সরকারের তিন পদক্ষেপ ডলার সাশ্রয়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণ, সুদহার বৃদ্ধি, ঋণপ্রবাহ কমানো * ডলারের জোগান বাড়লেই অনেক সমস্যা কেটে যাবে -ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ

বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে দেশের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় মৌলিক তিনটি পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ডলার সাশ্রয়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণ, সুদহার বৃদ্ধি এবং সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির আওতায় ঋণপ্রবাহ কমানো।

এছাড়া আরও কিছু সহযোগী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তবে এর মধ্যে একটি উদ্যোগের কারণে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো ঠিক আছে। ভোগ্যপণ্যের চাহিদা কমানো হচ্ছে। এতে আমদানি ব্যয় কমানোর ফলে রিজার্ভে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। লোডশেডিংয়ের কারণে জ্বালানি আমদানি কমবে। এতেও ডলার সাশ্রয় হবে। অন্যদিকে বাজারে টাকার সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ার নীতি গ্রহণ করা হয়েছে।

ফলে আমদানি খাতে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদাও কমবে। তবে এতে বেসরকারি খাতের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা আছে। যা কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এদিকে ঋণের সুদের হার বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এতে ঋণের খরচ বেড়ে যাবে। ফলে ঋণপ্রবাহ কমবে।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, মূল সমস্যা ডলার। এখন ডলারের জোগান বাড়াতে হবে। এটি বাড়ানো সম্ভব হলেই অনেক সমস্যা কেটে যাবে। কিন্তু ডলারের জোগান বাড়াতে হলে প্রথমে পাচার বন্ধ করতে হবে। তারপর রেমিট্যান্সে হুন্ডি বন্ধ করতে হবে। তাহলে ডলারের জোগান বাড়বে।

এর পাশাপাশি আমদানি নিয়ন্ত্রণ, দেশের ভেতরে আমদানির বিকল্প পণ্য উৎপাদন ও বাজার তদারকি বাড়াতে হবে। তাহলে পণ্যমূল্য কমবে। এতে মূল্যস্ফীতির হারও সহনীয় হবে। কিন্তু ইতোমধ্যে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এতে বেসরকারি খাতের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ফলে কর্মসংস্থান কমবে, মানুষের আয়ও কমবে। যা মূল্যস্ফীতির আঘাতকে আরও বড় করে তুলবে স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষের কাছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে অর্থনৈতিক চাপ কমে আসবে। কেননা ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে পণ্যের দাম কমে যাবে। তখন অর্থনৈতিক চাপও কমবে।

এদিকে রিজার্ভ সাশ্রয় করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় কিছুটা কমানো সম্ভব হয়েছে। কিন্তু চাপ পুরোপুরি কমেনি। আমদানি ব্যয়ের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ হচ্ছে জ্বালানি খাতে। এ খাতে ব্যয় কমাতে লোডশেডিং করা হচ্ছে। জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ করা হয়েছে। ফলে জ্বালানি খাতে ডলার সাশ্রয় হবে।

সূত্র জানায়, করোনার পরে হঠাৎ পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে সব পণ্যের দাম বেড়ে যায়। একই সঙ্গে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা আরও বাধাগ্রস্ত হয়। এতে পণ্যের দামও বাড়ে। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ায় আমদানি ব্যয় বেড়ে যায় লাগামহীনভাবে। আমদানি ব্যয় যেভাবে বেড়েছে সেভাবে রপ্তানি আয় বাড়েনি।

এদিকে রেমিট্যান্স প্রবাহে ঘাটতি দেখা দেয়। এসব মিলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। এতে বাজারে ডলারের দাম হু-হু করে বাড়ছে। গত এক বছরের ব্যবধানে ডলারের দাম ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা থেকে বেড়ে ৯৪ টাকা ৪৫ পয়সায় উঠেছে। ওই সময়ে টাকার মান কমেছে ৯ টাকা ৬৫ পয়সা। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর হিসাবে টাকার মান আরও বেশি কমেছে।

দেশে এখন সবচেয়ে বড় সংকট বৈদেশিক মুদ্রার জোগানে। চাহিদা অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রার জোগান মিলছে না। ফলে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৩৫ কোটি ডলার ঘাটতি হচ্ছে। এ ঘাটতি মেটানো হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ডলার দিয়ে। এতে রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। গত বছরের আগস্টে রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলারে উঠেছিল। এখন তা কমে ৩ হাজার ৯৬০ কোটি ডলারে নেমে গেছে।

এদিকে আগামীতে আমদানির দেনা পরিশোধের চাপ আরও বাড়ছে। কেননা করোনার সময়ে যেসব এলসির বা বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ স্থগিত হয়েছিল সেগুলো এখন দিতে হচ্ছে। এতে চাপ আরও বাড়ছে। বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় করতে আমদানি নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এলসির ঊর্ধ্বগতি কমানো সম্ভব হয়েছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতেও নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

এতে আগামীতে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে বলে আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে রপ্তানি আয় বড় চ্যালেঞ্জে পড়তে যাচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ইউরোপের অর্থনীতিতে ধস নেমেছে। প্রায় সব দেশই সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করছে। ঋণের সুদের হার বাড়াচ্ছে। ইউরোর দাম কমে গেছে। এতে আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। ফলে তারা আমদানি কমানোর দিকে এগোচ্ছে। দেশে রপ্তানি আয়ের ৫৪ শতাংশ ইউরোপ থেকে আসে। ফলে এ খাতে বড় ধাক্কা আসতে পারে।

বেশি দামে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করায় দেশে এসে ওইসব পণ্য মূল্যস্ফীতির হার বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ খাতে মূল্যস্ফীতি কমাতে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে বাজারে টাকার প্রবাহ কমানোর নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে নীতি সুদের হার দুই দফায় কমানো হয়েছে। রপ্তানি ঋণের সুদের হার ১ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।

তবে এখনও ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়ানো হয়নি। তবে এ খাতেও ঋণের সুদের হার বাড়ানোর জন্য প্রচণ্ড চাপ আছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর। কেননা ব্যাংকে এখন আমানত কমে যাচ্ছে। আমানত বাড়াতে হলে সুদের হার বাড়াতে হবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ ও আমানতের ক্ষেত্রে ৯-৬ নীতি (ঋণের সুদ ৯ শতাংশ ও আমানতের সুদ ৬ শতাংশ) গ্রহণ করায় এখন ব্যাংকগুলো আমানতের সুদের হার বাড়াতে পারছে না। আমানতের সুদের হার বাড়লে ঋণের সুদের হারও বাড়াতে হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশে ঋণের সুদের হার কমিয়ে বা বাড়িয়ে ঋণপ্রবাহ বাড়ানো বা কমানো সম্ভব হয় না। কেননা গত দুই বছর ধরে ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তারপরও বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়েনি। করোনার সময় কিছু খাতে প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে ৪ শতাংশ সুদে জামানতবিহীন ঋণ দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেগুলোতেও ঋণপ্রবাহ বাড়েনি।

আল জাজিরা সম্পর্কিত প্রবন্ধ প্রকাশের অভিযোগে রাষ্ট্রদোহীতার মামলায় অভিযুক্ত ২৮ঃকঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আহবান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রালয়কে

আল-জাজিরা ও মুশতাক আহমদ এর কারাগারে মৃত্যুকে কেন্দ্র করে প্রতিক্রিয়া দেশে-বিদেশে  এখনো চলমান। এ-দুটো বিষয়ে প্রবাসী বাংলাদেশীদের মন্তব্য আহবান করে অনলাইন সংবাদপত্রিকা দৈনিক নবযুগ ফেব্রুয়ারীর ২৭ তারিখে। ২২শে মার্চ  ‘আল জাজিরার তথ্যচিত্র, কারাগারে মুশতাকের মৃত্যু ও প্রবাসীদের ভাবনা’ প্রকাশ করে দৈনিক নবযুগ যেখানে অশ্রাব্য ভাষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিচার বিভাগের বিচারকদের বিশেষ করে সাইবার ট্রাইনবুন্যালের বিচারককে আক্রমণ করা হয় এবং হত্যার হুমকি দেয়া হয়। সবচেয়ে আতঙ্ক-জাগানিয়া ব্যাপার ছিল এই লেখায় অনেকেই মত প্রকাশ করেন যে বাংলাদেশে বহির্বিশ্বের বহিরাক্রমণ করা উচিত আওয়ামী সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করবার জন্যে যা নিশ্চিতভাবেই রাষ্ট্রের স্বাধীনতা খর্ব করবে এবং রাষ্ট্রদোহীতার দোষে এরা প্রত্যেকেই দোষী।
 
 

এই পর্যবেক্ষণের সাথে সম্পূর্ণভাবে সহমতকারী এডভোকেট মোঃ রবিউল আলম জুয়েল, যিনি বঙ্গবন্ধু আইন ছাত্র পরিষদ এর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক, বাদী হয়ে গত ২৮ মার্চ রাজধানীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে  রাষ্ট্রদোহীতা ও অন্যান্য অভিযোগে ফৌজধারী আইনের আওতায়  দৈনিক নবযুগ-এর প্রকাশক, সম্পদাক ও উক্ত প্রবন্ধে প্রমুখ মন্তব্যকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

মামলার অভিযোগ প্রসঙ্গে বাদীপক্ষের আইনজীবী এডভোকেট আপেল সাহেব বলেন – ‘এধরণের প্রকাশিত বক্তব্য বাংলাদেশের জন্যে খুবই ক্ষতিকর। বাংলাদেশীদের বিভিন্ন ইস্যুতে অভিযোগ থাকতেই পারে। কোনো সরকার-ই সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। কিন্তু বহিরাক্রমণের জন্যে আন্তর্জাতিক মহলকে এভাবে উন্মুক্তভাবে তদবির করা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা অসীম নয়। এটি একটি কোয়ালিফায়েড অধিকার। রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব এইক্ষেত্রে সবসময় অগ্রাধিকার পাবে। আমি মনে করি এটী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মামলা এবং আমরা আনন্দিত যে বিজ্ঞ আদলাত এই মামলা গুরুত্ব অনুধাবন করে এটি আমলে নিয়েছেন এবং আমরা এখন ডিসি অফিসের সহযোগিতায় এই মামলার তদন্ত পর্যায়ে যাবো আশা করছি।’

আদালত সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে বাদীর জবানবন্দী গ্রহণ করে এবং প্রাসঙ্গিক অভিযোগ পর্যালোচনা করে অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটান  ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ হাসিবুল হক মামলাটি আমলে নেন (সি.আর. – ১২০/২০২১) এবং  বাদীপক্ষকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রালয়কে অন্তর্ভুক্ত করে অভিযোগ পুনর্গঠন ও জমা দেয়ার আদেশ দিয়েছেন।  

  দৈনিক নবযুগ এর সম্পাদক ইসরাত রশিদ সংক্ষিপ্ত জবাবে জানান – ‘আমরা একটি মন্তব্য জরিপ চালিয়েছি এবং এই মন্তব্য জরিপে প্রবাসী বাংলাদেশীদের দৃষ্টিভঙ্গী উঠে এসেছে। নিজের দেশের নাগরিকদের মন্তব্য আওয়ামী সরকার ও এর সমর্থকদের ভালো না-ই লাগতে পারে, কিন্তু এর মানে তো এ নয় যে – সরকার ও বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয়ে মানুষ তাদের নিজেদের চিন্তা মুক্তভাবে তুলে ধরতে পারবেনা! বাংলাদেশে মুক্তচিন্তার স্বাধীনতা তীব্রভাবে সঙ্কুচিত এবং এই ধরণের মামলা সুস্থ ও অবাধ সাংবাদিকতার পরিপন্থী!’  

এটি পরিলক্ষিত যে এই প্রবন্ধে বেশ কিছু বিএনপি-জামায়াত এর নেতা-কর্মী-সমর্থকদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে মন্তব্য-জরিপে এবং আওয়ামী লীগ বা সরকার-সমর্থিত কোনো মন্তব্য দেখা যায়নি।  আদালত ফাইলের নথি ঘেটে দেখা যায়  মামলার বিবাদীরা হলেন – শিপলু কুমার বর্মণ, ইসরাত রশিদ (সম্পাদক, দৈনিক নবযুগ), আলী আমিন (প্রকাশক, দৈনিক নবযুগ), জনি জোসেফ ডি কস্তা (সহ-সম্পাদক, দৈনিক নবযুগ), নুরুল হুদা (সিনিয়র সহ সম্পাদক, দৈনিক নবযুগ), মুকিত চৌধুরী, মোঃ ইমরান হোসাইন, বিপ্লব পাল, নূর মিয়া, আহসানুল হুদা সরকার, মোঃ জাকির হোসাইন, মিজানুর রহমান, উম্মা কুলসুম নার্গিস বানু, আহসানুল কবির, নুরুল ফারুক শাকের, মো; বিন রাজিম, মোঃ রুকন মিয়া, মোঃ আশিফ হোসাইন, মোঃ মাসুম সাজ্জাদ, মোঃ আরাথ হোসেন রনি, মোঃ শহীদুল ইসলাম জায়গীরদার, মোঃ ওবায়দুর রহমান খান, মোঃ আল-আমিন কায়সার, মোঃ সাব্বির হোসাইন প্রমুখ।

মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়-এর জবাব প্রাপ্তির পর। 

মাদক সেবনের দায়ে সাজা পেল ওরা

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে মাদক সেবন ও নিজ হেফাজতে রাখার অপরাধে ৪ মাদকসেবীকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। বুধবার (১০ মার্চ) উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ভ্রাম্যাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লুবনা ফারজানা তাদের দণ্ডের আদেশ দেন। 

আটককৃতরা হলো-নরসিংদীর বেলাব থানাধীন চর বেলাব এলাকার মৃত ধনু মিয়ার ছেলে আহাদ মিয়া (৪৩), ভৈরব থানাধীন ভৈরবপুর উত্তরপাড়ার মৃত সায়িদ মিয়ার ছেলে নুরুল হক (৩৬), কালিপুর গ্রামের মৃত তাহের উদ্দিনের ছেলে মজিবুর মিয়া ও পঞ্চবটি বউবাজার এলাকার রমজান আলীর ছেলে জজ মিয়া (৩৮)।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ভৈরবের সার্কেল অফিস সূত্র জানায়, প্রকাশ্যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে মাদক সেবন ও নিজ হেফাজতে মাদক রাখার অপরাধে আটককৃত ৪ মাদকসেবীর প্রত্যেককে ৬ মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া অনাদায়ে আরো ৩ দিন করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ভ্রাম্যাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লুবনা ফারজানা।

এর আগে বুধবার (১০ মার্চ) দুপুরে শহরের পঞ্চবটি বউবাজার ও পাওয়ার হাউসসংলগ্ন এলাকা থেকে তাদেরকে আটক মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ভৈরব সার্কেল অফিসের সদস্যরা। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের সাজা দেওয়া হয়।

৪৭ বছর ধরে বিনা পয়সায় রান্না করেন

বিয়েবাড়ি। বড় বড় হাঁড়ি, কড়াইয়ে রান্না চাপানো হয়েছে। বড় হাতা নিয়ে মাংস নাড়ছেন রাঁধুনি। বিয়েবাড়িতে এমন আয়োজন সবারই চোখে পড়বে। বিয়ের আসরে শত শত মানুষের জন্য ভালো রান্নার ভার যাঁর কাঁধে থাকে, তাঁকে হতে হয় চৌকস। এমনই একজন রাঁধুনি জামালপুরের মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি শখের রাঁধুনি। শিক্ষকতা করতেন। এখন অবসরে। যেকোনো অনুষ্ঠানে যান স্যুট-বুট পরে। এরপর কাপড় পাল্টে নেমে যান রান্নার কাজে। ১৯৭৩ সাল থেকে তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রান্না শুরু করেছিলেন। এমনকি নিজের বিয়ের অনুষ্ঠানের রান্নাও নিজেই করেছিলেন তিনি। এখনো বিনা পারিশ্রমিকেই করে যাচ্ছেন তাঁর এ ভালোবাসার কাজ।

মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন পরিচিত তোহা নামেও। শিক্ষক হিসেবে পরিচয়ের পাশাপাশি তাঁর রান্নার সুনামও জামালপুরের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। ১৯৭৩ সাল থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রান্না করেন তিনি। রান্নার সময় হিন্দু বা মুসলমানের ভেদাভেদ করেন না তিনি। এ পর্যন্ত বিনা পারিশ্রমিকে হিন্দু পরিবারের বিয়েসহ বহু অনুষ্ঠানে রান্না করেছেন। শখে রান্না করলেও রান্নাটাকে তিনি শিল্প এবং রান্নার মধ্য দিয়েই তিনি জনসেবা করছেন বলে মনে করেন।

কোমর বেঁধে রান্নায় নেমে পড়েছেন রাঁধুনি জামালপুরের মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন

কোমর বেঁধে রান্নায় নেমে পড়েছেন রাঁধুনি জামালপুরের মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন
ছবি: মানসুরা হোসাইন

জামালপুর সদরের নরুন্দি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১৯৮৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মোয়াজ্জেম হোসেন শিক্ষকতা করেন। ১৯৮৬ সালে নিজের বিয়ে, পরে দুই ছেলেমেয়ের বিয়ের রান্নাও নিজেই করেছেন মোয়াজ্জেম হোসেন। জামালপুরে সম্প্রতি একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে রান্না করতে গিয়েছিলেন মোয়াজ্জেম হোসেন। সেখানেই কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মোয়াজ্জেম হোসেন বললেন, ‘আমার বিয়ের সময় সবাই বলল, তুই ছাড়া কে আর রান্না করবে? খাসির কোর্মা, গরুর রেজালা, মুরগির রোস্ট রান্না করলাম। দই নিজেই বানাই। বউয়ের বাপের বাড়ির লোকজন রান্না খেয়ে মহা খুশি। তাঁরা তো আর আগে জানতেন না মেয়ের জামাই রান্নাও পারে।’

১৯৭৩ সালে রান্নার শুরু সম্পর্কে মোয়াজ্জেম হোসেন জানালেন, ‘শাহ মোহাম্মদ মোদক নামে পরিচিত একজনের বিয়েতে বাবুর্চির আসার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে বাবুর্চি না আসায় সবাই বিপাকে পড়ে যান। তখন তিনি রান্না করবেন বলে নিজেই জানিয়েছিলেন। সেই শুরু। বর্তমানে ৬৬ বছর বয়সেও থেমে নেই রান্নার কাজ।’

মোয়াজ্জেম হোসেনের মেয়ে মাহবুবা আক্তার বললেন, ‘বাবাকে ১ হাজার ২০০ মানুষের রান্নার লিস্ট দেখিয়ে নিলেন। বাজারের লিস্ট করা থেকে শুরু করে সবই বাবা নিজে তদারক করেন। বাবা যে স্কুলে শিক্ষকতা করতেন, সেই স্কুলেই আমি পড়েছি।

বাবার রান্নার প্রশংসা করতেন সবাই। বাবার রান্নার কাজ ভালো লাগে। তবে বয়স হওয়ার কারণে রান্না করতে গেলেই অসুস্থ হয়ে যান। কয়েক দিন আগেও সেন্সলেস হয়ে যান। তাই আমরা এখন আপত্তি করি।’

শখের বশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রান্না করেন মোয়াজ্জেম হোসেন

শখের বশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রান্না করেন মোয়াজ্জেম হোসেন
ছবি : সংগৃহীত

মোয়াজ্জেম হোসেনের একটি ব্যাগ তৈরিই থাকে। ব্যাগে রোস্ট ভাজার জন্য ঝাঁঝরি, পানি ও তেল মাপার জন্য একটি গ্লাস, খাবার নাড়া দেওয়ার জন্য বড় একটি হাতা নিয়ে যান। নিজেই এগুলো বানিয়ে নিয়েছেন। রান্নার জন্য গেলে সারা দিনের জন্য যেতে হয়। রান্না শেষে খাবার বেড়ে দেওয়ার দায়িত্বও পালন করতে হয়। খাবার কম পড়ল কি না, তা দেখার জন্য সবার খাওয়া শেষ হলে ছুটি পান তিনি।

স্ত্রী হোসনে আরা বেগম ভালো রান্না করেন, তাই বাড়ির রান্নাঘরে তেমন একটা ঢুকতে হয় না মোয়াজ্জেম হোসেনকে। ছেলেমেয়েরা রান্নার বিষয়টিতে তেমন উৎসাহী নন। তবে ছেলের বউয়ের রান্না ভালো বলে জানালেন মোয়াজ্জেম হোসেন।

মোয়াজ্জেম হোসেন এখনো একাই চার মণ, পাঁচ মণ মাংস রান্না করে ফেলেন। রান্নায় সহকারী থাকে, তবে অন্যদের চেয়ে নিজে কাজ করতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। জানালেন, গ্রামাঞ্চলের বিয়েতে সাধারণত গরুর মাংস, পোলাও, কোর্মা, জর্দা, মুরগির রোস্ট, মুরগির কোর্মা বেশি রান্না হয়।

রান্নার পাশাপাশি খেলাধুলা করতেন মোয়াজ্জেম হোসেন। সভা-সমিতি, মসজিদের সেবা,আচার–অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়াসহ দিনের বেশির ভাগ সময়ই তাঁকে ব্যস্ত থাকতে হয়। সন্ধ্যার পরে গান গাইতে পছন্দ করেন, তবে সুর-তাল-লয় নিয়ে তেমন একটা চিন্তা করেন না। এসবের পাশাপাশি বাংলা, বিহার ও ওডিশার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার নাটকের ডায়ালগসহ বিভিন্ন নাটকের ডায়ালগ মুখস্থ। চাচার পরিচালিত নাটকসহ পাঁচ থেকে ছয়টি নাটকে অভিনয়ও করেছেন তিনি।

যেকোনো অনুষ্ঠানে মোয়াজ্জেম হোসেন যান স্যুট-বুট পরে। পরে তিনি রান্নার জন্য পাল্টে নেন কাপড়

যেকোনো অনুষ্ঠানে মোয়াজ্জেম হোসেন যান স্যুট-বুট পরে। পরে তিনি রান্নার জন্য পাল্টে নেন কাপড়

মোয়াজ্জেম হোসেন বললেন, ‘রান্নাটা একটা শিল্প। জনগণের কল্যাণে কাজে লাগাতে সবারই রান্নাটা শেখা দরকার। কিন্তু সেভাবে কেউ এগিয়ে আসে না। নিজের ছেলেমেয়েদেরও এ বিষয়ে উৎসাহী করতে পারলাম না। গ্রামের বিয়েতে শহর থেকে বাবুর্চি আনতে হলে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা লাগে। কোনো কোনো পরিবারের জন্য এ টাকা ব্যয় করা কঠিন হয়ে যায়। দরিদ্র পরিবারে কারও বিয়ের কথা শুনলে রান্নার কাজটা নিজের আগ্রহেই করি। রান্না করে টাকা নিলে জীবনে বহুত টাকা কামাইতে পারতাম। তা করি নাই। এটাকেই আমি মানবসেবা মনে করি।’

এ পর্যন্ত রান্না করতে গিয়ে একবারই রান্না নষ্ট হয়েছিল বলে জানালেন মোয়াজ্জেম হোসেন। বললেন, আগে বড় কড়াইয়ে রান্নার চল ছিল। রান্না শেষে কড়াইয়ের হাতলের মধ্যে বাঁশ ঢুকিয়ে কড়াই চুলা থেকে নামাতে হতো। রান্নার শেষ পর্যায়ে হুট করে তুমুল বৃষ্টি নামে। বাঁশ আনতে আনতে রান্নাটাই নষ্ট হয়ে যায়।

রান্না ভালো হয়েছে, এ প্রশংসাবাণী বেশি শুনেছেন মোয়াজ্জেম হোসেন। বললেন, ‘রান্না ভালো হলে আমিও মনে তৃপ্তি পাই। একেকটা অনুষ্ঠানে ৩০০–৫০০ জন মানুষ খায়। ব্যতিক্রম তো থাকেই। কারও কাছে হয়তো রান্নাটা ভালো লাগে না। তবে গড়ে রান্নাটা ভালো হয়েছে বলেই বেশির ভাগ মানুষ জানান।’

মেয়ের খোঁজ নিতেন না তামিমা

ক্রিকেটার নাসির হোসেনের নববিবাহিত স্ত্রী তামিমা সুলতানা তাম্মি প্রথম ঘরের মেয়ের কোনো খোঁজখবরই নিতেন না। আর এমনটা জানিয়েছে তার ও রাকিবের শিশুকন্যা রাফিয়া হাসান তুবা নিজেই।

তুবা জানিয়েছে, মা কখনই তার তেমন একটা খোঁজখবর নিতেন না। মায়ের বিয়ের খবরও সে জেনেছে টেলিভিশনে দেখে। বাবা রাকিব হোসেন জোর করে তুবাকে তাম্মির মায়ের বাসা থেকে নিয়ে এসেছে বলে তাম্মি যে অভিযোগ করেছে- সেটাও মিথ্যা বলে জানিয়েছে তুবা।

ওই বাড়িতে নানি তাকে মারধর করত অভিযোগ করে তুবা জানায়, নিজের ইচ্ছাতেই বাবার সঙ্গে দাদি বাড়ি চলে এসেছি। এখানেই আমার জন্মদিন পালন হয়েছে। তাছাড়া এই বাড়ির সবাই আমাকে অনেক ভালোবাসে। মা আগেও ভালোবাসত না আর এখন তো সে অন্য আরেকজনকে বিয়ে করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেয়া বক্তব্যে রাকিবের ঘরে জন্ম নেয়া তাম্মির শিশুকন্যা ৮ বছরের রাফিয়া হাসান তুবাকে জোর করে তাম্মির বাসা থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তাম্মি। তবে সেই অভিযোগ সত্য নয় বলে জানিয়েছে শিশু তুবা। বাসায় তাম্মির মা তাকে মারধর করতো বলে অভিযোগ তুবার।

রেকর্ডকৃত বক্তব্যে তুবা জানায়, তার বাবা রাকিবকে দেখতে পারত না তাম্মির মা। তাকেও কারণে-অকারণে চড়-থাপ্পড় দিত। বাসায় সারাক্ষণ ধমকের ওপর রাখত তাকে নানি। একটু এদিক-সেদিক হলেই রাগারাগি আর গালাগালি করত। এ কারণে সে নিজের ইচ্ছায় বাবার সঙ্গে দাদির কাছে চলে আসে।

বাবা তাকে অনেক ভালোবাসে উল্লেখ করে তুবা জানায়, মা আমাকে কখনই তেমন একটা ভালোবাসতো না। আদরও করতো না। অধিকাংশ সময় সে বাসার বাইরে থাকত। নিজে থেকে কখনো আমায় ফোন দিত না। আমি ফোন দিলে ব্যস্ত আছি বা প্লেনে আছি বলে লাইন কেটে দিত। বাবা দাদি দাদা চাচ্চু আমায় অনেক ভালোবাসে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তুবা বলে- মা এখন আর আমায় ফোন দেয় না। আমার সঙ্গে কথাও বলে না। মা অনেক পচা হয়ে গেছে। সে আরেকজনকে বিয়ে করেছে। আপনারা আমার মাকে এনে দিন। আমি মা আর বাবাকে নিয়ে একসঙ্গে থাকব।

৪৫ শতাংশ টিকাই পেয়েছে সাত ধনী দেশের নাগরিকেরা

করোনাভাইরাসের টিকার প্রয়োগ শুরু হয়েছে গত ডিসেম্বরে। এই টিকার প্রয়োগ শুরুর পর বিশ্বের ১০৭টি দেশে ২০ কোটি ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। আজ শনিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত বার্তা সংস্থা এএফপির পরিসংখ্যান থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

তবে এই টিকার যে সমহারে বণ্টন হচ্ছে না, তার একটি চিত্র উঠে এসেছে এএফপির পরিসংখ্যানে। এএফপির খবরে বলা হয়েছে, এই পরিসংখ্যান অনুসারে, এই ২০ কোটি ডোজের ৪৫ শতাংশই পেয়েছেন বিশ্বের ধনী ৭ দেশের জোট জি-৭-এর নাগরিকেরা। যদিও এই দেশগুলোর মোট জনসংখ্যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ।
এই পরিস্থিতিতে টিকার সমবণ্টন নিশ্চিত করতে গতকাল শুক্রবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জি-৭-এর দেশগুলো।

টিকার সমবণ্টন নিশ্চিত করতে সবার আগে এগিয়েছে এসেছে যুক্তরাজ্য। এ জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদেশগুলোর মধ্যে একটি খসড়া প্রস্তাব বিতরণ করেছে যুক্তরাজ্য। গরিব দেশগুলোর মধ্যে টিকার ডোজ বিতরণের আহ্বান জানানো হয়েছে এই খসড়া প্রস্তাবের মাধ্যমে।

যুক্তরাজ্য গত বৃহস্পতিবার এই প্রস্তাবটি নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য ১৪ দেশের কাছে পাঠিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বন্ধুত্ব, সংহতি, ন্যায্যতা বজায় রাখার জন্য দরিদ্র ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে টিকা দেওয়া প্রয়োজন। বুধবার নিরাপত্তা পরিষদে একটি বৈঠকে এই প্রস্তাব উত্থাপন করেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোমিনিক রাব। তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে প্রায় ১৬ কোটি মানুষ সহিংসতাপ্রবণ বা অস্থিতিশীল এলাকায় বসবাস করেন। এসব এলাকার জনসাধারণের টিকা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মাথাপিছু ব্যয় সরকারিতে দেড় লাখ, বেসরকারি অর্ধেক

দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার্থীপ্রতি ব্যয় মাত্র দেড় লাখ টাকা। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এর অর্ধেকেরও কম। উভয় ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বার্ষিক ব্যয় বাজেটের সঙ্গে শিক্ষার্থীর সংখ্যা তুলনা করে এই মাথাপিছু ব্যয় ধরা হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আয়ের সঙ্গে মিল রেখে শিক্ষার্থীদের পেছনে ব্যয় করছে না। আয়ের সামান্য অংশ শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে ব্যয় করায় মাথাপিছু খরচ কমে গেছে। এতে বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত হচ্ছে না।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের একজন শিক্ষার্থীর পেছনে যে ব্যয় হয়, তা দুটি খাত থেকে জোগান দেওয়া হয়। এর একটি নানা ধরনের ফি-র নামে শিক্ষার্থী পরিশোধ করে। অপরটি আসে সরকারি বরাদ্দ থেকে।

এ ছাড়া কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বৈদেশিক উৎস থেকেও তহবিল পেয়ে থাকে। মূলত দুই খাতে আয়ের টাকার ওপর ভিত্তি করে চাহিদার নিরিখে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ব্যয়-বাজেট তৈরি করে। যেটা থেকে মাথাপিছু ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু এর বাইরে শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত অন্যান্য খরচ আছে। মাথাপিছু ব্যয়ের হিসাবে শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত খরচ অন্তর্ভুক্ত হয়নি। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে প্রকৃত অর্থে উভয় ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর পেছনে মাথাপিছু ব্যয় আরও বেশি।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা শিক্ষা বিশ্লেষক রাশেদা কে চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষকের জোগান বলি, আর সার্বিকভাবে দেশের জনপ্রশাসনসহ সব খাতের নেতৃত্ব বা দক্ষ জনবল সরবরাহের কথাই বলি, তা তৈরির দায়িত্ব উচ্চশিক্ষার। সে কারণে উচ্চশিক্ষায় প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যে মাথাপিছু ব্যয়ের চিত্র বেরিয়ে এসেছে, সেটা প্রত্যাশিত পর্যায়ের নয়। কেননা, আমরা টেকসই উন্নয়নের কথা বলছি, সেটায় একটি বড় অংশ দখল করে আছে উচ্চশিক্ষা। আজ অনেক চাকরিরই প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে বৈশ্বিকভাবে। সেখানে আমাদের জনবলকে টিকে থাকতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা নিশ্চিতের বিকল্প নেই।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, এর অধিভুক্ত কলেজ, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় ও এর অধীভুক্ত মাদ্রাসা বাদে ৪৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৯ সালে শিক্ষার্থীদের মাথাপিছু ব্যয় এক লাখ ৪৯ হাজার ৯৪২ টাকা।

একই বছর ৯৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীপ্রতি বার্ষিক ব্যয় ৭১ হাজার ৫৩৬ টাকা। অন্যদিকে আলোচ্য বছরে এই ১৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী ছিল ৪৪ লাখ ৩৪ হাজার ৪৫১ জন। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর যদি বছরে গড়ে ৩৬ হাজার টাকা ব্যক্তিগত ব্যয় থাকে, তবে দেশে শিক্ষার্থীর মাথাপিছু ব্যয় দাঁড়াচ্ছে এক লাখ ৪৭ হাজার টাকা।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যে অর্থ আদায় হয় তার পুরোটা তাদের পেছনে ব্যয় হয় না। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাথাপিছু ব্যয় নির্ধারণে শিক্ষকের বেতন ও গবেষণাসহ ৯টি খাতের খরচ ধরা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয় প্রচুর অর্থ আয় করলেও ব্যয় করেছে খুব কম। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা ও শিক্ষার অন্য খাতে ব্যয় করেছে সামান্য।

কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর প্রতি মাত্র চার হাজার টাকাও ব্যয় করেছে। এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আছে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি, নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ইত্যাদি। আবার ইস্টওয়েস্টের মতো বড় এবং ভালো ইউনিভার্সিটি মাথাপিছু ব্যয়ের তথ্যই দেয়নি। বেসরকারি খাতে মাথাপিছু বেশি ব্যয় করা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে নর্থসাউথ একটি। তারা শিক্ষার্থীপ্রতি এক লাখ ৪৫ হাজার টাকা ব্যয় করে।

এভাবে ঢাকার ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি এক লাখ ৭০ হাজার, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ এক লাখ ৮৪ হাজার, ব্র্যাক এক লাখ ৬০ হাজার টাকা ব্যয় করে। নতুনগুলোর মধ্যে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্ট বাংলাদেশ (ইউল্যাব) এক লাখ ৫৩ হাজার, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এক লাখ ৭২ হাজার টাকা খরচ করে। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ৫০ হাজার থেকে সোয়া লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যয় আছে।

প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বছর ভিত্তিতে মাথাপিছু ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। এই হিসাবে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে প্রতি শিক্ষার্থীর পেছনে খরচ করা হয় তিন লাখ ৬৪ হাজার ৪৮৫ টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে তিন লাখ ৫৫ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে।

তৃতীয় অবস্থানে আছে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে দুই লাখ ৯১ হাজার ১৩৬ টাকা। ৪ ও ৫ নম্বরেও আছে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এগুলো হচ্ছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকার শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। যথাক্রমে দুই লাখ ৩৫ হাজার এবং দুই লাখ ২৬ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে উভয় বিশ্ববিদ্যালয়েপ্রতি শিক্ষার্থীর পেছনে।

৭, ৮ ও ৯ নম্বরে যথাক্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। তিনটিতেই সাধারণ, প্রকৌশল এবং কৃষিবিষয়ক শিক্ষা ও গবেষণা চলে। আর বরাদ্দে দশম স্থানে আছে বুয়েট। এই চারটিতে মাথাপিছু ব্যয় যথাক্রমে দুই লাখ ১০ হাজার, দুই লাখ আট হাজার ৫১১ টাকা, এক লাখ ৮২ হাজার এবং এক লাখ ৭৭ হাজার ৭৭৫ টাকা। সবচেয়ে কম ব্যয় হচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর পরিমাণ মাথাপিছু ৩৮৯ টাকা।

রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, উচ্চশিক্ষা হচ্ছে সার্বিকভাবে দেশ এগিয়ে নেওয়ার হাতিয়ার। গবেষণায় ব্যয় করলে কী ফেরত পাওয়া যায় তার প্রমাণ কৃষি খাত। লবণ, তাপ, খরা, ঝড় সব ধরনের দুর্যোগসহিষ্ণু ধান আমরা পেয়েছি শুধু গবেষণার কারণেই। বিলুপ্ত প্রায় বিভিন্ন ধরনের মাছ ফের আমাদের খাবারের প্লেটে এসেছে গবেষণার বদৌলতে। সুতরাং আমি মনে করি, কৃষির পাশাপাশি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রকৌশল এবং কলা ও সামাজিক বিজ্ঞানসহ উচ্চশিক্ষার সব ডিসিপ্লিনে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আয়ের তুলনায় যে ব্যয় কম করছে, সেটিও দেখা দরকার ইউজিসির। কেননা, আইনে এসব বিশ্ববিদ্যালয় অলাভজনক। সুতরাং আয়ের অর্থ শিক্ষার পেছনে ব্যয় করাই যুক্তিযুক্ত। অথবা ব্যয় ধরে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ফি নির্ধারণ করা প্রয়োজন।

ব্যস্ত রাস্তায় হেফাজত নেতাকে ছুরি মেরে পালাল দুর্বৃত্ত (ভিডিও)

রাজধানীর লালবাগে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা জসিম উদ্দিন আহত হয়েছেন। মাওলানা জসিম উদ্দিন রাজধানীর লালবাগের জামিয়া কুরাআনিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার সিনিয়ার মুহাদ্দিস। 

মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রিকশাযোগে মাদ্রাসা থেকে বাসায় যাওয়ার পথে এক দুর্বৃত্ত তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।

ঘটনাস্থলের পাশের একটি ভবনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, চলন্ত রিকশার পেছন থেকে একজন মাওলানা জসিম উদ্দিনকে পিঠে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে হেফাজত নেতারা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।

আহত হেফাজত নেতার অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগের আবাসিক সার্জন ডাঃ মো. আলাউদ্দিন।

এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান হেফাজত নেতারা।

আশ্রয়দাতাদের খোঁজে গোয়েন্দারা

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়া ছিনতাইকারীদের জামিনে বের করতে তৎপর আশ্রয়দাতারা। গ্রেফতারের কিছুদিন পরই নিজস্ব আইনজীবীদের মাধ্যমে গ্রেফতার হওয়াদের ছাড়িয়ে নেয় তারা।

এ কারণে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে ছিনতাই চক্রের সদস্যরা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ১০টি আশ্রয়দাতা গ্রুপ রয়েছে। প্রতিটি গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ৫ থেকে ১০টি ছিনতাই চক্র রয়েছে। সম্প্রতি নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে একাধিক ছিনতাই চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারের পর এমন তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন ডিবি কর্মকর্তারা। তাদের দেয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে এরই মধ্যে মাঠে নেমেছে সংস্থাটির একাধিক টিম। ইতোমধ্যে দুই আশ্রয়দাতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ডিবির এক কর্মকর্তা জানান, জানুয়ারির শেষ ১০ দিনে একজন আশ্রয়দাতাসহ বিভিন্ন ছিনতাই চক্রের অন্তত ৬৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা বলেছে, ‘গ্রেফতার হলেও তাদের চিন্তার কারণ নেই। কারণ আশ্রয়দাতারা তাদের ছাড়িয়ে নেবে।’

ডিবির রমনা বিভাগের এডিসি মিশু বিশ্বাস যুগান্তরকে বলেন, নগরীর বিভিন্ন এলাকায় একাধিক আশ্রয়দাতা গ্রুপ ৮-১০টি ছিনতাই চক্র নিয়ন্ত্রণ করে। চক্রের কোনো সদস্য গ্রেফতার হলে আশ্রয়দাতারা জামিনে বের করতে তৎপর হয়ে ওঠে। এরই মধ্যে কোহিনুর বেগম ওরফে মালা নামে একজন আশ্রয়দাতাকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। মালা এবং তার স্বামী ইয়াসিনের নিয়ন্ত্রণে কয়েকটি ছিনতাই চক্র রয়েছে। ইয়াসিন এখনো পলাতক। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

ডিবির কর্মকর্তারা জানান, সম্প্রতি হাইকোর্ট মাজারসংলগ্ন এলাকায় ছিনতাই চক্রের হাতে খুন হন ডিশ ব্যবসায়ী হামিদুল ইসলাম। এ চক্রের ৫ জনকে গ্রেফতারের পর জানা যায়, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে অন্তত ১০টি করে মামলা রয়েছে। তারা বিভিন্ন সময় গ্রেফতার হলেও আশ্রয়দাতারা ছাড়িয়ে নেয়।

ডিবি জানায়, মালা ও তার স্বামী ইয়াসিন মুগদা এলাকায় একটি বাসা ভাড়া করে থাকত। তাদের বাসায় ডাকাত ও ছিনতাইকারীরা আশ্রয় নিত। ওই বাসাতেই ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মালামাল ভাগ-বাটোয়ারা হতো। মালার নিয়ন্ত্রণে থাকা ছিনতাই চক্রের হাতেই খুন হন ডিশ ব্যবসায়ী হামিদুল হক। ডিবির এক কর্মকর্তা জানান, কেউ একবার ছিনতাই চক্রে জড়ালে আর বের হতে পারে না।

বিভিন্ন সময় গ্রেফতার হওয়া ছিনতাই চক্রের সদস্যরা জানিয়েছে, ছিনতাই ছেড়ে দিতে চাইলেও তারা আশ্রয়দাতাদের চাপে পারে না। অনেক টাকা খরচ করে আশ্রয়দাতারা তাদের জামিনে ছাড়িয়ে নেয়। এ কারণে তাদের কথার বাইরে যাওয়া যায় না। তাদের খরচ করা অর্থ পরিশোধের একটা চাপ থাকে।

আশ্রয়দাতাদের কথা না শুনলে আরও বড় ধরনের ঝামেলায় পড়তে হয়। বিশেষ করে মামলায় জড়িয়ে পড়ার কারণে তাদের ফেরার পথ থাকে না। ছিনতাই ছেড়ে দিলে তাদের হত্যার হুমকিও দেয়া হয়।

ব্লগার এবং নাস্তিকদের বিচারের দাবিতে দেয়ালে দেয়ালে পোষ্টার এবং মিছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঢাকা: হেফাজতে ইসলামসহ আরো কয়েকটি ইসলামী সংগঠন বেশ কিছুদিন ধরেই সরকারকে ব্লগার এবং নাস্তিকদের আইনের আওতায় এনে তাদের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে চাপ দিয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় ইসলামী দলগুলোকে বাংলাদেশের বিভিন্নস্থানে মিছিল এবং সমাবেশ করে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়। তাছাড়া কোনও কোনও এলাকার অলিতে-গলিতে দেয়ালে দেয়ালে নাস্তিকদের পোষ্টার লাগিয়ে হত্যা করার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার (অক্টোবর-২৯, ২০২০) আরিফ রব্বানী নামের হেফাজতে ইসলামের একজন সক্রিয় কর্মী ‘এথিস্ট এরা’ নামের একটি ম্যাগাজিনের সকল ব্লগার/ নাস্তিকদের নামে মামলা দায়ের করেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত খবর নিয়ে জানা যায় যে, এথিস্ট এরা নামের এই ওয়েবসাইটটি ইসলাম ধর্মকে অত্যন্ত নোংরাভাবে ফুটিয়ে তুলে একটি ম্যাগাজিন প্রকাশিত করে। মূলত যা দেখেই ইসলামী সংগঠনগুলো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে।

এ বিষয়ে মামলার বাদি আরিফ রব্বানীর সাথে কথা হলে তিনি আমাদের বলেন ’’হঠাৎ করেই ফেসবুকের মাধ্যমে এই ম্যাগাজিনটি আমার চোখে পড়ে, আমি কৌতুহল বশত এটি ডাউনলোড করে দেখতে পারি সেখানে ধর্ম, মুসলিম, কোরআন এবং আমাদের প্রাণপ্রিয় নবী মোহাম্মদ (সঃ) কে নিয়ে নানাবিদ কুরুচিপূর্ন  শব্ধ ব্যবহার করে ‘বিনাশ হোক ধর্ম‘ নামে এই মাগাজিনটি প্রকাশিত করে, যা একজন মুসলিম হিসেবে মেনে নিতে পারিনি এবং আমি মনে করি এদেরকে কতল (হত্যা) করা আমার এবং আমাদের সকল মুসলিমদের ওপর ওয়াজিব হয়ে গেছে।

মামলার আসামীদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আমাদের যে কয়টি নাম বলেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েক জন হলেন এথিস্ট এরা’র সম্পাদক এমডি মাহাদি হাসান, সহ সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুজ্জামান, সিনিয়র সহ সম্পাদক মিজানুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ সাইফুজ্জামান ও উমায়েদ হোসেন, স্টাফ রিপোর্টার উম্মা কুলসুম নারগিস বানু, এমডি জিল্লুর রহমান, অনিকা হক মল্লিক,শ্রাবণী শিকদার, মোহাম্মদ ওয়াহিদ হোসেন, মহাম্মদ ফাহিদুল আলম, মুহাইমিনুল বিশ্বাস পারভেজ, জোবায়ের হোসেন, বিপ্লব পাল, এম ডি হাসান তৌহিদ, মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান, নুর মোহাম্মদ, জনি জোসেফ কস্তা, সহ আরো অনেকে।

এদিকে মিছিল এবং সমাবেশে থাকা কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা সাংবাদিকেদের জানান যে, ‘‘বর্তমানে নাস্তিক এবং কিছু নব্য ব্লগারদে উৎপাত এতটাই বেড়েছে যে এগুলো মেনে নেওয়া কোনও মুসলমানদের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে একটা কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমাদের কলিজার টুকরা হযরত মুহাম্মদ সাঃ কে নিয়ে কেউ কিছু বললে তাকে এই পৃথিবী থেকে বিদায় করা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব।‘‘

তাদের মধ্যে আর একজন ইসলামী ব্যক্তিত্ব মুফতি ফজলুর রহমান বলেন, ‘‘নাস্তিকদের গালি দিলে কারও গায়ে লাগলে আমার করার কিছু নাই। আল্লাহর দেশে থাকতে হলে আল্লাহকে না দেখে আল্লাহর অস্তিত্ব মানতে হবে, না হলে তুমি আল্লাহর দেশে থাকতে পারবে না।’’

এদিকে সমাবেশ চলাকালে মুফতি আহমদ উল্লাহ জিহাদী উপস্থিত থাকা দ্বীনদার ভাইদের উদ্দেশে বলেন যে, ‘‘যদি কোন মুসলিম মুরতাদ হয়ে যায় এবং মুরতাদের সকল শর্ত তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় (সুস্থ- মস্তিস্ক, বালেগ, স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির অধিকারী হওয়া) তাহলে তার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হবে এবং ইমাম তথা মুসলমানদের শাসক অথবা তাঁর প্রতিনিধি যেমন বিচারক তাকে হত্যা করবে। তাকে গোসল করানো হবে না, তার জানাযা-নামায পড়ানো হবে না এবং তাকে মুসলমানদের গোরস্থানে দাফন করা হবে না।‘‘

হেফাজেত ইসলামে এক কর্মীর কাছে দেয়ালে পোস্টার লাগানোর বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি আমাদের বলেন যে, ‘‘সমস্ত ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক-মুরতাদ যারা আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহ এবং আমাদের ধর্ম নিয়ে ব্যঙ্গ করবে, গালি-গালাজ করবে, কটূক্তি করবে তারা সবাই আমাদের টার্গেট। ইনশাআল্লাহ আমরা তাদের হত্যা করবো।’’

উল্লেখ্য, হেফাজতে ইসলাম নাস্তিক এবং ব্লগারদের ছবি যেভাবে দেয়ালে দেয়ালে লাগিয়েছে, ২০১৬ সালে ঠিক এভাবেই ফেসবুক পেজে চার ব্লগারের ছবি প্রকাশ করে হত্যার হুমকি দিয়েছে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম। তারা হচ্ছেন আসিফ মহিউদ্দিন, সানিউর রহমান, শাম্মি হক ও অনন্য আজাদ। তারা সবাই এখন প্রবাসী। জঙ্গি হামলার ভয়ে এসব ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট অনেক আগেই দেশ ছেড়েছেন।

আদালত সূত্রে জানা যায় বাদী আরিফ রাব্বানী কর্তৃক আনীত মামলার নম্বর ৪১৮/২০২০। মামলাটি দায়ের করা হয়েছে ঢাকা সাইবার ট্রাইবুন্যালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৫, ২৮, ২৯, এবং ৩১ ধারার অধীনে ২১ জন আসামীর বিরূদ্ধে। মামলাটি তদন্তাধীন।