ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি মিয়ানমার সেনাপ্রধানের

অভ্যুত্থানের পর প্রথমবারের মতো জাতির উদ্দেশে ভাষণে মিয়ানমারের বর্তমান শাসক ও সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, শিগগিরই নতুন নির্বাচনের আয়োজন করে বিজয়ী দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে দেশটির সাধারণ মানুষ যখন ক্রমেই কঠোর আন্দোলনের দিকে যাচ্ছে, তখনই এমন ঘোষণা দিলেন তিনি।

সোমবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) সরাসরি ভাষণ দেন সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং। এদিন গত বছরের নভেম্বরের অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগ তোলেন তিনি।

ভাষণে মিন অং হ্লাইং বলেন, ‘আগের সময়ের চেয়ে এবারের সামরিক সরকার একেবারেই আলাদা। পূর্বের সামরিক শাসনের তুলনায় এই সামরিক সরকার ‘সত্য ও শৃঙ্খলাবদ্ধ গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করবে।’

গত ১ ফেব্রুয়ারি ভোরে মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান হয়। সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনী দেশটির নির্বাচিত স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে। সামরিক বাহিনী দেশটিতে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করেছে। একই সঙ্গে তারা দেশটির সু চি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ রাজনীতিক নেতাদের আটক করেছে।

সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকেই মিয়ানমারে বিক্ষোভ দানা বাধে। বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে দেশটির সেনাবাহিনী ফেসবুক ও টুইটারের পর ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ করে দেয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও দেশটির মানুষ সেনাশাসনের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে আসেন।

এরই ধারাবাহিকতায় দেশটির সবচেয়ে বড় শহর ইয়াঙ্গুনে সোমবার ১০ হাজারের বেশি মানুষ জান্তা সরকারবিরোধী বিক্ষোভ বের করেন। গণআন্দোলনের তৃতীয় দিনে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি ধীরে ধীরে জটিলের দিকে মোড় নিচ্ছে।

সু চি’র মুক্তি এবং সামরিক সরকার ক্ষমতা না ছাড়লে সামনে বড় ধরনের কর্মসূচির দিকে যাচ্ছে মিয়ানমারের নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণে সামরিক সরকারের অধীনে নতুন করে নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি এলো।

সু চির মুক্তি চায় জাতিসংঘ

মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানে আটক দেশটির স্টেট কাউন্সিলর এবং পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) শীর্ষ নেতা অং সান সু চিসহ অন্যান্যদের মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ (ইউএনএসসি)। খবর রয়টার্স।

বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) নিরাপত্তা পরিষদ এ আহ্বান জানানোর পাশাপাশি মিয়ানমারের জরুরি অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তবে, চীনের আপত্তির মুখে ওই সেনা অভ্যুত্থানের ব্যাপারে নিন্দা জানাতে পারেনি সংগঠনটি।

পাশাপাশি, নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের সর্বসম্মত এক বিবৃতিতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও প্রতিষ্ঠানগুলো সমুন্নত রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও সহিংসতা পরিহার, মানবাধিকার, মৌলিক স্বাধীনতা, আইনের শাসনকে সমুন্নত রাখার আহ্বানও জানানো হয়েছে।

তাছাড়া, মিয়ানমারের জনগণের স্বার্থে তাদের ইচ্ছানুযায়ী আলোচনায় বসা এবং সম্প্রীতির পথে হাঁটার তাগিদ দেওয়া হয়েছে বিবৃতিতে।

এ ব্যাপারে চীনের জাতিসংঘ মিশনের এক মুখপাত্র বলেছেন, নিরাপত্তা পরিষদের বিবৃতিতে যে বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়েছে তা সব পক্ষই মেনে চলবে এবং ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে বলে বেইজিং আশা করে।

এর আগে, সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) মিয়ানমারে সর্বশেষ নির্বাচনের ফল নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত বেসামরিক সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতার দখল নেয়। সে সময় ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) শীর্ষনেতা সু চি এবং প্রেসিডেন্ট উয়িন মিন্টসহ বেশ কয়েকজন এমপিকেও আটক করে সেনাবাহিনী।

ইতোমধ্যেই, সু চির বিরুদ্ধে এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি অভিযোগ দায়ের করেছে মিয়ানমার পুলিশ। অভিযোগ তদন্তের জন্য ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাকে রিমান্ডে রাখা হবে।

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বুধবারই মিয়ানমারের অভ্যুত্থান ব্যর্থ করার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, মিয়ানমারের ওপর পর্যাপ্ত চাপ প্রয়োগ করে এই অভ্যুত্থানের ব্যর্থতা নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ে মূল ভূমিকা পালনকারী দেশগুলোকে সক্রিয় করতে সম্ভাব্য সবকিছুই করবে জাতিসংঘ।

জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণায় যা বলা হয়েছে

দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সরকারের জ্যেষ্ঠ নেতাদের আটকের পর আজ সোমবার দেশটির সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এক ভিডিও বার্তায় এই ঘোষণা দেওয়া হয়। গত নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে কারচুপির দায়ে সোমবার ভোরে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর সু চিসহ তাঁর দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের আটক করে সেনাবাহিনী।

আল–জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের সেনানিয়ন্ত্রিত টেলিভিশনে প্রচারিত এক ভিডিও বার্তায় বলা হয়, এরই মধ্যে দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়েছে।

মিয়ানমারে জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা প্রচারিত হয় সেনানিয়ন্ত্রিত এমডব্লিউডি টেলিভিশনে। প্রচারিত ভিডিও বার্তায় বলা হয়, গত বছরের ৮ নভেম্বর মিয়ানমারে অনেক দলের অংশগ্রহণে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে ব্যবহৃত ভোটার তালিকায় ব্যাপক অসামঞ্জস্য ছিল। কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন (ইউইসি) বিষয়টির মীমাংসা করতে ব্যর্থ হয়েছে।

বার্তায় আরও বলা হয়, রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতা অবশ্যই জনগণের কাছ থেকে আসা উচিত। কিন্তু গত সাধারণ নির্বাচনের ভোটার তালিকায় ভয়াবহ প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে, যা একটি স্থিতিশীল গণতন্ত্র নিশ্চিতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

ভিডিও বার্তায় বলা হয়েছে, ভোটার তালিকার জালিয়াতির বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে অস্বীকৃতি এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে কর্তৃপক্ষ। পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষের অধিবেশন স্থগিত করার অনুরোধও অগ্রাহ্য করা হয়। ২০১৮ সালের সংবিধানের ৪১৭ অনুচ্ছেদের সঙ্গে এসব পদক্ষেপের সাযুজ্য নেই। এ কারণে জাতীয় সংহতি বিনষ্ট হতে পারে।

এমডব্লিউডি টেলিভিশনে প্রচারিত বার্তায় বলা হয়েছে, এসব কারণে ইউইসির প্রতি নিজেদের অনাস্থা প্রদর্শনের জন্য মিয়ানমারের শহরতলি ও বিভিন্ন শহরগুলোতে ব্যাপক বিক্ষোভ চলছে। বিভিন্ন দলের সমর্থকেরা, সাধারণ মানুষ পতাকা প্রদর্শনসহ বিভিন্ন ধরনের উসকানিমূলক আচরণ চালিয়ে যাচ্ছে, যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর।

এই সমস্যার সমাধান না হওয়াটা গণতন্ত্রের জন্য বড় রকমের বাধা বলে উল্লেখ করে ভিডিও বার্তায় বলা হয়, আইন অনুযায়ী এই সমস্যার সমাধান করা জরুরি। যে কারণে ২০০৮ সালের সংবিধানের ৪১৭ অনুচ্ছেদ মোতাবেক দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হলো।

ভিডিও বার্তায় আরও বলা হয়েছে, ভোটার তালিকার বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ২০০৮ সালের সংবিধানের ৪১৮ (এ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেশের আইন প্রণয়ন, প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থা সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই জরুরি অবস্থা আগামী এক বছর সারা দেশে কার্যকর থাকবে। ২০০৮ সালের সংবিধানের ৪১৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এ ঘোষণা দেওয়ার দিন থেকেই জরুরি অবস্থা শুরু হবে।

হঠাৎ তিউনিসিয়ায় অস্থিরতা কেন?

বিপ্লবের ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তিউনিসিয়ায় আবার বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। এই বিক্ষোভ রাজধানী তুনিসের গণ্ডি পেরিয়ে প্রায় অন্য সব বড় শহরে ছড়িয়ে পড়েছে। ক্রমে অস্থিরতা বাড়ছে। হাজারেরও বেশি বিক্ষোভকারী গ্রেপ্তার হয়েছে। করোনা মহামারির ভয়কে উপেক্ষা করে মানুষের এই বিক্ষোভ তিউনিসিয়ায় প্রচলিত রাজনীতির বিপক্ষে এক স্পষ্ট প্রতিবাদ। গণমানুষ নতুনত্ব চায়, পরিবর্তন চায়। আঞ্চলিক রাজনীতি এবং ধর্ম আর সেক্যুলারিজমের তর্কে পিষ্ট না হয়ে দারিদ্র্য ঘোচাতে চায়। কিন্তু প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোও ক্রমাগত রক্ষণশীল গণমানুষের এই আরজিকে উপেক্ষা করে আসছে। তিউনিসিয়ায় চলমান এই বিক্ষোভ ঘুরিয়ে দিতে পারে আঞ্চলিক রাজনীতির স্রোত।

করোনা মহামারিতে ধনপতিদের সম্পদ পাহাড়সম হয়েছে আর নিঃস্ব হতে চলেছে স্বল্প ও মধ্য আয়ের দেশগুলো। বিশ্ব অর্থনীতির আকস্মিক এই দুর্ভাগ্য থেকে তিউনিসিয়াও মুক্ত থাকেনি। তিউনিসিয়ায় মোট জিডিপির প্রায় ২০ শতাংশের জোগান দেয় পর্যটনশিল্প। কিন্তু করোনা মহামারির দরুন অন্যান্য বছরের তুলনায় পর্যটন আয় নেমে এসেছে প্রায় অর্ধেকে। তিউনিসিয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে পর্যটন খাতে আয় ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। যার দরুন বেকারত্ব বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। ১১ মিলিয়ন মানুষের দেশের প্রায় ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ মানুষ কাজ করেন পর্যটনশিল্পে। এই অর্থনৈতিক দুর্দশার সঙ্গে যোগ হয়েছে নিত্যনতুন রাজনৈতিক অস্থিরতা। বিক্ষোভ, সেনা অভ্যুত্থানের এবং সন্ত্রাসী হামলার গুজব তিউনিসিয়ায় মানুষের জীবনকে অস্থির করে তুলেছে। অথচ ১০ বছর ধরে তিউনিসিয়ায় গল্প এ রকম মলিন ছিল না কখনোই।

তথাকথিত ‘আরব বসন্তের’ সূতিকাগার ছিল তিউনিসিয়ায়। ‘বসন্ত’পরবর্তী সময়ে রক্ষণশীল-সেক্যুলারদের মধ্যকার আলোচনা এবং বোঝাবুঝির দরুন সিরিয়া, লিবিয়া ও মিসর থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক আখ্যানের অংশীদার ছিল তিউনিসিয়া। কিন্তু এই ২০১৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অচেনা এক আইনের প্রফেসর কাইস সাইয়িদ ৭৩ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচন জিতে নিলে রক্ষণশীল আন নাহদা আর নানানভাবে বিভক্ত হওয়া সেক্যুলার গোষ্ঠী অস্তিত্বের সংকটে পড়ে। রাজনীতিতে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ টিকিয়ে রাখতে প্রথাগত রাজনৈতিক দলগুলো চলমান সহাবস্থান ত্যাগ করে নিজেদের পাল্লা ভারী করার স্বার্থে আদর্শিক রাজনীতির পেছনে ছুটতে থাকে। ফলাফলস্বরূপ অস্থিরতা শুরু হয়েছিল অর্থনীতিসহ রাষ্ট্রের প্রায় সব বিভাগে। তবে এককভাবে তিউনিসিয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোকে এই সমস্যার জন্য দায়ী করার সুযোগ নেই। আঞ্চলিক রাজনীতির মারপ্যাঁচও অনেকাংশে তিউনিসিয়ার বর্তমান এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী।

‘বসন্ত’পরবর্তী সময় থেকেই ইসলামি দলগুলো এবং সেক্যুলারদের মধ্যকার ঐক্যকে মেনে নিতে পারেনি সৌদি-আমিরাত-ইসরায়েল বলয়। সিরিয়া, লিবিয়ায় যুদ্ধের মাধ্যমে এবং মিসরে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মুসলিম ব্রাদারহুডকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখা গেলও তিউনিসিয়ায় তা সম্ভব হয়নি। কিন্তু আমিরাত-সৌদি-ইসরায়েল বলয় থেমে থাকেনি। ক্রমাগত তিউনিসিয়ায় অস্থিরতা সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করেছে। অর্থনৈতিক বিভাগে কিছুটা সফলও হয়েছে। সুদান ধাঁচের অভ্যুত্থানের ব্যর্থ চেষ্টা হয়েছে বেশ কয়েকবার। আদতে সৌদি-আমিরাত-ফ্রান্স বলয় ঘানুশিকে নিশানা করে তাদের রাজনৈতিক পরিকল্পনা করেছিল। ঘানুশি শুধুই তিউনিসিয়া নয়, বরং আঞ্চলিক এবং দুনিয়ায় প্রায় সব ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে মিসরে মুসলিম ব্রাদারহুডের পতনের পর।

তবে সাম্প্রতিক এই বিক্ষোভের কারণ অর্থনৈতিক হিসেবে বলা হলেও আঞ্চলিক রাজনীতির হিসাব-নিকাশ থেকে এই বিক্ষোভকে দূরে রাখা সম্ভব নয়। আঞ্চলিক রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি বিষয়ের ভবিষ্যৎ নির্ধারণকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে এই বিক্ষোভ।

প্রথমত, আগাম নির্বাচনের পথ প্রস্তুত করা। বর্ষপঞ্জির হিসাবে তিউনিসিয়ায় আগামী সংসদ এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বছর ২০২৪। অনেকটা তুরস্কের একেপির মতোই আন নাহদা প্রত্যক্ষভাবে ‘ধর্মভিত্তিক’ রাজনীতি থেকে সরে গিয়ে ‘সেক্যুলারিজম’কে নিজেদের কর্মপন্থা হিসেবে ঠিক করেছে। এই পরিবর্তন আন নাহদার গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করেছে। লিবারেল, সেক্যুলারদের একটি অংশকে এবং ফরাসি উপনিবেশবাদবিরোধীদের একই ছাতার নিচে সমাগত করার চেষ্টায় অনেকটা সফল আন নাহদা। পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে ভোটের রাজনীতিতে এবং উত্তর আফ্রিকার আঞ্চলিক রাজনীতিতে আন নাহদার অবস্থান শক্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশ জোরালো। আন নাহদার শক্ত অবস্থান কোনোভাবেই সৌদি-আমিরাত-ফরাসি বলয়ের জন্য সুখকর নয়।

দ্বিতীয়ত, আগামীর লিবিয়া থেকে তুরস্ক-কাতার বলয়কে দূরে রাখা। প্রায় আট মাস ধরে লিবিয়ায় উভয় পক্ষ শান্তি আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধকে বিদায় বলে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। যুদ্ধবিহীন মীমাংসায় হাফতারের আগ্রহ নেই এবং ভবিষ্যৎও নেই। তাই লিবিয়ায় যুদ্ধকে বাঁচিয়ে রাখতে হাফতার সবকিছু করে যাচ্ছে। আর হাফতারকে উসকে দিচ্ছে আমিরাত, ফ্রান্স আর মিসর। লিবিয়া প্রশ্নে প্রতিবেশী আলজেরিয়া তার নিরপেক্ষতা অনেকটা মজবুত করলেও তিউনিসিয়া বিশেষ করে আন নাহদা ক্রমে লিবিয়ার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। রশিদ আল ঘানুশি ত্রিপোলির তুরস্ক-কাতার সমর্থিত জাতীয় ঐকমত্যের সরকারে ‘সমর্থন ঘোষণা’ করেছে। এ অবস্থায় তিউনিসিয়ায় ক্ষমতা থেকে আন নাহদাকে উৎখাত না করলে আগামীর লিবিয়ায় সৌদি-আমিরাত-ফ্রান্স বলয়ের স্বার্থ বৃহৎ সংকটে পড়বে।

তিউনিসিয়ায় বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আন নাহদা পার্টিও ব্রাদারহুডের আদর্শিক জায়গায় মিল রেখে চলে। লিবিয়া ও সুদানের আসন্ন সম্ভাব্য নির্বাচনে মুসলিম ব্রাদারহুডকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে তিউনিসিয়ায় ক্ষমতার পালাবদল জরুরি। তা না হলে তিউনিসিয়ার সাহায্যে লিবিয়া ও সুদানের আসন্ন নির্বাচনে মুসলিম ব্রাদারহুডের নির্বাচনে ভালো করার সম্ভাবনা বেশি।

তৃতীয়ত, মুসলিম ব্রাদারহুডের পুনরুত্থান রোধ করা। পশ্চিমের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সিসি কর্তৃক নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসিকে উৎখাতের পর শুরু হওয়া দুর্দিনের ইতি টানতে পারেনি মুসলিম ব্রাদারহুড; বরং নানা দেশ ব্রাদারহুডকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠনের’ তকমা দিয়েছে, যে তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে জর্ডান। ম্রিয়মাণ হয়ে গিয়েছিল প্রায় শতবর্ষী এই সংগঠন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আঙ্কারা, দোহা, তুনিস এবং স্বল্প পরিসরে তেহরানের প্রত্যক্ষ সমর্থনে হালে পানি পেয়েছে ব্রাদারহুড। তিউনিসিয়ায় বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আন নাহদা পার্টিও ব্রাদারহুডের আদর্শিক জায়গায় মিল রেখে চলে।লিবিয়া ও সুদানের আসন্ন সম্ভাব্য নির্বাচনে মুসলিম ব্রাদারহুডকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে তিউনিসিয়ায় ক্ষমতার পালাবদল জরুরি। তা না হলে তিউনিসিয়ার সাহায্যে লিবিয়া ও সুদানের আসন্ন নির্বাচনে মুসলিম ব্রাদারহুডের নির্বাচনে ভালো করার সম্ভাবনা বেশি।

লিবিয়ায় ব্রাদারহুডের শক্তিশালী অবস্থান ভূমধ্যসাগরের বর্তমান অবস্থানকে সম্পূর্ণভাবে তুরস্কের অবস্থানকে শক্তিশালী করবে। আরাম ভঙ্গ হবে পশ্চিমের পছন্দের স্বৈরাচার সিসির আর সৌদি বলয়ের। তাই এই বিক্ষোভের অন্যতম উদ্দেশ্য ব্রাদারহুড দমন। যেমনটা কয়েক মাস আগে লেবাননে হিজবুল্লাহকে দমনের নামে এবং ২০১৯ সালে সুদানে ওমর আল বশিরের বিরুদ্ধে সুদানে বিক্ষোভ হয়েছিল।
আঞ্চলিক রাজনীতির এই হিসাব-নিকাশের সঙ্গে ইসরায়েলের সঙ্গে তিউনিসিয়ায় সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের বিষয়টিও জড়িত। সৌদি বলয় ইসরায়েলের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্থাপনে তিউনিসিয়াকে চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী হিচেম মেচিচি এই সম্ভাবনার কথা নাকচ করে দিয়েছেন।

বিক্ষোভ ক্রমে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। প্রেসিডেন্ট সাইয়িদ এবং প্রধানমন্ত্রী বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে দেখা করে পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য কাজ বেগবান করবেন বলে কথা দিয়েছেন। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা আশ্বস্ত হয়নি। বিক্ষোভকারীদের বিশাল একটি অংশ তরুণ। এই তরুণেরা আঞ্চলিক রাজনীতির মারপ্যাঁচ বুঝতে চায় না। আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকের ঋণের শর্তগুলো চোখ বুলিয়ে দেখতে চায় না। শুধুই দারিদ্র্যের শোষণ থেকে মুক্তি চায়। সম্ভবত, এই বিক্ষোভকে পুঁজি করে সৌদি-আমিরাত-ফ্রান্স বলয় তিউনিসিয়ার রাজনীতির প্রধান নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠবে। তিউনিসিয়ায় যেকোনো রাজনৈতিক পরিবর্তন লিবিয়ার আসন্ন রাজনৈতিক সমঝোতাকে বিনষ্টসহ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সিসিদের উৎসাহিত করবে।

সৌদি আরবে হঠাৎ বিস্ফোরণ!

হঠাৎ ব্যাপক বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠল সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) স্থানীয় সময় বেলা ১টার দিকে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ফলে সেখানকার স্থানীয়দের জানালার কাচ ভেঙে পড়ে। কোনও কোনও বাসিন্দা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনার কথা জানিয়েছেন।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে এতে হতাহতের কোনও খবর এখনও পাওয়া যায়নি।

ইয়েমেন যুদ্ধে ২০১৫ সালে হস্তক্ষেপের পর থেকে প্রায়ই প্রতিবেশী দেশটির দিক থেকে আসা বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা মোকাবিলা করে আসছে সৌদি আরব। ইয়েমেনের ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা এসব হামলা চালায় বলে দাবি রিয়াদের।

গত শনিবার ইয়েমেন সরকারের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধে জড়ানো সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়, রিয়াদ অভিমুখে আসতে থাকা একটি বিস্ফোরক প্রতিহত করা হয়েছে। তবে হুথি বিদ্রোহীদের দাবি, এর সঙ্গে তাদের কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই। রিয়াদের কিং খালেদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর জানায়, শনিবারের ঘটনার পর কয়েকটি ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে।

ইরানের বিরুদ্ধে অভিযান পরিকল্পনা নবায়ন হচ্ছে: ইসরাইলি সেনাপ্রধান

ইসরাইলি শীর্ষ জেনারেল বলেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালন পরিকল্পনা নবায়ন করা হচ্ছে। আর ২০১৫ সালে বিশ্বশক্তিগুলোর সঙ্গে হওয়া পরমাণু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফিরে যাওয়া হবে ভুল সিদ্ধান্ত।

ইরানের সঙ্গে যেকোনো কূটনৈতিক অঙ্গীকারের পথে সতর্কতার সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে পরিষ্কার আভাসের পরেই ইসরাইলি সেনাপ্রধানের এমন মন্তব্য এসেছে।

মার্কিন নীতিনির্ধারণের ওপর ইসরাইলি সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানের মন্তব্য একেবারে বিরল। এতে ইসরাইলি সরকারের পূর্ব-সমর্থন রয়েছে বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে।-খবর রয়টার্সের

তেলআবিব ইউনিভার্সিটিস ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজে দেওয়া বক্তব্যে লেফটেন্যান্ট জেনারেল আভিভ কোহাবি বলেন, ইরানের সঙ্গে চুক্তিতে ফিরে যাওয়া কিংবা কয়েকটি ক্ষেত্রে উন্নতিসহ একই ধরনের চুক্তি করলে তা হবে কৌশলগত ও পরিচালন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে খারাপ এবং ভুল।

২০১৮ সালে ওই চুক্তি থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছেন বাইডেনের পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই চুক্তি থেকে সরে আসাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন।

চুক্তিতে ফিরে যাওয়া হবে কিনা, সেই সিদ্ধান্ত নিতে যুক্তরাষ্ট্র এখনও অনেক দূরে রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বাইডেনের মনোনীত পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন।

গত সপ্তাহে তিনি বলেন, চুক্তি মেনে চলার ক্ষেত্রে ইরান সত্যিকার অর্থে কী করে, তাও দেখার বিষয় রয়েছে।

ওয়াশিংটন চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পর ইরানও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের ক্ষেত্রে তার বিধিনিষেধ থেকে সরে এসেছে।

স্বল্পসমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ গড়ে তুলেছে। এ ছাড়া উচ্চমাত্রায় বিশুদ্ধ ইউরেনিয়ামেরও সমৃদ্ধকরণ ও সেন্ট্রিফিউজ স্থাপন করছে, যা চুক্তিতে নিষিদ্ধ।

ইসরাইলি সেনাপ্রধান বলেন, ইরানের এ পদক্ষেপ শেষ পর্যন্ত এটিই বলে দিচ্ছে, তারা দ্রুতগতিতে পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণের দিকে এগোচ্ছে। এই মৌলিক বিশ্লেষণের আলোকে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আমি বেশ কিছু প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা প্রস্তুতের নির্দেশ দিয়েছি। আগে যে প্রস্তুতি আছে, তার সঙ্গে নতুন এসব যুক্ত হবে।

তিনি বলেন, তবে এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দায়িত্ব অবশ্যই রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের। কিন্তু এসব পরিকল্পনা আলোচনার টেবিলে থাকা দরকার।

ইরান বরাবরের মতো পরমাণু অস্ত্র নির্মাণের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

ট্রাম্পের অভিশংসন বিচারের জন্য শপথ নিয়েছেন সিনেটররা

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিরপেক্ষ অভিশংসন বিচারের জন্য শপথ গ্রহণ করেছেন সিনেটের সদস্যরা।

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কোনো প্রেসিডেন্টের দ্বিতীয় দফা অভিশংসন বিচারে সিনেট সদস্যদের এমন শপথ নজিরবিহীন ঘটনা। ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পর কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের অভিশংসন বিচারের ঘটনাও যুক্তরাষ্ট্রে আগে কখনো ঘটেনি।

২৬ জানুয়ারি মার্কিন সিনেটের পাঁচজন ছাড়া বাকি রিপাবলিকান সদস্যরা ট্রাম্পের অভিশংসন বিচার কার্যক্রমের বিরোধিতা করে বক্তব্য দেন। অর্থাৎ মাত্র পাঁচজন রিপাবলিকান সিনেটর ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে অবস্থান নেন।

ট্রাম্পের অভিশংসন দণ্ড কার্যকর করতে কমপক্ষে ১৭ জন রিপাবলিকান সিনেটরের সমর্থন প্রয়োজন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এমন সমর্থন পাওয়া যাবে বলে মনে হচ্ছে না। এ কারণে ট্রাম্পের অভিশংসন দণ্ড কার্যকর হবে কি না, তা নিয়ে শুরুতেই সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।

আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে অভিশংসন আদালতের কাজ শুরু হবে বলে একমত হয়েছেন সিনেটের ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানরা।

সিনেটের প্রবীণতম ডেমোক্র্যাট প্যাট্রিক লেহির সভাপতিত্বে সিনেটররা শপথ গ্রহণ করেন। পরে কেন্টাকি থেকে নির্বাচিত রিপাবলিকান সিনেটর রেন্ড পল পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেন। ট্রাম্পের এই অভিশংসনের প্রক্রিয়া অসাংবিধানিক এবং বিচার চলতে পারে না জানিয়ে এর ওপর ভোট গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি। ৫৫ ভোটে সিনেটর পলের প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়।

সিনেটর পলের প্রস্তাবের পক্ষে সিনেটে রিপাবলিকান পার্টির নেতা মিচ ম্যাককনেলসহ ৪৫ জন রিপাবলিকান ভোট দেন। পাঁচজন রিপাবলিকান সিনেটর ডেমোক্র্যাটদের অবস্থানের পক্ষে ভোট দেন। তাঁরা হলেন মিট রমনি, বেন সেসি, সুজান কলিন্স, লিসা মার্কোয়াস্কি ও প্যাট টোমি।

সিনেটে রেন্ড পল বলেন, ট্রাম্প এখন সাবেক প্রেসিডেন্ট। একজন সাধারণ নাগরিকের সঙ্গে ট্রাম্পের এখন কোনো পার্থক্য নেই। ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়া ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এখন অভিশংসনের বিচার কার্যক্রম চলতে পারে না।

সিনেটর পল বলেন, এই অভিশংসনের প্রক্রিয়া দেশ ও জাতিকে ঐক্যের পরিবর্তে আরও বিভক্ত করবে। এ জন্য এই বিচারে সভাপতিত্ব করতে প্রধান বিচারপতিও অপারগতা প্রকাশ করেছেন।

পলের বক্তব্যের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেন সিনেটর মিচ ম্যাককনেল।

পলের বক্তব্যে হতাশা ব্যক্ত করেন সিনেট সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা চাক শুমার।

শুরুতেই অভিশংসন প্রস্তাব ভোটের কবলে পড়ায় তার ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

ওয়াশিংটন পোস্টসহ একাধিক মার্কিন সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, অভিশংসন প্রস্তাব থেকে ট্রাম্পের খালাস পাওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

ট্রাম্পকে দণ্ড দেওয়ার জন্য প্রয়োজন সিনেটের দুই–তৃতীয়াংশের সমর্থন। ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে রিপাবলিকান সিনেটরদের ৫ ভোট যোগ করলে মোট ভোট হয় ৫৫। পদাধিকারবলে ভাইস প্রেসিডেন্টের এক ভোট যুক্ত করলেও অভিশংসন দণ্ড কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় ৬৭ ভোট সিনেটে পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না।

রিপাবলিকান সিনেট নেতা মিচ ম্যাককনেল গত সপ্তাহে বলেছিলেন, ক্যাপিটল হিলে হামলায় উসকানিদাতা হিসেবে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে দায়ী বলে মনে করেন তিনি। সেই ম্যাককনেলও এখন তাঁর অবস্থান বদলেছেন বলে প্রতীয়মান হয়।

অভিশংসন বিচার শুরুর প্রক্রিয়ায় সভাপতিত্ব করা সিনেটর প্যাট্রিক লেহিকে গতকাল মঙ্গলবার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যেতে হয়। সিনেট ফ্লোর থেকে ফিরে তাঁর কার্যালয়ে কাজ করার সময় তিনি হঠাৎ অসুস্থতা অনুভব করেন। সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসক ডাকা হয়। শেষে চিকিৎসকের পরামর্শে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবশ্য এদিন রাতেই তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এদিকে ট্রাম্প এখনো আলোচনায় টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। একদিকে মার্কিন সিনেটে তাঁর অভিশংসন বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, অন্যদিকে তিনি ক্ষমতা ছাড়ার এক সপ্তাহের মধ্যে ফ্লোরিডায় দপ্তর খুলেছেন। ‘সাবেক প্রেসিডেন্টের অফিস’ নামের এই দপ্তরের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, দেশের স্বার্থে নানা কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে।

ইতিমধ্যে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণা কমিটি থেকে জানানো হয়েছে, ট্রাম্পের উদ্যোগে ‘প্যাট্রিয়ট পার্টি’ নামের রাজনৈতিক দল বা রক্ষণশীল প্ল্যাটফর্ম গঠনের সঙ্গে তারা জড়িত নয়।

নির্বাচনী প্রচারণার অর্থ সংগ্রহের সময়ে গঠিত ‘ডোনাল্ড জে ট্রাম্প ফর প্রেসিডেন্ট’ নামের কমিটির পক্ষ থেকে ফেডারেল নির্বাচন কমিশনের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, প্যাট্রিয়ট পার্টি বা এ ধরনের কোনো রাজনৈতিক উদ্যোগের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।

 

ট্রাম্পের নির্বাচনী মুখপাত্র জেসন মিলার বলেছেন, সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য থেকে ট্রাম্পের এমন উদ্যোগের কথা তাঁরা জেনেছেন, যার সঙ্গে তাঁদের কোনো সম্পর্ক নেই।

নিউইয়র্ক টাইমস গত রোববার এক প্রতিবেদনে জানায়, রিপাবলিকান পার্টির ওপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য ট্রাম্প ভেতরে-ভেতরে তাঁর অনুসারীদের নিয়ে তৃতীয় একটি রাজনৈতিক দল করার উদ্যোগ নিয়েছেন।

২০ ডিসেম্বর ওয়াশিংটন ডিসি ত্যাগ করার সময় ট্রাম্প আমেরিকার জনগণের উদ্দেশে কোনো না কোনোভাবে দ্রুত ফিরে আসার কথা বলেছিলেন।

ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বলেছেন, গত সপ্তাহান্তে ফ্লোরিডায় গলফ খেলার ফাঁকে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। অভিশংসন বিচার মোকাবিলার জন্য ট্রাম্প নিজে ফ্লোরিডা থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে ফিরবেন বলে তিনি মনে করেন না। তবে অভিশংসন বিচারপর্ব থেকে তিনি দ্রুত উতরে যাওয়ার আশা করছেন।

ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের নেতৃত্বে বাংলাদেশী কন্টিনজেন্ট

ভারতের জাতীয় রাজধানী নয়াদিল্লির মূলকেন্দ্র রাজপথে মঙ্গলবার দেশটির প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে প্রথমবারের মতো নেতৃত্ব দিয়েছে বাংলাদেশী তিন বাহিনীর কন্টিনজেন্ট।

পাকিস্তানের কাছ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর স্মরণে ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের প্রথম ১০ সারিতে ছিলেন বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ১২২ সদস্য।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহতাশিম হায়দার চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন বাহিনীর কন্টিনজেন্টের প্রথম ছয় সারিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পরের দুই সারিতে নৌবাহিনী ও শেষের দুই সারিতে বিমানবাহিনী ছিল।

ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছিল, ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে মুক্ত করা কিংবদন্তি মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরাধিকারিত্ব বহন করবে বাংলাদেশ কন্টিনজেন্ট।’

ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজ ভিক্রান্তের মডেল এবং ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় পরিচালিত সমুদ্র অভিযানের চিত্র কুচকাওয়াজে তুলে ধরে ভারতীয় নৌবাহিনী।

আজ প্রথমবারের মতো ভারতীয় বিমানবাহিনীর একজন নারী যুদ্ধবিমান পাইলট হিসেবে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট ভাবনা কান্ত জঙ্গিবিমান নিয়ে ফ্লাইপাস্টে অংশগ্রহণ করে ইতিহাসে নাম লেখান।

প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে আজ সকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুইট করেন, ‘ভারতের সব জনগণকে জানাই প্রজাতন্ত্র দিবসের শুভেচ্ছা। জয় হিন্দ!’

দেশ পরিচালনায় ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি ভারত শাসন আইন ১৯৩৫-এর জায়গায় ভারতে কার্যকর হয় নতুন সংবিধান এবং দেশটি আবির্ভূত হয় প্রজাতন্ত্র হিসেবে। তখন থেকে এ দিনটি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

এ বছর কোভিড মহামারির কারণে প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। কুচকাওয়াজের দৈর্ঘ্য ৮.২ কিলোমিটার থেকে কমিয়ে ৩.৩ কিলোমিটারে নামিয়ে আনা হয়। সেই সাথে দর্শক সংখ্যা ১ লাখ ১৫ হাজার থেকে করা হয় ২৫ হাজার।

পাশাপাশি, গত পাঁচ দশকের মধ্যে এবার প্রথমবারের মতো ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথি হিসেবে কোনো বিদেশি নেতা উপস্থিত ছিলেন না।

ভারত এ বছরের প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। কিন্তু তিনি নিজ দেশে কোভিড প্রাদুর্ভাবের কারণে সফর বাতিল করে দেন।

ভারত সর্বশেষ কোনো বিদেশী নেতাকে আমন্ত্রণ জানায়নি ১৯৬৬ সালে। সেইবার প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী মারা যান এবং প্রজাতন্ত্র দিবসের দুই দিন আগে ২৪ জানুয়ারি ইন্দিরা গান্ধি দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।

অপারেশন করিয়ে উচ্চতা বাড়ালেন!

নিজেকে নিয়ে খুঁতখুঁতানি প্রায় সব মানুষেরই থাকে। কেউ ভাবে, আরেকটু ফরসা হলে হতো। কারো আবার দুঃখ, কেন আরো ছিপছিপে থাকতে পারছি না। আবার কারো মনের মধ্যে লুকানো ইচ্ছা—ইস, যদি একটু বেশি লম্বা হতাম! কিন্তু শেষ পর্যন্ত সবাইকেই মেনে নিতে হয় বাস্তব পরিস্থিতিটা। সেই দলে অবশ্যই পড়বেন না আলফানসো ফ্লোরস। মার্কিন মুলুকের ২৮ বছরের যুবক বিশেষ এক অপারেশন করিয়ে নিজের উচ্চতা বাড়িয়ে নিয়েছেন ২ ইঞ্চি!

শুনতে যতই অবিশ্বাস্য মনে হোক, এটাই সত্যি। আসলে ডালাসের বাসিন্দা আলফানসোর সেই ১২ বছর বয়স থেকেই ইচ্ছা, যদি নিজের উচ্চতা বাড়ানো যায়। অবশেষে এত দিনের ইচ্ছাকে সত্যি করে ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি থেকে তিনি হয়ে গেছেন ৬ ফুট ১ ইঞ্চি! আর তা করতে খরচও হয়েছে বিপুল। ৭৫ হাজার মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬৩ লাখ টাকা। কিন্তু কেন এমন শখ হলো তাঁর? এক সাক্ষাৎকারে আলফানসোর জবাব, ‘আমি জানি ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি বেশ ভালো উচ্চতা। কিন্তু আমার ইচ্ছা ছিল, যদি আরেকটু উচ্চতা বাড়ানো যেত।’

হার্ভার্ড থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লাস ভেগাসের অর্থোপেডিক সার্জন কেভিন দেবীপ্রসাদ করেছেন অপারেশনটি। এক্স-রে নির্ভর এই অপারেশনে রোগীর পায়ে ছয়টি ফুটো করা হয়। তারপর সেই ফুটো দিয়ে একটি বিশেষ যন্ত্র প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয়। সেই যন্ত্র আবার বাইরে থেকে রিমোটের সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ওই যন্ত্রই শরীরের ভেতরে বাড়তে থাকে। এর ফলে বেড়ে যায় উচ্চতা। ড. দেবীপ্রসাদ জানিয়েছেন, চাইলে ২ ইঞ্চি কেন, আরো দৈর্ঘ্য বাড়ানো সম্ভব। তবে স্বাভাবিকভাবেই খরচ বাড়বে।

করোনার বিস্তার রোধে আশাবাদী মার্কিন বিশেষজ্ঞরা

করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়লেও যুক্তরাষ্ট্রের সামনে এখন মহামারির বিস্তার ঠেকানোর সুযোগ এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস বিস্তারের দ্বিতীয় ঢেউ ভয়াবহ অবস্থায় গিয়ে পৌঁছেছে। নতুন সংক্রমণ বাড়ছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। কিন্তু এরই মধ্যে আশার আলো দেখছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা বিজ্ঞানের অধ্যাপক ও সিএনএনের স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশ্লেষক ড. জোনাথন রেইনারের মতে, ‘আগামী দুই মাসে আমরা বহু মানুষকে মরতে দেখব। কিন্তু আশার আলোও আছে। গত কয়েক মাসের মধ্যে গত চার দিনে প্রথমবারের মতো ধারাবাহিকভাবে নতুন সংক্রমণ ও কোভিড-১৯ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির হার কমেছে। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে এই চার দিনে কোভিড-১৯ নিয়ে হাসপাতালে দৈনিক ভর্তির সংখ্যা প্রায় এক হাজার করে কমেছে।

সিএনএন জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালগুলোতে এখন প্রতিদিন গড়ে কোভিড-১৯ নিয়ে ১ লাখ ২৪ হাজারের মতো রোগী ভর্তি হচ্ছে। কয়েক সপ্তাহ আগেও এ সংখ্যা ছিল দৈনিক গড়ে ১ লাখ ৩২ হাজার। প্রতি দিনই করোনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ আগে করোনা শনাক্তের হার যেখানে ১৪ শতাংশ ছিল, এখন তা কমে ১১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, আমরা চূড়াটি এরই মধ্যে পার হয়ে গেছি। যদি আমরা মাস্ক পরি এবং নিয়ম মানি, আর যত দ্রুত সম্ভব টিকা নিই, তবে আমরা করোনার বিস্তার রোধ শুরু করতে পারব

জোনাথন রেইনার, জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা বিজ্ঞানের অধ্যাপক

এ বিষয়ে জোনাথন রেইনার বলেন, ‘অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, আমরা চূড়াটি এরই মধ্যে পার হয়ে গেছি। যদি আমরা মাস্ক পরি এবং নিয়ম মানি, আর যত দ্রুত সম্ভব টিকা নিই, তবে আমরা করোনার বিস্তার রোধ শুরু করতে পারব।’

তবে যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃত্যু কিন্তু খুব একটা কমেনি। এই সংখ্যা এমন গতিতে এগোচ্ছে যে, খুব দ্রুতই মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৪ লাখ ছুঁয়ে ফেলবে বলে মনে হচ্ছে। সঙ্গে রয়েছে কোভিড-১৯–এর নতুন স্ট্রেইনের বিপদ, যা বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে ছড়াতে শুরু করেছে। প্রতি সপ্তাহে নতুন এই স্ট্রেইনে সংক্রমিত লোকের সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) সাবেক কমিশনার ড. স্কট গটলিব।

সিবিএস নিউজের ‘ফেস দ্য নেশন’ অনুষ্ঠানে গটলিব বলেন, ‘আগামী পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে নতুন এই স্ট্রেইন আগেরটির জায়গা দখল করবে বলে মনে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে একমাত্র সুখবর হচ্ছে, সে (নতুন স্ট্রেইন) কর্তৃত্ব নেওয়ার আগেই আমাদের বহু মানুষ সংক্রমিত হয়ে যাবে এবং বহু লোক টিকা গ্রহণ করবে। ফলে জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশের মধ্যে একটা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি থাকবে। কিন্তু তারপরও এটি করোনা মোকাবিলার সমীকরণকে জটিল করে তুলেছে। আগামী বসন্ত নাগাদ নতুন করে আবার সংক্রমণ হতে পারে এই নতুন স্ট্রেইন দ্বারা।’

নতুন স্ট্রেইনটি সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. অ্যান্থনি ফাউসি গতকাল রোববার এনবিসি নিউজকে বলেছেন, ‘কোভিড-১৯–এর নতুন এই স্ট্রেইন অতটা প্রাণঘাতী না হলেও তা অনেক মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এমনিতে এটি আগেরটির মতো অত বেশি অসুস্থ করে না বা শুধু এর সংক্রমণের কারণেই মৃত্যু হবে—এমনটাও হয়তো নয়। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, এটি যত বিস্তার পাবে, তত বেশি লোক অসুস্থ হবে। যত বেশি অসুস্থ হবে, তত বেশি লোককে ছুটতে হবে হাসপাতালের দিকে এবং সে ক্ষেত্রে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়বে।’

এরই মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়াসহ যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেইন ছড়িয়ে পড়েছে। এটি আগেরটির চেয়ে দ্রুত ছড়ায় কিনা, তা এখনো নিশ্চিত না হলেও অঙ্গরাজ্যগুলোর কর্তৃপক্ষ নাগরিকদের প্রতি স্বাস্থ্য সতর্কতা পালনের বিষয়ে আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও করোনা মহামারি মোকাবিলাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।

শীতের এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু ব্যাপকভাবে বেড়েছে। শুধু জানুয়ারিতেই ৩৯ লাখ মানুষের শরীরে নতুন সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে; মারা গেছে ৫১ হাজার। চলতি মাসের তিন দিন ছাড়া বাকি সব দিনই নতুন সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ২ লাখের বেশি। দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যায় একের পর এক রেকর্ড হয়েছে। খুব দ্রুতই এই মৃত্যুর সংখ্যা চার লাখ ছুঁয়ে ফেলবে, যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, ভিয়েতনাম যুদ্ধ ও কোরীয় যুদ্ধে নিহত মার্কিনদের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যাবে। এমনকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত মার্কিনের সংখ্যাকেও ছুঁয়ে ফেলতে পারে। আর সিডিসির পূর্বাভাস সত্য হলে এই সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ৫ লাখ ছাড়িয়ে যাবে।

এ অবস্থায় মার্কিন প্রশাসন, বিশেষ করে ২০ জানুয়ারি শপথ নিতে যাওয়া জো বাইডেন প্রশাসন করোনা টিকা দেওয়ার কর্মসূচি সম্প্রসারণের ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে। জো বাইডেন ঘোষিত নতুন নাগরিক প্রণোদনা প্যাকেজেও এ সম্পর্কিত তহবিলে বাড়তি অর্থ রাখা হয়েছে। সিডিসির তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত ১ কোটি ২২ লাখ মার্কিন করোনা টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন। পুরো দেশে ৩ কোটি ১০ লাখের বেশি ডোজ সরবরাহ করা হয়েছে। এই সরবরাহ ও টিকা বিতরণের হার আরও ব্যাপকভাবে বাড়ানোর ওপরই এখন সবাই গুরুত্ব দিচ্ছেন। আশার আলো দেখা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও এই টিকা কর্মসূচির সাফল্যের ওপরই সবচেয়ে বড় বাজিটি রেখেছেন।