স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক দূর্নীতি সরকারের

স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক দূর্নীতি সরকারের

লেখকঃ সামিউজ্জামান সিদ্দিকী

বিনা ভোটে হাসিনা যদি দেশের প্রধাণমন্ত্রী হইতে পারে তাহলে অষ্টম-শ্রেণী-পাশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ড্রাইভারের প্লট-ফ্ল্যাট ও শতকোটি টাকার মালিক হওয়াতে সমস্যা কোথায়? একজন দুর্নীতি করে রাষ্ট্রের মালিকানা পাইছে আরেকজন দুর্নীতি করে শতকোটি টাকার মালিকানা পাইছে। কোনটা নিয়া আপনার চিল্লানোর উচিৎ বলেন?

আপনি দুর্নীতিবাজ ড্রাইভাররে নিয়া চিল্লান কারণ আপনার হাসিনার হোলসেল দুর্নীতি নিয়া চিল্লানোর মতো মাজার জোর নাই। সম্প্রতি স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি উদ্ঘাটনে অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে গাড়িচালক আবদুল মালেকের নাম বেরিয়ে আসে। গত বছরের মার্চে তাঁর ব্যাপারে অনুসন্ধান শুরু হয়। মালেক ও তাঁর স্ত্রীর সম্পদের পুরো তথ্য জানা যায়নি। তবে এখন পর্যÍ সাতটি প্লট ও দুটি সাততলা বাড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে। এর আগে আফজাল নামে স্বাস্থ্য বিভাগের আরেক কর্মচারীও গ্রেপ্তার হন দুর্নীতির কারণে। কিন্তু একজন গাড়ি চালক কিংবা একজন কর্মচারী যদি এমন দূর্নীতি করতে পারে তাহলে এই খাতের হামড়া-দামলাদের কি অবস্থা হতে পারে।

করোনা বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের আসল চেহারা খুলে এসেছে৷ দেখিয়ে দিয়েছে এই খাতটি কতটা দুর্বল৷ সাধারণ চোখে মনে হবে বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাতে কম বাজেটই এর কারণ৷ আর প্রশ্ন করলে এই খাত নিয়ে যারা ভাবেন তারা আরো অনেক কারণ দেখান৷ কিন্তু সবার কাছ থেকেই একটি কথা ‘কমন’ শোনা যায়, আর তা হলো দুর্নীতি৷ যদি একটু খোজ নেওয়া যায় তাহলে দেখা যাবে ,স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন বরাদ্দের শতকরা ৮০ ভাগই দুর্নীতির পেটে চলে যায়৷

বাংলাদেশে সরকারি চিকিৎসক আছেন ৩০ হাজার৷ আর সবমিলিয়ে নিবন্ধিত চিকিৎসক আছেন এক লাখের মতো৷ এর সঙ্গে স্বাস্থ্যকর্মীর হিসেব ধরলে সব মিলিয়ে এক লাখ ৩০ হাজারের বেশি নয়৷

বাংলাদেশে এখন সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে মোট হাসপাতালের সংখ্যা সাত হাজার ৩১২টি৷ এরমধ্যে সরকারি হাসপাতাল দুই হাজার ২৫৮টি, যার মধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিকও ধরা হয়৷ পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল ২৫৪টি৷ বাংলাদেশে এখন এক হাজার ৫৮১ জনের জন্য একজন নিবন্ধিত চিকিৎসক আছেন৷সরকারি হাসপাতালে বেডের সংখ্যা ৫২ হাজার ৮০৭টি৷ আর বেসরকারি হাসপাতালে বেডের সংখ্যা ৯০ হাজার ৫৮৭টি৷ বাংলাদেশের এখন মোট জনসংখ্যা ১৭ কোটির বেশি৷

দেশে যত মানুষ সে তুলনায় স্বাস্থ্যখাতকে কোন ধরনের সাজানোর ব্যবস্থা করছে না সরকার। গত বছর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতির ১১টি খাত চিহ্নিত করে৷ তার মধ্যে বেশি দুর্নীতি হয়: কেনাকাটা, নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি, পদায়ন, চিকিৎসাসেবা, চিকিৎসাসেবায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ব্যবহার, ওষুধ সরবরাহ খাতে৷ সাদা চোখে দেখা দুর্নীতির বাইরে একটি অভিনব দুর্নীতির কথাও তখন বলে দুদক৷ আর তা হলো, দুর্নীতি করার জন্য অনেক অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনা৷ এমন যন্ত্রপাতি কেনা হয় যা পরিচালনার লোক নেই৷ ওইসব যন্ত্রপাতি কখনোই ব্যবহার করা হয়না৷

২০১৭-১৮ অর্থবছরে কমপক্ষে এক হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে স্বাস্থ্যখাতের যন্ত্রপাতি কেনায়৷ ২৭টি সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কেনাকাটার তথ্য নিয়ে সংবাদমাধ্যম দুর্নীতির এই চিত্র প্রকাশ করে৷

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় প্রকৃত মূল্যের চেয়ে ১৮৬ গুণ বেশি দাম দেখানো হয়েছে৷ এক সেট পর্দার দাম দেখানো হয়েছে ৩৭ লাখ টাকা৷ ১৭৫ কোটি টাকার নিম্নমানের যন্ত্রপাতি কেনা হয় গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের জন্য৷ রংপুর মেডিকেল কলেজে প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও চার কোটি টাকার সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি কেনা হয়, যা কখনোই ব্যবহার করা হয়নি৷ ২০১৭ সালে টিআইবির খানা জরিপে স্বাস্থ্যখাতকে দুর্নীতিগ্রস্ত খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়৷ জরিপে অংশ নেয়া ৪২.৫ ভাগ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা নিতে গিয়ে ঘুস দুর্নীতির শিকার হয়েছেন৷

সর্বশেষ এই করোনার মধ্যে চিকিৎসকদের জন্য পিপিই এবং এন-৯৫ মাস্ক কেলেঙ্কারির কথা সবার জানা৷

এই বিষয়য়গুলো ভালো ভাবে দেখলে বিষয়টি অনেক সহজ যে এই খাত দূর্নীতিতে আষ্টে পিষ্টে আছে। একটি দেশের সব থেকে গুরুত্বপূর্ন এই খাতে দূর্ণীতি কেন। সহজ উত্তর। যখন দেশের সব খাতে দূর্নীতে ভরা সেখানে এমন গুরুত্বপূর্ন খাত কেন বাদ যাবে। অবৈধ সরকার, দেশের সব কিছু লুট করতেই এমন দূর্নীতি প্রতিটি খাতে দিয়ে রেখেছে। তাই হাসিনা সরকার সব দেখেও চুপ করে আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *