উৎসব নয়, দুর্গোৎসব যাদের কাছে শোকের!

গোটা বিশ্বের সনাতন হিন্দু ধর্মালম্বীরা মেতে ওঠেছেন দুর্গাপূজার আনন্দে উৎসবে।ভারতের বিভিন্ন রাজ্যেও উৎসবের আমেজে পালিত হচ্ছে দুর্গোৎসব। তবে ওই দেশে এমন এক রাজ্য আছে যেখানে বিশেষ এক জনগোষ্ঠীর কাছে দুর্গাপূজা মানেই শোকের সময়। উৎসব নয়, শোকের মাধ্যমেই তারা পালন করে এ উৎসব।

পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ির চা-বাগানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে এ জনগোষ্ঠী বাস করে। এদেরকে  ‘অসুর’ জনজাতি বলা হয়।  ২০১১ এর জনগনণা অনুযায়ী, গোটা  ভারতে  প্রায় চার হাজার অসুর জনজাতি রয়েছে।

আলিপুরদুয়ার জেলায় একটি গ্রামই আছে  ‘অসুর পাড়া ‘ নামে। এ গ্রামের লোকেরা দুর্গাপুজার পাঁচদিন থেকে শোক পালন করেন। বহু জায়গায় এরা ‘মহিষাসুর’বা ‘হুদুরদুর্গা’র পুজাও করেন।  কথিত আছে, অসুররা এ দেশের প্রাচীন জনজাতি। তাদের নেতার নাম ছিল ‘হুদুর দুর্গা’বা ‘মহিষাসুর’। সাঁওতালি ভাষায় ‘হুদুর’ কথার অর্থ  প্রচন্ড জোরে বয়ে চলা বাতাস বা ঝড় । সাঁওতালি লোকসাহিত্য অনুযায়ী, তাদের রাজা দুর্গার কন্ঠস্বর ছিল বজ্রের মতো। ঝড়ের মতো ছিল তার গতি।  আর্য সেনাপতি ইন্দ্র পরপর সাতবার হুদুর দুর্গাকে আক্রমণ করেন। কিন্তু প্রতিবারই তিনি পরাজিত হন। অবশেষে  যুদ্ধ জেতার জন্য ইন্দ্র ছলনা ও কৌশলের আশ্রয় নেন । তিনি বারাঙ্গনা দেবীকে  হুদুরদুর্গার কাছে পাঠান।  হুদুরদুর্গা প্রথমে দেবীকে প্রত্যাখান করলেও,পরে বিয়ে করেন। কিন্তু বিয়ের নবম দিনে  হুদুরদুর্গাকে হত্যা করেন ‘দেবী’ । আর  ‘হুদুরদুর্গা’কে হত্যা করার কারণে সেই নারীর নাম হয় ‘দেবীদুর্গা’।

অসুর  জনগোষ্ঠী এ লোককথাকে বিশ্বাস করেই  বছরের পর বছর ধরে পুজার চারদিন শোক পালন করে চলেছেন। এ শোক পালনের অন্যতম রীতি হচ্ছে  ‘দাসাই’ নাচ।  এতে পুরুষরা নারীর বেশে, শাড়ি পরে, মাথায় ময়ূরের পুচ্ছ লাগিয়ে বুক চাপড়ে ‘ও হায়রে,ও হায়রে’ আওয়াজ করে  ‘ভুয়াং’ নাচের মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে দুঃখের গান গেয়ে খুঁজে বেড়ান তাদের মহিষাসুর বা হুদুরদুর্গাকে। এমনকি দশমীর দিনে দেবীর ত্রিশূলের আঘাতে মহিষাসুরের শরীরের যে যে অঙ্গ আক্রান্ত হয়েছিল, সেসব স্থানে তেলও লাগান এ জনগোষ্ঠীর পুরুষরা। ঢাকের আওয়াজ কানে গেলে এখনো কানে আঙুল দেন অসুর জনজাতির প্রবীনেরা। এভাবে দুর্গোৎসব তাদের কাছে শোক পালনের রীতিই হয়ে আছে। সূত্র : আজকাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *