ব্যস্ত রাস্তায় হেফাজত নেতাকে ছুরি মেরে পালাল দুর্বৃত্ত (ভিডিও)

রাজধানীর লালবাগে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা জসিম উদ্দিন আহত হয়েছেন। মাওলানা জসিম উদ্দিন রাজধানীর লালবাগের জামিয়া কুরাআনিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার সিনিয়ার মুহাদ্দিস। 

মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রিকশাযোগে মাদ্রাসা থেকে বাসায় যাওয়ার পথে এক দুর্বৃত্ত তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।

ঘটনাস্থলের পাশের একটি ভবনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, চলন্ত রিকশার পেছন থেকে একজন মাওলানা জসিম উদ্দিনকে পিঠে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে হেফাজত নেতারা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।

আহত হেফাজত নেতার অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগের আবাসিক সার্জন ডাঃ মো. আলাউদ্দিন।

এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান হেফাজত নেতারা।

যাদের কারণে প্রকল্প ব্যয় বাড়ে তাদের শাস্তি দিন

প্রকল্প তৈরিতে যাদের কারণে পরবর্তী সময়ে নতুন আইটেম যোগ করতে হয় এবং এর ফলে প্রকল্প ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, প্রকল্প তৈরিতে যাদের কারণে ভুল হয়, তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। গতকাল বুধবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এসব নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। একনেক বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প পরিচালকদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, এক ব্যক্তি একাধিক প্রকল্পের পরিচালক হয়ে ঢাকায় বসে থাকেন, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। এটা সহ্য করবেন না। আপনারা সরকারের বিধি-বিধান অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নিন। কারো স্বার্থে, বাড়ির পাশে সেতু নয়, সাইড সিলেকশনে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ব্রিজ, সেতু নির্মাণের সময় নদীর যাতে গতি রোধ না হয়, সেদিকে অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে।’

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দেখা যায়, সংশোধনের সময় দু-একটি আইটেম নতুন আসে, যার জন্য ব্যয় বেড়ে যায়। প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন হলো—যখন প্রকল্প তৈরি করেছিলেন, এসব বিষয় কি দেখে দেননি?

আপনারা প্রকল্পের সাইটে যাননি? নাহলে নতুন সেতু কোথা থেকে পাচ্ছেন? এটা কেন আগে এলো না? এটা শুধু প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন নয়, আমারও প্রশ্ন্ন; আপনাদেরও প্রশ্ন্ন।’

তিনি আরো বলেন, ‘পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ প্রকল্পের সংশোধন করতে গিয়ে দাম বেড়েছে, অনেকগুলো আইটেম নতুন চলে এসেছে; যা মূল প্রকল্পের ডিজাইনে ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন হলো, কারা ডিজাইন করেছেন। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) অর্ডার দিয়েছেন—সংশ্লিষ্ট সকলকে চিহ্নিত করুন; কাদের গাফিলতির জন্য আমাদের প্রকল্পের ডিজাইনটা ইনকারেক্ট (ভুল) হলো, আমাদের সময় ও অর্থ অপচয় হলো। তাদের বিরুদ্ধে আপনারা আইনানুগ, বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নিন। আগামীতে যাতে এমন না হয়, সে বিষয়ে সকলের প্রতি তিনি (প্রধানমন্ত্রী) নির্দেশনা দিয়েছেন যে আপনারা যার যার অবস্থান থেকে সাবধান হয়ে যান।’

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, একনেকে ‘পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের প্রথম সংশোধন অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে প্রকল্পটির খরচ দুই হাজার ৫৩০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রকল্পের মূল খরচ ছিল তিন হাজার ৯২৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা এবং সংশোধনীতে তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ছয় হাজার ৪৫৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা।

১১ হাজার কোটি টাকার ৮ প্রকল্প পাস

একনেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরসহ আরো সাত প্রকল্প পাস হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৩২৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে পাঁচ হাজার ১৪০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, বৈদেশিক সহায়তা থেকে ছয় হাজার ১৬৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ১৮ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। একনেকে পাস হওয়া বাকি সাতটি প্রকল্প হলো পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ, ঢাকা এনভায়রনমেন্টাল সাসটেইনেবল ওয়াটার সাপ্লাই প্রজেক্ট, টাঙ্গাইল জেলার দশটি পৌরসভার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, যানবাহন চালনা প্রশিক্ষণ প্রকল্প, তৃণমূল পর্যায়ে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশসাধন, ডিজিটাল উদ্যোক্তা এবং উদ্ভাবন ইকো-সিস্টেম উন্নয়ন প্রকল্প, হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়া দ্বীপ শতভাগ নির্ভরযোগ্য ও টেকসই বিদ্যুতায়ন প্রকল্প।

সোনারগাঁয়ে ১০০ পরিবার পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর উপহার

বয়সের ভাড়ে নুয়ে হওয়া আমেনা বেগম জীবনের ঘানি টানছেন অন্যের বাড়িতে আশ্রিত হয়ে। জায়গা জমি নেই, নেই নিজের মাথা গোঁজার ঠাই। জমিসহ পাকা ঘর পেয়ে আনন্দে অঝোরে কেঁদে ফেলেন। এমন অনেক আনন্দাশ্রু দেখা গেল অনেকের চোখে। বুধবার সকালে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতিকুল ইসলামের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পরিদর্শন করেন।

আমেনা বেগম ইউএনও আতিকুল ইসলামকে কাছে পেয়ে সন্তানের মমতায় জড়িয়ে ধরে বলেন, ‘আমরা তো বাবা গরিব অসহায়। ভাত আনতে পান্তা ফুরায়। আমাগো জমিন অইবো ঘর অইবো এইডা স্বপ্নেও চিন্তা করি নাই। মুজিববর্ষ উপলক্ষে জমিসহ ঘর পেতে যাওয়া সোনারগাঁ উপজেলার বৈদ্যের বাজার ইউনিয়নের খামারগাঁও গ্রামের আমেনা বেগম এমনভাবেই কথাগুলো বলছিলেন।

মুজিববর্ষ উপলক্ষে আমেনা বেগমের মত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই উপহার পাচ্ছেন সোনারগাঁ উপজেলার মোট ১০০ পরিবার। মাথা গোঁজার স্থায়ী আবাসন পেয়ে আনন্দে অশ্রুসজল ভূমিহীন হতদরিদ্র পরিবারগুলো।

জহির মিয়া বলেন, কোনোদিন ভাবিনি পাকা ঘরে বসবাস করব। প্রধানমন্ত্রীর ঘর পেয়ে আমি ও আমার সন্তানেরা খুব খুশি। দুই রুমের এই ঘরে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঝড়বৃষ্টিতেও শান্তিতে ঘুমাতে পারব।

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগে সোনারগাঁয়ে এসব ঘর নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সরকারি খাস জমির ওপর ভূমিহীনদের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আধুনিক আবাস। এসব অসহায় পরিবারদেরকে শুধু ঘর নয়, ঘরের সঙ্গে রয়েছে রান্নাঘর, টয়লেট ও সামনে খোলা বারান্দা।

ঘর নির্মাণে মান নিশ্চিত করার কথা বিবেচনা করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ না করে উপজেলা প্রশাসন নিজেদের তদারকির মাধ্যমে তা নির্মাণ করে দিচ্ছে। ফলে কম খরচে ভাল মানের ঘর নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে। প্রতিটি ঘরের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।

সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আতিকুল ইসলাম জানান, আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার- এই স্লোগানকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্প ২-এর আওতায় সোনারগাঁ উপজেলায় ১০০টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের তদারকিতে ঘরগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগে উপজেলার সংশ্লিষ্টরা যার যার অবস্থান থেকে ভূমিকা রেখেছেন। মহান এই কর্মযজ্ঞে সম্পৃক্ত হতে পেরে ধন্য মনে করছি। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরেই এই ঘরগুলো হস্তান্তর করা হবে উপকারভোগীদের মাঝে।

করোনায় আক্রান্তদের ক্ষতিপূরণ পাওয়া ‘অনিশ্চিত’

করোনায় আক্রান্ত হলে চিকিৎসক-নার্স-পুলিশ-সরকারি কর্মচারীরা বেতন স্কেলের গ্রেডভেদে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা এবং মারা গেলে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত পাবেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এমনই একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছিল। কিন্তু এখন স্বাস্থ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হলেই শুধু ক্ষতিপূরণ পাবেন সম্মুখযোদ্ধারা। অন্যথায় নয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে পুলিশ অধিদপ্তরের মাধ্যমে করোনায় আক্রান্ত ১০ হাজার পুলিশ সদস্য ইতিমধ্যে ক্ষতিপূরণ পেতে আবেদন করেছেন। এসব আবেদন অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে কি না, তা মন্ত্রণালয়টির কাছে জানতে চেয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘ওই সিদ্ধান্ত আর বলবৎ নেই।’ একই কথা বলেছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কিছু কর্মর্কতাও।

কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত রোগীদের সেবায় সরাসরি নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীসহ মাঠ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী ও অন্য সরকারি কর্মচারীদের ক্ষতিপূরণ দিতে গত ২৩ এপ্রিল একটি পরিপত্র জারি করেছিল অর্থ বিভাগ। পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়, করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার সঙ্গে সম্পৃক্ত সরকারি চাকরিজীবী যাঁরা নিজেরা আক্রান্ত হবেন বা মারা যাবেন, তাঁদের জন্য গ্রেড অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এর পরিমাণ ৫ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা। অর্থাৎ ১৫ থেকে ২০তম গ্রেডের কেউ আক্রান্ত হলে ৫ লাখ ও মারা গেলে ২৫ লাখ, ১০ম থেকে ১৪তম গ্রেডের কেউ আক্রান্ত হলে ৭ লাখ ৫০ হাজার এবং মারা গেলে ৩৭ লাখ ৫০ হাজার; ১ম থেকে ৯ম গ্রেডের কেউ আক্রান্ত হলে ১০ লাখ এবং মারা গেলে ৫০ লাখ টাকা পাবেন।

এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, করোনায় গুরুদায়িত্ব পালনকালে যেসব সরকারি চিকিৎসক মারা গেছেন তাঁদের অনেকের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো ক্ষতিপূরণের আবেদন করা হয়নি। ফলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দের টাকা সংশোধিত বাজেটে ফেরত চলে যাবে। এই ক্ষতিপূরণ শুধু সরকারি চিকিৎসকদের জন্য বলেও জানান তাঁরা।

গত বছরের ৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক ভিডিও কনফারেন্সে বলেছিলেন, ‘মার্চ থেকে যাঁরা কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ করছেন, সরকার তাঁদের উৎসাহ দিতে বিশেষ প্রণোদনা দেবে। এ ছাড়া দায়িত্ব পালনের সময় কেউ কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হলে তাঁদের জন্য ৫–১০ লাখ টাকার স্বাস্থ্যবিমা থাকবে। কেউ মারা গেলে স্বাস্থ্যবিমার পরিমাণ পাঁচ গুণ বেশি হবে।’

প্রসঙ্গত, করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরুর দিকে করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সরকারি খরচে হোটেলে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু হোটেলের ভাড়া ও খাবারের অস্বাভাবিক ব্যয় নিয়ে বেশ হইচই হলে পরবর্তী সময়ে সরকার তাঁদের হোটেলে থাকার ব্যবস্থা বাতিল করে।

বাংলাদেশিদের বিদেশে ফ্ল্যাট কেনার তথ্য চেয়ে দুদকের চিঠি

কানাডা, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কেনা বাংলাদেশিদের তালিকা চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। হাইকোর্টের নির্দেশনায় গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর এই চিঠি দেওয়া হয়েছে।

সংস্থাটির সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। দুদক মহাপরিচালক (মানি লন্ডারিং) আ ন ম আল ফিরোজের সই  করা চিঠিটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বরাবর পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

এর আগে বিভিন্ন দেশে অর্থপাচারের মাধ্যমে ‘সম্পদ বিনিয়োগ’ করে বিভিন্ন দেশে নাগরিকত্ব গ্রহণকারী বাংলাদেশিদের তালিকা চেয়ে গত ডিসেম্বরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিল দুদক। ‘সেকেন্ড হোম’ প্রকল্পের আওতায় বিদেশে বিনিয়োগ কিংবা পানামা পেপারস ও প্যারাডাইস পেপারসে নাম ওঠা বাংলাদেশিদের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয় ওই চিঠিতে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফিন্যানশিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে প্রায় এক হাজার ১৫১ কোটি ডলার, যা দেশীয় মুদ্রায় ৯৮ হাজার কোটি টাকা।

বিভিন্ন ব্যক্তির অর্থপাচারের তথ্য চেয়ে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়াসহ ৫০টি দেশে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠিয়েছে দুদক,  যার মধ্যে ২২ দেশ দুদকের পাঠানো চিঠির বিষয়ে সাড়া দিয়েছে।

সম্প্রতি সেকেন্ড হোম বা দ্বিতীয় আবাস গড়তে মালয়েশিয়ায় বিনিয়োগ করেছেন, এমন ২৩ বাংলাদেশিকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয় দুদক।  বিদেশে বিনিয়োগ করা অর্থের উৎস জানতে ওই ভিআইপিদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে সংস্থাটি। চিহ্নিত ২৩ ব্যক্তির মধ্যে রাজনীতিবিদসহ বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর নাম রয়েছে।

‘শীল শীল বাতাসে হাত-পাও কোঁকড়া হয় আসেছে, কম্বল পায়া খুব উপকার হইল’

‘পাহাড়ের গোরত হামার বাড়ি বাপু। এইঠে জারখান খুবে বেশি। রাইতের শীল শীল বাতাসখানোত হাত-পাওগুলা কোঁকড়া হয় আসেছে। এত্ত জারোত তোমার কম্বল পায়া খুব উপকার হইল।’ প্রথম আলো ট্রাস্টের কম্বল পেয়ে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন দেশের সর্ব উত্তরের উপজেলা তেঁতুলিয়ার ভজনপুর এলাকার ফজিরন নেছা (৬২)।

আজ বুধবার উত্তরের হিমেল বাতাস বয়ে যাওয়া শীতের সকালে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ভজনপুর ইউনিয়নের ভজনপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে জড়ো হন শতাধিক নারী-পুরুষ। শীতার্ত মানুষের জন্য প্রথম আলো ট্রাস্টের দেওয়া কম্বল নিয়ে সেখানে হাজির হন পঞ্চগড়ের প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা।

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার ওই এলাকার ১৩০ জন দুস্থ-শীতার্ত মানুষের বাড়িতে গিয়ে কম্বল বিতরণের স্লিপ তুলে দেন বন্ধুসভার সদস্যরা। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্লিপধারীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে সারিবদ্ধভাবে বসানো হয় স্কুলমাঠে। উপস্থিত সবাইকে পরিয়ে দেওয়া হয় মাস্ক। এরপর প্রত্যেকের হাতে তুলে দেওয়া হয় একটি করে কম্বল।

শীতার্ত মানুষের মাঝে প্রথম আলো ট্রাস্টের দেওয়া কম্বল বিতরণ করছেন পঞ্চগড়ের প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা। আজ বুধবার সকালে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ভজনপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে

শীতার্ত মানুষের মাঝে প্রথম আলো ট্রাস্টের দেওয়া কম্বল বিতরণ করছেন পঞ্চগড়ের প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা। আজ বুধবার সকালে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ভজনপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে 
প্রথম আলো

কম্বল বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহাগ চন্দ্র সাহা, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. জাকির হোসেন, প্রথম আলোর পঞ্চগড় প্রতিনিধি রাজিউর রহমান, পঞ্চগড় বন্ধুসভার সভাপতি রাশিদ আল শিহাব চৌধুরীসহ প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা।

বিজ্ঞাপন

মুই মানুষের কাছোত হাত পাতিয়া খাউ। জারের কাপড় কিনার টাকাপয়সা নাই। এই কম্বলডা পায়া কনকনা জারখানোত খুব উপকার হইল। তোমহার তানে দুয়া করিম বাপু।

সূর্যমনি, ভজনপুর এলাকার প্রতিবন্ধী নারী

পরে দুপুরে তেঁতুলিয়া উপজেলা সদরের দর্জিপাড়ায় তালিমুল কোরআন নুরানীয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসার এতিম শিশুসহ হেফজখানার মোট ৭০ জন আবাসিক শিশুশিক্ষার্থীর হাতে তুলে দেওয়া হয় একটি করে কম্বল। এ সময় তেঁতুলিয়া উপজেলার সহাকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাসুদুল হক, মাদ্রাসার সভাপতি আবুল কাশেম, সাধারণ সম্পাদক কুরবান আলীসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।

এভাবেই বুধবার দিনভর প্রথম আলো ট্রাস্টের দেওয়া ২০০টি কম্বল বিতরণ করেন বন্ধুসভার সদস্যরা। ভজনপুর এলাকার প্রতিবন্ধী নারী সূর্যমনি ওরফে বুথিয়া (৬০) বলেন, ‘মুই মানুষের কাছোত হাত পাতিয়া খাউ। জারের কাপড় কিনার টাকাপয়সা নাই। এই কম্বলডা পায়া কনকনা জারখানোত খুব উপকার হইল। তোমহার তানে দুয়া করিম বাপু।’

প্রথম আলো ট্রাস্টের দেওয়া কম্বল পেয়ে দারুণ খুশি দর্জিপাড়ায় তালিমুল কোরআন নুরানীয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসার এতিম শিশুসহ ৭০ জন আবাসিক শিশুশিক্ষার্থী। আজ বুধবার সকালে

প্রথম আলো ট্রাস্টের দেওয়া কম্বল পেয়ে দারুণ খুশি দর্জিপাড়ায় তালিমুল কোরআন নুরানীয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসার এতিম শিশুসহ ৭০ জন আবাসিক শিশুশিক্ষার্থী। আজ বুধবার সকালে
প্রথম আলো

দর্জিপাড়া তালিমুল কোরআন নুরানীয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসার সাধারণ সম্পাদক কুরবান আলী বলেন, ‘আমরা খুব কষ্ট করে এই হাফেজিয়া মাদ্রাসাটি চালাই। এখানে এতিম শিশুদের পাশাপাশি আবাসিক ছাত্র হিসেবে ৭০ জন ছাত্রছাত্রী হাফেজি পড়ে। দেশের সবচেয়ে বেশি শীত তেঁতুলিয়ায় হওয়ায় শিশুরা খুব কষ্ট করে রাত যাপন করে। প্রথম আলোর কম্বল আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া। এভাবে এই শীতার্ত শিশুদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রথম আলোকে ধন্যবাদ।’

৯২টি লোকাল ট্রেন এখনো বন্ধ

করোনা সংক্রমণ কিছুটা নিম্নগামী। সড়ক পরিবহনের ক্ষেত্রে এখন আর তেমন বিধিনিষেধ নেই। নৌপথেও স্বাভাবিকভাবেই যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। কিন্তু সরকারের সংস্থা রেলে এখনো স্বাভাবিক চলাচল শুরু হয়নি। সারা দেশে এখনো ৯২টি মেইল, লোকাল ও কমিউটার ট্রেন চালু হয়নি। রেলে এসব ট্রেন ‘গরিবের’ বাহন হিসেবে পরিচিত। এই ট্রেনগুলো শিগগিরই চালু হওয়ার কোনো সম্ভাবনাও নেই।

করোনা সংক্রমণের কারণে প্রায় দুই মাস যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকা, পরে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে ট্রেন পরিচালনা এবং লোকালসহ কিছু ট্রেন চালু না করার প্রভাব পড়েছে আয়ে। গত পাঁচ মাসে ক্রমাগত লোকসান গুনতে থাকা সরকারের সংস্থা রেলের আয় কমেছে ৫২ শতাংশ। যাত্রী কমে গেছে ৬২ শতাংশ।

করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির আগে ময়মনসিংহ-ভৈরব পথে চারটি লোকাল ট্রেন চলাচল করত। মার্চে বন্ধ হওয়ার পর সেগুলো আর চালু হয়নি। স্বাধীনতার পরপরই ঈশা খাঁ এক্সপ্রেস নামে দুটি মেইল ট্রেন ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের পথে চলাচল করত। করোনা সংক্রমণের আগে হঠাৎ করে সেগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে এই পথে এখন আর কোনো লোকাল বা মেইল ট্রেন চলছে না। অথচ ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জ জেলার ২২টি স্টেশনের মাধ্যমে এসব লোকাল ও মেইল ট্রেনে যাতায়াত করত লাখো মানুষ। কমবেশি একই অবস্থা ময়মনসিংহ-জামালপুর, ভৈরব-আখাউড়া, চট্টগ্রাম-চাঁদপুরসহ আরও কিছু পথে।

সব মিলিয়ে ভেবেচিন্তে এবং পর্যায়ক্রমে লোকাল ও মেইল ট্রেনগুলো চালু করা হবে।

নূরুল ইসলাম, রেলমন্ত্রী

রেলওয়ে বলছে, লোকাল ও মেইল ট্রেনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালানো কঠিন। গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহনের কারণে করোনার সংক্রমণ বাড়তে পারে। ফলে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্ত ছাড়া লোকাল ও মেইল ট্রেন চালু করা যাবে না।

রেলওয়ে সূত্র বলছে, বন্ধ থাকা লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেন চালুর বিষয়ে রেলের খুব একটা আগ্রহ নেই। এমনও আলোচনা আছে, বন্ধ পথের অনেকগুলোতে আবার ট্রেন চালু না–ও করা হতে পারে। ইঞ্জিন-কোচসংকট এবং আয় কম—এই যুক্তিতে দীর্ঘদিন ধরেই কিছু লোকাল ও মেইল ট্রেন বন্ধের চেষ্টা করে আসছিল কর্তৃপক্ষ। করোনার কারণে বন্ধ হওয়ার সুযোগটা নিতে চাইছে রেল।

রেলে সব মিলিয়ে ৩৫৯টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে আন্তনগর ট্রেনের সংখ্যা ১০৪টি। ঢাকা-কলকাতা পথে চলে চারটি ট্রেন। বাকি সব কটি মেইল, লোকাল ও কমিউটার ট্রেন হিসেবে চলাচল করে। করোনার সংক্রমণ শুরু হলে মার্চের শেষের দিকে সব যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অর্ধেক আসনের টিকিট বিক্রিসহ নানা বিধিনিষেধ নিয়ে ৩১ মে থেকে আট জোড়া ট্রেন চালু করা হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে ট্রেনের সংখ্যা বেড়েছে। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে সব আন্তনগরসহ বেশির ভাগ ট্রেন চালু হয়। বিধিনিষেধও উঠে যায়।

রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, এই মুহূর্তে লোকাল ট্রেনগুলো চালু করার বিষয়ে তাঁরা কিছুটা নিরুৎসাহিত করছেন। প্রথমত, লোকবলের ঘাটতি আছে। আছে ইঞ্জিন–কোচের সংকট। কিছু ট্রেন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চলত। সেগুলো রেল নিজে চালাবে। এর বাইরে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি তো আছেই। সব মিলিয়ে ভেবেচিন্তে এবং পর্যায়ক্রমে লোকাল ও মেইল ট্রেনগুলো চালু করা হবে। তিনি বলেন, করোনার প্রভাব সব খাতেই পড়েছে। রেলের আয় কমবে—এটা তাঁদের ধারণার মধ্যেই ছিল।

আয়ে টান পড়েছে

রেলের আয়সংক্রান্ত নথি বলছে, গত জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে রেল যাত্রী পরিবহন করেছে প্রায় ১ কোটি ৩৮ লাখ। গত বছর একই সময়ে যাত্রী পরিবহন করে ৩ কোটি ৬৬ লাখের বেশি। অর্থাৎ চলতি বছরে এই সময়ে যাত্রী পরিবহন ৬২ শতাংশ কমে গেছে।

রেলওয়ে সূত্র বলছে, বন্ধ থাকা লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেন চালুর বিষয়ে রেলের খুব একটা আগ্রহ নেই। এমনও আলোচনা আছে, বন্ধ পথের অনেকগুলোতে আবার ট্রেন চালু না–ও করা হতে পারে। ইঞ্জিন-কোচসংকট এবং আয় কম—এই যুক্তিতে দীর্ঘদিন ধরেই কিছু লোকাল ও মেইল ট্রেন বন্ধের চেষ্টা করে আসছিল কর্তৃপক্ষ। করোনার কারণে বন্ধ হওয়ার সুযোগটা নিতে চাইছে রেল।

যাত্রী পরিবহন কমে যাওয়ার কারণে স্বভাবতই টান পড়েছে আয়ে। জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে রেল যাত্রী পরিবহন করে আয় করেছে ২০৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। অথচ গত বছর একই সময়ে যাত্রী পরিবহন করে রেল আয় করেছিল ৪৩২ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত বছর একই সময়ের তুলনায় অর্ধেকের কম আয় হয়েছে।

রেলওয়ে সূত্র বলছে, লোকাল ও মেইল ট্রেনে যত ইচ্ছা যাত্রী চলতে পারে। এসব ট্রেন থামে প্রায় সব স্টেশনেই। ফলে এই ট্রেনগুলোতে বেশি যাত্রী পরিবহন করে। তবে ভাড়া তুলনামূলক কম বলে আয় কম হয়। এ ছাড়া স্বল্প দূরত্বে ও নিম্ন আয়ের মানুষ বেশি চলাচল করে বলে টিকিট কাটার হারও কম। সব মিলিয়ে আয় কম, যাত্রী বেশি। অন্যদিকে আন্তনগর ট্রেনে টিকিটের দাম বেশি। নির্ধারিত পরিমাণের বাইরে টিকিট বিক্রি হয় না।

রেলের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সব আন্তনগর ট্রেন চালু হলেও আসন পূর্ণ করে চলতে পারছে না। যাত্রী বাড়লে লোকাল ট্রেন বন্ধ থাকলেও আয়ে খুব একটা প্রভাব পড়ত না। তবে লোকাল ও মেইল ট্রেন বন্ধের পাশাপাশি আন্তনগর ট্রেনে যাত্রী কম হওয়ায় আয়ে প্রভাব পড়ছে। অর্থাৎ রেল পুরোপুরি সেবাও দিতে পারছে না, আবার আয়ও কমছে।

রেলের আয়সংক্রান্ত নথি বলছে, গত জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে রেল যাত্রী পরিবহন করেছে প্রায় ১ কোটি ৩৮ লাখ। গত বছর একই সময়ে যাত্রী পরিবহন করে ৩ কোটি ৬৬ লাখের বেশি। অর্থাৎ চলতি বছরে এই সময়ে যাত্রী পরিবহন ৬২ শতাংশ কমে গেছে।

বাংলাদেশ-ভারত রেল চলাচল অনিশ্চিত

ঢাকা-কলকাতার মধ্যে সপ্তাহে মৈত্রী এক্সপ্রেসের আটটি ট্রেন আসা-যাওয়া করে। এর মধ্যে বাংলাদেশের চারটি, ভারতের চারটি ট্রেন। মাসে গড়ে ১ লাখ ৮০ হাজার যাত্রী চলাচল করে। অন্যদিকে খুলনা-কলকাতা পথে বন্ধন এক্সপ্রেস নামে সপ্তাহে দুটি ট্রেন চলাচল করে। করোনার কারণে এই দুই পথেই ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

বাংলাদেশ-ভারত ট্রেন চলাচল দেখভালে নিয়োজিত রেলের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, দুই দেশে ট্যুরিস্ট ভিসা চালু না হলে মৈত্রী বা বন্ধন এক্সপ্রেস চালু করা সম্ভব নয়। মার্চের আগে ভারতের সঙ্গে ট্রেন চালু হওয়ার সম্ভাবনা কম।

বৈদ্যুত খাতে দূর্নীতি: মদদ দেয় মন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু

মশিউল হুসাইন খান/ যুক্তরাজ্য

হাসিনাসহ আওয়ামীলীগের নেতারা সব সময় বলে বিদুৎখাতে তারা সফল। দেশে দিনে ঘন্টায় ঘন্টায় বিদুৎ যায় তারপরও তারা এই কথা বলে। আবার আমাদের দেশে কোনো কিছুর দাম কমে না, কেবল বাড়ে , বাড়তেই থাকে। সর্বশেষ বাড়ল বিদ্যুতের দাম। কিন্তু এমন করে হুট হাট করে বিদুৎতের দাম বাড়ার কারন কি। আর এর পেছনে কার দায় রয়েছে। বিদ্যুৎ খাতে অপব্যয় না কমিয়ে সরকার জনগণের পকেটে হাত দিয়েছে। ৯ হাজার কোটি টাকার উপরে অযৌক্তিক ব্যয় যদি সমন্বয় করা হত, তাহলে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির দরকার হত না। সরকার রেন্টাল, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নামে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মালিকদের মুনাফা অর্জন ও লুণ্ঠনের এক অভয়ারণ্য তৈরি করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে এই লুটপাটের দায় জনগণ কেন নেবে?

দেশের বিদ্যুৎখাত নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ আর তদন্তে বিভিন্ন সময় দুদক উদ্যোগ নিলেও তা পরবর্তীতে আর আশার আলো দেখেনি। দেখবে কি করে এই দূর্নীতির সাথে তো সরকারের পৃষ্ঠপোষকে যারা আছেন তারা জড়িত।  সত্যি বলতে ,বর্তমান সরকার যে খাতে নিজেদের সবচেয়ে’ সফল বলে দাবি করে তা হচ্ছে বিদ্যুৎখাত। কিন্তু এই খাতেই দূর্ণীতি সব থেকে বেশি। এই খাতের ভেতরের দুর্নীতি নিয়ে যে অন্ধকার রাজত্ব তা থেকে যাচ্ছে লোকচক্ষুর আড়ালেই। বিদ্যুৎ খাতের প্রধান প্রতিষ্ঠান পিডিবি বরাবরই দুর্নীতিতে অনেক এগিয়ে। সংস্থাটির খোদ শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারাই এখন লাগামহীন দুর্নীতি-অপকর্মে নিমজ্জিত। এ খাতের দুর্নীতিবাজরা আশ্রয়-প্রশ্রয় পাচ্ছেন ঊর্ধ্বতন মহল থেকে অর্থাৎ বিদ্যু মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী তাদের লালন পালন করছে।

এই খাতের মন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ও পিডিবির বর্তমান চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুরেদ সাথে রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এছাড়া সরকারের আর একজন উধ্বতর নেতা সালমান এফরহমানের সাথেও রয়েছে ঘনিষ্ঠতা। দীর্ঘদিন ধরে সংস্থাটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে কাজ করেছেন তিনি। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয় খালেদকে। কিন্তু দীর্ঘ ৩৮ বছরের চাকরি জীবনে মাঠ পর্যায়ে কাজের অভিজ্ঞাতা তার নেই বললেই চলে। পিডিবিকেন্দ্রীক দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের প্রধান সদস্য হিসেবে তিনি কেন্দ্রীয় পর্যায়ের বিভিন্ন আকর্ষণীয় পদে কাজ করেছেন। আর সংস্থার চেয়ারম্যান হওয়ার পর তিনি নিজেই এখন সিন্ডিকেটের পুরো নেতৃত্ব দিচ্ছেন। পিডিবিতে যে গ্রুপটি সব সময়ই বিশেষভাবে শক্তিশালী তা হচ্ছে ঠিকাদার গ্রুপ। সরকারী নেতাদেও কাজ পাইয়ে দিতে তিনি গড়ে তুলেছেন সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটে শুধু পিডিবির চেয়ারম্যান বা এর কর্মকর্তারাই জড়িত নন, মন্ত্রণালয় বা অন্যান্য স্থানের প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও এই সিন্ডিকেটে আছেন। তবে তাদের এই সিন্ডিকেটের টাকার বড় অংশ যায় মন্ত্রীর কাছে। আর সে কারনে মন্ত্রী সব দেখেও চুপ থাকেন।

অন্যদিকে বিদ্যুৎ বিভাগের সংস্কারসহ নানা কাজে যে পরিমাণ দুর্নীতি আর লুটপাট হয় তা অকল্পনীয়। সবচেয়ে বড় রকমের চুরি হয়ে থাকে কেনাকাটার টেন্ডারে। যাকে ‘চুরি’ না বলে ‘লুট’ বলেই আখ্যায়িত করে থাকেন অভিজ্ঞমহল। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে রাঘব বোয়ালরা। প্রতিবছর এই ক্রয় খাতে শত শত কোটি টাকা লুট হচ্ছে নানা কায়দায়। যার ভাগ যায় গুটিকয়েক কর্মকর্তা ও সংস্থার বাইরের ব্যক্তিবিশেষের পকেট। খালেদ মাহমুদই ইতিপূর্বে প্রধান প্রকৌশলী থাকার সময় আড়াই হাজার কোটি টাকা লুটপাটের দায়ে অভিযুক্ত হয়েছিলেন। এজন্য ২০১৪ সালে দুদকের তদন্ত এবং জিজ্ঞাসাবাদেরও মুখোমুখি হয়েছিলেন। অবশ্য খালেদ মাহমুদ বরাবরই ‘ম্যানেজ মাস্টার’ হিসেবে পরিচিত। ম্যানেজিং সক্ষমতার মাধ্যমে দুদকের সেই তদন্ত কোনো রকমে ধামাচাপা দিয়েছেন।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অধীন বিভিন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের যন্ত্রপাতি ক্রয় ও মেরামত খাতে প্রতিবছর কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়ে থাকে। আর একে ঘিরেই গড়ে উঠেছে সিন্ডিকেট। পছন্দের কোম্পানিকে কাজ দিতে যে কোন ধরণের অনিয়ম আর কৌশলের আশ্রয় নিতে দ্বিধা করে না এই সিন্ডিকেট। এই বহিরাগতরাও বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কোম্পানির মালিক বা বড় বড় কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতারাও আছেন এই সিন্ডিকেটে। পিডিবির কোন কাজ এলেই দরদাতাদের নিজেদের মধ্যে অলিখিত গোপন সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত হয়, বেশি দর হাঁকিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাতের লক্ষ্যে। দেখা যায়, কখনো কখনো সবদিক থেকে যোগ্য হওয়ার পরও সর্বনিম্ন দরদাতার দর বিভিন্ন অযৌক্তিক অজুহাত দেখিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। নানান কৌশলে নিম্নদরদাতাকে বাদ দিয়ে উচ্চ ও অস্বাভাবিক মূল্যে মালামাল ক্রয় করা হয়ে থাকে। অতীতে এমন ঘটনা অনেক ঘটেছে, এখনো ঘটছে।

পিডিবির চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ সারাজীবনই পিডিবির প্রধান কার্যালয়ে ডিজাইন, প্রোগ্রাম এবং প্ল্যানিং বিভাগে কাজ করেছেন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পিডিবির এই শাখা সাধারণত দুর্নীতিবাজদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় শাখা হিসেবে পরিচিত। এর কারণ, এগুলো ক্রয় বা কেনা-কাটার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। বড় দুর্নীতিগুলো হয়ে থাকে এই শাখার মাধ্যমেই। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, চাকরি জীবনের শুরু থেকেই তিনি দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছিলেন।

এ শাখা যেভাবে ডিজাইন এবং পরিকল্পনা করে দেন টেন্ডারটির স্পেসিফিকেশন সেভাবেই তৈরি হয়। এতে কাজ পায় তাদের পছন্দের ওই নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানই। অর্থাৎ কে কাজ পাবে, এটা টেন্ডার আহ্বানের আগেই নির্ধারিত হয়ে যায়। এসব শাখায় নিজের পছন্দের লোকদের শুধু নিয়োগই দেননি, তারা সবাই চেয়ারম্যানের প্রতি অন্ধ অনুগত, কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির লোকজনও এই সিন্ডিকেটের সদস্য।

নিয়োগ, বদলি, পদায়ন, পদোন্নতি সবকিছুতেই অনিয়ম

আর একজন পিডিবির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হচ্ছেন সদস্য (প্রশাসন) জহুরুল হক। তিনি পিডিবিতে নিয়োগ বাণিজ্যের এক মহা সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। রয়েছে সেনাবাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে ঘনিষ্ঠতা।  ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় বা বুয়েটের মতো খ্যাতিমান প্রতিষ্ঠান দিয়ে নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা নেয়া হলেও ফলাফলে অভিনব জালিয়াতি করা হয়। যারা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন, ফলাফল প্রকাশের আগেই তাদের সাথে যোগাযোগ করে এই সিন্ডিকেট, তারপর পাস করিয়ে দেয়ার জন্য চুক্তি করে। পরীক্ষায় স্বাভাবিকভাবে পাস করলেও পরীক্ষার্থীরা জানতেও পারেন না যে তারা মেধার বলেই টিকেছেন, টাকা দেয়ার ফলেই তাদের উত্তীর্ণ করা হয়েছে এমন ধারণা সৃষ্টি করার পর ওই ব্যক্তিরা চাকরি পেতে এই সিন্ডিকেটের কাছে টাকা দিতে আর কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগেন না। জানা গেছে, জহিরুল হকের সকল অনিয়ম-দুর্নীতিতে সহযোগিতা করছেন তার আত্মীয় মিজানুর রহমানসহ কয়েকজন সিন্ডিকেট সদস্য।

জহিরুল হক পিডিবিতে চেয়ারম্যানের ডানহাত হিসেবে পরিচিত, বস্তুতঃপক্ষে খালেদ মাহমুদকে ব্যবহার করেই সব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন জহিরুল হক। আর খালেদ মাহমুদ যিনি কার্যতঃ অবসরেই গিয়েছিলেন তিনি আবার নতুন করে নিয়োগ পাওয়াকে ক্রিকেটের ভাষায় ’লাইফ’ পাওয়া বলে মনে করছেন। তিনি তার ঘনিষ্ঠজনদের বলেছেন- ‘লাইফ’ যখন পেয়েছি যতদূর পারি ‘রান’ তুলে নিই। এই ‘রান’ হচ্ছে ‘নগদ নারায়ণ’ এমনটাই বলছেন পিডিবি সংশ্লিষ্টরা।

 

ব্লগার এবং নাস্তিকদের বিচারের দাবিতে দেয়ালে দেয়ালে পোষ্টার এবং মিছিল।

এস রিফাত, স্টাফ রিপোর্টার

হেফাজতে ইসলামসহ আরো কয়েকটি ইসলামী সংগঠন বেশ কিছুদিন ধরেই সরকারকে ব্লগার এবং নাস্তিকদের আইনের আওতায় এনে তাদের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে চাপ দিয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় ইসলামী দলগুলোকে বাংলাদেশের বিভিন্নস্থানে মিছিল এবং সমাবেশ করে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়। তাছাড়া কোনও কোনও এলাকার অলিতে-গলিতে দেয়ালে দেয়ালে নাস্তিকদের পোষ্টার লাগিয়ে হত্যা করার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।

এর আগে (গত রবিবার) হৃদয় কাজী নামের হেফাজতে ইসলামের একজন সক্রিয় কর্মী ‘এথিস্ট নোট’ নামের একটি ম্যাগাজিনের সকল ব্লগার/ নাস্তিকদের নামে মামলা দায়ের করেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত খবর নিয়ে জানা যায় যে, এথিস্ট এরা নামের এই ওয়েবসাইটটি ইসলাম ধর্মকে অত্যন্ত নোংরাভাবে ফুটিয়ে তুলে একটি ম্যাগাজিন প্রকাশিত করে। মূলত যা দেখেই ইসলামী সংগঠনগুলো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে।

এ বিষয়ে মামলার বাদি হৃদয় কাজীর সাথে কথা হলে তিনি আমাদের বলেন ’’হঠাৎ করেই ফেসবুকের মাধ্যমে এই ম্যাগাজিনটি আমার চোখে পড়ে, আমি কৌতুহল বশত এটি ডাউনলোড করে দেখতে পারি সেখানে ধর্ম, মুসলিম, কোরআন এবং আমাদের প্রাণপ্রিয় নবী মোহাম্মদ (সঃ) কে নিয়ে নানাবিদ কুরুচিপূর্ন  শব্ধ ব্যবহার করে ‘বিনাশ হোক ধর্ম‘ নামে এই মাগাজিনটি প্রকাশিত করে, যা একজন মুসলিম হিসেবে মেনে নিতে পারিনি এবং আমি মনে করি এদেরকে কতল (হত্যা) করা আমার এবং আমাদের সকল মুসলিমদের ওপর ওয়াজিব হয়ে গেছে।

মামলার আসামীদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আমাদের যে কয়টি নাম বলেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েক জন হলেন এথিস্ট নোটে’র সম্পাদক খায়রুল্লাহ খন্দকার, সহ সম্পাদক আমিনুল হক, লেখক প্রশান্ত বাড়ই, এম ডি তোফায়েল হোসাইন এমডি জিল্লুর রহমান, অনিকা হক মল্লিক,শ্রাবণী শিকদার, মোহাম্মদ ওয়াহিদ হোসেন, মহাম্মদ ফাহিদুল আলম, মুহাইমিনুল বিশ্বাস পারভেজ, জোবায়ের হোসেন, বিপ্লব পাল, এম ডি হাসান তৌহিদ, মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান, নুর মোহাম্মদ, জনি জোসেফ কস্তা, সহ আরো অনেকে।

প্রশান্ত বাড়ই নামে এক ব্যক্তির ফাঁসি চেয়ে দেয়াল লিখন

এদিকে মিছিল এবং সমাবেশে থাকা কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা সাংবাদিকেদের জানান যে, ‘‘বর্তমানে নাস্তিক এবং কিছু নব্য ব্লগারদে উৎপাত এতটাই বেড়েছে যে এগুলো মেনে নেওয়া কোনও মুসলমানদের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে একটা কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমাদের কলিজার টুকরা হযরত মুহাম্মদ সাঃ কে নিয়ে কেউ কিছু বললে তাকে এই পৃথিবী থেকে বিদায় করা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব।‘‘

তাদের মধ্যে আর একজন ইসলামী ব্যক্তিত্ব মুফতি ফজলুর রহমান বলেন, ‘‘নাস্তিকদের গালি দিলে কারও গায়ে লাগলে আমার করার কিছু নাই। আল্লাহর দেশে থাকতে হলে আল্লাহকে না দেখে আল্লাহর অস্তিত্ব মানতে হবে, না হলে তুমি আল্লাহর দেশে থাকতে পারবে না।’’

এদিকে সমাবেশ চলাকালে মুফতি আহমদ উল্লাহ জিহাদী উপস্থিত থাকা দ্বীনদার ভাইদের উদ্দেশে বলেন যে, ‘‘যদি কোন মুসলিম মুরতাদ হয়ে যায় এবং মুরতাদের সকল শর্ত তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় (সুস্থ- মস্তিস্ক, বালেগ, স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির অধিকারী হওয়া) তাহলে তার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হবে এবং ইমাম তথা মুসলমানদের শাসক অথবা তাঁর প্রতিনিধি যেমন বিচারক তাকে হত্যা করবে। তাকে গোসল করানো হবে না, তার জানাযা-নামায পড়ানো হবে না এবং তাকে মুসলমানদের গোরস্থানে দাফন করা হবে না।‘‘

হেফাজেত ইসলামে এক কর্মীর কাছে দেয়ালে পোস্টার লাগানোর বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি আমাদের বলেন যে, ‘‘সমস্ত ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক-মুরতাদ যারা আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহ এবং আমাদের ধর্ম নিয়ে ব্যঙ্গ করবে, গালি-গালাজ করবে, কটূক্তি করবে তারা সবাই আমাদের টার্গেট। ইনশাআল্লাহ আমরা তাদের হত্যা করবো।’’

উল্লেখ্য, হেফাজতে ইসলাম নাস্তিক এবং ব্লগারদের ছবি যেভাবে দেয়ালে দেয়ালে লাগিয়েছে, ২০১৬ সালে ঠিক এভাবেই ফেসবুক পেজে চার ব্লগারের ছবি প্রকাশ করে হত্যার হুমকি দিয়েছে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম। তারা হচ্ছেন আসিফ মহিউদ্দিন, সানিউর রহমান, শাম্মি হক ও অনন্য আজাদ। তারা সবাই এখন প্রবাসী। জঙ্গি হামলার ভয়ে এসব ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট অনেক আগেই দেশ ছেড়েছেন।

বাকশালী সরকারের তথ্য সন্ত্রাস ও অন্যান্য

মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম, যুক্তরাজ্য থেকে

দেশ নায়েক তারেক রহমানের ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশের সূত্র ধরে কিছু কথা বলবার প্রয়োজন রয়েছে। এই একনায়ক শেখ হাসিনা সরকার যেভাবে অবলীলায় মানুষের ব্যাক্তিগত তথ্য প্রকাশ করছে, পাচার করছে কিংবা ইতরামীর চূড়ান্ত করছে তা বর্ণনাতীত।

একটা পলিটিকালি ইনকারেক্ট কিংবা নৈতিকতার মাপকাঠিতে অন্যায় কাজকে যখন সঠিক বলে বার বার চেষ্টা করা হয় তখন এই সমাজ ব্যবস্থা, এই রাষ্ট্র এগুলো নিয়ে হতাশ হতেই হয়। বলছি দেশ নায়েক তারেক রহমানের প্রাইভেট ডকুমেন্ট প্রকাশের ব্যাপারটি নিয়ে। গতকাল এই বিষয়ে আমি একটি অনুষ্ঠানে এবং একই সাথে মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ফেসবুকে আমি আমার বক্তব্য পেশ করেছি। তারপর যেই অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে সেটির জন্য হয়ত আমি মানসিক ভাবে প্রস্তুত ছিলাম বলে সহজ ভাবে নিতে পারছি সব কিছু কিন্তু এই প্রজন্মের তরুন কিংবা পলিটিকালি সচেতন ব্যক্তিদের ভাবনা আমাকে রীতিমত ব্যাথা দিয়েছে।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ফেসবুকে আমি মন্তব্য করবার পর নুরুল টিপু নামে একজন আওয়ামী দাস যিনি লন্ডনে থাকেন, তিনি আমাকে খুব তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে একটি মন্তব্য দিয়েছেন। আমাকে নোংরা সব গালাগালে নানাবিধ আখ্যায় আখ্যায়িত করেছেন। আমাকে তিনি অকথ্য ভাষায় গাল দিয়ে নিজের শিক্ষার প্রমাণ দিয়ে তার উপর আমাকে অশিক্ষিত ও মূর্খ বলেছেন। আমাকে তিনি মূর্খ বলেছেন, এতে করে আমার দুঃখ নেই। আমার তো মনে হয় এই অসীম পৃথিবীর অনেক কিছু না জানা আমি আসলে মূর্খই। কেন তিনি এইভাবে কথা বলছেন বা বলার চেষতা করেছেন আমি জানিনা। জানবার প্রয়োজন বোধ-ও করছিনা। টিপু ভাই তাঁর মগজের বা চিন্তার ধারনের বাইরে যেতে পারবেন না, বা সেটি তাঁর পক্ষে সম্ভব নয় হয়ত। ফলে আমার চিন্তাকে তিনি একটি সুনির্দিষ্ট উপমায় বেঁধে ব্যক্তিগত আক্রমণে যাবেন, এটা বুঝতে পারাটা খুব সম্ভবত কষ্টের নয়।

তিনি স্পস্ট করে বলেছেন যে রাজনীতি বিদ্দের ব্যাপারে প্রাইভেট বলে কিছু নেই। শুধু তিনিও নন, অনেকেই একটি কথা বার বার বলছেন যে বি এন পি চ্যালেঞ্জ করেছে বলেই ব্যাক্তিগত তথ্য প্রকাশ বাঞ্ছনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, আমি এসব শুনে ও পড়ে কি যুক্তি দেব সেটিও ভুলে গেছি।

দেশ নায়েক তারেক রহমান তার নাগরিকত্ব বর্জন করেছেন বলে দাবী করেছিলেন। আর সেটির প্রতিবাদ করেছিলো বি এন পি। তারা এই প্রতিবাদের পাশাপাশি খুবই সঠিক উপায়ে আইনের আশ্রয় নিয়েছে। আমি খুব এপ্রিশিয়েট করেছিলাম তাদের এই স্টেপ কে। আওয়ামীলীগের মত লগি বৈঠা দিয়ে মানুষ না মেরে, খুন না করে, পেট্রোল বোম না মেরে, তাদের মত হত্যা না করে, গ্রেনেড না ছুঁড়ে আইনী পথে মোকাবেলা করতে চাওয়াকে এপ্রিশিয়েট করাই উচিৎ।

আর এই আইনী চিঠিকে আইনী পথে মোকাবেলা না করে একেবারে টিপিকাল কলতলার ঝগড়ার মত প্রতি মন্ত্রী সাহেব, কয়েকজন ব্যাক্তির ব্যাক্তিগত তথ্য প্রকাশ করেছেন বি এন পি’র চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করবার জন্য।

বিরোধী পক্ষের উষ্কানিতে যদি রাষ্ট্র তার গতিপথ বদলায়, অন্যায় করে তাহলে এটি অনেক বড় পরাজয়। রাষ্ট্র হবে সহনশীল, রাষ্ট্র তাঁর নিজের প্রনীত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে। মনে রাখতে হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেমন আওয়ামীলীগ সমর্থকের প্রধানমন্ত্রী ঠিক তেমনি করে বি এন পি বা জামাতের সমর্থকদেরও প্রধানমন্ত্রী। তিনি সকলের জন্য। তিনি রেগে গেলে, আমরা সবাই হেরে যাব। তিনি ভুল করলে আমরা সবাই লজ্জা পাব কিংবা ক্ষতিগ্রস্থ হব। এগুলো অনুধাবন করতেই হবে।

এই যে তথ্যগুলো প্রকাশ করা হোলো, সেটি কি শুধু তারেক রহমানের তথ্যই প্রকাশ করা হলো? উত্তর হচ্ছে না, তা নয়। এখানে তারেক রহমানের আন্ডার এইজ একটি মেয়ের হোম অফিসের রেফারেন্স রয়েছে, তার স্ত্রী রয়েছেন, মইনুল নামে আরেকজন ভদ্রলোক রয়েছেন।

সবচাইতে বড় কথা হচ্ছে হোম অফিসের এই এলেইজড চিঠি দিয়ে প্রতিমন্ত্রীর ভাষ্য একেবারেই প্রমাণিত হয়না। হোম অফিস যে চিঠি দিয়েছে, তাতে করে কখনোই প্রমাণিত হয়না তারেক রহমান নাগরিকত্ব বর্জন করেছেন কি করেন নি। আমি সেসব টেকনিকাল আলোচনায় একেবারেই যাচ্ছিনা। এসব নিয়ে মন্তব্য করবার রুচী আমার নেই।

আমি শুধু যে কথাটি বার বার বলবার চেষ্টা করছি তা হলো, আমরা এই প্রজন্ম আমাদের দেশের চলমান যে পলিটিকাল ট্রেন্ড, এটির পরিবর্তন চাই।

দেশ নায়েক তারেক রহমান সম্পূর্ণভাবে আমার পলিটিকাল আদর্শের নেতা, তিনি আমার আদর্শ। তার রাজনৈতিক বক্তব্য, তার চিন্তা, তার পলিটিকাল মুভমেন্ট আমি এসবের সকল কিছুর সাথেই আমি একমত এবং তাঁর পথেই আমার যাত্রা। কিন্তু অন্যদিকে আওয়ামীলীগের উঠতি নেতা প্রধানমন্ত্রী পূত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে আমি অপছন্দ করি, তার আদর্শ আমার ভালো লাগেনা। সে আমার বিরুদ্ধ স্রোতের যাত্রী। কিন্তু এই যে আমি একমত নই কিংবা তার বিরুদ্ধ স্রোতের যাত্রী, এটিকে আমি কিভাবে ট্যাকেল করব? কিভাবে আমি সজীবের সাথে লড়াই করব? আমি কি তার সাথে রিভলবার দিয়ে লড়াই করব? তলোয়ার দিয়ে করব? চাপাতি দিয়ে করব? পুলিশ দিয়ে করব? ছুরি দিয়ে করব? গালাগাল দিয়ে করব? তার ব্যাক্তিগত তথ্য প্রকাশ করে করব?

আমার উত্তর হচ্ছে, না। আমি সজীবের আদর্শের সাথে লড়াই করব আমার প্রজ্ঞা দিয়ে। আমার মেধা দিয়ে। আমার মঙ্গল বিবেচনাবোধ দিয়ে, আমার নৈতিকতা দিয়ে, আমার শিক্ষা দিয়ে।

আমরা যদি আমাদের দেশের চলমান পলিটিকাল ট্রেন্ড গুলো পরিবর্তন না করতে পারি, আমরা এত পড়াশোনা, এত বই পড়ে যদি টিপিকাল নোংরা রাজনীতি করি তাহলে এই দেশ আমাদের অভিশাপ দেবে।

এত বছর ব্রিটেনে থেকে, এত এত দেশে ঘুরে, এত এত অভিজ্ঞতা নিয়ে, এত এত বই পড়ে আমি তাহলে কি শিখলাম? আমি আমার শিক্ষার প্রতিফলন এই দেশের রাজনীতিতে রাখতে চাই। আমার মেধার প্রমাণ আমি দিতে চাই একটা সুস্থ রাজনীতির ধারা চালু করে।

আমি যদি লেখালেখি করে এই প্রজন্মের কাছে ঘৃণার বাণীই উগড়ে দেই, কাউকে পরিবর্তন করতে না পারি তাহলে কি প্রয়োজন এসব লেখালেখির? যদি তরুনরা আমাদের দেখে না শেখে তাহলে, আমাদের এই শিক্ষা, আমাদের এই অভিজ্ঞতার সামান্যতম মূল্য রইবে না।

উত্তর প্রজন্মে আমার নাম ঘৃণার অক্ষরে লেখা থাকবে। ঠিক যেমন এই মুহুর্তে আওয়ামীলীগের নাম ঘৃণার অক্ষরে লেখা হচ্ছে, ঠিক তেমন।