্ষ নিয়ে বাবুল নিজের ফেসবুক পেজে ‘মাছ কাদের’–এর নাম উল্লেখ করে কয়েকটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন এক সপ্তাহ ধরে। সাবেক কাউন্সিলর আবদুল কাদের ‘মাছ কাদের’ নামে পরিচিত।

আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর বলেন, ‘নির্বাচনে আমার পক্ষে আসার কারণে তাঁর (বাবুল) ওপর ক্ষিপ্ত হয় কাদের। সে কারণে বাবুলকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয় বলে মনে করি।’

আজগর হত্যায় গ্রেপ্তার হওয়া বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল কাদেরসহ (হেলমেট পরা) ১৩ জনকে আদালতে হাজির করা হয়। বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম আদালত ভবনে।

আজগর হত্যায় গ্রেপ্তার হওয়া বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল কাদেরসহ (হেলমেট পরা) ১৩ জনকে আদালতে হাজির করা হয়। বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম আদালত ভবনে।
ছবি: প্রথম আলো

সিসি ক্যামেরা বন্ধ

পাঠানটুলী ওয়ার্ডের মগপুকুর পাড় এলাকাটি কাদেরের আস্তানা হিসেবে পরিচিত। মঙ্গলবার রাতে সেখানে বাহাদুর তাঁর সমর্থকদের নিয়ে প্রচারণায় যান। এ সময় গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
ডবলমুরিং থানার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, ঘটনাস্থল ও আশপাশে সাতটি সিসি ক্যামেরা ছিল। কিন্তু সেগুলো ভাঙা পাওয়া গেছে। কোনো রেকর্ডও পাওয়া যায়নি। ঘটনা পরিকল্পিত নাকি তাৎক্ষণিকভাবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

নগর পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর প্রথম আলোকে বলেন, পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।

দুই পক্ষে গোলাগুলি হয়েছে কি না, তা–ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় মাহবুব নামের একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মিন্টু নামের একজন চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁর মাথা ফেটে যায়। তিনি কাদেরের অনুসারী। অলি নামের অপর একজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ভর্তি রয়েছেন। অলি নিজেকে পথচারী দাবি করেছেন।

জানাজায় ছিলেন না মাহাতাব-নাছির

গতকাল বিকেল সাড়ে চারটায় আগ্রাবাদ কমার্স কলেজের সামনে রাস্তায় আজগরের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী, নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনানসহ নেতা–কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে ছিলেন না দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন।

জানাজায় নিহতের বড় ছেলে সেজান মাহমুদ বলেন, ‘আবদুল কাদের, হেলাল, রিপনেরা আমার বাবাকে হত্যা করেছে। আমি তাদের শাস্তি চাই।’

নির্বাচনে এমন সহিংসতা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য শুভ নয় বলে মন্তব্য করেছেন সচেতন নাগরিক কমিটি চট্টগ্রামের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার মজুমদার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচন বড় দলগুলোর ক্ষমতাকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। মনোনয়ন না পেলে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিদ্রোহী প্রার্থী হন বেশি। কারণ, তাঁরা জানেন, হয়তো এমন হলে প্রশাসনের আনুকূল্য পাবেন। আর বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলা হলেও তা মূলত দৃশ্যমান হয় না। এ জন্য তাঁরা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন, সহিংসতায় লিপ্ত হন। এ জন্য নির্বাচন কমিশনকে শক্ত হতে হবে।

লজ্জা থাকলে পদত্যাগ করুন, নির্বাচন কমিশনকে মির্জা ফখরুল

বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশনের যদি ন্যূনতম লজ্জা থাকে, তাহলে তাদের এই মুহূর্তে পদত্যাগ করে উচিত।’

আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত মানববন্ধনে এসব কথা বলেন তিনি। নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগের দাবিতে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন এ দেশের সবচেয়ে ঘৃণিত ও ধিক্কৃত একটি প্রতিষ্ঠান। আমরা বারবার নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ চেয়েছি, সরিয়ে দিতে বলেছি। শুধু আমরা রাজনীতিবিদেরা নই, দেশের যাঁরা বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী আছেন, দেশের যে এনজিও আছে, এমনকি বিদেশের সংস্থাগুলো বলছে, এই নির্বাচন কমিশনকে না সরালে দেশে কখনোই একটি সুষ্ঠ নির্বাচন হবে না।’

ফখরুল বলেন, যখন এই নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়, তখন সম্পূর্ণ পক্ষপাতিত্বভাবে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই নির্বাচন কমিশন কখনোই সুষ্ঠভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে না।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই কমিশন শুরুতে দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। শুধু তা–ই নয়, তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। তাদের সেই যোগ্যতা নেই যে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করবে। জাতীয় নির্বাচন গেছে, এখন স্থানীয় সরকার নির্বাচন তারা একইভাবে লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। ভোট চুরি করে নিয়ে যাওয়ার পর সিইসি বলেন, ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। এতই সুষ্ঠু হয় যে কোনো কোনো কেন্দ্রে শতকরা ১০০ ভাগের বেশি ভোট পড়ে যায়।

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, আজকে একটি বিশেষ কালো দিন। ২০০৭ সালের এই দিনে একটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের মধ্যে দিয়ে সেনা–সমর্থিত একটি অবৈধ ও বেআইনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়েছিল। যারা অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে, সচেতনভাবে বাংলাদেশে বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়াকে সম্পন্ন করেছিল। সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পথ ধরে আজকে আওয়ামী লীগ একইভাবে বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়া চালাচ্ছে।

সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখনো সময় আছে পদত্যাগ করুন। না হলে এ দেশের মানুষ জাগ্রত হয়ে বাধ্য করবে। আসুন, সব রাজনৈতিক দল মিলে আমরা এই সরকারকে বিদায় দেওয়ার জন্য বৃহত্তর ঐক্য গঠন করি। আমাদের ভোটাধিকার রক্ষা করার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে এই সরকার সরানোর আন্দোলন করি।’

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিবুন নবী খান সোহেল আজকের মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন। এ সময় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দীন আলম, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধুর প্রথম ভাষণে দেশ পরিচালনার সব রকম দিকনির্দেশনা ছিল: প্রধানমন্ত্রী

ধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে স্বাধীন দেশে ফিরে দেওয়া জাতির পিতার ভাষণে একটি স্বাধীন দেশ পরিচালনার সব রকম দিকনির্দেশনা ছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকায় এসেই জাতির পিতা রেসকোর্সের ময়দানে ছুটে যান। তারপর সেখানে যে ভাষণটি দেন, তাতে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পরিচালনার সব রকম দিকনির্দেশনা ছিল। অথচ, হাতে কোনো কাগজ ছিল না, নিজে থেকেই বলেছেন।’

জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে রোববার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভায় অংশগ্রহণ করেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সভার আয়োজন করা হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘একজন মানুষ একটি জাতির প্রতি কতটা নিবেদিত হলে, মানুষকে কতখানি ভালোবাসলে এমন আত্মত্যাগ করতে পারে। তা জানতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ আমাদের নতুন প্রজন্মের ৭ মার্চের ভাষণ এবং ১০ জানুয়ারির ভাষণ বারংবার শোনা উচিত। তাহলেই রাজনীতি করার একটা প্রেরণা এবং দিকনির্দেশনা সবাই পাবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে মানুষের জন্য জাতির পিতা আজীবন ত্যাগ এবং সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করেছেন, তাঁর স্বাধীন দেশে ফিরে এসেই রেসকোর্সের ময়দানে সেই মানুষের কাছে তিনি ছুটে গিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার পাকিস্তানি কারাগারে থেকে ৪০ পাউন্ড ওজন কমে যায়। তবু মুক্তি পেয়ে তিনি সেই জীর্ণশীর্ণ দেহ নিয়েই লন্ডন চলে যান এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন, সংবাদ সম্মেলন করেন এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখান থেকে তিনি দিল্লি হয়ে দেশে ফেরেন। দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং দেশটির রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয় এবং সেখানেও তিনি জনগণের সামনে বক্তৃতা দেন। এরপর ঢাকায় এসেই তিনি রেসকোর্সের ময়দানে ছুটে যান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশকে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ থেকে মুক্ত রেখে উন্নত–সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব, জাতির পিতার এই প্রত্যাবর্তন দিবসে এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাসের জন্য ইতিমধ্যে ভ্যাকসিন ক্রয় করার সমস্ত ব্যবস্থা আমরা করেছি। ইনশা আল্লাহ এসে যাবে। তারপরও বলব সবাইকে স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে চলতে হবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে নিজেকে এবং অন্যকেও রক্ষা করতে হবে।’ গত বছরের মার্চ মাসে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ঊর্ধ্বগতির বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘আবারও হয়তো সেই সময় একটা ধাক্কা দিতে পারে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই করোনাভাইরাস আমাদের অগ্রযাত্রাকে কিছুটা হলেও ব্যাহত করেছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। করোনাভাইরাসের জন্য যেভাবে কাজ করার কথা, সেভাবে করতে পারছি না। কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যে জাতির জন্য জাতির পিতা এত ত্যাগ স্বীকার করে গেছেন, সেই দেশের সকল মানুষের একটা ঠিকানা, অর্থাৎ গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষকে আমরা ঘর করে দেব।’

নানা কর্মসূচিতে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালিত

সকালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবনসহ সারা দেশে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। সকাল ৯টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দলের পক্ষ থেকে জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান। ধানমন্ডি, ১০ জানুয়ারি

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দলের পক্ষ থেকে জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান। ধানমন্ডি, ১০ জানুয়ারি

পরে ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা নিবেদনকালে আওয়ামী লীগের সদস্য সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, আবদুর রাজ্জাক, আবদুল মতিন খসরু, শাজাহান খান ও জাহাঙ্গীর কবির নানক, তথ্যমন্ত্রী ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এ ছাড়া ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, যুবলীগ, বাংলাদেশ কৃষক লীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এদিকে দিবসটি উপলক্ষে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে কৃষক লীগ আলোচনা সভা ও শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচির আয়োজন করে। সকালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ প্রাঙ্গণে দোয়া মাহফিল, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী ও দুস্থদের মধ্যে রান্না করা খাবার বিতরণ করে আওয়ামী যুবলীগ।

রিজভী প্রটোকল ও সৌজন্যের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন: হাফিজ উদ্দিন

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রটোকল ও সৌজন্যের ‘ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন’।

শনিবার রাজধানীর বনানীর নিজ বাসভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।

মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি একজন যুদ্ধাহত, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা, বিজয়ের মাসে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে অসৌজন্যমূলক ভাষায় অসত্য অভিযোগ সংবলিত কারণ দর্শানোর নোটিশ পেয়ে হতবাক হয়েছি। আমি বিগত ২৯ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতি সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, আমার যোগদানের তারিখ, ভাইস চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পাওয়ার তারিখ, আমার নামের বানানসহ অনেক ভুলই রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত চিঠিতে দৃশ্যমান। দলের ভাইস চেয়ারম্যানকে একজন যুগ্ম মহাসচিব (আদিষ্ট না হয়েও) এমন কঠিন, আক্রমণাত্মক ভাষায় কৈফিয়ত তলব করায় অত্যন্ত অপমানিত বোধ করছি। এখানে প্রটোকল ও সৌজন্যের ব্যত্যয় ঘটেছে।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপিতে যোগদানের পূর্বেই আমি তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলাম। ১৯৯১ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থীরূপে সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বিএনপিতে যোগদান করেছিলাম। আমি বিগত ২২ বছর ধরে দলের অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছি। ব্যক্তি রুহুল কবির রিজভী একজন ভদ্র, নিষ্ঠাবান ও ত্যাগী নেতা। তার সঙ্গে আমার সু-সম্পর্ক রয়েছে। তার কাছ থেকে এ ধরনের চিঠি আশা করিনি।’

শোকজ নোটিশের অভিযোগের জবাবে হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘দলীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করেই পত্রে বর্ণিত অভিযোগ সম্পর্কে আমার নিম্নরূপ বক্তব্য পেশ করছি। আমাকে কখনো বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের কেন্দ্রীয় মনিটরিং কমিটির আহ্বায়ক পদের অফার অসুস্থতার জন্য গ্রহণ করতে পারিনি। আমার বর্তমান বয়স ৭৬ বছর ২ মাস, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি কিংবা স্থায়ী কমিটিতে আমার চাইতে বয়স্ক ব্যক্তির সংখ্যা চারের অধিক হবে না বলেই আমার ধারণা।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে অনুষ্ঠিত সভায় যোগদানের পূর্বেই পুলিশ আমাকে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে, এ কারণেই বরিশাল যেতে পারিনি। আমার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের মিথ্যা অভিযোগ এনেছিল বর্তমান সরকার। বিএনপির কোনো সিনিয়র নেতার বিরুদ্ধে এ ধরনের মারাত্মক অভিযোগ দায়ের করার কথা আমার জানা নেই। এ মামলা ছাড়াও এক ডজন মামলায় আমি গত ১০ বছর ধরে নিয়মিত হাজিরা দিয়ে যাচ্ছি।’

দলীয় সভায় যোগ দেন না- এমন অভিযোগ খণ্ডন করে মেজর (অব.) হাফিজ বলেন, ‘আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। অতীতে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসসহ মহান মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে জড়িত স্মরণীয় দিবসসমূহে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হতো, গত দেড় বছরে এ ধরনের অনুষ্ঠানেও দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা আমাকে ডাকার প্রয়োজন বোধ করেননি। বোঝাই যাচ্ছে- বিএনপিতে মুক্তিযোদ্ধাদের কোনঠাসা করে রাখার জন্য একটি মহল সক্রিয় রয়েছে। বিগত এক বছরে আমি জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত ছয়টি সভায় অংশগ্রহণ করেছি, আয়োজক জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল দুটি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি দুটি, বিএনপি ঘরানাভুক্ত সংগঠন একটি। দেশের খ্যাতনামা মুক্তিযোদ্ধারা এই সভাসমূহে অংশগ্রহণ করেছিলেন।’

অসৎ উদ্দেশ্যে বিএনপির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছেন- এমন আভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি একেবারেই অসত্য ঢালাও মন্তব্য। বিগত ১২ ডিসেম্বর প্রেসক্লাব অডিটোরিয়ামে রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক বিমানবাহিনী প্রধানসহ অবসরপ্রাপ্ত সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের এক সভায় আমি শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারে অধীনে নতুন নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়েছি। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় আমি দলীয় স্বার্থ ও শৃঙ্খলাবিরোধী কোনো বক্তব্য দেইনি।’

মিডিয়ায় তার বক্তব্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়- এমন অভিযোগ করে বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘বর্তমানে সকল প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া ক্ষমতাসীন সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন, এখানে আমাদের বক্তব্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রায়শ বিকৃত এবং খণ্ডিতভাবে প্রচার করা হয়। আমি ৩৪ বছর যাবৎ রাজনীতি করছি, কখনো কারও বিরুদ্ধে এমনকি প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেও রাজনৈতিক শিষ্ঠাচার বহির্ভূত বক্তব্য রাখিনি। অনির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধেও অনেকবার বক্তব্য রেখেছি, কিন্তু কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করিনি।’

তিনি বলেন, ‘আমি দলের কোনো গুরুত্বপূর্ণ নেতা নই, তবুও আমার ওপর অর্পিত সকল দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার চেষ্টা করছি। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সংশ্লিষ্টতার জন্য গত ৬ বছরে চারবার পুলিশ কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়েছি। আমাকে বাসা থেকে নয়, রাজপথ থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।’

মেজর (অব.) হাফিজ আরও বলেন, ‘২০১৪ সালে বিএনপির ঢাকা ঘেরাও কার্যক্রমে সন্ধ্যার পর গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের না পাওয়ায় আমাকেই নেত্রীর নির্দেশে প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করতে হয়েছে। সেখানেই পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলাম। দুই মাস নারায়ণগঞ্জ কারাগারে বন্দি ছিলাম। দেশনেত্রীকে যেদিন কারাগারে নেওয়া হয় আদালত চত্বরে আইনজীবী ব্যাতীত কেবলমাত্র তিনজন স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং আমি উপস্থিত ছিলাম, টেলিভিশন চ্যানেলে সরকারের নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মূখর হয়েছিলাম। অথচ আজ আমার বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ আনা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বেগম জিয়া জনপ্রিয়তার শিখরে অবস্থানকারী সংগ্রামী নেত্রী, তাকে অসম্মান করার প্রশ্নই আসে না। জিয়া পরিবারের কোনো সদস্যের প্রতি কখনোই কটূক্তি করিনি, ভবিষ্যতেও করবো না। রাজনীতি ছেড়ে দিলেও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আদর্শ হৃদয়ে লালন করবো। আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকবো। আমি দেশের বৃহৎ, জনপ্রিয় দলের বর্ষীয়ান সদস্য, কোন মূক ও বধির স্কুলের ছাত্র নই।’

সরকার জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে: জাফরুল্লাহ

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, সরকার জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এই ষড়যন্ত্রের মূল ভিত্তি দুর্নীতি। ৭ হাজার কোটি টাকা দিয়ে যে পদ্মা সেতু হতো, সেটা এখন ৫০ হাজার কোটিতে পৌঁছেছে। এই টাকা কোথায় যাবে? এরকম হাজারটা প্রমাণ আছে।

শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) আয়োজিত বিজয়ের ৪৯ বছর: জনতার গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

ভাস্কর্য বিতর্ক প্রসঙ্গে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আজকে আলেমদের দিয়ে যে বিতর্ক আনা হয়েছে তার জন্য আওয়ামী লীগ দায়ী। বিমানবন্দরের সামনে লালনের ভাস্কর্য ছিল সেটা নিয়ে হুমকি ধামকি শুনে সরকার চুপচাপ বসে ছিল। এখন তারা শেখ মুজিবের ভাস্কর্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। আলেমরা শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। আপনাদের অযথা বিতর্কে জড়িয়ে পড়া ঠিক না। আজকে ভাস্কর্য বিতর্কে যাওয়া ইসলামের জন্য ক্ষতিকর। ভাস্কর্য বিতর্কে না জড়িয়ে জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আসেন।

বিএনপির উদ্দেশে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বিএনপির উচিত হবে খালেদা জিয়াকে ঘরের মধ্যে আবদ্ধ না রেখে তাকে প্রতিদিন এক ঘণ্টা রোদের মধ্য বসতে হবে। যাতে জনগণ দেখতে পায় তাদের নেত্রীকে অন্যায়ভাবে আটকে আন্দোলনটাকেই আটকে রাখা হয়েছে। বিচারকরা একটা অন্যায় বিচার করেছেন। দুই কোটি টাকার জন্য সেই বিচার এখনো শেষ হয়নি। অন্তত পক্ষে জামিনটা তো অবশ্যই হওয়া উচিত।

তিনি বলেন, বিএনপির ক্ষমতায় আসতে হলে তারেক রহমানকে নয় তার একমাত্র মেয়ে জায়মা রহমানকে সঙ্গে নিয়ে নামতে হবে। তারেকের বক্তব্য দিয়ে ক্ষমতায় আসতে পারবেন না কোনো দিন। আপনারা যদি সত্যিকার অর্থে ক্ষমতায় আসতে চান, জনগণের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করতে চান তাহলে জাইমাকে সঙ্গে নিয়ে নামতে পারেন। আমি তারেককে কোনো দোষ দিচ্ছি না। বাস্তবতা বলে একটা কথা আছে। আমরা বললেই তার বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার হবে না এবং বাংলাদেশের মাটিতে ফিরতে পারবেন না। একমাত্র গণতন্ত্রের বিজয় হলেই তারেক দেশে ফিরতে পারবেন।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, যদি জায়মা আসেন তাহলে তাকে নিয়ে সারাদেশ ঘুরে বেড়াতে হবে। তখনই দেখবেন জোয়ার কিভাবে উঠে, তখনই শেখ হাসিনা টের পাবেন তার যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী এসেছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা ঘরের ভেতর যেসব কথা বলি কাজে তা প্রমাণ করি না। বিশেষ করে বিএনপির বেলায় একথা প্রযোজ্য। বিএনপিতে যেখানে মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকনের মতো লোক আছে সেখানে খালেদা জিয়া কেন চুপচাপ গুলশানের মতো বাড়িতে আবদ্ধ থাকবে।

জাগপার সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, জাগপার প্রেসিডিয়াম সদস্য খোন্দকার আবিদুর রহমান প্রমুখ।

বাবুনগরী ও মামুনুলের গ্রেপ্তার দাবি ৬৫ সংগঠনের

হেফাজতে ইসলামের আমির জুনাইদ বাবুনগরী, যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক ও তাঁদের সহযোগীদের গ্রেপ্তারসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছে দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবীদের ৬৫টি সংগঠন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে সংগঠনগুলো একযোগে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে এ দাবি জানিয়েছে।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উদ্যোগে বেলা আড়াইটার দিকে মানববন্ধন শুরু হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই এটি মৎস্য ভবন থেকে শুরু করে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, শাহবাগ মোড় ঘুরে ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে।
বেলা তিনটার দিকে শুরু হয় সমাবেশ। সমাবেশে বক্তারা বলেন, ভাস্কর্য একটি দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির অংশ। সৌদি আরব, তুরস্ক, ইরান, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়াসহ পৃথিবীর সব মুসলিম দেশেই ভাস্কর্য আছে। কিন্তু বাংলাদেশে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ‘একটি গোষ্ঠী’ ভাস্কর্যবিরোধী ‘উসকানিমূলক’ বক্তব্য দিচ্ছে। এই গোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। এটি চরম ধৃষ্টতা ও জাতির পিতা, সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অবমাননা। এই গোষ্ঠীকে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। তারপরও তারা যদি ধৃষ্টতা দেখায়, তবে তাদের এর পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
মানববন্ধন ও সমাবেশে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবেদ খান। এতে বলা হয়, বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত হেফাজত-খেলাফতের মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক নেতারা ওয়াজের নামে সমাবেশ করে ভাস্কর্যের বিরোধিতা করছেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশকে তাঁরা পাকিস্তান ও তালেবানি সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত করতে চান।

মানববন্ধন ও সমাবেশ শেষে ফুল নিয়ে সোহরাওয়ার্দীতে শিখা চিরন্তনে যান সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা
মানববন্ধন ও সমাবেশ শেষে ফুল নিয়ে সোহরাওয়ার্দীতে শিখা চিরন্তনে যান সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতায় সরব রয়েছেন হেফাজতে ইসলামের নেতা জুনাইদ বাবুনগরী ও মামুনুল হক। তাই আজকের কর্মসূচিরও মূল দাবি ছিল এই দুজনকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা। ঘোষণাপত্রে তুলে ধরা অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে অবিলম্বে বাংলাদেশে জামায়াত-হেফাজতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। ওয়াজ মাহফিলের নামে ভিন্নমত, নারী এবং ভিন্ন জীবনধারায় বিশ্বাসীদের প্রতি ঘৃণা-বিদ্বেষ প্রচারকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার ভাস্কর্য সম্পর্কে যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, তার প্রতি ঘৃণা ও ক্ষোভ জানানোর কোনো ভাষা খোঁজে পাচ্ছি না। তারাই এ কাজ করছে যারা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় বলেছে “বাংলা” ইসলামের ভাষা নয়, ১৯৫৪-এর নির্বাচনের সময় বলেছে যুক্তফ্রন্টকে ভোট দিলে স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে। তারাই ১৯৭০-এর নির্বাচনে ইসলামকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে বাংলার মুক্তিকামী মানুষকে ঠেকাতে চেয়েছে, মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা করেছে।’ এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান মন্ত্রী।

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতাকারীদের ‘আস্ফালন’ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, আস্ফালন বন্ধ করুন, না হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষ রাজপথেই এর জবাব দেবে, যার পরিণাম ভালো হবে না। আর ধৃষ্টতা দেখালে পরিণামের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, যারা ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করে, তারাই বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতা করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। কিন্তু তাদের মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা এখনো বেঁচে আছেন।
কর্মসূচিতে সংহতি জানান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি বলেন, পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়াতেও ভাস্কর্য আছে। ভাস্কর্য ও মূর্তির পার্থক্য বালকও বোঝে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য হবে কেউ ঠেকাতে পারবে না ঘোষণা দিয়ে মেয়র বলেন, ধর্ম ব্যবসায়ীরাই এর বিরোধিতা করছে। ধর্ম ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সংগ্রাম এখনো শেষ হয়নি।’

পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের মহাসচিব ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য কামরুল হাসান খান বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি বারবার ষড়যন্ত্র করেছে, এখন আবার ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাংলাদেশে মৌলবাদী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না।
জাসদের সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ শিরীন আখতার বলেন, যারা ষড়যন্ত্র করছে তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা, ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তারা ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করে। এই ব্যবসায়ীদের বঙ্গোপসাগরে ডুবিয়ে মারা হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা এখনো জীবিত আছি। মৌলবাদী শক্তিকে যে করেই হোক প্রতিহত করতে হবে। বাংলাদেশে তাদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই।’ বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সভাপতি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, জাতির পিতাকে যারা অবমাননা করছে, তাদের দেশ থেকে বিতাড়িত করতে হবে।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে মানববন্ধন ও সমাবেশ কর্মসূচিতে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক পরিচালক উত্তম কুমার বড়ুয়া, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ, প্রজন্ম একাত্তরের সভাপতি আসিফ মুনীরসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

সমাবেশ শেষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দিনের কর্মসূচি শেষ হয়। তবে এমন প্রতিবাদী কর্মসূচি বিজয়ের মাসজুড়ে চলবে বলে আয়োজকেরা জানিয়েছেন।

অংশ নেওয়া সংগঠন

আজকের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী সংগঠনগুলোর মধ্যে আছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সেক্টরস কমান্ডারস ফোরাম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা অ্যাসোসিয়েশন, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, প্রজন্ম ’৭১, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াও, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, ইতিহাস সম্মিলনী, জাতীয় কবিতা পরিষদ, সম্প্রীতি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ, বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা, বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু গবেষণা সংসদ, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, বাংলাদেশ যুব মৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদ), জাতীয় যুব জোট, ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ কেন্দ্র, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলন, বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ, ’৭২-এর সংবিধান পুনঃপ্রবর্তন জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় খেলাঘর, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ কেন্দ্র, মুক্তিযুদ্ধ সংহতি পরিষদ, বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ), বাংলাদেশ ফার্মাসিস্ট ফোরাম, গৌরব ’৭১, অপরাজেয় বাংলা, মুক্তিযুদ্ধের শহীদ স্মৃতি পাঠাগার, কর্মজীবী নারী, জাতীয় নারী জোট, নারী মুক্তি সংসদ, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ, শেখ রাসেল ফাউন্ডেশন ইউএসএ (বাংলাদেশ চ্যাপটার), জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ মোর্চা, সেক্যুলার ইউনিটি বাংলাদেশ, ইয়ুথ ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, আওয়ামী প্রজন্ম লীগ, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, ঘাসফুল শিশু কিশোর সংগঠন, বাংলাদেশ মানবাধিকার আন্দোলন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ ও আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ।