৪১তম বিসিএস প্রিলি পেরোতে সময়টি যেভাবে কাজে লাগাতে পারেন

৪১তম বিসিএস প্রিলি পেরোতে সময়টি যেভাবে কাজে লাগাতে পারেন

আগামী ১৯ মার্চ ৪১তম বিসিএসে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ বিসিএসে আবেদন করেছিলেন ৪ লাখ ৭৫ হাজার জন। নিয়োগ দেওয়া হবে ২ হাজার ১৬৬ জনকে। হাতে আর সময় বেশি নেই, আছে ২ মাসের মতো। সময়টি বিসিএসপ্রত্যাশী প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হতে পরীক্ষার আগপর্যন্ত সময়টি যেভাবে কাজে লাগাতে পারেন।

১.
আপনার প্রস্তুতি কতটুকু হয়েছে, কী কী বিষয় বাকি রয়েছে, পরীক্ষার আর কত দিন বাকি আছে, এসব বিষয়ে দুশ্চিন্তা বাদ দিয়ে আজই বই নিয়ে বসে পড়ুন।

২.
আপনার কাছে যেসব বই আছে, সেগুলোই পড়ুন। চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে বাহারি বই কিনলে শুধু বিভ্রান্তই হবেন। বই কেনা না থাকলে যেকোনো এক সেট বই কিনুন।

৪.
বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার সিলেবাসটি সঙ্গে রাখুন এবং পুরো সিলেবাসটি ভালোভাবে পড়ে নিন।

প্রতিটা বিষয় যেভাবে পড়তে পারেন

১. বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
এই বিষয় থেকে ৩৫ নম্বরের প্রশ্ন হবে, তাই এখানে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিন। ব্যাকরণের যে অংশগুলো থেকে প্রতিবার প্রশ্ন হয় (যেমন ধ্বনি, সন্ধি, সমাস, বানান প্রভৃতি), সেগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। সাহিত্য অংশের প্রাচীন ও মধ্যযুগ থেকে ৫টি প্রশ্ন হয়। এই অংশে সিলেবাস খুব একটা বড় নয়। তাই এই অংশ আগে পড়ুন। আধুনিক সাহিত্যে বিখ্যাত লেখকদের সাহিত্যকর্ম আগে পড়ুন। সময় পেলে অন্যগুলো পড়বেন।

৪১তম বিসিএস প্রিলি পেরোতে সময়টি যেভাবে কাজে লাগাতে পারেন

ফাইল ছবি

২. ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য
এখানেও ৩৫ নম্বরের প্রশ্ন হবে। এই অংশে ভালো করতে পারলে আপনি অনেক প্রতিযোগীর চেয়ে এগিয়ে যাবেন, তাই এখানে গুরুত্ব দিন।
ইংরেজি গ্রামারের যে অংশগুলো থেকে প্রতিবার প্রশ্ন হয় (যেমন Appropriate preposition, Phrase and Idioms, Group verbs, Subject-verb agreement, Conditionals প্রভৃতি), সেগুলো আগে পড়ুন। সাহিত্য অংশে বিখ্যাত লেখকদের সাহিত্যকর্ম, তাঁদের উদ্ধৃতি, যুগ, বিভাগ, লিটারারি টার্ম প্রভৃতি আগে পড়ে ফেলুন।

৩. বাংলাদেশ বিষয়াবলি
এই অংশ থেকে ৩০ নম্বরের প্রশ্ন হয়। এই বিষয়ের সিলেবাস অনেক বড়, তাই গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো আগে পড়ুন। যেমন ভাষা আন্দোলন থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত (১৯৪৭-৭১) ইতিহাস, অর্থনৈতিক সমীক্ষা থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি (জিডিপি, জিএনআই, এডিপি, দারিদ্র্য বিমোচন, জাতীয় আয়-ব্যয়, কৃষিজ সম্পদ, শিল্প উৎপাদন, আমদানি-রপ্তানি প্রভৃতি), সিলেবাস দেখে বাংলাদেশের সংবিধান (আগের প্রশ্নগুলো অবশ্যই)।

৪. আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি
এ বিষয়ে ২০ নম্বরের প্রশ্ন এলেও সিলেবাস অনেক বড়। তাই এই অংশ পড়ার সময় কৌশলী হতে হবে। আন্তর্জাতিক সংগঠনসমূহ ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানাদি, বিভিন্ন যুদ্ধ ও চুক্তি, সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ—এই বিষয়গুলো সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পড়ুন।

৫. ভূগোল, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বাংলাদেশের অবস্থান, সীমানা, আবহাওয়া, জলবায়ু, পরিবেশগত চ্যালেঞ্জসমূহ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ—এই টপিকগুলো অবশ্যই পড়বেন। বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে আপনার প্রস্তুতি ভালো থাকলে এই অংশের অনেক কিছু আপনার আগেই পড়া হয়ে যাবে।

৬. সাধারণ বিজ্ঞান
সাধারণ বিজ্ঞান থেকে ১৫ নম্বরের প্রশ্ন এলেও সিলেবাস অনেক বড়। তাই আগের বিসিএসের প্রশ্নগুলো আগে দেখুন। যেকোনো গাইড থেকে নন-ক্যাডারসহ অন্যান্য পরীক্ষায় আসা প্রশ্নগুলো পড়ে নিন। এরপর সময় পেলে সিলেবাস দেখে টপিকগুলো পড়তে পারেন।

৭. কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি
যেকোনো গাইড বই থেকে সিলেবাস মিলিয়ে পড়ুন। আগের বিসিএসের প্রশ্ন অবশ্যই পড়বেন।

৮. গাণিতিক যুক্তি
আপনি যে বিভাগেরই ছাত্র হোন না কেন, নিয়মিত অনুশীলন ছাড়া গণিতে ভালো করা সম্ভব নয়। তাই পরীক্ষার আগপর্যন্ত প্রতিদিন নির্দিষ্ট কিছু সময় গণিত অনুশীলন করুন।

৯. মানসিক দক্ষতা
প্রথমে আগের বিসিএসের প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় আসা প্রশ্নগুলো বুঝে সমাধান করুন। সময় পেলে যেকোনো গাইড বই থেকে সিলেবাস দেখে পড়ুন।

১০. নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন
এই অংশে কম গুরুত্ব দিন। কিছু কোটেশন পড়তে পারেন। নিজের কমনসেন্স কাজে লাগিয়ে কয়েকটি উত্তর করা যায়, তবে সব প্রশ্নের উত্তর করতে যাওয়া বোকামি।

বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। এতে ভালো করতে হলে প্রস্তুতি শুরু করতে হবে এখনই

বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। এতে ভালো করতে হলে প্রস্তুতি শুরু করতে হবে এখনই
 ছবি: প্রথম আলো

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে কিছু পরামর্শ
১.
আগের বিসিএসের প্রশ্ন (বিশেষ করে ৩৫-৪০) সলভ না করে পরীক্ষা দিতে যাবেন না।

২.
আন্দাজে কোনো প্রশ্নের উত্তর করতে যাবেন না। মনে রাখবেন, প্রশ্ন সহজ বা কঠিন যা-ই হোক, ৬০ শতাংশ নম্বর পেলে আপনি অবশ্যই উত্তীর্ণ হওয়ার মতো অবস্থায় যাবেন।

৩.
যেকোনো একটি মডেল টেস্টের বই থেকে ঘড়ি ধরে নিজে নিজে পরীক্ষা দিন। এতে টাইম ম্যানেজমেন্ট নিয়ে আপনার ধারণা তৈরি হবে।

৪.
পরীক্ষার হলে অন্যের কথা শুনে বা নির্ভর করে উত্তর করবেন না, করলে শুধু নেগেটিভ মার্কিং হওয়ার আশঙ্কাই বাড়বে।

৫.
অনেকে নির্দিষ্ট কিছু বিষয় দিয়ে উত্তর করা শুরু করতে চান, তবে সে বিষয় নির্বাচন ও প্রশ্নে খুঁজতে গিয়ে কালক্ষেপণ হয়। তাই ধারাবাহিকভাবে উত্তর করাই ভালো (গণিত পরে করতে চাইলে ভিন্ন কথা)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *