দারিদ্র্য কমাতে কি নতুন কৌশল দরকার?

দারিদ্র্য নিয়ে কাজ করে তিন মহান বাঙালি নোবেল জয়ের অনন্য গৌরব অর্জন করেছেন। তথাপি নোবেল জয়ে দারিদ্র্য জয় হয়নি পুরোপুরি। দারিদ্র্যকে শুধুই জাদুঘরে আটকে রাখাও সম্ভব হয়নি। ড. অমর্ত্য সেন (১৯৯৮) পেয়েছেন দারিদ্র্য বিষয়ে তাত্ত্বিক জ্ঞান তৈরির জন্য। ড. মুহাম্মদ ইউনূস (২০০৬) পেয়েছেন দারিদ্র্য দূরীকরণে গরিবদের উপযোগী ব্যাংক তৈরির জন্য। আর ড. অভিজিৎ ব্যানার্জি (২০১৯) পেয়েছেন দারিদ্র্য দূরীকরণে পরীক্ষাগার পদ্ধতি প্রবর্তনের জন্য।

দারিদ্র্য বিমোচন স্বাধীনতা–উত্তর বাংলাদেশের বিগত ৪৯ বছরের অন্যতম বড় কার্যক্রম। বাংলাদেশের নিজস্ব কিছু দারিদ্র্য দূরীকরণের মডেল আছে, যা বিশ্বে প্রশংসা পেয়েছে এবং কোনো কোনোটি তৃতীয় বিশ্বের কিছু দেশে অনুকরণীয়ও। বাংলাদেশের সমুদয় দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচির মৌলিক ভিত্তি হচ্ছে ড. আখতার হামিদের কুমিল্লা মডেলের চার স্তর। দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি হিসেবে বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করেছে শিক্ষা উপবৃত্তি, কাজের বিনিময়ে খাদ্য, বার্ধক্য ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ) কর্মসূচি, মাতৃত্বকালীন ভাতা, কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ ভাতা শিক্ষা উপবৃত্তি ও প্রশিক্ষণ, ক্যানসার, কিডনি ও লিভার সিরোসিস রোগীদের সহায়তা, চা–শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি, জন্মনিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি কার্যক্রম।

কিন্তু গ্রামীণ কিংবা নগর দারিদ্র্য রোধে এই কার্যক্রমের সব কটির প্রভাব দৃশ্যমান নয়। ভাতাগুলোর পরিমাণ আর্থিক মূল্যে নিতান্তই সামান্য এবং প্রার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়া মহাদুর্নীতিগ্রস্ত বলে সামাজিক সুরক্ষা খাতের বহু কর্মসূচি মিলেও দারিদ্র্য বিমোচনে টেকসই সাফল্য আনা যাচ্ছে না। সামাজিক সুরক্ষা ভাতার পরিমাণ একদিকে খুব কম, অন্যদিকে শিক্ষা উপবৃত্তি ছাড়া বাকিদের উৎপাদনের সম্পর্ক নেই। অলস বলে উৎপাদন ও পুনঃ আয়ের দিক থেকে নতুন আর্থিক লাইফ-সাইকেল তৈরিতে মাসিক ভাতার নিম্ন অঙ্ক দারিদ্র্য বিমোচন ও ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজে আসে না।

সরকারের পাশাপাশি বাংলাদেশের রয়েছে নিজস্ব বেসরকারি মডেল। ব্র্যাকের সম্পদ হস্তান্তরকেন্দ্রিক আলট্রা পুওর গ্র্যাজুয়েশেন প্রোগ্রাম বিশ্বে প্রশংসিত। দারিদ্র্য নিরসনে কাজ করছে ব্যাপকসংখ্যক এনজিও। রয়েছে গ্রামীণ ব্যাংক, আশার মতো প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাপক জনপ্রিয় মোবাইল ব্যাংকিং। আছে জাকাত ও দানভিত্তিক ক্ষুদ্র অর্থনীতি। সরকারি-বেসরকারি দারিদ্র্য বিমোচন বান্ধব আবাসিক কওমি শিক্ষার সামাজিক মডেল। আশির দশকের ওয়াশিংটন কনসেনসাস, নব্বই দশকের পোস্ট ওয়াশিংটন কনসেনসাস থেকে নতুন কোপেনহেগেন কনসেনসাস পর্যন্ত সবকিছুর পরও বাংলাদেশের শহুরে ও গ্রামীণ দারিদ্র্য ব্যবস্থাপনা ও অর্জনে সমস্যা দেখা যাচ্ছে।

দারিদ্র্য জয়ের চালচিত্র
২০০০ সালের পরের এক দশকে বছরে বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি মানুষ নিজেদের হতদরিদ্র অবস্থা কাটানোর যুদ্ধে জয়ী হয়েছেন। এই সময়ে সরকারগুলো শিক্ষা উপবৃত্তি, মেয়েশিশুদের শিক্ষা, বয়সসীমা বৃদ্ধি, টিকাদান কর্মসূচি ও সাক্ষরতার উন্নয়নে ব্যয় করেছে। দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশ থেকে উধাও হয়েছে, মানুষ ক্ষুধা থেকে অনেকটা মুক্ত হয়েছেন। বোঝাই যাচ্ছে তিন প্রবাদপ্রতিম বাঙালি অর্থনীতিবিদসহ সব বিশেষজ্ঞ ও সরকারের মিলিত কৌশল আলোর পথ দেখিয়েছে। তারপরও দারিদ্র্য কিন্তু সমাজে থেকেই গেছে অতি উল্লেখযোগ্য হারে।

বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (ডব্লিউএফপি) সহায়তায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘নগর আর্থসামাজিক অবস্থা জরিপ-২০১৯’-এর ফলাফলে নগর দারিদ্র্য ও নগরে ক্ষুধার হাহাকারের এক অভাবিত চিত্র উঠে এসেছে। দেশের মহানগরগুলোতে ৮ দশমিক ২২ শতাংশ পরিবারের কোনো না কোনো সদস্যকে খাবার না থাকায় ক্ষুধার্ত অবস্থাতেই রাত কাটাতে হয়েছে (করোনাকালের আগেই)। রাজধানী ঢাকায় ক্ষুধার্ত থেকে রাতজাগা মানুষের সংখ্যা গড়ে ৯ শতাংশের বেশি (৯.২৩ শতাংশ)। সাড়ে ১১ শতাংশ পরিবারে কোনো খাবারই ছিল না। প্রায় ৩ শতাংশ পরিবারের সদস্যদের দিন-রাতের কোনো সময়ই কোনো খাবার জোটেনি বলে জরিপে উঠে এসেছে। দেশের অন্য মহানগরগুলোর তুলনায় খাদ্যসংকটে ভুগতে থাকা পরিবারের সংখ্যা ঢাকা ও চট্টগ্রামে বেশি। মোটামুটি কিংবা তীব্র ক্ষুধার্ত মানুষ ৬ শতাংশের বেশি।

তবে বিশ্বব্যাংক এটাও বলেছে, গত দেড় দশকে দ্রুত দারিদ্র্য কমানোর প্রতিযোগিতায় শীর্ষ ১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ নেই। এই ১৫টি দেশ যে গতিতে দারিদ্র্য কমিয়েছে, বাংলাদেশে কমেছে এর চেয়ে কম। দেড় দশকে সবচেয়ে বেশি, ৩ দশমিক ২ শতাংশ হারে দারিদ্র্য কমিয়েছে তানজানিয়া। কিন্তু বাংলাদেশ কমিয়েছে মাত্র ১ দশমিক ৪২ শতাংশ হারে। প্রশ্ন হচ্ছে, দারিদ্র্য জয়ের প্রমাণিত এবং প্রতিষ্ঠিত নিজস্ব মডেল থাকার পরও বাংলাদেশ দারিদ্র্যমুক্তির হারে অন্য দেশের চেয়ে পিছিয়ে কেন? এর সবচেয়ে বড় উত্তর শুধুই কি ‘দুর্নীতি’?

চক্রাকার দারিদ্র্য ও দারিদ্র্য ফাঁদ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ কোটি ১৪ লাখের বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাচ্ছে। পাশাপাশি আছে বহুবিধ মানবসৃষ্ট ও প্রাকৃতিক দারিদ্র্যফাঁদ। এমনকি বেসরকারি দারিদ্র্য বিমোচন ও ক্ষুদ্রঋণের মডেলেও আছে প্রতিষ্ঠিত দারিদ্র্যফাঁদ। ক্রমাগত কমেছে নিখরচ পুষ্টির প্রাকৃতিক উৎস, আর্থিক দুর্ঘটনা, সড়ক দুর্ঘটনা, মানহীন কাজের ঝুঁকি এবং বহুবিধ দূষণ ক্ষতি। সামাজিক সুরক্ষা এবং অপরাপর বাজেট বরাদ্দ কৌশলও মাথাপিছু দারিদ্র্য ও পশ্চাৎপদ জেলাভিত্তিক নয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থনীতি যে দারিদ্র্য বিমোচনের পুরস্কারপ্রাপ্ত মডেলের চেয়েও শক্তিশালী স্থানীয় নেতার প্রভাবেই আবর্তিত, তা জেলাভিত্তিক দারিদ্র্যের তথ্যে প্রতিফলিত।

২০২০-২১ বাজেটের মোট ৬ দশমিক ৮ শতাংশ ভর্তুকি ও প্রণোদনা। কিন্তু এই বৃহৎ প্রণোদনা প্যাকেজের অধিকাংশই ব্যয় হচ্ছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও সেবা খাতের দুর্নীতি ও অপব্যবস্থাপনাজনিত লোকসান মোকাবিলায়। সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণে ব্যয়িত ৪ দশমিক ৭–এর সিংহভাগ ব্যয় হয় কর্মকর্তা–কর্মচারী বেতন-ভাতা-আবাসন-পরিবহন ইত্যাদি ভৌত খাতে। বাকি যে অংশ নাগরিকের হাতে যায়, তাতে দলীয়করণ ও উত্তোলন প্রক্রিয়ার দুর্নীতি জড়িত। কিছু বরাদ্দ মোবাইল ব্যাংকিং চ্যানেলে ডিজিটাল করা হলেও সেখানেও রয়েছে মহাদুর্নীতি। এমনকি কৃষি ভর্তুকির বরাদ্দ প্রক্রিয়ায়ও দুর্নীতি থাকায় সঠিক দামে সঠিক হাতে সঠিক সময়ে সার পৌঁছায় না কোনো সময়। ফলনের চাহিদাভিত্তিক উৎপাদন নিবন্ধন, শস্যবিমা ও উৎপাদন মূল্যের নিশ্চয়তা নেই।

দারিদ্র্য কমাতে কি নতুন কৌশল দরকার?

অন্যদিকে বাংলাদেশের বাজেটে সর্বজনীন পেনশনের ধারণা এখনো আসেনি, পেনশন শুধু সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কভার করে। বাজেটে বেকার ভাতা অনুপস্থিত। সর্বজনীন চিকিৎসাবিমা ও ভাতা নিয়ে সরকারের বাস্তব পরিকল্পনা নেই। সব মিলে বহু মৌলিক সেবা অনুপস্থিত। এটা দারিদ্র্যফাঁদ ও চক্রাকার দারিদ্র্য তৈরি করছে নিয়মিত। সঙ্গে আছে পরিবেশদূষণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ুজনিত দারিদ্র্য, দুর্ঘটনাজনিত দারিদ্র্য, স্বাস্থ্যব্যয়জনিত দারিদ্র্য। অর্থাৎ যে হারে মানুষ দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠছে, তার খুব কাছাকাছি বা বেশি হারে লোকে নতুন দারিদ্র্যের মুখোমুখি হচ্ছে।

নতুন চ্যালেঞ্জ করোনা মহামারির উল্টোরথ
কভিড-১৯–এর আগে বাংলাদেশের দারিদ্র্য হার ছিল ২০ দশমিক ৫ শতাংশ, যার মধ্যে অতিদারিদ্র্য হার ১০ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থাৎ দেশের প্রায় ৩ কোটি ৩৪ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমায় ছিলেন। ২০১৯ সালের জুন মাস শেষে অতি গরিব বা হতদরিদ্র ব্যক্তির সংখ্যা ১ কোটি ৬০ লাখের কিছুটা বেশি। কিন্তু করোনার পরে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে।
করোনার হাত ধরে নতুন দারিদ্র্যের ভয়ংকর ছোবল আঘাত করেছে বাংলাদেশকে! প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৪২ জনই গরিব বলে জরিপে উঠে এসেছে! করোনাভাইরাস মহামারির ধাক্কায় দারিদ্র্যের হার ২০১৮ সালের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে, আর চরম দারিদ্র্যের হার বেড়েছে প্রায় তিন গুণ!

নিজস্ব অর্থায়নে চালিত সানেম জরিপে দেখা যাচ্ছে, করোনার প্রভাবে দেশে সার্বিক দারিদ্র্যের হার (আপার পোভার্টি রেট) বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ শতাংশ। বিবিএসের খানা জরিপ অনুসারে, ২০১৬ সালে দেশের গ্রামাঞ্চলের সার্বিক দারিদ্র্য ছিল ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ, ২০১৮ সালের জিইডি-সানেম জরিপ অনুসারে যা ছিল ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ। কিন্তু করোনার প্রভাবে ২০২০ সালে এই হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ দশমিক ৩ শতাংশ। শহরাঞ্চলে সার্বিক দারিদ্র্যের হার ২০১৬ সালে ছিল ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ, ২০১৮ সালে ছিল ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ আর করোনার সময়ে ২০২০ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৩৫ দশমিক ৪ শতাংশ।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থা ‘বিআইডিএস ক্রিটিক্যাল কনভারসেশন-২০২০: ইন দ্য শ্যাডো অব কভিড-কোপিং, অ্যাডজাস্টমেন্টস অ্যান্ড রেসপনসেস’ নামক ডিজিটাল সেমিনারে উপস্থাপিত গবেষণামতে, করোনাভাইরাস কোভিড-১৯-এর প্রভাবে দেশে ১ কোটি ৬৪ লাখ মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যের কাতারে যুক্ত হয়েছে। শহরের শ্রমিকের আয় কমেছে ৮০ শতাংশ এবং গ্রামীণ শ্রমিকের আয় কমেছে ১০ শতাংশ। বছর শেষে অর্থনীতির লকডাউন খুলতে থাকলে এর শতকরা ৫০ ভাগ দারিদ্র্য থেকে উত্তরণ করলেও বাকি ৫০ শতাংশ স্থায়ীভাবে দারিদ্র্যরেখার নিচেই থেকে যাবেন।

জলবায়ু দারিদ্র্যের অভিঘাত

জলবায়ু পরিবর্তন–সম্পর্কিত আন্তসরকারি প্যানেল (আইপিসিসি) পঞ্চম মূল্যায়নে (এআর ৫,২০১৪) প্রাক্কলন করে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবে ফসলের স্বল্প উৎপাদনশীল পরিস্থিতিতে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ দারিদ্র্য হার নিট ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ বছরে আনুমানিক ১ শতাংশ করে দারিদ্র্য বাড়বে। এই সংখ্যা বছরে গড়ে সোয়া আট লাখের বেশি।

মধ্য আয়ের দেশে উত্তরণ ও দারিদ্র্যরেখা
বিশ্বব্যাংকের সংজ্ঞা অনুসারে মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের দারিদ্র্যরেখার একটা উত্তরণ অবশ্যম্ভাবী। অর্থাৎ দারিদ্র্য পরিমাপের সংজ্ঞায় বর্তমানের ১.৯৯ ডলারের দৈনিক আয় পদ্ধতি বাতিল হবে এবং তা ৩.২০ ডলারের নতুন রেখা দিয়ে প্রতিস্থাপিত হবে। ফলে মোট দারিদ্র্যের ভিত্তি সংখ্যায় ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, পিপিপি-২০১১ দারিদ্র্যরেখা ১.৯ ডলার থেকে পিপিপি-২০১১ দারিদ্র্যরেখা ৩.২–এ উত্তরণ ঘটলে তা মোট জনসংখ্যার আনুমানিক ১ শতাংশ অন্তর্ভুক্ত করে। এতে অন্তত ১৬ লাখ ৪৬ হাজার মানুষ দারিদ্র্যের নতুন সংজ্ঞায় পড়ে যাবে।

স্বাস্থ্যগত দারিদ্র্য এবং চক্রাকার দারিদ্র্যের সংখ্যা, জন্মহারের দিক থেকে দরিদ্র জনসংখ্যা বাড়ার স্বাভাবিক অংশ বাদ দিয়েই মোট দারিদ্র্য জনসংখ্যার প্রায় ২৬ দশমিক ৬৩ শতাংশে দাঁড়ায়, মোট ৪ কোটি ৩৮ লাখ। শুধু কোভিড-১৯ এবং মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার যুগপৎ প্রভাবে দারিদ্র্য হার ৫.৮৩ শতাংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রশ্ন হচ্ছে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট হিসেবে দারিদ্র্যকে ২০৩০ সালের মধ্যে অর্থাৎ এক দশকের মধ্যে ২৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ থেকে শূন্যে (যদিও সংজ্ঞানুসারে ৩ শতাংশ) নামিয়ে আনার মতো প্রস্তুতি ও সক্ষমতা আদৌ বাংলাদেশের আছে কি? পুরোনো পরিকল্পনায় বর্ধিত দারিদ্র্যের নতুন সংখ্যাকে এত ব্যাপক হারে কমিয়ে আনা যাবে কি? এই ব্যাপক বর্ধিত দারিদ্র্যকে অ্যাড্রেস করতে দুর্নীতি অপব্যবস্থা অবসানের পাশাপাশি নতুন দারিদ্র্য বিমোচন কৌশল ও তার বাস্তবায়ন পরিকল্পনা দরকার নয় কি?

উখিয়ায় রোহিঙ্গা শিবিরে অস্ত্রধারী দুই পক্ষের গোলাগুলিতে নিহত ১

কক্সবাজারের উখিয়ায় দুই দল অস্ত্রধারীর মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় মোহাম্মদ জাবেদ (২০) নামের একজন নিহত হয়েছেন। তিনি রোহিঙ্গা নাগরিক। তিনি উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের তানজিমারখোলা রোহিঙ্গা শিবিরের ডি/৪ ব্লকের বাসিন্দা। তাঁর বাবার নাম মোহাম্মদ ইসলাম।

গতকাল সোমবার দিবাগত রাত একটার দিকে উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের তানজিমারখোলা রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরে ডি/৮ ব্লকে এই ঘটনা ঘটেছে।

প্রথম আলোকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম তারিক।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও এপিবিএন সূত্র জানায়, গতকাল রাতে রোহিঙ্গা শিবিরের মোজাম্মেল ওরফে শেখ ও মৌলভি ইউনুসের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১২ জন অস্ত্রধারী ডি/৮ ব্লকের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। স্থানীয় পালংখালীর ঘোনারপাড়ার নুরুল হাকিম ওরফে মনুইয়ার নেতৃত্বে সাত থেকে আটজন এ সময় তাদের পথরোধ করেন। তাঁরা রাতের বেলায় শেখের পক্ষের লোকজনকে ঘোরাঘুরি করতে নিষেধ করেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। তিন থেকে চারটি গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটে। ওই সময় উভয় পক্ষের গোলাগুলিতে রোহিঙ্গা শিবিরের ডি/৪ ব্লকের বাসিন্দা মোহাম্মদ জাবেদ গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাঁকে উদ্ধার করে রোহিঙ্গা শিবিরের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম তারিক বলেন, নিহত রোহিঙ্গা নাগরিকের লাশটি উদ্ধার করে শিবিরের ইনচার্জ (সিআইসি) কার্যালয়ে রাখা হয়েছে। লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানোর কাজ চলছে। এ ঘটনায় মামলা হবে।

শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ফেরি চলাচল বন্ধ, দীর্ঘ যানজট

শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে ঘনকুয়াশায় ফেরি চলাচল রোববার (২৪ জানুয়ারি) রাত ১০টা থেকে বন্ধ রয়েছে। মাঝ পদ্মায় ৩টি ফেরিতে প্রায় চার শ যাত্রী ও বেশকিছু যানসহ আটকা পড়েছে। 

বিআইডব্লিউটিসির ম্যানেজার আহম্মদ আলী সময় নিউজকে জানান, বহরের ১৭ ফেরির মধ্যে ১৫টি ফেরি চলাচল করছিল। কিন্তু কুয়াশার কারণে বয়াবাতি কিছুই দেখা না যাওয়ার কারণে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। দীর্ঘ সময় ফেরি বন্ধ থাকায় ঘাটে অপেক্ষা করছে শত শত যান। সময় বৃদ্ধির সাথে যানবাহনের লাইন আরও দীর্ঘ হচ্ছে।

লাশবাহী গাড়িসহ বহু জরুরি যান ঘাটে দীর্ঘ সময় ধরে আটকে আছে। ফেরিতে আধুনিক ফগ লাইট স্থাপনের দাবি ভুক্তভোগীদের।

আগে যে ৩টি ফেরিতে ফগ লাইট ছিল সেগুলো কার্যকর নেই। সাড়ে ১০ কিলোমিটারের এই নৌপথ তাই পারি দেয়া যাচ্ছে না। ৮৭টি লঞ্চ ও সাড়ে চার শ স্পীডবোর্ট এবং কয়েক ট্রলার সবই বন্ধ এখন। এছাড়া ঘাটে পর্যাপ্ত টয়লেট সুবিধা না থাকায় ক্ষুব্ধ ভুক্তভোগীরা।

ঘুষ দিয়ে নারীর সঙ্গে সময় কাটান হল–মার্কের তুষার

এক নারীর সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পেতে হল-মার্কের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) তুষার আহমদ কাশিমপুর কারাগার-১-এর দুজন কর্মকর্তা ও কয়েকজন কর্মচারীকে ঘুষ দিয়েছিলেন। তুষার কারাগারের জেলারকে ১ লাখ, ডেপুটি জেলারকে ২৫ হাজার এবং সার্জেন্ট ইনস্ট্রাক্টর, গেট সহকারী প্রধান কারারক্ষীকে ৫ হাজার টাকা করে ঘুষ দিয়েছিলেন।

১৪ জানুয়ারি কারা মহাপরিদর্শকের কাছে দেওয়া জ্যেষ্ঠ জেল সুপার রত্না রায়ের প্রতিবেদনে এ কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ঘটনার দিনের ভিডিও ফুটেজে রত্না রায়ের সম্পৃক্ততা দেখা গেলেও প্রতিবেদনে এই কর্মকর্তা নিজের কোনো দায় বা অবহেলার কথা উল্লেখ করেননি।

প্রতিবেদনে রত্না রায় ওই দিনের ঘটনার জন্য জেলার নূর মোহাম্মদ মৃধাকে প্রধানত দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, জেলার নূর মোহাম্মদ মৃধার অনুমতি নিয়ে পুরো ঘটনার সঙ্গে কাশিমপুর কারাগারের ডেপুটি জেলার মো. সাকলায়েন ছিলেন। তিনি বলেন, ওই দিন দায়িত্ব পালনরত ডেপুটি জেলার ও কারারক্ষীদের জবানবন্দি নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন। তবে জেলারের জবানবন্দি নেননি। এর পেছনে যুক্তি হিসেবে রত্না রায় বলেন, যেহেতু পুরো ঘটনা জেলারের তত্ত্বাবধানে সংঘটিত হয়েছে, তাই জেলারকে না জানিয়ে ওই দিন যাঁরা দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁদের জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে রত্না রায়ের মুঠোফোনে ও কারাগারের টেলিফোনে একাধিকবার কল করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তবে জেল সুপার রত্না প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, ঘটনাটি সম্পূর্ণভাবে তাঁর অগোচরে ও গোপনে হয়েছে। কারাগারের গেটে জেলারই তাঁদের কারাগারে প্রবেশের অনুমতি দেন এবং ডেপুটি জেলার তাঁদের রিসিভ করেন, যা সিসিটিভি ফুটেজে রয়েছে। সামগ্রিক বিষয়টি ওয়াকিটকির মাধ্যমে না বলে গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে মুঠোফোনের মাধ্যমে হওয়ায় কেউ জানতে পারেনি। তাঁর দাবি, তাঁকে না জানাতেই এসব করা হয়েছে।

অবশ্য জেলার নূর মোহাম্মদ মৃধা তাঁর বিষয়ে জেল সুপারের অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেছেন, তিনি মাত্র চার মাস আগে এ কারাগারের দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, জেল সুপারের নির্দেশেই তাঁদের দেখা করার অনুমতি দিয়েছেন। তাঁদের কারাগারে ঢোকার সময় জেল সুপার কারাগারের অফিসেই ছিলেন। তিনি ২০ মিনিট পর বের হয়ে যান। ওই প্রতিষ্ঠানের পরিবারের সবার সঙ্গেই জেল সুপারের সখ্য রয়েছে বলেও জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, ৬ জানুয়ারি তুষার আহমদ কারাগারে এক নারীর সঙ্গে সময় কাটান।

ওই দিনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে দুই যুবকের সঙ্গে ওই নারী কারাগারের কর্মকর্তাদের কক্ষের দিকে যান। সেখানে ওই নারীকে ডেপুটি জেলার সাকলায়েন স্বাগত জানান।

ফুটেজে আরও দেখা যায়, ওই নারী কক্ষে ঢোকার পর সাকলায়েন বেরিয়ে যান। এরপর জেল সুপার রত্নার কক্ষের দিকে যান তুষার। পরে তুষার ও ওই নারী সাকলায়েনের কক্ষে ফেরেন। সেখানে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা ছিলেন তাঁরা।

রত্না রায় প্রতিবেদনে বলেন, হাজতি বন্দী তুষার একজন সাধারণ বন্দী শ্রেণিপ্রাপ্ত নন। ডেপুটি জেলার গোলাম সাকলায়েন ও গেট ওয়ার্ডের সহকারী প্রধান কারারক্ষী খলিলুর রহমান জানিয়েছেন, তাঁরা জেলারকে জানিয়ে তুষারকে কারাগারের কার্যালয়ে নিয়েছিলেন। রত্না প্রতিবেদনে জানান, জেলারের সংশ্লিষ্টতা ছাড়া একজন বিচারাধীন আসামির সঙ্গে কারও সাক্ষাতের জন্য কারাগারের অফিসে আসা সম্ভব নয়। জেলারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপারকে অবহিত করার কথা। কিন্তু জেলার তা করেননি।

কাশিমপুর কারাগার সূত্রে জানা যায়, তুষার আহমদ তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছেন, ওই নারী তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, দোষী জেল সুপার, জেলারসহ জড়িত সব কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তদন্তও চলছে। তাঁদের সবার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বি এন পির মিছিলে পুলিশের হামলা-মামলার আসামীর সংখ্যা বেড়েই চলছে

রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষ্যে বিক্ষোভ সমাবেশে গত ৩০ শে ডিসেম্বর ২০২০ ইং তারিখে পুলিশের হামলায় শতাধিক ব্যাক্তি আহত হয়। এই ঘটনার পরপর পুলিশ বাদী হয়ে সেই সময় অনেক অজ্ঞাতনামা ব্যাক্তি ও একই পরিবারের একাধিক ব্যাক্তিকে মামলায় আসামী করলেও পরবর্তী সময়ে এই মামলার আসামী সংখ্যা বেড়েই চলছে। আমাদের সংবাদাদাতার মাধ্যমে জানা যায় যে এই মামলায় এখন একই পরিবারের প্রবাসী সদস্য সহ এখন আসামীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাতে। একই ঘটনা ঘটছে আরো অন্যান্য যত মামলা হয়েছে সেদিনের বিভিন্ন কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে, সেগুলোতেও। অন্যায়ভাবে সবাইকে বিভিন্ন মামলায় ফাসিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে বিএনপির যে অভিযোগ, সেই অভিযোগের সত্যাসত্য যাচাই করবার জন্যে এই প্রতিবেদক রূপনগরের মামলাটির ব্যাপারে অনুসন্ধান চালান। 

ঘটনার বিবরণ থেকে জানা যায় যে গত ৩০ শে ডিসেম্বরে ২০২০ইং তারিখে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে মিরপুরের রূপনগরে এক্টি বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশের এক পর্যায়ে পুলিশ অতর্কিতে সমাবেশের উপর টিয়ার গ্যাস ও লাঠি পেটা করতে শুরু করে। যার ফলশ্রুতিতে ঘটনাস্থলেই প্রায় শতাধিক ব্যাক্তি আহত হয় এবং অনেককেই আহত অবস্থায় হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করে এবং এলাকার সাবেক সাংসদ জহির উদ্দিন স্বপনের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত উলিয়ার হোসাইন এবং তাঁর ভাগ্নি-পুত্র এনামুলকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে একই দিনে এই একই মামলার এজাহারে উলিয়ারের প্রবাসী ভাগনে মোঃ শহীদুল ইসলামকেও এই মামলার আসামী করা হয়। এই ছাড়াও যুক্তরাজ্য প্রবাসী আরেক ব্যাক্তি মোঃ মইন উদ্দিন চৌধুরীকেও আসামী করা হয়। এদের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে এরা কেউ-ই সেদিন বাংলাদেশে ছিলেননা। 

পুলিশের সূত্রে জানা গেছে অজ্ঞাতনামা আসামীর নাম আগের থেকেই এই মামলায় থাকার ফলশ্রুতিতে পুলিশ পরবর্তী সময়ে তাদের ইচ্ছেমত আসামীর নাম বসিয়ে নিচ্ছে এবং ক্রমাগত বিএনপি সমর্থক যাকে-তাকে বিশেষ করে উলিয়ার হোসাইনের পরিবারকে হয়রানি করছে।

সাম্প্রতিক সময়ে এই মামলায় উলিয়ারের আরেক ভাই আওলাদ হোসাইনকেও এই মামলার আসামী করা হয় যিনি বর্তমানে জামিনে রয়েছেন বলে জানা যায়। এদিকে উলিয়ার হোসাইন এবং এনামুল হক দুজনেই এই মামলায় জামিন পেয়েছেন। কিন্তু উলিয়ার আর আওলাদের ভাগ্নে শহীদুলের তিন ভাইকেও পরবর্তীতে মামলায় জড়ানো হয়  – মোঃ মেজবাহ উল ইসলাম, মোঃ রফিকুল ইসলাম এবং শফিকুল ইসলামকে আসামী দেখিয়ে গ্রেফতার করা হয়, যাদের কেউই এখনো জামিন পাননি। একই পরিবারের এত সংখ্যক ব্যাক্তিকে একই মামলায় আটক কিংবা আসামী করায় শুধু রূপনগর নয়, সারা বাংলাদেশেই এই সংবাদ নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। এই ঘটনা সবক্ষেত্রেই ঘটছে। যাদের টার্গেট করা হচ্ছে, তাদের পুরো পরিবারের বিরূদ্ধেই পুলিশ দিয়ে আক্রমণ করা হচ্ছে বলে জানান এলাকার একজন উঠতি বিএনপি নেতা। গায়েবী মামলার অভিযোগ গত কয়েক বছর ধরে তীব্র হয়েছে এই সরকারের বিরূদ্ধে। 

এই ব্যাপারে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সিনিয়ার নেতা রুহুল কবির রিজভী’র কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘অবস্থা এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে এই আম্মলায় আমাদের চেয়ার পার্সন দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কিংবা দেশ নায়েক তারেক রহমানকেও আসামী করা হলে আসলে আমরা অবাক হবো না। সরকার তার পেটোয়া পুলিশ বাহিনীকে নিয়ে যা করছে তা আসলে রাষ্ট্র পরিচালনা মনে হয়না। মনে হয় বাংলাদেশটা একটা নরকে পরিণত হয়েছে’

এই ব্যাপারে রূপনগর থানায় যোগাযোগ করা হলে থানার কোনো কর্মকর্তাই কথা বলতে রাজী হন নাই। তবে এই মামলাকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মামলা বলেই আখ্যায়িত করছেন এলাকাবাসী থেকে শুরু করে সকলেই।

ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে

বাংলাদেশে করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ শক্তিশালী না হওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি আর বাড়ানো হচ্ছে না। আগামী ৪ফেব্রুয়ারি থেকে সীমিত পরিসরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষার দায়িত্বে থাকা সরকারের দুই মন্ত্রণালয়। দুই মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকরা আজ বৃহস্পতিবার ভার্চুয়াল বৈঠক করে এ সিদ্ধান্ত নেন। এ বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্মত হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কীভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে, কোন প্রক্রিয়ায় খোলা হবে সেটি তারা ঠিক করবেন। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন খুব শিগগিরই প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে।

আরেকটি সূত্র থেকে জানা যায়, ফেব্রুয়ারি থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হলেও ক্লাসের ক্ষেত্রে যাদের পরীক্ষা আছে, তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে ২০২১ সালের এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা প্রাধান্য পাবে। এরপর ধাপে ধাপে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠানো হবে। যাতে ফেব্রুয়ারির ৪ তারিখের মধ্যে এসএসসি ও এইচএসসির ক্লাস শুরু করা যায়।

বৈঠক শেষে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কীভাবে খোলা হবে, কোন শ্রেণিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, এসব বিষয়ের একটি বিশদ পরিকল্পনা তৈরি করতে দুই মন্ত্রণালয়ের সচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে।

বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, দুই মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও অংশ নেন।

করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে সারাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় গত বছরের প্রাথমিকের সমাপনী, জেএসসি, এইচএসসিও পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। বাতিল করা হয় শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষাও।

নারীর গোসলের ভিডিও করার অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে গোপন ক্যামেরায় নারীর গোসলের ভিডিও ধারণ ও দম্পতির অন্তরঙ্গ ভিডিও ধারণের চেষ্টার অভিযোগে উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিমেল সিকদার (২৩)কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি থলপাড়া গ্রামের হাফিজুর রহমানের ছেলে।

গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলা সদরের ইউনিয়ন পাড়া এলাকার একটি বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, প্রায় আট মাস আগে হিমেল সিকদার প্রেমের সম্পর্কের মাধ্যমে বিয়ে করেন। তবে পরিবারের সদস্যরা তাদের বিয়ে না মানায় হিমেল সদরের ইউনিয়ন পাড়া এলাকায় একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন। হিমেল কয়েকদিন ধরে গোপন ক্যামেরার মাধ্যমে ওই বাসার মালিকের মেয়ের গোসলের ভিডিও ধারণ করে।

তিনি গত মঙ্গলবার রাতে ওই বাসার ভাড়াটিয়া দম্পতির অন্তরঙ্গ মুহূর্তের দৃশ্য ধারণ করতে ঘরের ধরণার সঙ্গে গোপন ক্যামেরা সাঁটাতে থাকেন। যা দম্পতি দেখে ফেলেন। পরে ভাড়াটিয়া ও বাসার মালিকেরা আসলে প্রথমে হিমেল গোপন ক্যামেরার কথা অস্বীকার করলেও তাদের চাপে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।

এছাড়া গতকাল বুধবার দুপুরে তাঁর মুঠোফোন থেকে বাড়ির মালিকের মেয়ের গোসলের পাঁচটি ভিডিও দেখতে পান ভাড়াটিয়ারা। খবর পেয়ে রাত ৮টার দিকে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।

এ ব্যাপারে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সাদ্দাম হোসেন খান জানান, বৃহস্পতিবার সকালে জরুরী সভা ডাকা হয়েছে। ব্যক্তির দোষ সংগঠন নিতে পারে না। হিমেলকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদক বরাবর সুপারিশ পাঠানো হবে।

মির্জাপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. খায়রুল লস্কর জানান, হিমেল ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে। তাঁর মুঠোফোন ও গোপন ক্যামেরা জব্দ করা হয়েছে। থানায় পর্ণগ্রাফি আইনে মামলা হয়েছে বলে জানান।

৪১তম বিসিএস প্রিলি পেরোতে সময়টি যেভাবে কাজে লাগাতে পারেন

আগামী ১৯ মার্চ ৪১তম বিসিএসে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ বিসিএসে আবেদন করেছিলেন ৪ লাখ ৭৫ হাজার জন। নিয়োগ দেওয়া হবে ২ হাজার ১৬৬ জনকে। হাতে আর সময় বেশি নেই, আছে ২ মাসের মতো। সময়টি বিসিএসপ্রত্যাশী প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হতে পরীক্ষার আগপর্যন্ত সময়টি যেভাবে কাজে লাগাতে পারেন।

১.
আপনার প্রস্তুতি কতটুকু হয়েছে, কী কী বিষয় বাকি রয়েছে, পরীক্ষার আর কত দিন বাকি আছে, এসব বিষয়ে দুশ্চিন্তা বাদ দিয়ে আজই বই নিয়ে বসে পড়ুন।

২.
আপনার কাছে যেসব বই আছে, সেগুলোই পড়ুন। চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে বাহারি বই কিনলে শুধু বিভ্রান্তই হবেন। বই কেনা না থাকলে যেকোনো এক সেট বই কিনুন।

৪.
বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার সিলেবাসটি সঙ্গে রাখুন এবং পুরো সিলেবাসটি ভালোভাবে পড়ে নিন।

প্রতিটা বিষয় যেভাবে পড়তে পারেন

১. বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
এই বিষয় থেকে ৩৫ নম্বরের প্রশ্ন হবে, তাই এখানে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিন। ব্যাকরণের যে অংশগুলো থেকে প্রতিবার প্রশ্ন হয় (যেমন ধ্বনি, সন্ধি, সমাস, বানান প্রভৃতি), সেগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। সাহিত্য অংশের প্রাচীন ও মধ্যযুগ থেকে ৫টি প্রশ্ন হয়। এই অংশে সিলেবাস খুব একটা বড় নয়। তাই এই অংশ আগে পড়ুন। আধুনিক সাহিত্যে বিখ্যাত লেখকদের সাহিত্যকর্ম আগে পড়ুন। সময় পেলে অন্যগুলো পড়বেন।

৪১তম বিসিএস প্রিলি পেরোতে সময়টি যেভাবে কাজে লাগাতে পারেন

ফাইল ছবি

২. ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য
এখানেও ৩৫ নম্বরের প্রশ্ন হবে। এই অংশে ভালো করতে পারলে আপনি অনেক প্রতিযোগীর চেয়ে এগিয়ে যাবেন, তাই এখানে গুরুত্ব দিন।
ইংরেজি গ্রামারের যে অংশগুলো থেকে প্রতিবার প্রশ্ন হয় (যেমন Appropriate preposition, Phrase and Idioms, Group verbs, Subject-verb agreement, Conditionals প্রভৃতি), সেগুলো আগে পড়ুন। সাহিত্য অংশে বিখ্যাত লেখকদের সাহিত্যকর্ম, তাঁদের উদ্ধৃতি, যুগ, বিভাগ, লিটারারি টার্ম প্রভৃতি আগে পড়ে ফেলুন।

৩. বাংলাদেশ বিষয়াবলি
এই অংশ থেকে ৩০ নম্বরের প্রশ্ন হয়। এই বিষয়ের সিলেবাস অনেক বড়, তাই গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো আগে পড়ুন। যেমন ভাষা আন্দোলন থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত (১৯৪৭-৭১) ইতিহাস, অর্থনৈতিক সমীক্ষা থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি (জিডিপি, জিএনআই, এডিপি, দারিদ্র্য বিমোচন, জাতীয় আয়-ব্যয়, কৃষিজ সম্পদ, শিল্প উৎপাদন, আমদানি-রপ্তানি প্রভৃতি), সিলেবাস দেখে বাংলাদেশের সংবিধান (আগের প্রশ্নগুলো অবশ্যই)।

৪. আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি
এ বিষয়ে ২০ নম্বরের প্রশ্ন এলেও সিলেবাস অনেক বড়। তাই এই অংশ পড়ার সময় কৌশলী হতে হবে। আন্তর্জাতিক সংগঠনসমূহ ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানাদি, বিভিন্ন যুদ্ধ ও চুক্তি, সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ—এই বিষয়গুলো সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পড়ুন।

৫. ভূগোল, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বাংলাদেশের অবস্থান, সীমানা, আবহাওয়া, জলবায়ু, পরিবেশগত চ্যালেঞ্জসমূহ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ—এই টপিকগুলো অবশ্যই পড়বেন। বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে আপনার প্রস্তুতি ভালো থাকলে এই অংশের অনেক কিছু আপনার আগেই পড়া হয়ে যাবে।

৬. সাধারণ বিজ্ঞান
সাধারণ বিজ্ঞান থেকে ১৫ নম্বরের প্রশ্ন এলেও সিলেবাস অনেক বড়। তাই আগের বিসিএসের প্রশ্নগুলো আগে দেখুন। যেকোনো গাইড থেকে নন-ক্যাডারসহ অন্যান্য পরীক্ষায় আসা প্রশ্নগুলো পড়ে নিন। এরপর সময় পেলে সিলেবাস দেখে টপিকগুলো পড়তে পারেন।

৭. কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি
যেকোনো গাইড বই থেকে সিলেবাস মিলিয়ে পড়ুন। আগের বিসিএসের প্রশ্ন অবশ্যই পড়বেন।

৮. গাণিতিক যুক্তি
আপনি যে বিভাগেরই ছাত্র হোন না কেন, নিয়মিত অনুশীলন ছাড়া গণিতে ভালো করা সম্ভব নয়। তাই পরীক্ষার আগপর্যন্ত প্রতিদিন নির্দিষ্ট কিছু সময় গণিত অনুশীলন করুন।

৯. মানসিক দক্ষতা
প্রথমে আগের বিসিএসের প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় আসা প্রশ্নগুলো বুঝে সমাধান করুন। সময় পেলে যেকোনো গাইড বই থেকে সিলেবাস দেখে পড়ুন।

১০. নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন
এই অংশে কম গুরুত্ব দিন। কিছু কোটেশন পড়তে পারেন। নিজের কমনসেন্স কাজে লাগিয়ে কয়েকটি উত্তর করা যায়, তবে সব প্রশ্নের উত্তর করতে যাওয়া বোকামি।

বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। এতে ভালো করতে হলে প্রস্তুতি শুরু করতে হবে এখনই

বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। এতে ভালো করতে হলে প্রস্তুতি শুরু করতে হবে এখনই
 ছবি: প্রথম আলো

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে কিছু পরামর্শ
১.
আগের বিসিএসের প্রশ্ন (বিশেষ করে ৩৫-৪০) সলভ না করে পরীক্ষা দিতে যাবেন না।

২.
আন্দাজে কোনো প্রশ্নের উত্তর করতে যাবেন না। মনে রাখবেন, প্রশ্ন সহজ বা কঠিন যা-ই হোক, ৬০ শতাংশ নম্বর পেলে আপনি অবশ্যই উত্তীর্ণ হওয়ার মতো অবস্থায় যাবেন।

৩.
যেকোনো একটি মডেল টেস্টের বই থেকে ঘড়ি ধরে নিজে নিজে পরীক্ষা দিন। এতে টাইম ম্যানেজমেন্ট নিয়ে আপনার ধারণা তৈরি হবে।

৪.
পরীক্ষার হলে অন্যের কথা শুনে বা নির্ভর করে উত্তর করবেন না, করলে শুধু নেগেটিভ মার্কিং হওয়ার আশঙ্কাই বাড়বে।

৫.
অনেকে নির্দিষ্ট কিছু বিষয় দিয়ে উত্তর করা শুরু করতে চান, তবে সে বিষয় নির্বাচন ও প্রশ্নে খুঁজতে গিয়ে কালক্ষেপণ হয়। তাই ধারাবাহিকভাবে উত্তর করাই ভালো (গণিত পরে করতে চাইলে ভিন্ন কথা)।

কাল থেকে তাপমাত্রা বাড়বে, শৈত্যপ্রবাহ থাকবে আরো ৩ দিন

দেশের অনেক অঞ্চলের ওপর দিয়েই বর্তমানে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, সঙ্গে রয়েছে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা। এমনকি উত্তরাঞ্চলের অনেক এলাকায় সূর্যেরই দেখা মিলছে না।

আগামীকাল সোমবার (১৮ জানুয়ারি) থেকে এই অবস্থার উন্নতি হলেও শীত থাকবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

জানা যায়, গত মঙ্গলবার থেকে দেশে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়। এই শৈত্যপ্রবাহের ফলে চরম দুর্ভোগে আছে দেশের নিম্ন আয়ের মানুষ। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের মানুষ বেশি দুর্ভোগে পড়েছে। ওই এলাকায় ঘন কুয়াশা থাকায় এবং সূর্যের দেখা না মেলায় খেটে খাওয়া মানুষজন কাজকর্মও করতে পারছে না।

আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কাল সোমবার থেকে মূলত তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করবে। তবে যেহেতু কুয়াশা আছে, সূর্যের দেখা মিলছে না, এ জন্য শীতের অনুভূতি থাকবে। আর মঙ্গলবার অথবা বুধবার থেকে শৈত্যপ্রবাহ কাটতে শুরু করবে। জানুয়ারি মাসের পুরোটাই শীতকাল। তাই এই মাসে শৈত্যপ্রবাহ থাকুক আর নাই থাকুক শীত থাকবে।’

গতকালের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, শ্রীমঙ্গল, পাবনা, বগুড়া, নওগাঁ, দিনাজপুর, চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলসহ রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশা পড়তে পারে।

গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল সিলেটের শ্রীমঙ্গলে ৭.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩.৬, ময়মনসিংহে ১১.৫, চট্টগ্রামে ১৪, সিলেটে ১২, রাজশাহীতে ১০.৬, রংপুরে ১১, খুলনায় ১২.৬ এবং বরিশালে ১০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

করোনাকালে অসহায় মানুষের ত্রাতা একজন মনীষা

সে এক ভীষণ ভয়ের সময়। চীন ও পশ্চিমা দেশগুলোতে করোনায় মৃত্যুর খবরগুলো যখন এ দেশের মানুষ পাচ্ছিল, সঙ্গে জানছিল করোনা ক্রমে সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে, এ দেশেও করোনা আসবে কি না, সে আতঙ্কে তখন দিন কাটছে। ৮ মার্চ যখন এ দেশেই প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার কথা ঘোষণা হলো, মানুষের সে সময়টার আতঙ্কের সঙ্গে শুধু একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালীন আতঙ্কেরই তুলনা চলে। জাতির বড় দুটি ক্রান্তিকালের সূচনাই যে মার্চে, এ–ও এক কাকতালীয়ই বটে।

বরিশাল বিভাগে প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ৯ এপ্রিল পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলায়। আর বরিশাল জেলায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ১২ এপ্রিল। সারা দেশের মতো বরিশালের মানুষও তখন দিগ্ভ্রান্ত। এ ধরনের বৈশ্বিক মহামারিতে কী করতে হবে, সে অভিজ্ঞতা আগে ছিল না বললেই চলে। ফলে প্রথম দিকের আতঙ্ক আর লকডাউনে শ্রমজীবী, দরিদ্র মানুষগুলো সবচেয়ে প্রান্তিক হয়ে উঠেছিল। করোনা রোগী, বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াতে যখন সবার অজানা আতঙ্ক, সুস্থ সচ্ছল মানুষ যখন নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে পরিবারের গণ্ডিতে, তখন মাঠে নামেন মনীষা। পুরো নাম মনীষা চক্রবর্তী। গত বছরের মার্চ থেকে আজও নিরলস আর অবিচল দৃঢ়তায় করোনা রোগী থেকে শুরু করে মানবেতর জীবন কাটানো মানুষদের সহায়তা করে চলেছেন তিনি।

চিকিৎসক মনীষা চক্রবর্তী

চিকিৎসক মনীষা চক্রবর্তী সাইয়ান

বরিশালের মানুষের কাছে মনীষার পরিচিতি শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের নেতা হিসেবে। কিন্তু করোনাকালে তিনি আবির্ভূত যেন অসহায় মানুষের ত্রাতা হিসেবে। শুরুতে মানুষ যখন চিকিৎসা, খাদ্যসহ নানা সংকটে হিমশিম খাচ্ছিল, তখন তিনি সতীর্থদের নিয়ে ভয়-শঙ্কা উপেক্ষা করে বিপন্ন মানুষের দ্বারে দ্বারে ছুটতে থাকেন কখনো অক্সিজেন নিয়ে, কখনো অ্যাম্বুলেন্সে তুলে হাসপাতালে নেওয়ার কাজে। আবার কখনো লকডাউনে খাবার সংকটে পড়া পরিবারগুলোর জন্য ছুটে যান রান্না করা খাবার নিয়ে।

করোনাকালে জীবিকা হারানো মানুষের জন্য বিনা মূল্যের বাজার-সওদা নিয়ে তিনি খুলেছেন মানবতার বাজার। সেখান থেকে বিনা মূল্যে বিতরণ করেছেন চাল, ডালসহ সব নিত্যপণ্য। তারপর করোনা সচেতনতা কার্যক্রম থেকে শুরু করে সংকটে পড়া পরিবারগুলোতে শিশুখাদ্য জোগান, লকডাউন বাসায় খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বিনা মূল্যে মেডিকেল স্ক্রিনিং, বিনা মূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, বিনা মূল্যে অক্সিজেন ব্যাংক জোগান, করোনা দুর্যোগে খাদ্যসংকট মোকাবিলায় বীজ ও ফলের চারা বিতরণ—কোথায় ছিলেন না তিনি! পাশাপাশি অতিমারিকালে আসা মুসলমানদের ঈদ, হিন্দুধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজার মতো প্রধান ধর্মীয় উৎসবগুলোতেও তিনি ও তাঁর সতীর্থরা উপহার-খাদ্যসামগ্রী নিয়ে ছিলেন মানুষের পাশে।

এসব কারণেই মেহনতি মানুষের নেতা মনীষা এখন হয়ে উঠেছেন বিপন্ন মানুষের ত্রাতা। এসব মহতী কাজে মনীষার পেছনে ছিলেন তাঁর রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল–বাসদের একঝাঁক তরুণ নেতা-কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবক।

শৈশব থেকেই সংগ্রাম আর সেবার ব্রত

মনীষা অর্থ বুদ্ধি–প্রজ্ঞা। এই নামই যেন তাঁর পরিচয়। ছোটবেলা থেকেই বিতর্ক, খেলাধুলা, বিভিন্ন অলিম্পিয়াডে জেলা-বিভাগীয় পর্যায়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখা, সামাজিক-সাংস্কৃতিক কাজে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বরিশালে পরিচিতি পান মেধাবী মনীষা। বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি এবং এসএসসিতে জিপিএ–৫ পেয়ে উচ্চমাধ্যমিকে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন অমৃত লাল দে কলেজে। সেখান থেকে উচ্চমাধ্যমিকে ফের জিপিএ-৫ পেয়ে ভর্তি হন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে।

মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করার পর ৩৪তম বিসিএসে সহকারী সার্জন হিসেবে স্বাস্থ্য ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন মনীষা। কিন্তু চাকরিতে না গিয়ে তিনি মেহনতি মানুষের রাজনীতিতে নিজেকে উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত নেন। ব্যক্তিজীবনে ইচ্ছা করলে তিনি নির্বিঘ্ন জীবন পার করে দিতে পারতেন। চিকিৎসাশাস্ত্রে স্নাতক মনীষার ব্যক্তিজীবনের ত্যাগ, অদম্য সংগ্রাম বরিশালের মানুষের কাছে বেশ পরিচিত।

করোনাযোদ্ধা স্বেচ্ছাসেবকদের মাঝে মনীষা চক্রবর্তী

করোনাযোদ্ধা স্বেচ্ছাসেবকদের মাঝে মনীষা চক্রবর্তী
ফাইল ছবি

কিন্তু এখনকার দিনে এই ত্যাগ আর ভোগবাদী-বিলাসী জীবনের প্রতি এই নির্লিপ্ততা কীভাবে এল তরুণ মনীষার? উত্তর খুঁজতে যেতে হয় তাঁর ঠিকুজি-কুলুজিতে। প্রগতিশীল পরিবারে জন্ম নেওয়া মনীষার পিতামহ বিশিষ্ট আইনজীবী শহীদ সুধীর কুমার চক্রবর্তী। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় রাজাকাররা তাঁকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। মনীষার বাবা বিশিষ্ট আইনজীবী তপন কুমার চক্রবর্তী ৯ নম্বর সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। প্রগতিশীল পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠা মনীষার শৈশব অতিবাহিত হয় ফুফা বিশিষ্ট প্রকৃতিবিজ্ঞানী দ্বিজেন শর্মার সংস্পর্শে।

মনীষা বর্তমানে বাসদের বরিশাল জেলার সদস্যসচিব। বাসদের নেতৃত্ব পাওয়ার পর শ্রমজীবী মানুষের পাশাপাশি বরিশাল নগরের বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা আদায়ের সংগ্রামে প্রতিনিয়ত মাঠে থেকে একজন সংগ্রামী রাজনৈতিক যোদ্ধা হিসেবে পরিচিতি পান তিনি। এ জন্য তাঁকে কারাবাসও করতে হয়েছে।

করোনাকালে ‘এক মুঠো চাল’ কর্মসূচির মাধ্যমে দরিদ্রদের খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছেন মনীষা

করোনাকালে ‘এক মুঠো চাল’ কর্মসূচির মাধ্যমে দরিদ্রদের খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছেন মনীষা
ফাইল ছবি

২০১৮ সালে বরিশাল সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে ব্যাপক আলোচনায় আসেন মনীষা। ভোটের দিন অনিয়মের প্রতিবাদে দুপুরে নির্বাচনে বর্জন করেন তিনি। তবে ভোট শেষ হলেও মাঠ ছাড়েননি তিনি। নানা রকম কার্যক্রমের মাধ্যমে মনীষা বরিশালবাসীর কাছে ইতিবাচক আলোচনার কেন্দ্রে আছেন। বিভিন্ন নাগরিক সমস্যা নিয়ে, শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন ছাড়াও বিভিন্ন দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন নিজেদের সীমিত সামর্থ্য নিয়ে। লড়ে যাচ্ছেন শ্রমজীবী মানুষ ও তরুণদের নিয়ে।

করোনাযোদ্ধা মনীষার ছুটে চলা

করোনাকালের শুরুতে মনীষা মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের পাশাপাশি শুরু করেন চিকিৎসা, সচেতনতা, খাদ্যসহায়তা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সহায়তাসহ বহুমুখী কাজ। লকডাউন ও লকডাউন–পরবর্তীকালে জরুরি রোগীদের হাসপাতালে নেওয়ার জন্য প্রথমে ১০টি ইজিবাইককে অ্যাম্বুলেন্সে রূপান্তর করেন এবং ৭ জুলাই থেকে পূর্ণাঙ্গ একটি অ্যাম্বুলেন্স সংগ্রহ করে রোগী পরিবহন করেন। এ কর্মসূচির নাম দেন ‘ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস’।

‘নির্ভয়’, ‘আস্থা’, ‘নির্ভীক’ ইত্যাদি নামে বরিশালজুড়ে গরিব রোগীদের সেবা দেয় মনীষাদের অ্যাম্বুলেন্সগুলো। এই কাজ করার জন্য গঠন করেন ২০ জনের একটি স্বেচ্ছাসেবী দল। এ পর্যন্ত ৪৮৫ জন রোগীকে ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সেবা দিয়েছেন।

‘মানবতার ঈদ উৎসব’ কর্মসূচির মাধ্যমে অসহায় মানুষের মাঝে রান্না করা খাবার তুলে দিচ্ছেন মনীষা চক্রবর্তী

‘মানবতার ঈদ উৎসব’ কর্মসূচির মাধ্যমে অসহায় মানুষের মাঝে রান্না করা খাবার তুলে দিচ্ছেন মনীষা চক্রবর্তী
ফাইল ছবি

২৮ জুন থেকে শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে অক্সিজেন সহায়তার জন্য খোলেন অক্সিজেন ব্যাংক। এই কর্মসূচির নাম ‘ফ্রি অক্সিজেন ব্যাংক’। ১৫টি অক্সিজেন সিলিন্ডার, ৬০টি অক্সিমিটার দিয়ে এই সার্ভিস চালু করেন তাঁরা। এ পর্যন্ত তাঁরা ১১৫ জন রোগীকে বাসায় গিয়ে বিনা মূল্যে অক্সিজেন–সেবা দেন। এ কাজে সাতজন স্বেচ্ছাসেবী সার্বক্ষণিক কাজ করছেন।

এ ছাড়া ৮ জন দক্ষ স্বেচ্ছাসেবকের মাধ্যমে মে মাসজুড়ে বরিশালের বিভিন্ন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাতে দুটি দলে গণহারে মানুষের স্ক্রিনিং করার কার্যক্রম চালান তাঁরা। এতে প্রায় ৫ হাজার ৫০০ মানুষের স্ক্রিনিং, ডেটা সংগ্রহ করে তাঁদের পরামর্শ দেন চিকিৎসক মনীষা ও তাঁর দল।

গত বছর ৫ ফেব্রুয়ারি থেকেই করোনাভাইরাস নিয়ে সচেতনতা তৈরিতে আলোচনা সভা, বস্তিগুলোতে গিয়ে মানুষদের সচেতন করার কাজ শুরু করেন মনীষা। নগরের ৩০টি ওয়ার্ডে তাঁরা স্বেচ্ছাসেবক দল গঠনের উদ্যোগ নেন। মার্চ মাসের শুরুতে করোনা সচেতনতা তৈরিতে ৫০ হাজার লিফলেট বিতরণ করেন। ১৫ মার্চ থেকে নগরের বস্তিবাসী, স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে ১৭ হাজার বোতল জীবাণুনাশক তৈরি করে বিতরণ শুরু করেন। স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে নিয়ে বিতরণ করেন ২৫ হাজার মাস্ক।

শিশুখাদ্য ও মানবতার কৃষি কার্যক্রমে বীজ বিতরণ করছেন মনীষা চক্রবর্তী

শিশুখাদ্য ও মানবতার কৃষি কার্যক্রমে বীজ বিতরণ করছেন মনীষা চক্রবর্তী
ফাইল ছবি

লকডাউন পরিস্থিতি ও খাদ্যসংকটের কথা বিবেচনা করে ২২ মার্চ মনীষা ও তাঁর দল ‘আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাঁচুক প্রতিটি মানুষ’ এ স্লোগান নিয়ে খাদ্যসহায়তা কর্মসূচি ‘এক মুঠো চাল’ সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করেন। এক হাজার বাজারের ব্যাগ তৈরি করে নগরের বিভিন্ন বাড়িতে সরবরাহ করেন মুষ্টি চাল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী। এতে মানুষের ব্যাপক সাড়া পড়ে। দুই-তিন দিন পর থেকেই ব্যাগে চাল, আলু নিয়ে তাঁদের কার্যালয়ে পৌঁছে দিতে থাকে মানুষ। এই কর্মসূচির আওতায় এক মাসের বেশি সময় ধরে তাঁরা প্রতিদিন ২০০ পরিবারকে চাল, ডাল, আলু, তেল বিতরণ করেন।

মানবতার বাজার

করোনাকালে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর আর্থিক সংকটের কারণে তাঁদের সহায়তার জন্য বাড়ি বাড়ি মুষ্টি চাল সংগ্রহ করে নগরের ফকিরবাড়ি রোডের একটি স্কুলমাঠে খোলেন বিনা মূল্যের বাজার কার্যক্রম। নগরের ফকিরবাড়ি সড়কের মাতৃছায়া স্কুলমাঠে ‘মানবতার বাজার’ নামে এই বাজার শুরু হয়। ১২ এপ্রিল থেকে এখানে মাস্ক, ওষুধ ছাড়াও চাল, ডাল, তেল, আলু, আটা, লবণ, বিভিন্ন সবজি, ডিমসহ ১৭টি খাদ্যপণ্য বিনা মূল্যে বিতরণ শুরু করেন। গড়ে প্রতিদিন দুই শতাধিক পরিবারকে এই বাজার থেকে প্রায় ৫০০ টাকার বাজার খাদ্যসহায়তা হিসেবে প্রদান করা হয়।

ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের উদ্বোধন করছেন মনীষা চক্রবর্তী

ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের উদ্বোধন করছেন মনীষা চক্রবর্তী
ফাইল ছবি

প্রায় পাঁচ মাস মাতৃছায়া স্কুলমাঠের পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ডে একাধিকবার এই বাজার পরিচালনা করা হয়। এ ছাড়া ‘মানবতার ঈদ বাজার’ নামে ঈদুল ফিতরে লাচ্ছা সেমাই, দুধ, চিনি পৌঁছে দেন ২ হাজার পরিবারে। ঈদুল ফিতরের আগে ১০০ এতিমখানার বাচ্চাদের নতুন পোশাক বিতরণ করেন তাঁরা। ১০টি এতিমখানায় খাবার এবং বেতন না পাওয়া ৫০ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে ২ হাজার টাকা করে নগদ অর্থ প্রদান করেন। ঈদের দিন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ২ হাজার ৫০০ দুস্থ পরিবারে রান্না করা উন্নত খাবার বিতরণ করেন। এ ছাড়া নগরের অক্সফোর্ড মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিভিন্ন কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি স্কুলের বেতন না পাওয়া ৮৫ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে ৩ হাজার টাকা করে নগদ অর্থ বিতরণ করেন। ঈদ উপলক্ষে নগরের বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ল্যাবের ৫০ জন শ্রমিককে ১ হাজার টাকা করে নগদ অর্থ বিতরণ করেন।

কোরবানি ঈদে ১ হাজার পরিবারকে চাল, মাংস বিতরণ, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের জন্য ৫০০ প্যাকেট রান্না করা খাবারের আয়োজন করা হয়। দুর্গাপূজার সময় ‘মানবতার শারদীয় উৎসব’ নামে ২০০ দুস্থ সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীকে শাড়ি এবং রান্না করা খাবার বিতরণ করেন।

১০টি ইজিবাইকের সঙ্গে ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসে যোদ হওয়া অ্যাম্বুলেন্সটি

১০টি ইজিবাইকের সঙ্গে ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসে যোদ হওয়া অ্যাম্বুলেন্সটি
ফাইল ছবি

বরিশাল শহর ছাড়াও মুলাদি, গৌরনদী, বাবুগঞ্জ (গুঠিয়া), বরগুনা, পটুয়াখালীতেও মানবতার বাজার কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

শিশুদের খাদ্যসংকট সমাধানে মানবতার বাজারে ‘শিশু খাদ্য কর্নার’ করা হয়। এখান থেকে যেসব পরিবারে ৫ বছরের নিচে বাচ্চা আছে, তাদের পর্যাপ্ত শিশুখাদ্য প্রদান করা হয়। এভাবে করোনাকালে মোট ৭৬০ পরিবারকে শিশুখাদ্য বিতরণ করেন।
করোনা দুর্যোগে খাদ্যসংকট মোকাবিলায় ‘বরিশালের কোনো জমিই থাকবে না পতিত, সবুজে সবুজে ভরে উঠুক প্রতিটি আঙিনা’—এই স্লোগান সামনে রেখে মনীষা ও তাঁর স্বেচ্ছাসেবক দল মোট ১২ হাজার সবজি, লেবু, ফুল ও ফলের চারা এবং বীজ বিতরণ করেন।

প্রথম আলোর মুখোমুখি মনীষা

করোনাকালের এসব কাজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে প্রথম আলোর মুখোমুখি হয়ে মনীষা চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা রাজনীতি করি মানুষের জন্য। মানুষের দুর্যোগের সময় যদি মানুষের পাশে দাঁড়াতে ব্যর্থ হই, তাহলে সবকিছু বৃথা হয়ে যাবে। এ রাজনীতিরও কোনো মূল্য থাকবে না। তাই আমাদের সীমিত সামর্থ্য দিয়ে আমরা চেষ্টা করেছি মানুষের পাশে থাকতে। জেলা বাসদের আহ্বায়ক ইমরান হাবিবের তত্ত্বাবধানে আমাদের সংগঠনের ছাত্র-শ্রমিক, নারী কর্মীরা দিন-রাত পরিশ্রম করে এই কাজে নিয়োজিত ছিলেন। দেশ-বিদেশ থেকে সামর্থ্যবান ও মানবিক ব্যক্তিরা এবং আমাদের পার্টির কর্মীরা এতে আর্থিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।’

আমরা মাত্র ২২ হাজার টাকা হাতে নিয়ে কোটি টাকার বেশি আর্থিক সহায়তার কাজ করেছি, যা আমাদের কাছেও অভাবনীয় মনে হয়। আমি মনে করি ন্যায়নীতি-ভালোবাসা, মানুষ আর সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকলে এটা সম্ভব।

মনীষা চক্রবর্তী

মনীষা বলেন, ‘আমরা মাত্র ২২ হাজার টাকা হাতে নিয়ে কোটি টাকার বেশি আর্থিক সহায়তার কাজ করেছি, যা আমাদের কাছেও অভাবনীয় মনে হয়। আমি মনে করি ন্যায়নীতি-ভালোবাসা, মানুষ আর সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকলে এটা সম্ভব। এই কার্যক্রম চালাতে গিয়ে আমাদের রাজনৈতিকভাবে হেনস্তা হতে হয়েছে। অনেক বাধা এসেছে। কিন্তু মানুষের ভালোবাসা, সমর্থনে সেসব চক্রান্ত সফল হয়নি। যেকোনো দুর্যোগে আমরা এভাবে মানুষের পাশে থাকতে চাই, থাকব।’

করোনাযোদ্ধা মনীষার বিষয়ে সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) বরিশাল জেলা সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা বলেন, ‘মূলত রাজনীতির লক্ষ্য হচ্ছে মানুষ, মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করা, সব মানবিক বিপর্যয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানো। কিন্তু আমাদের রাজনীতিতে এখন চিরায়ত সেই চরিত্র নেই। রাজনীতির এই আকালের মধ্যেও মনীষা চক্রবর্তীর মতো একজন রাজনৈতিক কর্মী সীমিত সামর্থ্য নিয়ে রাজপথের সংগ্রামের পাশাপাশি বিভিন্ন দুর্যোগে যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, তা অভাবনীয়। এতে আমাদের অনেক হতাশার মধ্যেও আশা জাগায়।’