এই পেলে সেই পেলে, নেই পেলে…

এই পেলে সেই পেলে, নেই পেলে…

‘এই পেলে, সেই পেলে, নেই পেলে আগেরই মতো’?

প্রশ্নটি একসময়ে খ্যাতি কুড়োনো গায়ক মনি কিশোরের এক গানের চরণ ধরে—‘আকাশের রং বদলায়/ বদলায় মানুষের মন/ এই তুমি, সেই তুমি, নেই তুমি আগের–ই মতো’।

ফুটবলে পেলের প্রতিভা ও সামর্থ্য নিয়ে কোনো প্রশ্ন চলে না। তিনবার বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তিকে এভাবে চিনে এসেছেন সবাই। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পেলেকে এভাবে কতটা চেনা যাচ্ছে? ৮০ বছর বয়স, জগৎজোড়া খ্যাতি ও সম্মান ছাপিয়ে পেলের হীনম্মন্যতা কি চোখে বিঁধছে?

এই প্রশ্নটা উঠছে আবার পেলের কারণেই। মেসি–রোনালদো ফুটবল–আকাশের রং বদলে দেওয়ার পর পেলের মনও কি বদলে গেছে?

বিজ্ঞাপন

কিছু পরিসংখ্যান ও হিসাবমতে, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো এখন প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা। ২০১৯ সালের এপ্রিলে প্লাকারের প্রকাশিত সংখ্যায় পেলের গোলসংখ্যা ৭৫৭ বলা হয়।

সান্তোসের হয়ে ৬৪৩, ব্রাজিলের হয়ে ৭৭ ও কসমসের হয়ে ৩৭ গোল। সে হিসাবে ৭৫৮ গোল করে পেলেকে টপকেছেন রোনালদো। এ ছাড়া কিছুদিন আগে এক ক্লাবের জার্সিতে সর্বোচ্চ গোল করায় পেলেকে টপকে যান লিওনেল মেসি। কিন্তু পেলে তা মেনে নেবেন কেন?

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে পেলের অ্যাকাউন্ট ঘুরে দেখা গেছে, নিজের ‘বায়ো’তে (সংক্ষিপ্ত পরিচিতি) লিখেছেন, ‘সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা (১২৮৩)।’ ইঙ্গিতটা স্পষ্ট, মেসি-রোনালদোর কাছে হেরে যেতে রাজি নন পেলে।

তাঁর এই অ্যাকাউন্টে শ্যেন দৃষ্টি রাখা ভক্ত ও সংবাদমাধ্যমের দাবি উদিনেসের বিপক্ষে রোনালদো অফিশিয়াল ম্যাচে সর্বোচ্চ গোলদাতার ইতিহাস গড়ার পরই ইনস্টাগ্রামে নিজের ‘বায়ো’ পাল্টেছেন পেলে।

কিন্তু এই দাবির বিরুদ্ধে কাল ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি যেন জিনেদিন জিদানের ‘মার্শেই টার্ন’ করলেন! পেলের দাবি, ইনস্টাগ্রামে যোগ দেওয়ার পর থেকে তিনি কখনো ‘বায়ো’ (সংক্ষিপ্ত পরিচিতি) পাল্টাননি!

নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে কাল এ নিয়ে লেখেন পেলে, ‘যে দুজন বড় তারকা আমার রেকর্ড ভেঙেছে, তাদের খাটো করতে আমি ইনস্টাগ্রামে বায়ো পাল্টেছি বলে সংবাদমাধ্যম অভিযোগ তুলেছে। আমি এই অঙ্গনে (ইনস্টাগ্রাম) যোগ দেওয়ার পর থেকে বায়োর লেখা একই রকম ছিল। তোমাদের (মেসি–রোনালদো) অবিশ্বাস্য অর্জন আমাদের মনোযোগ সরাতে পারবে না এসব বিষয়।’

পেলের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টের ‘বায়ো’ (সংক্ষিপ্ত পরিচিতি)

পেলের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টের ‘বায়ো’ (সংক্ষিপ্ত পরিচিতি)
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

পেলে তাঁর ক্যারিয়ারে যে পরিমাণ খ্যাতি ও সম্মান কুড়িয়েছেন, তা আর কোনো ফুটবলার কখনো পাবেন কি না সন্দেহ। তবে পেলের হাজার গোলের (১২৮৩) দাবির বৈধতা নিয়ে প্রশ্নটা আজকের না।

কিন্তু পেলের সময়ে স্বীকৃত ও প্রীতি ম্যাচ ফুটবলের মধ্যে কোনো পার্থক্য দেখা হতো না। সান্তোসের দাবি, প্রীতি ম্যাচে করা পেলের ৪৪৮ গোলকেও হিসাবে আনতে হবে, কেননা গোলগুলো সে সময়ের সেরা দল ও ক্লাবের বিপক্ষে।

 

এদিকে প্রীতি ম্যাচে করা গোলগুলোকে হিসাবে নেওয়া হয় না, পেলের ক্ষেত্রেও করা হয়নি।

ফুটবল পরিসংখ্যানে ‘রেফারেন্স’ হিসেবে বিবেচিত ‘ফুতদাদোস’ ওয়েবসাইট ও আরএসএসএসএফের মতে, অফিশিয়াল ম্যাচে পেলের গোলসংখ্যা ৭৬৭। লাতিন সংবাদকর্মী রদলফো রদ্রিগেজের মতে, অফিশিয়াল ম্যাচে পেলের গোলসংখ্যা ৭৬২।

কিন্তু ২০১৯ সালের এপ্রিলে ব্রাজিলের বিখ্যাত সাময়িকী ‘প্লাকার’–এ প্রকাশিত সংখ্যায় পেলের গোলসংখ্যা ৭৫৭ বলা হয়েছিল। সান্তোসের হয়ে ৬৪৩, ব্রাজিলের হয়ে ৭৭ ও কসমসের হয়ে ৩৭ গোল।

প্লাকারের এ হিসাব ধরেই সম্প্রতি রেকর্ডগুলো ভেঙেছেন লিওনেল মেসি আর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।

জুভেন্টাস তারকার রেকর্ড ভাঙার পক্ষে টুইটও করেন গ্যারি লিনেকারের মতো তারকা, ‘৭৫৮তম গোল করে পেলের সর্বোচ্চ ক্যারিয়ার গোলের রেকর্ড ভাঙলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। অর্থাৎ ১৮ বছর ধরে প্রতি মৌসুমে প্রায় ৪২ গোল, মাথা ঘুরিয়ে দেয়!’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *