এবার নতুন বৈশিষ্ট্যের করোনা, পাঁচদিনেই হাসপাতাল বানালো চীন

২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তি শনাক্ত হয়। এবার নতুন করে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছে হুবেই প্রদেশ।

স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, আগের থেকে অনেক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে নতুন করোনার ঢেউ। আতঙ্কের বিষয় হলো নতুন বৈশিষ্ট্যের করোনাভাইরাস বেজিংয়ে পাওয়া গেছে।

২০২০ সালের শুরু থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়তে থাকে চীন থেকে। এ বছরও নতুন করে সংক্রমণের জেরে বিপাকে পড়ছে বেইজিং।

নতুন করে সংক্রমণ শুরু হওয়ায় হুবেই প্রদেশে পাঁচ দিনের মধ্যে হাসপাতাল তৈরি করে ফেলেছে চীনা প্রশাসন। এই হাসপাতালে রয়েছে দেড় হাজার শয্যা, ছয় হাজার পাঁচশ ঘর। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে যেন বেগ পেতে না হয়, সেজন্য আগাম তৈরি রাখা হলো বহু শয্যার হাসপাতাল।

এমন দ্রুততার সঙ্গে হাসপাতাল তৈরির উদাহরণ আগেও আছে। ২০২০ সালের শুরুতে চীনে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছিল করোনার সংক্রমণ, তখন মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে হাসপাতাল তৈরি করেছিল দেশটি।

এবার বেইজিংয়ের দক্ষিণে হুবেই প্রদেশের ন্যানগংয়ে এই হাসপাতাল তৈরি হয়েছে। এছাড়া হুবেই প্রদেশের রাজধানী শিঝিয়াঝুয়াং অঞ্চলে আরেকটি তিন হাজার শয্যার হাসপাতাল তৈরির কাজ চলছে।

গত বছর উহান শহরে প্রথম করোনার চিহ্ন খুঁজে পায় প্রশাসন। পরে ধীরে ধীরে সংক্রমণ কমে গেলেও মুক্ত হয়নি চীন। ন্যানগং প্রদেশে বর্তমানে ছয়শ ৪৫ জনের চিকিৎসা চলছে।

চীন সরকার অবশ্য নতুন ঢেউয়ের জন্য দায় চাপাচ্ছে বিদেশ থেকে আমদানি হওয়া বিভিন্ন দ্রব্য ও দেশে ফেরা মানুষের ওপর। সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, বিদেশ থেকেই এই রোগের নতুন ঢেউ চীনে এসে প্রবেশ করেছে। নতুন করে ২৪ ঘণ্টায় ১৩০ জন করোনা আক্রান্তের সন্ধান পেয়েছে চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন। তার মধ্যে ৯০ জন হুবেই প্রদেশের।

দেশীয় টিকা নিতে চান না ভারতীয় চিকিৎসকদের একাংশ

দেশীয় প্রতিষ্ঠান ভারত বায়োটেকের উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের টিকা কোভ্যাক্সিন টিকা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন দেশটির চিকিৎসকদের একাংশ। দিল্লির রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বলছেন এই টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শেষ না হওয়ায় তা গ্রহণ করতে চান না তারা। এর পরিবর্তে ভারতে অনুমোদন পাওয়া অপর টিকা কোভিশিল্ড গ্রহণ করতে চান তারা। এই বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন হাসপাতালটির আবাসিক চিকিৎসকরা। সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

আনুষ্ঠানিকভাবে করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে ভারত। শনিবার সকালে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। টিকাদান কর্মসূচিতে দুইটি কোম্পানির টিকা সরবরাহ করছে ভারত। এগুলো হচ্ছে সেরাম ইনস্টিটিউট কর্তৃক উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড এবং ভারত বায়োটেকের তৈরি কোভ্যাক্সিন।

চূড়ান্ত ধাপের পরীক্ষা অতিক্রম করে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রোজেনেকার ভ্যাকসিন কোভিশিল্ড ভারতের পাশাপাশি ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিয়ন্ত্রকদের অনুমোদন পেয়েছে। এই টিকাটি গণহারে তৈরি করছে পুনের সেরাম ইন্সটিটিউট। তবে কোভ্যাক্সিনের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চলমান থাকলেও এর ফলাফল এখনও প্রকাশ হয়নি। তার আগেই ভারতীয় নিয়ন্ত্রকদের অনুমোদন পেয়েছে টিকাটি। এ নিয়ে ভারতে শুরু হয়েছে বিতর্ক। রাজনৈতিক অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে দেশাত্মবোধের জিগির এবং দেশের স্বার্থরক্ষার কথা এবং সেই সঙ্গে ভ্যাকসিন কতটা নিরাপদ সেই বিতর্ক।

এমন অবস্থায় দিল্লির রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালের চিকিৎসকেরা কর্তৃপক্ষের কাছে দেওয়া এক চিঠিতে তাদের কোভিশিল্ড টিকা প্রয়োগের অনুরোধ জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, কোভ্যাক্সিনের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার ফলাফল সামনে আসার পরই এটি গ্রহণ করতে চান তারা। তার আগে টিকা প্রদান করতে চাইলে কোভিশিল্ড প্রয়োগের দাবি জানান তারা।

এদিকে ভারতীয় হাসপাতালগুলোর আবাসিক চিকিৎসকদের অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্মলা মহাপাত্র জানিয়েছেন, দেশজুড়ে শুরু হওয়া টিকাদান কর্মসূচিতে টিকা নিতে আগ্রহীদের তালিকায় বহু চিকিৎসক নাম দেননি। তিনি বলেন, ‘কোভ্যাক্সিন নিয়ে আমরা সংশয়ী। পরীক্ষা এখনও শেষ হয়নি। কোভ্যাক্সিনের চেয়ে আমরা কোভিশিল্ডকে বেশি পছন্দ করছি।’

কোভ্যাক্সিন অনুমোদনের সময় ভারত সরকার জানায় কেবল জরুরি ব্যবহারের জন্যই টিকাটি প্রয়োগ করা হবে। তবে টিকাদান কর্মসূচির শুরুতে এর গ্রহীতা দুটি টিকা থেকে পছন্দ অনুযায়ী বেছে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। কেবল দিল্লিতেই কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত ছয়টি সরকারি কেন্দ্রে কোভ্যাক্সিন প্রয়োগ করা হচ্ছে। অপরদিকে রাজ্য সরকার এবং বেসরকারি স্থাপনাসহ ৭৫টি কেন্দ্রে প্রয়োগ হচ্ছে কোভিশিল্ড। উল্লেখ্য, রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালটি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত।

চিকিৎসকদের আগ্রহের প্রতি ইঙ্গিত করে কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন বলেছেন, ‘এগুলোর মতো সাধারণ ইস্যুতে আমরা নজর দিচ্ছি না। মানুষের গুজবে বিশ্বাস করা উচিত হবে না। এসব টিকা তৈরি করতে প্রচুর কাজ করতে হয়েছে।’ পছন্দ অনুযায়ী টিকা নেওয়ার সুযোগ নেই বলে জানান তিনি।

যুক্তরাজ্যের সকল ভ্রমণ করিডোর বন্ধ ঘোষণা

করোনাভাইরাসের নতুন  ঝুঁকি থেকে রক্ষা পেতে সোমবার থেকে যুক্তরাজ্যের সমস্ত ভ্রমণ করিডোর বন্ধ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। যুক্তরাজ্যের বাইরে থেকে কেউ আসতে হলে তাকে যাত্রা করার ৭২ঘণ্টা আগে করোনা পরীক্ষা করে নিয়ে নেগেটিভ সনদ দেখাতে হবে।

সোমবার থেকে ব্রিটেনের আকাশপথ, নৌ-পথ, স্থলপথসহ সকল ভ্রমণ করিডোর সারাবিশ্বের সাথে বন্ধ থাকবে। এই নিয়ম আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সমস্ত দেশের ভ্রমণকারীদের অবশ্যই পূর্ববর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নেওয়া নেতিবাচক করোনা পরীক্ষার সার্টিফিকেট সাথে রাখতে হবে এবং সেল্ফ আইসোলেশনের ৫ দিন পর অবশ্যই অন্য একটি পরীক্ষা দিতে হবে। সেই পরীক্ষায় নেগেটিভ হলে ভালো আর পজিটিভ হলে আবারও আইসোলেশনে থাকতে হবে।

করোনাভাইরাস বিশেষজ্ঞরা দেশের অভ্যন্তরে নতুন বেশিষ্ট্যের করোনা শনাক্ত করার পর এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সরকার মনে করে যে কোন উপায়েই হোক করোনাভাইরাস মোকাবিলা করতে হবে। সেই হিসেবে যোগাযোগ বিছিন্ন করা এবং ঘরে থাকাই হচ্ছে একমাত্র পথ।

নতুন এই করোনাভাইরাস একটি ব্রাজিল থেকে শুরু হয়েছিল এবং অন্যটি দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে পাওয়া গেছে। সনাক্ত  করা হয়েছে ব্রিটেন থেকে ।

প্রধানমন্ত্রী আজ ডাউনিং স্ট্রিট সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, আমাদের এই টিকার আশা এবং বিদেশ থেকে নতুন স্ট্রেনের ঝুঁকি রয়েছে যে, আমাদের এই স্ট্রেনগুলো দেশে প্রবেশ বন্ধ করতে এখনই অতিরিক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।

তিনি আরো বলেন, গতকাল আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম যে, দক্ষিণ আমেরিকা এবং পর্তুগাল থেকে ফ্লাইটগুলো নিষিদ্ধ করছি। অজানা অচেনা প্রবণতা ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে আমরা সোমবার থেকে সাময়িকভাবে সমস্ত ভ্রমণ করিডোরও বন্ধ করা হবে। যাতে কেউ কেউ যেতেও পারবেন না,  এবং রোগ নিয়ে আসতেও পারবেন না। সকল প্রশাসন এক সাথে কাজ করবেন এবং পুরো ব্রিটেনে সোমবার থেকে নতুন আইন কার্যকর হবে।

বিশ্বে করোনায় মৃত্যু ২০ লক্ষাধিক, যুক্তরাষ্ট্রে চার লাখ

সারাবিশ্বে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে ৯ কোটি ৪৩ লাখ সাত হাজার একশ ৭৯ জন এবং মারা গেছে ২০ লাখ ১৭ হাজার সাতশ ৫৭ জন।

বিশ্বে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়ে গেছে ছয় কোটি ৭৩ লাখ ৪০ হাজার চারশ পাঁচজন এবং বর্তমানে আক্রান্ত অবস্থায় রয়েছে দুই কোটি ৪৯ লাখ ৪৮ হাজার নয়শ ৯৭ জন।

বিশ্বে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় সবার উপরে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সে দেশে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে দুই কোটি ৪১ লাখ দুই হাজার চারশ ২৯ জন এবং মারা গেছে চার লাখ এক হাজার আটশ ৫৬ জন।

করোনায় ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের পর রয়েছে ভারত, ব্রাজিল, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, তুরস্ক, ইতালি, স্পেন, জার্মানি, কলম্বিয়া ও আর্জেন্টিনা।

ট্রাম্পকে নিষেধাজ্ঞা সাইবার জগতে পারমাণবিক বিস্ফোরণ: রাশিয়ার সতর্কবার্তা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় ‘গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে’ ভয়াবহ পরিণতি আসতে পারে, এমন সতর্কবার্তা রাশিয়ার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্পেকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়াকে সাইবার জগতে পারমাণবিক বিস্ফোরণের সঙ্গে তুলনা করেছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিয়া জাখারোভা। 

মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো সম্প্রতি ট্রাম্পের ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামসহ ইউটিউবও বন্ধ করে দিয়েছে। এতে মতপ্রকাশে বাধা দেখছে রাশিয়া। এ নিয়ে এই প্রথম কোনো দেশ প্রকাশ্যে বিরোধিতা করল।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা তার ফেসবুক পেজে লেখেছেন, বেসরকারি মার্কিন সংস্থাগুলো কর্তৃক গৃহীত রাষ্ট্রের প্রধানকে নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপে অনেকটা ‘সাইবার স্পেসে পারমাণবিক বিস্ফোরণের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। নিষেধাজ্ঞায় তাৎক্ষণিক কোনো প্রভাব না পড়লেও পরবর্তীতে দীর্ঘমেয়াদি সংকট দেখা দিতে পারে।

এমন পদক্ষেপকে পশ্চিমা দেশগুলোর গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ওপর আঘাত হিসেবেও দেখছে মস্কো।

মুখপাত্র জাখারোভা উল্লেখ করেন, নিষেধাজ্ঞার ফলে ইতিমধ্যে মিডিয়ার বাজারের পরিবর্তন আসছে। রাশিয়ার তৈরি মেসেঞ্জার সার্ভিস টেলিগ্রাম আমেরিকাতেও জনপ্রিয় অ্যাপ হয়ে উঠেছে, কারণ মানুষ ফেসবুক এবং টুইটারকে ত্যাগ করছে। বিশেষ করে ট্রাম্পকে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কারণে আরো বেড়েছে।

জনগণের মতপ্রকাশে মার্কিন মিডিয়া ফিল্ড নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে ব্যাপক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। তার মতে, মার্কিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন মতপ্রকাশে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গত ৬ জানুয়ারি মার্কিন ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্পের সমর্থকরা তাণ্ডব চালায়। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে ওই সংঘর্ষে এক পুলিশসহ ৫ জন প্রাণ হারান। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে ট্রাম্প সহিংসতায় উসকে দিয়েছেন বলে অভিযোগ আনেন টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক ও ইউটিউভ। আগামী ২০ জানুয়ারি মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শপথ নেওয়াকে কেন্দ্র বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে দিতে পারেন, এমন অভিযোগ তুলে সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিত করে দেওয়া হয় ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট।

এর মধ্যে টুইটার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট পুরোপুরি স্থগিত করে দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যগুলোর এমন পদক্ষেপে স্বাধীন মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে বাধা বলছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন-ইইউ একে গণতন্ত্রের জন্য সমস্যা দেখছেন।

১৪ জানুয়ারি: ইতিহাসে আজকের এই দিনে

আজ ১৪ জানুয়ারি, ২০২১, বৃহস্পতিবার। ৩০ পৌষ, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ। গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জী অনুসারে বছরের ১৪তম দিন।

এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনা, বিশিষ্টজনদের জন্ম-মৃত্যু দিনসহ গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু বিষয়।

ঘটনাবলি:

১৫১৪ – দাসপ্রথার বিরুদ্ধে পোপ লিও এক্স ঘোষণা দেন।

১৬৩৯ – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান গৃহীত হয়।

১৭৬১ – পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে আহমদ শাহ দুররানীর নেতৃত্বে আফগানরা মারাঠাদের পরাজিত করে।

১৮১৪ – ডেনমার্কের রাজা সুইডেনের রাজার হাতে নরওয়েকে ছেড়ে দেন।

১৮৫৮ – নেপোলিয়নের উপর ব্যর্থ হামলা চালানো হয়।

১৯০৭ – জামাইকায় ভূকম্পনে কিংস্টন বিধ্বস্ত ও এক হাজার নিহত হয়।

১৯২৯ – আফগানিস্তানের রাজা আমানুল্লাহ সিংহাসন ছেড়ে দেন।

১৯৪৩ – মরক্কোর ক্লাসাব্লাকা শহরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইন্সটন চার্চিল এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ফ্রাংকলিন ডি. রুজভেল্ট বৈঠকে বসেছিলেন।

১৯৬৯ – পূর্ব বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা কর্মসূচী গৃহীত হয়।

১৯৬৯ – ভারতের মাদ্রাজ রাজ্যের নতুন নামকরণ হয় তামিলনাড়ু।

১৯৭৫ – চীনে নতুন শাসনতন্ত্র ঘোষণা এবং প্রেসিডেন্ট পদ বিলোপ ঘটে।

১৯৮০ – জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালানোর জন্য অধুনালুপ্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল।

১৯৯১ – ইসরাইলের কুখ্যাত গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের গুপ্তচরদের হাতে প্রাণ হারান পিএলও শীর্ষ স্থানীয় নেতা আবু আয়াদ সহ অপর তিন নেতা।

১৯৯৮ – যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা তাদের এক গবেষণায় প্রমাণ করেন, একটি এনজাইম কোষের মৃত্যু এবং বয়সবৃদ্ধির গতি মন্থর করে।

২০০০ – বসনিয়ার একটি গ্রামে ১৯৯৩ সালে ১০০ জনেরও বেশি মুসলমান বাসিন্দাকে হত্যার অভিযোগে জাতিসংঘের একটি ট্রাইব্যুনাল পাঁচ বসনীয় ক্রোটকে ২৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড প্রদান করেন।

২০০৫ – শনি গ্রহের চাঁদ টাইটানে হুইজেন্স প্রোবের অবতরণ।

২০০৮ – নাসার পাঠানো ম্যাসেঞ্জার নামের মহাকাশযান প্রথম বুধ গ্রহের অদেখা গোলার্ধের ছবি তুলতে সক্ষম হয়।

জন্ম:

১৫৫১ – মুঘল যুগের শ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিক আবুল ফজল জন্মগ্রহণ করেন।

১৮৭৫ – ফরাসি খ্যাতিমান চিকিৎসক এবং সঙ্গীতবিদ আলবার্ট সোয়েৎজার জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

১৯০৩ – ইতিহাসবিদ ড. নীহাররঞ্জন রায় জন্মগ্রহণ করেন।

১৯২৫ – জাপানি ঔপন্যাসিক ও নাট্যকার ইউকিও মিশিমার জন্ম।

১৯২৬ – লেখিকা মহাশ্বেতা দেবী জন্মগ্রহণ করেন।

১৯২৯ – সঙ্গীতশিল্পী ও সুরকার শ্যামল মিত্র জন্মগ্রহণ করেন।

১৯৫১ – লেখক রাজিব হুমায়ুন জন্মগ্রহণ করেন।

মৃত্যু:

১৭৪২ – ইংরেজ জ্যোতির্বিদ ও গণিতজ্ঞ এডমুন্ড হ্যালি মৃত্যুবরণ করেন।

১৭৫৩ – আইরিশ দার্শনিক জর্জ বার্কলি মৃত্যুবরণ করেন।

১৮৯৮ – লেখক গণিতজ্ঞ লুই ক্যারল মৃত্যুবরণ করেন।

১৯৫৪ – ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামী বিপিন বিহারী গাঙ্গুলি মৃত্যুবরণ করেন।

১৯৭১ – প্রগতিবাদী সাহিত্যিক ও সংগঠক দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় মৃত্যুবরণ করেন।

১৯৭৮ – মার্কিন যুক্তিবিদ, গণিতবিদ কুর্ট গ্যডল মৃত্যুবরণ করেন।

২০০৮ – প্রখ্যাত বাংলাদেশী নাট্যকার ও গবেষক সেলিম আল দীন মৃত্যুবরণ করেন।

দিবস:

পতাকা দিবস (জর্জিয়া),
বিপ্লব ও যুব দিবস (তিউনেসিয়া),
মাতৃভূমির প্রতিরক্ষা দিবস (উজবেকিস্তান),
জাতীয় বন সংরক্ষণ দিবস (থাইল্যান্ড)।

করোনা শনাক্তের সংখ্যা ৯ কোটি ৬ লাখ ছাড়িয়েছে

দুনিয়াজুড়ে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ৯ কোটি ছয় লাখ ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ সময় সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারস এ তথ্য জানিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারিতে এ পর্যন্ত বিশ্বের ২১৯টি দেশ ও অঞ্চল আক্রান্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৯ কোটি ছয় লাখ ৮৮ হাজার ৭৩৩। এর মধ্যে ১৯ লাখ ৪৩ হাজার ৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছে ছয় কোটি ৪৮ লাখ ১১ হাজার ৩৮০ জন।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। এক পর্যায়ে উৎপত্তিস্থল চীনে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব কমলেও বিশ্বের অন্যান্য দেশে এর প্রকোপ বাড়তে শুরু করে। চীনের বাইরে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ১৩ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে গত ১১ মার্চ দুনিয়াজুড়ে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। তবে আশার কথা হচ্ছে, এখন আক্রান্তের পর সুস্থ হওয়ার হার দ্রুত বাড়ছে। এরইমধ্যে করোনার টিকাও আবিষ্কৃত হয়েছে।

ওয়ার্ল্ডোমিটারস-এর তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দুই কোটি ২৯ লাখ ১৭ হাজার ৩৩৪। মৃত্যু হয়েছে তিন লাখ ৮৩ হাজার ২৭৫ জনের।

আক্রান্তের হিসাবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি চার লাখ ৬৭ হাজার ৪৩১। এর মধ্যে এক লাখ ৫১ হাজার ১৯৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। ব্রাজিলে আক্রান্তের সংখ্যা ৮১ লাখ পাঁচ হাজার ৭৯০। এর মধ্যে দুই লাখ তিন হাজার ১৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

উৎপত্তিস্থল চীনে আক্রান্তের সংখ্যা ৮৭ হাজার ৫৩৬। এর মধ্যে চার হাজার ৬৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। যদিও দেশটির বিরুদ্ধে প্রকৃত পরিস্থিতি গোপন করার অভিযোগ রয়েছে। উহানের একজন স্বেচ্ছাসেবী বলেন, ‘বুদ্ধি-বিবেচনাসম্পন্ন যেকোনও মানুষ এই সংখ্যা (সরকারি পরিসংখ্যান) নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করবেন।’

মহামারির শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে আসছিল, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পেছনে চীনের ভূমিকা রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সেই দাবিকে আরও জোরালো করে চীনের উহানের ল্যাবের এক ভাইরোলজিস্ট লি মেং ইয়ানের বক্তব্য। লি মেং ইয়ান বলেন, চীনের ল্যাবেই তৈরি করা হয়েছে করোনাভাইরাস। এটি মানুষের তৈরি বলে তার কাছে শতভাগ প্রমাণ রয়েছে।

হংকংয়ে জন্ম নেওয়া ভাইরোলজিস্ট লি মেং ইয়ান পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। বছরের শুরুতে তাকে চীন হত্যা করতে চেয়েছিল বলে ভয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যান তিনি।

তিনি জানান, চীনের পূর্বাঞ্চলে গত বছরের শেষ দিকে নিউমোনিয়ার মতো এই রোগ নিয়ে প্রথম দিকে গবেষণাকারীদের একজন ছিলেন তিনি। কিন্তু যখন রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে তখন তাকে নীরব ও সতর্ক থাকতে বলা হয়। তার সুপারভাইজার তাকে বলেন, আমরা সমস্যায় পড়বো এবং গুম হয়ে যাবো।

এদিকে উহান শহরে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ে খবর প্রকাশের জেরে গ্রেফতার হওয়া চীনা সাংবাদিক ঝ্যাং ঝানকে চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ৩৭ বছর বছরের ঝ্যাং ঝান ২০২০ সালের মে মাসে গ্রেফতার হন। বিবাদ সৃষ্টি ও ঝামেলায় উসকানি দেওয়ার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে তাকে।

ট্রাম্প সমর্থকদের হামলার আশঙ্কা, গোয়েন্দা সংস্থার সতর্কতা

নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানের আগে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ট্রাম্প সমর্থকরা আরও সশস্ত্র বিক্ষোভ করতে পারেন বলে সতর্ক করেছে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই। শপথ অনুষ্ঠান ঘিরে নিরাপত্তা কঠোর করার মধ্যে এ সতর্কতা।

সোমবার সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০ জানুয়ারির আগে ৫০টি অঙ্গরাজ্যের ক্যাপিটলসহ ওয়াশিংটন ডিসিতে ট্রাম্প সমর্থকদের সশস্ত্র গ্রুপগুলো সমবেত হওয়ার পরিকল্পনা করছে। এছাড়া এফবিআইয়ের একটি অভ্যন্তরীণ বুলেটিনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প সমর্থক একটি গোষ্ঠী অঙ্গরাজ্য, স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় আদালতগুলোতে ঢুকে পড়ার ডাক দিচ্ছে। খবর বিবিসির

ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির প্রধান চাদ ওলফ জানিয়েছেন, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে বিশেষ অভিযান শুরুর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শপথ অনুষ্ঠানটির নিরাপত্তায় এবং ৬ জানুয়ারির ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে ১৫ হাজার ন্যাশনাল গার্ডের সেনা মোতায়েন করা হবে।

গত ৬ জানুয়ারি কংগ্রেসে জো বাইডেনের বিজয় অনুমোদনের দিনে ক্যাপিটল হিলে নজিরবিহীন তাণ্ডব চালান ট্রাম্প সমর্থকরা। পুলিশের সঙ্গে তাদের তুমুল সংঘর্ষ হয়। এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ প্রাণ হারান ৫ জন। ট্রাম্পের উসকানিতেই এই হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ। ট্রাম্পকে অভিশংসনের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন ডেমোক্র্যাটরা।

আগামী ২০ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনের বাইরে জো বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছে। এ প্রসঙ্গে সোমবার জো বাইডেন সাংবাদিকদের জানান, ক্যাপিটলের বাইরে শপথ নিতে কোনো ভয় পাচ্ছেন না তিনি। আশা করা হচ্ছে তিনি এবং নতুন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ভবনের বাইরেই শপথ নেবেন।

খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো বলছে, জো বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার আগের দিনগুলোতে আরও সহিংসতা ঘটার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ট্রাম্প সমর্থক একটি উগ্র ডানপন্থী অনলাইন নেটওয়ার্ক আগামী ১৭ জানুয়ারি বিভিন্ন শহরে সশস্ত্র বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে। এছাড়া শপথের দিনে ওয়াশিংটন ডিসি অভিমুখে মিছিলেরও ঘোষণা দিয়েছে দলটি।

ক্যাপিটল ভবনের সহিংসতায় নিহত ৪

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের বিক্ষোভের মুখে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে দেশটির আইনসভা কংগ্রেসের ভবন ক্যাপিটল ভবন। বিক্ষোভ ঠেকাতে ফাঁকা গুলি এবং কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। এক পর্যায়ে অবরুদ্ধ করা হয় ভবন। এ ঘটনায় নিহত হয়েছেন চারজন।

ওয়াশিংটন ডিসির পুলিশের বরাত দিয়ে সর্বশেষ এতথ্য জানিয়েছে সংবাদ মাধ্যম বিবিসি।

যে চারজনের মৃত্যু হয়েছে; তাদের মধ্যে একজন মারা গেছেন গুলিতে। তিনি একজন নারী। তার নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি। অন্যরা কিভাবে মারা গেছেন তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে সূত্র বলছে, হাসপাতলে মৃত্যু হয়েছে তাদের।

স্থানীয় সময় বুধবার ওয়াশিংটনে ক্যাপিটল ভবনে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে সদ্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ডেমোক্রাট প্রার্থী জো বাইডেনের জয়ের স্বীকৃতির আনুষ্ঠানিকতা চলছিল। এরই এক পর্যায়ে শুরু হয় বিক্ষোভ। পরে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়।

সিএনএন ও বিবিসি জানায়, ক্যাপিটল ভবনের চারপাশে জড়ো হন কয়েক হাজার ট্রাম্প সমর্থক। তাদের মধ্যে ছিল মারমুখী ভাব। প্রথমে তারা ওই ভবনে ঢোকার চেষ্টা চালান। এ সময় পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে ফাঁকা গুলি চালায় এবং কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। ক্যাপিটল ভবন থেকে ট্রাম্প-সমর্থকদের হটিয়ে দিতে পুলিশকে অন্তত তিন ঘণ্টা ধরে চেষ্টা চালাতে হয়। পুলিশ ভবনটি অবরুদ্ধ করে রাখে।

ক্যাপিটল ভবনে সহিংসতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওয়াশিংটন ডিসির মেট্রোপলিটান পুলিশ জানিয়েছে, তারা বিভিন্ন ধরনের অন্তত পাঁচটি বন্দুক জব্দ করেছে। আহত কয়েকজন পুলিশ অফিসারকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

এ ঘটনার পর যৌথ অধিবেশন স্থগিত হয়ে যায়। তবে রাতে আবার তা শুরুর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ওয়াশিংটনে কারফিউ জারি করেছে কর্তৃপক্ষ। ট্রাম্প একটি ভিডিও বার্তায় তার সমর্থকদের বাড়ি ফিরে যেতে অনুরোধ করেছেন।

এ ঘটনায় বিস্মিত ও স্তব্ধ হওয়ার প্রতিক্রিয়ার কথা জানিয়েছেন বিশ্বের রাজনৈতিক নেতারা। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এ ঘটনাকে ‘লজ্জাজনক দৃশ্য’ বলে উল্লেখ করেছেন। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস বলেন, ‘ট্রাম্প এবং তার সমর্থকদের উচিত শেষ পর্যন্ত আমেরিকার ভোটারদের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া এবং গণতন্ত্রের পদদলন না করা।’

এক বিবৃতিতে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ বলেছেন, এটা পুরোপুরি অসুস্থ এবং হৃদয়বিদারক দৃশ্য। রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল কোন দেশে এ ধরনের ঘটনার মাধ্যমে নির্বাচনের ফলকে বিতর্কিত করা হয়- আমাদের গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে এর কোনো স্থান নেই।

ট্রাম্পের মরণকামড়ের গভীরে কী আছে

ঠিক এভাবেই হিটলার দলবল নিয়ে জার্মান রাইখস্ট্যাগ আক্রমণ করেছিলেন, ঠিক এভাবেই কিন্তু ফরাসি বিপ্লবীরা নৈরাজ্যের মধ্য দিয়ে রাজতন্ত্র উচ্ছেদ করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানীর ক্যাপিটল হিলে আক্রমণ বিপ্লব না প্রতিবিপ্লব, তা বলার জন্য আরও সময় দরকার। আপাতত বলা যায়, মাফিয়া ক্ষমতা রাষ্ট্রের প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতার কাছে পরাজিত হলো। তবে যারা বিশ্বাস করে ট্রাম্পকে বেআইনিভাবে কারচুপি করে হারানো হয়েছে, তারা যেকোনো কিছু করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্থপতি আব্রাহাম লিংকন ক্যাপিটল হিলকে দুবার রক্ষণশীলদের সামরিক আক্রমণ থেকে রক্ষা করেছিলেন। রক্ষণশীলদের পতাকা সেখানে আর ওড়েনি। কিন্তু ক্যাপিটল হিলে মার্কিন কংগ্রেস ভবনে এবার সেই পতাকা উড়ল। বিক্ষোভকারীরা নৈরাজ্যের মধ্য দিয়ে, তা করতে পারল কয়েক ঘণ্টার জন্য। আব্রাহাম লিংকনের কথাটাই সত্যের কাছাকাছি বলে দেখা গেল। ১৮৩৮ সালে তিনি বলেছিলেন, ‘…(বিপদ) যদি এসে পড়ে, তবে তা আসবে আমাদের ভেতর থেকে। এটা বাইরে থেকে আসতে পারবে না। যদি ধ্বংসই আমাদের নিয়তি হয়, আমরাই হব তার রচয়িতা ও সম্পন্নকারী। মুক্ত মানুষের দেশ হিসেবে আমরা হয় চিরকাল থাকব, নয়তো আত্মহত্যা করব।’
ক্যাপিটল হিলে জনতার হামলার ঘটনায় পুলিশের গুলিতে নিহত নারীটি মার্কিন গণতন্ত্রের সেই পূর্বকথিত আত্মহত্যাচেষ্টার প্রতীক হয়ে থাকবেন।

ক্যাপিটল হিল যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির সবচেয়ে বড় ঐতিহাসিক আবাসিক এলাকা। সেখানেই কংগ্রেস ভবন মার্কিন গণতন্ত্রের সৌধ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। ৬ জানুয়ারি আক্রান্ত হয়েছে সেটাই। যখন বিজয়ী ঘোষিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ক্ষমতায়নের বৈধতা দেওয়া হচ্ছিল, তখন ট্রাম্পপন্থী জনতা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেখানে হামলে পড়ে। কংগ্রেসম্যানরা পালাতে বাধ্য হন। লিংকন কথিত মার্কিন গণতন্ত্রের আত্মহত্যার ব্যর্থ মহড়া দুনিয়া দেখল। আর সেটা ঘটল সেই দিন, ঠিক এক বছর আগে যেদিন আমেরিকা ইরাকে ইরানি রেভল্যুশনারি গার্ডের প্রধান হাজি কাশেম সোলাইমানিকে ড্রোন হামলা করে হত্যা করেছিল।

এভাবে পার্লামেন্ট ভবনে বিদ্রোহী জনতার হামলার ঘটনা যদি ভেনেজুয়েলার রাজধানী কারাকাসে ঘটত কিংবা ঘটত ইরানে বা তুরস্কে, তাহলে মার্কিন প্রশাসন তাদের অভিনন্দন জানাত। অনেক মার্কিনবিরোধী মানুষ এখন তেমন করেই সন্তোষ জানাচ্ছেন। কিন্তু ঘটনাটা আরও গভীর।

পৃথিবীর সবচেয়ে সুসংগঠিত রাষ্ট্রে আইনের শাসন যে কতটা ঠুনকো, কত বিভক্ত সেখানকার রাজনীতি এবং দেশটা যে গৃহযুদ্ধের কতটা কিনারে, ক্যাপিটল হিল–কাণ্ড তা দেখিয়ে দিল।

টুইন টাওয়ারের ঘটনা যেমন আমেরিকাকে বদলে দিয়েছিল, বদলে দিয়েছিল দুনিয়ার স্থিতিশীলতাকে, ক্যাপিটল হিলের নৈরাজ্য তেমন আরেকটা ঘটনা, যার আগের আর পরের পরিস্থিতি আর এক থাকবে না।

এর ইঙ্গিতই কি অনেকে দিয়ে যাচ্ছিল না? হলিউডি সিনেমা ডার্ক নাইট-এ একবার, তারপর সাম্প্রতিক জোকার সিনেমায় কি এমন দৃশ্য আমরা দেখিনি? উন্মত্ত জনতা সব শৃঙ্খলা ভেঙে দিচ্ছে, জনতা এলিটদের আক্রমণ করছে। উদ্দেশ্যহীন তাণ্ডবে আমেরিকা ভেসে যাচ্ছে। এর মধ্যে নাচছে তাদের নেতা, উন্মাদ কিংবা ভাঁড়ের ছদ্মবেশে থাকা এক নৈরাজ্যবাদী। সেই চরিত্র, ডার্ক নাইট বলছে, ‘সামান্য নৈরাজ্য আরম্ভ করো, কায়েমি ব্যবস্থাকে কাঁপিয়ে দাও, দেখবে সবকিছু ভেঙে পড়বে। আমি নৈরাজ্যের প্রতিনিধি…জানো তো, উন্মত্ততা হলো মাধ্যাকর্ষের মতো, এর জন্য শুধু দরকার সামান্য একটা ধাক্কা…।’

টুইন টাওয়ারের ঘটনা যেমন আমেরিকাকে বদলে দিয়েছিল, বদলে দিয়েছিল দুনিয়ার স্থিতিশীলতাকে, ক্যাপিটল হিলের নৈরাজ্য তেমন আরেকটা ঘটনা, যার আগের আর পরের পরিস্থিতি আর এক থাকবে না। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র যেমন তার ভেতরে টুইন টাওয়ারের ঘটনা ঠেকাতে পারেনি (অনেকে বলেন ঘটনাটা ঘটতে দেওয়া হয়েছিল), তেমনি বিশ্বের সেরা গণতন্ত্রের সেরা পীঠস্থান ক্যাপিটল হিল এক বেলার জন্য বেদখল হওয়াও ঠেকাতে পারেনি আমেরিকার গণতন্ত্র, আমেরিকার প্রশাসন। অনেকে বলছেন, এটাও ঘটতে দেওয়া হয়েছে। ঘটতে দেওয়া হয়েছে যাতে ট্রাম্পকে অভিশংসন করা যায়, যাতে তাঁকে আর এক দিনের জন্যও প্রেসিডেন্ট থাকতে না দেওয়া হয়, যাতে চিরতরে ট্রাম্পের রাজনীতির কবর দেওয়া যায়, যাতে ২০২৪ সালের নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য বলে ঘোষিত হন এবং যাতে গত নভেম্বরের নির্বাচনে কারচুপির যে অভিযোগ ট্রাম্প করে যাচ্ছেন, তাকে আরও হাস্যকর ও ঘৃণিত বলে দেখানো সম্ভব হয়।

এতে করে মার্কিন রাজনীতির বিভাজন আরও সহিংসতার দিকেই যেতে পারে। অনেক সুশীল ট্রাম্প সমর্থক এখন বাইডেন শিবিরে, তথা ডেমোক্র্যাট শিবিরে ভিড়ছে। কিন্তু হতাশ ও ক্ষুব্ধ ট্রাম্পপন্থীরা আরও মরিয়া হচ্ছেন। কংগ্রেস ও সিনেটে রিপাবলিকানরা আরও দুর্বল হয়ে যাবে। ফলে বাইডেন এমন একচেটিয়া ক্ষমতা উপভোগ করবেন, যা ট্রাম্পও করতে পারেননি। এর অর্থ আমেরিকার রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাওয়া। তা যদি হয়, তাহলে মেরুকরণ আরও বাড়বে। নিচুতলায় ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা আগের চেয়ে বাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছে বিগত নির্বাচন। এবারে তিনি ভোট পেয়েছিলেন আগেরবারের চেয়ে বেশি। এরা হারিয়ে যাবে না। ট্রাম্প ভীরু ও লাজুক মানুষদের জাগিয়ে দিয়েছেন। সুপ্ত ঘৃণাবাদীরা এখন আরও সাহসী। ট্রাম্প চলে গেলেও এরা থেকে যাবে।

অন্যদিকে ঐতিহাসিকভাবে ডেমোক্র্যাটরা যুদ্ধবাজ বলে পরিচিত। তাদের আমলেই আমেরিকা বেশি আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতি বেছে নেয়। উপরন্তু, নতুন প্রশাসনে একজনও প্রগতিশীল মন্ত্রী নেই। ট্রাম্প চলে গেলেও জলে কুমির ডাঙায় বাঘ অবস্থা থেকে না আমেরিকা, না পৃথিবী, কেউ ‍মুক্তি পাবে।

ট্রাম্প আমেরিকার রাজনীতি ও সমাজকে ঘোলা পানিতে টেনে নামিয়েছিলেন, ক্যাপিটল হিলের ঘটনায় তিনি দেশটাকে বিপজ্জনক দরিয়ায় ঠেলে দিলেন।