রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেলকে আওয়ামী লীগের উপকমিটির সদস্য করায় বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিএনপি। দলটি বলেছে, একটি সাংবিধানিক পদের অধিকারীকে দলীয় পদে নিযুক্ত করা দেশের ইতিহাসে একটি নতুন ঘটনা। আর নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তার কার্যালয়কে নগ্ন দলীয়করণের অপচেষ্টা ও মন্দ দৃষ্টান্ত।
আজ সোমবার দুপুরে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে নজরুল ইসলাম খান এ কথা বলেন। গত শনিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চ্যুয়াল বৈঠকের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনে আয়োজন করা হয়।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনকে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপকমিটিতে নিয়োগ করায় বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করে।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপি দৃঢ়ভাবে মনে করে, দেশের বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ও রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তার পদের নিরপেক্ষতা যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অ্যাটর্নি জেনারেলের উচিত হয় দলীয় পদ কিংবা অ্যাটর্নি জেনারেলের পদ থেকে পদত্যাগ করা। যারা তাঁকে নিয়োগ দিয়েছে, তাদেরও উচিত অনৈতিক এই বিষয়টির গুরুত্ব ও জনমনে এর অনিবার্য বিরূপ প্রতিক্রিয়া বিবেচনা করে দলের উপকমিটি থেকে অবিলম্বে অ্যাটর্নি জেনারেলকে বাদ দেওয়া।
খালেদা জিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার দাবি
সংবাদ সম্মেলনে অসুস্থ খালেদা জিয়ার উন্নত সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারে সরকারের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানান নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘আমরা দাবি জানাব, এই ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হোক। বেগম খালেদা জিয়ার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হোক, যেন তিনি তাঁর চিকিৎসার প্রয়োজনে যখন যেখানে যেতে চান তিনি যেতে পারেন।’
সরকার এক নির্বাহী আদেশে গত বছরের ২৫ মার্চ থেকে খালেদা জিয়ার সাজা ছয় মাস স্থগিত করে মুক্তি দেওয়া হয়। সে থেকে তিনি গুলশানের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজায়’ আছেন। এর মধ্যে প্রথম দফার মেয়াদ শেষে পরিবারের আবেদনের দ্বিতীয় দফায় তাঁর সাজা আরও ছয় মাস স্থগিত করা হয়। এর মেয়াদও আগামী ২৪ মার্চ শেষ হবে। দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, খালেদা জিয়া আদতে গৃহবন্দী। কারণ, খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর পরিবারের সদস্যরা ছাড়া অন্য কেউ দেখা করতে পারেন না।
সরকারের নিষেধাজ্ঞাকে ‘অমানবিক ও অযৌক্তিক’ দাবি করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, এ দেশে অসুস্থতার কারণে রাজনৈতিক নেতাদের বাইরে যাওয়ার বহু দৃষ্টান্ত আছে। এমনকি জেলে থাকা অবস্থায়ও বাইরে যাওয়ার দৃষ্টান্ত আছে। আমরা মনে করি, খালেদা জিয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা অযৌক্তিক ও অমানবিক। এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা দরকার।’
খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতাদেশের দ্বিতীয় দফা মেয়াদ নিয়ে বিএনপির চাওয়া কী, জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার। আমরা বারবার বলেছি, আমরা তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করি। কারণ, আমরা বিশ্বাস করি, তাঁকে সাজাই দেওয়া হয়েছে অন্যায়ভাবে, বিনা অপরাধে।’
খালেদা জিয়া এখন কেমন আছেন—প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা তো তাঁর সঙ্গে দেখাই করতে পারি না। আমরা তাঁর চিকিৎসকদের মাধ্যমে আপনাদের মতো যতটুকু জানি, তিনি দারুণভাবে অসুস্থ। তাঁর সুচিকিৎসা প্রয়োজন।’
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সম্প্রতি নড়াইলের আদালতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি, বরিশালে ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সমাবেশে যোগদানে নেতা-কর্মীদের বাধা প্রদান এবং সিলেটের সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ তাঁর সহকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। একই সঙ্গে বগুড়ায় ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর দলের সাংসদ জি এম সিরাজসহ নেতা-কর্মীদের ওপর সরকারি দলের হামলা এবং নোয়াখালীর বসুরহাটে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে বোরহান উদ্দিন মোজাক্কির মারা যাওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায় বিএনপির স্থায়ী কমিটি।