আওয়ামীলীগের একনায়কতন্ত্র চর্চা

এস এম মামুন তালুকদার, যুক্তরাজ্য

বিগত এক দশকের আওয়ামীলীগের শাসন আমলে দেশে তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য দেখা গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের কথা বলেছেন। কিন্তু একইসঙ্গে দেশজুড়ে কার্যত আওয়ামী লীগের স্বৈরাচার কায়েম করা হয়েছে। বিরোধীদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই। কেউ সরকারের সমালোচনা করলেই জামায়াত শিবিরের তকমা লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যেই প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে তারা ক্ষমতায় এসেছে তাতে করে তারা স্বৈরাচারের ধারাবাহিকতাই রক্ষা করেছে। সর্বোপরি দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোটি ভেঙে গিয়েছে।

সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী একচ্ছত্র ক্ষমতার চর্চা করেন৷ সংবিধান প্রধানমন্ত্রীকে একচ্ছত্র ক্ষমতা দিয়েছে৷ অন্যদিকে বেশির ভাগ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে দলীয়করণ ও দুর্নীতি প্রধান সমস্যা৷ এর সঙ্গে নেতৃত্বের অযোগ্যতা ও অদক্ষতার কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না এবং সর্বত্র রাজনৈতিক প্রভাব ও একনায়কতন্ত্রের সুস্পষ্ট ছাপ পরিলক্ষিত হচ্ছে।

একটি শক্তিশালী সংসদীয় রীতির সরকারের ব্যাপারে বাংলাদেশে সাংবিধানিক ও আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকলেও দুর্বল সংসদীয় সংস্কৃতি, নির্বাহী বিভাগের বিস্তৃত নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষমতাসীন দলের আধিপত্য থাকায় সংসদীয় ধাঁচে সরকার পরিচালনার স্পৃহা ও পদ্ধতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ সংসদের মতো নির্বাহী বিভাগও সরকার নিয়ন্ত্রিত। আইনসভা, নির্বাহী ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার বিভাজন পুরোপুরি অসমতল এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রাধান্যকৃত৷

আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে অব্যাহতভাবে রাজনৈতিকভাবে দলীয়করণ হওয়ায় বিতর্কিত নিয়োগ, পদোন্নতি, চাকরিচ্যুতি এবং বিচারকের আচরণের মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সার্বিকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। বিচারবিভাগের পাশাপাশি জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারাও রাজনীতিকীকরণের শিকার হয়েছেন৷ শুধু রাজনৈতিক বিবেচনা থেকে বিপুলসংখ্যক সরকারি কর্মকর্তাকে ক্ষমতাসীন দল ওএসডি করে রেখেছে৷ সরকারি কর্মকর্তাদের সততা ও নিয়োগের প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে৷ তাদের পদোন্নতির ব্যবস্থাও অস্বচ্ছ এবং সরকারি সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল৷

আইনের শাসন সমুন্নত রাখার পরিবর্তে সরকার ও রাজনৈতিক দলের স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে পুলিশ প্রশাসন নির্বিচারে ব্যবহৃত হয়ে আসছে৷ তাদের কর্মতৎপরতায় রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা এবং বিচারের ঊর্ধ্বে থাকার সুযোগ পাওয়ায় এক ধরনের বিচারহীনতার সংস্কৃতির প্রসার ঘটছে৷ রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত হওয়ায় নির্বাচন কমিশনও তার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠায় সফল হয়নি৷ কমিশনের সদস্যদের নির্দলীয় হওয়ার কথা থাকলেও তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে৷

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রাতিষ্ঠানিক ও রাজনৈতিক কারণে জর্জরিত, যা তার সার্বিক দক্ষতা ও কার্যকারিতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে৷ দুদকের সমস্যা হচ্ছে দৃঢ় রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব এবং ক্ষমতাসীন দলের দলীয় লোকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগের ব্যপারে কোনো কার্যক্রম গ্রহণ না করা। দুদকের মতো দুর্বল নেতৃত্ব, পেশাগত দক্ষতার অভাব এবং সরকারি সংস্থাগুলোর অসহযোগিতার কারণে তথ্য কমিশন ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না৷

ক্ষমতাসীন দল জনস্বার্থের নামে দলীয় স্বার্থের সম্প্রসারণে জনগণের সম্পদের ওপর একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে৷ রাজনৈতিক ব্যবস্থা ‘দুর্বৃত্তায়ন’ ও বাণিজ্যিকীকরণের অংশ হয়ে গেছে৷ ভয়ভীতি বা সুবিধা দেওয়ার নামে তারা অস্বচ্ছভাবে দলীয় তহবিল সংগ্রহ করে থাকে৷ আজকে গণমাধ্যম, নামেমাত্র স্বাধীন হলেও নিয়ন্ত্রণমূলক আইনি কাঠামোর কারণে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা, সরকারি গোপনীয়তা ও আদালত অবমাননার মতো বিভিন্ন অজুহাতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কার্যকরভাবে খর্ব করা হয়েছে৷ গণমাধ্যমের পাশাপাশি দেশের ব্যবসা খাতের আইনি কাঠামো অসামঞ্জস্যপূর্ণ৷ সরকারি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে টিকে থাকা কোন ভাবেই সম্ভব নয় এখন। তাই অনেক ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের সঙ্গে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রশ্নবিদ্ধ সম্পর্ক দেখা যায়৷

উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যতীত অন্যান্য সকল ক্ষেত্রেই আজ একচ্ছত্র আধিপত্য আওয়ামীলীগের। ক্ষমতার প্রাচুর্যে তারা একনায়কতন্ত্র তথা বাকশালি রাজনীতি কায়েম করেছে। কোথাও কোন স্বাধীনতা নেই। না জনগনের না কোন সরকারি, বেসরকারি বা ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের।

ছাত্রলীগ নাকি সন্ত্রাসলীগ?

এস এম মামুন তালুকদার, যুক্তরাজ্য

দেশজুড়ে চলছে ত্রাশের রাজত্ব। সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় সব ধরনের অপকর্মে জড়িত হচ্ছে ছাত্রলীগের কর্মীরা। বীরদর্পে তারা একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে। তারা যানে যতই তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন হোক তাদের কিছুই হবেনা শেষপর্যন্ত। তাদেরকে ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধি করছে কতিপয় সিনিয়র নেতারা। দেশ কে বা জাতিকে ভালোবেসে নয় তারা শুধুমাত্র ক্ষমতার লোভে ছাত্রলীগে যোগ দিয়েছে। এখন এমনই অবস্থা দাড়িয়েছে যে দেশজুড়ে সবাই ছাত্রলীগের কর্মী বলে নিজেকে পরিচয় দিচ্ছে।

এখন যদি বলা হয় ভার্সিটি পড়ুয়া একটা ছেলে কেন ছাত্রলীগে যোগদান করবে? ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে কি আদর্শ আছে? আসলে প্রকৃতপক্ষে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর সংখ্যা খুবই নগণ্য। হিসেব করলে দেখা যাবে দেশের ৮৫-৯০ ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রলীগকে দেখতে পারে না। এখন সবার মনে প্রশ্ন জাগবে, কেন দেখতে পারে না? দেখতে না পারার কারণ ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক যত অপকর্ম আছে প্রায় সবগুলোর সাথে জড়িত ছাত্রলীগ। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ছিনতাই, মাদকবাণিজ্য, ভর্তিবাণিজ্য, শিক্ষক লাঞ্ছনা, নিয়োগ বাণিজ্য, সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধর, রামদা, ছুরি, চাপাতি হলে রাখা, গণমাধ্যম কর্মীদের মারধর, ক্যাম্পাস ভাঙচুর, হল ভাঙচুর, হল থেকে মোবাইল, ল্যাপটপ চুরি, জুয়া, ক্যাম্পাস থেকে বিভিন্ন জিনিস চুরি থেকে শুরু করে সব ন্যাক্কারজনক কাজের সাথে জড়িয়ে পড়েছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।

বর্তমান ছাত্রলীগ নেতা কর্মীদের নীতি ও আদর্শ বলতে কিছু আছে কিনা সন্দেহ। এরা আসলে  ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসলীগ, চাঁদাবাজলীগ। প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর অবস্থা এতটা বাজে যে, হলে থাকার মতো কোনও পরিবেশ নেই। হলে সিট দেবে প্রশাসন আর সিটের জন্য দৌড়াতে হয় ছাত্রলীগ নেতার পিছে। এ যেন এক দাসপ্রথা। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ক্যান্টিন নেই। কারণ ক্যান্টিনে খেয়ে তারা টাকা দেয় না, ভয় দেখায়, বলে, আমি ছাত্রলীগ করি। ডাইনিং চলে না। কারণ বাকি খেয়ে টাকা দেয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা কাজে ভাগ না পেলেই তারা ভিসি ঘেরাও, শিক্ষকের সামনে অকথ্য ভাষায় গালাগালি ছাত্র করে নামধারী ছাত্রলীগ। এদের দেখলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভয় পায়। কেউ ব্যক্তিগত খরচে ভবন নির্মান করলেও চা-পানি খাওয়ানোর নামে চাদাঁ দিতে হয় তাদের। না হলে কাজ বন্ধ করে দেবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে দেখা যায়, শিবিরের অসংখ্য পোলাপান ছাত্রলীগ হয়ে হলে থাকে। কারণ লীগ করলে টিকে থাকতে পারবে।   ছাত্রলীগ সাধারণ ছাত্রদের ব্রেইন ওয়াশ করে হাতে মাদক দিয়ে। আর যে কয়টা ভালো কাজ করে সেগুলোও চাঁদাবাজির টাকা দিয়ে করে। সংগঠনে চেইন অব কমান্ড নাই। কেউ কাউকে কেয়ার করে না। ছাত্রলীগ নেতা হওয়া মানে টাকার বিছানা পাওয়া, বিশাল ক্ষমতা পাওয়া। জুনিয়র কর্মী কিভাবে বেয়াদবি করবে সিনিয়রদের সাথে সেটা শেখায় ছাত্রলীগের অধিকাংশ নেতারা। প্রথম বর্ষের ছেলে মাস্টার্সের ছেলের গায়ে হাত তোলে। এটা কি ধরনের রাজনীতি? আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের অনেকের অনেক টাকা। এসব দেখে ছাত্রলীগ নেতারা ক্যাম্পাসে চাঁদাবাজি করে করে। বাজেটের টাকায় ভাগ চায়।

আজ জোর করে ছাত্রলীগ কর্মী বানাতে হয়। কেউ নিজ ইচ্ছায় ছাত্রলীগে যোগ দেয়না।  শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগে যোগ দেবে নেতাদের আদর্শ দেখে। সেই আদর্শ কোথায়?

দালাল, দুর্নীতিবাজমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বহু প্রাণের বিনিয়মে আমরা স্বাধীন হয়েছি পাকিস্তানিদের কাছ থেকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উচিৎ ছাত্রলীগে শুদ্ধি অভিযান চালানোর। আর শাখা কমিটিগুলো দেয়ার সময় সৎ ও যোগ্য প্রার্থীদের বাছাই করে কমিটিতে স্থান দেয়ার। কোনও অনিয়ম ও চাঁদাবাজির অভিযোগ পেলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নিতে হবে। দালাল, দুর্নীতিবাজ, কুলাঙ্গারমুক্ত বাংলাদেশ চায় সবাই এসব আদর্শ ও ন্যায়-নীতি বিবর্জিত খুনিলীগ, চাঁদাবাজলীগ ও সসন্ত্রাসীলীগ নয়।

সাধারণ মানুষকে জিম্মি করার রাজনীতি

এস এম মামুন তালুকদার, যুক্তরাজ্য

আমরা এখন এমন এক সময়ের মধ্যে আছি যখন দেশ ও দেশের মানুষ এক চরম সংকটের সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তারা চাইলেও এর থেকে পরিত্রান মিলছে না। দেশের সাধারণ মানুষ আজ এই অবৈধ সরকারের কাছে জিম্মি। গণতন্ত্র আজ বিলুপ্ত, জনগনের বাক স্বাধীনতা ক্ষুন্ন করা হয়েছে, দেশের সমস্ত ক্ষেত্র আজ দুর্নীতিগ্রস্থ, সুদ-ঘুষের বানিজ্য, বেকার সমস্যা, লাগামহীন বাজারদর মানে সবদিক দিয়েই জন সাধারণ এক সীমাহীন অস্থিরতার ম মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যার আশু সমাধান প্রয়োজন। দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্র‍শোজন যেখানে  জনগন শান্তিতে ভোট দিয়ে যোগ্য সরকার নির্বাচিত করতে পারে। যে সরকার গনতান্ত্রিকভাবে দেশ পপরিচালনা করবে এবং জনগনের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে।

দেশজুড়ে বিভিন্নরকম সমস্যা থাকলেও এর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ক্ষমতা-কেন্দ্রীক নির্বাচন, আর তাই শুধু নির্বাচন সংকটের সমাধান দিতে পারবেনা। এজন্য রাজনৈতিক অঙ্গনে দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারের লক্ষ্যে কিছু মৌলিক ক্ষেত্রে ঐক্যমত্য অর্জন অপরিহার্য। এর মধ্যে রয়েছে বর্তমান নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তন করে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির প্রর্বতন, এছাড়াও না-ভোটের পূন:প্রর্বতন এবং নির্বাচনী জোটের রাজনীতি বন্ধ করা উচিৎ। তবে সবথেকে বড় কথা প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার পূর্নবিন্যাস, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতার সীমারেখা নির্ধারণ করতে হবে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশের সকল বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন। এর মানে হলো অন্যান্য প্রশাসনের কোন ভূমিকা নেই। থাকলেও তারা সক্রিয় নয়। এছাড়াও দুই মেয়াদের বেশী এক ব্যাক্তি সরকার প্রধান হতে পারবেন না এমন নীতিমালা প্রনয়ণ করা প্রয়োজন। দলীয় প্রধান হয়েও একই সাথে সরকার প্রধানের পদাসীন হবার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। সংসদ বর্জনের সংষ্কৃতি আইন করে বন্ধ করতে হবে, একইসাথে সংসদ সদস্যদের নৈতিক আচরণবিধি প্রনয়ণ ও কার্যকর করতে হবে। দেশ এখন বিরোধী দলশুন্য। তাই সরকারও স্বেচ্ছাচারিতার চরম সীমায় গিয়ে জনগনকে জিম্মি করে রেখেছে। সংসদে বিরোধী দলের অংশগ্রহণের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে এমনকি বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন করতে হবে। তাছাড়া সংবিধানের ৭০নং অনুচ্ছেদের সংশোধনীসহ রাজনৈতিক দলে গণতান্ত্রিক চর্চা বিকাশের পথ প্রশস্ত করা প্রয়োজন। রাজনৈতিক কার্যক্রম ও আন্দোলনের আচরণবিধি প্রনয়ণ ও বাস্তবায়ণ করতে হবে যেন এরূপ কার্যক্রমের মাধ্যমে মানুষের মৌলিক অধিকার ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করার অপসংস্কৃতির অবসান হয়। সর্বোপরি ক্ষমতার রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে যে গগণচূম্বী সম্পদাহরণের সুযোগ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করছে তা নির্মূল করা।প্রয়োজন খুব শীগ্রই।

প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার ব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন ও নির্বাচন কমিশনের মত প্রতিষ্ঠানে দলীয় রাজনৈতিক প্রভাব বন্ধ করতে হবে। এই সংস্কারের তালিকা যত দীর্ঘই হোক, এবং আপাত দৃষ্টিতে যত অবাস্তবই মনে হোক না কেন,গণতন্ত্র ও জনস্বার্থে শুরু করতে হবে এখনই।কালক্ষেপনের সময় নেই। এই রাজনৈতিক অচলাবস্থা, একনায়কতন্ত্র, প্রতিহিংসার রাজনীতি বেশিদিন চলতে পারেনা। জনগনকে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। আর এজন্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিকল্প নেই।

রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে সমাধান যে অবশ্যই সম্ভব এটা সকলেই জানে। এজন্য বিশেষজ্ঞ মতামতের কোন প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন নেই কোন বিদেশীদের পরামর্শের কিংবা হহস্তক্ষেপের। দেশের যেকোন একজন সাধারন নাগরিকের দাবীই এরজন্য যথেষ্ট। আর তাই জাতীয় স্বার্থ ও জনগণের প্রত্যাশাকে অন্য সব কিছুর উর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ক্ষমতার এই নোংরা রাজনীতি যে কোন মূল্যে বন্ধ করতে হবে।

দূর্নীতি ও বাংলাদেশ

এস এম মামুন তালুকদার, যুক্তরাজ্য

সাধারণ মানুষ প্রতিদিনের জীবনে প্রতিনিয়ত দুর্নীতি এবং অনিয়মের মুখোমুখি হচ্ছে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় গলদ থাকাই দুর্নীতি বাড়ার বড় কারণ । বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমি, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতির অভিযোগ বেড়েছে। মাঠ পর্যায় থেকেই দুর্নীতির অভিযোগ বেশি আসছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ তাদের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে দুর্নীতির হাজার হাজার অভিযোগ করেছে। এমনকি যারা দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনে সোচ্চার তাদের পক্ষ থেকে দুদকের প্রতি অভিযোগ করা হয়েছে বহুবার। তাদের অভিযোগ হলো দুদক সর্বদা রাজনৈতিক বিবেচনার প্রশ্ন আছে এমন বড় বড় ইস্যু এড়িয়ে গিয়ে ছোটখাটো বিষয়ে মামলা নিয়ে ব্যস্ত থাকছে। তবে দুদক তা বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।

মাঠ পর্যায় থেকে প্রতিনিয়ত দুর্নীতির অজস্র অভিযোগ পাওয়া যায়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ তাদের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে দুর্নীতির হাজার হাজার অভিযোগ করছে। তবে মিলছেনা এর প্রতিকার। এছাড়া টিআইবির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ দু’ধাপ এগিয়ে এখন ১৫ নম্বরে অর্থাৎ সূচকে অগ্রগতি হলেও দুর্নীতি দমনে গুণগত কোন পরিবর্তন আসেনি।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যদিও জানানো হয়েছে দুর্নীতি দমনে বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থে ব্যাপক অগ্রগতির কথা। তবে বাস্তবচিত্রে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। কেননা এখনো সঠিকভাবে অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে সরকারি এবং বেসরকারি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তথা পুরো দেশ জুড়ে দুর্নীতি ভয়াবহ পর্যায়েই রয়েছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্ট অনুযায়ী ২০০১ থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর বাংলাদেশ ছিল বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ। এরপরে ২০০৬ সালে তৃতীয়, ২০০৭ সালে সপ্তম ও গত বছর ছিল ১৩ তম অবস্থানে।

নানা উদ্যোগ আর দুর্নীতি দমন কমিশন সক্রিয় থাকার পরেও দুর্নীতি প্রতিরোধ কেন করা যাচ্ছে না তার দায় সরকারের উপরেই বর্তাবে।  সরকারী বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সেবা গ্রহীতাদের সচেতন হওয়াও অনেক জরুরী।

কেননা সরকারের পক্ষ থেকে যা-ই বলা হোক না কেন দুর্নীতি প্রসঙ্গে যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে সেই পুলিশ বাহিনীও আজ প্রশ্নবিদ্ধ। তারা মানুষের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ। এছাড়া পুলিশ বাহিনীর পর মানুষের বেশি অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে রাজউক, পাসপোর্ট অফিস, আয়কর অফিস কিংবা বিআরটিএর মতো সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব সরকারী অফিসগুলোরই যদি এই অবস্থা হয় তাহলে স্বায়ত্তশাসিত বা বেসরকারি অফিসগুলোতে কি হচ্ছে তা সহজেই অনুমেয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজনের কাছ থেকে জানা যায়,  রাজউক নিয়ে তার অভিজ্ঞতা মোটেও সুখকর নয়। তার কাছ থেকে জানা গেছে, রাজউকে টাকা ছাড়া কোন কাজই হয়না। তার মতো এরকম অনেকেই অহরহ হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অথচ সরকারের মুখে সেই একই মুখস্ত বুলি দুর্নীতি এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে।

মোহাম্মদ সোহেল নামক একজন ব্যক্তিগত গাড়ির চালকের সাথে কথা বলে জানা গেছে,  বিআরটিএ তে দালাল ছাড়া কাজ করানোই কঠিন। সরকারের নাকের ডগা দিয়ে সর্বত্রই চলছে ঘুষ বানিজ্য আর দালালির রমরমা ব্যবসা। আর সরকারী আমলারাও এই সুযোগে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। ঘুষের টাকায় তারা টাকার পাহাড় গড়ে তুলছে খুব সহজেই।

এরপর যদি পাসপোর্ট অফিসগুলোর কথা বলা হয় সেখানেও দেখা যাবে পরিস্থিতি  কিছুটা পরিবর্তন হলেও সেখানেও রয়েছে দুর্নীতির চর্চা। কয়েকটি পাসপোর্ট অফিস ঘুরে দেখা যায়, যারা নতুন আবেদনকারী তাদের জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশনে বেগ পেতে হয়, ঘুষ দিতে হয় তবেই মেলে পুলিশ ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেট।  আর ঢাকার বাইরের পাসপোর্ট কার্যালয়গুলো নিয়েও রয়েছে দুর্নীতির অসংখ্য  অভিযোগ।

অন্য আরেক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, পিরোজপুরে তার তিন আত্মীয়ের পাসপোর্ট করাতে ৩৩ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। এমনকি তার নিজের ও স্ত্রীর পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনে আসা পুলিশকে এক হাজার টাকা দিতে হয়েছে। এছাড়াও দুর্নীতির আরেকটি বড় ক্ষেত্র হলো আয়কর অফিস গুলো, যা উঠে এসেছে একজন আয়কর আইনজীবীর কথায়।

আর এসব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলে এটাই বলাই যায় যে সরকারি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোতে দুর্নীতির মাত্রা ব্যপক এবং ভয়াবহ রকম বিস্তৃত।