ছাত্রলীগের সব ধর্ষকলীগ

ছাত্রলীগের সব ধর্ষকলীগ

মশিউল হুসাইন খান/ যুক্তরাজ্য

করোনাতেও থেমে নেই ছাত্রলীগের রাজনৈতিক ক্ষমতাচর্চার ধার। সমতল পাহাড়ে  দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। যারা ক্ষমতাশীল দলের ছত্রছায়ায় রয়েছে।  স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া এক তরুণীকে তুলে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণের করা হয়েছে। সিলেট নগরীর টিলাগড় এলাকায় এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের ৭ নম্বর ব্লকের একটি কক্ষের সামনে এ ঘটনা ঘটে। করোনা পরিস্থিতিতে ছাত্রাবাস বন্ধ ছিল। কিন্তু আমাদের হাসিনার প্রিয় সন্তানরা ছাত্রাবাস ত্যাগ করেন নাই। তারা সেখানে মদ-গাজা আর নারীদের হয়রানী করা জন্য অপেক্ষা করতো।ছাত্রলীগের একটি পক্ষের ছয়-সাতজন কর্মী সেই নারীকে ধর্ষন করেন।  একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়ে দেখতে হচ্ছে আমার দেশের কোন বোন দেশের রাজণীতি কর্মী দ্বারা ধর্ষিত হচ্ছে। হবেই না কেন। আওয়ামীলীগ কোটি কোটি টাকা দিয়ে এই ধর্ষক ছাত্রলীগদের পোষছে। কারন তাদের তো ক্ষমতায় টিকে থাকেত হবে।

আমাদের পাঠ্যপুস্তকে বা নাটক-সিনেমায় ধর্ষকের যে চেহারা-সুরত এতকাল যাবত  তুলে ধরা হয়েছে, বাস্তবের ধর্ষকদের সাথে তাদের মিল খুবই কম। এটিও ধর্ষকদের জন্যে বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি করেছে। তারা সরকারী দলের খোলস গায়ে লাগিয়ে দেশে এই অপকর্ম করছে। করবেই না কেন দল তাদের এমন ক্ষমতা দিয়েছে যে, এখানে খায় একজন, বিল উঠে অন্য আরেক জনের নামে।

গণ নৈতিকতার ভিতটিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে এই আওয়ামী লীগ। চরিত্রগতভাবে এরা আসলে ভোগবাদী। জীবনের সকল কাজে জবাবদিহিতার থাকলে তাদের কাজের কোন জবাবদিহিতা নেই আর সেই কারনেই তারা তাদের দলের কর্মীদের বিনোদন হিসেবে ব্যবহার করছে দেশের নারীদের। খাও দাও ফুর্তি করার দর্শন থেকেই মূলত:  ধর্ষণ কালচারের  উৎপত্তি করছে ছাত্রলীগ।

আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে ততবারই এ দেশের নারী সমাজ আর অর্থনীতি- উভয়েই  চরম সংকটে পড়েছে। আওয়ামী শাসনে সংকটে পড়াদের মধ্যে এরকম অনেক কিছুই আছে। তবে আওয়ামীলীগের হাতে কেন যেন বেশি কাহিল হয় এই দুই অবলা। যাই হোক, এক অবলার জন্যে দারুণ পরামর্শ দিয়েছেন প্রাক্তন আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না। মা-বোনদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছেন, কোথায়ও যাওয়ার আগে খোঁজ নেন সেখানে ছাত্রলীগ আছে কি না। শুধু আওয়ামী বিদ্বেষীদের চোখেই বিষয়টি ধরা পড়ছে, এমন নয়। আওয়ামী প্রেমিক বলে বিবেচিতরাও মুখ খোলা শুরু  করেছে। মহাজোটের সঙ্গী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, “ করোনা, ধর্ষণ, দুর্নীতি আর লুটপাটে বিপর্যস্ত দেশ।

ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের কর্মীদের দ্বারা বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ ক্যাম্পাসে ধর্ষণ বা দলগত ধর্ষণের ঘটনা গত তিন দশক ধরেই ঘটছে। বর্তমান সরকার এতটাই বেপরোয়া থাকে যে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হতে পাওে এমনটি তারা মনে করে না। তাইতো তারা স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের দুঃসাহস দেখায়। গত দশবছর ধরে ছাত্রলীগ যা করছে নারীদের সাথে তাতে তাদের ছাত্রলীগ না বলে ধর্ষনলীগ বলাই শ্রেয়।

এই ছাত্রলীগই ১৯৯৮ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন মানিক ধর্ষণের সেঞ্চুরি উদ্যাপন করে সারা দেশে সমালোচনার ঝড় তুলেছিলেন।

এবার আসুন আমরা দেখি এই বছর ছাত্রলীগ ধর্ষনের কি কি মহড়া দিয়েছে,  গত ১০ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার আটিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সেলিমের বিরুদ্ধে টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণের অভিযোগ দায়ের করেন এক নারী। ৬ সেপ্টেম্বর রংপুরে একজন প্রভাবশালী ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন এক শিক্ষিকা। ৪ সেপ্টেম্বর ভোলার মনপুরা থানায় মনপুরা সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রাকিব হাসানের বিরুদ্ধে একটি ধর্ষণের মামলা দায়ের হয়।

৩ সেপ্টেম্বর ভোলা সদর মডেল থানায় ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি মামুন হাওলাদারের বিরুদ্ধে একটি ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন এক তরুণী।

গত ২০ আগস্ট এক স্কুলছাত্রীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘ চার বছর ধরে ধর্ষণের অভিযোগে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ মেহেদী হাসান নাইচের বিরুদ্ধে কলারোয়া থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। এর আগে গত ১২ ফেব্রুয়ারি বরিশালের বিমানবন্দর থানায় জেলা ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক বনি আমিনের বিরুদ্ধে নগরীর নথুল্লাবাদ এলাকা থেকে এক কলেজছাত্রীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়।

গত ৬ জানুয়ারি সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পরিচয়ে ফেসবুকের মাধ্যমে সম্পর্ক গড়ে বিয়ের নাটক সাজিয়ে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আকিবুল ইসলাম আকিবের বিরুদ্ধে বাকলিয়া থানায় মামলা হয়।

গত বছরের ৮ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শরিফুর রহমান পারভেজের বিরুদ্ধে স্থানীয় যুব মহিলা লীগের এক নেত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হয়। ওই বছরের ২৯ আগস্ট পাবনা সদর উপজেলার চরতারাপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নিরব হোসাইনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তোলে অন্তঃসত্ত্বা এক স্কুলছাত্রী। ১৮ আগস্ট মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার দরগ্রাম ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয় এক কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে।

২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা ছাত্রলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাহিম আহাম্মেদের বিরুদ্ধে জয়দেবপুর থানায় ধর্ষণের মামলা দায়ের হয়।

এমনকি নিজ সংগঠনের নেত্রীদেরও ধর্ষণের অভিযোগ আছে ছাত্রলীগের নেতাদের বিরুদ্ধে। ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থানার একটি স্কুল শাখার নেত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি রিয়াদ হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এর আগে মিরপুর বাঙলা কলেজের প্রভাবশালী এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে সংগঠনের এক নেত্রীকে বিয়ের আশ্বাসে ধর্ষণ করার অভিযোগ ওঠে। পরে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে বিচার চেয়ে না পেয়ে আত্মহত্যা করেন ওই নেত্রী।

একটি দেশে সরকার নারী। কিন্তু প্রতিনিয়ত নারীরা ধর্ষনের শিকার হচ্ছেন। তারপরও ক্ষমতায় থাকার জন্য কিছু বলছে না। যারা প্রতিবাদ করছে, তাদের বোনদের ক্ষমতার জোরে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এই ধর্ষনলীগের হাত থেকে কি বাংলাদেশকে বাচানো সম্ভব হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *