খুলনার আবুল কাশেম হত্যার ২৬ বছর পর আবারও শুরু হচ্ছে বিচার

খুলনা মহানগর জাতীয় পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, খুলনা শিল্প ও বণিক সমিতির সাবেক সভাপতি শেখ আবুল কাশেম হত্যার ২৬ বছর পর আবারও মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। আগামী ২৬ জানুয়ারি মামলার শুনানির দিন ধার্য করেছেন খুলনার জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারক (জেলা জজ) মো. সাইফুজ্জামান।

মামলার এক আসামির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের আদেশে ২০১৪ সাল থেকে আলোচিত হত্যা মামলাটির বিচার কার্যক্রম স্থগিত ছিল। গতকাল সেখান থেকে ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের চিঠি খুলনা জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে আসে। এরপর ওই মামলার অবশিষ্ট কাযক্রম পরিচালনার জন্য আগামী ২৬ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন ওই আদালতের বিচারক সাইফুজ্জামান।

খুলনা জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) আরিফ মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের পাওয়া চিঠি অনুযায়ী উচ্চ আদালত ওই মামলার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেছেন ২০১৮ সালের আগস্টে। আর তাতে ওই আদালতের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষর করেছেন ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে ওই চিঠি খুলনায় আসতে এত দিন লেগেছে। আদালতের কাছে চিঠি আসার সঙ্গে সঙ্গে ওই মামলার কাযক্রম চালানোর জন্য পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে।

শুধু আমার পরিবার নয়, খুলনাবাসী সবাই চান ওই হত্যা মামলার বিচার হোক।

শেখ মনিরুজ্জামান, আবুল কাশেমের ভাইপো ও হত্যা মামলার ৩ নম্বর স্বাক্ষী

১৯৯৫ সালের ২৫ এপ্রিল দুপুরে খুলনা থানার সামনে প্রকাশ্যে আবুল কাশেম ও তাঁর গাড়িচালক মিকাইল হোসেনকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ১৯৯৬ সালের ৫ মে সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন আদালতে ১০ জনের নামে ওই হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ওই হত্যা মামলায় ৩ আসামি আদালতের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছিলেন। পরে অভিযোগপত্র অনুযায়ী জড়িত ১০ জনের মধ্যে ১ জন মামলা থেকে অব্যাহতি পান। আর দুজন মারা গেছেন। বাকি ৭ আসামি বর্তমানে জামিনে রয়েছেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে চার্জশিট থেকে একজনের নাম বাদ দেওয়ার আদেশ স্থগিত চেয়ে প্রথম দফা আবেদন করেন ওই মামলার বাদী আলমগীর হোসেন। ১৯৯৯ সালে সেই আদেশ প্রত্যাহার করে নেন উচ্চ আদালত। ২০০৯ সালেও মামলার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। ২০১৩ সালে সেটি প্রত্যাহার করে নেন উচ্চ আদালত। পরে মামলার আসামি আবদুল গফ্ফার বিশ্বাসের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের মার্চে মামলাটি ছয় মাসের জন্য আবার স্থগিত করেন উচ্চ আদালত। পরে ২০১৫ সালের আগস্টে রুলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম পরিচালনায় স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়।

খুলনা জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের উচ্চমান বেঞ্চ সহকারী মো. ছায়েদুল হক বলেন, ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরে মামলাটি জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে আসে। ওই সময় একজনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে ২০০৮ সালে চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে সেটি দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে পাঠানো হয়। সেখানে ১৭ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। কিন্তু ১৩৫ দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় ওই বছরই তা আবার জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে চলে আসে। কিন্তু এত দিন স্থগিতাদেশ থাকায় মামলাটি ওই ভাবেই পড়ে ছিল। সর্বশেষ উচ্চ আদালতের চিঠি পাওয়ার পর পুনরায় মামলার কাযক্রম শুরু হয়েছে।

আবুল কাশেমের ভাইপো ও হত্যা মামলার ৩ নম্বর স্বাক্ষী শেখ মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুধু আমার পরিবার নয়, খুলনাবাসী সবাই চান ওই হত্যা মামলার বিচার হোক।’ তবে আর যেন কোনোভাবেই মামলাটি স্থগিত করা না হয়, সেই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আদালতের কাছে অনুরোধ করেন তিনি।

নদীর পারে পড়ে ছিল যুবকের লাশ, মাসহ আটক ২

ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ায় মনির হোসেন জমাদ্দার (২২) নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার শৌলজালিয়া ইউনিয়নের কচুয়া গ্রামের বিষখালী নদীর পাড় থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় সোমবার সকালে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহত মনিরের মা শাহনাজ বেগম (৪০) ও একই এলাকার ইয়াকুব আলীর ছেলে জসিম উদ্দিন গাজীকে (২৪) আটক করেছে পুলিশ।

এদিকে এ মৃত্যু নিয়ে নানা গুঞ্জণ উঠেছে। নিহত মনিরের মায়ের দাবি তার ছেলে আত্মহত্যা করেছে। তবে এলাকাবাসী জানায়, মনিরের মা শাহনাজ বেগমের সঙ্গে একই এলাকার ৪ সন্তানের জনক এনায়েত হোসেন মৃধার দীর্ঘদিন ধরে পরকীয়া চলছিল। মায়ের পরকীয়ায় বাঁধা দেওয়ায় ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হতে পারে।

পুলিশ জানায়, খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। পুলিশ সুপার ফাহিতা ইয়াসমিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হাবিুল্লাহ, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (কাঁঠালিয়া-রাজাপুর) সার্কেল মো. সাখাওয়াত হোসেন ও কাঁঠালিয়া থানার ওসি পুলক চন্দ্র রায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

ওসি পুলক চন্দ্র রায় জানান, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।

ভাগনির সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে বাধা দেওয়ায় শ্যালিকাকে খুন, আদালতে দায় স্বীকার

স্ত্রী প্রবাসে থাকার সুযোগে শ্যালিকার সঙ্গে গড়ে ওঠে অনৈতিক সম্পর্ক। তবে এতেই থেমে থাকেননি দুলাভাই সুহাগ মিয়া (৩০)। এক পর্যায়ে ভাগনির (স্ত্রীর বড় বোনের মেয়ে) সঙ্গেও অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন তিনি। বিষয়টি শ্যালিকা জেনে বাধা দিলে দু’জনের মধ্যে কথা টাকাকাটি হয়। এক পর্যায়ে শ্যালিকাকে খুন করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন সুহাগ। তবে শেষ রক্ষা হয়নি, শ্বশুরের হত্যা মামলায় আটক হয়ে কারাগারে যেত হয়েছে তাকে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে হবিগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুলতান উদ্দিন প্রধানের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন সুহাগ। তিনি হবিগঞ্জ শহরের যশেরআব্দা গ্রামের সবুজ মিয়ার ছেলে।

পুলিশ জানায় সুহাগ আদালতকে জানিয়েছেন, ১০ বছর আগে চুনারুঘাট উপজেলার শেখেরগাঁও গ্রামের আব্দুর ছাতিরের মেয়ে ছিতারাকে বিয়ে করেন সুহাগ। বিয়ের পর সুহাগ তার শ্বশুর বাড়িতেই বসবাস করে আসছিলেন। দাম্পত্য জীবনে তিন বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে তার। বছরখানেক আগে জীবিকার তাগিদে স্ত্রী ছিতারা সৌদি আরব চলে যান। এ সময় সুহাগের অবুঝ শিশুকে দেখাশোনা করতেন শ্যালিকা জুনেরা খাতুন (১৯)। সেই সুবাধে শ্যালিকার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে সুহাগের। সম্পর্কের কারণে জুনেরার একাধিক বিয়েও ভেঙে দেন সুহাগ।

এদিকে, সুহাগের স্ত্রীর বড় বোনকে বিয়ে দেয়া হয়েছে পাশের গ্রামে। তার ১৬ বছর বয়সী মেয়ে প্রতিদিন নানার বাড়িতে অসুস্থ নানীর কাছে ঘুমাতে আসে। সেই সুবাধে তার সঙ্গেও অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন সুহাগ। বিষয়টি জেনে যান জুনেরা। এ নিয়ে বাধা দিলে সুহাগ ও জুনেরার মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে জুনেরা সবকিছু ফাঁস করে দেয়ার হুমকি দিলে গত মঙ্গলবার রাতে সুহাগ গলায় ওড়না পেঁচিয়ে জুনেরাকে হত্যা করেন। পরে এই হত্যাকাণ্ডকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন এবং তড়িগড়ি করে লাশ দাফনের চেষ্টা করেন। কিন্তু বিষয়টি বুঝতে পারেন সুহাগের শ্বশুর বাড়ির লোকজন। তারা চুনারুঘাট থানায় খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে।

পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় গত বুধবার রাতে সুহাগকে একমাত্র আসামি করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন শ্বশুর আব্দুল ছাতির। মামলা দায়েরের পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে সুহাগকে আটক করে। বৃহস্পতিবার বিকেলে সুহাগকে আদালতে হাজির করলে তিনি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

এ ব্যাপারে চুনারুঘাট থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) চম্পক ধাম বলেন, ‘সুহাগ হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’

অনুমতি ছাড়া রাজধানীতে মিছিল-সমাবেশ নয়

অনুমতি ছাড়া রাজধানীতে মিছিল ও সভা-সমাবেশ করা যাবে না। আজ বুধবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) এক সংবাদ বিজ্ঞাপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইদানীং লক্ষ করা যাচ্ছে, ডিএমপি এলাকায় যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠন সভা, সমাবেশ, গণজমায়েতসহ নানা কর্মসূচির ঘোষণা দিচ্ছে। তাদের কর্মসূচি পালন করতে রাস্তায় নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে যান ও মানুষের চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। বিদ্যমান আইনে বৈধ কোনো দল বা গোষ্ঠীর সমাবেশের স্বাধীনতা থাকলেও বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের আরোপিত যুক্তিসংগত বিধিনিষেধ সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হওয়ার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগ দেওয়ার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের আছে।

এ ক্ষেত্রে সাধারণ জনগণের নাগরিক সুবিধা অক্ষুণ্ন রাখা, শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করা ও যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুবিধার্থে এ ধরনের কর্মসূচি পালন এবং শব্দযন্ত্র ব্যবহারের জন্য ডিএমপি অধ্যাদেশ অনুসারে ডিএমপি কমিশনারের পূর্বানুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ডিএমপি ঢাকা মহানগরের নাগরিকদের জানমালের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পূর্বানুমতি ব্যতীত কোনোরূপ মিছিল, সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচির কার্যক্রম গ্রহণ এবং এ জন্য শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করছে। পূর্বানুমতি ছাড়া কেউ এরূপ কার্যকলাপে জড়িত হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ডিএমপি ঢাকা মহানগরের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে মহানগরে শান্তিশৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করছে।

৩ শিশুকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে বৃদ্ধের বিরুদ্ধে মামলা

কুমিল্লার মুরাদনগরে ৩ শিশুকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে এক বৃদ্ধের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় থানায় মামলা দায়ের করার আগেই গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন উপজেলার কামাল্লা গ্রামের মোশাররফ চৌধুরী (৬২) নামের ওই ব্যক্তি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মুরাদনগর থানার ওসি সাদেকুর রহমান।

মামলার এজহার সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার কামাল্লা গ্রামের চৌধুরী বাড়ির মোশাররফ চৌধুরী গত ২৭, ২৮ ও ২৯ নভেম্বর তার প্রতিবেশী ৩ শিশু কন্যাকে প্রলোভন দেখিয়ে তার ঘরে নিয়ে যৌন নিপীড়ন চালায়। গত ২৯ নভেম্বর নিপীড়নের শিকার এক শিশু বাড়ি গিয়ে তার মাকে বিষয়টি জানায়। পরে অপর দুই শিশুও বিষয়টি নিজ নিজ পরিবারকে অবহিত করে। এ খবর এলাকায় জানাজানি হলে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

রাতে মুরাদনগর থানার ওসি সাদেকুর রহমান বলেন, যৌন নিপীড়নের ঘটনায় ভুক্তভোগী একটি পরিবার মোশারফ চৌধুরীকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ তাকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

কক্সবাজার কারাগারে হাজতির রহস্যজনক মৃত্যু: কারারক্ষী বরখাস্ত

হত্যা প্রচেষ্টা মামলায় রিমান্ড আদেশ পাওয়া আসামি মোস্তফার কক্সবাজার জেলা কারাগারে রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় প্রধান কারারক্ষী আবু তাহের, সহকারী প্রধান কারারক্ষী ফখরুল ইসলাম ও কারারক্ষী বিল্লাল হোসেনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে।

একই ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন মোস্তফার ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা কারারক্ষী জাহাঙ্গীর আলম।

এছাড়াও কারাগারের সর্বপ্রধান কারারক্ষী মো: হেলাল উদ্দিনের কাছ থেকে এ ঘটনায় আগামী ৩ কর্মদিবসে ‘লিখিত কৈফিয়ত’ তলব করা হয়েছে। কৈফিয়ত দিতে বলা হয়েছে কারারক্ষী ইকবাল হোসেনকেও। বুধবার (২ ডিসেম্বর) সকালে জেল সুপার নেছার আলম এ তথ্য জানান।

জেল সুপার জানান, কারাগারে বন্দির আত্মহত্যা কোনমতেই কাম্য নয়। হাজতি-কয়েদি এরা আমাদের আমানত। তাদের দেখভালের জন্য ২৪ ঘন্টা কারারক্ষী রয়েছে। এত তদারকির মাঝে কিভাবে হাজতি মোস্তফা আত্মহত্যা করলো তা নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। তাই সেসময়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকাদের কাছ থেকে কৈফিয়ত তলব করা হয়েছে। যিনি ওয়ার্ডে দায়িত্বে ছিল তাকে সাময়িক বরখাস্ত এবং যারা দায়িত্বে এড়াতে পারেন না তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) রাতেই এসংক্রান্ত অফিসিয়াল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।

একইদিন বিকেলে বিধি অনুসারে লিখিত অভিযোগ উত্থাপন করেন কারাগারের জেলার মোস্তফা কামাল।

এদিকে, সোমবার (৩০ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে কারাভ্যন্তরেই হাজতি মোস্তফা আত্মহত্যার ঘটনার (কারা কর্তৃপক্ষের দাবি মতে) পরপরই দুইটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একটিতে ডেপুটি জেলার সাইদুল ইসলামকে প্রধান করে সার্জেন্ট ইন্সপেক্টর মামুনুর রশীদ ও একাউন্টেন্ট খন্দকার আজাদুর রহমানকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে।

ঘটনার বিস্তারিত অনুসন্ধানপূর্বক দুই কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জেল সুপার।

একই ঘটনায় কারা হাসপাতালের ডা. মো: শামীম রাসেলকে প্রধান ও ডা. শামীম রেজাকে সদস্য করে আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারাও ঘটনার বিস্তারিত জেনে প্রতিবেদন জমা দিবেন।

কারা কর্তৃপক্ষের কমিটি ছাড়াও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটও পৃথক তদন্ত কমিটি গড়ে তদন্ত চালাচ্ছেন। কক্সবাজার এসেছেন ডিআইজি প্রিজন। তিনিও আলাদা ভাবে তদন্ত কাজ চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন জেল সুপার নেছার আলম।

উল্লেখ্য, কক্সবাজার সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লুৎফর রহমান আজাদকে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টা মামলায় কারান্তরীণ হাজতি মোস্তফা রহস্যজনক ভাবে জেলা কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন। সোমবার (৩০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় হাজতি ময়লাহীন ফাঁসিতে আত্মহত্যায় মারা গেছেন বলে দাবি করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।

তবে কারাগারে ফাঁসি খাওয়ার মতো কোন অবস্থা বন্দিদের পক্ষে থাকে না বলে দাবি করেছে কারাভোগ করে বের হওয়া অনেক বন্দি। এ কারণে তার মৃত্যু নিয়ে রহস্য দানা বেধেছে।

মারা যাওয়া হাজতি মোস্তফা (২৫) কক্সবাজার সদরের ইসলামাবাদ ইউনিয়নের হরিপুর এলাকার বশির আহমেদের ছেলে। তবে, তারা এলাকায় ‘রোহিঙ্গা’ বলে পরিচিত।

মারামারি ও হত্যা প্রচেষ্টা মামলায় গত ১৮ নভেম্বর মোস্তফা কারাগারে আসেন। তার মামলায় ২৯ নভেম্বর রিমান্ড শুনানি ছিল। আদালত তাকে একদিনের রিমান্ডও মনজুর করে। আদালত থেকে তাকে কারাগারে আনার পর তার কক্ষেই পাঠিয়ে দেয়া হয়। ৩০ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টার দিকে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় তাকে পেয়ে দ্রুত কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক হাজতি মোস্তফাকে মৃত ঘোষণা করেন।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক শাহীন আবদুর রহমান জানিয়েছিলেন, সোমবার রাত ৮টার দিকে মোস্তফা নামের এক বন্দিকে হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালের আনার আগেই সে মারা যায়। তার গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের পর হস্তান্তর করা হয়েছে।

কারাভ্যন্তরে হাজতি মোস্তফার মৃত্যুর খবর পেয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দুর্বৃত্ত হামলায় আহত হয়ে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সদর আওয়ামী লীগ নেতা লুৎফর রহমান আজাদ লুতু। তিনি এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এটি কখনো বিশ্বাস করা যায় না আমাকে হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত মোস্তফা আত্মহত্যা করেছেন। তাকে কৌশলে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। কোন একটি গ্রুপ আমার উপর পরিকল্পিত হামলার ঘটনা ঘটিয়েছেন এটা নিশ্চিত। যারা এ ঘটনা ঘটালো তারা জানলো যে, গ্রেফতার মোস্তফার রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। রিমান্ডে নেয়া হলে আমাকে হামলার ঘটনায় কারা জড়িত তা হয়তো উঠে আসতো। তাই কোন কৌশলে তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়া। বিপুল অংকের বিনিময়ে কূটকৌশলে এমনটি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জেল সুপার নেছার আলম বলেন, কারাবন্দীরা আমাদের আমানত। তাদের রক্ষা না করে কেন আমরা মারব? তার মৃত্যু অনাকাঙ্ক্ষিত। এটার রহস্য বের করতে চেষ্টা চলছে।

এবার স্ত্রীসহ সেই গুদাম কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

বগুড়ার সান্তাহার বাফার গুদামের আলোচিত সার কেলেঙ্কারির ঘটনায় গুদামটির সাবেক (অবসরপ্রাপ্ত) উপপ্রধান প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) নবীর উদ্দিন খান ও তাঁর স্ত্রী মোহছীনা বেগমের নামে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা হয়েছে। সোমবার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বগুড়ার সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম এই মামলা করেন।

দুদক জানায়, গত বছরের ১৬ অক্টোবর প্রথমে নবীর উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে পাঁচ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করা হয়। এরপরেই নবীর উদ্দিন ৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ তাঁর স্ত্রীর নামে হস্তান্তর করেন।

দুদকের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, ওই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে জানা গেছে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ স্ত্রীর নামে হস্তান্তর করেছেন নবীর উদ্দিন। এ কারণে ৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সোমবার নবীর উদ্দিন খান ও তাঁর স্ত্রী মোহছীনা বেগমের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করা হয়েছে।

সান্তাহার বাফার গুদামের সার কেলেঙ্কারির অভিযোগে নবীর উদ্দিনের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালে সার আত্মসাতের অভিযোগে আরও দুটি মামলা রয়েছে। সেসব মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন নেওয়ার পর তিনি পলাতক। তাঁর বাড়ি নওগাঁর রানীনগর উপজেলার ধোপাপাড়া গ্রামে।

বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) নিয়ন্ত্রণাধীন সান্তাহার বাফার গুদামে সরবরাহ না করেই বিপুল পরিমাণ সার লোপাট নিয়ে ২০১৭ সালের ৭ এপ্রিল প্রথম আলোয় ‘২০ কোটি টাকার সার গেল কই’ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ছাপা হয়। এরপর দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে বিসিআইসির মাধ্যমে বিদেশ থেকে আমদানি করা সার সান্তাহার বাফার গুদামে সরবরাহই করা হয়নি। তা কালোবাজারে বিক্রি করে বলা হয়েছিল সার সরবরাহের নথি উইপোকায় খেয়েছে। এ ঘটনায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাউথ ডেল্টা শিপিং অ্যান্ড ট্রেডিং লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক মশিউর রহমান খান, গুদামের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নবীর উদ্দিন খান, শ্রমিক লীগের নেতা রাশেদুল ইসলামসহ কয়েকজনের নামে এরপর ২০১৭ সালে অক্টোবরে দুটি মামলা করে দুদক। মামলায় ৪ হাজার ১৬১ মেট্রিক টন সার গুদাম থেকে আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।

পতিতালয়ে বিক্রির প্রস্তাবে অস্বীকৃতি, গৃহবধূকে পুড়িয়ে হত্যা

যশোরের অভয়নগর থানার শোভনারা এলাকার অগ্নিদগ্ধ গৃহবধূ হিরা বেগমকে  ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) ঢোকানোর সময় মৃত্যু হয়। ২ ডিসেম্বর, বুধবার ভোর পৌনে ৫টার দিকে তাকে ঢামেক’এ নেয়া হয়। তার শরীরের এক-তৃতীয়াংশ আগুনে দগ্ধ হয়।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে টানা পাঁচদিন অসহনীয় যন্ত্রণায় ছটফট করেছেন। হৃদয়বানদের দেয়া আর্থিক সহায়তায় উন্নত চিকিৎসার জন্যে গত রাতে ঢাকায় নেয়া হয়েছিল তাকে।

জানা গেছে, যশোরের অভয়নগর থানার মঠপাড়া এলাকার মো. খোকন সরদারের মেয়ের কথিত স্বামী বিল্লাল শেখের দেয়া আগুনে নিভে গেছে হিরা বেগমের (৩৩) প্রাণ। পাশ্ববর্তী দেশের পতিতালয়ে বিক্রির প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় কেরোসিন ঢেলে শরীরে আগুন দেয় বিল্লাল শেখ। আর সে আগুনেই জীবনযুদ্ধে হেরে গেলেন অগ্নিদগ্ধ হিরা।

খুমেক চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, হিরা বেগমের শরীরের এক-তৃতীয়াংশ দগ্ধ হয়েছে। শ্বাসনালীসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অংশ অকেজোর পথে। উন্নত চিকিৎসার জন্যে প্রথমেই তাকে ঢামেক হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল।

অগিদগ্ধ হিরা বেগমের মা মাজিদা বেগম জানিয়েছেন, যশোরের অভয়নগরের শোভনারা এলাকার আ. রশিদের ছেলে কবির শেখের সাথে পারিবারে সাধ্যমতো আয়োজনে বিয়ে হয়েছিল তাদের একমাত্র মেয়ে হিরা বেগমের। মুদি দোকানি কবির শেখের নতুন সংসার বেশ ভালোই চলছিল সুখে-শান্তিতে। এরমধ্যে বাদসাধে বাদামওয়ালা জাকির হোসেন। প্রথম স্বামী কবির শেখের সংসার ছেড়ে জাকির হোসেনের হাত ধরে নতুন করে সংসার সাজায় হিরা বেগম। এতে প্রচণ্ড কষ্ট পেয়ে পিতা-মাতা ও ভাই হিরা বেগমের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।

তিনি আরো জানান, এর মাস ছয়েক পর অভয়নগরে শিহড়ী এলাকার আক্কাস শেখের ছেলে বিল্লাল শেখের সাথে পরিচয় হয় হিরার। বিল্লাল মোটা অঙ্কের অর্থের লোভ দিয়ে তাকে ভারতে নিতে চায়। কিন্তু কি কাজ করতে হবে সেটা জানতে চায় হিরা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রায় মারপিট করতো বিল্লাল। একপর্যায়ে ভারতের পতিতালয়ে হিরাকে বিক্রি করার পরিকল্পনা করে বিল্লাল। এ পরিকল্পনা গোপনে জেনে যায় হিরা। ফলে ভারতে যেতে রাজি হয়নি তিনি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হিরা বেগমের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় বিল্লাল শেখ।

গত ২৬ নভেম্বরের এ ঘটনার পর হিরা বেগমের মা মাজিদা বেগমকে মোবাইলে আগুনে পুড়ে যাওয়ার ঘটনাটি জানায় প্রতিবেশীরা। প্রথমে যাবে না বলে মুখ ঘুরিয়ে রাখলেও পরে একমাত্র মেয়েকে সেখান থেকে উদ্ধার করে প্রথমে যশোরের হাসপাতালে পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করা হয়।

মৃত হিরা বেগমের ভাই ইয়াছিন সরদার বলেন, আজ বুধবার ভোর পৌনে ৫টার দিকে ঢামেক হাসপাতালে ঢোকানোর সময় হিরার মৃত্যু হয়েছে। পরে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে ডাক্তার মৃত বলে নিশ্চিত করে। আমার মা সাথেই আছেন, কিন্তু তিনি এখনো জানেন না যে হিরা আর নেই।

তিনি আরো বলেন, আগুনে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় গতকাল ০১ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার অভয়নগর থানায় বিল্লাল শেখ, তার পিতা আক্কাস শেখ ও বিল্লালের মাকে আসামি করে মামলা করেছি।

অভয়নগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. তাজুল ইসলাম বলেন, মামলাটি এখন হত্যা মামলা হিসেবে গণ্য হবে। আসামিদের গ্রেপ্তার অভিযান চলছে।

বাবার কাছে খুন করার শিক্ষা পেয়েছে হাসিনা

মশিউল হুসাইন খান/ যুক্তরাজ্য

যদি আমরা ইতিহাস দেখি তবে দেখতে পাবো বাংলাদেশে বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের সূচনা হয়েছে শেখ মুজিবের আমলে। তাই তার মেয়ের কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করা যায়। খুনির সন্তান খুনি হবে এমনটা সত্যি না হলেও হাসিনার ক্ষেত্রে এমনটাই হয়েছে।

সম্প্রতি রায়হান নামে এক যুবককে সিলেট বন্দর থানার পুলিশ তুলে নিয়ে সারারাত পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। রায়হানের তিনমাসের এক সন্তান আছে এবং সে একজন খুব সাধারণ যুবক। সে রাজনীতি করেনা, দলবাজি করেনা। খুব সাধারণ একজন গৃহী মানুষ যে তার সন্তানের পিতা হওয়ার পরে তার ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে দেখতে সময় পার করছিলো।

হাসিনার বর্বর পুলিশ সেই স্বপ্নকে চুরমার করে দিলো। কিন্তু পুলিশ এতো সাহস কই পেলো। যখন একটি দেশের রাষ্ট্রনায়ক কোন হত্যার বিচার করে না। হত্যার অনুমতি দেয়। তখন পুলিশের তো এতো সাহস হবেই। ত

রায়হান একটা ফোন কল করার সুযোগ পেয়েছিলো থানায় আটক থাকা অবস্থায়। সে তাকে বাঁচানোর জন্য মাত্র দশ হাজার টাকা বা একশো ইউরোর সমপরিমাণ টাকা নিয়ে আসার জন্য পরিবারের সদস্যদের কাছে আকুল আর্তি জানিয়েছিলো। বাংলাদেশের একটা সাধারণ পরিবারের জন্য একশো ইউরোর সমপরিমাণ টাকা একটা বড় অংকই বটে। তার পরিবার যেভাবেই হোক টাকাটা জোগাড় করেছিলো কিন্তু রায়হান সারা রাতের অব্যাহত পিটুনি সহ্য করতে পারেনি। অত্যাচারের সময় পুলিশ তার হাত-পা ভেঙে দেয়। নখ উপড়ে দেয়। সে মারা যায়।

যদি ইতিহাস ঘাটি, প্রতিনিয়ত এমন ঘটনা ঘটছে।  আমাদের দেশে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হাসিনার পুলিশ নৈশ ভোটে হাসিনাকে নির্বাচিত করার মূল কারিগর হিসেবে কাজ করার পরে এমনই বর্বর পুলিশি শাসন জারি করেছে। যাকে ইচ্ছা তুলে নিয়ে যাচ্ছে, ক্রস ফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে জমিজমা লিখে নিচ্ছে, যাকে ইচ্ছা মেরে ফেলছে, গুম করছে। কাউকে কোন জবাবদিহি করতে হয়না। শুধু সরকারি দলের লোকেদের অবাধে অপরাধ করতে দিয়ে যেকোন ভিন্নমতের উপরে জিঘাংসা নিয়ে চড়াও হলেই হাসিনা খুশী।

পুলিশ রায়হানের হত্যাকান্ডেকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য প্রচার করেছে যে রায়হান ছিলো একজন ছিনতাইকারী এবং ছিনতাই করে ধরা পড়ার পরে তাকে গণপিটুনি দেয়ায় সে নিহত হয়। কিন্তু যেই এলাকায় রায়হান গণপিটুনি খেয়েছে বলে পুলিশ দাবী করেছে সেই এলাকার সব সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজ তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কোন ছিনতাই বা গণপিটুনির ঘটনা দেখা যায় নাই।

বাংলাদেশে বছরের পর বছর ধরে পুলিশ পেশা সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত পেশা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের মানবাধিকার লংঘনের ঘটনার চ্যাম্পিয়ন বাহিনী হিসেবেও এই বাহিনী তার দুর্নাম কুড়িয়েছে।

চরম দুর্নীতিগ্রস্থ মানবাধিকার লংঘনকারী এই বর্বর পুলিশবাহিনী বাংলাদেশের প্রগতিশীল রুপান্তরের শত্রু। এই পুলিশবাহিনীর সংস্কারও সম্ভব নয়। ফ্যাসিস্ট জামানার অবসানের পরে বাংলাদেশে এই উপনিবেশিক শাসনের উত্তরাধিকার পুলিশবাহিনীকে ডিসব্যান্ড করে স্বাধীন জনগণের পুলিশবাহিনী গড়ে তুলতে হবে।

বাংলাদেশের জনগনের নাগরিক ও মানবিক অধিকারই শুধু হরণ করা নয়। শেখ হাসিনা রিপাবলিকের সকল ইন্সটিটিউশন ধ্বংস করার সাথে সাথে পুলিশ নামের ইন্সটিটিউশনকেও ধ্বংস করেছে। এই ক্ষতির তুলনা নেই।

যে দেশের সরকার অবৈধ। সেই দেশে পুলিশ বাহিনী সরকারকে টিকিয়ে রাখতে তো এমন অসভ্য, অমানুবিক, নিষ্ঠুর আচরন করবেই।

ব্লগার এবং নাস্তিকদের বিচারের দাবিতে দেয়ালে দেয়ালে পোষ্টার এবং মিছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঢাকা: হেফাজতে ইসলামসহ আরো কয়েকটি ইসলামী সংগঠন বেশ কিছুদিন ধরেই সরকারকে ব্লগার এবং নাস্তিকদের আইনের আওতায় এনে তাদের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে চাপ দিয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় ইসলামী দলগুলোকে বাংলাদেশের বিভিন্নস্থানে মিছিল এবং সমাবেশ করে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়। তাছাড়া কোনও কোনও এলাকার অলিতে-গলিতে দেয়ালে দেয়ালে নাস্তিকদের পোষ্টার লাগিয়ে হত্যা করার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার (অক্টোবর-২৯, ২০২০) আরিফ রব্বানী নামের হেফাজতে ইসলামের একজন সক্রিয় কর্মী ‘এথিস্ট এরা’ নামের একটি ম্যাগাজিনের সকল ব্লগার/ নাস্তিকদের নামে মামলা দায়ের করেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত খবর নিয়ে জানা যায় যে, এথিস্ট এরা নামের এই ওয়েবসাইটটি ইসলাম ধর্মকে অত্যন্ত নোংরাভাবে ফুটিয়ে তুলে একটি ম্যাগাজিন প্রকাশিত করে। মূলত যা দেখেই ইসলামী সংগঠনগুলো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে।

এ বিষয়ে মামলার বাদি আরিফ রব্বানীর সাথে কথা হলে তিনি আমাদের বলেন ’’হঠাৎ করেই ফেসবুকের মাধ্যমে এই ম্যাগাজিনটি আমার চোখে পড়ে, আমি কৌতুহল বশত এটি ডাউনলোড করে দেখতে পারি সেখানে ধর্ম, মুসলিম, কোরআন এবং আমাদের প্রাণপ্রিয় নবী মোহাম্মদ (সঃ) কে নিয়ে নানাবিদ কুরুচিপূর্ন  শব্ধ ব্যবহার করে ‘বিনাশ হোক ধর্ম‘ নামে এই মাগাজিনটি প্রকাশিত করে, যা একজন মুসলিম হিসেবে মেনে নিতে পারিনি এবং আমি মনে করি এদেরকে কতল (হত্যা) করা আমার এবং আমাদের সকল মুসলিমদের ওপর ওয়াজিব হয়ে গেছে।

মামলার আসামীদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আমাদের যে কয়টি নাম বলেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েক জন হলেন এথিস্ট এরা’র সম্পাদক এমডি মাহাদি হাসান, সহ সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুজ্জামান, সিনিয়র সহ সম্পাদক মিজানুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ সাইফুজ্জামান ও উমায়েদ হোসেন, স্টাফ রিপোর্টার উম্মা কুলসুম নারগিস বানু, এমডি জিল্লুর রহমান, অনিকা হক মল্লিক,শ্রাবণী শিকদার, মোহাম্মদ ওয়াহিদ হোসেন, মহাম্মদ ফাহিদুল আলম, মুহাইমিনুল বিশ্বাস পারভেজ, জোবায়ের হোসেন, বিপ্লব পাল, এম ডি হাসান তৌহিদ, মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান, নুর মোহাম্মদ, জনি জোসেফ কস্তা, সহ আরো অনেকে।

এদিকে মিছিল এবং সমাবেশে থাকা কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা সাংবাদিকেদের জানান যে, ‘‘বর্তমানে নাস্তিক এবং কিছু নব্য ব্লগারদে উৎপাত এতটাই বেড়েছে যে এগুলো মেনে নেওয়া কোনও মুসলমানদের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে একটা কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমাদের কলিজার টুকরা হযরত মুহাম্মদ সাঃ কে নিয়ে কেউ কিছু বললে তাকে এই পৃথিবী থেকে বিদায় করা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব।‘‘

তাদের মধ্যে আর একজন ইসলামী ব্যক্তিত্ব মুফতি ফজলুর রহমান বলেন, ‘‘নাস্তিকদের গালি দিলে কারও গায়ে লাগলে আমার করার কিছু নাই। আল্লাহর দেশে থাকতে হলে আল্লাহকে না দেখে আল্লাহর অস্তিত্ব মানতে হবে, না হলে তুমি আল্লাহর দেশে থাকতে পারবে না।’’

এদিকে সমাবেশ চলাকালে মুফতি আহমদ উল্লাহ জিহাদী উপস্থিত থাকা দ্বীনদার ভাইদের উদ্দেশে বলেন যে, ‘‘যদি কোন মুসলিম মুরতাদ হয়ে যায় এবং মুরতাদের সকল শর্ত তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় (সুস্থ- মস্তিস্ক, বালেগ, স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির অধিকারী হওয়া) তাহলে তার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হবে এবং ইমাম তথা মুসলমানদের শাসক অথবা তাঁর প্রতিনিধি যেমন বিচারক তাকে হত্যা করবে। তাকে গোসল করানো হবে না, তার জানাযা-নামায পড়ানো হবে না এবং তাকে মুসলমানদের গোরস্থানে দাফন করা হবে না।‘‘

হেফাজেত ইসলামে এক কর্মীর কাছে দেয়ালে পোস্টার লাগানোর বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি আমাদের বলেন যে, ‘‘সমস্ত ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক-মুরতাদ যারা আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহ এবং আমাদের ধর্ম নিয়ে ব্যঙ্গ করবে, গালি-গালাজ করবে, কটূক্তি করবে তারা সবাই আমাদের টার্গেট। ইনশাআল্লাহ আমরা তাদের হত্যা করবো।’’

উল্লেখ্য, হেফাজতে ইসলাম নাস্তিক এবং ব্লগারদের ছবি যেভাবে দেয়ালে দেয়ালে লাগিয়েছে, ২০১৬ সালে ঠিক এভাবেই ফেসবুক পেজে চার ব্লগারের ছবি প্রকাশ করে হত্যার হুমকি দিয়েছে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম। তারা হচ্ছেন আসিফ মহিউদ্দিন, সানিউর রহমান, শাম্মি হক ও অনন্য আজাদ। তারা সবাই এখন প্রবাসী। জঙ্গি হামলার ভয়ে এসব ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট অনেক আগেই দেশ ছেড়েছেন।

আদালত সূত্রে জানা যায় বাদী আরিফ রাব্বানী কর্তৃক আনীত মামলার নম্বর ৪১৮/২০২০। মামলাটি দায়ের করা হয়েছে ঢাকা সাইবার ট্রাইবুন্যালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৫, ২৮, ২৯, এবং ৩১ ধারার অধীনে ২১ জন আসামীর বিরূদ্ধে। মামলাটি তদন্তাধীন।