সরকারের সমালোচনা করেছে বলে পিতা মাতাকে হয়রানি করছে পুলিশ

দেশের বাইরে অবস্থানকারী নুরুল হুদা, যিনি জনপ্রিয় অনলাইন দৈনিক নবজুগের সিনিয়র সহ-সম্পাদক। তিনি তাঁর পত্রিকায় সরকারের সমালোচনা করবার কারনে একাধিক আক্রোশপ্রসূত মামলার শিকার হয়েছেন। এখন তাঁর বাবা মাকে হয়রানি করছে পুলিশ। দেখুন ভিডিওতে যুক্তরাজ্যে বসবারত নুরুল হুদার পিতা আবুল কালাম ও মাতা সিরিয়া বেগম কি বলছেন।

(আবুল কালাম)

আমার ছেলে তো লন্ডনে থাকে। তাঁর নাম নুরুল হুদা। আমি তাঁর বাবা আবুল কালাম। কয়েকদিন আগে, ধরুন সপ্তাহখানেক আগে পুলিশ এসেছে। এসে আমাকে ধমক দিয়েছে। এই করবো, সেই করবো বলে শাসিয়েছে। জেলে নিয়ে যাবে আমার ছেলেকে। সে আমার ছেলে হয়। প্রথম ছেলে আমার। কিন্তু সে তো অনেকদিন যাবত, প্রায় ১৫ বছর যাবত বিদেশে আছে। কিন্তু সে তো বিএনপি সমর্থন করে। কি সব লেখালেখি করে, সেইটা তো আপনারা ভালো জানবেন। সে তাঁর পত্রিকা চালায়, ওইগুলাই নাকি ক্রাইম। পুলিশ এসে অনেকদিন তাড়া করেছে আমাকে, বলে যে ছেলে কই ছেলেকে এনে না দিলে আমাকে জেলে নিয়ে যাবে। এখন আমরা এমতাবস্থায় কীভাবে এই বাসাবাড়িতে থাকবো? আমার ছেলে কী করে, সেটা তো আমি জানি না। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে বার বার মামলা হচ্ছে, বার বার আমার বাড়িতে পুলিশ আসছে এবং জিগ্যেস করছে যে আমার ছেলে কোথায় থাকে। আমাকে এসব বলছে।

পুলিশ ধরুন সপ্তাহখানেক আগে এসেছে। এসে আমাকে ধমক দিয়েছে জিগ্যেস করেছে তোমার ছেলে কী বাড়িতে আছে? আমি বললাম, বাড়িতে নাই। কিন্তু তারপর আমাকে বলে যে ছেলে কোথায় আছে বের করে দেন, নাহলে আপনাকে জেলে নিয়ে যাবো। আমি বললাম সে তো লন্ডনে আছে, সে বিএনপি সমর্থক। পত্রিকায় লেখালেখি করে, ফেসবুকে কী লিখে না লিখে সেটার কিছুই আমি জানিও না। এখন তো নিরাপদ মনে করি না আমি। এখানে তো আমিই বিপদের সম্মুখীন হচ্ছি। নিজেকে নিরাপদ মনে করি না আমি। পুলিশ আমাকে যেকোনো মুহূর্তে গ্রেফতার করতে পারে, এই বলে হুমকি দিয়ে গেছে আমাকে। তাঁরা বলেছে আমার ছেলে নাকি ফেসবুকে সরকারের বিরুদ্ধে লেখালেখি করে, এসবই বলেছে আমাকে। কিন্তু সরকারের বিরুদ্ধে কী লেখালেখি করে সেগুলো তো আমাকে দেখায় নি, হয়তো সরকারের বিরুদ্ধে কিছু লেখেছে এই জন্য মামলা হয়েছে। এর আগেও ওর নামে মামলা হয়েছে। আমি ভয়ে আছি আমার বিরুদ্ধে কী নির্যাতন চালায়, আমি তো লোকালয়ে থাকি। এখন আমাকে মনে হচ্ছে নির্জন কোন স্থানে আশ্রয় নিতে হবে।

এখন আমি সঠিক বলতে পারি না কী হবে। হয়তো আমাকে জেলে দিতে পারে, ফাঁসিও দিতে পারে। এইধরনের কিছু হুমকি দিয়ে গেছে আমাকে।

জ্বি না, নিরাপদ না। আমার ছেলে দেশে ফিরলে তো তাঁর মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে।

(সিরিয়া বেগম)

আজকেও ফোন দিয়েছে, সকালেও ফোন দিয়েছে। ১৪ বছর হয়ে গেছে। পুলিশ আমাদের অনেক জ্বালাতন করে। দু’তিন বার ঘুরে গেছে। আমাদের তো আতংকে এখান থেকে পালিয়ে যেতে হবে, আমাদের বলে যে আমাদের ছেলে বিএনপি সমর্থক।  পুলিশে এসে আমাদেরকে বলে যে আপনার ছেলের নামে মামলা হয়েছে, সে বিএনপি সমর্থক। মোবাইল ফোনে (সামাজিক গণমাধ্যমে) কিছু একটা করেছে। হুমকি দিয়ে বলে যে ছেলেকে ডেকে আনো, এগুলো বলে ভয় দেখিয়েছে। জিগ্যেস করে, “তোমার ছেলে দেশে আসবে না নাকি?”

আমার নাম সিরিয়া বেগম। আমার ছেলের নাম নুরুল হুদা। থাকে লন্ডন।

নাস্তিক ব্লগারদের ফাঁসীর দাবীতে ঢাকায় মিছিল

হেফাজতে ইসলামসহ আরো কয়েকটি ইসলামী সংগঠন বেশ কিছুদিন ধরেই সরকারকে ব্লগার এবং নাস্তিকদের আইনের আওতায় এনে তাদের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে চাপ দিয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় ইসলামী দলগুলোকে বাংলাদেশের বিভিন্নস্থানে মিছিল এবং সমাবেশ করে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়। তাছাড়া কোনও কোনও এলাকার অলিতে-গলিতে দেয়ালে দেয়ালে নাস্তিকদের পোষ্টার লাগিয়ে হত্যা করার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।

এর আগে বুধবার (১৬ আগস্ট ২০২৩) সাকিব মেহবুব নামের হেফাজতে ইসলামের একজন সক্রিয় কর্মী ‘এথিস্ট এরা’ নামের একটি ম্যাগাজিনের সকল ব্লগার/ নাস্তিকদের নামে মামলা দায়ের করেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত খবর নিয়ে জানা যায় যে, এথিস্ট এরা নামের এই ওয়েবসাইটটি ইসলাম ধর্মকে অত্যন্ত নোংরাভাবে ফুটিয়ে তুলে একটি ম্যাগাজিন প্রকাশিত করে। মূলত যা দেখেই ইসলামী সংগঠনগুলো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে।

এ বিষয়ে মামলার বাদি সাকিব মেহবুবের সাথে কথা হলে তিনি আমাদের বলেন ‘হঠাৎ করেই অনলাইনে এই ম্যাগাজিনটি আমার চোখে পড়ে, আমি কৌতুহল বশত এটি ডাউনলোড করে দেখতে পারি সেখানে ধর্ম, মুসলিম, কোরআন এবং আমাদের প্রাণপ্রিয় নবী মোহাম্মদ (সঃ) কে নিয়ে নানাবিদ কুরুচিপূর্ন শব্ধ ব্যবহার করে ‘বিনাশ হোক ধর্ম‘ নামে এই মাগাজিনটি প্রকাশিত করে, যা একজন মুসলিম হিসেবে মেনে নিতে পারিনি এবং আমি মনে করি এদেরকে কতল (হত্যা) করা আমার এবং আমাদের সকল মুসলিমদের ওপর ওয়াজিব হয়ে গেছে’

এদিকে মিছিল এবং সমাবেশে থাকা কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা সাংবাদিকেদের জানান যে, ‘বর্তমানে নাস্তিক এবং কিছু নব্য ব্লগারদে উৎপাত এতটাই বেড়েছে যে এগুলো মেনে নেওয়া কোনও মুসলমানদের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে একটা কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমাদের কলিজার টুকরা হযরত মুহাম্মদ সাঃ কে নিয়ে কেউ কিছু বললে তাকে এই পৃথিবী থেকে বিদায় করা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব’

মামলার আসামীদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আমাদের যে কয়টি নাম বলেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েক জন হলেন এথিস্ট ইন বাংলাদেশ‘র সম্পাদক, রুমানা আফরোজ রাখি,মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন, এম ডি রাশেদ আলম,আশরাফ হোসেন,যোবায়ের হোসেন, এম ডি জিল্লুর রহমান, মোহাম্মদ সাইফুজ্জামান,কমল চন্দ্র সরকার সহ আরো অনেকেই।

তাদের মধ্যে আর একজন ইসলামী ব্যক্তিত্ব মুফতি ফজলুর রহমান বলেন, ‘‘নাস্তিকদের গালি দিলে কারও গায়ে লাগলে আমার করার কিছু নাই। আল্লাহর দেশে থাকতে হলে আল্লাহকে না দেখে আল্লাহর অস্তিত্ব মানতে হবে, না হলে তুমি আল্লাহর দেশে থাকতে পারবে না।’’

এদিকে সমাবেশ চলাকালে মুফতি আহমদ উল্লাহ জিহাদী উপস্থিত থাকা দ্বীনদার ভাইদের উদ্দেশে বলেন যে, ‘‘যদি কোন মুসলিম মুরতাদ হয়ে যায় এবং মুরতাদের সকল শর্ত তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় (সুস্থ- মস্তিস্ক, বালেগ, স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির অধিকারী হওয়া) তাহলে তার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হবে এবং ইমাম তথা মুসলমানদের শাসক অথবা তাঁর প্রতিনিধি যেমন বিচারক তাকে হত্যা করবে। তাকে গোসল করানো হবে না, তার জানাযা-নামায পড়ানো হবে না এবং তাকে মুসলমানদের গোরস্থানে দাফন করা হবে না।‘‘

হেফাজেত ইসলামে এক কর্মীর কাছে মিছিলের বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি আমাদের বলেন যে, ‘‘সমস্ত ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক-মুরতাদ যারা আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহ এবং আমাদের ধর্ম নিয়ে ব্যঙ্গ করবে, গালি-গালাজ করবে, কটূক্তি করবে তারা সবাই আমাদের টার্গেট। ইনশাআল্লাহ আমরা তাদের হত্যা করবো।’’

উল্লেখ্য, হেফাজতে ইসলাম নাস্তিক এবং ব্লগারদের নিয়ে মিছিল যেভাবে করেছে, ২০১৬ সালে ঠিক এভাবেই ফেসবুক পেজে চার ব্লগারের ছবি প্রকাশ করে হত্যার হুমকি দিয়েছে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম। তারা হচ্ছেন আসিফ মহিউদ্দিন, সানিউর রহমান, শাম্মি হক ও অনন্য আজাদ। তারা সবাই এখন প্রবাসী। জঙ্গি হামলার ভয়ে এসব ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট অনেক আগেই দেশ ছেড়েছেন

মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সীমান্তে সামরিক উত্তেজনার ইতিহাস এবং শহীদ জিয়া ও দেশনেত্রীর ভুমিকা

লেখক: মশিউল হোসেন খান

মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সীমান্তে সামরিক উত্তেজনার ইতিহাস এবং শহীদ জিয়া ও দেশনেত্রীর ভুমিকা-

বাংলাদেশ মিয়ানমার প্রথম উত্তেজনার শুরু হয় ১৯৭৮ সালে যখন মায়ানমার সেনাবাহিনীর আরাকানে অপারেশন ড্রাগন চালু করে এতে প্রায় ৫ লাখের বেশী রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসে। তখন রাষ্ট্রীয় প্রধান ছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।
জিয়াউর রহমান তখন মিয়ানমারের সেই সময়ের প্রেসিডেন্টকে বললেন সকল রোহিঙ্গাদের নিয়ে যেতে কিন্তু তিনি বললেন এরা কেউ মিয়ানমারের নাগরিক না। শহীদ জিয়া তখন মায়ানমারের সরকারকে বললেন ঠিক আছে তাহলে আমার দেশে আসা রোহিঙ্গাদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিয়ে তাদের দেশেই ফেরত দেওয়া হবে।
তারা নিজের জায়গা নিজেরাই পারলে উদ্ধার করবে! ফলে দুই দেশের মাঝে উত্তেজনা দেখা দেয় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার দুই দেশই সীমান্তে সেনা সমাবেশ করে। অবশেষে মিয়ানমার ব্রিটিশ দূতাবাসের সাহায্য বাংলাদেশকে প্রস্তাব দেয় যে সেনা সরিয়ে নিলে তারা চুক্তি করতে প্রস্তুত। ফলে একই বছর মানে ১৯৭৮ সালে ব্রিটিশ, আমেরিকান দূতাবাসের উদ্যোগে দুই দেশের প্রেসিডেন্ট চুক্তি করে সেখানে মায়ানমার রোহিঙ্গাদের নিজ দেশের নাগরিকত্ব দিয়ে দেশে ফেরত নেয়।

এরপর আবার উত্তেজনা শুরু হয় ১৯৯২ সালে রোহিঙ্গা নিয়ে সমস্যার কারণে মিয়ানমার সেনাবাহিনী টেকনাফ বিডিআর ক্যাম্পে হামলা করলে ১ বিডিআর সদস্য নিহত হয়, সাথে সাথে বিডিআরের পাল্টা হামলায় ১২ জন মিয়ানমারের সেনা নিহত হয়, তখন মায়ানমার সেনাবাহিনী লাশ রেখেই পালিয়ে যায়।
উক্ত ঘটনার পরে নড়ে চড়ে বসে সমগ্র দেশ, সেই সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মায়ানমারকে চরম হুমকি দিয়ে মিয়ানমারের সীমান্তে ৮২ হাজার সেনা সমাবেশ ও ভারী অস্ত্র মোতায়েন করেন! যা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম কোন দেশের সীমান্তে এত বেশী সংখ্যায় সেনা মোতায়েনের ঘটনা।
পাল্টা হিসাবে মিয়ানমার প্রায় ১ লাখ সেনা মোতায়েন করে। কিন্তু উক্ত সময়ে মিয়ানমারের কাচিনদের সাথে ভয়ানক যুদ্ধ বেধে যায় সেনাবাহিনী। ফলে প্রচন্ড চাপে পরে মিয়ানমার তারা দূত মারফত সীমান্ত থেকে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী সরাতে অনুরোধ করে। কিন্তু বাংলাদেশ তাদের কথায় কোন পাত্তাই দেয়নি।

একদিকে নিজ দেশে কাচিনদের ভয়ানকভাবে হামলা অন্যদিকে বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে সেনা না সরাতে পারা উভয় সংকটে পরে মিয়ানমার। শেষে চীন সফরে যান মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট তিনি চীনা প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ করেন যে বাংলাদেশ যেন তাদের বিশাল বাহিনী ও ভারী অস্ত্র সরিয়ে নেয়। না হলে মিয়ানমার সেনা সরালে বাংলাদেশ আরাকান দখল করে নিতে পারে বলে তার আশংকা। শেষে চীনের কয়েকবার অনুরোধের পর প্রায় ৯৩ দিন পরে বাংলাদেশ মিলে সীমান্ত থেকে সেনা সরিয়ে নেয়।

এভাবেই প্রতিনিয়ত বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনা চলছে এবং দক্ষতার সাথে সেই সময়কার রাষ্ট্রপ্রধানরা তা মোকাবেলা করেছিলেন। তবে বর্তমান সময়ে মিয়ানমারের উগ্রতা দিন দিন বেড়েই চলছে, যার জন্য বর্তমান সরকারের নেই কোন কার্যকর উদ্যােগ।
নতজানু পররাষ্ট্রনীতি, নতজানু সরকার ব্যাবস্থায় সীমান্তে বিজিবি আজ নিরুপায়।
দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে ব্যর্থ সরকার, যার জন্য কয়েকদিন পর পর বাংলাদেশ – মায়ানমার সীমান্তে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী হামলা করে, হত্যা করছে।

বাংলাদেশ মিয়ানমার প্রথম উত্তেজনার শুরু হয় ১৯৭৮ সালে যখন মায়ানমার সেনাবাহিনীর আরাকানে অপারেশন ড্রাগন চালু করে এতে প্রায় ৫ লাখের বেশী রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসে। তখন রাষ্ট্রীয় প্রধান ছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।
জিয়াউর রহমান তখন মিয়ানমারের সেই সময়ের প্রেসিডেন্টকে বললেন সকল রোহিঙ্গাদের নিয়ে যেতে কিন্তু তিনি বললেন এরা কেউ মিয়ানমারের নাগরিক না। শহীদ জিয়া তখন মায়ানমারের সরকারকে বললেন ঠিক আছে তাহলে আমার দেশে আসা রোহিঙ্গাদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিয়ে তাদের দেশেই ফেরত দেওয়া হবে।
তারা নিজের জায়গা নিজেরাই পারলে উদ্ধার করবে! ফলে দুই দেশের মাঝে উত্তেজনা দেখা দেয় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার দুই দেশই সীমান্তে সেনা সমাবেশ করে। অবশেষে মিয়ানমার ব্রিটিশ দূতাবাসের সাহায্য বাংলাদেশকে প্রস্তাব দেয় যে সেনা সরিয়ে নিলে তারা চুক্তি করতে প্রস্তুত। ফলে একই বছর মানে ১৯৭৮ সালে ব্রিটিশ, আমেরিকান দূতাবাসের উদ্যোগে দুই দেশের প্রেসিডেন্ট চুক্তি করে সেখানে মায়ানমার রোহিঙ্গাদের নিজ দেশের নাগরিকত্ব দিয়ে দেশে ফেরত নেয়।

এরপর আবার উত্তেজনা শুরু হয় ১৯৯২ সালে রোহিঙ্গা নিয়ে সমস্যার কারণে মিয়ানমার সেনাবাহিনী টেকনাফ বিডিআর ক্যাম্পে হামলা করলে ১ বিডিআর সদস্য নিহত হয়, সাথে সাথে বিডিআরের পাল্টা হামলায় ১২ জন মিয়ানমারের সেনা নিহত হয়, তখন মায়ানমার সেনাবাহিনী লাশ রেখেই পালিয়ে যায়।
উক্ত ঘটনার পরে নড়ে চড়ে বসে সমগ্র দেশ, সেই সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মায়ানমারকে চরম হুমকি দিয়ে মিয়ানমারের সীমান্তে ৮২ হাজার সেনা সমাবেশ ও ভারী অস্ত্র মোতায়েন করেন! যা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম কোন দেশের সীমান্তে এত বেশী সংখ্যায় সেনা মোতায়েনের ঘটনা।
পাল্টা হিসাবে মিয়ানমার প্রায় ১ লাখ সেনা মোতায়েন করে। কিন্তু উক্ত সময়ে মিয়ানমারের কাচিনদের সাথে ভয়ানক যুদ্ধ বেধে যায় সেনাবাহিনী। ফলে প্রচন্ড চাপে পরে মিয়ানমার তারা দূত মারফত সীমান্ত থেকে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী সরাতে অনুরোধ করে। কিন্তু বাংলাদেশ তাদের কথায় কোন পাত্তাই দেয়নি।

একদিকে নিজ দেশে কাচিনদের ভয়ানকভাবে হামলা অন্যদিকে বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে সেনা না সরাতে পারা উভয় সংকটে পরে মিয়ানমার। শেষে চীন সফরে যান মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট তিনি চীনা প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ করেন যে বাংলাদেশ যেন তাদের বিশাল বাহিনী ও ভারী অস্ত্র সরিয়ে নেয়। না হলে মিয়ানমার সেনা সরালে বাংলাদেশ আরাকান দখল করে নিতে পারে বলে তার আশংকা। শেষে চীনের কয়েকবার অনুরোধের পর প্রায় ৯৩ দিন পরে বাংলাদেশ মিলে সীমান্ত থেকে সেনা সরিয়ে নেয়।

এভাবেই প্রতিনিয়ত বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনা চলছে এবং দক্ষতার সাথে সেই সময়কার রাষ্ট্রপ্রধানরা তা মোকাবেলা করেছিলেন। তবে বর্তমান সময়ে মিয়ানমারের উগ্রতা দিন দিন বেড়েই চলছে, যার জন্য বর্তমান সরকারের নেই কোন কার্যকর উদ্যােগ।
নতজানু পররাষ্ট্রনীতি, নতজানু সরকার ব্যাবস্থায় সীমান্তে বিজিবি আজ নিরুপায়।
দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে ব্যর্থ সরকার, যার জন্য কয়েকদিন পর পর বাংলাদেশ – মায়ানমার সীমান্তে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী হামলা করে, হত্যা করছে।

হাসিনার লোক দিশেহারা

লেখক: মশিউল হোসেন খান

তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি-

যুক্তরাজ্য বিএনপির বিপ্লবী সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমদ ভাইয়ের গ্রামের বাড়িতে আগুন দিয়েছে আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীরা।হাসিনা এখন দিশেহারা হয়ে বিরোধী দলের নেতা কর্মিদের বাড়ি ঘরে আগুন দিয়ে জালিয়ে দিচ্ছে।খুব শিগ্রই তাদের প্রতন শুরু হবে।
রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারনে বাড়ি-ঘরে আগুন দেয়ার এই নির্মমতা সিলেটের পিচঢালা রাজপথে জিয়ার সৈনিকরা বারুদ হয়ে জ্বলে উঠবে ইনশাআল্লাহ । যে আগুন নিভানোর ক্ষমতা ফ্যাসিস্ট সরকারের থাকবেনা।হাসিনার পতন নিশ্চিত হবে ইনশাআল্লাহ।

ইতিহাস যখন সাক্ষী দেয়

লিখেছেন মোহাম্মদ ওমর সানি

ইতিহাস কখনো ভুলে যাওয়ার নয় 🌿

কলকাতার বাবুরা বলেছেন,”ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় করার কোন দরকার নেই। ফার্মগেট আছে,ধানমণ্ডি আছে পাশে একটা কৃষি কলেজ করে দাও। ”

এই ধরনের কায়েমী স্বার্থবাদী আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে ব্রিটিশ লর্ডের কাছে গিয়ে শেরে বাংলা ফজলুল হক বোঝালেন ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতেই হবে। এবার ব্রিটিশরা কিছুটা নমনীয় হল — কিন্তু বিশ্বযুদ্ধের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হল একটু দেরীতে । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যখন প্রতিষ্ঠিত হয় তখন বাংলার শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন শেরে বাংলা ফজলুল হক ।

শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ১৯১৬ সালে মুসলিম লীগ এর সভাপতি নির্বাচিত হন । পরের বছর ১৯১৭ সালে তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এর সাধারণ সম্পাদক হন । তিনিই ইতিহাসের একমাত্র ব্যক্তি যিনি একই সময়ে মুসলিম লীগ এর প্রেসিডেন্ট এবং কংগ্রেস এর জেনারেল সেক্রেটারি ছিলেন । ১৯১৮ -১৯ সালে জওহরলাল নেহেরু ছিলেন ফজলুল হকের ব্যক্তিগত সচিব ।

১৯৩৭ এর নির্বাচনে শেরে বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক ঘোষণা দিয়েছেন নির্বাচনে জিতলে তিনি জমিদারি প্রথা চিরতরে উচ্ছেদ করবেন।
তিনি যাতে নির্বাচিত হতে না পারেন তার জন্য সারা বাংলাদেশ আর কলকাতার জমিদাররা একত্র হয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করেছেন। লাভ হয়নি — কৃষকরা তাদের নেতাকে ভোট দিয়েছেন।

মুসলিম লীগ এর লাহোর অধিবেশনে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বক্তব্য দিচ্ছেন । হঠাৎ করে একটা গুঞ্জন শুরু হলো, দেখা গেল জিন্নাহর বক্তব্যের দিকে কারও মনযোগ নাই । জিন্নাহ ভাবলেন, ঘটনা কী ? এবার দেখলেন, এক কোণার দরজা দিয়ে ফজলুল হক সভামঞ্চে প্রবেশ করছেন, সবার আকর্ষণ এখন তার দিকে । জিন্নাহ তখন বললেন — When the tiger arrives, the lamb must give away. এই সম্মেলনেই তিনি উত্থাপন করেছিলেন ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব ।

১৯৪০ সালের ২২-২৪ শে মার্চ লাহোরের ইকবাল পার্কে মুসলিম লীগের কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। এই কনফারেন্সে বাংলার বাঘ আবুল কাশেম ফজলুল হক ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তিনি তার প্রস্তাবে বলেন, হিন্দু সাম্প্রদায়িকতার বাস্তবতায় হিন্দু মুসলিম একসাথে বসবাস অসম্ভব। সমাধান হচ্ছে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে একটি স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র এবং পূর্বাঞ্চলে বাংলা ও আসাম নিয়ে আরেকটি স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে।

পাঞ্জাবের মওলানা জাফর আলী খান, সীমান্ত প্রদেশের সর্দার আওরঙ্গজেব, সিন্ধের স্যার আব্দুল্লাহ হারুন, বেলুচিস্তানের কাজী ঈসা ফজলুল হকের প্রস্তাব সমর্থন করেন। কনফারেন্সে এই প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হয়।

লাহোর প্রস্তাব উত্থাপনের সময়ে হিন্দুপ্রধান প্রদেশগুলোতে মুসলিম নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে থাকার কারণে ফজলুল হক খুবই উদ্বিগ্ন এবং কিছুটা উত্তেজিত ছিলেন। তিনি তার বক্তব্যে একবার বলেন, ‘ আমি আগে মুসলিম, পরে বাঙালী (muslim first, bengali afterwards)’। বক্তৃতার এক পর্যায়ে এসে বলেন, ‘কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলোতে যদি আর কোনো মুসলিম নির্যাতিত হয় তাহলে আমি বাংলার হিন্দুদের উপর তার প্রতিশোধ নেব।’

যে ফজলুল হক তিন বছর আগে সোহরাওয়ার্দী, নাজিমউদ্দিনকে রেখে শ্যামাপ্রসাদের সাথে কোয়ালিশন সরকার গঠন করেছেন সেই ফজলুল হকের মুখে এমন বক্তব্য তখনকার ভারতে ব্যাপক আলোড়ন সৃাষ্ট করেছিল।

বর্তমানে যে পাকিস্তান রাষ্ট্র তার ভিত্তি হচ্ছে লাহোর প্রস্তাব। তাই ২৩ শে মার্চ কে পাকিস্তানে প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

কিন্তু লাহোর প্রস্তাব পাশ হওয়ার কয়েকদিন পরে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ চালাকির আশ্রয় নেন। তিনি বলেন, প্রস্তাবটি টাইপ করার সময়ে ভুল করে muslim majority states লেখা হয়েছে; আসলে হবে state । জিন্নাহর ধারণা ছিল, দেন-দরবার করে দুই পাশে দুইটা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। তাই স্টেটস এর জায়গায় স্টেট লিখে একটা মুসলিম মেজরিটি রাষ্ট্র করতে হবে।

জিন্নাহর এই ধূর্ততার কারণে ফজলুল হক তার সাথে পাকিস্তান আন্দোলনে সম্পৃক্ত হননি। তরুণ শেখ মুজিব যখন জিন্নাহর নেতৃত্বে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তখন অভিজ্ঞ ফজলুল হক পাকিস্তানের বিরোধিতা করেছেন। ‘তিঁনি অনুমান করতে পেরেছিলেন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হলে কী কী দুর্দশা হবে বাংলার মানুষের। তাই তিঁনি পাকিস্তানের বিরোধিতা করেছেন। অসমাপ্ত আত্মজীবনী তে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন…….

বাংলার মাটিও তাকে ভালোবেসে ফেলেছিল। যখনই হক সাহেবের বিরুদ্ধে কিছু বলতে গেছি, তখনই বাধা পেয়েছি। একদিন আমার মনে আছে একটা সভা করছিলাম আমার নিজের ইউনিয়নে, হক সাহেব কেন লীগ ত্যাগ করলেন, কেন পাকিস্তান চাননা এখন? কেন তিনি শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির সাথে মিলে মন্ত্রীসভা গঠন করেছেন? এই সমস্ত আলোচনা করছিলাম, হঠাৎ একজন বৃদ্ধ লোক যিনি আমার দাদার খুব ভক্ত, আমাদের বাড়িতে সকল সময়েই আসতেন, আমাদের বংশের সকলকে খুব শ্রদ্ধা করতেন- দাঁড়িয়ে বললেন,”যাহা কিছু বলার বলেন, হক সাহেবের বিরুদ্ধে কিছুই বলবেন না। তিনি যদি পাকিস্তান না চান, আমরাও চাই না। জিন্নাহ কে? তার নামও তো শুনি নাই। আমাদের গরিবের বন্ধু হক সাহেব।” এ কথার পর আমি অন্যভাবে বক্তৃতা দিতে শুরু করলাম। সোজাসুজিভাবে আর হক সাহেবকে দোষ দিতে চেষ্টা করলাম না। কেন পাকিস্তান আমাদের প্রতিষ্ঠা করতেই হবে তাই বুঝালাম। শুধু এইটুকু না, যখনই হক সাহেবের বিরুদ্ধে কালো পতাকা দেখাতে গিয়েছি, তখনই জনসাধারণ আমাদের মারপিট করেছে। অনেক সময় ছাত্রদের নিয়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছি, মার খেয়ে।”

বঙ্গবন্ধু ‘ র বাবা বলেছেন , ” বাবা তুমি যাই করো শেরে বাংলার বিরুদ্ধে কিছু বলো না। শেরে বাংলা এমনি এমনি শেরে বাংলা হয়নি। ”

ফজলুল হক জানতেন মাঝখানে ভারতকে রেখে পশ্চিম আর পূর্বে জোড়া দিয়ে এক পাকিস্তান করলে তা কখনো টিকবে না। ‘ জিন্নাহ আমার লাহোর প্রস্তাবের খৎনা করে ফেলেছে -বলে ফজলুল হক পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সক্রিয় থাকেননি।

১৯৪৬ এ এসে জিন্নাহ সোহরাওয়ার্দীর দুই বাংলা একত্র করে স্বাধীন যুক্তবাংলার দাবী মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু কংগ্রেসের বিরোধিতার কারণে শেষ পর্যন্ত বাংলাও ভাগ করতে হল।

ফজলুল হক বলেছিলেন, একটি পাকিস্তান কখনও টিকবে না। বাংলা এবং আসামকে নিয়ে পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র করতে হবে।

১৯৭১ সালে এসে দেখা গেল, ফজলুল হকের আশঙ্কা এবং ভবিষ্যতবাণী সঠিক। ১৯৭১ এর মত এমন কিছু যে ঘটবে শেরে বাংলা ফজলুল হক তা আঁচ করতে পেরেছিলেন ১৯৪০ সালেই। তাই তিনি ১৯৪০ সালেই বাংলা আর আসাম নিয়ে পৃথক রাষ্ট্র করতে চেয়েছিলেন। অর্থাৎ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম স্বপ্নদ্রষ্টা হলেন শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক।

১৯৭১ এর যুদ্ধ হল ফজলুল হকের লাহোর প্রস্তাবের বাস্তবায়ন। লাহোর প্রস্তাব ফজলুল হক যেভাবে উত্থাপন করে ছিলেন সেভাবে মানলে একাত্তরে এই দেশে রক্তগঙ্গা বইত না।

পেশাজীবনে ‘কলকাতা হাইকোর্টের নামকরা আইনজীবী ছিলেন। একদিন তাঁর জুনিয়র হাতে একগাদা পত্রিকা নিয়ে এসে বললেন, ” স্যার , দেখুন , কলকাতার পত্রিকাগুলো পাতার পর পাতা লিখে আপনার দুর্নাম ছড়িয়ে যাচ্ছে — আপনি কিছু বলছেন না । ” তিঁনি বললেন, ” ওরা আমার বিরুদ্ধে লিখছে তার মানে হল আমি আসলেই পুর্ব বাংলার মুসলমান কৃষকদের জন্য কিছু করছি। যেদিন ওরা আমার প্রশংসা করবে সেদিন মনে করবে বাংলার কৃষক বিপদে আছে। ”

মুহাম্মদ ওয়াজেদ আলী বরিশাল বারের নামকরা উকিল । একবার ওয়াজেদ আলী র প্রতিপক্ষ মামলার ইস্যু জটিল হওয়ার কারণে কলকাতা থেকে তরুণ উকিল ফজলুল হককে নিয়ে আসে ওয়াজেদ আলীকে মোকাবেলা করার জন্য । ফজলুল হক ওই সময়ে কেবলমাত্র ফজলুল হক , শেরে বাংলা তখনও হননি । তিনি মামলা লড়তে এসেছেন , কিন্তু বিপক্ষের উকিল কে সেই খবর জানতেন না ।

কোর্টে এসে দেখলেন বিপক্ষে তার বাবা ওয়াজেদ আলী দাঁড়িয়েছেন । ফজলুল হক স্বাভাবিকভাবে যুক্তিতর্ক শুরু করলেন ।

এক পর্যায়ে ওয়াজেদ আলী আদালতকে উদ্দেশ করে বললেন , “ ইনি যা বলছেন তা আইনসংগত না । আইনটা হল আসলে এরকম এরকম ……. ইনি নতুন উকিল তো আইন কানুন ভালো বোঝেন না । “

উত্তরে ফজলুল হক বললেন , “ তিনি পুরাতন অভিজ্ঞ উকিল হলে কী হবে ? তিনি হচ্ছেন কৃষকের ছেলে উকিল ( প্রকৃতপক্ষে তার দাদা আকরাম আলী ছিলেন ফারসি ভাষার পন্ডিত ) , তিনি আইনের কী আর বোঝেন ? আমি হচ্ছি উকিলের ছেলে উকিল , যুক্তি আমারটাই ঠিক । “

খ্যাতির সাথে ৪০ বছর ধরে কলকাতা হাইকোর্টে ওকালতি করেছেন । আইন পাশ করার আগে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিজিক্স কেমেস্ট্রি আর ম্যাথমেটিক্সে ট্রিপল অনার্স করেছেন । মাস্টার্স করেছেন ম্যাথমেটিক্স এ । ছোটবেলায় একবার পড়ে বইয়ের পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ফেলার গল্প রূপকথার মত এদেশের সবার মুখে মুখে ।

বাংলার প্রাদেশিক পরিষদের বাজেট অধিবেশনে একজন এম পি শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক কে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে বক্তব্য দিতে লাগলেন । ঐ এম পি শেরে বাংলার বিরুদ্ধে গানও লিখে এনেছেন এবং সংসদের বাজেট বক্তুতা করতে গিয়ে সেই গানটি হেলেদুলে কর্কশ কণ্ঠে গাইতে শুরু করলেন । এরকম পরিস্থিতিতে যে কারও পক্ষে মাথা ঠাণ্ডা রাখা মুশকিল ।

শেরে বাংলা ঐ এমপি র বক্তব্যের মধ্যেই বলে উঠলেন — “Mr Speaker, I can jolly well face the music, but I cannot face a monkey.”

এবার ঘটলো মারাত্মক বিপত্তি । তার মত নেতার কাছ থেকে এরকম মন্তব্য কেউ আশা করেনি । এদিকে , ঐ এম পি স্পিকারের কাছে দাবী জানালেন — এই মুহূর্তে ক্ষমা চাইতে হবে এবং এই অসংসদীয় বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে । স্পিকার পড়লেন আরেক বিপদে — তিনি কীভাবে এত বড় একজন নেতাকে এই আদেশ দেবেন ।

শেরে বাংলা ছিলেন ঠাণ্ডা মাথার বুদ্ধিমান মানুষ । তিনি উঠে দাঁড়িয়ে বললেন — ” Mr. Speaker, I never mentioned any honourable member of this House. But if any honourable member thinks that the cap fits him, I withdraw my remark.”

‘জ্ঞানতাপস প্রফেসর আবদুর রাজ্জাক তাঁর জীবনী লিখতে চান জেনে বলেছিলেন, ” রাজ্জাক, সত্যি বলো, তোমার মতলবটা আসলে কী ? ” প্রফেসর রাজ্জাক বললেন, ” আমার এই বিষয়টা খুব ভালো লাগে —- আপনি যখন ইংরেজদের সাথে চলেন তখন মনে হয় আপনি জাত ইংরেজ। যখন বরিশালে আসেন মনে হয় আপনি বহুবছর ধরে নিজেই কৃষিকাজ করেন। আবার যখন কলকাতায় শ্যামাপ্রসাদ বাবুকে ভাই বলে ডাক দেন তখন আপনাকে আসলেই হিন্দু মনে হয়। আবার যখন ঢাকার নবাব বাড়িতে ঘুড়ি উড়ান তখন মনে হয় আপনিও নবাব পরিবারের একজন । নিজেকে কেউ আপনার মত এত পাল্টাতে পারে না। আপনি যাই বলেন, সত্য হোক — মিথ্যা হোক, মানুষ বিনা দ্বিধায় তা বিশ্বাস করে। ”

মহাত্মা গান্ধী র নাতি রাজমোহন গান্ধী তার বইতে লিখেছেন — তিন নেতার মাজারে তিনজন নেতা শায়িত আছেন যার মধ্যে দুজন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন । একজনকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে দেওয়া হয়নি, অথচ তিনিই ছিলেন সত্যিকারের বাঘ ।

কিন্তু এটা তার জীবনের কোনো অপূর্ণতা নয়, একমাত্র রাষ্ট্রপতি হওয়া ছাড়া সম্ভাব্য সব ধরনের পদে তিনি অধিষ্ঠিত ছিলেন জীবনের কোনো না কোনো সময়ে । তিনি ছিলেন বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী, পূর্ব বাংলার তৃতীয় মুখ্য মন্ত্রী; পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পূর্ব – পাকিস্তানের গভর্নর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ।

সর্বভারতীয় রাজনীতি ছেড়ে শুধু পূর্ববাংলার রাজনীতি কেন করছেন এই প্রশ্নের উত্তরে ফজলুল হক বলেছিলেন — এরোপ্লেন এ উঠলে নিচের জিনিস ছোট আর ঝাপসা দেখাতে পারে, তাই আমি মাটিতেই থাকছি । রাজনীতির এরাপ্লেন এ না চড়লেও সৌদি বাদশাহ সউদ ফজলুল হকের সাথে একটা মিটিং করার জন্য নিজের ব্যক্তিগত বিমান পাঠিয়েছিলেন ফজলুল হককে নিয়ে যাওয়ার জন্য ।

অসীম সাহসী এই মানুষটি আমাদেরকে সকল অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে নির্ভয়ে প্রতিবাদ করার কথা বলেছেন। বাঙালী জাতিকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন অনেক আগেই । তিনি বলেছেন, যে জাতি তার বাচ্চাদের বিড়ালের ভয় দেখিয়ে ঘুম পাড়ায়, তারা সিংহের সাথে লড়াই করা কিভাবে শিখবে ?

আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় ছিলেন ফজলুল হকের শিক্ষক। আবুল মনসুর আহমদের সাথে আলাপচারিতায় ফজলুল হক সম্পর্কে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের মন্তব্য :

“ফযলুল হক মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত খাঁটি বাঙ্গালী।সেই সঙ্গে ফযলুল হক মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত খাঁটি মুসলমান।খাঁটি বাঙ্গালীত্বের সাথে খাটি মুসলমানত্বের এমন অপূর্ব সমন্বয় আমি আর দেখি নাই। ফযলুল হক আমার ছাত্র বলে বলছিনা, সত্য বলেই বলছি।খাঁটি বাঙ্গালীত্ব ও খাটি মুসলমানত্বের সমন্বয়ই ভবিষ্যৎ বাঙ্গালীর জাতীয়তা।”

রেফারেন্স: আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর।(পৃষ্ঠা ১৩৫-৩৬)

পহেলা বৈশাখের সরকারি ছুটি, বাংলা একাডেমির প্রতিষ্ঠা এই ফজলুল হকের অবদান । কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে ফজলুল হক মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন কারণ কৃষক–শ্রমিক সংখ্যাগরিষ্ঠ এই উপমহাদেশে মাত্র একজন ব্যক্তি কৃষকদের জন্য রাজনীতি করেছেন । তিঁনি হলেন — শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ।

১৯৪৮ সালে ঢাকায় এসেছিলেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার কথা বললে ছাত্ররা তীব্র প্রতিবাদ করে। জিন্নাহ ছাত্রদের সাথে বৈঠকও করেন। কিন্তু ছাত্ররা ছিল নাছোড়বান্দা। জিন্নাহর ধারণা হলো, ফজলুল হক ছাত্রদেরকে উসকানি দিচ্ছেন। ফজলুল হকের বুদ্ধিতে ছাত্ররা উর্দুর বিরোধিতা করছে। জিন্নাহ এবার ফজলুল হকের সাথে দেখা করতে চাইলেন। কিন্তু ফজলুল হক দেখা করতে রাজি হলেন না। ফজলুল হক জিন্নাহকে ব্যক্তিগতভাবে অপছন্দ করতেন।

জিন্নাহর পীড়াপিড়িতে শেষ পর্যন্ত রাজি হলেন ফজলুল হক। বন্ধ দরজার আড়ালে কথা হয়েছিল দুই মহান নেতার। কিন্তু ইংরেজিতে কী ধরনের বাক্য বিনিময় হয়েছিল তাদের মধ্যে পরবর্তীতে তা লিখেছেন ফজলুল হকের একান্ত সহকারী আজিজুল হক শাহজাহান —

জিন্নাহ : পাকিস্তান তো তুমি কোনোদিন চাওনি। সব সময়ে বিরোধিতা করে এসেছো।

হক : প্রস্তাবটি তো আমিই করেছিলাম। পরে ওটার খতনা করা হয়েছে। আমি এটা চাইনি।

জিন্নাহ: পাকিস্তানের এই অংশ বেঁচে থাক তা তুমি চাও না। তাই ভারতের কংগ্রেসের টাকা এনে ছাত্রদের মাথা খারাপ করে দিয়েছ। তারা আমাকে হেস্তনেস্ত করছে।

হক: আমি এখানে কোনো রাজনীতি করি না। হাইকোর্টে শুধু মামলা নিয়ে চিন্তা করি। আইন আদালত নিয়ে থাকি ।

জিন্নাহ : জানো, তুমি কার সাথে কথা বলছো ?

হক: আমি আমার এক পুরোনো বন্ধুর সাথে কথা বলছি।

জিন্নাহ: নো নো, ইউ আর টকিং উইথ দ্য গভর্নর জেনারেল অব পাকিস্তান ।

হক: একজন কনস্টিটিউশনাল গভর্নর জেনারেলের ক্ষমতা আমি জানি।

জিন্নাহ: জানো, তোমাকে আমি কী করতে পারি ?

হক: (ডান হাতের বুড়ো আঙুল দেখিয়ে) তুমি আমার এ্যাই করতে পারো। মিস্টার জিন্নাহ, ভুলে যাওয়া উচিত নয় এটা বাংলাদেশ এবং তুমি রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সাথে কথা বলছ।

(আজিজুল হক শাহজাহানের কলাম,অমরাবতী প্রকাশনী,ঢাকা;পৃষ্ঠা ৪৬-৪৭)
Collected.

সরকারের তিন পদক্ষেপ ডলার সাশ্রয়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণ, সুদহার বৃদ্ধি, ঋণপ্রবাহ কমানো * ডলারের জোগান বাড়লেই অনেক সমস্যা কেটে যাবে -ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ

বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে দেশের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় মৌলিক তিনটি পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ডলার সাশ্রয়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণ, সুদহার বৃদ্ধি এবং সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির আওতায় ঋণপ্রবাহ কমানো।

এছাড়া আরও কিছু সহযোগী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তবে এর মধ্যে একটি উদ্যোগের কারণে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো ঠিক আছে। ভোগ্যপণ্যের চাহিদা কমানো হচ্ছে। এতে আমদানি ব্যয় কমানোর ফলে রিজার্ভে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। লোডশেডিংয়ের কারণে জ্বালানি আমদানি কমবে। এতেও ডলার সাশ্রয় হবে। অন্যদিকে বাজারে টাকার সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ার নীতি গ্রহণ করা হয়েছে।

ফলে আমদানি খাতে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদাও কমবে। তবে এতে বেসরকারি খাতের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা আছে। যা কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এদিকে ঋণের সুদের হার বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এতে ঋণের খরচ বেড়ে যাবে। ফলে ঋণপ্রবাহ কমবে।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, মূল সমস্যা ডলার। এখন ডলারের জোগান বাড়াতে হবে। এটি বাড়ানো সম্ভব হলেই অনেক সমস্যা কেটে যাবে। কিন্তু ডলারের জোগান বাড়াতে হলে প্রথমে পাচার বন্ধ করতে হবে। তারপর রেমিট্যান্সে হুন্ডি বন্ধ করতে হবে। তাহলে ডলারের জোগান বাড়বে।

এর পাশাপাশি আমদানি নিয়ন্ত্রণ, দেশের ভেতরে আমদানির বিকল্প পণ্য উৎপাদন ও বাজার তদারকি বাড়াতে হবে। তাহলে পণ্যমূল্য কমবে। এতে মূল্যস্ফীতির হারও সহনীয় হবে। কিন্তু ইতোমধ্যে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এতে বেসরকারি খাতের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ফলে কর্মসংস্থান কমবে, মানুষের আয়ও কমবে। যা মূল্যস্ফীতির আঘাতকে আরও বড় করে তুলবে স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষের কাছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে অর্থনৈতিক চাপ কমে আসবে। কেননা ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে পণ্যের দাম কমে যাবে। তখন অর্থনৈতিক চাপও কমবে।

এদিকে রিজার্ভ সাশ্রয় করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় কিছুটা কমানো সম্ভব হয়েছে। কিন্তু চাপ পুরোপুরি কমেনি। আমদানি ব্যয়ের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ হচ্ছে জ্বালানি খাতে। এ খাতে ব্যয় কমাতে লোডশেডিং করা হচ্ছে। জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ করা হয়েছে। ফলে জ্বালানি খাতে ডলার সাশ্রয় হবে।

সূত্র জানায়, করোনার পরে হঠাৎ পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে সব পণ্যের দাম বেড়ে যায়। একই সঙ্গে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা আরও বাধাগ্রস্ত হয়। এতে পণ্যের দামও বাড়ে। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ায় আমদানি ব্যয় বেড়ে যায় লাগামহীনভাবে। আমদানি ব্যয় যেভাবে বেড়েছে সেভাবে রপ্তানি আয় বাড়েনি।

এদিকে রেমিট্যান্স প্রবাহে ঘাটতি দেখা দেয়। এসব মিলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। এতে বাজারে ডলারের দাম হু-হু করে বাড়ছে। গত এক বছরের ব্যবধানে ডলারের দাম ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা থেকে বেড়ে ৯৪ টাকা ৪৫ পয়সায় উঠেছে। ওই সময়ে টাকার মান কমেছে ৯ টাকা ৬৫ পয়সা। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর হিসাবে টাকার মান আরও বেশি কমেছে।

দেশে এখন সবচেয়ে বড় সংকট বৈদেশিক মুদ্রার জোগানে। চাহিদা অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রার জোগান মিলছে না। ফলে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৩৫ কোটি ডলার ঘাটতি হচ্ছে। এ ঘাটতি মেটানো হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ডলার দিয়ে। এতে রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। গত বছরের আগস্টে রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলারে উঠেছিল। এখন তা কমে ৩ হাজার ৯৬০ কোটি ডলারে নেমে গেছে।

এদিকে আগামীতে আমদানির দেনা পরিশোধের চাপ আরও বাড়ছে। কেননা করোনার সময়ে যেসব এলসির বা বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ স্থগিত হয়েছিল সেগুলো এখন দিতে হচ্ছে। এতে চাপ আরও বাড়ছে। বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় করতে আমদানি নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এলসির ঊর্ধ্বগতি কমানো সম্ভব হয়েছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতেও নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

এতে আগামীতে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে বলে আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে রপ্তানি আয় বড় চ্যালেঞ্জে পড়তে যাচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ইউরোপের অর্থনীতিতে ধস নেমেছে। প্রায় সব দেশই সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করছে। ঋণের সুদের হার বাড়াচ্ছে। ইউরোর দাম কমে গেছে। এতে আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। ফলে তারা আমদানি কমানোর দিকে এগোচ্ছে। দেশে রপ্তানি আয়ের ৫৪ শতাংশ ইউরোপ থেকে আসে। ফলে এ খাতে বড় ধাক্কা আসতে পারে।

বেশি দামে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করায় দেশে এসে ওইসব পণ্য মূল্যস্ফীতির হার বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ খাতে মূল্যস্ফীতি কমাতে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে বাজারে টাকার প্রবাহ কমানোর নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে নীতি সুদের হার দুই দফায় কমানো হয়েছে। রপ্তানি ঋণের সুদের হার ১ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।

তবে এখনও ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়ানো হয়নি। তবে এ খাতেও ঋণের সুদের হার বাড়ানোর জন্য প্রচণ্ড চাপ আছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর। কেননা ব্যাংকে এখন আমানত কমে যাচ্ছে। আমানত বাড়াতে হলে সুদের হার বাড়াতে হবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ ও আমানতের ক্ষেত্রে ৯-৬ নীতি (ঋণের সুদ ৯ শতাংশ ও আমানতের সুদ ৬ শতাংশ) গ্রহণ করায় এখন ব্যাংকগুলো আমানতের সুদের হার বাড়াতে পারছে না। আমানতের সুদের হার বাড়লে ঋণের সুদের হারও বাড়াতে হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশে ঋণের সুদের হার কমিয়ে বা বাড়িয়ে ঋণপ্রবাহ বাড়ানো বা কমানো সম্ভব হয় না। কেননা গত দুই বছর ধরে ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তারপরও বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়েনি। করোনার সময় কিছু খাতে প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে ৪ শতাংশ সুদে জামানতবিহীন ঋণ দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেগুলোতেও ঋণপ্রবাহ বাড়েনি।

ব্যান্ড মেঘদল এবং তাদের নিয়ে মামলায় সরকারি হস্তক্ষেপ

সামিউজ্জামান সিদ্দিকী, যুক্তরাজ্য

বাংলাদেশে মেঘদল ব্যান্ডের নামে ধর্ম অনুভূতিতে আঘাতের একটা মামলার আবেদন আদালত গ্রহণ করে বাংলাদেশের ‘এলিট’ তদন্তকারী সংস্থা পিবিআইকে সেই মামলা তদন্তের নির্দেশ দিছে যেইটা নিয়ে বাংলার সুশীল সমাজ মামলার আবেদন নিয়ে যে গেছে আদালতে তাকে তুলোধুনা করতেছে।
ধরেন ছোটবেলায় আমরা অসুস্থ হইলে স্কুলে আবেদন করতাম প্রধান শিক্ষক বরাবর ছুটির জন্য। স্যার যদি মনে করতেন যে ছুটি দেয়া যায় দিতেন, যদি মনে করতেন ব্যাপারটা সিরিয়াস না ছুটি দিতেন না।
আবেদন আপনি করতেই পারেন, সেইটা গ্রহণ করা হবে, নাকি হবে না, এইটা তো আদালতের ব্যাপার। এই আদালতপাড়ায় গত দশ বছরে বিএনপি নেতাদের হাজারের উপর আবেদন, রিট পত্রপাঠ খারিজ হয়ে গেছে। বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদন তো শোনারও প্রয়োজন মনে করে না অনেক বিচারক। সেইখানে আদালত এই মামলা গ্রহণ করে পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দিছে।
এইবার আসা যাক মামলার ব্যাপারে। মামলা গ্রহণ করা হইছে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ২৯৫(ক) ধারা এবং ১০৯ ধারায়। এইখানে ২৯৫(ক) ধারাটা হচ্ছে ধর্মীয় অবমাননার। এই ধারাটা বাংলাদেশের আইনে ১৯৭৩ সালে, মানে হচ্ছে আমাদের আম-বাম (আওয়ামী-সিপিবি জোট) আমলে, যখন বাংলাদেশে আম-বামদের ভাষায় “ধর্মনিরপেক্ষতার স্বর্ণযুগ” ছিল।
তাহলে ব্যাপারটা খেয়াল করি। বাংলাদেশের ব্যান্ড মেঘদলের বিরুদ্ধে একটা মামলা হইছে, মামলার আইন শেখ মুজিবের আমলে করা। মামলা নিছে শেখ হাসিনার আমলের আদালত। কিন্তু এইখানে শেখের বাড়ির কোন দোষ নাই। দোষ হচ্ছে সব অ্যাডভোকেট ইমরুল আর ধর্মান্ধদের। “প্রগতিশীল বাংলাদেশ” রক্ষায় যাদেরকে নাকি আবার “নির্মূল” অর্থাৎ তাদের মূল উৎপাটন করে দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে।
মেঘদল ব্যান্ডের প্রধান ব্যক্তি হইতেছে আওয়ামী লীগের বেতনভোগী কর্মচারী, মুজিব কমিক্সের সম্পাদক শিবু কুমার শীল। আপনাদের আসলেই মনে হয় যে এই লোকের নামে মামলা করে সেইটা এই আইনজীবী চালাইতে পারবে?
তাহলে ঘটনাটা এইখানে কী?
ঘটনাটা আমি যেইটা বুঝি তা হলো এই মামলাটাকে পুঁজি করে আওয়ামী লীগ মূলত এক ঢিলে দুই পাখি মারবে। ০১) প্রগতিশীলরা এখন শিবু শীলকে বাঁচাতে দৌড়ঝাঁপ করবে, তাদেরকে বুঝানো হবে আওয়ামী লীগ না থাকলে তাদের অস্তিত্ব হুমকিতে পড়বে। ০২) এই সুযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান জনগোষ্ঠীকে দুইটা গালি দেয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। তাই খেয়াল করে দেখেন, সুশীলরা এখন সর্বশক্তি নিয়ে পুরোদমে পিছনে লাগছে এক উঠতি আইনজীবীর যার দায় হয়ত এখানে ৫% আর কথিত ধর্মান্ধদের, যারা হয়তো ফেসবুকে দুই-চারটা কমেন্ট করছে।
অন্যদিকে ৯৫% দায় হচ্ছে যেই শেখ হাসিনা এবং তার নিয়ন্ত্রণে থাকা আদালতের, তাদের নিয়ে আপনি সুশীলদের কোন টু শব্দও করতে দেখবেন না। কারণ এদের চোখে এই দেশে আল্লাহ-রসূল-কালেমা নিয়ে সমালোচনা করা যায়, জিয়া পরিবারের নামে গালাগালি করা যায়, নোবেল বিজয়ীকে সংসদে সুদখোর গালি দেয়া যায়, একজন সাংবাদিককে পাগল বলা যায়- শুধু শেখ পরিবারকে নিয়ে কিছু বলা যায় না। তখন সুশীলদের প্রশ্ন কমন পড়ে না।

 

সরকারি সাংবাদিক

এস এম ইকবাল মাহমুদ,যুক্তরাজ্য

সাংবাদিকদের বলা হয় সরকারের “চিরস্থায়ী সমালোচক”। সমালোচনা বা প্রতিবেদন করার কারণে অতীতে বহুবার সাংবাদিকদের হেনস্থা করা হইছে। শেখ কামাল তার বাবার আমলে আহমদ ছফাকে “ভদ্র সমাজে উচ্চারণ করা যায় না এমন গালিও” দিয়েছে। কিন্তু আগে, এমনকি শেখ মুজিবের আমলেও, সাংবাদিকদের হেনস্থা করা হইলে সাংবাদিকরা প্রতিবাদ করতো। সরকারের সমালোচনা আরো বেশি করতো।
 
কিন্তু এখন পুরা উলটো চিত্র। সাংবাদিকরা সমালোচনা করা কিংবা সরকারের বিরুদ্ধে যায় এমন রিপোর্ট করাই ভুলে গেছে। ব্যাপারটা শুধু সেন্সরশিপ, ভয়, আইন বা সেলফ সেন্সরশিপ দিয়ে আমি কখনোই ব্যাখা করতে পারি নাই।
 
তাহলে বিষয়টা কী? বিষয়টা আমি পরিষ্কার হলাম ডাঃ তৃণা ইসলামের ঘটনা থেকে। চিন্তা করেন, শাকিল আহমেদ নামের একাত্তর টিভির এক সাংবাদিক, দুনিয়ার কোথাও যার দুই পয়সার ক্রেডিবিলিটিও নাই, সে কিনা বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব ইন্সটিটিউটে চাকরি করা একজন সরকারি ডাক্তারের চাকরি খেয়ে ফেলতেছে!
 
এমন ক্ষমতা অতীতে কোন সরকারের আমলে কোন সাংবাদিক ভোগ করছে? দেখাইতে পারবেন?
 
শেখ হাসিনার সরকার মূলত গত তের বছরে যেইটা করছে, তৃতীয় শ্রেণির কিছু সাংবাদিকদের বিভিন্ন চ্যানেল-পত্রিকার মালিক বানায় দিছে এবং চতুর্থ শ্রেণির কিছু সাংবাদিকদের দিছে এইগুলা চালাতে। তাদের একমাত্র কাজ হচ্ছে শেখ হাসিনার দালালি করা, এর বদলে এদের স্বাধীনতা দেয়া হইছে যা ইচ্ছা তাই করার, লিটারেলি। তাই দুই পয়সার সাংবাদিকরা এখন পরকীয়া করে আবার সেই অন্যায় ঢাকতে দেশের একজন সরকারি ডাক্তারের চাকরি খাইতে পারে।
 
চূড়ান্ত নোংরামিকে আশকারা দেয়ার মত এমন সরকার মাহফুজ-আনিস-শাকিলদের অতীতে কে দিছে, আর ভবিষ্যতেও বা কে দিবে? হাসিনার সমালোচনা করলে এদের সব পরকীয়া আর চাঁদাবাজির রেকর্ডগুলা বের হয়ে গেলে তখন কী একটা অবস্থা হবে ভাবা যায়?

ব্যান্ড মেঘদল এবং তাদের নিয়ে মামলায় সরকারি হস্তক্ষেপ

এস এম ইকবাল মাহমুদ,যুক্তরাজ্য

বাংলাদেশে মেঘদল ব্যান্ডের নামে ধর্ম অনুভূতিতে আঘাতের একটা মামলার আবেদন আদালত গ্রহণ করে বাংলাদেশের ‘এলিট’ তদন্তকারী সংস্থা পিবিআইকে সেই মামলা তদন্তের নির্দেশ দিছে যেইটা নিয়ে বাংলার সুশীল সমাজ মামলার আবেদন নিয়ে যে গেছে আদালতে তাকে তুলোধুনা করতেছে।
 
ধরেন ছোটবেলায় আমরা অসুস্থ হইলে স্কুলে আবেদন করতাম প্রধান শিক্ষক বরাবর ছুটির জন্য। স্যার যদি মনে করতেন যে ছুটি দেয়া যায় দিতেন, যদি মনে করতেন ব্যাপারটা সিরিয়াস না ছুটি দিতেন না।
আবেদন আপনি করতেই পারেন, সেইটা গ্রহণ করা হবে, নাকি হবে না, এইটা তো আদালতের ব্যাপার। এই আদালতপাড়ায় গত দশ বছরে বিএনপি নেতাদের হাজারের উপর আবেদন, রিট পত্রপাঠ খারিজ হয়ে গেছে। বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদন তো শোনারও প্রয়োজন মনে করে না অনেক বিচারক। সেইখানে আদালত এই মামলা গ্রহণ করে পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দিছে।
এইবার আসা যাক মামলার ব্যাপারে। মামলা গ্রহণ করা হইছে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ২৯৫(ক) ধারা এবং ১০৯ ধারায়। এইখানে ২৯৫(ক) ধারাটা হচ্ছে ধর্মীয় অবমাননার। এই ধারাটা বাংলাদেশের আইনে ১৯৭৩ সালে, মানে হচ্ছে আমাদের আম-বাম (আওয়ামী-সিপিবি জোট) আমলে, যখন বাংলাদেশে আম-বামদের ভাষায় “ধর্মনিরপেক্ষতার স্বর্ণযুগ” ছিল।
 
তাহলে ব্যাপারটা খেয়াল করি। বাংলাদেশের ব্যান্ড মেঘদলের বিরুদ্ধে একটা মামলা হইছে, মামলার আইন শেখ মুজিবের আমলে করা। মামলা নিছে শেখ হাসিনার আমলের আদালত। কিন্তু এইখানে শেখের বাড়ির কোন দোষ নাই। দোষ হচ্ছে সব অ্যাডভোকেট ইমরুল আর ধর্মান্ধদের। “প্রগতিশীল বাংলাদেশ” রক্ষায় যাদেরকে নাকি আবার “নির্মূল” অর্থাৎ তাদের মূল উৎপাটন করে দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে।
মেঘদল ব্যান্ডের প্রধান ব্যক্তি হইতেছে আওয়ামী লীগের বেতনভোগী কর্মচারী, মুজিব কমিক্সের সম্পাদক শিবু কুমার শীল। আপনাদের আসলেই মনে হয় যে এই লোকের নামে মামলা করে সেইটা এই আইনজীবী চালাইতে পারবে?
 
তাহলে ঘটনাটা এইখানে কী?
 
ঘটনাটা আমি যেইটা বুঝি তা হলো এই মামলাটাকে পুঁজি করে আওয়ামী লীগ মূলত এক ঢিলে দুই পাখি মারবে। ০১) প্রগতিশীলরা এখন শিবু শীলকে বাঁচাতে দৌড়ঝাঁপ করবে, তাদেরকে বুঝানো হবে আওয়ামী লীগ না থাকলে তাদের অস্তিত্ব হুমকিতে পড়বে। ০২) এই সুযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান জনগোষ্ঠীকে দুইটা গালি দেয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। তাই খেয়াল করে দেখেন, সুশীলরা এখন সর্বশক্তি নিয়ে পুরোদমে পিছনে লাগছে এক উঠতি আইনজীবীর যার দায় হয়ত এখানে ৫% আর কথিত ধর্মান্ধদের, যারা হয়তো ফেসবুকে দুই-চারটা কমেন্ট করছে।
 
অন্যদিকে ৯৫% দায় হচ্ছে যেই শেখ হাসিনা এবং তার নিয়ন্ত্রণে থাকা আদালতের, তাদের নিয়ে আপনি সুশীলদের কোন টু শব্দও করতে দেখবেন না। কারণ এদের চোখে এই দেশে আল্লাহ-রসূল-কালেমা নিয়ে সমালোচনা করা যায়, জিয়া পরিবারের নামে গালাগালি করা যায়, নোবেল বিজয়ীকে সংসদে সুদখোর গালি দেয়া যায়, একজন সাংবাদিককে পাগল বলা যায়- শুধু শেখ পরিবারকে নিয়ে কিছু বলা যায় না। তখন সুশীলদের প্রশ্ন কমন পড়ে না।