১৩ হাজার ফোন পেয়েও নিশ্চুপ ছিল পুলিশ

১৩ হাজার ফোন পেয়েও নিশ্চুপ ছিল পুলিশ

রাজধানীতে চার দিনব্যাপী চলা সংঘর্ষে ১৩ হাজার ২০০টি ফোন কল পেয়েছিল দিল্লি পুলিশ। কোথাও গুলি চলছে, কোথাও গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে- এমন সব সহিংসতার অভিযোগ আসছিল। এরপরও নির্বিকার ছিল পুলিশ। সহিংসতার শুরু থেকেই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা হতে থাকে এবং তার মধ্যেই সংবাদমাধ্যমে এমন তথ্য উঠে এলো। এদিকে, সহিংসতার আবহ কেটে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়ার পথে রাজধানীর উত্তর-পূর্ব অংশ। তবে চার দিনব্যাপী তাণ্ডবের রেশ এখনও বিভিন্ন জায়গায় রয়ে গেছে। চারদিকে থমথমে পরিবেশ। দু’একটা দোকান খুললেও রাস্তাঘাট বেশ ফাঁকা। টহল দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সরানো হচ্ছে সহিংসতায় সৃষ্ট ধ্বংসস্তূপ। প্রয়োজন ছাড়া এখনও বাড়ির বাইরে যেতে সাহস পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। তবে অফিস চালু হয়েছে। এরই মধ্যে গতকাল শনিবার দিল্লির ব্যস্ততম মেট্রো স্টেশন রাজীব চকে ‘গালি মারো’ স্লোগানে নতুন করে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এর জেরে ৬ জনকে আটক করেছে পুলিশ। কয়েকদিনের সহিংসতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১২৩টি এফআইআর দায়ের করেছে পুলিশ। প্রায় ৬৩০ জনকে আটক করা হয়েছে। খবর এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া ও আনন্দবাজারের। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধী ও সমর্থকদের সংঘর্ষে গত ২৩ থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজধানী দিল্লি। এতে এখন পর্যন্ত ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন দুই শতাধিক মানুষ। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, পুলিশ প্রশাসনের উদাসীনতার কারণেই উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করে। ফোনে বারবার কল করে অভিযোগ জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখতেই পুলিশ কন্ট্রোল রুমের কল লগ খতিয়ে দেখে একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম।

তাতে দেখা যায়, ২৩ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভের প্রথম দিন সন্ধ্যাতেই ৭০০ ফোন কল যায় পুলিশের কাছে। পর দিন তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৫০০। তার পর দিন ৭ হাজার ৫০০ ফোন পায় পুলিশ। ওই দিন রাত থেকেই এলাকা পরিদর্শনে বের হন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। তার পর দিন ১ হাজার ৫০০টি ফোন কল পায় পুলিশ। শুধু যমুনা বিহার থেকেই ভজনপুরা থানায় ২৪-২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার ফোন কল আসে। শুধু সাধারণ মানুষই নয়, তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেও  পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন যমুনা বিহারের বিজেপি কাউন্সিলর প্রমোদ গুপ্ত। পুলিশ তার ফোনই ধরেনি বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। একই অভিযোগ করেন শিববিহারের রাজধানী পাবলিক স্কুলের মালিক ফয়জল ফারুখ।

ঘরবাড়ি খালিই পড়ে আছে : নতুন করে সংঘর্ষ না দেখা দিলেও এখনও বেশ কিছু জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। সব রকমের জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে টহল দিচ্ছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (র‌্যাফ)। জায়গায় জায়গায় মোতায়েন রয়েছে পুলিশ এবং আধাসেনা। ধ্বংসাবশেষ পরিস্কার করতে ক্রেন এবং বুলডোজার নামানো হয়েছে। সহিংসতা চলাকালীন বেশ কিছু এলাকায় ঘর ছেড়ে যায় সাধারণ মানুষ। সেখানে ঘরবাড়ি খালিই পড়ে আছে। তবে আগামী কয়েক দিনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে আশাবাদী প্রশাসন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *