প্রধানমন্ত্রীকে ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অশালীন, অভব্য এবং প্রাণঘাতী হুমকিস্বরূপ লেখা ও মন্তব্য ছাঁপানোর জের ধরে ডিজিটাল আইনে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-কে নিয়ে দৈনিক নবযুগ নামক একটি অনলাইন পত্রিকায় কটূক্তি ও হত্যার হুমকি প্রদানের দায়ে গত ৩রা অক্টোবর লক্ষীপুরের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (আমলী) আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ বেলায়েত হোসেন (ক্ষমতাপ্রাপ্ত)  ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর অধীনে মামলা গ্রহণ করে আমলে নিয়ে আদেশ জারী করা হয়। আওয়ামী লীগ এর তৃণমূল পর্যায়ের কর্মী ও সমর্থক মোঃ হৃদয় কাজী বাদী হয়ে গত ২৩শে সেপ্টেম্বর ২০২১ এ মামলাটি দায়ের করেন (মামলার নংঃ সি.আর. ৪৭৭/২০২১) যার শুনানী হয় ৩রা অক্টোবরে। উক্ত মামলাতে লেখক, প্রকাশক ও সকল বক্তব্য প্রদানকারীকে আসামী করে মোট ৪৭ জনের বিরুদ্ধে এ মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।

অভিযুক্তদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন – ইসরাত রশিদ (৩৬, সম্পাদক, দৈনিক নবযুগ), জনি জোসেফ ডি কস্তা(৩২, সহ-সম্পাদক, দৈনিক নবযুগ), নুরুল হুদা(২৯, সিনিয়র সহ-সম্পাদক, দৈনিক নবযুগ),  নূর মুহাম্মাদ (সিনিয়র উপদেষ্টা, দৈনিক নবযুগ), আলী আমিন (৩৯, প্রকাশক, দৈনিক নবযুগ), পীরজাদা তানভীর আহমেদ (২৪),  মোহাম্মাদ শহীদুল ইসলাম জায়গীরদার(৩৬), মোঃ আব্দুল রাজ্জাক (২৭), মোঃ মাসুম সাজ্জাদ (৩২), আরিফুল হক আরিফ (২৬), মোঃ জাকির হোসাইন (২৯),  মোঃ রাজিম হোসাইন (৩০), শিপলু কুমার বর্মন (৪২),  মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান, আবু সাঈদ (২৫), মোঃ আল-আমিন কায়সার (৩১),  এম.ডি মারাজ মিয়া (২৭), এম.ডি শাইম (২০),  আহসানুল কবির (৩৫), এমডি তোফায়েল হোসাইন, মোঃ শহীদুল ইসলাম (৩৮), সামিউজ্জামান সিদ্দীক (৪০), এম.ডি সাব্বির হোসাইন (৪০, সম্পাদক, পোর্টাল বাংলাদেশ), এম.ডি জহিরুল ইসলাম (৩৩), আল মাহফুজ (২৪), এম.ডি ওবায়দুর রহমান খান, মোঃ আরাথ হোসেন রনি (২৯), উম্মা কুলসুম নার্গিস বানু (৩৯), নুরুল ফারুক শাকের (৩৫), মোহাম্মাদ নিজামুল হক (৪৬), মোহাম্মদ ফাহিদুল আলম, মোঃ মিজানুর রাহামান, এমডি কানজিদ হাসান সহ আরো অনেকে।

এ মামলার বিষয়ে বাদীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি আমাদের এ প্রতিবেদককে জানান, “এই মামলার আসামীরা প্রত্যেকে দীর্ঘদিন যাবত অনলাইনে সরকার তথা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র ও প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় তারা দৈনিক নবযুগ নামক একটি অনলাইন পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন ছাঁপায় মার্চ ২০২১-এ। সেখানে তারা যাবতীয় কুৎসিত বানোয়াট এবং অসত্য কথা লিখেছিল কিছু সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে যে ব্যাপারে আমি কথা বলতে চাইনা এবং যার প্রেক্ষিতে বোধহয় তাদের বিরূদ্ধে যথোপযুক্ত একটা মামলাও হয়েছিল। সে মামলার ব্যাপারে সঠিক আইনানুগ ব্যবস্থা না নিয়ে এই পত্রিকা আরো একটি লেখা ছাঁপে বেশ কিছু মন্তব্যসহকারে মে-মাসে যেখানে সাধারণ মানুষ ও সংবাদমাধ্যমের বাকস্বাধীনতা রোধ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয় আগের মামলার জের ধরে। মামলা কোর্টে মোকাবিলা না করে গণমাধ্যমে বিচারালয় বসিয়ে দিয়েছে। আর সে লিখাগুলোতে এবং মন্তব্যে সরাসরি আমাদের মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে এবং আমাদের জাতির ঋণ যে পরিবারের কাছে – সে শেখ পরিবারকে নিয়ে যাচ্ছেতাই কথাবার্তা লিখা হয়েছে, প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে। এই প্রতিবেদনে আমাদের সকলের প্রাণপ্রিয়, জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গবন্ধু কন্যা, দেশনেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের কটূক্তি ও মানহানিকর বক্তব্য প্রদান করেছে।”

তিনি আরো বলেন, “তারা শুধু কটূক্তিই করেনি, বরং দেশনেত্রী শেখ হাসিনার সরকার ও তাঁর সমগ্র পরিবারকে উচ্ছেদ করার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছে। যা খুবই ভয়ঙ্কর, আমাদের বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের একটা অংশ ও এতে করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ণ হয়েছে। এসকল লেখকেরা দেশের বিরুদ্ধে নিরন্তর ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। এবং এটি এক ধরনের মহামারি আকার ধারণ করার আগেই বন্ধ করে দিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা উচিত। এজন্যই বিষয়টিতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই মামলাটি করেছি।”

আদালত সূত্রে জানা যায়, মামলাটি দায়ের হওয়ার পর বিজ্ঞ আদালত কমলনগর থানার ওসিকে ৩০ দিন সময় দিয়েছেন মামলার তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার জন্যে।  আগামী ২০শে ডিসেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানীর তারিখ ধার্য করা হয়েছে।

কমলনগর থানার সাথে যোগাযোগ করা হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমাদের প্রতিবেদককে জানান, “অভিযোগ আসার পর থেকেই আমরা দ্রুততার সাথে কাজ করছি। আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পরপরই আমরা একটি ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। আশা করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ তদন্ত সম্পন্ন করতে সক্ষম হবো। আমাদের কাছে বিস্তারিত তদন্ত রিপোর্ট আসলে গণমাধ্যমের মাধ্যমে সবাইকে এ বিষয়ে অবহিত করতে পারবো।”

এ বিষয়ে অভিযুক্তদের সাথে আমাদের এ প্রতিবেদক যোগাযোগ করে তাদের বক্তব্য তুলে ধরার চেষ্টা করলে তাদের কারো সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।

ছোট হয়ে আসছে সিলেবাস

এবার করোনাভাইরাসের ধাক্কা লেগেছে আগামী বছরের এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায়ও। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি এবং এপ্রিলে নির্ধারিত আছে এই দুটি পরীক্ষা। এর মধ্যে এসএসসির পরীক্ষার্থীরা একটি বছর বাসায় বসেই কাটিয়ে দিয়েছে। এমনকি দশম শ্রেণিতেও তিনটি মাস চলে গেছে। গত আগস্টে ভর্তি করা একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে দ্বাদশ শ্রেণিতে ওঠার অপেক্ষায় আছে। উভয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরাই এখন পর্যন্ত সরাসরি পদ্ধতির পাঠদান থেকে বঞ্চিত। এ অবস্থায় তাদের সিলেবাসও ছোট করে পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে তাদের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করে অনুমোদনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য অধ্যাপক মশিউজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, ২০২২ সালে যারা এসএসসি পরীক্ষা দেবে তারা এখন দশম শ্রেণিতে। নবম শ্রেণিতে তাদের সরাসরি পাঠদান হয়নি। আর ওই বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদেরও একই পরিস্থিতি। তবে তাদের পরীক্ষার সময়টা একেবারে কাছে নয়। যে কর্মদিবস আছে, সেটাই বিবেচনায় নিয়ে সিলেবাস পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি চলছে দেশের শিক্ষাঙ্গনে। আগামী ৩০ মার্চ স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। আর ২৪ মে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার কথা আছে। কিন্তু ইতোমধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নতুন করে উর্ধ্বমুখী হয়েছে। এই বাস্তবতায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার প্রস্তাব দিয়েছে। এর ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলায় অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ফের বেড়ে যেতে পারে ছুটি। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার তারিখের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সরকার এবারের এসএসসি-এইচএসসি এবং পিইসি-জেএসসি পরীক্ষার্থীদের শ্রেণিকাজের পরিকল্পনা করেছিল। একইসঙ্গে অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সরাসরি পাঠদানের পরিকল্পনাও চূড়ান্ত ছিল। করোনাভাইরাস সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের কারণে সেই পরিকল্পনা বিঘ্নিত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে পাঠদান আর পরীক্ষাগ্রহণে নতুন পরিকল্পনা নিতে হচ্ছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এই অবস্থায় আগামী বছরের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার সিলেবাস নিয়েও নতুন পরিকল্পনা ও প্রস্তাব তৈরি হয়েছে।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের সিলেবাসের ওপর ২১ সপ্তাহের একটি অ্যাসাইনমেন্ট প্রকাশ করা হয়েছে। বিষয়ভিত্তিক ওই সিলেবাস অনুযায়ী, প্রতি সপ্তাহে দুটি করে অ্যাসাইনমেন্ট রাখা হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে বাংলা, ইংরেজি এবং গণিতের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। সিলেবাসটি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে (www.dshe.gov.bd) আছে। ক্লাস চালু হলে যে বিষয়গুলোর ওপর শ্রেণির কাজ হবে সেগুলোর ওপর এই অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন এনসিটিবি সদস্য অধ্যাপক মশিউর রহমান।

প্রস্তাবে যা আছে : সূত্র জানায়, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে এনসিটিবি থেকে আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ওপর একটি সিলেবাস অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেটি বর্তমানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। অনুমোদনের পর এটি স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে শিক্ষা বোর্ডগুলোতে পাঠানো হবে। বোর্ডগুলো তা প্রকাশ করবে।

সূত্র জানিয়েছে, প্রস্তাবিত সিলেবাসটি কর্মদিবস ধরে তৈরি হয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, ২০২২ সালে এসএসসি পরীক্ষা নেওয়ার আগে কমপক্ষে ১৫০ কর্মদিবস শ্রেণিকাজ হবে। আর এইচএসসির ক্ষেত্রে ১৮০ কর্মদিবস ক্লাস নেওয়া হবে। যদি ৩০ মার্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া যায়, তাহলে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সপ্তাহে ৩ দিন ক্লাস নেওয়া হবে তাদের। দিন ধরে পরিকল্পনা তৈরি করায় ২০ শতাংশের মতো সিলেবাস কমছে বলে জানা গেছে। এই দুটি পরীক্ষায় প্রায় ৩৩ লাখ পরীক্ষার্থী আছে বলে জানা গেছে।

এ বছরের এসএসসি-এইচএসসি : এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা আগামী জুলাই থেকে অক্টোবরের মধ্যে নেওয়ার চিন্তা আছে সরকারের। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রকাশ করা হয়েছে। সেটি অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা প্রস্তুতি নিচ্ছে। এছাড়া এসব শিক্ষার্থী যথাসম্ভব অনলাইন ও দূরশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে।

এরপরও এসব শিক্ষার্থীর সরাসরি পদ্ধতির পাঠদান শুরুর চিন্তা আছে সরকারের। ৩০ মার্চ খোলা সম্ভব হলে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ৬০ দিন ক্লাস নেওয়া হবে। আর এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হবে ৮৪ দিন। এসব পরীক্ষার্থীকে সপ্তাহে ৬ দিনই ক্লাসে নিয়ে আসার পরিকল্পনা আছে সরকারের। এই দুটি পরীক্ষায় প্রায় ৩২ লাখ পরীক্ষার্থী আছে বলে জানা গেছে।

জেএসসি-পিইসি পরীক্ষা এবং অন্যদের ক্লাস : সূত্র নিশ্চিত করেছে, জেএসসি পরীক্ষার ব্যাপারে সরকারের এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে ঘোষিত পরিকল্পনায় মনে হচ্ছে, সরকার এবার এই পরীক্ষাটি নিতে চাচ্ছে না। যে কারণে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মতোই তাদেরকেও (অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী) সপ্তাহে একদিন স্কুল-মাদ্রাসায় আনার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।

তবে পিইসি পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে অনড় আছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। যে কারণে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শিক্ষামন্ত্রীর ব্রিফিংয়ে এবারের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে পিইসি পরীক্ষার্থীদেরও সপ্তাহে ৬ দিন স্কুলে আনার কথা বলা হয়েছে। পরে আলাপকালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, পিইসি পরীক্ষা নেওয়া হবে।

হাসপাতালে হঠাৎ রোগীর চাপ

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীদের জন্য সাধারণ শয্যা রয়েছে ২৭৫টি। এই হাসপাতালে গতকাল সোমবার রোগী ভর্তি ছিলেন ২৫৬ জন। অর্থাৎ প্রায় ৯৩ শতাংশ শয্যাতেই রোগী ভর্তি ছিলেন। হাসপাতালটির নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) ১০টি শয্যার কোনোটিই ফাঁকা ছিল না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, কয়েক দিন ধরে করোনায় সংক্রমিত যেসব রোগী আসছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেরই শ্বাসকষ্ট তীব্র।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে করোনার জন্য নির্ধারিত ৯টি সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা রয়েছে ১১৭টি। এর মধ্যে ৮১টি শয্যাতেই গতকাল রোগী ভর্তি ছিলেন। ফাঁকা ছিল ৩৬টি শয্যা, অর্থাৎ ৬৯ শতাংশের বেশি রোগী আইসিইউতে ছিলেন। আর করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত ২ হাজার ৩৮১টি সাধারণ শয্যার মধ্যে ১ হাজার ২৮১টি শয্যায় রোগী ভর্তি ছিলেন। অর্থাৎ ৫৪ শতাংশ শয্যাতেই রোগী ছিলেন। অথচ দুই সপ্তাহ আগেও পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। তখন ৩০ শতাংশ শয্যায় রোগী ছিলেন।

অবশ্য ঢাকার বাইরে করোনার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ এখনো কম। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বাদে সারা দেশে করোনার জন্য নির্ধারিত সাধারণ শয্যা রয়েছে ৬ হাজার ৪০৩টি। এসব হাসপাতালে গতকাল ভর্তি ছিলেন ৩১১ জন। খালি ছিল ৬ হাজার ৯২টি শয্যা। অর্থাৎ ৯৫ শতাংশ শয্যা খালি ছিল।

গত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত প্রায় তিন মাস দেশে সংক্রমণ মোটামুটি কম ছিল। তবে চার সপ্তাহ ধরে দেশে দৈনিক শনাক্ত বাড়ছে। পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হারও ঊর্ধ্বমুখী। গত ৯০ দিনের মধ্যে এক দিনে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয়েছে গতকাল।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা, তাঁর স্ত্রী ও শাশুড়ির গত সপ্তাহে করোনা শনাক্ত হয়। তাঁরা তিনজনই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে ওই ব্যক্তির শাশুড়ির শ্বাসকষ্টসহ অন্যান্য জটিলতা দেখা দিলে তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে স্থানান্তর (সোহরাওয়ার্দীতে করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউ নেই) করা হয়। গত রোববার রাতে তিনি মারা যান।

আইসিইউ শয্যা ফাঁকা থাকছে না, সাধারণ শয্যাতেও রোগী ভর্তি থাকছেন। দেশে আবার করোনা রোগী বাড়তে শুরু করেছে, এটি তারই ইঙ্গিত।

আবু জামিল ফয়সাল, জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. খলিলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালের গত ১৫ দিনের তথ্য দেখলেই বোঝা যায়, করোনা রোগী বাড়ছে। মাঝে কিছুদিন করোনা কম থাকায় লোকজন বেশি উদাসীন হয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের অধিকাংশই বলছেন, সামাজিক অনুষ্ঠান ও ভ্রমণ থেকে তাঁরা সংক্রমিত হয়েছেন। রোগীদের অনেকেরই তীব্র শ্বাসকষ্ট থাকছে।

সোহরাওয়ার্দীর মতোই মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও রোগী বাড়ছে। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে এই হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ৬০ থেকে ৭০ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। গতকাল রোগী ভর্তি ছিলেন ১৫৩ জন। এই হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউ শয্যা রয়েছে ১৪টি। গতকাল প্রতিটি শয্যাতেই রোগী ছিলেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারির তুলনায় প্রায় দ্বিগুণের বেশি রোগী বেড়েছে মার্চে।

মুগদা হাসপাতালের আটতলার পুরুষ ওয়ার্ডে করোনার চিকিৎসা নিচ্ছেন নারায়ণগঞ্জ খানপুরের বাসিন্দা ৮৪ বছর বয়সী কার্তিক বর্মণ এবং তাঁর ছেলে ২৭ বছর বয়সী টিটো বর্মণ। ১২ মার্চে তাঁরা হাসপাতালে ভর্তি হন।

কার্তিক বর্মণের আরেক ছেলে দীপু বর্মণ প্রথম আলোকে বলেন, গত এক বছরে তাঁদের পরিবারের কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়নি। টিকা নেওয়ার প্রস্তুতির মাঝেই তাঁর বাবা অসুস্থ হয়েছেন।

মুগদা হাসপাতালের আটতলার ২৩৯ নম্বর কক্ষের আটটি শয্যার প্রতিটিতে করোনা রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে ৪ জনের বয়স ৩০ বছরের নিচে। বাকি চারজন ষাটোর্ধ্ব।

মুগদা হাসপাতালের পরিচালক অসীম কুমার নাথ প্রথম আলোকে বলেন, এক সপ্তাহ ধরে ১৪টি আইসিইউ শয্যার প্রতিটিতে সার্বক্ষণিক রোগী থাকছেন।

আইসিইউর সংকট কাটছে না

করোনায় সংক্রমিত জটিল রোগীদের জন্য আইসিইউ ও কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস দেওয়ার সুবিধা বা ভেন্টিলেশন জরুরি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, আক্রান্তদের ৪০ শতাংশের উপসর্গ থাকে মৃদু। মাঝারি মাত্রার উপসর্গ থাকে ৪০ শতাংশের। তীব্র উপসর্গ থাকে ১৫ শতাংশের। আর জটিল পরিস্থিতি দেখা যায় বাকি ৫ শতাংশের ক্ষেত্রে। তীব্র উপসর্গ ও জটিল রোগীদের প্রায় সবার এবং মাঝারি উপসর্গ রয়েছে, এমন অনেক রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। জটিল প্রায় সব রোগীর আইসিইউ শয্যার পাশাপাশি ভেন্টিলেটর দরকার হয়।

ঢাকায় করোনার জন্য নির্ধারিত কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কোনো আইসিইউ শয্যাই গতকাল ফাঁকা ছিল না। রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালের ১৫টি শয্যার ১২টিতে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬টি আইসিইউ শয্যার ১৩টিতে, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের ১৬টি আইসিইউর ১০টিতে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৪ শয্যার মধ্যে ১৭টিতে রোগী ভর্তি ছিলেন। আইসিইউ শয্যা বেশি ফাঁকা ছিল মহাখালীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে, সেখানে ১৬টি শয্যার ৩টিতে রোগী ভর্তি ছিলেন।

জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য আবু জামিল ফয়সাল প্রথম আলোকে বলেন, আইসিইউ শয্যা ফাঁকা থাকছে না, সাধারণ শয্যাতেও রোগী ভর্তি থাকছেন। দেশে আবার করোনা রোগী বাড়তে
শুরু করেছে, এটি তারই ইঙ্গিত। রোগী বাড়তে থাকলে করোনার জন্য নির্ধারিত যেসব হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, সেগুলো আবার দ্রুত চালু করতে হবে।

মাদক সেবনের দায়ে সাজা পেল ওরা

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে মাদক সেবন ও নিজ হেফাজতে রাখার অপরাধে ৪ মাদকসেবীকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। বুধবার (১০ মার্চ) উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ভ্রাম্যাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লুবনা ফারজানা তাদের দণ্ডের আদেশ দেন। 

আটককৃতরা হলো-নরসিংদীর বেলাব থানাধীন চর বেলাব এলাকার মৃত ধনু মিয়ার ছেলে আহাদ মিয়া (৪৩), ভৈরব থানাধীন ভৈরবপুর উত্তরপাড়ার মৃত সায়িদ মিয়ার ছেলে নুরুল হক (৩৬), কালিপুর গ্রামের মৃত তাহের উদ্দিনের ছেলে মজিবুর মিয়া ও পঞ্চবটি বউবাজার এলাকার রমজান আলীর ছেলে জজ মিয়া (৩৮)।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ভৈরবের সার্কেল অফিস সূত্র জানায়, প্রকাশ্যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে মাদক সেবন ও নিজ হেফাজতে মাদক রাখার অপরাধে আটককৃত ৪ মাদকসেবীর প্রত্যেককে ৬ মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া অনাদায়ে আরো ৩ দিন করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ভ্রাম্যাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লুবনা ফারজানা।

এর আগে বুধবার (১০ মার্চ) দুপুরে শহরের পঞ্চবটি বউবাজার ও পাওয়ার হাউসসংলগ্ন এলাকা থেকে তাদেরকে আটক মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ভৈরব সার্কেল অফিসের সদস্যরা। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের সাজা দেওয়া হয়।

নামাজ শেষে রাস্তা পার হতে গিয়ে এসআই নিহত

সাভারের আশুলিয়ায় নামাজ শেষে রাস্তা পার হতে গিয়ে অজ্ঞাত পরিবহনের চাকায় পিষ্ট হয়ে মোনায়েম (৬০) নামে শিল্প পুলিশের এক উপপরিদর্শক (এসআই) নিহত হয়েছেন।

রোববার সকালে টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের আশুলিয়ার সরকার মার্কেট এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

মোনায়েম শিল্প পুলিশ ১-এর উপপরিদর্শক (এসআই)। তার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে।

আশুলিয়া থানার এসআই ফরিদুল আলম জানান, রাতে সরকার মার্কেট বান্ডু গার্মেন্টস ক্যাম্পে ডিউটিতে ছিলেন মোনায়েম।

ভোরে নামাজ শেষে রাস্তা পার হতে গিয়ে কোনো এক অজ্ঞাত পরিবহনের চাকায় পিষ্ট হন তিনি। এতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার।

নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

অঙ্কুশ-ঐন্দ্রিলার সহকারীর রহস্যজনক মৃত্যু

টালিউডের জনপ্রিয় নায়ক অঙ্কুশ হাজরার ব্যাক্তিগত সহকারী পিন্টু দের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে নিজ বাড়ি থেকে। পিন্টু অঙ্কুশের প্রেমিকা অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা সেনেরও সহকারী হিসেবেও কাজ করেছেন দীর্ঘদিন।  টালিউড অভিনেতা-অভিনেত্রীর সহকারীর মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছেন।  এ ঘটনায় ভেঙে পড়েছেন অঙ্কুশ-ঐন্দ্রিলা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে জানিয়েছেন সে কথা।  খবর জিনিউজের।

মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার কাঁকুড়গাছির বাড়ি থেকে পিন্টুর লাশ উদ্ধার করা হয়। বুধবার সকালে এই খবর ছড়িয়ে পড়ে।
পুলিশের ধারণা, পিন্টু আত্মহত্যা করেছেন।  তবে পরিবারের অভিযোগ, প্রায়ই ফোনে টাকা চেয়ে হুমকি দেওয়া হতো পিন্টুকে। এ ঘটনার সঙ্গে হুমকিদাতাদের কোনো যোগাযোগ রয়েছে কিনা, খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার মরদেহ উদ্ধার হওয়ার পরে নীলরতন সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত হয়। বুধবার সকালে পিন্টুর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।

কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, ভার্চুয়াল মাধ্যমে ব্ল্যাকমেলের শিকার হয়ে মানসিক চাপে ভুগছিলেন পিন্টু। প্রাথমিকভাবে পুলিশ এ তথ্য জানতে পেরেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

পুলিশ জানায়, পিন্টুর মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে।  তা থেকে এই মৃত্যুরহস্য খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।

টালিউডে পিন্টুর পরিচিতি ছিল অঙ্কুশ-ঐন্দ্রিলার ছায়াসঙ্গী ‘বাপ্পা দা’ হিসেবে।  তার মৃত্যুর খবর শুনে বুধবার পিন্টুর বাড়িতে যান তারা।

পরিবারের অভিযোগ, নিয়মিত টাকা চেয়ে হুমকি দেওয়া হত পিন্টুকে। পুলিশ জানিয়েছে, গত দেড় মাসে ভাগে ভাগে মোট ৩০ হাজার টাকা তার অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে অজ্ঞাত কাউকে পাঠানো হয়েছে। পরিবারের অভিযোগ, এর জেরেই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন পিন্টু।

অঙ্কুশ আনন্দবাজারকে জানান, ঘুণাক্ষরেও তিনি সে সব কিছু টের পাননি।  পিন্টুর ফোনে কেন হুমকি দেওয়া হতে সে বিষয়ে এখনও কিছুই জানা যায়নি বলে দাবি করেন অঙ্কুশ।

অঙ্কুশ আরও জানান, তার কাছ থেকেও কয়েক বার টাকা নিয়েছিলেন পিন্টু। অভিনেতার দাবি, ধার শোধ করতে হবে বলেই সে টাকা চেয়েছিলেন তার ব্যক্তিগত সহায়ক।

পিন্টুর মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান অঙ্কুশ বলেন, ‘খুবই সৎ মানুষ ছিলেন বাপ্পাদা। তাই যখনই টাকা চেয়েছেন, দিয়ে দিয়েছি। জানতাম, খারাপ কাজ করতেই পারেন না। টাকা চাওয়ার আসল কারণ বুঝতে পারলে এ ভাবে অসময়ে চলে যেতে দিতাম না।’

অঙ্কুশের প্রেমিকা ঐন্দ্রিলা মনে করছেন পিন্টু আত্মহত্যা করেছেন। তার ভাষ্য, ‘কী করে এমন কাজ করল বাপ্পাদা? নিজের মা আর বোনকে ফেলে চলে যেতে পারল!’

মসজিদের ধান ভাগ্নে চুরি করায় মামাকে কুপিয়ে হত্যা

মসজিদের ধান চুরি করা নিয়ে রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলায় কোব্বাস আলী (৬০) নামে এক বৃদ্ধকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার মৌগাছি ইউনিয়নের খয়রা মাটিকাটা গ্রামে প্রকাশ্যেই এ ঘটনা ঘটেছে। নিহত কোব্বাস আলী ওই গ্রামেরই বাসিন্দা ছিলেন।

মৌগাছী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আল-আমিন বিশ্বাস এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি জানান, স্থানীয় মসজিদ থেকে কয়েক দিন আগে ২০ কেজি ধান চুরি হয়। এর পর গ্রামবাসী নিশ্চিত হন যে কোব্বাস আলীর ভাগ্নে সাদ্দাম হোসেন (২০) ধানগুলো চুরি করেছেন। এ নিয়ে উত্তেজনা চলছিল।

শনিবার রাত ৮টার দিকে এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কোব্বাস আলীর কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এরই একপর্যায়ে উভয়পক্ষ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে কোব্বাস আলী ও তার দুই ছেলে আহত হন। সংঘর্ষে মুসল্লিদের পক্ষেরও চার-পাঁচজন আহত হন। আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক কোব্বাস আলীকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ইফতেখায়ের আলম জানান, খবর পেয়ে এলাকায় পুলিশ গেছে। এর পর পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে।

তিনি আরও জানান, সংঘর্ষে গুরুতর আহত কয়েকজনকে মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের আটক করতে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে বলেও জানান তিনি।

আলজাজিরার সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের ‘যোগাযোগ’

আলজাজিরাকে ব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রীকে বিশ্ব দরবারে সমালোচিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আলজাজিরার সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের যোগাযোগ রয়েছে। আলজাজিরার তথাকথিত প্রতিবেদনকে দেশের ১৬ কোটি মানুষ গ্রহণ করেনি। ইতোমধ্যে এ প্রতিবেদন মিথ্যা হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।

শনিবার দুপুরে দিনাজপুর ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২১ উপলক্ষে শিশু সমাবেশ, আবৃত্তি ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেছেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা দিনাজপুর জেলা শাখার আয়োজনে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আলকায়েদার সঙ্গে যাদের যোগাযোগ, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসাবাদের সঙ্গে যাদের যোগাযোগ, তাদের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক থাকতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকবে লুটেরা, দুর্নীতিবাজ, পলাতক তারেক রহমানের। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকবে এতিমের টাকা আত্মসাতকারী খালেদা জিয়ার। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী জামায়াতের। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কোনো মানুষের সঙ্গে আলজাজিরার সম্পর্ক থাকতে পারে না।

খালিদ মাহমুদ বলেন, পৃথিবীর সব জাতিগোষ্ঠীর ভাষা রক্ষার দায়িত্ব বাংলাদেশের। এ ঐতিহাসিক উদ্যোগের অংশ হিসেবে ১৯৯৯ সালে দেশরত্ন শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট নির্মাণ শুরু করেছিলেন। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় এসে তার কাজ আর এগিয়ে নেয়নি। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার উদ্বোধন করেন।

তিনি বলেন, আজকের শিশুরা আগামীর বাংলাদেশ। তারা যদি সঠিক ইতিহাস না জানে তাহলে বাংলাদেশ মূলধারা থেকে আবার দূরে সরে যাবে। জাতির পিতার নেতৃত্বে ২১ ফেব্রুয়ারি রক্ত দিয়ে যে ইতিহাস ও চেতনার বীজ তৈরি করেছিলাম, যে সাহসিকতা ও শক্তি অর্জন করেছিলাম। সেখান থেকে অধিকার থেকে স্বাধিকার, স্বাধীনতা থেকে মুক্তিযুদ্ধ। আজকে সেই স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতাকে খাটো করে কথা বলা হয়। তার একটাই কারণ, একজন খলনায়ককে মহানায়কের পাশে বসানোর ষড়যন্ত্র।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দিনাজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইমাম চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সানিউল ফেরদৌস এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সচীন চাকমা।

কেন্দ্রীয় বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান জুয়েলের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা শেষে প্রধান অতিথি বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কারসহ সনদ বিতরণ করেন।

পরে প্রতিমন্ত্রী দিনাজপুরের বোচাগঞ্জে ঝাড়বাড়ী বাসস্ট্যান্ডে সেতাবগঞ্জ ভিশন সেন্টারের উদ্বোধন করেন।

হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী জিয়াকে গ্রেপ্তার করুন: অভিজিতের ভাই

লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়কে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক ওরফে মেজর (বরখাস্ত) জিয়াকে অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন তার ছোটভাই অনুজিৎ রায়।

আজ মঙ্গলবার মামলার রায়ের পর অনুজিৎ বলেন, রায়ের পর পুলিশ যেন বসে না থাকে। তাদের উচিত হত্যার দুই মূল পরিকল্পনাকারী মেজর জিয়া ও আকরাম হোসেনকে অবিলম্বে গ্রেপ্তারে জোর চেষ্টা চালানো।

২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে লেখক অভিজিৎকে হত্যার দায়ে ঢাকার ট্রাইব্যুনাল নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের পাঁচ সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড ও অপর একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ার রায়ে তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

অনুজিৎ বলেন, জঙ্গি গোষ্ঠী আরও প্রতিহিংসাপরায়ণ ও আরও বেশি লোককে হত্যার চক্রান্ত করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, ‘দুই মূল পরিকল্পনাকারী এখনও বাইরে এবং তা উদ্বেগের বিষয়।’

‘সময় নিলেও, রায় নিয়ে আমি সন্তুষ্ট,’ তিনি বলেন।

তিনি আরো বলেন, ‘দেশে যখন উগ্রবাদ চরম আকার ধারণ করছে এবং ধর্ম অবজ্ঞার দোহাই দিয়ে হত্যার ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, এ সময় এই রায় নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। আমার বাবা বেঁচে থাকলে তিনিও সন্তুষ্ট হতেন।’

রায় শিগগির কার্যকরের দাবি জানান তিনি।

লক্ষ্য যেন হয় মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা

জনগণকে দেওয়া ওয়াদা পূরণে কাজ করতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমি আপনাদের কাছে এটাই চাইব-জনপ্রতিনিধি হিসাবে জনগণের কাছে আপনারা যে ওয়াদা দিয়ে এসেছেন, আর আজকে যে শপথ নিলেন সেটা মাথায় রেখেই মানুষের জন্য কাজ করবেন। জনপ্রতিনিধি হিসাবে দেশের মানুষের কল্যাণ করা, মানুষের জন্য কাজ করা, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা; এটাই যেন লক্ষ্য হয়।

বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে চসিক মেয়র এম রেজাউল করিমসহ কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি আরও বলেন, আপনারা জানেন যে, বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য অনেক কর্মসূচি হাতে নিয়েছি, বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। সারা দেশেই কিন্তু আমরা এই উন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছি। আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, দেশের কল্যাণে কাজ করতে চাইলে, করা যায়। এখানে জনগণের সমর্থনটা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহর রহমতে জনগণের সেই সমর্থনটা আমরা পাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে আমি আজ আরও অতিরিক্ত ৫০ হাজার ঘর নির্মাণের জন্য এক হাজার কোটি টাকা ছাড় করেছি। আমরা আরও এক লাখ ঘর তৈরি করে দিচ্ছি। আমরা সার্ভে করে দেখেছি। একটি লোক যেন গৃহহীন না থাকে। যার যার গ্রামে বাড়ি, সেখানে দেখবেন কোনো মানুষ গৃহহীন আছে কিনা? সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নেবেন। আমরা ঘর করে দেব। একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

করোনাভাইরাসের টিকা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা শুধু টিকা আনতে পেরেছি তাই-ই নয়, আমরা এখন টিকা প্রযোগের কাজও শুরু করেছি। এক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে স্ব স্ব এলাকার মানুষ যেন এই টিকাটা নিতে পারে সেই ব্যবস্থা করা এবং তাদের উদ্বুদ্ধ করা ও নাম নিবন্ধন করা। তিনি আরও বলেন, করোনার টিকার জন্য নাম নিবন্ধনও আরও সহজ করে দেয়া হয়েছে। এখন প্রতিটি ডিজিটাল সেন্টারে নিবন্ধন করা যাবে। আইডি কার্ড নিয়ে গেলে সেটা দেখে নিবন্ধন করে দেবে ও সঙ্গে সঙ্গে টিকা নেওয়া যাবে এবং নিজেকে সুরক্ষিত রাখা যাবে।

এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় গণভবন থেকে ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে চসিকের নতুন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীকে ভার্চুয়ালি শপথ পাঠ করান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে শপথ নেন সংরক্ষিত আসনের ১৪ জন এবং সাধারণ আসনের ৪০ জন কাউন্সিলর। তাদের শপথ পাঠ করান স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ এ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।