কলুষিত বিচার বিভাগ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম, যুক্তরাজ্য থেকে
আইনের শাসন আর এর নানাদিক নিয়ে কথা বলতে গেলে গা কেমন করে যেন গুলিয়ে আসতে থাকে। যেই দেশে এমন এক নায়ক দ্বারা শাসিত তাদের নিয়ে কথা বলতেও আমার রুচিতে বাঁধে। দেশের বিচার বিভাগ নিয়ে আজকে কথা বলবো।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক তাহেরের মেয়ে ১৬ বছর পর বাবার হত্যার বিচার পেয়েছেন। তার আইনজীবী হওয়ার গল্প সবার মুখে মুখে ফিরছে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, যেই মামলার প্রাথমিক বিচারে দুই বছরের মধ্যে শেষ হয়ে গেল, সেই মামলার চূড়ান্ত রায় আসতে কেন ১৪ বছর লাগলো?
আদালতের রায় বলছে অধ্যাপক তাহেরকে হত্যা করার তাঁরই সহকর্মী মহিউদ্দীন। ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ৩ তারিখ তাঁর মরদেহ উদ্ধার হয়। এক সপ্তাহের মধ্যে পুলিশ তদন্ত করে ডঃ মহিউদ্দীনসহ সকল অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে গ্রেপ্তার করতে সরকারের সবুজ সংকেত লাগে। ডঃ মহিউদ্দীন তৎকালীন সরকারের সমর্থক হলেও পার পাননি। দ্রুততম সময়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় সরকারের অনুমতি পেয়েই। চার্জশিটও দেয়া হয়।
২০০৮ সালের মে মাসে মামলার রায় হয়। প্রধান আসামীদের যাবজ্জীবন হয়, শিবিরের এক নেতা সালেহী, “প্রগতিশীল” শক্তি বারবার যার ফাঁসি চাচ্ছিল, দেখা গেল যে সে খালাস পেয়ে গেল।
এরপর আসলো আওয়ামী লীগের সরকার, ২০০৯ সালে। এরপর প্রায় পাঁচ বছর পর ২০১৩ সালে হাইকোর্টের রায় এল। সেই রায় গেল আপীল বিভাগে। আপীল বিভাগ চূড়ান্ত রায় দিল তারও নয় বছর পর ২০২২ সালে।
এই হচ্ছে আওয়ামী লীগের বিচার বিভাগ। একটা মামলা, যেটার প্রাথমিক বিচার দুই বছরে করা গিয়েছিল, বিএনপি এবং পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। সেই বিচার শেষ করতে এদের লাগলো ১৪ বছর।
এখন এদের মিডিয়া ১৬ বছর পর বিচার পাওয়ার কথা প্রচার করছে, অথচ প্রশ্ন করছে না যে একটা মামলা শেষ করতে কেন আওয়ামী আদালতের ১৪ বছর লাগলো।
প্রশ্নটার আংশিক উত্তর আমরা জানি। এই দেশের আদালত ও বিচার ব্যবস্থাকে চব্বিশ ঘণ্টা এই সরকার ব্যস্ত রাখে দেশের বিরোধী দলকে শায়েস্তা করতে আর বিভিন্ন সরকারি অন্যায়কে আদালতের কাঁধে বন্দুক রেখে সমাধা করতে। তাই সাধারণ মানুষের মামলা এভাবে যুগের পর যুগ পড়ে থাকলেও কারও কোন ভ্রুক্ষেপ থাকে না।
আমরা তাই বারবার বলে আসছি দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার কথা। দেশে যদি গণতন্ত্র থাকে, তাহলে লক্ষ লক্ষ মানুষকে বিচারের জন্য এভাবে যুগের পর যুগ বসে থাকতে হবে না। জনগণের সরকার সবার দ্রুত বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে পারবে।
আওয়ামী লীগের মত দল যতদিন ক্ষমতায় থাকবে, এরা ততদিন বিচারব্যবস্থাকে কলুষিত করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *