সাধারণ মানুষকে জিম্মি করার রাজনীতি

এস এম মামুন তালুকদার, যুক্তরাজ্য

আমরা এখন এমন এক সময়ের মধ্যে আছি যখন দেশ ও দেশের মানুষ এক চরম সংকটের সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তারা চাইলেও এর থেকে পরিত্রান মিলছে না। দেশের সাধারণ মানুষ আজ এই অবৈধ সরকারের কাছে জিম্মি। গণতন্ত্র আজ বিলুপ্ত, জনগনের বাক স্বাধীনতা ক্ষুন্ন করা হয়েছে, দেশের সমস্ত ক্ষেত্র আজ দুর্নীতিগ্রস্থ, সুদ-ঘুষের বানিজ্য, বেকার সমস্যা, লাগামহীন বাজারদর মানে সবদিক দিয়েই জন সাধারণ এক সীমাহীন অস্থিরতার ম মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যার আশু সমাধান প্রয়োজন। দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্র‍শোজন যেখানে  জনগন শান্তিতে ভোট দিয়ে যোগ্য সরকার নির্বাচিত করতে পারে। যে সরকার গনতান্ত্রিকভাবে দেশ পপরিচালনা করবে এবং জনগনের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে।

দেশজুড়ে বিভিন্নরকম সমস্যা থাকলেও এর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ক্ষমতা-কেন্দ্রীক নির্বাচন, আর তাই শুধু নির্বাচন সংকটের সমাধান দিতে পারবেনা। এজন্য রাজনৈতিক অঙ্গনে দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারের লক্ষ্যে কিছু মৌলিক ক্ষেত্রে ঐক্যমত্য অর্জন অপরিহার্য। এর মধ্যে রয়েছে বর্তমান নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তন করে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির প্রর্বতন, এছাড়াও না-ভোটের পূন:প্রর্বতন এবং নির্বাচনী জোটের রাজনীতি বন্ধ করা উচিৎ। তবে সবথেকে বড় কথা প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার পূর্নবিন্যাস, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতার সীমারেখা নির্ধারণ করতে হবে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশের সকল বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন। এর মানে হলো অন্যান্য প্রশাসনের কোন ভূমিকা নেই। থাকলেও তারা সক্রিয় নয়। এছাড়াও দুই মেয়াদের বেশী এক ব্যাক্তি সরকার প্রধান হতে পারবেন না এমন নীতিমালা প্রনয়ণ করা প্রয়োজন। দলীয় প্রধান হয়েও একই সাথে সরকার প্রধানের পদাসীন হবার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। সংসদ বর্জনের সংষ্কৃতি আইন করে বন্ধ করতে হবে, একইসাথে সংসদ সদস্যদের নৈতিক আচরণবিধি প্রনয়ণ ও কার্যকর করতে হবে। দেশ এখন বিরোধী দলশুন্য। তাই সরকারও স্বেচ্ছাচারিতার চরম সীমায় গিয়ে জনগনকে জিম্মি করে রেখেছে। সংসদে বিরোধী দলের অংশগ্রহণের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে এমনকি বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন করতে হবে। তাছাড়া সংবিধানের ৭০নং অনুচ্ছেদের সংশোধনীসহ রাজনৈতিক দলে গণতান্ত্রিক চর্চা বিকাশের পথ প্রশস্ত করা প্রয়োজন। রাজনৈতিক কার্যক্রম ও আন্দোলনের আচরণবিধি প্রনয়ণ ও বাস্তবায়ণ করতে হবে যেন এরূপ কার্যক্রমের মাধ্যমে মানুষের মৌলিক অধিকার ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করার অপসংস্কৃতির অবসান হয়। সর্বোপরি ক্ষমতার রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে যে গগণচূম্বী সম্পদাহরণের সুযোগ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করছে তা নির্মূল করা।প্রয়োজন খুব শীগ্রই।

প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার ব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন ও নির্বাচন কমিশনের মত প্রতিষ্ঠানে দলীয় রাজনৈতিক প্রভাব বন্ধ করতে হবে। এই সংস্কারের তালিকা যত দীর্ঘই হোক, এবং আপাত দৃষ্টিতে যত অবাস্তবই মনে হোক না কেন,গণতন্ত্র ও জনস্বার্থে শুরু করতে হবে এখনই।কালক্ষেপনের সময় নেই। এই রাজনৈতিক অচলাবস্থা, একনায়কতন্ত্র, প্রতিহিংসার রাজনীতি বেশিদিন চলতে পারেনা। জনগনকে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। আর এজন্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিকল্প নেই।

রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে সমাধান যে অবশ্যই সম্ভব এটা সকলেই জানে। এজন্য বিশেষজ্ঞ মতামতের কোন প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন নেই কোন বিদেশীদের পরামর্শের কিংবা হহস্তক্ষেপের। দেশের যেকোন একজন সাধারন নাগরিকের দাবীই এরজন্য যথেষ্ট। আর তাই জাতীয় স্বার্থ ও জনগণের প্রত্যাশাকে অন্য সব কিছুর উর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ক্ষমতার এই নোংরা রাজনীতি যে কোন মূল্যে বন্ধ করতে হবে।

‘এমপি লীগে’ কোণঠাসা আওয়ামী লীগ

পটিয়া পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবদুল খালেক। ২০১২ সালে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জাতীয় পার্টির অর্থ সম্পাদক ছিলেন তিনি। সে সময় থেকে ২০১৬ পর্যন্ত দলটির পটিয়া পৌরসভা কমিটির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। কিন্তু এখন পুরোদস্তুর আওয়ামী লীগ নেতাই নয়, দলটির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে কাউন্সিলর হয়েছেন। সম্প্রতি ঘোষিত পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য মনোনীত হয়েছেন আবদুল খালেক।

পটিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মাহমুদুল হক। পটিয়ার সাবেক সাংসদ ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান জুয়েলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত মাহমুদুলও এখন উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য। জাতীয় পার্টি এবং বিএনপির অঙ্গ সংগঠন যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন পটিয়া থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও সংসদের বর্তমান হুইপ সামশুল হক চৌধুরী। অভিযোগ রয়েছে, তার হাত ধরেই আওয়ামী লীগে আসেন কাউন্সিলর আবদুল খালেক ও মাহমুদুল। শুধু তারাই নন, এক সময় জাতীয় পার্টি ও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন, বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন- এমন অনেক নেতাই সুযোগ বুঝে সাংসদ সামশুল হকের মাধ্যমে আওয়ামী লীগে ‘অনুপ্রবেশ’ করেছেন। এই তালিকা বেশ দীর্ঘ। দলে বিভিন্ন পদ দিয়ে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিতও করেছেন তাদের। দলের অনেকের অভিযোগ- এভাবে এলাকায় আওয়ামী লীগের পরিবর্তে ‘এমপি লীগ’ প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি।

জানতে চাইলে কাউন্সিলর আবদুল খালেক বলেন, ‘উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে রাখা হলেও এখন আমি রাজনীতিতে সক্রিয় নেই। জনপ্রতিনিধি হিসেবে মানুষের সেবা করে যাচ্ছি। এখন যা কিছু করছি সব পরকালের উদ্দেশ্যে।’

পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন সমকালকে বলেন, ‘পটিয়ায় প্রকৃত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের জায়গা নেই। সামশুল হক তিন দফায় পটিয়া থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। প্রথমবার নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করলেও পরবর্তী সময়ে আগের জাতীয় পার্টি ও বিএনপি থেকে সুবিধাবাদী লোকজনকে এনে আওয়ামী লীগে ভিড়িয়েছেন। পটিয়ায় রীতিমতো এমপি লীগ প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। এই অনুপ্রবেশকারী এমপি লীগের দাপটে দলের প্রকৃত নেতাকর্মীরা অসহায়, কোণঠাসা।’

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, ‘ক্লাব আর রাজনীতি- দুটি জায়গাতেই বিশৃঙ্খলা করছেন হুইপ সামশুল হক চৌধুরী। দলের গঠনতন্ত্র মানছেন না। এলাকায় ইচ্ছেমতো দলের বিভিন্ন কমিটি করছেন। এসব কমিটিতে রেখে দলে অনুপ্রবেশকারীদের পুনর্বাসন করছেন। তাই তার সুপারিশ করা কমিটিগুলো আমরা অনুমোদন দিচ্ছি না।’

দলের আরও অনেক নেতার দেওয়া তথ্যমতে, পটিয়া উপজেলার আওতাধীন একটি পৌরসভা ও ১৭টি ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের একটি অংশ জাতীয় পার্টি ও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। উদাহরণ দিতে গিয়ে তারা জানিয়েছেন, পটিয়া পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা আবু সৈয়দ একই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এই ওয়ার্ড থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিতও হয়েছেন তিনি। একইভাবে পৌরসভা বিএনপির সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করা ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর খোরশেদ গনি এখন পৌর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শফিউল আলম ১৯৯৬-০৭ সাল পর্যন্ত জাপার ছাত্র সংগঠন দক্ষিণ জেলা ছাত্র সমাজের সহসভাপতি ছিলেন। সম্প্রতি পৌর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ যে কমিটি গঠন করা হয়েছে তাতে সদস্য হিসেবে নাম রয়েছে তার। ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবদুল মান্নান ২০১৬ সালে পটিয়া পৌর জাপার যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। এখন পৌর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির সদস্য তিনি। পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রূপক কুমার সেনও এখন আওয়ামী লীগ করলেও এক সময় জাপার রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। বরলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন ইউনুস তালুকদার। এর আগে তিনি যুবদলের পৌর কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এভাবে আরও অনেক নাম এসেছে যারা এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও বিভিন্ন সময় তারা বিএনপি ও জাপার রাজনীতি করতেন।

পটিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম জানিয়েছেন, খোরশেদ গনি ও আবু সৈয়দ বিএনপির যেসব কমিটিতে ছিলেন সেই কমিটি এখনও বহাল রয়েছে। তাদের দল থেকে বহিস্কার করা হয়নি। তারা দলের রাজনীতি থেকে লিখিতভাবে ইস্তফা নেননি। তারপরও কীভাবে তারা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত হলেন এবং বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করছেন তা বোধগম্য নয়।

এসব বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে সামশুল হক চৌধুরী সমকালকে বলেন, ‘আমাকে অনেকেই বিএনপি ও জাপা নেতা বানিয়েছেন। যেকোনো সময় হয়তো তারা আমাকে জামায়াত নেতাও বানাবেন। একটি পক্ষ আমাকে অপদস্থ করতে বিভিন্ন ধরনের মনগড়া, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন কথাবার্তা বলছে। আমি কারও বিরুদ্ধে বলব না। আমি শুধু আল্লাহর কাছে বিচার দিচ্ছি। আর প্রধানমন্ত্রীর কাছেও বিচার চাইব।’

দেশে চলমান মাদক ও জুয়াবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানে গত ২১ সেপ্টেম্বর রাতে চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহরে আবাহনী ক্লাবে অভিযান চালায় র‌্যাব। এ ক্লাবটি ছাড়াও আরও অন্তত এক ডজন ক্লাবে অভিযান চালিয়েছে র‌্যাব ও পুলিশ। প্রায় সব ক্লাবেই জুয়ার আলামত পাওয়া যায়। আবাহনী ক্লাবের মহাসচিব হচ্ছেন হুইপ সামশুল হক চৌধুরী। ক্লাবে চালানো এই অভিযান নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করলে তীব্র সমালোচনা মুখে পড়েন তিনি।

দূর্নীতি ও বাংলাদেশ

এস এম মামুন তালুকদার, যুক্তরাজ্য

সাধারণ মানুষ প্রতিদিনের জীবনে প্রতিনিয়ত দুর্নীতি এবং অনিয়মের মুখোমুখি হচ্ছে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় গলদ থাকাই দুর্নীতি বাড়ার বড় কারণ । বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমি, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতির অভিযোগ বেড়েছে। মাঠ পর্যায় থেকেই দুর্নীতির অভিযোগ বেশি আসছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ তাদের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে দুর্নীতির হাজার হাজার অভিযোগ করেছে। এমনকি যারা দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনে সোচ্চার তাদের পক্ষ থেকে দুদকের প্রতি অভিযোগ করা হয়েছে বহুবার। তাদের অভিযোগ হলো দুদক সর্বদা রাজনৈতিক বিবেচনার প্রশ্ন আছে এমন বড় বড় ইস্যু এড়িয়ে গিয়ে ছোটখাটো বিষয়ে মামলা নিয়ে ব্যস্ত থাকছে। তবে দুদক তা বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।

মাঠ পর্যায় থেকে প্রতিনিয়ত দুর্নীতির অজস্র অভিযোগ পাওয়া যায়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ তাদের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে দুর্নীতির হাজার হাজার অভিযোগ করছে। তবে মিলছেনা এর প্রতিকার। এছাড়া টিআইবির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ দু’ধাপ এগিয়ে এখন ১৫ নম্বরে অর্থাৎ সূচকে অগ্রগতি হলেও দুর্নীতি দমনে গুণগত কোন পরিবর্তন আসেনি।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যদিও জানানো হয়েছে দুর্নীতি দমনে বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থে ব্যাপক অগ্রগতির কথা। তবে বাস্তবচিত্রে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। কেননা এখনো সঠিকভাবে অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে সরকারি এবং বেসরকারি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তথা পুরো দেশ জুড়ে দুর্নীতি ভয়াবহ পর্যায়েই রয়েছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্ট অনুযায়ী ২০০১ থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর বাংলাদেশ ছিল বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ। এরপরে ২০০৬ সালে তৃতীয়, ২০০৭ সালে সপ্তম ও গত বছর ছিল ১৩ তম অবস্থানে।

নানা উদ্যোগ আর দুর্নীতি দমন কমিশন সক্রিয় থাকার পরেও দুর্নীতি প্রতিরোধ কেন করা যাচ্ছে না তার দায় সরকারের উপরেই বর্তাবে।  সরকারী বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সেবা গ্রহীতাদের সচেতন হওয়াও অনেক জরুরী।

কেননা সরকারের পক্ষ থেকে যা-ই বলা হোক না কেন দুর্নীতি প্রসঙ্গে যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে সেই পুলিশ বাহিনীও আজ প্রশ্নবিদ্ধ। তারা মানুষের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ। এছাড়া পুলিশ বাহিনীর পর মানুষের বেশি অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে রাজউক, পাসপোর্ট অফিস, আয়কর অফিস কিংবা বিআরটিএর মতো সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব সরকারী অফিসগুলোরই যদি এই অবস্থা হয় তাহলে স্বায়ত্তশাসিত বা বেসরকারি অফিসগুলোতে কি হচ্ছে তা সহজেই অনুমেয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজনের কাছ থেকে জানা যায়,  রাজউক নিয়ে তার অভিজ্ঞতা মোটেও সুখকর নয়। তার কাছ থেকে জানা গেছে, রাজউকে টাকা ছাড়া কোন কাজই হয়না। তার মতো এরকম অনেকেই অহরহ হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অথচ সরকারের মুখে সেই একই মুখস্ত বুলি দুর্নীতি এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে।

মোহাম্মদ সোহেল নামক একজন ব্যক্তিগত গাড়ির চালকের সাথে কথা বলে জানা গেছে,  বিআরটিএ তে দালাল ছাড়া কাজ করানোই কঠিন। সরকারের নাকের ডগা দিয়ে সর্বত্রই চলছে ঘুষ বানিজ্য আর দালালির রমরমা ব্যবসা। আর সরকারী আমলারাও এই সুযোগে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। ঘুষের টাকায় তারা টাকার পাহাড় গড়ে তুলছে খুব সহজেই।

এরপর যদি পাসপোর্ট অফিসগুলোর কথা বলা হয় সেখানেও দেখা যাবে পরিস্থিতি  কিছুটা পরিবর্তন হলেও সেখানেও রয়েছে দুর্নীতির চর্চা। কয়েকটি পাসপোর্ট অফিস ঘুরে দেখা যায়, যারা নতুন আবেদনকারী তাদের জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশনে বেগ পেতে হয়, ঘুষ দিতে হয় তবেই মেলে পুলিশ ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেট।  আর ঢাকার বাইরের পাসপোর্ট কার্যালয়গুলো নিয়েও রয়েছে দুর্নীতির অসংখ্য  অভিযোগ।

অন্য আরেক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, পিরোজপুরে তার তিন আত্মীয়ের পাসপোর্ট করাতে ৩৩ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। এমনকি তার নিজের ও স্ত্রীর পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনে আসা পুলিশকে এক হাজার টাকা দিতে হয়েছে। এছাড়াও দুর্নীতির আরেকটি বড় ক্ষেত্র হলো আয়কর অফিস গুলো, যা উঠে এসেছে একজন আয়কর আইনজীবীর কথায়।

আর এসব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলে এটাই বলাই যায় যে সরকারি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোতে দুর্নীতির মাত্রা ব্যপক এবং ভয়াবহ রকম বিস্তৃত।

বাকশালী সরকারের তথ্য সন্ত্রাস ও অন্যান্য

মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম, যুক্তরাজ্য থেকে

দেশ নায়েক তারেক রহমানের ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশের সূত্র ধরে কিছু কথা বলবার প্রয়োজন রয়েছে। এই একনায়ক শেখ হাসিনা সরকার যেভাবে অবলীলায় মানুষের ব্যাক্তিগত তথ্য প্রকাশ করছে, পাচার করছে কিংবা ইতরামীর চূড়ান্ত করছে তা বর্ণনাতীত।

একটা পলিটিকালি ইনকারেক্ট কিংবা নৈতিকতার মাপকাঠিতে অন্যায় কাজকে যখন সঠিক বলে বার বার চেষ্টা করা হয় তখন এই সমাজ ব্যবস্থা, এই রাষ্ট্র এগুলো নিয়ে হতাশ হতেই হয়। বলছি দেশ নায়েক তারেক রহমানের প্রাইভেট ডকুমেন্ট প্রকাশের ব্যাপারটি নিয়ে। গতকাল এই বিষয়ে আমি একটি অনুষ্ঠানে এবং একই সাথে মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ফেসবুকে আমি আমার বক্তব্য পেশ করেছি। তারপর যেই অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে সেটির জন্য হয়ত আমি মানসিক ভাবে প্রস্তুত ছিলাম বলে সহজ ভাবে নিতে পারছি সব কিছু কিন্তু এই প্রজন্মের তরুন কিংবা পলিটিকালি সচেতন ব্যক্তিদের ভাবনা আমাকে রীতিমত ব্যাথা দিয়েছে।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ফেসবুকে আমি মন্তব্য করবার পর নুরুল টিপু নামে একজন আওয়ামী দাস যিনি লন্ডনে থাকেন, তিনি আমাকে খুব তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে একটি মন্তব্য দিয়েছেন। আমাকে নোংরা সব গালাগালে নানাবিধ আখ্যায় আখ্যায়িত করেছেন। আমাকে তিনি অকথ্য ভাষায় গাল দিয়ে নিজের শিক্ষার প্রমাণ দিয়ে তার উপর আমাকে অশিক্ষিত ও মূর্খ বলেছেন। আমাকে তিনি মূর্খ বলেছেন, এতে করে আমার দুঃখ নেই। আমার তো মনে হয় এই অসীম পৃথিবীর অনেক কিছু না জানা আমি আসলে মূর্খই। কেন তিনি এইভাবে কথা বলছেন বা বলার চেষতা করেছেন আমি জানিনা। জানবার প্রয়োজন বোধ-ও করছিনা। টিপু ভাই তাঁর মগজের বা চিন্তার ধারনের বাইরে যেতে পারবেন না, বা সেটি তাঁর পক্ষে সম্ভব নয় হয়ত। ফলে আমার চিন্তাকে তিনি একটি সুনির্দিষ্ট উপমায় বেঁধে ব্যক্তিগত আক্রমণে যাবেন, এটা বুঝতে পারাটা খুব সম্ভবত কষ্টের নয়।

তিনি স্পস্ট করে বলেছেন যে রাজনীতি বিদ্দের ব্যাপারে প্রাইভেট বলে কিছু নেই। শুধু তিনিও নন, অনেকেই একটি কথা বার বার বলছেন যে বি এন পি চ্যালেঞ্জ করেছে বলেই ব্যাক্তিগত তথ্য প্রকাশ বাঞ্ছনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, আমি এসব শুনে ও পড়ে কি যুক্তি দেব সেটিও ভুলে গেছি।

দেশ নায়েক তারেক রহমান তার নাগরিকত্ব বর্জন করেছেন বলে দাবী করেছিলেন। আর সেটির প্রতিবাদ করেছিলো বি এন পি। তারা এই প্রতিবাদের পাশাপাশি খুবই সঠিক উপায়ে আইনের আশ্রয় নিয়েছে। আমি খুব এপ্রিশিয়েট করেছিলাম তাদের এই স্টেপ কে। আওয়ামীলীগের মত লগি বৈঠা দিয়ে মানুষ না মেরে, খুন না করে, পেট্রোল বোম না মেরে, তাদের মত হত্যা না করে, গ্রেনেড না ছুঁড়ে আইনী পথে মোকাবেলা করতে চাওয়াকে এপ্রিশিয়েট করাই উচিৎ।

আর এই আইনী চিঠিকে আইনী পথে মোকাবেলা না করে একেবারে টিপিকাল কলতলার ঝগড়ার মত প্রতি মন্ত্রী সাহেব, কয়েকজন ব্যাক্তির ব্যাক্তিগত তথ্য প্রকাশ করেছেন বি এন পি’র চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করবার জন্য।

বিরোধী পক্ষের উষ্কানিতে যদি রাষ্ট্র তার গতিপথ বদলায়, অন্যায় করে তাহলে এটি অনেক বড় পরাজয়। রাষ্ট্র হবে সহনশীল, রাষ্ট্র তাঁর নিজের প্রনীত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে। মনে রাখতে হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেমন আওয়ামীলীগ সমর্থকের প্রধানমন্ত্রী ঠিক তেমনি করে বি এন পি বা জামাতের সমর্থকদেরও প্রধানমন্ত্রী। তিনি সকলের জন্য। তিনি রেগে গেলে, আমরা সবাই হেরে যাব। তিনি ভুল করলে আমরা সবাই লজ্জা পাব কিংবা ক্ষতিগ্রস্থ হব। এগুলো অনুধাবন করতেই হবে।

এই যে তথ্যগুলো প্রকাশ করা হোলো, সেটি কি শুধু তারেক রহমানের তথ্যই প্রকাশ করা হলো? উত্তর হচ্ছে না, তা নয়। এখানে তারেক রহমানের আন্ডার এইজ একটি মেয়ের হোম অফিসের রেফারেন্স রয়েছে, তার স্ত্রী রয়েছেন, মইনুল নামে আরেকজন ভদ্রলোক রয়েছেন।

সবচাইতে বড় কথা হচ্ছে হোম অফিসের এই এলেইজড চিঠি দিয়ে প্রতিমন্ত্রীর ভাষ্য একেবারেই প্রমাণিত হয়না। হোম অফিস যে চিঠি দিয়েছে, তাতে করে কখনোই প্রমাণিত হয়না তারেক রহমান নাগরিকত্ব বর্জন করেছেন কি করেন নি। আমি সেসব টেকনিকাল আলোচনায় একেবারেই যাচ্ছিনা। এসব নিয়ে মন্তব্য করবার রুচী আমার নেই।

আমি শুধু যে কথাটি বার বার বলবার চেষ্টা করছি তা হলো, আমরা এই প্রজন্ম আমাদের দেশের চলমান যে পলিটিকাল ট্রেন্ড, এটির পরিবর্তন চাই।

দেশ নায়েক তারেক রহমান সম্পূর্ণভাবে আমার পলিটিকাল আদর্শের নেতা, তিনি আমার আদর্শ। তার রাজনৈতিক বক্তব্য, তার চিন্তা, তার পলিটিকাল মুভমেন্ট আমি এসবের সকল কিছুর সাথেই আমি একমত এবং তাঁর পথেই আমার যাত্রা। কিন্তু অন্যদিকে আওয়ামীলীগের উঠতি নেতা প্রধানমন্ত্রী পূত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে আমি অপছন্দ করি, তার আদর্শ আমার ভালো লাগেনা। সে আমার বিরুদ্ধ স্রোতের যাত্রী। কিন্তু এই যে আমি একমত নই কিংবা তার বিরুদ্ধ স্রোতের যাত্রী, এটিকে আমি কিভাবে ট্যাকেল করব? কিভাবে আমি সজীবের সাথে লড়াই করব? আমি কি তার সাথে রিভলবার দিয়ে লড়াই করব? তলোয়ার দিয়ে করব? চাপাতি দিয়ে করব? পুলিশ দিয়ে করব? ছুরি দিয়ে করব? গালাগাল দিয়ে করব? তার ব্যাক্তিগত তথ্য প্রকাশ করে করব?

আমার উত্তর হচ্ছে, না। আমি সজীবের আদর্শের সাথে লড়াই করব আমার প্রজ্ঞা দিয়ে। আমার মেধা দিয়ে। আমার মঙ্গল বিবেচনাবোধ দিয়ে, আমার নৈতিকতা দিয়ে, আমার শিক্ষা দিয়ে।

আমরা যদি আমাদের দেশের চলমান পলিটিকাল ট্রেন্ড গুলো পরিবর্তন না করতে পারি, আমরা এত পড়াশোনা, এত বই পড়ে যদি টিপিকাল নোংরা রাজনীতি করি তাহলে এই দেশ আমাদের অভিশাপ দেবে।

এত বছর ব্রিটেনে থেকে, এত এত দেশে ঘুরে, এত এত অভিজ্ঞতা নিয়ে, এত এত বই পড়ে আমি তাহলে কি শিখলাম? আমি আমার শিক্ষার প্রতিফলন এই দেশের রাজনীতিতে রাখতে চাই। আমার মেধার প্রমাণ আমি দিতে চাই একটা সুস্থ রাজনীতির ধারা চালু করে।

আমি যদি লেখালেখি করে এই প্রজন্মের কাছে ঘৃণার বাণীই উগড়ে দেই, কাউকে পরিবর্তন করতে না পারি তাহলে কি প্রয়োজন এসব লেখালেখির? যদি তরুনরা আমাদের দেখে না শেখে তাহলে, আমাদের এই শিক্ষা, আমাদের এই অভিজ্ঞতার সামান্যতম মূল্য রইবে না।

উত্তর প্রজন্মে আমার নাম ঘৃণার অক্ষরে লেখা থাকবে। ঠিক যেমন এই মুহুর্তে আওয়ামীলীগের নাম ঘৃণার অক্ষরে লেখা হচ্ছে, ঠিক তেমন।

পদত্যাগে বাধ্য করার কৌশল হিসেবে ডি জি এফ আই অপহরণ করলো প্রধান বিচার পতি এস কে সিনহার বন্ধু অনিরুদ্ধ রায় কে

মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম, যুক্তরাজ্য থেকে

পারিবারিক বন্ধু অনিরুদ্ধ রায়কে ডি জি এফ আই অপহরণ করেছে সরকারের সাথে প্রধান বিচার পতি এস কে সিনহার বিরোধের কারণে। অনিরুদ্ধ রায় বাংলাদেশে বেলারুশ প্রজাতন্ত্রের অনারারি কনসাল এবং একই সাথে তিনি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আর এম এম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। সরকারের সর্বোচ্চ কতৃপক্ষের নির্দেশে এই অপহরন। জানা গেছে, প্রধান বিচারপতিকে ফাঁসাতে তার নামে দুর্নীতি, টাকা পাচারের গল্প ও দলিল তৈরী করতেই অনিরুদ্ধকে অপহরন। খুব সহসাই সেগুলো তৈরী করে প্যদান বিচারপতিকে ব্লাকমেল করার চেষ্টা করা হবে। তবে সিনহা বাবু যেভাবে ক্ষেপে আছেন এবং তিনি যে কঠের প্রকৃতির মানুষ, তাতে কতটা কাজ দিবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তবে একজন কূটনীীতককে এভাবে অপহরনের শিকার হওয়ায় কূটনৈতিক পাড়ায় তোলপাড় পড়ে গেছে।

গত রবিবার বিকেলে অনিরুদ্ধ কুমার রায়কে গুলশান থেকে অপহরন করার ২৪ ঘণ্টা পার হলেও তার কোন সন্ধান দিতে পারেনি পুলিশ। অনিরুদ্ধ রায়ের ভাগ্নে কল্লোল রায় ওই ঘটনায় গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। পরিবারের একটি সূত্র জানায়, রোববার বিকালে গুলশান-১-এ নিজের গাড়িতে ওঠার সময় ৭-৮ জন লোক এসে নিজেদের একটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য পরিচয় দিয়ে অনিরুদ্ধ কুমার রায়কে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়।

গুলশান থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক জানান, বিকাল ৪টার দিকে গুলশান-১ থেকে অনিরুদ্ধ কুমার রায় নিখোঁজ হয়েছেন বলে জিডিতে বলা হয়েছে। আমরা এখন পর্যন্ত তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারিনি। তবে তাকে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ রায়কে ৭২ গুলশান এভিনিউতে ইউনিয়ন ব্যাংকের সামনে থেকে ২৭ আগস্ট ধরে নেওয়া হয়। ইউনিয়ন ব্যাংকের কার্যালয় থেকে ৯০ মিটার দূরেই গুলশান ১ নম্বর গোলচত্বর। গুলশান-১-এ সিগন্যাল পড়লেই এই রাস্তার গাড়ির সারি ব্যাংকের সামনে পর্যন্ত চলে আসে। ব্যাংকের সামনে দাঁড়ানো নিরাপত্তাকর্মী ফকরুল বলেন, তিনি দেখেননি তবে শুনেছেন এখান থেকে এক সাহেবকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

এদিকে পুলিশের একটি সূত্র বলছে, ব্যবসায়িক বিরোধের জের ধরে তাঁকে অপহরণ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সরকারদলীয় একজন সাংসদের সঙ্গে অংশীদারের ভিত্তিতে তাঁর ব্যবসা ছিল। সম্প্রতি সেই ব্যবসা নিয়ে বিরোধের সৃষ্টি হয়। পরে ব্যবসার অংশীদারত্ব ভেঙে যায়। তদন্তে বিষয়টিকে সামনে আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এ ঘটনারও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ রয়েছে। তবে কোনো পেশাদার অপরাধী চক্র তাঁকে ধরে নিয়ে যায়নি বলেই মনে করছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। অপহরণের ধরন-ধারণ দেখে তাঁদের মনে হয়েছে, বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোকদেরই এ ক্ষেত্রে কাজে লাগানো হয়েছে। আর অপহরণকারীরা অপহরণের সময় নিজেদের একটি বিশেষ সংস্থার সদস্য হিসেবেও দাবি করেছিলেন।

জানতে চাইলে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ব্যবসায়িক ঝামেলার একটা ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এ ঘটনায় দায়ের করা সাধারণ ডায়েরিতে (জিডি) উল্লেখ করা হয়েছে, বিকেল ৪টা ১৯ মিনিটে তিনি ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে বের হওয়ার সময় গুলশান-১-এ দাঁড়িয়ে থাকা রুপালি রঙের একটি মাইক্রোবাসে থাকা তিনজন লোক তাকে তুলে নেন। অনিরুদ্ধর গাড়িচালক শাহ আলমসহ অন্যরা পুরো বিষয়টি দেখেছেন এবং ইউনিয়ন ব্যাংকের সিসি টিভি ক্যামেরায় এই ফুটেজ ধরা পড়েছে।

স্বাস্বতি রায়, অনিরুদ্ধ রায়ের সহধর্মিণী, এই ব্যাপারে বিস্তারিত কোন কিছু বলতে আগ্রহ দেখান নি। তবে তিনি উল্লেখ করেন, অনিরুদ্ধ রায় সেই সময়ে ব্যাংক এ গিয়েছিলেন একটি ঋণ অনুমোদনের ব্যাপারে কথা বলতে। স্বাস্বতি কাঁদতে শুরু করেন যখন টাকে প্রশ্ন করা হয় যে, এই ব্যাপারে কাউকে সন্দেহ করেন কি না? তিনি শুধু বলতে থাকেন, “আমি কোন কিছু বিস্তারিত প্রকাশ করতে চাই না। আমরা যে ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি তা শুধু আমরাই জানি। আপনাদের সহ পুলিশ প্রশাসনের কাছে আমার একটাই অনুরোধ আপনারা অনিরুদ্ধ কে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিন”।

ফ্যাসিবাদী হাসিনা দেশটাকে শেষ করে দিচ্ছে

মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম, যুক্তরাজ্য থেকে

ছবিটা বাংলাদেশের। সাম্প্রতিক ছবি এটা। দেখা যাচ্ছে এক যুবক রাস্তার ধারে ফেলে দেয়া খাবার তুলে খাচ্ছে। পাশেই বাংলাদেশ পুলিশের লোগো ও বাংলায় “পুলিশ” লেখা সহ একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে।

এটাই হাসিনার তথাকথিত উন্নয়ন। বাংলাদেশে অবাধ লুটপাট চলছে। আর একদল প্রতারক মাফিয়া জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে ক্ষমতায় অবৈধভাবে বসে থেকে ফ্যাসিস্ট শাসন চালাচ্ছে, এটা সারা দুনিয়ার মানুষ জানে।

আজ থেকে অনেক বছর পরে বলা হবে এটা একটা সাজানো ছবি এবং আওয়ামী লীগ সরকারকে বিপদে ফেলতে এই ছবি তুলে প্রচার করা হয়েছে। ঠিক যেভাবে আজকে বলা হয় ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষের সময় বাসন্তীকে জাল পরিয়ে ছবি তুলে শেখ মুজিব সরকারকে বিপদে ফেলা হয়েছিলো।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রটাকে আওয়ামী লীগ গত দশ বছরে ধ্বংস করেছে। ধ্বংস করেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার দোহাই দিয়ে। যেভাবে সকল ফ্যাসিস্ট শাসক তার ক্ষমতা ও দমন পীড়নের বৈধতা দেয়ার জন্য কোন আদর্শ প্রতিষ্ঠার দোহাই দেয়। আওয়ামী লীগকে তার এই ফ্যাসিস্ট মিশনে সাহায্য করেছে বাংলাদেশের আরবান মিডল ক্লাস, বাংলাদেশের অধিকাংশ হিন্দু সম্প্রদায় আর সো-কল্ড কালচারাল এলিট এবং, দুর্ভাগ্যজনক ভাবে, বাংলাদেশের বামপন্থীদের বড় অংশ। বাংলাদেশের সেই বামপন্থীরা হাসিনার পিতা শেখ মুজিবের একদলীয় স্বৈরশাসন বাকশালে নিজেদের দলকে বিলীন করেছিলো।

যারাই আওয়ামী শাসনের সমালোচনা করেছে তাদের সবাইকে এই আওয়ামী সমর্থক গোষ্ঠী ইসলামী জঙ্গিবাদী ট্যাগ দিয়ে নির্মূল করেছে।

আওয়ামী শাসন বাংলাদেশকে ভারতের নয়া উপনিবেশ বানিয়েছে। আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শাসন দীর্ঘায়িত হলে বাংলাদেশ রাষ্ট্র তার স্বাধীন অস্তিত্ব নিয়ে টিকে থাকবে কিনা সন্দেহ।

বাংলাদেশকে বাঁচাতে, বাংলাদেশের মানুষকে বাঁচাতে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বাঁচাতে সকল দেশপ্রেমিক মানুষের দল মত নির্বিশেষে ঐক্য দরকার। মাতৃভূমিকে ফ্যাসিস্ট দানবের কবল থেকে মুক্ত করা সকল দেশপ্রেমিকের কর্তব্য। সৃষ্টিকর্তা আমাদের এই মহান লড়াইয়ে কামিয়াব হবার তৌফিক দান করুন।