‘পুঁজিবাজারে আগের মতো কেলেঙ্কারি আর হবে না’

‘পুঁজিবাজারে আগের মতো কেলেঙ্কারি আর হবে না’

দেশের পুঁজিবাজারে আর ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের পুনরাবৃত্তি হবে না বলে দাবি করেছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান। তিনি বলেছেন, এক্সচেঞ্জ ও কমিশনের মধ্যে সম্পর্ক এখন খুবই ভালো। আগের ভয়াবহ ধসের ঘটনা আর দেখতে হবে না।

গতকাল বুধবার রাজধানীর নিকুঞ্জে ডিএসই কার্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনাসভায় চেয়ারম্যান এ কথা বলেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান, শাকিল রিজভী, মোহাম্মদ শাহজাহান, মুনতাকিম আশরাফ, নাসরিন সুলতানা এবং ডিএসইর সিএফও ও ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মতিন পাটওয়ারি।

ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, ‘পুঁজিবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সহায়তা, বিএসইসির সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের কারণে সুশাসন নিশ্চিত হয়েছে, যা পুঁজিবাজারে সুবাতাস নিয়ে এসেছে। এখন সার্ভেইল্যান্স অনেক শক্তিশালী।’ শিগগিরই ডিএসই ভবন একটি অর্থনৈতিক হাবে পরিণত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

ঊধ্বর্মুখী পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের কোনো ঝুঁকি আছে কি না—সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে ডিএসই পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে বিনিয়োগকারীদের সচেতন হতে হবে।’

আরেক পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, ‘২০১০ সালে আমরা বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণ নিয়ে পুঁজিবাজারে না আসতে বলেছিলাম। কিন্তু তখন তা মানা হয়নি। তবে সে সময়ের তুলনায় এখন পুঁজিবাজার অনেক শক্তিশালী।’ তিনি বলেন, লেনদেনযোগ্য শেয়ার সবচেয়ে বেশি ব্যাংকের। প্রায় ৭০ শতাংশ ব্যাংকের শেয়ার বিনিয়োগকারীদের হাতে। একসময় ব্যাংকগুলো বেশি বেশি বোনাস দিয়ে পরিচালকরা টাকা নিয়ে যেতেন। এখন তাঁরা ১০ টাকার শেয়ার কেনেন না। তাই এই খাতে সুশাসন খুবই জরুরি।

রকিবুর রহমান বিনিয়োগ শিক্ষার ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘আল্লাহর ওয়াস্তে আপনারা না জেনে, না বুঝে পুঁজিবাজারে আসবেন না। আপনারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে কেউ দায়িত্ব নেবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের ভয় হচ্ছে, তালিকাভুক্ত কম্পানির ৯০ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে, যেখানে উন্নত দেশে কম্পানির শেয়ারের সিংহভাগ থাকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে।’

সফটওয়্যার জটিলতা প্রসঙ্গে ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, ‘ডিএসইর কোনো ডিজাস্টার রিকভারি সাইট নেই। সফটওয়্যারের যে সমস্যা সেটা আমাদের সামনে এসেছে মাস তিনেক আগে। এর পরিপ্রেক্ষিতে নিকুঞ্জে কার্যক্রম চলছে। আগামী জুনের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।’

১৫ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে ৪ কোটি টাকা জরিমানা : শেয়ার লেনদেনে সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গের দায়ে ১৫ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে চার কোটি ৬৮ লাখ টাকা জরিমানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। গতকাল বিএসইসির ৭৫৮তম সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্কের শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে জেমস মার্টিন দাস, ড. জে এম মুর্শিদ, মো. নুরল ইসলাম কামরাম ও সহযোগী মনজিলা নাসরিন ইসলাম; নর্দার্ন জুট ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে পরিমল চন্দ্র পাল ও সহযোগীরা (রিপন শেখ, মল্লিক আবু বক্কর, মো. তোফাজ্জল হোসেন, বিধান মিস্ত্রী, অমল কৃষ্ণ দাস), সালেক আহমেদ সিদ্দিকী ও সহযোগী (মনির হোসেন), সমির রঞ্জন পাল ও সহযোগীরা (শিউলি পাল, চিত্ত হারান দত্ত), মো. আমানত উল্লাহ ও সহযোগীরা (সেতারা বেগম, সন্দীপ করপোরেশন, হাল ইন্ডাস্ট্রিজ প্রশান্ত কুমার হালদার) সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯-এর সেকশন ১৭(ই)(ভি) ভঙ্গ করেছেন।

এ জন্য বিনিয়োগকারী জেমস মার্টিন দাসকে দুই লাখ টাকা, পরিমল চন্দ্র পালকে ২০ লাখ টাকা, রিপন শেখকে ২০ লাখ টাকা, মল্লিক আবু বক্করকে ১০ লাখ টাকা, তোফাজ্জল হোসেনকে ৪০ লাখ টাকা, বিধান মিস্ত্রীকে পাঁচ লাখ টাকা, অমল কৃষ্ণ দাসকে সাত লাখ টাকা, সালেক আহমেদ সিদ্দিকীকে সাত লাখ টাকা, সমির রঞ্জন পালকে ২০ লাখ টাকা, শিউলি পালকে ৫০ লাখ টাকা, চিত্ত হারান দত্তকে ১২ লাখ টাকা, আমানত উল্লাহকে এক কোটি টাকা, সেতারা বেগমকে পাঁচ লাখ টাকা, প্রশান্ত কুমার হালদারকে ২৫ লাখ টাকা, সন্দীপ করপোরেশনকে ৬০ লাখ টাকা এবং হাল ইন্ডাস্ট্রিজকে ৮৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *