যাত্রীর দাবি ‘কিছু নেই’, এক্স-রেতে পেটে মিলল সোনা!

ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একজন যাত্রীর পেট থেকে ৮টি সোনার বার উদ্ধার করেছে ঢাকা কাস্টমস হাউজের প্রিভেন্টিভ টিম। 

রোববার (১৭ জানুয়ারি) দিনগত রাত ১১টার দিকে সোনাগুলো উদ্ধার করা হয়।

কাস্টমস জানায়, প্রথমে ওই যাত্রীকে সন্দেহ করা হলেও তিনি সোনা থাকার কথা অস্বীকার করেন। তবে মেটাল ডিটেক্টরে তার শরীরে ‘ধাতব’ থাকার প্রমাণ মেলে। এরপর যাত্রীর পেটে এক্সরে করে তার পেটে ৮টি সোনার বার থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয় কাস্টমস।

গোলাম মোহাম্মদ নামে সোনা বহন করা ওই যাত্রী রাত ১১টায় দুবাই থেকে এমিরেটস এয়ারওয়েজের ইকে-৫৮৪ ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।

ইমিগ্রেশন শেষ করে লাগেজ নেওয়ার পর গ্রীন চ্যানেল পার হওয়ার সময় শুরু হয় সোনা থাকা- না থাকার বিষয়ে বিতর্ক।

ঢাকা কাস্টমস হাউজের প্রিভেন্টিভ টিমের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নাঈম ইসলাম জানান, ওই যাত্রী প্লেনের ১৮-ই নম্বর সিটে ছিলেন। তার বিষয়ে কাস্টমসে আগে থেকেই তথ্য ছিল। সেই তথ্যের ভিত্তিতে যাত্রী ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করার পর তাকে আটকে ফেলে কাস্টমসের সদস্যরা। প্রথমেই তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, তার কাছে কোনো সোনা বা সোনারবার আছে কিনা? তবে তিনি অস্বীকার করে বলেন, ‘কিছুই নেই।’

নাঈম বলেন, পরে যাত্রীকে আর্চওয়ে গেটে নেওয়া হলে ধাতব জাতীয় পদার্থ থাকার অ্যালার্ম বেজে ওঠে। পরবর্তীতে যাত্রীকে বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার উপস্থিতিতে তল্লাশি করে সবশেষ তার পেটের এক্স-রে করা হয় । এক্স-রে রিপোর্টে  আসামির রেক্টামে সোনার বার থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। এরপর ওই যাত্রী স্বেচ্ছায় টয়লেটে গিয়ে তার রেক্টাম থেকে ৮টি সোনার বার উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও তার ব্যাগ থেকে আরও ২টি বার উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধারকৃত সোনার মোট ওজন ১ কেজি ১৬০ গ্রাম।  পাশাপাশি তার কাছ থেকে আরও ৬টি সোনার চুড়ি, ১ জোড়া সোনার কানের দুল (২ গ্রাম), ৫টি নতুন মোবাইল হ্যান্ডসেট উদ্ধার করা হয়।

কাস্টমস জানায়, আটককৃত সোনা ও পণ্যের আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ১ কোটি টাকা।

তার বিরুদ্ধে ১৯৬৯ সালের দ্য কাস্টমস অ্যাক্টে বিমানবন্দর থানায় মামলা করে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

ক্যাপিটল ভবনে হামলার পর ট্রাম্পের সঙ্গ ছাড়ছেন ঘনিষ্ঠরা

যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা ভবন বা ক্যাপিটল ভবনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উগ্র সমর্থকদের হামলার পর ট্রাম্পের সঙ্গ ছাড়ছেন তাঁর ঘনিষ্ঠরা। এ হামলার পর নিন্দার ঝড় উঠেছে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান শিবির–নির্বিশেষে। বিশ্বনেতারাও পিছিয়ে নেই সমালোচনায়।

বিবিসির প্রতিবেদনে জানা যায়, হামলার পর ট্রাম্পের সঙ্গ ছাড়ার তালিকায় একেবারে প্রথমেই আছেন হোয়াইট হাউসের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি সারাহ ম্যাথিউস। তিনি বলেছেন, ‘আজ কংগ্রেস হলে যা দেখলাম, তাতে আমি ভীষণভাবে বিরক্ত। আমাদের দেশে ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তর প্রয়োজন।’

সারাহ বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসনে যুক্ত থাকতে পেরে আমি সম্মানিত বোধ করি। এ সময় যেসব নীতি নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর জন্য আমি গর্বিত।’

হামলাকালে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন চলছিল

হামলাকালে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন চলছিল
ছবি: রয়টার্স

সারাহর আগে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের চিফ অব স্টাফ এবং ট্রাম্পের সাবেক প্রেস সচিব স্টেফানি গ্রিসহাম পদত্যাগ করেন। তবে তাঁর পদত্যাগের সঙ্গে ক্যাপিটল ভবনে হামলার কোনো সম্পর্ক আছে কি না, তা নিশ্চিত না।

পদত্যাগের পর স্টেফানি বলেন, ‘হোয়াইট হাউসে কাজের মাধ্যমে এ দেশ সেবার সুযোগ পেয়ে আমি সম্মানিত বোধ করি। মিসেস ট্রাম্প যেভাবে বিভিন্ন জায়গায় শিশুদের সহযোগিতা করেছেন, এর অংশীজন হতে পেরে আমি গর্বিত। এ প্রশাসনের অনেক কাজের সঙ্গে আমি যুক্ত থেকেও গর্ব বোধ করি।’

এদিকে এ হামলার পর সরব হয়েছেন ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টির অনেকেই।
রিপাবলিকান পার্টির নেব্রাস্কার সিনেটর বেন সাসে বলেছেন, ‘এটা একটা নোংরা দিন। আমরা আমাদের শিশুদের কখনোই বলতে চাইব না যে যুক্তরাষ্ট্রের সোনালি অতীত আমাদের আছে। কারণ, এটা সত্য না। আমরা এমনটা নই।’

গতকালই জর্জিয়ায় সিনেটের ভোটে হেরে যান রিপাবলিকান প্রার্থী কেলি লয়েফলার। তিনিও সমালোচনায় সরব।

প্রেমে ব্যর্থ শুভ এখন মানুষকে ভালোবাসেন, রোগীদের পাশে দাঁড়ান

বছর খানেক আগের কথা। অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের পরিচালক মাহবুবা রহমান তাঁর এক স্বজনকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। সেই স্বজন ক্রনিক সিজোফ্রেনিয়ার রোগী। আত্মীয়ের বাসা, হাসপাতাল, রেলস্টেশন—সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি শেষ। সন্ধান পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে কেউ কেউ টাকা–পয়সা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছে। এমন একটা সময়ে মাহবুবার সেই স্বজনের খোঁজ দিলেন শুভ মজুমদার নামের এক ব্যক্তি।
মাহবুবা প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুভকেও প্রথমে ফ্রড (প্রতারক) ভেবেছিলাম আমরা।

ভুল বুঝেছিলাম। পরে জানলাম, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অচেনা রোগীদের অনেককে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে শুভ।’ ক্রনিক সিজোফ্রেনিয়ায় ভোগা মাহবুবার ওই আত্মীয় ছয়দিন ঢাকা মেডিকেলে ছিলেন। একটি কথাও বলেননি।

সেখানেই দেখা হয় শুভর সঙ্গে। সাত দিনের দিন শুভকে কী ভেবে যেন মঠবাড়িয়ায় তাঁর গ্রামের বাড়ির ঠিকানা বলেন মাহবুবার ওই স্বজন। ওই ঠিকানা নিয়ে ৯৯৯–এ ফোন করে আত্মীয়–স্বজনের খোঁজ পান শুভ। এরপরই তাঁকে পরিবারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।

শুভ কেন, কীভাবে এই কাজে জড়ালেন, সেই প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে শুভ ও তাঁর বন্ধুদের খোঁজ পাওয়া গেল কী করে, তা-ই জানা যাক। গত ২৮ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল আয়েশার ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া। শাহবাগ থানার কাছে আস্তাকুঁড়ে আয়েশাকে ছেড়ে গিয়েছিল পরিবারের লোকজন। সেখান থেকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। সেই থেকে ওখানেই আছে সে। তালুর সঙ্গে জিব আটকে থাকায় কথা বলতে পারত না। সেই জট খুলতে সম্প্রতি অস্ত্রোপচার হয়েছে।

আয়েশার সঙ্গে কথা বলার অনুমতি নিতে পরিচালকের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে বাইরে অপেক্ষমাণ অবস্থায় পাওয়া যায় শুভকে। তিনিই পথ দেখিয়ে নিয়ে যান শিশুটির কাছে। জানা যায়, আয়েশা শুভকে ‘বাবা’ বলে ডাকে। ওই ওয়ার্ডের সেবাকর্মী লাইজু শুভকে জানান, আয়েশা আজকাল কথায় কথায় জেদ করে। কিছুক্ষণ আয়েশার সঙ্গে শুভর খুনসুটি চলে। এক ফাঁকে শিশু চিকিৎসক মো. কামাল হোসেন শুভর কাছে জানতে চান, আয়েশাকে পুনর্বাসনের কী হলো।

ওই দিনই শুভর সঙ্গে যাই নিউরোলজি বিভাগে। চারজন অপরিচিত রোগী ওখানে। সবাই অচেতন। একজন এসেছেন তখনই। এক পায়ে মোজা আছে, অন্যটি খালি, কানের পাশে রক্তের গাঢ় দাগ। বাকি দুজন গভীর ঘুমে। সত্তরোর্ধ্ব এক বৃদ্ধের চোখ শুধু খোলা। ‘চাচা’ বলে ডাকতে অপলক তাকিয়ে থাকেন শুভ মজুমদারের দিকে। চেনার চেষ্টা করেন। পারেন না। এই ওয়ার্ডে শুভর বন্ধু আল আমিন নামের এক ওয়ার্ডবয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু আয়েশা। শুভকে ‘বাবা’ বলে ডাকে সে

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু আয়েশা। শুভকে ‘বাবা’ বলে ডাকে সে

তাঁরা রোগীদের দেখাশোনা করেন, ফাইল নিয়ে চিকিৎসকদের কাছে যান, প্রয়োজনীয় সেবার ব্যবস্থা করেন। হাসপাতাল ও পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। শুভ জানান, অচেনা রোগীদের প্রতি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সহানুভূতিশীল। তাঁদের বিনা মূল্যে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা দিতে কোনো দিন তাঁরা পিছপা হন না। পুলিশ-পথচারীরা ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। তিনি যে কাজটা করেন, তা হলো প্রতিদিন একবার হাসপাতালে এসে রোগীদের দেখে যান। আর পরিবারের খোঁজ করেন। অনেক রোগী এভাবে ফিরে গেছে পরিবারের কাছে।

সবশেষ কাকে ফিরিয়ে দিতে পেরেছেন পরিবারের কাছে? জানতে চাইলে আমিনুল ইসলামের নাম বলেন শুভ। কথা হয় তাঁর সঙ্গে। গত ১০ ডিসেম্বর আমিনুলকে মলম পার্টি ধরেছিল। গাজীপুর থেকে উত্তরা হাউস বিল্ডিংয়ে এসে বাস বদলেছিলেন ধানমন্ডির অফিসে যেতে। অফিসে আর পৌঁছাতে পারেননি। তিন দিন ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। শুভর সহায়তায় অফিসের সহকর্মী মোস্তফা কামাল তাঁকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যান।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক কর্নেল মো. নাজমুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শুভ প্রায়ই আসেন অস্ত্রোপচার কিংবা অচেনা রোগীদের চিকিৎসার ব্যাপারে।

শুভকে কাজে সহায়তা করেন হাসপাতালের সেবাকর্মী আল আমিন

শুভকে কাজে সহায়তা করেন হাসপাতালের সেবাকর্মী আল আমিন

মধ্যপ্রাচ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে যুক্ত শুভ মজুমদার কীভাবে জড়ালেন এই কাজে? এমন প্রশ্নে তিনি বললেন, একটা সময় তিনি নিজেও অচেনা মানুষ হয়ে এসেছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। প্রায় ছয়-সাত বছর আগে। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে ১৫ দিনের ব্যবধানে দুবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। সেরে ওঠার পর আবারও ফিরে এসেছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

সে সময় জরুরি বিভাগে বাবার লাশের সামনে হতোদ্যম এক তরুণকে পেয়েছিলেন। কাছে যেতেই জড়িয়ে ধরে তিনি চিৎকার করে কাঁদতে থাকেন। কীভাবে যেন তাঁর বাবার শেষযাত্রার সঙ্গী হয়ে যান শুভ। সিসিইউতে চাচার পাশে ছিলেন নড়াইলের এক তরুণ। পরদিন চাকরির সাক্ষাৎকার দিতে যেতে হবে তাঁকে। চাকরিটা দরকার, কিন্তু চাচার পাশে কে থাকবেন? শুভ থেকে যান একটানা সাত দিন। নারায়ণগঞ্জে এক বৃদ্ধা ছেলের সঙ্গে অভিমান করে বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছিলেন। তাঁর দেখাশোনার দায়িত্বও নেন শুভ। প্রায় আড়াই মাস পর নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা এক রোগীর স্বজন জানান, তিনি চেনেন বৃদ্ধাকে। ছেলে এসে মাকে নিয়ে যান। প্রায় চার মাস ছিলেন ৮০ বছরের এক বৃদ্ধার পাশে। টুকরো টুকরো এমন অনেক গল্প জমা হয়েছে শুভর ঝুলিতে। জীবনকে ভালোবেসে শুভ এই কাজটা করে যেতে চান।