অস্ট্রেলিয়ার আড়াই লাখ ডোজ টিকা আটকে দিল ইতালি

ইতালি সরকার তাদের দেশে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা অস্ট্রেলিয়াতে রপ্তানির একটি চালান আটকে দিয়েছে। এই চালানের মাধ্যমে ইতালি থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনার টিকার আড়াই লাখ ডোজ অস্ট্রেলিয়াতে রপ্তানি হওয়ার কথা ছিল।

বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন নিয়ম অনুযায়ী টিকা সরবরাহকারী কোনো কোম্পানি যদি ইইউর বাধ্যবাধকতা পূরণে ব্যর্থ হয় তাহলে তারা রপ্তানি বন্ধ করে দিতে পারবে। অস্ট্রেলিয়ায় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা রপ্তানি বন্ধের মাধ্যমে প্রথম এই নিয়মটি প্রয়োগ করল ইতালি। ইতালির এই পদক্ষেপে সমর্থন জানিয়েছে ইউরোপীয় কমিশন।

গত সপ্তাহেই ইইউর কাছে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে পাঠানো অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার এই চালানটি আটকে দেওয়ার কথা জানিয়েছিল ইতালি।

এ বিষয়ে ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি অনুমোদনের জন্য তারা আবেদন পেয়েছিল। এর আগের আবেদনটি তারা অনুমোদন করেছিল। কারণ তাতে বলা হয়েছিল বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য কিছু স্যাম্পল পাঠানো হবে। কিন্তু সবশেষ আবেদনটি আড়াই লাখ ডোজের বেশ বড় চালান। ফলে আবেদনটি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, অস্ট্রেলিয়া ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় নেই। ইইউ ও ইতালিতে টিকার ঘাটতি রয়েছে। ইতালি ও ইইউতে সামগ্রিকভাবে যে টিকা সরবরাহ করা হয়েছে তার তুলনায় অস্ট্রেলিয়া রপ্তানির জন্য আবেদন করা এই চালানটি অনেক বড়।

অ্যাস্ট্রাজেনেকা বছরের প্রথম তিন মাসে ইইউ সদস্য দেশগুলোকে রপ্তানি চুক্তির ৪০ শতাংশ সরবরাহের পথে রয়েছে। সরবরাহ ঘাটতির জন্য কোম্পানিটির পক্ষ থেকে উৎপাদন স্বল্পতার কথা বলা হয়েছে।

গত জানুয়ারিতে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জিউসেপ কোঁতে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও ফাইজারের টিকা সরবরাহে বিলম্ব হওয়াকে অপ্রত্যাশিত বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ তোলেন।

গত বছরের জুনে ইউরোপীয় ভ্যাকসিন স্কিমের আওতায় ইউরোপিয়ান কমিশন তাদের সদস্য দেশগুলোর পক্ষে টিকা কিনতে আলোচনা করেছিল।

এদিকে ইতালির এই পদক্ষেপের পর অস্ট্রেলিয়া, ইইউ বা অ্যাস্ট্রাজেনাকার পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি।

গত সপ্তাহে ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা দিয়ে করোনার টিকা কার্যক্রম শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। শুক্রবার থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা তাদের টিকা কার্যক্রমে যুক্ত হওয়ার কথা ছিল।

এইচএসসি পাস শিক্ষার্থীরা যত ফি ফেরত পাবেন

পরীক্ষা ছাড়াই ফল মূল্যায়ন হওয়ায় ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় নেওয়া টাকার মধ্যে ব্যয় না হওয়া কেন্দ্র ও বোর্ড ফি ফেরত পাবেন শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে আজ রোববার বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে শিক্ষা বোর্ড। কত টাকা ফেরত দেওয়া হবে, তা–ও উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।

গত শনিবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার মূল্যায়নের ফল প্রকাশ করা হয়। করোনা মহামারির কারণে এবার জেএসসি ও এসএসসি এবং সমমানের পরীক্ষার গড় ফলের ভিত্তিতে পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। এতে ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীন ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৭ জন পরীক্ষার্থীর সবাই পাস করেছেন। ফল প্রকাশের দিনেই শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানিয়েছিলেন ফরম পূরণের নেওয়া অব্যয়িত টাকা পরীক্ষার্থীদের ফেরত দেওয়া হবে।

এক দিন পর আজ রোববার ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।

এতে বলা হয়, ফরম পূরণ করা পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্রে উল্লেখ থাকা প্রতিপত্রের (এক বিষয়ে দুই পত্রও হয়) জন্য বোর্ড নির্ধারিত ফি থেকে পত্র প্রতি (তত্ত্বীয়) ৩০ টাকা করে এবং ব্যবহারিক বিষয়ের ক্ষেত্রে পত্র প্রতি আরও ১০ টাকা করে ফেরত দেওয়া হবে। এই টাকা পরীক্ষার্থীদের নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো হবে। পরীক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠান থেকে এই টাকা গ্রহণ করবেন।

আর কেন্দ্র ফি থেকে পরীক্ষা প্রতি ২০০ টাকা করে এবং তথ্য ও যোগাযোগ (আইসিটি) বিষয়ের পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত আরও ২৫ টাকা করে ফেরত দেওয়া হবে। এ ছাড়াও প্রবেশপত্রে উল্লেখ থাকা (আইসিটি বাদে) সব ব্যবহারিক বিষয়ের ক্ষেত্রে পত্রপ্রতি আরও অতিরিক্ত ৪৫ টাকা ফেরত দেওয়া হবে। প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা নিতে হবে।

অন্যদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ফরম পূরণ বাবদ আদায় করা অর্থের ১০ শতাংশ এবং আইসিটি ব্যবহারিক বিষয়ের জন্য আদায় করা ফি থেকে পরীক্ষার্থীপ্রতি ২০ টাকা ফরম পূরণ ও আনুষঙ্গিক কাজের জন্য ব্যয় নির্বাহ করবে। আর প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরীক্ষার্থীপ্রতি সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রকে ১৬০ টাকা হারে দেবে। কেন্দ্র এই টাকা পরীক্ষার গোপনীয় কাগজ পরিবহন ও বোর্ডে জমা, সংরক্ষণ এবং প্রশাসনিক কাজে ব্যয় করবে।

বি এন পির মিছিলে পুলিশের হামলা-মামলার আসামীর সংখ্যা বেড়েই চলছে

রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষ্যে বিক্ষোভ সমাবেশে গত ৩০ শে ডিসেম্বর ২০২০ ইং তারিখে পুলিশের হামলায় শতাধিক ব্যাক্তি আহত হয়। এই ঘটনার পরপর পুলিশ বাদী হয়ে সেই সময় অনেক অজ্ঞাতনামা ব্যাক্তি ও একই পরিবারের একাধিক ব্যাক্তিকে মামলায় আসামী করলেও পরবর্তী সময়ে এই মামলার আসামী সংখ্যা বেড়েই চলছে। আমাদের সংবাদাদাতার মাধ্যমে জানা যায় যে এই মামলায় এখন একই পরিবারের প্রবাসী সদস্য সহ এখন আসামীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাতে। একই ঘটনা ঘটছে আরো অন্যান্য যত মামলা হয়েছে সেদিনের বিভিন্ন কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে, সেগুলোতেও। অন্যায়ভাবে সবাইকে বিভিন্ন মামলায় ফাসিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে বিএনপির যে অভিযোগ, সেই অভিযোগের সত্যাসত্য যাচাই করবার জন্যে এই প্রতিবেদক রূপনগরের মামলাটির ব্যাপারে অনুসন্ধান চালান। 

ঘটনার বিবরণ থেকে জানা যায় যে গত ৩০ শে ডিসেম্বরে ২০২০ইং তারিখে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে মিরপুরের রূপনগরে এক্টি বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশের এক পর্যায়ে পুলিশ অতর্কিতে সমাবেশের উপর টিয়ার গ্যাস ও লাঠি পেটা করতে শুরু করে। যার ফলশ্রুতিতে ঘটনাস্থলেই প্রায় শতাধিক ব্যাক্তি আহত হয় এবং অনেককেই আহত অবস্থায় হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করে এবং এলাকার সাবেক সাংসদ জহির উদ্দিন স্বপনের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত উলিয়ার হোসাইন এবং তাঁর ভাগ্নি-পুত্র এনামুলকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে একই দিনে এই একই মামলার এজাহারে উলিয়ারের প্রবাসী ভাগনে মোঃ শহীদুল ইসলামকেও এই মামলার আসামী করা হয়। এই ছাড়াও যুক্তরাজ্য প্রবাসী আরেক ব্যাক্তি মোঃ মইন উদ্দিন চৌধুরীকেও আসামী করা হয়। এদের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে এরা কেউ-ই সেদিন বাংলাদেশে ছিলেননা। 

পুলিশের সূত্রে জানা গেছে অজ্ঞাতনামা আসামীর নাম আগের থেকেই এই মামলায় থাকার ফলশ্রুতিতে পুলিশ পরবর্তী সময়ে তাদের ইচ্ছেমত আসামীর নাম বসিয়ে নিচ্ছে এবং ক্রমাগত বিএনপি সমর্থক যাকে-তাকে বিশেষ করে উলিয়ার হোসাইনের পরিবারকে হয়রানি করছে।

সাম্প্রতিক সময়ে এই মামলায় উলিয়ারের আরেক ভাই আওলাদ হোসাইনকেও এই মামলার আসামী করা হয় যিনি বর্তমানে জামিনে রয়েছেন বলে জানা যায়। এদিকে উলিয়ার হোসাইন এবং এনামুল হক দুজনেই এই মামলায় জামিন পেয়েছেন। কিন্তু উলিয়ার আর আওলাদের ভাগ্নে শহীদুলের তিন ভাইকেও পরবর্তীতে মামলায় জড়ানো হয়  – মোঃ মেজবাহ উল ইসলাম, মোঃ রফিকুল ইসলাম এবং শফিকুল ইসলামকে আসামী দেখিয়ে গ্রেফতার করা হয়, যাদের কেউই এখনো জামিন পাননি। একই পরিবারের এত সংখ্যক ব্যাক্তিকে একই মামলায় আটক কিংবা আসামী করায় শুধু রূপনগর নয়, সারা বাংলাদেশেই এই সংবাদ নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। এই ঘটনা সবক্ষেত্রেই ঘটছে। যাদের টার্গেট করা হচ্ছে, তাদের পুরো পরিবারের বিরূদ্ধেই পুলিশ দিয়ে আক্রমণ করা হচ্ছে বলে জানান এলাকার একজন উঠতি বিএনপি নেতা। গায়েবী মামলার অভিযোগ গত কয়েক বছর ধরে তীব্র হয়েছে এই সরকারের বিরূদ্ধে। 

এই ব্যাপারে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সিনিয়ার নেতা রুহুল কবির রিজভী’র কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘অবস্থা এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে এই আম্মলায় আমাদের চেয়ার পার্সন দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কিংবা দেশ নায়েক তারেক রহমানকেও আসামী করা হলে আসলে আমরা অবাক হবো না। সরকার তার পেটোয়া পুলিশ বাহিনীকে নিয়ে যা করছে তা আসলে রাষ্ট্র পরিচালনা মনে হয়না। মনে হয় বাংলাদেশটা একটা নরকে পরিণত হয়েছে’

এই ব্যাপারে রূপনগর থানায় যোগাযোগ করা হলে থানার কোনো কর্মকর্তাই কথা বলতে রাজী হন নাই। তবে এই মামলাকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মামলা বলেই আখ্যায়িত করছেন এলাকাবাসী থেকে শুরু করে সকলেই।

টানা চারবার অপরাজিত একজন শাহানারা

রাজশাহীর বাগমারার ভবানীগঞ্জ পৌরসভার সংরক্ষিত-২ (৪, ৫ ও ৬) ওয়ার্ডে এবার নিয়ে টানা চারবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন শাহানারা খাতুন। তাঁর সাফল্যের পেছনে রসায়ন জনপ্রতিনিধি কেমন হতে হবে, তারই যেন একটি আদর্শ উদাহরণ। শাহানারা তাঁর এলাকার মানুষের কাছে তুমুল জনপ্রিয় একজন জনপ্রতিনিধি। ভোটের মাঠের প্রতিদ্বন্দ্বীরাও তাঁর প্রশংসা না করে পারেন না।

ভবানীগঞ্জ পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর গত ২০০২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনেই প্রথম কাউন্সিলর নির্বাচিত হন শাহানারা। প্রথম নির্বাচনে সংরক্ষিত-২ (৪, ৫ ও ৬) ওয়ার্ডে শাহানার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন তাঁরই একজন প্রতিবেশীসহ তিনজন প্রার্থী। প্রথম নির্বাচিত হওয়ার পর আর পরাজিত হতে হয়নি তাঁকে। নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করার জন্য তিনি মাঠে থেকেছেন, যার ফলাফল পরের তিন দফা নির্বাচনেও তিনি বিজয়ী হয়েছেন। ২০১৫ সালের নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন উপজেলা পরিষদের বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মমতাজ আক্তারসহ তিনজন প্রার্থী। সেবার বিপুল ভোটে বিজয়ী হন শাহানারা। মমতাজ আক্তার পরবর্তী সময়ে ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে জয়ী হন।

ভবানীগঞ্জ পৌরসভার সংরক্ষিত-২ (৪, ৫ ও ৬) ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাহানারা খাতুন

ভবানীগঞ্জ পৌরসভার সংরক্ষিত-২ (৪, ৫ ও ৬) ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাহানারা খাতুন
ফাইল ছবি

সর্বশেষ এবার দ্বিতীয় দফা পৌরসভা নির্বাচনে ১৬ জানুয়ারি কাউন্সিলর পদে জয়ী হয়েছেন শাহানারা। এবারও তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন তিনজন প্রার্থী। এবার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ৫১২ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন শাহানারা। এভাবেই একে একে টানা চারবার পৌরসভা নির্বাচনে একই সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে অপরাজিত থেকেছেন তিনি।

শাহানারা খাতুন একজন গৃহবধূ। তিনি ভবানীগঞ্জের খুচরা সার ব্যবসায়ী আক্কেল আলীর স্ত্রী। আক্কেল আলী বলেন, তাঁদের দুই ছেলেমেয়েদের মধ্যে মেয়ের বিয়ে হয়েছে। আর ছেলে উচ্চমাধ্যমিকে পড়ছে। সামান্য ব্যবসা করে তাঁদের সংসার চলে। সংসারের কোনো চাপ না থাকার কারণে তাঁর স্ত্রী এলাকার লোকজনের পাশে থাকেন।
নিজ এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে শাহানারার জনপ্রিয়তা ও অপরাজিত থাকার রহস্য জানতে ভোটের পর ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি দুই দিন সরেজমিনে কথা হয় তাঁর পরিবার ও এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে।

নির্বাচনের সময় রাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচারণা চালান শাহানারা

নির্বাচনের সময় রাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচারণা চালান শাহানারা
সংগৃহীত

স্থানীয় অর্ধশত নারী ও পুরুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শাহানারা প্রতিদিন সকালের রুটিন বাড়ির কাজ সেরেই এলাকায় বেরিয়ে পড়া। এলাকার বাসিন্দাদের বাড়িতে গিয়ে এ সময় কুশল বিনিময় করা ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের খোঁজখবর নেন তিনি। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে এভাবেই নিজের দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি। শাহানারার সফলতার পেছনে লোকজনের সঙ্গে তাঁর অমায়িক ব্যবহার একটি বড় অনুঘটকের কাজ করেছে। নিজ প্রচেষ্টায় তিনি দেড় যুগ ধরে যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন। শাহানারা খাতুন প্রতিনিয়ত এলাকার লোকজনের বাড়িতে গিয়ে তাঁদের খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন সুযোগ–সুবিধার কথা তাঁদের জানান। এলাকাবাসীর পরিবারের অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের গল্প জেনে গোপনে এসব লোকজনের তালিকা তৈরি করেন। তারপর মেয়রের সঙ্গে আলাপ করে তাঁদের সুবিধাভোগীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেন। এভাবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রকৃত অসহায় লোকজনকে সুবিধা পেতে সহায়তা করেন। এমনকি সুবিধাভোগীদের জন্য বিভিন্ন অফিস ও ব্যাংকে দৌড়ঝাঁপ তিনিই করেন। এরই প্রতিদান পাচ্ছেন তিনি প্রতিবার ভোটে।

শাহানারার সফলতার পেছনে লোকজনের সঙ্গে তাঁর অমায়িক ব্যবহার একটি বড় অনুঘটকের কাজ করেছে। তিনি প্রতিনিয়ত এলাকার লোকজনের বাড়িতে গিয়ে তাঁদের খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন সুযোগ–সুবিধার কথা তাঁদের জানান। এমনকি সুবিধাভোগীদের জন্য বিভিন্ন অফিস ও ব্যাংকে দৌড়ঝাঁপ তিনিই করেন।

ভবানীগঞ্জ মাস্টারপাড়া এলাকার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ সরকার বলেন, শাহানারা খাতুন নিয়মিতভাবে তাঁর এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে ছুটে যান। লোকজনের সঙ্গে মিশে সহজে আপন হতে পারেন। এটাই তাঁর বড় গুণ।

এলাকার বাসিন্দা কলেজশিক্ষক কামাল হোসেন বলেন, শাহানারা খাতুনের আচরণ ও সব সময় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর গুণেই লোকজন তাঁকে বারবার নির্বাচিত করছেন। তিনি শুধু নির্বাচনের সময় নয়, সারা বছরই লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন এবং তাঁদের কাছাকাছি থাকেন। এসব কারণে তিনি ভোটারদের দৃষ্টিতে সর্বদা একজন যোগ্য প্রার্থী।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শাহানারার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সাবেক একজন প্রার্থী বলেন, শাহানারা আপা একজন ভালো মানুষ। তাঁর কাছ থেকে অনেক শেখার আছে। তিনি সহজে মানুষের সঙ্গে মিশে আপন হতে পারেন। তাঁর সততা ও এই গুণের কারণে তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী।

লোকজনের ভালোবাসার কারণে টানা ১৮ বছর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। সব সময় মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং মিলেমিশে থাকাকেই বড় সম্বল বলে মনে করি।

শাহানারা খাতুন

পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী লিটন মিঞা প্রথম আলোকে বলেন, ১৮ বছর ধরে শাহানারার সঙ্গে একজন সহকর্মী হিসেবে কাজ করছেন। তাঁর ব্যবহার আর নমনীয়তা মুগ্ধ করে। তিনি শুধু এলাকার ভোটারদের কাছে নন, পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছেও একজন যোগ্য কাউন্সিলর।

শাহানারা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, লোকজনের ভালোবাসার কারণে টানা ১৮ বছর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। নিজেকে তিনি কাউন্সিলর মনে করেন না, একজন সেবক হিসেবেই তাঁদের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। সব সময় মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং মিলেমিশে থাকাকেই বড় সম্বল বলে মনে করেন তিনি। যত দিন সুস্থ থাকবেন লোকজনের সেবা করতে চান বলে জানান শাহানারা; তবে নারী কাউন্সিলরদের ক্ষমতা বাড়ানো এবং বিভিন্ন সরকারি কাজে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন শাহানারা।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করতে হবে

চীনের অংশগ্রহণে মিয়ানমারের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল বৈঠক হয়েছে গত মঙ্গলবার। বৈঠকের পর পররাষ্ট্রসচিব মাসুক বিন মোমেন জানিয়েছেন, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক অর্থাৎ আগামী এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর ব্যাপারে বাংলাদেশ সতর্কভাবে আশাবাদী। এর আগে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক ব্রিফিংকালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর নিয়ে জাতিসংঘ প্রদত্ত বিবৃতির তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি যথার্থই বলেছেন যে রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের কুতুপালং না নোয়াখালীর ভাসানচরে থাকল, তা জাতিসংঘের দেখার বিষয় নয়। এটিকে বাংলাদেশের একটি অভ্যন্তরীণ উদ্যোগ হিসেবেও তিনি উল্লেখ করেছেন। সত্যি বলতে কুতুপালং ও ভাসানচর—দুটি স্থানই বাংলাদেশের ভূখণ্ডে অবস্থিত এবং সম্পূর্ণ নিরাপদ। বাংলাদেশ যখন তাদের আশ্রয় দিতে পেরেছে, তখন তাদের ভালো-মন্দ দেখার দায়িত্ব অবশ্যই বাংলাদেশের রয়েছে। আর সার্বিক বিবেচনায়, বিশেষ করে পরিবেশগত দিক থেকে কুতুপালংয়ের চেয়ে ভাসানচর ঢের ভালো জায়গা।

জাতিসংঘের সাহায্য-সহযোগিতা দেওয়ার ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো শর্ত কোথাও আছে বলে মনে হয় না। রোহিঙ্গারা যেখানেই থাকুক তাদের সাহায্য দেওয়াটাই তাদের মূল উদ্দেশ্য এবং দায়িত্বও বটে। তবে তাদের কর্মসম্পাদনের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হলে তা নিয়ে প্রয়োজনে তারা বাংলাদেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতেই পারে। আর বাংলাদেশ অবশ্যই তার সার্বভৌমত্ব, শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জাতিসংঘকে সব সাহায্য-সহযোগিতা দিয়ে যাবে। এর কোনো ব্যত্যয় ঘটার কথা নয়। বাংলাদেশ যেভাবে মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে এবং তাদের কষ্ট লাঘবে সার্বক্ষণিক পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে, একটি ছোট্ট উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে তা কম কথা নয়। রোহিঙ্গাদের প্রতি বাংলাদেশের এই মানবিক ভূমিকাকে শুধু প্রশংসা করেই শেষ করা যায় না।

ওই অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয় একই প্রসঙ্গে বড় বড় পশ্চিমা দেশ এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর (এনজিও) মনোভাবের পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, ‘আপনাদের এত শখ তো ওদের (রোহিঙ্গাদের) নিয়ে যান। আমাদের কোনো আপত্তি নেই।’ এ বিষয়ে তিনি আরো কিছু কথা বলেছেন। গত ২৮ ডিসেম্বর ২০২০ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক ব্রিফিংয়ে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির কার্যকর কৌশল অবলম্বন করতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।

৩০ ডিসেম্বর ২০২০ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ৪ ডিসেম্বর শুরু হওয়া স্থানান্তর প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণভাবে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত নীতির ভিত্তিতে হয়ে আসছে এবং যথাসম্ভব স্বচ্ছতার সঙ্গে পরিচালিত। এতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে বাংলাদেশের ওই শুভ উদ্যোগকে প্রশংসা করার পরিবর্তে কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে মনগড়া ভুল তথ্য পরিবেশনের আশ্রয় নিয়েছে। যাই হোক, বাংলাদেশ মিয়ানমারের এই বাস্তুচ্যুত এবং নির্যাতিত নাগরিকদের তাদের দেশে দ্রুত প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃশ্যমান আলোচনা আশা করে।

এ কথা না বললেই নয় যে তাঁরা সঠিক কথাই বলেছেন, কোনো অযৌক্তিক বা অবান্তর কথা উচ্চারণ করেননি। স্বাধীন এবং সার্বভৌম বাংলাদেশের একজন সাধারণ মানুষও হয়তো একইভাবে ওই কথাগুলোই উচ্চারণ করবেন। এ কথাগুলোর মধ্যে রোহিঙ্গাদের প্রতি বিন্দুমাত্র অবমাননা বা অবজ্ঞা নেই। এমনকি তাদের প্রতি বাংলাদেশের জনগণের ভালোবাসার এবং সহমর্মিতার কমতিও নেই। সে বিষয়টিই স্পষ্টভাবেই ফুটে উঠেছে ভাসানচরে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের চোখে-মুখে। একটা সুন্দর পরিবেশ এবং ব্যবস্থাপনায় বসবাসের সুযোগ পেয়ে তারা আনন্দ প্রকাশ করেছে, উচ্ছ্বসিত হয়েছে। এমনকি কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে অবস্থানকারী অনেক রোহিঙ্গাই এখন ভাসানচরে যেতে উৎসাহিত হচ্ছে।

আজকে যদি কক্সবাজারের ক্যাম্প এলাকায় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে, তাহলে কি আমরা তাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেব? তাদের কি আমরা বাংলাদেশের নিরাপদ কোনো স্থানে সরিয়ে নেব না? আমরা কি জাতিসংঘ বা কোনো এনজিও কি বলবে না বলবে সে অপেক্ষায় বসে থাকব? বাংলাদেশের মানুষের কি এতটুকু বোধশক্তি নেই যে ওই অবস্থায় কী করতে হবে? এই রোহিঙ্গারা যখন মৃত্যুর ভয়ে নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে ঢুকে পড়েছিল, তখন কি আমরা মিয়ানমারের সৈন্যদের বন্দুকের মুখে তাদের ফিরিয়ে দিয়েছিলাম? বাংলাদেশ তা করেনি, তাদের পরম উষ্ণতায় আশ্রয় দিয়েছে নিজেদের হাজার সমস্যার মধ্যে। তাহলে ওই সব বিবৃতি বা প্রশ্নের অভ্যন্তরে কি অন্য কোনো উদ্দেশ্য বা স্বার্থ নিহিত রয়েছে?

একটি ইংরেজি দৈনিক গত ৭ ডিসেম্বরের সংখ্যার প্রথম পৃষ্ঠায় ‘ভাসানচর আ হ্যাভেন ফর রোহিঙ্গা’ হেডলাইন দিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে প্রথম দফায় (৪ ডিসেম্বর) ভাসানচরে স্থানান্তরিত এক হাজার ৬৪২ রোহিঙ্গার মধ্যে কয়েকজনের সাক্ষাৎকারের বর্ণনা রয়েছে। তাদের ভাষ্য মতে, ভাসানচরে তাদের যে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে তা তারা স্বপ্নেও কল্পনা করেনি। পৃথিবীর অন্য কোথাও তারা এমনভাবে থাকতে পারত না। তাদের কাছে ভাসানচর স্বর্গ মনে হয়েছে। তারা এখানে খুবই সুখে-শান্তিতে আছে। কক্সবাজারের ক্যাম্পে থেকে যাওয়া তাদের আত্মীয়-স্বজনকেও তারা ওখানে নিয়ে আসার কথা ভাবছে। বসবাসের এত সুন্দর পরিবেশ তাদের জীবনকে যে আনন্দে ভরে দিয়েছে, তা তাদের কথাবার্তায় ফুটে উঠেছে। এদিকে গত ২৯ ডিসেম্বর আরো এক হাজার ৮০৪ জন ভাসানচরে পৌঁছেছে এবং কয়েক হাজার এরই মধ্যে ওখানে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় নিবন্ধন সম্পন্ন করেছে।

২৩ ডিসেম্বর ২০২০ বাংলাদেশ সফরকালে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রতি তুরস্কের দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করে বলেন, বিশ্বসম্প্রদায়ের এই বোঝা বহনে অংশ নেওয়া উচিত। তিনি ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের থাকার সুন্দর ব্যবস্থার প্রশংসা করেন এবং ওখান থেকেই তারা মিয়ানমারে প্রত্যাবাসিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। শুধু তুরস্ক কেন, ভারতও রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে সাময়িক আবাসনের ব্যবস্থা করাকে সমর্থন দিয়েছে।

বাংলাদেশ এবং তার জনগণ তাদের নানা অভাব-অভিযোগের মধ্যেও অনিবার্য মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার সময় কারো সাহায্যের আশায় অপেক্ষা করেনি। কারণ আমরা জানি জন্মভূমি ছেড়ে আসার যন্ত্রণা কত! ১৯৭১ সালে ভারত আমাদের আশ্রয় দিয়েছিল। ভারতের বিভিন্ন স্থানেই সেই আশ্রয় শিবিরগুলোর অবস্থান ছিল। সেদিন এ নিয়ে কেউ কোনো মন্তব্য করেনি। দেশ স্বাধীন হলে আশ্রয় নেওয়া সবাই দেশে ফিরে এসেছিল।

এদিকে গত ৩০ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ও অন্যান্য সংখ্যালঘু বিষয়ক প্রস্তাবটি ১৩২-৯ ভোটে গৃহীত হয়। যে ৯টি দেশ মিয়ানমারের পক্ষে ভোট দেয় তাদের মধ্যে ভেটো ক্ষমতাপ্রাপ্ত চীন ও রাশিয়া রয়েছে। তবে কোনো পক্ষেই ভোট না দেওয়া ২৫টি দেশের মধ্যে ছিল জাপানসহ সার্ক সদস্য ভারত, ভুটান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে এসব ঘটনা বিশ্ববাসীর কাছে নতুন কিছু নয়। এটি সত্যিই দুঃখজনক যে সার্কের সদস্য দেশগুলোও আমাদের সমর্থন দিচ্ছে না। চীনের সঙ্গে সম্পর্কের গভীরতা নিয়ে আমাদের অহংকার রোহিঙ্গা ইস্যুতে তলানিতেই রয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের অকৃত্রিম বন্ধু রাশিয়াও রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থার পরিবর্তন না ঘটাতে পারলে যে রোহিঙ্গা সমস্যা ঝুলেই থাকবে। শুধু বাংলাদেশকেই নয়, বিশ্ববাসীকেও এর সমাধানের পথ খুঁজে বের করার দায়িত্ব নিতে হবে। তবে কাজটি খুব সহজ হবে বলে মনে হয় না। বিষয়টির সমাধান ক্ষমতাশালী দেশগুলোর মধ্যে বিরাজমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিক সম্পর্কের নানা সমীকরণে আবদ্ধ হয়ে আছে।

তাই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের কোন স্থানে রাখা হলো তা নিয়ে অযথা বাগিবতণ্ডা না করে বরং রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে বাধ্য করুন। মনে রাখবেন, জীবন বাঁচাতে এসব নিপীড়িত মানুষ বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। তাদের মাতৃভূমিতে ত্বরিত প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা নিন। এদের আশ্রয়দাতা বাংলাদেশের ওপর অযথা খবরদারি না করে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের কাজটি করতে সক্ষম হলে সেটিই হবে সবচেয়ে উত্তম এবং রোহিঙ্গাদের প্রতি মমত্ববোধ দেখানোর সর্বোত্কৃষ্ট পন্থা। আর এ ক্ষেত্রে মিয়ানমারকে চাপ দেওয়া ছাড়াও তার শক্তিশালী বন্ধুদের সম্মত করানোর কাজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আর যদি সে কাজটি করতে না পারেন, তাহলে আপনাদের দেশে এদের আশ্রয়ের ব্যবস্থাটাও করতে পারেন। তাতে বাংলাদেশের কাঁধ থেকে অন্তত কিছুটা ভার লাঘব হতে পারে। আপনাদের দেশে তো জায়গার অভাব নেই। সেখানে গিয়ে তারা কাজকর্ম করুক, তাদের সন্তানরা স্কুল-কলেজে যাক, তারা ভালো থাকুক। আমাদের এই ছোট্ট দেশের পক্ষে সত্যিই এত মানুষের অনিশ্চিত সময়ের জন্য আশ্রয় দেওয়া খুবই কষ্টকর। আমরা যা করে যাচ্ছি তা মানবতার খাতিরে, মানুষ হিসেবে মানুষের জন্য।

আমরা সত্যিই চাই না রোহিঙ্গারা দীর্ঘদিন বাংলাদেশে অবস্থান করুক। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো, বড় দেশগুলো এবং এনজিও তাদের সংযোগ, প্রচেষ্টা এবং প্রভাব ব্যবহার করে রোহিঙ্গারা যাতে সম্মান ও নিরাপত্তার সঙ্গে অতি তাড়াতাড়ি তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে পারে, সেই কাজটি করতে পারে।

নির্যাতন রোধের হেল্পলাইনে করোনা নিয়ে ৯০% কল

নাটোরের গুরুদাসপুরে দশম শ্রেণির এক ছাত্রী মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হেল্পলাইনে (১০৯ নম্বর) ফোন করে নিজের বাল্যবিবাহ ঠেকিয়ে দেয়। এ ঘটনা চলতি বছরের শুরুর দিকে। মেয়েটি ফোন করার পর হেল্পলাইন থেকে তথ্য পাঠানো হয় গুরুদাসপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তমাল হোসেনের কাছে। তিনি মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাকে মেয়েটির বাড়িতে পাঠিয়ে বাল্যবিবাহ বন্ধ করার ব্যবস্থা করেন।

শুধু বাল্যবিবাহ নয়, যেকোনো ধরনের নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০১২ সালে হেল্পলাইনটি চালু করে। তবে চলতি বছর এতে নারী নির্যাতন প্রতিরোধবিষয়ক কলের বদলে করোনা নিয়ে জানতে বেশি ফোন আসছে।

নির্যাতন রোধের হেল্পলাইনে করোনা নিয়ে ৯০% কল

হেল্পলাইনটি পরিচালিত হয় মন্ত্রণালয়ের নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রামের আওতায়। তাদের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে ১১ লাখ ১৯ হাজারের মতো কল আসে। এর মধ্যে মাত্র ১ লাখ ১৯ হাজার কল আসে সাধারণ চিকিৎসা, পরামর্শ, পুলিশি সহায়তা, আইনি সহায়তা ও তথ্য চেয়ে। বাকি কলগুলোকে অন্যান্য শ্রেণিভুক্ত করা হয়। কর্মকর্তারা বলছেন, কিছু বাদ দিয়ে অন্যান্য শ্রেণিভুক্ত কলগুলো মূলত করোনা নিয়ে। ১০ মাসে সাধারণ চিকিৎসা বিষয়ে জানতে ১ হাজার ৭৩৭, পরামর্শ সেবা পেতে ৫৭৯, পুলিশি সহায়তা পেতে ১১ হাজার ৫৭৯, আইনি সহায়তা পেতে ১৮ হাজার ৫৬৮ এবং তথ্য পেতে ৮৬ হাজার ৬৭১টি কল আসে।

বিগত কয়েক বছরের হিসাবে দেখা যায়, সাধারণত অন্যান্য শ্রেণিভুক্ত কলের সংখ্যা খুব কম থাকে। যেমন ২০১৯ সালেও ১৮ লাখের মধ্যে ২৪ হাজারের মতো কল ছিল অন্যান্য শ্রেণিভুক্ত। এবার মোট কলের ৯০ শতাংশই অন্যান্য শ্রেণিভুক্ত। এ বিষয়ে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রাম প্রকল্পের পরিচালক আবুল হোসেন বলেন, এ বছর মানুষের করোনা নিয়ে উদ্বেগ বেশি ছিল। তাই এ হেল্পলাইনে করোনা নিয়েই ফোন বেশি এসেছে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০১২ সালে যখন হেল্পলাইনটি চালু করে, তখন নম্বর ছিল ১০৯২১। ২০১৭ সাল থেকে এটি ১০৯ নম্বরের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। ২০১৪ সাল থেকে এটি টোল ফ্রি, অর্থাৎ বিনা মূল্যে কল করা যায়।

কর্মকর্তারা জানান, হেল্পলাইনটিতে তিন পালায় (শিফট) ২৪ ঘণ্টা ৭৮ জন কর্মী সেবা দেন। তবে গত আগস্টে জাতীয় সংসদের মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ২৪ ঘণ্টা সেবা না পাওয়ার অভিযোগ করেন কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ। তিনি বলেন, গত ২৪ আগস্ট রাজধানীর শ্যামলীর এক নারী নির্যাতনের শিকার হয়ে উদ্ধার পেতে ১০৯ নম্বরে বারবার ফোন করেও সাড়া পাননি। এ বিষয়ে মেহের আফরোজ প্রথম আলোকে বলেন, হেল্পলাইনে জনবল কম। পরিসর আরও বাড়াতে হবে।

বর্তমান পরিস্থিতি কী, তা জানতে ১০৯ নম্বরে গত ২৪ নভেম্বর সকাল সাতটা ও বিকেল চারটায় দুবার প্রথম আলোর পক্ষ থেকে কল করা হয়। দুবারই কল ধরেন কর্মীরা। এর মধ্যে সকাল সাতটায় মো. রাসেল হোসেন নামের একজন কর্মী কল ধরেন। রাসেল বলেন, তিনি রাতের পালায় ৪৫টি কল ধরেছেন। এর মধ্যে মধ্যরাতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও যশোর থেকে নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে তিন নারী ফোন করেন। তিনটি ক্ষেত্রেই অভিযোগকারীকে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হয়।

অবশ্য নারীদের অনেকেই সরকারের এ হেল্পলাইন সম্পর্কে জানেন না। সাতক্ষীরা জেলা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটির প্রধান সাকিবুর রহমান বলেন, এটি নিয়ে আরও প্রচার দরকার।

নিয়োগ ১০ বছর আগে, উন্নতি নেই কর্মক্ষেত্রে

‘সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা’—এই নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণ করতে ১০ বছর আগে অ্যাডহক ভিত্তিতে দুই দফায় ৪ হাজার ১৩৩ জন চিকিৎসককে (সহকারী সার্জন) নিয়োগ দিয়েছিল সরকার। এরপর গড়িয়েছে অনেক সময়, কিন্তু পরিবর্তন আসেনি এসব চিকিৎসকের ভাগ্যে। এই চিকিৎসকেরা ২০১০ সালে যে বেতনে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন, সেই স্কেলে বেতন পাচ্ছেন এখনো।

এই দীর্ঘ সময়ে তাঁদের চাকরি ক্যাডারভুক্ত করা হয়নি, হয়নি পদোন্নতিও। হতাশ হয়ে কেউ কেউ চলে গেছেন অন্য পেশায়।

এসব অনেক দিনের সমস্যা। আমরা এটা দূর করার চেষ্টা করছি। সমাধান হবে। তবে একটু সময় প্রয়োজন

মো. আবদুল মান্নান , স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব

এই চিকিৎসকদের কয়েকজন প্রথম আলোকে বলেন, বছরের পর বছর ধরে একই পদে থাকায় তাঁরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। চাকরির ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠ হওয়ার পরও বিসিএসের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া চিকিৎসকেরা পদোন্নতি পেয়ে তাঁদের চেয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। কয়েকজন জানিয়েছেন, তাঁরা এফসিপিএস, এমডি, এমএস, এফআরসিএসের মতো উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেও কর্মক্ষেত্রে এগোতে পারেননি।

৪ হাজার ১৩৩ জন চিকিৎসকের মধ্যে এখন কর্মরত আছেন ১ হাজার ৯৮৬ জন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অ্যাডহক কর্মকর্তাদের ক্যাডারভুক্ত করার বিষয়ে একটি প্রস্তাব গত সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে আর কোনো বাধা থাকবে না।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এসব অনেক দিনের সমস্যা। আমরা এটা দূর করার চেষ্টা করছি। সমাধান হবে। তবে একটু সময় প্রয়োজন।’

নিয়োগ পেয়েছিলেন ৪ হাজার ১৩৩ জন চিকিৎসক। এখন চাকরিতে আছেন ১ হাজার ৯৮৬ জন।

প্রেক্ষাপট

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ইউনিয়ন পর্যায়ের মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে শুরু করে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক–সংকট ছিল। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র থেকে জানা গেছে, তৎকালীন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক ২০০৯ সালের ১৩ এপ্রিলের এক সভায় জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন স্তরের চিকিৎসকের পদ শূন্য। এত বিপুলসংখ্যক পদ খালি থাকায় জনগণের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া দুরূহ হয়ে পড়েছে। সে সময় জনপ্রতিনিধিরাও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গিয়ে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানান। অনেকেই সংসদ অধিবেশনে নতুন চিকিৎসক নিয়োগের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ১৮ জুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুহুল হক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এবং একই বছরের ২৮ জুন তৎকালীন জনপ্রশাসন উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের কাছে আধা সরকারিপত্র পাঠান। সেখানে তিনি চিকিৎসক–সংকটের কথা উল্লেখ করে সংক্ষিপ্ত বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে ৪ হাজার ১৩৩ জন চিকিৎসক নিয়োগের সুপারিশ করেন। কিন্তু সরকারি কর্ম কমিশন বিশেষ বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে স্বাস্থ্য ক্যাডারের সহকারী সার্জন নিয়োগের বিষয়ে অপারগতা প্রকাশ করে। পরে অ্যাডহক ভিত্তিতে চিকিৎসক নিয়োগের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। ২০১০ ও ২০১১ সালে ওই সংখ্যক চিকিৎসককে নিয়োগ দেওয়া হয়।

হতাশা

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নিয়োগ দেওয়ার পর এসব চিকিৎসককে পদায়ন করা হয়েছিল নিজ জেলা কিংবা আশপাশের উপজেলা ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। এসব চিকিৎসকের ভাষ্য, ২০১০-১১ সালে তাঁরা মাঠপর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবায় অনন্য ভূমিকা রেখেছেন। কিন্তু তাঁদের ‘ত্যাগের’ মূল্যায়ন করা হয়নি। পরবর্তী সময়ে তাঁদের অনেকেই ‘পড়াশোনাসহ নানা কারণে’ ঢাকায় চলে আসেন।

অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া অন্তত ৫০ জন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। চাকরিবিধি এবং পে স্কেল অনুযায়ী তাঁদের সিলেকশন গ্রেড দেওয়া হয়নি।

চিকিৎসকেরা জানান, তাঁদের মধ্যে অন্তত এক হাজার চিকিৎসক উচ্চতর ডিগ্রিপ্রাপ্ত। প্রায় ২০ জন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বিভিন্ন বিভাগে কাজ করছেন। ৭০ জন সাফল্যের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনার কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। গত ৩১ জুন তাঁদের নিয়োগের ১০ বছর পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু চাকরি নিয়মিত হলেও ক্যাডারভুক্ত না হওয়ায় উল্লেখযোগ্য সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। তাঁদের পরে যোগ দেওয়া ৩৩তম বিসিএসের চিকিৎসকেরা ষষ্ঠ গ্রেড পেয়েছেন। আর তাঁরা আছেন নবম গ্রেডেই। অনেকের বয়স শেষ হয়ে যাওয়ায় বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি।

চিকিৎসকদের ভাষ্য, প্রধানমন্ত্রী অ্যাডহক চিকিৎসকদের ক্যাডারভুক্ত করার জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে দেন। কমিটিকে বলা হয়েছিল, ২০২০ সালের মার্চের মধ্যে একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য। কিন্তু তাঁরা এখনো কোনো অগ্রগতি দেখছেন না।

আমাদের অনেকেই ভারপ্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু আমাদের ভারমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া দরকার

মোহাম্মদ সায়েমুল হুদা, সাভারের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা

অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া চিকিৎসকদের একজন জাতীয় পুষ্টিসেবার উপব্যবস্থাপক নন্দলাল সূত্রধর প্রথম আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ থাকার পরও তাঁদের স্থায়ী না করা ও পদোন্নতি না দেওয়া দুঃখজনক। সাভারের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ সায়েমুল হুদা বলেন, ‘আমাদের অনেকেই ভারপ্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু আমাদের ভারমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া দরকার।’

অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের ক্যাডারভুক্ত ও পদোন্নতির জন্য অনেক দিন ধরে কাজ করছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব শারমিন আক্তার জাহান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের চাকরির মেয়াদ প্রায় ১০ বছর। ক্যাডারভুক্ত না হওয়ায় তাঁরা সবাই প্রারম্ভিক স্কেলে বেতন তুলছেন। এই দীর্ঘ সময়ে তাঁরা কোনো পদোন্নতি পাননি।

শারমিন আক্তার জাহান জানান, ক্যাডার–বহির্ভূত অস্থায়ী কর্মকর্তাদের ক্যাডারভুক্ত করার বিষয়ে একটি প্রস্তাব গত সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে আর বাধা থাকবে না।

একজন চিকিৎসকের ১০ বছর পদোন্নতি না হলে তাঁর কি চাকরিতে আগ্রহ থাকে? স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে আমরা বারবার অনুরোধ করেছি সমস্যাটি সমাধান করতে

মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী , বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব

‘বারবার অনুরোধ করেছি’

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সরকারই তাঁদের নিয়োগ দিয়েছিল। তাঁরা তো জোর করে চাকরি নেননি। সে সময় তাঁরা মাঠপর্যায়ে যে সেবা দিয়েছেন, তা সবারই জানা। তখন বলা হয়েছিল, তাঁদের ক্যাডারভুক্ত করা হবে। আর পদোন্নতি তো নিয়মতান্ত্রিকভাবে হওয়ার কথা। এখন তাহলে কেন তাঁদের পদোন্নতি আটকে দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘একজন চিকিৎসকের ১০ বছর পদোন্নতি না হলে তাঁর কি চাকরিতে আগ্রহ থাকে? স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে আমরা বারবার অনুরোধ করেছি সমস্যাটি সমাধান করতে।’

শীতের শুরুতেই হাসপাতালে ভিড়

ঢাকায় কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) শয্যা জোগাড় করতে রোগীর স্বজনদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হাসপাতালগুলোর প্রায় সব আইসিইউ শয্যাই ভর্তি। সাধারণ শয্যাগুলোতেও রোগী বেড়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় করোনার জন্য নির্ধারিত সরকারি ব্যবস্থাপনার ৯টি হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা রয়েছে ১১৩টি। গতকাল মঙ্গলবার ৯৭টি শয্যায় রোগী ভর্তি ছিল। ফাঁকা ছিল ১৭টি শয্যা, অর্থাৎ ৮৬ শতাংশের বেশি আইসিইউতে রোগী ভর্তি ছিল।

করোনার জন্য নির্ধারিত চারটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক দিন ধরে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে জটিল করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ ফাঁকা না থাকায় অনেক রোগীকে বেসরকারি হাসপাতালে পাঠিয়ে দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

করোনার জন্য নির্ধারিত যে হাসপাতালগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো আবার চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। জটিল রোগীদের জন্য আইসিইউ শয্যা বাড়াতে সরকার চেষ্টা করছে। যেখানে সুযোগ পাচ্ছে সেখানেই আইসিইউর ব্যবস্থা করা হচ্ছে

হাবিবুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও পরিচালক (এমআইএস)

শীতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করে আসছে সরকার। এরই মধ্যে কয়েক সপ্তাহ ধরে করোনা শনাক্ত রোগীর হার ঊর্ধ্বমুখী। গত ১৬ নভেম্বর থেকে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দৈনিক ২ হাজারের ওপরে থাকছে। একই সঙ্গে মৃত্যুও বাড়ছে।

শ্বাসতন্ত্রের রোগ কোভিড-১৯-এর জটিল রোগীদের জন্য আইসিইউ ও কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস দেওয়ার সুবিধা বা ভেন্টিলেশন জরুরি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, আক্রান্তদের ৪০ শতাংশের উপসর্গ থাকে মৃদু। মাঝারি মাত্রার উপসর্গ থাকে ৪০ শতাংশের। তীব্র উপসর্গ থাকে ১৫ শতাংশের। আর জটিল পরিস্থিতি দেখা যায় বাকি ৫ শতাংশের ক্ষেত্রে। তীব্র উপসর্গ ও জটিল রোগীদের প্রায় সবার এবং মাঝারি উপসর্গ রয়েছে এমন অনেক রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। জটিল প্রায় সব রোগীর আইসিইউ শয্যার পাশাপাশি ভেন্টিলেটর দরকার হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও পরিচালক (এমআইএস) হাবিবুর রহমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, করোনার জন্য নির্ধারিত যে হাসপাতালগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো আবার চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। জটিল রোগীদের জন্য আইসিইউ শয্যা বাড়াতে সরকার চেষ্টা করছে। যেখানে সুযোগ পাচ্ছে সেখানেই আইসিইউর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

উচ্চমাত্রায় অক্সিজেন সরবরাহের জন্য হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

ঢাকায় করোনার জন্য নির্ধারিত কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের কোনো আইসিইউ শয্যাই গতকাল ফাঁকা ছিল না। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি আইসিইউ শয্যা ফাঁকা ছিল। এ ছাড়া রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালের ১৫টি শয্যার ১১টিতে, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের ১৬টি শয্যার ১০টিতে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬টি আইসিইউ শয্যার ১৪টিতেই রোগী ভর্তি ছিল।

সরকারি কয়েকটি হাসপাতালে যোগাযোগ করেছিলাম। কোনো হাসপাতালে আইসিইউ ফাঁকা নেই। বাধ্য হয়ে মাকে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে

মেহেদী হাসান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউর বিভাগীয় প্রধান শাহজাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কুর্মিটোলা হাসপাতালের ১০টি আইসিইউতে সব সময় রোগী ভর্তি থাকছে। একটা শয্যার জন্য একাধিক রোগী অপেক্ষায় থাকছে। ঢাকার বাইরে থেকে করোনার জটিল রোগীদের ঢাকায় পাঠানোর কারণে আইসিইউগুলোতে রোগীর চাপ বেশি। আইসিইউ ফাঁকা না থাকায় অনেক জটিল রোগীকে অন্য হাসপাতালেও পাঠাতে হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসানের মা রহমত আরা এখন ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন। মেহেদী বলেন, ‘সরকারি কয়েকটি হাসপাতালে যোগাযোগ করেছিলাম। কোনো হাসপাতালে আইসিইউ ফাঁকা নেই। বাধ্য হয়ে মাকে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে।’

অবশ্য বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত আইসিইউ শয্যা ফাঁকা থাকছে কম। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় করোনা রোগীদের জন্য নয়টি বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউ রয়েছে ২০৩টি। এর মধ্যে গতকাল রোগী ভর্তি ছিল ১২৯টি শয্যায়। অবশ্য তেজগাঁওয়ের ইমপালস হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা ফাঁকা ছিল ৪৩টি। এই হাসপাতাল বাদে অন্য বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও আইসিইউ শয্যা ফাঁকা নেই বললেই চলে।

রাজধানীর শ্যামলীতে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ১২টি আইসিইউ সুবিধাসহ ৪২ শয্যার করোনা ইউনিট রয়েছে। গতকাল এই হাসপাতালের আইসিইউ এবং সাধারণ কোনো শয্যা ফাঁকা ছিল না। হাসপাতালের পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আল ইমরান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, অধিকাংশ সময় সব শয্যাতে রোগী থাকছে। বিশেষ করে আইসিইউ ফাঁকা থাকছেই না।

ঢাকার হাসপাতালগুলোতে জটিল করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আইসিইউ শয্যা জোগাড়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

সাধারণ শয্যাতেও রোগী বাড়ছে

করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত ঢাকার নয়টি সরকারি হাসপাতালে সাধারণ শয্যাতেও ভর্তি রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। একসময় সাধারণ শয্যার ৭০ শতাংশের বেশি শয্যা ফাঁকা থাকত। অথচ গতকাল ঢাকার সরকারি হাসপাতালগুলোর ৭৫ শতাংশ শয্যায় রোগী ভর্তি ছিল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঢাকায় সরকারি হাসপাতালগুলোয় করোনা রোগীদের জন্য সাধারণ শয্যা রয়েছে ২ হাজার ৩৯৭টি। এর মধ্যে ১ হাজার ৭৯১টি শয্যায় গতকাল রোগী ভর্তি ছিল। করোনার জন্য নির্ধারিত নয়টি ঢাকার বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেই সাধারণ শয্যায় রোগী ভর্তি বেড়েছে।

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনার জন্য সাধারণ শয্যা রয়েছে ২৭৫টি। গতকাল এই হাসপাতালে রোগী ভর্তি ছিল ৩৫২ জন। অর্থাৎ ধারণক্ষমতার চেয়েও ৭৭ জন রোগী বেশি ভর্তি ছিল এই হাসপাতালে। এর আগে গত সোমবার ধারণক্ষমতার চেয়ে ৬৬ জন বেশি রোগী ভর্তি ছিল।

আইসিইউ শয্যা ফাঁকা থাকছে না, সাধারণ শয্যাতেও রোগী ভর্তি থাকছে। দেশে আবার করোনা রোগী বাড়তে শুরু করেছে, এটি তারই ইঙ্গিত। এত দিনেও আইসিইউ শয্যা বাড়ানো সম্ভব হয়নি, এটি দুঃখজনক। সরকার করোনার জন্য নির্ধারিত যেসব হাসপাতাল বন্ধ করে দিয়েছিল, সেগুলো আবার দ্রুত চালু করতে হবে

আবু জামিল ফয়সাল, জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য

ঢাকার বাইরে রোগীর চাপ কম

করোনার চিকিৎসার জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহর বাদে সারা দেশে এখন সাধারণ শয্যা আছে ৭ হাজার ১৬৪টি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এসব হাসপাতালে গতকাল ভর্তি ছিলেন ৫৫৬ জন। খালি ছিল ৬ হাজার ৬০৮টি শয্যা। অর্থাৎ ৯২ শতাংশ শয্যা খালি পড়ে ছিল। আবার নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) রয়েছে ২১৯টি। গতকাল আইসিইউতে ছিলেন ৮৩ জন। অর্থাৎ আইসিইউর ৬২ শতাংশ শয্যা ফাঁকা ছিল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত দেশে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৪ লাখ ৬৭ হাজার ২২৫ জনের। সুস্থ হয়েছেন ৩ লাখ ৮৩ হাজার ২২৪ জন আর মারা গেছেন ৬ হাজার ৬৭৫ জন। চিকিৎসাধীন রোগী আছেন ৭৭ হাজার ৩২৬ জন।

জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য আবু জামিল ফয়সাল প্রথম আলোকে বলেন, আইসিইউ শয্যা ফাঁকা থাকছে না, সাধারণ শয্যাতেও রোগী ভর্তি থাকছে। দেশে আবার করোনা রোগী বাড়তে শুরু করেছে, এটি তারই ইঙ্গিত। এত দিনেও আইসিইউ শয্যা বাড়ানো সম্ভব হয়নি, এটি দুঃখজনক। সরকার করোনার জন্য নির্ধারিত যেসব হাসপাতাল বন্ধ করে দিয়েছিল, সেগুলো আবার দ্রুত চালু করতে হবে।

ব্লগার এবং নাস্তিকদের বিচারের দাবিতে দেয়ালে দেয়ালে পোষ্টার এবং মিছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঢাকা: হেফাজতে ইসলামসহ আরো কয়েকটি ইসলামী সংগঠন বেশ কিছুদিন ধরেই সরকারকে ব্লগার এবং নাস্তিকদের আইনের আওতায় এনে তাদের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে চাপ দিয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় ইসলামী দলগুলোকে বাংলাদেশের বিভিন্নস্থানে মিছিল এবং সমাবেশ করে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়। তাছাড়া কোনও কোনও এলাকার অলিতে-গলিতে দেয়ালে দেয়ালে নাস্তিকদের পোষ্টার লাগিয়ে হত্যা করার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার (অক্টোবর-২৯, ২০২০) আরিফ রব্বানী নামের হেফাজতে ইসলামের একজন সক্রিয় কর্মী ‘এথিস্ট এরা’ নামের একটি ম্যাগাজিনের সকল ব্লগার/ নাস্তিকদের নামে মামলা দায়ের করেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত খবর নিয়ে জানা যায় যে, এথিস্ট এরা নামের এই ওয়েবসাইটটি ইসলাম ধর্মকে অত্যন্ত নোংরাভাবে ফুটিয়ে তুলে একটি ম্যাগাজিন প্রকাশিত করে। মূলত যা দেখেই ইসলামী সংগঠনগুলো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে।

এ বিষয়ে মামলার বাদি আরিফ রব্বানীর সাথে কথা হলে তিনি আমাদের বলেন ’’হঠাৎ করেই ফেসবুকের মাধ্যমে এই ম্যাগাজিনটি আমার চোখে পড়ে, আমি কৌতুহল বশত এটি ডাউনলোড করে দেখতে পারি সেখানে ধর্ম, মুসলিম, কোরআন এবং আমাদের প্রাণপ্রিয় নবী মোহাম্মদ (সঃ) কে নিয়ে নানাবিদ কুরুচিপূর্ন  শব্ধ ব্যবহার করে ‘বিনাশ হোক ধর্ম‘ নামে এই মাগাজিনটি প্রকাশিত করে, যা একজন মুসলিম হিসেবে মেনে নিতে পারিনি এবং আমি মনে করি এদেরকে কতল (হত্যা) করা আমার এবং আমাদের সকল মুসলিমদের ওপর ওয়াজিব হয়ে গেছে।

মামলার আসামীদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আমাদের যে কয়টি নাম বলেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েক জন হলেন এথিস্ট এরা’র সম্পাদক এমডি মাহাদি হাসান, সহ সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুজ্জামান, সিনিয়র সহ সম্পাদক মিজানুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ সাইফুজ্জামান ও উমায়েদ হোসেন, স্টাফ রিপোর্টার উম্মা কুলসুম নারগিস বানু, এমডি জিল্লুর রহমান, অনিকা হক মল্লিক,শ্রাবণী শিকদার, মোহাম্মদ ওয়াহিদ হোসেন, মহাম্মদ ফাহিদুল আলম, মুহাইমিনুল বিশ্বাস পারভেজ, জোবায়ের হোসেন, বিপ্লব পাল, এম ডি হাসান তৌহিদ, মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান, নুর মোহাম্মদ, জনি জোসেফ কস্তা, সহ আরো অনেকে।

এদিকে মিছিল এবং সমাবেশে থাকা কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা সাংবাদিকেদের জানান যে, ‘‘বর্তমানে নাস্তিক এবং কিছু নব্য ব্লগারদে উৎপাত এতটাই বেড়েছে যে এগুলো মেনে নেওয়া কোনও মুসলমানদের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে একটা কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমাদের কলিজার টুকরা হযরত মুহাম্মদ সাঃ কে নিয়ে কেউ কিছু বললে তাকে এই পৃথিবী থেকে বিদায় করা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব।‘‘

তাদের মধ্যে আর একজন ইসলামী ব্যক্তিত্ব মুফতি ফজলুর রহমান বলেন, ‘‘নাস্তিকদের গালি দিলে কারও গায়ে লাগলে আমার করার কিছু নাই। আল্লাহর দেশে থাকতে হলে আল্লাহকে না দেখে আল্লাহর অস্তিত্ব মানতে হবে, না হলে তুমি আল্লাহর দেশে থাকতে পারবে না।’’

এদিকে সমাবেশ চলাকালে মুফতি আহমদ উল্লাহ জিহাদী উপস্থিত থাকা দ্বীনদার ভাইদের উদ্দেশে বলেন যে, ‘‘যদি কোন মুসলিম মুরতাদ হয়ে যায় এবং মুরতাদের সকল শর্ত তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় (সুস্থ- মস্তিস্ক, বালেগ, স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির অধিকারী হওয়া) তাহলে তার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হবে এবং ইমাম তথা মুসলমানদের শাসক অথবা তাঁর প্রতিনিধি যেমন বিচারক তাকে হত্যা করবে। তাকে গোসল করানো হবে না, তার জানাযা-নামায পড়ানো হবে না এবং তাকে মুসলমানদের গোরস্থানে দাফন করা হবে না।‘‘

হেফাজেত ইসলামে এক কর্মীর কাছে দেয়ালে পোস্টার লাগানোর বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি আমাদের বলেন যে, ‘‘সমস্ত ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক-মুরতাদ যারা আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহ এবং আমাদের ধর্ম নিয়ে ব্যঙ্গ করবে, গালি-গালাজ করবে, কটূক্তি করবে তারা সবাই আমাদের টার্গেট। ইনশাআল্লাহ আমরা তাদের হত্যা করবো।’’

উল্লেখ্য, হেফাজতে ইসলাম নাস্তিক এবং ব্লগারদের ছবি যেভাবে দেয়ালে দেয়ালে লাগিয়েছে, ২০১৬ সালে ঠিক এভাবেই ফেসবুক পেজে চার ব্লগারের ছবি প্রকাশ করে হত্যার হুমকি দিয়েছে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম। তারা হচ্ছেন আসিফ মহিউদ্দিন, সানিউর রহমান, শাম্মি হক ও অনন্য আজাদ। তারা সবাই এখন প্রবাসী। জঙ্গি হামলার ভয়ে এসব ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট অনেক আগেই দেশ ছেড়েছেন।

আদালত সূত্রে জানা যায় বাদী আরিফ রাব্বানী কর্তৃক আনীত মামলার নম্বর ৪১৮/২০২০। মামলাটি দায়ের করা হয়েছে ঢাকা সাইবার ট্রাইবুন্যালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৫, ২৮, ২৯, এবং ৩১ ধারার অধীনে ২১ জন আসামীর বিরূদ্ধে। মামলাটি তদন্তাধীন।

লাইনচ্যুত ট্রেনের মতো রাজনীতিও লক্ষ্যচ্যুত

পঙ্কজ ভট্টাচার্য ঐক্য ন্যাপের সভাপতি ও সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। ৮১ বছর বয়সী এই রাজনীতিক বাংলাদেশ ও পাকিস্তান আমলের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। আন্দোলন করতে গিয়ে বিভিন্ন সরকারের আমলে জেল খেটেছেন। সমাজ ও রাজনীতির হালচাল নিয়ে তিনি কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সোহরাব হাসান

  • আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব যে আদর্শের কথা বলে, তৃণমূলের নেতারা তা পালন করেন না। সেখানে দেখা যায়, টাকা দিয়ে পদপদবি কেনা যায়। জামায়াতের লোকজনও আওয়ামী লীগে ঢুকে পড়েছে। দুর্নীতিবাজেরা ঢুকে পড়েছে।
  • বাংলাদেশ ও পাকিস্তান আমলে যত অর্জন হয়েছে, সব রাজনৈতিক আন্দোলনের ফল নয়। সামাজিক শক্তিরও বিরাট ভূমিকা ছিল। ছাত্রদের ভূমিকা ছিল। শুধু রাজনীতি দিয়ে সমাজ বদলানো যাবে না।

 

আপনারা বলেন, পঁচাত্তরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরই সব অধোগতির শুরু। কিন্তু তিয়াত্তরের নির্বাচনেও তো কারচুপি হয়েছে।

পঙ্কজ ভট্টাচার্য: তিয়াত্তরের নির্বাচনেও কারচুপি হয়েছে। ১২-১৩টি আসনে ফলাফল বদলে দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের সাতকানিয়া আসনে ন্যাপের বিজয়ী প্রার্থীকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিরোধী দলের অনেকে মনোনয়নপত্রও জমা দিতে পারেননি। তবে সেই নির্বাচনে কারচুপি না হলেও আওয়ামী লীগই জয়ী হতো। ক্ষমতার পরিবর্তন হতো না।

তখনকার রাজনীতির সঙ্গে এখনকার ফারাকটা কোথায়?

পঙ্কজ ভট্টাচার্য: একাত্তরে পাকিস্তানি সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পরাস্ত করে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। স্বাধীনতার পর রাষ্ট্র পরিচালনায় চার মূলনীতি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ৯ মাসের মধ্যে সংবিধান রচিত হয়েছিল। সেই সংবিধানে নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর স্বীকৃতি ছিল না। এরপরও বলব, এটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংবিধান ছিল। এরপর সংবিধান অনেকবার কাটাছেঁড়া করা হলো। আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা আছে। আমাদেরও ব্যর্থতা আছে। আশির দশকে, নব্বইয়ের দশকে আওয়ামী লীগ যেখানে ছিল, সেখানে নেই।

আওয়ামী লীগের আপসটা কী?

পঙ্কজ ভট্টাচার্য: তারা বলছে সংবিধানে চার মূল নীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে। আবার রাষ্ট্রধর্মও রেখে দিয়েছে। দুটি একসঙ্গে চলতে পারে না। তারা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ করার কথা বলছে। আবার হেফাজতে ইসলামের পরামর্শে পাঠ্যপুস্তক পরিবর্তন করেছে। আওয়ামী লীগ মনে করছে, ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে এসব করতে হবে। জনগণের ওপর আস্থা কমে গেলে এ অবস্থা হয়। আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব যে আদর্শের কথা বলে, তৃণমূলের নেতারা তা পালন করেন না। সেখানে দেখা যায়, টাকা দিয়ে পদপদবি কেনা যায়। জামায়াতের লোকজনও আওয়ামী লীগে ঢুকে পড়েছে। দুর্নীতিবাজেরা ঢুকে পড়েছে।

স্বাধীনতার পর আপনারা (ন্যাপ-সিপিবি) আওয়ামী লীগের সঙ্গে লীন হয়ে গেলেন কেন?

পঙ্কজ ভট্টাচার্য: স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা ও পাকিস্তানকে পরাস্ত করে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আওয়ামী লীগ ও আমাদের চিন্তাধারার মিল ছিল। ১৯৬২ সালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সিপিবি নেতা মণি সিংহ ও খোকা রায়ের বৈঠকে হয়েছিল। ছাত্র আন্দোলন ও শ্রমিক আন্দোলন আমরা একসঙ্গে করেছি। যদিও ঐক্যের বিষয়ে মতভেদ ছিল। স্বাধীনতার পর আন্তর্জাতিক বাস্তবতা আমাদের ওই দিকে ঠেলে দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারতের সমর্থন ছিল। বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বিরোধিতা এবং উসকানি ছিল। তখন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে টিকিয়ে রাখাই মুখ্য ছিল। এরপরও মনে করি, আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিশে না গিয়ে গঠনমূলক বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করা উচিত ছিল।

একদা বাম রাজনীতি করতেন। সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠাই ছিল আপনাদের মূল স্লোগান। সেখান থেকে সরে এলেন কেন?

পঙ্কজ ভট্টাচার্য: সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর আমরা উপলব্ধি করলাম, অন্য কোনো দেশের মডেল বা মতাদর্শের রাজনীতি দিয়ে এগোনো যাবে না। বাংলাদেশের সমাজবাস্তবতায় অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ও মানবতাবাদী রাজনীতি করতে হবে। এ কারণেই প্রচলিত বাম ধারা থেকে বেরিয়ে এসে মানবতাবাদী রাজনীতি করেছি।

একসময় চীনপন্থীদের সম্পর্কে দল ভাঙার অভিযোগ ছিল। এখন মস্কোপন্থীরাও নানা ভাগে বিভক্ত। এর পেছনে আদর্শ না নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব কাজ করেছে?

পঙ্কজ ভট্টাচার্য: এখানে আদর্শ গৌণ। মূলত ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির দ্বন্দ্বই নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করেছে। আমি নতুন করে ঐক্যের চেষ্টা করছি। গণতান্ত্রিক পার্টি, ন্যাপ মোজাফ্‌ফরের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। তাঁদের মধ্যেও পরিবর্তন এসেছে। তাঁদের অনেকেই একমত যে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত না হয়ে বাইরে থেকে একটা চাপ সৃষ্টি করা দরকার, যাতে রাষ্ট্র অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক চেতনা থেকে দূরে সরে না যায়। আমরা সমাজের ন্যায়–নীতিনিষ্ঠ মানুষগুলোকে একত্র করতে চাই। গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক শক্তির উদ্বোধন চাই।

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রত্যয় ছিল গণতন্ত্র। সেই গণতন্ত্রের এখন কী অবস্থা?

পঙ্কজ ভট্টাচার্য: এটি একটি বড় বিষয়। পাকিস্তান আমলে যে গণতন্ত্র ছিল, যে নির্বাচন ছিল, যাতে জনগণের রায়ের প্রতিফলন ঘটেছে; এখন তো সেই নির্বাচন নেই। ১৯৭০ সালের নির্বাচনই তো দেশকে স্বাধীনতার পথে নিয়ে গেল। গণতন্ত্র এখন মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে, মানুষের অন্তরে নেই। বর্তমানে গণতন্ত্র হলো প্রশাসনিক গণতন্ত্র, আমলাতান্ত্রিক গণতন্ত্র।

সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে পাকিস্তান আমল থেকে আপনারা আন্দোলন করেছেন। আন্দোলন করে সামরিক শাসককে পদত্যাগে বাধ্য করেছেন। যার লক্ষ্য ছিল সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন। এখন সেই পরিবেশ কি আছে?

পঙ্কজ ভট্টাচার্য: মানুষ আস্থা হারিয়েছে। স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচন একের পর এক দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে চলেছে। এই ব্যবস্থা না বদলালে মানুষকে নির্বাচনমুখী করা যাবে না। ভোটারশূন্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে ব্যবস্থা চালু হয়েছে, তাতে জনগণের রায়ের প্রতিফলন ঘটছে না। আমরা যদি সুষ্ঠু নির্বাচনী ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে না পারি, তাহলে প্রতিক্রিয়াশীল ও মৌলবাদী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। গণতন্ত্রের যে ক্ষীণধারা চলছে, তা–ও হয়তো হারিয়ে যাবে।

নির্বাচনী ব্যবস্থা যে ভেঙে পড়ল, এ জন্য কাকে বেশি দায়ী করবেন? সরকার না নির্বাচন কমিশন?

পঙ্কজ ভট্টাচার্য: নির্বাচন কমিশন সিংহভাগ দায়ী। এই কমিশন হলো মেরুদণ্ডহীন। ১০ শতাংশ ভোটার উপস্থিত হলেই তারা সন্তুষ্ট হয়। সরকারও সন্তুষ্ট। সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে তারা এটি করতে পেরেছে।

২৩ বছর আগে পার্বত্য চুক্তি সই হয়েছে। কিন্তু চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণ কী?

পঙ্কজ ভট্টাচার্য: চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়া বাঙালি জাতির জন্য দুর্ভাগ্য। সরকার বলছে তিন ভাগের দুই ভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে। পাহাড়ি জনগোষ্ঠী বলছে, তিন ভাগের এক ভাগ বাস্তবায়িত হয়েছে। মনে রাখতে হবে, বাঙালিদের পাশাপাশি পাহাড়ি ও সমতলের জাতিগোষ্ঠী থেকেও মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাঁদের ওপর ঔপনিবেশিক শাসন চালানো গৌরবের কথা নয়। সমতলের জাতিগোষ্ঠীর লোকজনও বাসস্থান থেকে উচ্ছেদ হয়ে যাচ্ছেন। প্রশাসন নির্বিকার। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়। বাস্তবায়ন হয় না। গাইবান্ধায় তিনজন সাঁওতালের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হলো। রাষ্ট্র দায় নিল না। যাঁরা উচ্ছেদ হলেন, তাঁরা পৈতৃক সম্পত্তিও ফেরত পেলেন না। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে সমতলের জাতিগোষ্ঠীর জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের কথা বলেছিল। বাস্তবায়িত হয়নি।

করোনাকালে সাধারণ মানুষের অবস্থা কী?

পঙ্কজ ভট্টাচার্য: করোনার কারণে চাকরি হারানো, জীবিকা হারানো মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। সরকারের অর্থনৈতিক নীতি বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। দারিদ্র্যের হার বাড়ছে। সংকট উত্তরণে প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা আছে। কিন্তু তৃণমূল পর্যায়ে তাঁর নির্দেশ পৌঁছায় না। আজ স্বাস্থ্য বিভাগ, শিক্ষা বিভাগ, সড়ক বিভাগের অবস্থা খুবই নাজুক। সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য হাইকোর্ট যে রায় দিলেন, তা–ও বাস্তবায়িত হয় না।

রাজনীতির পাশাপাশি আপনি সামাজিক আন্দোলনের সঙ্গেও জড়িত। সেটি কি রাজনৈতিক হতাশা থেকে?

পঙ্কজ ভট্টাচার্য: ১৯৯৬ সালে এসে দেখলাম রাজনীতি বৃহত্তর মানুষের জীবনকে তেমন স্পর্শ করতে পারছে না। বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ নিজেদের মতো প্রতিবাদ করছে। এই সামাজিক প্রতিবাদ-প্রতিরোধের ধারাকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে আমরা সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলেছিলাম। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অজয় রায়ের মতো মানুষ এর সঙ্গে ছিলেন। এর মাধ্যমে আমরা অসাম্প্রদায়িক শক্তির সমাবেশ ঘটাতে চেয়েছিলাম। অনাচারের বিরুদ্ধে মানুষকে জাগাতে চেয়েছিলাম। ২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চ তৈরি হলো। ডাকসুর নির্বাচনেও নতুন শক্তির উত্থান দেখলাম। সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ নামে একটি সংগঠন নির্বাচনে জয়ী হলো। প্রচলিত ছাত্রসংগঠনগুলো সাধারণ ছাত্রদের সমর্থন পেল না। এরপর কিশোর-তরুণেরা নিরাপদ সড়ক আন্দোলন করল। এ কারণে এখনো আশাবাদ আছে। নতুন প্রজন্ম জাগবে। সবাইকে নিয়েই পরিবর্তন আনতে হবে।

বাংলাদেশ ও পাকিস্তান আমলে যত অর্জন হয়েছে, সব রাজনৈতিক আন্দোলনের ফল নয়। সামাজিক শক্তিরও বিরাট ভূমিকা ছিল। ছাত্রদের ভূমিকা ছিল। শুধু রাজনীতি দিয়ে সমাজ বদলানো যাবে না।