অ্যাটর্নি জেনারেলের ‍উচিত পদত্যাগ করা: বিএনপি

রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেলকে আওয়ামী লীগের উপকমিটির সদস্য করায় বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিএনপি। দলটি বলেছে, একটি সাংবিধানিক পদের অধিকারীকে দলীয় পদে নিযুক্ত করা দেশের ইতিহাসে একটি নতুন ঘটনা। আর নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তার কার্যালয়কে নগ্ন দলীয়করণের অপচেষ্টা ও মন্দ দৃষ্টান্ত।

আজ সোমবার দুপুরে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে নজরুল ইসলাম খান এ কথা বলেন। গত শনিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চ্যুয়াল বৈঠকের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনে আয়োজন করা হয়।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনকে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপকমিটিতে নিয়োগ করায় বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করে।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপি দৃঢ়ভাবে মনে করে, দেশের বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ও রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তার পদের নিরপেক্ষতা যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অ্যাটর্নি জেনারেলের ‍উচিত হয় দলীয় পদ কিংবা অ্যাটর্নি জেনারেলের পদ থেকে পদত্যাগ করা। যারা তাঁকে নিয়োগ দিয়েছে, তাদেরও উচিত অনৈতিক এই বিষয়টির গুরুত্ব ও জনমনে এর অনিবার্য বিরূপ প্রতিক্রিয়া বিবেচনা করে দলের উপকমিটি থেকে অবিলম্বে অ্যাটর্নি জেনারেলকে বাদ দেওয়া।

খালেদা জিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার দাবি

সংবাদ সম্মেলনে অসুস্থ খালেদা জিয়ার উন্নত সুচিকিৎ​সার জন্য বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারে সরকারের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানান নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘আমরা দাবি জানাব, এই ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হোক। বেগম খালেদা জিয়ার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হোক, যেন তিনি তাঁর চিকিৎ​সার প্রয়োজনে যখন যেখানে যেতে চান তিনি যেতে পারেন।’

সরকার এক নির্বাহী আদেশে গত বছরের ২৫ মার্চ থেকে খালেদা জিয়ার সাজা ছয় মাস স্থগিত করে মুক্তি দেওয়া হয়। সে থেকে তিনি গুলশানের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজায়’ আছেন। এর মধ্যে প্রথম দফার মেয়াদ শেষে পরিবারের আবেদনের দ্বিতীয় দফায় তাঁর সাজা আরও ছয় মাস স্থগিত করা হয়। এর মেয়াদও আগামী ২৪ মার্চ শেষ হবে। দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, খালেদা জিয়া আদতে গৃহবন্দী। কারণ, খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর পরিবারের সদস্যরা ছাড়া অন্য কেউ দেখা করতে পারেন না।

সরকারের নিষেধাজ্ঞাকে ‘অমানবিক ও অযৌক্তিক’ দাবি করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, এ দেশে অসুস্থতার কারণে রাজনৈতিক নেতাদের বাইরে যাওয়ার বহু দৃষ্টান্ত আছে। এমনকি জেলে থাকা অবস্থায়ও বাইরে যাওয়ার দৃষ্টান্ত আছে। আমরা মনে করি, খালেদা জিয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা অযৌক্তিক ও অমানবিক। এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা দরকার।’

খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতাদেশের দ্বিতীয় দফা মেয়াদ নিয়ে বিএনপির চাওয়া কী, জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার। আমরা বারবার বলেছি, আমরা তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করি। কারণ, আমরা বিশ্বাস করি, তাঁকে সাজাই দেওয়া হয়েছে অন্যায়ভাবে, বিনা অপরাধে।’

খালেদা জিয়া এখন কেমন আছেন—প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা তো তাঁর সঙ্গে দেখাই করতে পারি না। আমরা তাঁর চিকিৎ​সকদের মাধ্যমে আপনাদের মতো যতটুকু জানি, তিনি দারুণভাবে অসুস্থ। তাঁর সুচিকিৎ​সা প্রয়োজন।’

স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সম্প্রতি নড়াইলের আদালতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি, বরিশালে ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সমাবেশে যোগদানে নেতা-কর্মীদের বাধা প্রদান এবং সিলেটের সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ তাঁর সহকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। একই সঙ্গে বগুড়ায় ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর দলের সাংসদ জি এম সিরাজসহ নেতা-কর্মীদের ওপর সরকারি দলের হামলা এবং নোয়াখালীর বসুরহাটে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে বোরহান উদ্দিন মোজাক্কির মারা যাওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায় বিএনপির স্থায়ী কমিটি।

বায়ান্নর চেতনায় কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করছি: রিজভী

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘বায়ান্নর চেতনা আমাদের শাণিত করেছে, ধারালো করেছে। আর এর বলেই আজও আমরা দৈত্যের মতো একটা কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম করছি। এই চেতনার উৎস হচ্ছে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন।’

শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আজ রোববার ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দলের পক্ষে শ্রদ্ধা জানাতে এসে এ কথা বলেন রিজভী।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের চেতনা বিএনপিকে শাণিত করেছে। বায়ান্নতে ছাত্রদের আত্মদান ছিল অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। আজও তা আমাদের উদ্বুদ্ধ ও সাহসী করে অধিকার হারানো, গণতন্ত্র হারানো, কথা বলার স্বাধীনতা হারানোর বিপরীতে অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। আমরা যূথবদ্ধভাবে সংগ্রাম করছি, মামলা-হামলা, গ্রেপ্তার, গুম ও খুন বরণ করে নিয়েও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।

বিএনপির পক্ষ থেকে আজ সকালে শহীদ মিনারে ফুল দিতে আসেন রুহুল কবির রিজভী, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, দলের যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সভাপতি হাবীব-উন-নবী খানসহ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। ফুল দেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন রিজভী ও আমান।

রিজভী বলেন, স্বাধীনতার পর গণতন্ত্রের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করে, সব দল বন্ধ করে, সব গণমাধ্যম বন্ধ করে। বিএনপি ক্ষমতায় এসে গণতন্ত্রের মুক্তধারা বইয়ে দিয়েছে। বাকশাল থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, কণ্ঠের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও তাঁর সহধর্মিণী বেগম খালেদা জিয়া। গণতন্ত্রের প্রতীক বেগম জিয়াকে আজ বন্দী করা হয়েছে। কারণ, তাঁকে বন্দী না করলে ভোট চুরি করা যেত না, একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসন, মাফিয়াতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যেত না।

আমানউল্লাহ আমান বলেন, ‘আজ দেশে গণতন্ত্র অনুপস্থিত, একদলীয় শাসন চলছে।

ভোট ডাকাতি করে এই সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছে। বর্তমান সরকার অবৈধ সরকার, মাফিয়া সরকার। অবিলম্বে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য, মানুষের ভোটাধিকারের জন্য এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। আমরা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব।’

আলজাজিরার সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের ‘যোগাযোগ’

আলজাজিরাকে ব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রীকে বিশ্ব দরবারে সমালোচিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আলজাজিরার সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের যোগাযোগ রয়েছে। আলজাজিরার তথাকথিত প্রতিবেদনকে দেশের ১৬ কোটি মানুষ গ্রহণ করেনি। ইতোমধ্যে এ প্রতিবেদন মিথ্যা হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।

শনিবার দুপুরে দিনাজপুর ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২১ উপলক্ষে শিশু সমাবেশ, আবৃত্তি ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেছেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা দিনাজপুর জেলা শাখার আয়োজনে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আলকায়েদার সঙ্গে যাদের যোগাযোগ, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসাবাদের সঙ্গে যাদের যোগাযোগ, তাদের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক থাকতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকবে লুটেরা, দুর্নীতিবাজ, পলাতক তারেক রহমানের। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকবে এতিমের টাকা আত্মসাতকারী খালেদা জিয়ার। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী জামায়াতের। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কোনো মানুষের সঙ্গে আলজাজিরার সম্পর্ক থাকতে পারে না।

খালিদ মাহমুদ বলেন, পৃথিবীর সব জাতিগোষ্ঠীর ভাষা রক্ষার দায়িত্ব বাংলাদেশের। এ ঐতিহাসিক উদ্যোগের অংশ হিসেবে ১৯৯৯ সালে দেশরত্ন শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট নির্মাণ শুরু করেছিলেন। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় এসে তার কাজ আর এগিয়ে নেয়নি। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার উদ্বোধন করেন।

তিনি বলেন, আজকের শিশুরা আগামীর বাংলাদেশ। তারা যদি সঠিক ইতিহাস না জানে তাহলে বাংলাদেশ মূলধারা থেকে আবার দূরে সরে যাবে। জাতির পিতার নেতৃত্বে ২১ ফেব্রুয়ারি রক্ত দিয়ে যে ইতিহাস ও চেতনার বীজ তৈরি করেছিলাম, যে সাহসিকতা ও শক্তি অর্জন করেছিলাম। সেখান থেকে অধিকার থেকে স্বাধিকার, স্বাধীনতা থেকে মুক্তিযুদ্ধ। আজকে সেই স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতাকে খাটো করে কথা বলা হয়। তার একটাই কারণ, একজন খলনায়ককে মহানায়কের পাশে বসানোর ষড়যন্ত্র।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দিনাজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইমাম চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সানিউল ফেরদৌস এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সচীন চাকমা।

কেন্দ্রীয় বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান জুয়েলের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা শেষে প্রধান অতিথি বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কারসহ সনদ বিতরণ করেন।

পরে প্রতিমন্ত্রী দিনাজপুরের বোচাগঞ্জে ঝাড়বাড়ী বাসস্ট্যান্ডে সেতাবগঞ্জ ভিশন সেন্টারের উদ্বোধন করেন।

অনিয়ম দেখেও নিরব থাকে ইসি

পৌরসভা নির্বাচনে ভোট কেমন হবে, তার ইঙ্গিত বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের বক্তব্যে আগেই পাওয়া যাচ্ছিল। গত রোববার চতুর্থ ধাপে অনুষ্ঠিত ৫৫টি পৌরসভা নির্বাচনের আগেই প্রকাশ্যে নৌকায় ভোট দেওয়া, কেন্দ্রে আসার আগেই ভোটারদের আটকে দেওয়া এবং বিএনপির নেতা-কর্মীদের এলাকাছাড়ার হুমকি দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের তিনজন নেতা। এসব ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন (ইসি) কার্যত কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ভোটের দিন অনেক পৌরসভাতেই ওই নেতাদের বক্তব্যের প্রতিফলন ঘটতে দেখা গেছে।

যদিও চতুর্থ ধাপের ভোটে অনিয়ম, সংঘাত হবে না বলে আশার বাণী শুনিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বলা হয়েছিল, ভোটকেন্দ্রে গোপন বুথের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ভোটের আগে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী কর্মকর্তা, পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন নির্বাচন কমিশনাররা। তবে পরিস্থিতি বদলায়নি। সংঘাত, প্রাণহানি, ভোটকেন্দ্রে বিএনপির এজেন্ট ঢুকতে না দেওয়া, পছন্দমতো ভোট দিতে না পারা এবং গোপন বুথে নৌকা প্রতীকের সমর্থকদের অবস্থান নেওয়াসহ নানা অনিয়ম দেখা গেছে।

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা, লক্ষ্মীপুরের রামগতি এবং ঠাকুরগাঁওয়ের পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তিন নেতার বক্তব্যের ভিডিও ভোটের আগেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল (ছড়িয়ে পড়া) হয়। যেখানে চুয়াডাঙ্গার আওয়ামী লীগ নেতা প্রতিপক্ষকে ভয়ভীতি ও দলীয় কর্মীদের অনিয়ম করে ভোট দেওয়ার ‘কৌশল’ বলে দেন। লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের নেতা বলেছেন, ইভিএমে নৌকার বাইরে ভোট দিলে ধরে ফেলা যায়। আর ঠাকুরগাঁওয়ে গিয়ে মহিলা আওয়ামী লীগের এক নেত্রী বলেছিলেন, নৌকায় ভোট না দিলে ভোটকেন্দ্রে আসার দরকার নেই। তিনটি ঘটনাতেই ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে ইসি কার্যত নীরব ছিল।

এসব বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনের অধঃপতনের যেটুকু বাকি ছিল, এবারের পৌর নির্বাচনে তা হয়ে গেছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিভিন্ন জায়গায় যেভাবে প্রকাশ্যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার বিষয়ে ইসি কী ব্যবস্থা নিয়েছে? ইসির নিয়ন্ত্রণ থাকলে এগুলো হয় কী করে? তিনি বলেন, গণমাধ্যমে খবর আসছে, বুথে একজন ‘সহযোগিতা করার’ জন্য বসে থাকেন। যেসব কেন্দ্রে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে পত্রপত্রিকায় এসেছে, সেখানকার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলো না কেন? ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি এমনই থাকবে।

গত রোববার অনুষ্ঠিত ঠাকুরগাঁও পৌরসভা নির্বাচনে পথে পথে ভোটারদের বাধা দিতে দেখা গেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় ভোটারদের প্রকাশ্যে ভোট দিতে চাপ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সেখানে একটি কেন্দ্রে মেয়র পদের ইভিএম যন্ত্র গোপন কক্ষের বাইরে রেখে ভোট নিতে দেখা গেছে। বিভিন্ন জায়গায় ভোট দেওয়ার গোপন বুথে ক্ষমতাসীন দলের কর্মী–সমর্থকেরা অবৈধভাবে অবস্থান করছিলেন। ঠাকুরগাঁও পৌরসভার আর কে স্টেট উচ্চবিদ্যালয়ের কেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় বুথে অবস্থানকারীরা বলেছেন, তাঁরা ‘ভোটারদের সহযোগিতা’ করছেন। এর আগের ধাপের নির্বাচনগুলোতেও অনেক পৌরসভায় একই ধরনের চিত্র দেখা গেছে।

আইন অনুযায়ী, ভোট হবে গোপন ব্যালটে। ভোটের গোপনীয়তা রক্ষায় ব্যর্থতা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কোনো রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, পোলিং কর্মকর্তা কিংবা ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত কোনো প্রার্থী, নির্বাচনী এজেন্ট বা পোলিং এজেন্ট ভোটের গোপনীয়তা রক্ষা করতে কিংবা রক্ষায় সাহায্য করতে ব্যর্থ হলে ছয় মাস থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের বিধান আছে।

তবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনের অনেক বিধি বরং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য বৈষম্যমূলক। আচরণবিধির কারণে মন্ত্রী–সাংসদেরা প্রচারে অংশ নিতে পারছেন না। বিএনপি সে ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা ভোগ করছে। তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে নামকাওয়াস্তে। যেমন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মতো দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরের ভোটে তাদের দলের মহাসচিব বা জ্যেষ্ঠ নেতাদের প্রচারে দেখা যায়নি। এমনকি চট্টগ্রামের স্থানীয় জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনেকেও মাঠে নামেননি। এ রকম সব নির্বাচনেই তারা অংশ নিচ্ছে নামকাওয়াস্তে।

আইন অনুযায়ী, ভোট হবে গোপন ব্যালটে। ভোটের গোপনীয়তা রক্ষায় ব্যর্থতা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কোনো রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, পোলিং কর্মকর্তা কিংবা ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত কোনো প্রার্থী, নির্বাচনী এজেন্ট বা পোলিং এজেন্ট ভোটের গোপনীয়তা রক্ষা করতে কিংবা রক্ষায় সাহায্য করতে ব্যর্থ হলে ছয় মাস থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের বিধান আছে। চার ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে বিভিন্ন জায়গায় ভোটের গোপনীয়তা লঙ্ঘনের অভিযোগ এলেও এই ক্ষমতার প্রয়োগ দেখা যায়নি। চতুর্থ ধাপের ভোটে মোট সাতটি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করা হয় মূলত ব্যালট ছিনতাইয়ের অভিযোগে।

এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনে ইসির যেটুকু নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত, ততটুকু রয়েছে। যেখানে তথ্যপ্রমাণসহ অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে, সেখানে ভোট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যেখানে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি, সেখানে স্থগিত করা হয়নি। কিছু অভিযোগ এখন শোনা যাচ্ছে। ফলাফলের গেজেট হওয়ার আগেও কেউ যদি তথ্যপ্রমাণসহ অভিযোগ করেন, ইসি তা খতিয়ে দেখবে। তিনি বলেন, কোথাও যদি কোনো কর্মকর্তার ভোটের গোপনীয়তা রক্ষায় ব্যর্থতার সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়, অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও সংসদের উপনির্বাচনগুলোতে ভোটার খরা দেখা দিয়েছিল। তবে এবারের পৌরসভা নির্বাচনে সে খরা কেটেছে। ভোটার উপস্থিতি বেড়েছে, কিন্তু অনিয়মও অব্যাহত আছে। ইসির তথ্য অনুযায়ী, চতুর্থ ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে ভোট পড়েছে ৬৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ। সর্বোচ্চ ভোট পড়েছে বরিশালের বানারীপাড়ায়, ৯২ দশমিক ৬০ শতাংশ। আর সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে চট্টগ্রামের পটিয়ায়, ৪৬ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। এখানে নির্বাচনী সংঘাতে একজনের মৃত্যু হয়। এর আগে প্রথম ধাপে ৬৫ শতাংশ, দ্বিতীয় ধাপে ৬১ দশমিক ৯২ শতাংশ এবং তৃতীয় ধাপে ৭০ দশমিক ৪২ শতাংশ ভোট পড়েছিল। ওই সব নির্বাচনেও একই ধরনের অনিয়ম দেখা গেছে।

চার ধাপের নির্বাচনে মেয়র পদে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ১৫৫টিতে জয় পেয়েছে। বিএনপি জয়ী হয়েছে ১০টি পৌরসভায়, আর স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জিতেছেন ৩০টিতে। এর বাইরে জাতীয় পার্টির একজন এবং জাসদের একজন মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।

পৌরসভা নির্বাচনের ফলাফল দেখে আমার ধারণা হচ্ছে, নির্বাচন নির্বাসনে যেতে চায়।

মাহবুব তালুকদার, নির্বাচন কমিশনার

পৌর ভোট নিয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রথম আলোকে বলেন, ভোটারদের ভোট দেওয়ার অধিকার থেকে বিরত রেখে একটি সন্ত্রাসী নির্বাচন হচ্ছে। ইসি বিশেষ করে সিইসি সে নির্বাচনকে উৎসাহিত করছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নিজেরা মারামারি করে মানুষ খুন করছে। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে গণতান্ত্রিক স্পেসের জন্য। কিন্তু ন্যূনতম কোনো নির্বাচনী পরিবেশ নেই। নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি সরকারের আজ্ঞাবাহী।

চার ধাপের পৌর নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের প্রায় ৬০ শতাংশই পেয়েছেন নৌকার প্রার্থীরা। অনেকগুলো পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থীরা জামানত হারিয়েছেন। নির্বাচনের এই ফল নিয়েও অনেকের মধ্যে প্রশ্ন আছে। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারও তাঁদের একজন। গতকাল তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘পৌরসভা নির্বাচনের ফলাফল দেখে আমার ধারণা হচ্ছে, নির্বাচন নির্বাসনে যেতে চায়। নির্বাচন অর্থ অনেকের মধ্য থেকে ভোটের মাধ্যমে বাছাই। কিন্তু সে অবস্থা আজকাল পরিলক্ষিত হয় না। প্রশ্ন জাগে, নির্বাচন কি এখন পূর্বে নির্ধারিত?’

মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘প্রায় সব নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে আমরা তৃপ্তি বোধ করি। কিন্তু নির্বাচন বিষয়ে আমাদের সব দাবি জনগণের উপলব্ধির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।’

লক্ষ্য যেন হয় মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা

জনগণকে দেওয়া ওয়াদা পূরণে কাজ করতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমি আপনাদের কাছে এটাই চাইব-জনপ্রতিনিধি হিসাবে জনগণের কাছে আপনারা যে ওয়াদা দিয়ে এসেছেন, আর আজকে যে শপথ নিলেন সেটা মাথায় রেখেই মানুষের জন্য কাজ করবেন। জনপ্রতিনিধি হিসাবে দেশের মানুষের কল্যাণ করা, মানুষের জন্য কাজ করা, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা; এটাই যেন লক্ষ্য হয়।

বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে চসিক মেয়র এম রেজাউল করিমসহ কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি আরও বলেন, আপনারা জানেন যে, বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য অনেক কর্মসূচি হাতে নিয়েছি, বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। সারা দেশেই কিন্তু আমরা এই উন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছি। আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, দেশের কল্যাণে কাজ করতে চাইলে, করা যায়। এখানে জনগণের সমর্থনটা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহর রহমতে জনগণের সেই সমর্থনটা আমরা পাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে আমি আজ আরও অতিরিক্ত ৫০ হাজার ঘর নির্মাণের জন্য এক হাজার কোটি টাকা ছাড় করেছি। আমরা আরও এক লাখ ঘর তৈরি করে দিচ্ছি। আমরা সার্ভে করে দেখেছি। একটি লোক যেন গৃহহীন না থাকে। যার যার গ্রামে বাড়ি, সেখানে দেখবেন কোনো মানুষ গৃহহীন আছে কিনা? সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নেবেন। আমরা ঘর করে দেব। একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

করোনাভাইরাসের টিকা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা শুধু টিকা আনতে পেরেছি তাই-ই নয়, আমরা এখন টিকা প্রযোগের কাজও শুরু করেছি। এক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে স্ব স্ব এলাকার মানুষ যেন এই টিকাটা নিতে পারে সেই ব্যবস্থা করা এবং তাদের উদ্বুদ্ধ করা ও নাম নিবন্ধন করা। তিনি আরও বলেন, করোনার টিকার জন্য নাম নিবন্ধনও আরও সহজ করে দেয়া হয়েছে। এখন প্রতিটি ডিজিটাল সেন্টারে নিবন্ধন করা যাবে। আইডি কার্ড নিয়ে গেলে সেটা দেখে নিবন্ধন করে দেবে ও সঙ্গে সঙ্গে টিকা নেওয়া যাবে এবং নিজেকে সুরক্ষিত রাখা যাবে।

এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় গণভবন থেকে ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে চসিকের নতুন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীকে ভার্চুয়ালি শপথ পাঠ করান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে শপথ নেন সংরক্ষিত আসনের ১৪ জন এবং সাধারণ আসনের ৪০ জন কাউন্সিলর। তাদের শপথ পাঠ করান স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ এ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

ওবায়দুল কাদের অপরাজনীতির সঙ্গে হাত মিলিয়েছে: মির্জা কাদের

নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র আবদুল কাদের মির্জা বলেছেন, যারা ভারচুয়াল প্রোগ্রাম দিয়ে আসেনা তারা অপরাজনীতির কাছে মাথা নত করেছে। আমার কোন নেতার প্রয়োজন নাই।

তিনি বলেন, আমি কোম্পানীগঞ্জ নেতা কর্মীদেরকে সাথে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর কথা বলবো, শেখ হাসিনার কথা বলবো। স্বাধীনতার কথা বলবো, উন্নয়নে কথা বলবো। আমাকে বহিষ্কার করবেন, গ্রেফতার করবেন; আমি ভয় পাই না।

বুধবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেলে বসুরহাট সরকারী মুজিব কলেজ মাঠে কোম্পানীগঞ্জ নাগরিক সমাজ এ সংবর্ধনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

কাদের মির্জা বলেন, ওবায়দুল কাদেরের পরিবারকে রাজাকারের পরিবার বললেও আজ ওবায়দুল কাদের সাহেব অপরাজনীতির সাথে হাত মিলিয়েছেন। আপনি পদের জন্য আত্মসমর্পণ করেছেন।

তিনি আরো বলেন, নোয়াখালী সদরে এমপি একরামুল করিম চৌধুরী পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমার আন্দোলন চলবে। আমাদের নেতা বসুরহাটের ভোটাদেরকে একটি অভিনন্দন পর্যন্ত দেননি অথচ আজ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে আগামীকাল তিনিই অভিনন্দন দিবেন, হায়রে নির্বাচন।

কাদের মির্জা বলেন, আমাকে যদি বহিষ্কার না করে তা হলে আগামীতে কোম্পানিগঞ্জ ইউনিয়নের নির্বাচনে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে।

অচিরেই এদেশের চলচ্চিত্র বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করবে : তথ্যমন্ত্রী

তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন বিশ্ববাজারে এদেশের চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতা করবে।

রোববার সন্ধ্যায় জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে ১৯তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এদেশের চলচ্চিত্র শুধু তার স্বর্ণালী যুগেই ফিরে যাবে না, অচিরেই তা বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করবে।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এবং আয়োজকদের পক্ষে মূল আয়োজক রেইনবো ফিল্মস এর চেয়ারম্যান আহমেদ মুজতবা জামাল ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ম. হামিদ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যেও ভার্চুয়াল ও উন্মুক্ত মঞ্চ পদ্ধতিতে চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজনের জন্য আয়োজকদের অভিনন্দন জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ নির্দেশনায় করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় সেরা ও বিশ্বে ২০তম স্থান অর্জন করেছে। মাত্র ২২টি দেশ করোনার মধ্যে ধ্বনাত্মক জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, বাংলাদেশ তার মধ্যে তৃতীয়।

চলচ্চিত্রকে সময় ও সভ্যতার প্রতিচ্ছবি হিসেবে উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, নিশ্চয়ই করোনা নিয়েও অনেক চলচ্চিত্র নির্মিত হবে এবং সেগুলো এই সময়কে ইতিহাসকে ধরে রাখবে।

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদ ১৯৭৭ সাল থেকে বাংলাদেশে চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনে যুক্ত থেকে সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র প্রদর্শন ও আন্তর্জাতিক পরিবেশনার মাধ্যমে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সংস্কৃতি তুলে ধরছে। আর্থিক সংকট ও প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও সংগঠনটি এবারের উৎসব আয়োজন থেকে পিছপা হয়নি। সেজন্য নিঃসন্দেহে তারা সাধুবাদ প্রাপ্য। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজকদের আর্থিক সংকট লাঘবে কিছুটা হলেও সচেষ্ট হবে।

উৎসবের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল, বর্তমানে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। এ ধরনের উৎসব আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে অত্যন্ত সহায়ক বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিরা সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে কিরগিজস্তানের ‘রোড টু এডেন’ এবং দর্শকপ্রিয়তম চলচ্চিত্র হিসেবে ‘গন্ডী’ নির্মাতাদেরসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার বিতরণ করেন।

আয়োজকদের পক্ষে জুরি, অংশগ্রহণকারী, স্বেচ্ছাসেবী ও দর্শকসহ অর্থ, তথ্য, সংস্কৃতি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানান আহমেদ মুজতবা জামাল ও ম. হামিদ।

বিএনপি আগে টিকা চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করতে পারি: তথ্যমন্ত্রী

তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, নিজেরা লুটপাটের দল বলেই বিএনপি সবকিছুতে লুটপাট দেখে। তিনি বলেন, বিএনপি যদি আগে টিকা পেতে চায়, তাহলে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করতে পারি।

আজ বুধবার সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদ প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি মনে করেছিল, এই করোনা মহামারি সরকার সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে পারবে না। তাদের প্রথম থেকেই ধারণা, এমনকি হয়তো প্রার্থনাও করেছিল যে এই মহামারিতে যেন ব্যাপক লোকক্ষয় হয় এবং দেশে একটি অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, কিন্তু সেটি হয়নি। তাতে তারা প্রচণ্ড হতাশ হয়ে ভুল সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে গুজব রটিয়েছিল, সঠিক সময়ে টিকা আসছে না।’ তিনি বলেন, টিকা সঠিক সময়েই আসছে, এমনকি ভারত সরকারের উপহার হিসেবে বিনা মূল্যে ২০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়া যাচ্ছে। বিএনপি যখন সবকিছুতেই ব্যর্থ হচ্ছে, তখন টিকা নিয়ে লুটপাটের কাল্পনিক কথা বলছে। প্রকৃতপক্ষে লুটপাটের দল তো বিএনপি, সে জন্য তারা সবকিছুতেই লুটপাট দেখার চেষ্টা করে।

টিকা সরকার একটি নীতিমালার ভিত্তিতে প্রয়োগ করবে এবং যাঁরা ফ্রন্টলাইন ফাইটার, এই করোনা মহামারির ক্ষেত্রে তাঁরা নিশ্চয়ই প্রথমে টিকা পাওয়ার অধিকার রাখে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এ ব্যাপারে সরকার চিন্তাভাবনা করবে, যাঁদের আগে দেওয়া প্রয়োজন, তাঁদের আগে দেওয়া হবে। সাংবাদিকেরা এই করোনা মহামারির সময়ে অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে ফ্রন্টলাইনার হিসেবে কাজ করেছেন। আমি বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করব।’

যুবলীগের চেয়ারম্যান করোনায় আক্রান্ত

আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস (পরশ) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার রাতে তাঁর করোনা শনাক্ত হয়। এর আগে দুপুরে তিনি করোনা পরীক্ষা করাতে নমুনা জমা দেন। তাঁর শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক আছে। তিনি বাসাতেই আইসোলেশনে আছেন। দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন তিনি।

আজ বুধবার বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেন যুবলীগের প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দী। তিনি বলেন, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় গতকাল নমুনা জমা দেন চেয়ারম্যান। তবে তাঁর কোনো ধরনের উপসর্গ নেই। এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক আছেন।

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে শুদ্ধি অভিযান শুরু হলে ব্যাপক বিতর্কিত হয়ে পড়ে যুবলীগ। ভাবমূর্তি উদ্ধার করতে ওই বছরের নভেম্বরে কেন্দ্রীয় সম্মেলনের মাধ্যমে যুবলীগের দায়িত্ব পান যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগনে শেখ ফজুলল হক মনির ছেলে শেখ ফজলে শামস।

আ.লীগ-বিএনপির ভোটে অস্বাভাবিক ব্যবধান

রাজনীতির মাঠে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি। কিন্তু সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের মতো তৃণমূলের নির্বাচনের ফলাফলেও দেখা যাচ্ছে পুরোপুরি ভিন্ন চিত্র। একচেটিয়া ভোট পড়ছে নৌকায়। বিপরীতে ধানের শীষের প্রার্থীদের অনেকে জামানত হারাচ্ছেন।

অবশ্য ভোটের এই ফলাফল বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকদের কেউ কেউ। বিভিন্ন জায়গায় ভোটারদের অনেকে অভিযোগ করেছেন, তাঁরা মেয়র পদে নিজের পছন্দ অনুযায়ী ভোট দিতে পারেননি। আবার বিএনপির প্রার্থীদের বেশির ভাগ নির্বাচনী প্রচারে যতটা তৎপর ছিলেন, ভোটের দিন কেন্দ্রে শক্ত অবস্থান নেওয়া, এজেন্ট রাখা এবং কেন্দ্রে ভোটার আনার ক্ষেত্রে ততটা সক্রিয় দেখা যায়নি।

আ.লীগ-বিএনপির ভোটে অস্বাভাবিক ব্যবধান

গত শনিবার দ্বিতীয় ধাপে দেশের ৬০টি পৌরসভায় ভোট গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে চারটি পৌরসভায় প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় মেয়র পদে ভোট হয়নি। বাকি ৫৬টি পৌরসভার মধ্যে ৩০টিতে জামানত হারিয়েছেন বিএনপির প্রার্থীরা। বিপরীতে বিপুল বিজয়ের মধ্যেও একটি পৌরসভায় নৌকার প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মোট প্রদত্ত ভোটের ৬০ শতাংশ পড়েছে নৌকায়। এর মধ্যে ১৪টি পৌরসভায় আওয়ামী লীগ ৮০ থেকে ৯৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে। আর ধানের শীষে পড়েছে ১৭ দশমিক ৯০ শতাংশ। মাত্র ৮টি পৌরসভায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে।

আচরণবিধি অমান্য করে শোভাযাত্রা করে মনোনয়ন জমা দিতে যাচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও বর্তমান পৌর মেয়র আলমগীর সরকার

আচরণবিধি অমান্য করে শোভাযাত্রা করে মনোনয়ন জমা দিতে যাচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও বর্তমান পৌর মেয়র আলমগীর সরকার
 ফাইল ছবি

দ্বিতীয় ধাপে ভোটের হার প্রথম ধাপের চেয়ে সামান্য কমেছে। এই ধাপে ভোট পড়েছে ৬১ দশমিক ৯২ শতাংশ। প্রথম ধাপে ভোটের হার ছিল ৬৫ শতাংশ।
এর আগে গত ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপের নির্বাচনেও একই চিত্র দেখা গিয়েছিল। প্রথম ধাপে আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ৬৪ শতাংশ ভোট। আর বিএনপি পেয়েছিল সাড়ে ১৩ শতাংশ। ওই নির্বাচনে ১২টি পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থীরা জামানত হারিয়েছিলেন।

জামানত গেছে বিএনপির প্রার্থীদের

নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা জামানত হিসেবে জমা দিতে হয়। পৌরসভায় ভোটারসংখ্যা অনুপাতে সর্বনিম্ন ১৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা জামানত হিসেবে মেয়র প্রার্থীদের জমা দিতে হয়। মোট প্রদত্ত ভোটের ৮ ভাগের ১ ভাগ ভোট যদি কোনো প্রার্থী না পান, তাহলে তাঁর জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত হয়। ৩০টি পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থীরা জামানত রক্ষা করার মতো পর্যাপ্ত ভোট পাননি।

নওগাঁ পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ও তাঁর সমর্থকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জেলা বিএনপি

নওগাঁ পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ও তাঁর সমর্থকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জেলা বিএনপি
ফাইল ছবি

ইসি সচিবালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, যেসব পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থীরা জামানত হারিয়েছেন, সেগুলো হলো দিনাজপুরের বিরামপুর ও বীরগঞ্জ; কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী; গাইবান্ধা সদর ও সুন্দরগঞ্জ; বগুড়ার সারিয়াকান্দি; রাজশাহীর ভবানীগঞ্জ ও আড়ানী; নাটোরের গোপালপুর ও গুরুদাসপুর; সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া; নরসিংদীর বেলকুচি ও রায়গঞ্জ; পাবনার ঈশ্বরদী; মেহেরপুরের গাংনী; কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা, মিরপুর ও শৈলকুপা; বাগেরহাটের মোংলা পোর্ট; মাগুরা সদর; নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ; ঢাকার সাভার; নরসিংদীর মনোহরদী; শরীয়তপুর সদর; সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর; মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া; ফেনীর দাগনভূঞা; চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও বান্দরবানের লামা।

নৌকার প্রার্থীরও জামানত গেছে

চারদিকে নৌকার জয়জয়কার হলেও হবিগঞ্জের মাধবপুরে জামানত হারিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। ওই পৌরসভায় মোট ভোট পড়েছে ১৩ হাজার ১০৫টি। জামানত ফিরে পেতে ভোট দরকার ১ হাজার ৬৩৮টি। কিন্তু এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শ্রীধাম দাশ গুপ্ত পেয়েছেন মাত্র ৬০৮ ভোট। এই পৌরসভায় চার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মধ্যে তিনি চতুর্থ হয়েছেন। জয়ী হয়েছেন বিএনপির প্রার্থী। আর দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছেন দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী।

ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বগুড়ার শেরপুর ও সান্তাহার; নওগাঁর নজিপুর; রাজশাহীর কাকনহাঁট; পাবনার ফরিদপুর; ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া; কিশোরগঞ্জ সদর এবং হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে।

প্রতিদ্বন্দ্বিতা যেখানে

ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বগুড়ার শেরপুর ও সান্তাহার; নওগাঁর নজিপুর; রাজশাহীর কাকনহাঁট; পাবনার ফরিদপুর; ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া; কিশোরগঞ্জ সদর এবং হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। এর মধ্যে বগুড়ার শেরপুরে অবশ্য জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী (বিএনপির বিদ্রোহী)। সান্তাহার ও নবীগঞ্জে বিএনপির প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। এর বাইরে মাধবপুর এবং দিনাজপুর সদরে বিএনপি জয়ী হয়েছে। ওই দুই পৌরসভায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভোটের ব্যবধান অনেক। কিশোরগঞ্জে একটি কেন্দ্রে ভোটের ফল ঘোষণা করা হয়নি। বাকিগুলোতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ।

গত জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট প্রদত্ত ভোটের ৭৫ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিল। আর বিএনপির নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট পেয়েছিল ১৫ শতাংশের মতো। এর আগের বিভিন্ন জাতীয় নির্বাচনের মধ্যে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পেয়েছিল ৪৯ শতাংশ ভোট। বিএনপি পেয়েছিল ৩৩ দশমিক ২ শতাংশ।

বাস্তবতার সঙ্গে ঘোষিত ফলাফলের মিল দেখা যাচ্ছে না। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে ভোটের এত ব্যবধান—এটি সংগতিপূর্ণ মনে হয় না।

বদিউল আলম মজুমদার, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক

অতীত এবং বর্তমান বাস্তবতার সঙ্গে এবারের পৌর নির্বাচনের ভোটের ফলাফল সংগতিপূর্ণ নয় বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বাস্তবতার সঙ্গে ঘোষিত ফলাফলের মিল দেখা যাচ্ছে না। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে ভোটের এত ব্যবধান—এটি সংগতিপূর্ণ মনে হয় না। বিএনপির বেশির ভাগ প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন, এটাও বিশ্বাসযোগ্য নয়। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনেরই বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। তারা দায়িত্বে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে।