সরকারের তিন পদক্ষেপ ডলার সাশ্রয়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণ, সুদহার বৃদ্ধি, ঋণপ্রবাহ কমানো * ডলারের জোগান বাড়লেই অনেক সমস্যা কেটে যাবে -ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ

বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে দেশের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় মৌলিক তিনটি পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ডলার সাশ্রয়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণ, সুদহার বৃদ্ধি এবং সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির আওতায় ঋণপ্রবাহ কমানো।

এছাড়া আরও কিছু সহযোগী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তবে এর মধ্যে একটি উদ্যোগের কারণে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো ঠিক আছে। ভোগ্যপণ্যের চাহিদা কমানো হচ্ছে। এতে আমদানি ব্যয় কমানোর ফলে রিজার্ভে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। লোডশেডিংয়ের কারণে জ্বালানি আমদানি কমবে। এতেও ডলার সাশ্রয় হবে। অন্যদিকে বাজারে টাকার সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ার নীতি গ্রহণ করা হয়েছে।

ফলে আমদানি খাতে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদাও কমবে। তবে এতে বেসরকারি খাতের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা আছে। যা কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এদিকে ঋণের সুদের হার বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এতে ঋণের খরচ বেড়ে যাবে। ফলে ঋণপ্রবাহ কমবে।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, মূল সমস্যা ডলার। এখন ডলারের জোগান বাড়াতে হবে। এটি বাড়ানো সম্ভব হলেই অনেক সমস্যা কেটে যাবে। কিন্তু ডলারের জোগান বাড়াতে হলে প্রথমে পাচার বন্ধ করতে হবে। তারপর রেমিট্যান্সে হুন্ডি বন্ধ করতে হবে। তাহলে ডলারের জোগান বাড়বে।

এর পাশাপাশি আমদানি নিয়ন্ত্রণ, দেশের ভেতরে আমদানির বিকল্প পণ্য উৎপাদন ও বাজার তদারকি বাড়াতে হবে। তাহলে পণ্যমূল্য কমবে। এতে মূল্যস্ফীতির হারও সহনীয় হবে। কিন্তু ইতোমধ্যে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এতে বেসরকারি খাতের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ফলে কর্মসংস্থান কমবে, মানুষের আয়ও কমবে। যা মূল্যস্ফীতির আঘাতকে আরও বড় করে তুলবে স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষের কাছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে অর্থনৈতিক চাপ কমে আসবে। কেননা ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে পণ্যের দাম কমে যাবে। তখন অর্থনৈতিক চাপও কমবে।

এদিকে রিজার্ভ সাশ্রয় করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় কিছুটা কমানো সম্ভব হয়েছে। কিন্তু চাপ পুরোপুরি কমেনি। আমদানি ব্যয়ের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ হচ্ছে জ্বালানি খাতে। এ খাতে ব্যয় কমাতে লোডশেডিং করা হচ্ছে। জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ করা হয়েছে। ফলে জ্বালানি খাতে ডলার সাশ্রয় হবে।

সূত্র জানায়, করোনার পরে হঠাৎ পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে সব পণ্যের দাম বেড়ে যায়। একই সঙ্গে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা আরও বাধাগ্রস্ত হয়। এতে পণ্যের দামও বাড়ে। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ায় আমদানি ব্যয় বেড়ে যায় লাগামহীনভাবে। আমদানি ব্যয় যেভাবে বেড়েছে সেভাবে রপ্তানি আয় বাড়েনি।

এদিকে রেমিট্যান্স প্রবাহে ঘাটতি দেখা দেয়। এসব মিলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। এতে বাজারে ডলারের দাম হু-হু করে বাড়ছে। গত এক বছরের ব্যবধানে ডলারের দাম ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা থেকে বেড়ে ৯৪ টাকা ৪৫ পয়সায় উঠেছে। ওই সময়ে টাকার মান কমেছে ৯ টাকা ৬৫ পয়সা। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর হিসাবে টাকার মান আরও বেশি কমেছে।

দেশে এখন সবচেয়ে বড় সংকট বৈদেশিক মুদ্রার জোগানে। চাহিদা অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রার জোগান মিলছে না। ফলে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৩৫ কোটি ডলার ঘাটতি হচ্ছে। এ ঘাটতি মেটানো হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ডলার দিয়ে। এতে রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। গত বছরের আগস্টে রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলারে উঠেছিল। এখন তা কমে ৩ হাজার ৯৬০ কোটি ডলারে নেমে গেছে।

এদিকে আগামীতে আমদানির দেনা পরিশোধের চাপ আরও বাড়ছে। কেননা করোনার সময়ে যেসব এলসির বা বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ স্থগিত হয়েছিল সেগুলো এখন দিতে হচ্ছে। এতে চাপ আরও বাড়ছে। বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় করতে আমদানি নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এলসির ঊর্ধ্বগতি কমানো সম্ভব হয়েছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতেও নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

এতে আগামীতে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে বলে আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে রপ্তানি আয় বড় চ্যালেঞ্জে পড়তে যাচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ইউরোপের অর্থনীতিতে ধস নেমেছে। প্রায় সব দেশই সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করছে। ঋণের সুদের হার বাড়াচ্ছে। ইউরোর দাম কমে গেছে। এতে আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। ফলে তারা আমদানি কমানোর দিকে এগোচ্ছে। দেশে রপ্তানি আয়ের ৫৪ শতাংশ ইউরোপ থেকে আসে। ফলে এ খাতে বড় ধাক্কা আসতে পারে।

বেশি দামে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করায় দেশে এসে ওইসব পণ্য মূল্যস্ফীতির হার বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ খাতে মূল্যস্ফীতি কমাতে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে বাজারে টাকার প্রবাহ কমানোর নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে নীতি সুদের হার দুই দফায় কমানো হয়েছে। রপ্তানি ঋণের সুদের হার ১ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।

তবে এখনও ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়ানো হয়নি। তবে এ খাতেও ঋণের সুদের হার বাড়ানোর জন্য প্রচণ্ড চাপ আছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর। কেননা ব্যাংকে এখন আমানত কমে যাচ্ছে। আমানত বাড়াতে হলে সুদের হার বাড়াতে হবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ ও আমানতের ক্ষেত্রে ৯-৬ নীতি (ঋণের সুদ ৯ শতাংশ ও আমানতের সুদ ৬ শতাংশ) গ্রহণ করায় এখন ব্যাংকগুলো আমানতের সুদের হার বাড়াতে পারছে না। আমানতের সুদের হার বাড়লে ঋণের সুদের হারও বাড়াতে হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশে ঋণের সুদের হার কমিয়ে বা বাড়িয়ে ঋণপ্রবাহ বাড়ানো বা কমানো সম্ভব হয় না। কেননা গত দুই বছর ধরে ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তারপরও বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়েনি। করোনার সময় কিছু খাতে প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে ৪ শতাংশ সুদে জামানতবিহীন ঋণ দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেগুলোতেও ঋণপ্রবাহ বাড়েনি।

সাম্প্রদায়িক অপশক্তির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বিএনপি: তথ্যমন্ত্রী

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির প্রধান পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে বিএনপি। সাম্প্রদায়িকতাকে সমূলে বিনাশ করতে হলে এই সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে যারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়, সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে যারা রাজনীতি করে তাদের চিরতরে বর্জন করতে হবে।

শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে ২০০৩ সালে বাঁশখালীর সাধনপুরে সংখ্যালঘু পরিবারের ১১ জনকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় বেঁচে যাওয়া তিনজনের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর ৪৫ লাখ টাকার চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন- বাঁশখালী আসনের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান।

এরপর দুপুরে তথ্যমন্ত্রী মহানগরীর ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় সংরক্ষণে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অবৈধ দখলদারমুক্ত পাহাড়ি ভূমিতে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠনের পর সমগ্র দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর তাণ্ডব চালিয়েছিল। সেই তাণ্ডবের প্রেক্ষিতে সারা দেশ থেকে পালিয়ে আসা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য ঢাকায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আশ্রয় কেন্দ্র খুলতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা কোটালিপাড়া থেকে শুরু করে বরিশালের বানারিপাড়া, মাগুরাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হয়েছে।

তিনি বলেন, নৌকায় ভোট দেওয়ার অপরাধে বাড়ি দখল করে রাতারাতি সেই বাড়ির মধ্যে পুকুর খনন করা হয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষকে ঘরবাড়ি থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। তাদের অপরাধ ছিল তারা অসাম্প্রদায়িক দল আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। বাঁশখালীতেও একই অপরাধে তৎকালীন সংসদ সদস্যের নিকটাত্মীয় বিএনপি নেতা আমিন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে অগ্নিকাণ্ড ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সেদিন সংসদ সদস্যের দায়িত্বে যিনি ছিলেন তিনি এই দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান এ দেশে থাকতে পারে না, সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে সমূলে বিনাশ করতে হবে, তাহলে রাষ্ট্র এগিয়ে যাবে। সাম্প্রদায়িকতার কারণে পাকিস্তান রাষ্ট্র আজকে এগোতে পারছে না। যেখানেই সাম্প্রদায়িকতা আছে সেখানেই রাষ্ট্র এগোতে পারে না।

তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আপনারা জানেন কারা সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে রাজনীতি করে। যারা রাষ্ট্রটাই চায়নি। জামায়াতে ইসলাম বিএনপির প্রধান সহযোগী। তাদের যে ২২ দলের রাজনৈতিক জোট, সেখানে বহু দল আছে যাদের নেতারা আফগানিস্তান গিয়েছিল।

মন্ত্রী বলেন, আদালতের মারপ্যাঁচ ও বিএনপির অনীহাসহ সবকিছু মিলিয়ে আমরা সরকার গঠনের পরও বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হতে ৪০ বছরের মতো সময় লেগেছে। বাঁশখালীর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচারের ক্ষেত্রেও এত দীর্ঘসূত্রিতা কাম্য নয়।

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে মাদার অব হিউমিনিটি উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, যেখানেই মানবতা লঙ্ঘিত হয়েছে সরকারে থাকেন বা না থাকেন তিনি সেখানে ছুটে গেছেন। মিয়ানমারের শরণার্থীদের জন্য বাংলাদেশের দুয়ার খুলে দিয়েছেন। রোহিঙ্গা রিফিউজিদের খাদ্য, চিকিৎসাসহ সমস্ত সুযোগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়ার মর্ধ্যে পার্থক্য

কামরুল ইসলাম, যুক্তরাজ্য থেকে
অনেকেই আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতা নেত্রীদের মধ্যে নাকি পার্থক্য খুঁজে পান না। সবাইকেই নাকি একই লাগে। এই কথাটা শুনেই আসলে মনে হয় এদের বিবেচনাবোধের অবস্থা ভয়াবহ।
বেগম খালেদা জিয়া আর শেখ হাসিনার মধ্যে পার্থক্য কী যারা জানতে চান, তাঁদেরকে বলবো শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাবলির দিকে একটু খেয়াল করতে।
২০০২ সালে ঢাকা বিশবিদ্যালয়ের ভিসি বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়াররুল্লাহ চৌধুরী, যিনি ১৯৭১ সালে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক সরকারের দালালি করছিল কিংবা চুপচাপ সময় কাটিয়ে দিচ্ছিল ক্যাম্পাসে তখন অস্ত্র নিয়ে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছিলেন, শিক্ষার্থীদের উপর হামলার কোন নির্দেশ না দিলেও শুধু ভিসি হিসেবে শামসুন্নাহার হলে পুলিশ ঢোকার অনুমতি দেয়ার অপরাধে পদত্যাগ করেছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হওয়ার ৫ দিনের মাথায় বেগম খালেদা জিয়া তাঁকে পদত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
বেগম জিয়া যেহেতু একজন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তাই তিনি যখনই দেখেছেন কোন দায়িত্বশীল ব্যক্তি জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, তখনই সেখানে ব্যবস্থা নিয়েছেন।
অন্যদিকে শেখ হাসিনাকে দেখেন। এই হাসিনা বুয়েটের ভিসির পক্ষে ২০১২ সালে সাফাই গেয়েছে, যে ছাত্রলীগের নেতাদের বিনা পরীক্ষায় পাস করিয়ে দিত। এমনকি তখন বুয়েটের ছাত্রীদের ব্যাপারে প্রচন্ড মিসোজিনিস্ট বক্তব্যও দিয়েছিল হাসিনা। হাসিনার বদৌলতে বুয়েটের সেই ভিসিকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়নি।
হাসিনার আশীর্বাদে শাহজালালে শিক্ষার্থীদের উপর গুলি করার নির্দেশ দেয়া ভিসি এখনো ক্ষমতা আঁকড়ে আছে। এদিকে হাসিনা কী করেছে দেখেন, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আন্দোলনের পক্ষে যে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা সমর্থন দিচ্ছিল, তাদেরকে পুলিশ দিয়ে তুলে নিয়ে গেছে বাসা থেকে।
এই হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনার মধ্যে পার্থক্য। ভালো করে বুঝে নিয়েন।

সরকারি সাংবাদিক

সামিউজ্জামান সিদ্দিকী, যুক্তরাজ্য
সাংবাদিকদের বলা হয় সরকারের “চিরস্থায়ী সমালোচক”। সমালোচনা বা প্রতিবেদন করার কারণে অতীতে বহুবার সাংবাদিকদের হেনস্থা করা হইছে। শেখ কামাল তার বাবার আমলে আহমদ ছফাকে “ভদ্র সমাজে উচ্চারণ করা যায় না এমন গালিও” দিয়েছে। কিন্তু আগে, এমনকি শেখ মুজিবের আমলেও, সাংবাদিকদের হেনস্থা করা হইলে সাংবাদিকরা প্রতিবাদ করতো। সরকারের সমালোচনা আরো বেশি করতো।
কিন্তু এখন পুরা উলটো চিত্র। সাংবাদিকরা সমালোচনা করা কিংবা সরকারের বিরুদ্ধে যায় এমন রিপোর্ট করাই ভুলে গেছে। ব্যাপারটা শুধু সেন্সরশিপ, ভয়, আইন বা সেলফ সেন্সরশিপ দিয়ে আমি কখনোই ব্যাখা করতে পারি নাই।
তাহলে বিষয়টা কী? বিষয়টা আমি পরিষ্কার হলাম ডাঃ তৃণা ইসলামের ঘটনা থেকে। চিন্তা করেন, শাকিল আহমেদ নামের একাত্তর টিভির এক সাংবাদিক, দুনিয়ার কোথাও যার দুই পয়সার ক্রেডিবিলিটিও নাই, সে কিনা বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব ইন্সটিটিউটে চাকরি করা একজন সরকারি ডাক্তারের চাকরি খেয়ে ফেলতেছে!
এমন ক্ষমতা অতীতে কোন সরকারের আমলে কোন সাংবাদিক ভোগ করছে? দেখাইতে পারবেন?
শেখ হাসিনার সরকার মূলত গত তের বছরে যেইটা করছে, তৃতীয় শ্রেণির কিছু সাংবাদিকদের বিভিন্ন চ্যানেল-পত্রিকার মালিক বানায় দিছে এবং চতুর্থ শ্রেণির কিছু সাংবাদিকদের দিছে এইগুলা চালাতে। তাদের একমাত্র কাজ হচ্ছে শেখ হাসিনার দালালি করা, এর বদলে এদের স্বাধীনতা দেয়া হইছে যা ইচ্ছা তাই করার, লিটারেলি। তাই দুই পয়সার সাংবাদিকরা এখন পরকীয়া করে আবার সেই অন্যায় ঢাকতে দেশের একজন সরকারি ডাক্তারের চাকরি খাইতে পারে।
চূড়ান্ত নোংরামিকে আশকারা দেয়ার মত এমন সরকার মাহফুজ-আনিস-শাকিলদের অতীতে কে দিছে, আর ভবিষ্যতেও বা কে দিবে? হাসিনার সমালোচনা করলে এদের সব পরকীয়া আর চাঁদাবাজির রেকর্ডগুলা বের হয়ে গেলে তখন কী একটা অবস্থা হবে ভাবা যায়?

প্রধানমন্ত্রীকে ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অশালীন, অভব্য এবং প্রাণঘাতী হুমকিস্বরূপ লেখা ও মন্তব্য ছাঁপানোর জের ধরে ডিজিটাল আইনে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-কে নিয়ে দৈনিক নবযুগ নামক একটি অনলাইন পত্রিকায় কটূক্তি ও হত্যার হুমকি প্রদানের দায়ে গত ৩রা অক্টোবর লক্ষীপুরের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (আমলী) আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ বেলায়েত হোসেন (ক্ষমতাপ্রাপ্ত)  ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর অধীনে মামলা গ্রহণ করে আমলে নিয়ে আদেশ জারী করা হয়। আওয়ামী লীগ এর তৃণমূল পর্যায়ের কর্মী ও সমর্থক মোঃ হৃদয় কাজী বাদী হয়ে গত ২৩শে সেপ্টেম্বর ২০২১ এ মামলাটি দায়ের করেন (মামলার নংঃ সি.আর. ৪৭৭/২০২১) যার শুনানী হয় ৩রা অক্টোবরে। উক্ত মামলাতে লেখক, প্রকাশক ও সকল বক্তব্য প্রদানকারীকে আসামী করে মোট ৪৭ জনের বিরুদ্ধে এ মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।

অভিযুক্তদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন – ইসরাত রশিদ (৩৬, সম্পাদক, দৈনিক নবযুগ), জনি জোসেফ ডি কস্তা(৩২, সহ-সম্পাদক, দৈনিক নবযুগ), নুরুল হুদা(২৯, সিনিয়র সহ-সম্পাদক, দৈনিক নবযুগ),  নূর মুহাম্মাদ (সিনিয়র উপদেষ্টা, দৈনিক নবযুগ), আলী আমিন (৩৯, প্রকাশক, দৈনিক নবযুগ), পীরজাদা তানভীর আহমেদ (২৪),  মোহাম্মাদ শহীদুল ইসলাম জায়গীরদার(৩৬), মোঃ আব্দুল রাজ্জাক (২৭), মোঃ মাসুম সাজ্জাদ (৩২), আরিফুল হক আরিফ (২৬), মোঃ জাকির হোসাইন (২৯),  মোঃ রাজিম হোসাইন (৩০), শিপলু কুমার বর্মন (৪২),  মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান, আবু সাঈদ (২৫), মোঃ আল-আমিন কায়সার (৩১),  এম.ডি মারাজ মিয়া (২৭), এম.ডি শাইম (২০),  আহসানুল কবির (৩৫), এমডি তোফায়েল হোসাইন, মোঃ শহীদুল ইসলাম (৩৮), সামিউজ্জামান সিদ্দীক (৪০), এম.ডি সাব্বির হোসাইন (৪০, সম্পাদক, পোর্টাল বাংলাদেশ), এম.ডি জহিরুল ইসলাম (৩৩), আল মাহফুজ (২৪), এম.ডি ওবায়দুর রহমান খান, মোঃ আরাথ হোসেন রনি (২৯), উম্মা কুলসুম নার্গিস বানু (৩৯), নুরুল ফারুক শাকের (৩৫), মোহাম্মাদ নিজামুল হক (৪৬), মোহাম্মদ ফাহিদুল আলম, মোঃ মিজানুর রাহামান, এমডি কানজিদ হাসান সহ আরো অনেকে।

এ মামলার বিষয়ে বাদীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি আমাদের এ প্রতিবেদককে জানান, “এই মামলার আসামীরা প্রত্যেকে দীর্ঘদিন যাবত অনলাইনে সরকার তথা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র ও প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় তারা দৈনিক নবযুগ নামক একটি অনলাইন পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন ছাঁপায় মার্চ ২০২১-এ। সেখানে তারা যাবতীয় কুৎসিত বানোয়াট এবং অসত্য কথা লিখেছিল কিছু সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে যে ব্যাপারে আমি কথা বলতে চাইনা এবং যার প্রেক্ষিতে বোধহয় তাদের বিরূদ্ধে যথোপযুক্ত একটা মামলাও হয়েছিল। সে মামলার ব্যাপারে সঠিক আইনানুগ ব্যবস্থা না নিয়ে এই পত্রিকা আরো একটি লেখা ছাঁপে বেশ কিছু মন্তব্যসহকারে মে-মাসে যেখানে সাধারণ মানুষ ও সংবাদমাধ্যমের বাকস্বাধীনতা রোধ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয় আগের মামলার জের ধরে। মামলা কোর্টে মোকাবিলা না করে গণমাধ্যমে বিচারালয় বসিয়ে দিয়েছে। আর সে লিখাগুলোতে এবং মন্তব্যে সরাসরি আমাদের মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে এবং আমাদের জাতির ঋণ যে পরিবারের কাছে – সে শেখ পরিবারকে নিয়ে যাচ্ছেতাই কথাবার্তা লিখা হয়েছে, প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে। এই প্রতিবেদনে আমাদের সকলের প্রাণপ্রিয়, জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গবন্ধু কন্যা, দেশনেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের কটূক্তি ও মানহানিকর বক্তব্য প্রদান করেছে।”

তিনি আরো বলেন, “তারা শুধু কটূক্তিই করেনি, বরং দেশনেত্রী শেখ হাসিনার সরকার ও তাঁর সমগ্র পরিবারকে উচ্ছেদ করার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছে। যা খুবই ভয়ঙ্কর, আমাদের বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের একটা অংশ ও এতে করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ণ হয়েছে। এসকল লেখকেরা দেশের বিরুদ্ধে নিরন্তর ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। এবং এটি এক ধরনের মহামারি আকার ধারণ করার আগেই বন্ধ করে দিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা উচিত। এজন্যই বিষয়টিতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই মামলাটি করেছি।”

আদালত সূত্রে জানা যায়, মামলাটি দায়ের হওয়ার পর বিজ্ঞ আদালত কমলনগর থানার ওসিকে ৩০ দিন সময় দিয়েছেন মামলার তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার জন্যে।  আগামী ২০শে ডিসেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানীর তারিখ ধার্য করা হয়েছে।

কমলনগর থানার সাথে যোগাযোগ করা হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমাদের প্রতিবেদককে জানান, “অভিযোগ আসার পর থেকেই আমরা দ্রুততার সাথে কাজ করছি। আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পরপরই আমরা একটি ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। আশা করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ তদন্ত সম্পন্ন করতে সক্ষম হবো। আমাদের কাছে বিস্তারিত তদন্ত রিপোর্ট আসলে গণমাধ্যমের মাধ্যমে সবাইকে এ বিষয়ে অবহিত করতে পারবো।”

এ বিষয়ে অভিযুক্তদের সাথে আমাদের এ প্রতিবেদক যোগাযোগ করে তাদের বক্তব্য তুলে ধরার চেষ্টা করলে তাদের কারো সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।

রাজধানীতে আ.লীগ নেত্রীকে কুপিয়ে হত্যা

নিহতের নাম উমামা বেগম কনক (৪০)। তিনি আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক উপকমিটির সদস্য।

শুক্রবার মধ্যরাতে পল্লবী থানাধীন মিরপুর ডিওএইচএস, ৭৪৩ নম্বর বাসায় এ ঘটনা ঘটে।

গুরুতর আহত অবস্থায় কনককে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার ভোরে তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় নিহতের স্বামী ওমর ফারুককে আটক করেছে পুলিশ।

নিহতের বোন জামাই বাবুল জানান, ওমর ফারুক দীর্ঘদিন জাপানে ছিলেন। দেশে এসে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করে। যতটুকু জেনেছি ব্যবসায় সে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কী কারণে এ ঘটনা ঘটিয়েছে এ বিষয়ে জানতে পারিনি।

পল্লবীর থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী বলেন, পারিবারিক কলহে রাতে স্ত্রীকে বটি দিয়ে কুপিয়ে আহত করেন স্বামী। পরে মেডিকেলে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সকালে মারা যান তিনি।

তিনি বলেন, যতটুকু জানতে পেরেছি নিহতের স্বামী জাপান থাকতেন। পাঁচ বছর আগে দেশে আসেন। বর্তমানে তার ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফ্ল্যাট নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে স্বামী তাকে কোপায়।

এ ঘটনায় নিহতের স্বামী ওমর ফারুককে আটক করা হয়েছে বলে জানান ওসি।

আল জাজিরা সম্পর্কিত প্রবন্ধ প্রকাশের অভিযোগে রাষ্ট্রদোহীতার মামলায় অভিযুক্ত ২৮ঃকঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আহবান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রালয়কে

আল-জাজিরা ও মুশতাক আহমদ এর কারাগারে মৃত্যুকে কেন্দ্র করে প্রতিক্রিয়া দেশে-বিদেশে  এখনো চলমান। এ-দুটো বিষয়ে প্রবাসী বাংলাদেশীদের মন্তব্য আহবান করে অনলাইন সংবাদপত্রিকা দৈনিক নবযুগ ফেব্রুয়ারীর ২৭ তারিখে। ২২শে মার্চ  ‘আল জাজিরার তথ্যচিত্র, কারাগারে মুশতাকের মৃত্যু ও প্রবাসীদের ভাবনা’ প্রকাশ করে দৈনিক নবযুগ যেখানে অশ্রাব্য ভাষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিচার বিভাগের বিচারকদের বিশেষ করে সাইবার ট্রাইনবুন্যালের বিচারককে আক্রমণ করা হয় এবং হত্যার হুমকি দেয়া হয়। সবচেয়ে আতঙ্ক-জাগানিয়া ব্যাপার ছিল এই লেখায় অনেকেই মত প্রকাশ করেন যে বাংলাদেশে বহির্বিশ্বের বহিরাক্রমণ করা উচিত আওয়ামী সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করবার জন্যে যা নিশ্চিতভাবেই রাষ্ট্রের স্বাধীনতা খর্ব করবে এবং রাষ্ট্রদোহীতার দোষে এরা প্রত্যেকেই দোষী।
 
 

এই পর্যবেক্ষণের সাথে সম্পূর্ণভাবে সহমতকারী এডভোকেট মোঃ রবিউল আলম জুয়েল, যিনি বঙ্গবন্ধু আইন ছাত্র পরিষদ এর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক, বাদী হয়ে গত ২৮ মার্চ রাজধানীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে  রাষ্ট্রদোহীতা ও অন্যান্য অভিযোগে ফৌজধারী আইনের আওতায়  দৈনিক নবযুগ-এর প্রকাশক, সম্পদাক ও উক্ত প্রবন্ধে প্রমুখ মন্তব্যকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

মামলার অভিযোগ প্রসঙ্গে বাদীপক্ষের আইনজীবী এডভোকেট আপেল সাহেব বলেন – ‘এধরণের প্রকাশিত বক্তব্য বাংলাদেশের জন্যে খুবই ক্ষতিকর। বাংলাদেশীদের বিভিন্ন ইস্যুতে অভিযোগ থাকতেই পারে। কোনো সরকার-ই সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। কিন্তু বহিরাক্রমণের জন্যে আন্তর্জাতিক মহলকে এভাবে উন্মুক্তভাবে তদবির করা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা অসীম নয়। এটি একটি কোয়ালিফায়েড অধিকার। রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব এইক্ষেত্রে সবসময় অগ্রাধিকার পাবে। আমি মনে করি এটী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মামলা এবং আমরা আনন্দিত যে বিজ্ঞ আদলাত এই মামলা গুরুত্ব অনুধাবন করে এটি আমলে নিয়েছেন এবং আমরা এখন ডিসি অফিসের সহযোগিতায় এই মামলার তদন্ত পর্যায়ে যাবো আশা করছি।’

আদালত সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে বাদীর জবানবন্দী গ্রহণ করে এবং প্রাসঙ্গিক অভিযোগ পর্যালোচনা করে অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটান  ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ হাসিবুল হক মামলাটি আমলে নেন (সি.আর. – ১২০/২০২১) এবং  বাদীপক্ষকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রালয়কে অন্তর্ভুক্ত করে অভিযোগ পুনর্গঠন ও জমা দেয়ার আদেশ দিয়েছেন।  

  দৈনিক নবযুগ এর সম্পাদক ইসরাত রশিদ সংক্ষিপ্ত জবাবে জানান – ‘আমরা একটি মন্তব্য জরিপ চালিয়েছি এবং এই মন্তব্য জরিপে প্রবাসী বাংলাদেশীদের দৃষ্টিভঙ্গী উঠে এসেছে। নিজের দেশের নাগরিকদের মন্তব্য আওয়ামী সরকার ও এর সমর্থকদের ভালো না-ই লাগতে পারে, কিন্তু এর মানে তো এ নয় যে – সরকার ও বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয়ে মানুষ তাদের নিজেদের চিন্তা মুক্তভাবে তুলে ধরতে পারবেনা! বাংলাদেশে মুক্তচিন্তার স্বাধীনতা তীব্রভাবে সঙ্কুচিত এবং এই ধরণের মামলা সুস্থ ও অবাধ সাংবাদিকতার পরিপন্থী!’  

এটি পরিলক্ষিত যে এই প্রবন্ধে বেশ কিছু বিএনপি-জামায়াত এর নেতা-কর্মী-সমর্থকদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে মন্তব্য-জরিপে এবং আওয়ামী লীগ বা সরকার-সমর্থিত কোনো মন্তব্য দেখা যায়নি।  আদালত ফাইলের নথি ঘেটে দেখা যায়  মামলার বিবাদীরা হলেন – শিপলু কুমার বর্মণ, ইসরাত রশিদ (সম্পাদক, দৈনিক নবযুগ), আলী আমিন (প্রকাশক, দৈনিক নবযুগ), জনি জোসেফ ডি কস্তা (সহ-সম্পাদক, দৈনিক নবযুগ), নুরুল হুদা (সিনিয়র সহ সম্পাদক, দৈনিক নবযুগ), মুকিত চৌধুরী, মোঃ ইমরান হোসাইন, বিপ্লব পাল, নূর মিয়া, আহসানুল হুদা সরকার, মোঃ জাকির হোসাইন, মিজানুর রহমান, উম্মা কুলসুম নার্গিস বানু, আহসানুল কবির, নুরুল ফারুক শাকের, মো; বিন রাজিম, মোঃ রুকন মিয়া, মোঃ আশিফ হোসাইন, মোঃ মাসুম সাজ্জাদ, মোঃ আরাথ হোসেন রনি, মোঃ শহীদুল ইসলাম জায়গীরদার, মোঃ ওবায়দুর রহমান খান, মোঃ আল-আমিন কায়সার, মোঃ সাব্বির হোসাইন প্রমুখ।

মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়-এর জবাব প্রাপ্তির পর। 

অনলাইনে আসছে যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ

সরকার দেশের বেকার যুবসমাজকে অনলাইন প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে যাচ্ছে। অনলাইন প্ল্যাটফরমে যাতে ঘরে বসেই বিভিন্ন কাজে দক্ষতা অর্জন করতে পারে, সে উদ্যোগ একেবারে চূড়ান্ত পর্যায়ে।

এ প্রশিক্ষণ গ্রহণে সংশ্লিষ্ট ফোন কোম্পানিগুলো একেবারে স্বল্পমূল্যের বিশেষ ডেটা প্যাকেজও চালু করবে। যাতে যে কারও পক্ষে অনলাইনে এ ধরনের প্রশিক্ষণ নেওয়া খুব সহজ হয়। এ সুবিধা দিতে এগিয়ে এসেছে দুটি মুঠোফোন কোম্পানি। প্রশিক্ষণ শেষে অনলাইনে আন্তর্জাতিক মানের সনদপত্রও মিলবে। বুধবার যুগান্তরকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আখতার হোসেন। তিনি জানান, আজ এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সচিব যুগান্তরকে বলেন, ডিজিটাল যুগে বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। বলা যায়, প্রায় সবকিছুর মধ্যে ইন্টারনেট বা অনলাইন সিস্টেম গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে নিয়েছে। সে কারণে বিদ্যমান যুবগোষ্ঠী ছাড়াও প্রতিবছর নতুন করে যুবতালিকায় যুক্ত হওয়া লাখ লাখ যুবক ও যুবনারীকে অনলাইন প্রশিক্ষণের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছি। পাশাপাশি বিদ্যমান প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করা হবে। তিনি বলেন, অনলাইনে প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা দেশে ও বিদেশে দক্ষ জনশক্তি হিসাবে বিভিন্ন কাজেও যুক্ত হতে পারবে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীন দেশে ৭১টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। যেখানে ৮৪টি ট্রেডে বেকার যুবক ও যুবনারীদের আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এখন এসব কেন্দ্র থেকে অনলাইন প্ল্যাটফরমেও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সেজন্য সফটওয়্যার ও হোস্টিং ম্যানেজমেন্টের যাবতীয় প্রস্তুতির কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির দিন ২৬ মার্চ থেকে এ কর্মসূচির শুভযাত্রা হওয়ার কথা থাকলেও তা শেষমেশ হচ্ছে না। প্রস্তুতি শেষ না-হওয়ায় সেটি শুরু করা যাচ্ছে না। আগ্রহী প্রক্ষিণার্থীরা নামমাত্র রেজিস্ট্রেশন ফি জমা দিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। তবে রেজিস্ট্রেশন করার পর অনলাইনে প্রশিক্ষণ নিতে তাকে বেশি টাকা খরচ করতে হবে না।

নামমাত্র মূল্য দিয়ে শুধু এই প্রশিক্ষণের জন্য বিশেষ ডেটা প্যাকেজ কিনে প্রশিক্ষণ নেওয়া যাবে। এ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ সময়কালের জন্য গ্রামীণফোন ও টেলিটক প্রশিক্ষণার্থীদের এ সুবিধা দেবে। এজন্য ইতোমধ্যে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা স্মারক চুক্তিও সম্পাদিত হয়েছে। তিন বছর মেয়াদি প্রথম ধাপের চুক্তি বাস্তবায়নে হোস্টিং চার্জ ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ দাঁড়াবে প্রায় ১০ কোটি টাকা। যার বড় একটি অংশের জোগান দেবে ফোন কোম্পানি। এ ছাড়া প্রথম বছরে এ খাতে সরকারের অংশে খরচ হবে দুই কোটি ৮০ লাখ টাকা। এই অর্থ সংস্থানের জন্য শিগগির অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হবে।

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. আজহারুল ইসলাম খান বুধবার এ প্রসঙ্গে যুগান্তরকে বলেন, অনলাইন প্ল্যাটফরমে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে একটি সফল কর্মসূচি হবে। বিশেষ করে আমরা বর্তমানে যেখানে প্র্যাকটিকেলি বা সরাসরি প্রশিক্ষণ দিতে পারছি তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ, সেখানে এটি তখন ৩০ লাখে গিয়ে পৌঁছাবে। ফলে কর্মসংস্থান সেক্টরে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এটি একটি বড় ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়া অনেকে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করে যেমন নিজের বেকারত্ব ঘোচাবে, তেমনি আরও অনেকের কাজের ব্যবস্থা করতে পারবে।

প্রসঙ্গত, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো থেকে প্রতিবছর গড়ে সাড়ে তিন লাখ যুব ও যুবনারী প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকে। ১৮-৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত যুবগোষ্ঠী ধরা হয়। এ হিসাবে প্রতিবছর নতুন করে যুবসমাজে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে ২০-২২ লাখ। বর্তমানে দেশে পাঁচ কোটি ৩০ লাখ যুব ও যুবনারী রয়েছেন।

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে যেসব খাতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো : কম্পিউটার বেসিক অ্যান্ড আইসিটি অ্যাপ্লিকেশন, প্রফেশনাল গ্রাফিক্স ডিজাইন, মডার্ন অফিস ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড হাউজওয়্যারিং, ইলেকট্রনিক্স, রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশন, পোশাক তৈরি, ব্লক, বাটিক ও স্ক্রিন প্রিন্টিং, মৎস্য চাষ, মোবাইল ফোন সার্ভিসিং অ্যান্ড রিপেয়ারিং, গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি পালন এবং এর প্রাথমিক চিকিৎসা, মৎস্য চাষ ও কৃষিবিষয়ক প্রশিক্ষণ, দুগ্ধজাত দ্রব্যাদি উৎপাদন, বিপণন ও বাজারজাতকরণ, মুরগি পালন ব্যবস্থাপনা ও মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণন, ছাগল, ভেড়া, মহিষ পালন এবং গবাদি পশুর প্রাথমিক চিকিৎসা, চিংড়ি ও কাঁকড়া চাষ ও বিপণন, মৎস্য সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ, অর্নামেন্টাল প্ল্যান্ট উৎপাদন, কৃষি ও হর্টিকালচারবিষয়ক, ফুল চাষ, নার্সারি ও ফল চাষ, মাশরুম ও মৌচাষ, কৃষি যন্ত্রপাতি মেরামত, ফ্যাশন ডিজাইন, ওভেন সুয়িং মেশিন অপারেটিং, ব্লক প্রিন্টিং, টুরিস্ট গাইড, ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন এবং বিউটিফিকেশন অ্যান্ড হেয়ারিং প্রভৃতি।

ফের করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির শঙ্কা

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু দুই মাস ধরে কমলেও ফের তা বাড়ছে। এরই মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও আইসিইউতে রোগী বেড়েছে। ভিড় বাড়ছে অন্যান্য হাসপাতালেও। টিকা নেওয়ার পরও স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সংক্রমণের হার আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সামনে ঈদ আসছে। ওই সময় দেশে করোনাভাইরাসের কাছাকাছি গোত্রের ভাইরাস ইনফ্লুয়েঞ্জার মৌসুম শুরু হবে। তাছাড়া দেশে গরম পড়তে শুরু করেছে। এই সময়ে যদি সচেতনতা বাড়ানো না যায়, তবে ফের সারা দেশে করোনা ছড়িয়ে পড়তে পারে। কাজেই সারা দেশের মানুষকে মাস্ক পরতে হবে, ঘনঘন হাত ধুতে হবে এবং সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করে চলতে হবে। নইলে সামনে বড় বিপদ বলে তারা সাবধান করেছেন। এ পরিস্থিতিতে ঈদের ছুটি নিয়ন্ত্রণ করা যায় কি না, সেই বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

করোনা সংক্রমণের এক বছরের মাথায় বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এ ধরনের মন্তব্য করেন। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক যুগান্তরকে বলেন, আমরা করোনা সংক্রমণের এক বছর পার করছি। প্রথম থেকেই করোনা নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ নেওয়ায় সংক্রমণ ও মৃত্যুহার কমে এসেছে। টিকা নেওয়ার পর মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রতি শৈথিল্য দেখা দিয়েছে। তারা বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে বেড়াতে যাচ্ছেন, সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদান করছেন; কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। এতে আবার সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বাড়তে শুরু করেছে। জাহিদ মালেক বলেন, টিকাদান মানে এই নয় যে দেশ করোনামুক্ত হয়ে গেছে। করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে দেশের মানুষকে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। বিশেষ করে মাস্ক বাধ্যতামূলকভাবে ব্যবহার করতে হবে।

তিনি বলেন প্রথম থেকেই হাসপাতালের শয্যা বাড়ানো, ডাক্তার-নার্সদের প্রশিক্ষাণ, আইসিইউ শয্যা বাড়ানো, ৯০টি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম স্থাপন, রোগীদের সুরক্ষায় পালস অক্সিমিটার নিশ্চিত করা, হাইফ্লো নেজাল ক্যানোলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোভিড নিয়ন্ত্রণে সব প্রয়োজনীয়তা মেটাতে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন। তিনি বলেন, সংক্রমণ কমাতে আমরা ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ কার্যকর করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রী নিজেই আমাদের এই উদ্যোগে স্বাগত জানিয়েছেন। এভাবে বাংলাদেশ এই বৈশ্বিক মহামারি প্রায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এলো। আমরা সংক্রমণের হার ৩-এর নিচে এবং মৃত্যুহার কমিয়ে আনতে সক্ষম হই। এরপর মহামারি নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী নিজে উদ্যোগী হয়ে দ্রুত টিকার ব্যবস্থা করলেন। তার প্রচেষ্টায় আমরা অনেক দেশের আগেই টিকাদান শুরু করেছি। যেখানে ভারতে ৬০ বছরের বেশি বয়সিদের টিকা দিচ্ছে, সেখানে আমরা ৪০ বছরে নামিয়ে এনেছি।

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের এক বছর আজ। ২০২০ সালের এই দিনে (৮ মার্চ) সরকারের পক্ষ থেকে দেশে প্রথম তিনজনের শরীরে করোনা সংক্রমণের বিষয়টি জানানো হয়। তারপর থেকে এ পর্যন্ত দেশে সাড়ে ৫ লাখ মানুষ সংক্রমণের শিকার হয়েছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার মানুষের। গত মাসে টিকাদান শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৩৭ লাখ মানুষ টিকা নিয়েছেন।

বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা ড. মোশতাক হোসেন যুগান্তরকে বলেন, অচিরেই সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ টিকার সুবিধা পেতে আরও অন্তত এক বছর লাগবে। তাছাড়া ঈদের ছুটির সময় আমাদের দেশে ইনফ্লুয়েঞ্জার মৌসুম শুরু হবে। পাশাপাশি ঈদকে কেন্দ্র করে সারা দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষের যাতায়াত বাড়বে। সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে নতুন করে করোনার সংক্রমণ ঠেকানো যাবে না। তিনি বলেন, গত ঈদের পরই সংক্রমণের হার পিকে উঠেছিল। সেসময় লকডাউন শিথিল হয়ে গিয়েছিল। এতে মহাবিপর্যয় ঘটতে পারত। সেটি আমাদের ভুলে গেলে চলবে না।

তিনি বলেন, দেশে গত বছরের ৮ মার্চ করোনার প্রথম সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পর আমরা দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিলাম। তারপরেই সারা দেশে লকডাউন কার্যকর করা হয়। ফলে মহামারি ধীরগতি পেয়েছিল। এতে আমরা আন্তর্জাতিক বিশ্ব থেকে করোনা নিয়ন্ত্রণে এবং আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সম্পর্কে জেনেছি। ফলে মহামারি নিয়ন্ত্রণ বা সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়েছিল। তাই এখন আসন্ন গরম, ইনফ্লুয়েঞ্জা মৌসুম ইতাদি বিষয় মাথায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট-আইইডিসিআর-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এসএম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, টিকা নিই আর না নিই, স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে। সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে, এটা উদ্বেগজনক। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বিকল্প নেই।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম যুগান্তরকে বলেন, দেশে করোনা মহামারির এক বছর হওয়ার আগেই সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। কিন্তু অসচেতনতার কারণে আবারও বাড়তে শুরু করেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে রোগী বাড়ছে। বিভিন্ন হাসপাতালে রোগী বাড়ছে। এমনকি যারা বিভিন্ন স্থানে বেড়াতে গিয়েছে, তাদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। অর্থাৎ একদল মানুষ আনন্দভ্রমণে বেরিয়ে বিপদ ডেকে আনছে। তিনি বলেন, এসব বিষয় মাথায় রেখে ঈদের ছুটি নিয়ন্ত্রণ করা যায় কি না, সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে এবং নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করতে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

অঙ্কুশ-ঐন্দ্রিলার সহকারীর রহস্যজনক মৃত্যু

টালিউডের জনপ্রিয় নায়ক অঙ্কুশ হাজরার ব্যাক্তিগত সহকারী পিন্টু দের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে নিজ বাড়ি থেকে। পিন্টু অঙ্কুশের প্রেমিকা অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা সেনেরও সহকারী হিসেবেও কাজ করেছেন দীর্ঘদিন।  টালিউড অভিনেতা-অভিনেত্রীর সহকারীর মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছেন।  এ ঘটনায় ভেঙে পড়েছেন অঙ্কুশ-ঐন্দ্রিলা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে জানিয়েছেন সে কথা।  খবর জিনিউজের।

মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার কাঁকুড়গাছির বাড়ি থেকে পিন্টুর লাশ উদ্ধার করা হয়। বুধবার সকালে এই খবর ছড়িয়ে পড়ে।
পুলিশের ধারণা, পিন্টু আত্মহত্যা করেছেন।  তবে পরিবারের অভিযোগ, প্রায়ই ফোনে টাকা চেয়ে হুমকি দেওয়া হতো পিন্টুকে। এ ঘটনার সঙ্গে হুমকিদাতাদের কোনো যোগাযোগ রয়েছে কিনা, খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার মরদেহ উদ্ধার হওয়ার পরে নীলরতন সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত হয়। বুধবার সকালে পিন্টুর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।

কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, ভার্চুয়াল মাধ্যমে ব্ল্যাকমেলের শিকার হয়ে মানসিক চাপে ভুগছিলেন পিন্টু। প্রাথমিকভাবে পুলিশ এ তথ্য জানতে পেরেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

পুলিশ জানায়, পিন্টুর মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে।  তা থেকে এই মৃত্যুরহস্য খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।

টালিউডে পিন্টুর পরিচিতি ছিল অঙ্কুশ-ঐন্দ্রিলার ছায়াসঙ্গী ‘বাপ্পা দা’ হিসেবে।  তার মৃত্যুর খবর শুনে বুধবার পিন্টুর বাড়িতে যান তারা।

পরিবারের অভিযোগ, নিয়মিত টাকা চেয়ে হুমকি দেওয়া হত পিন্টুকে। পুলিশ জানিয়েছে, গত দেড় মাসে ভাগে ভাগে মোট ৩০ হাজার টাকা তার অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে অজ্ঞাত কাউকে পাঠানো হয়েছে। পরিবারের অভিযোগ, এর জেরেই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন পিন্টু।

অঙ্কুশ আনন্দবাজারকে জানান, ঘুণাক্ষরেও তিনি সে সব কিছু টের পাননি।  পিন্টুর ফোনে কেন হুমকি দেওয়া হতে সে বিষয়ে এখনও কিছুই জানা যায়নি বলে দাবি করেন অঙ্কুশ।

অঙ্কুশ আরও জানান, তার কাছ থেকেও কয়েক বার টাকা নিয়েছিলেন পিন্টু। অভিনেতার দাবি, ধার শোধ করতে হবে বলেই সে টাকা চেয়েছিলেন তার ব্যক্তিগত সহায়ক।

পিন্টুর মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান অঙ্কুশ বলেন, ‘খুবই সৎ মানুষ ছিলেন বাপ্পাদা। তাই যখনই টাকা চেয়েছেন, দিয়ে দিয়েছি। জানতাম, খারাপ কাজ করতেই পারেন না। টাকা চাওয়ার আসল কারণ বুঝতে পারলে এ ভাবে অসময়ে চলে যেতে দিতাম না।’

অঙ্কুশের প্রেমিকা ঐন্দ্রিলা মনে করছেন পিন্টু আত্মহত্যা করেছেন। তার ভাষ্য, ‘কী করে এমন কাজ করল বাপ্পাদা? নিজের মা আর বোনকে ফেলে চলে যেতে পারল!’