খুলনার আবুল কাশেম হত্যার ২৬ বছর পর আবারও শুরু হচ্ছে বিচার

খুলনার আবুল কাশেম হত্যার ২৬ বছর পর আবারও শুরু হচ্ছে বিচার

খুলনা মহানগর জাতীয় পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, খুলনা শিল্প ও বণিক সমিতির সাবেক সভাপতি শেখ আবুল কাশেম হত্যার ২৬ বছর পর আবারও মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। আগামী ২৬ জানুয়ারি মামলার শুনানির দিন ধার্য করেছেন খুলনার জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারক (জেলা জজ) মো. সাইফুজ্জামান।

মামলার এক আসামির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের আদেশে ২০১৪ সাল থেকে আলোচিত হত্যা মামলাটির বিচার কার্যক্রম স্থগিত ছিল। গতকাল সেখান থেকে ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের চিঠি খুলনা জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে আসে। এরপর ওই মামলার অবশিষ্ট কাযক্রম পরিচালনার জন্য আগামী ২৬ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন ওই আদালতের বিচারক সাইফুজ্জামান।

খুলনা জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) আরিফ মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের পাওয়া চিঠি অনুযায়ী উচ্চ আদালত ওই মামলার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেছেন ২০১৮ সালের আগস্টে। আর তাতে ওই আদালতের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষর করেছেন ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে ওই চিঠি খুলনায় আসতে এত দিন লেগেছে। আদালতের কাছে চিঠি আসার সঙ্গে সঙ্গে ওই মামলার কাযক্রম চালানোর জন্য পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে।

শুধু আমার পরিবার নয়, খুলনাবাসী সবাই চান ওই হত্যা মামলার বিচার হোক।

শেখ মনিরুজ্জামান, আবুল কাশেমের ভাইপো ও হত্যা মামলার ৩ নম্বর স্বাক্ষী

১৯৯৫ সালের ২৫ এপ্রিল দুপুরে খুলনা থানার সামনে প্রকাশ্যে আবুল কাশেম ও তাঁর গাড়িচালক মিকাইল হোসেনকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ১৯৯৬ সালের ৫ মে সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন আদালতে ১০ জনের নামে ওই হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ওই হত্যা মামলায় ৩ আসামি আদালতের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছিলেন। পরে অভিযোগপত্র অনুযায়ী জড়িত ১০ জনের মধ্যে ১ জন মামলা থেকে অব্যাহতি পান। আর দুজন মারা গেছেন। বাকি ৭ আসামি বর্তমানে জামিনে রয়েছেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে চার্জশিট থেকে একজনের নাম বাদ দেওয়ার আদেশ স্থগিত চেয়ে প্রথম দফা আবেদন করেন ওই মামলার বাদী আলমগীর হোসেন। ১৯৯৯ সালে সেই আদেশ প্রত্যাহার করে নেন উচ্চ আদালত। ২০০৯ সালেও মামলার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। ২০১৩ সালে সেটি প্রত্যাহার করে নেন উচ্চ আদালত। পরে মামলার আসামি আবদুল গফ্ফার বিশ্বাসের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের মার্চে মামলাটি ছয় মাসের জন্য আবার স্থগিত করেন উচ্চ আদালত। পরে ২০১৫ সালের আগস্টে রুলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম পরিচালনায় স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়।

খুলনা জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের উচ্চমান বেঞ্চ সহকারী মো. ছায়েদুল হক বলেন, ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরে মামলাটি জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে আসে। ওই সময় একজনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে ২০০৮ সালে চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে সেটি দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে পাঠানো হয়। সেখানে ১৭ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। কিন্তু ১৩৫ দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় ওই বছরই তা আবার জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে চলে আসে। কিন্তু এত দিন স্থগিতাদেশ থাকায় মামলাটি ওই ভাবেই পড়ে ছিল। সর্বশেষ উচ্চ আদালতের চিঠি পাওয়ার পর পুনরায় মামলার কাযক্রম শুরু হয়েছে।

আবুল কাশেমের ভাইপো ও হত্যা মামলার ৩ নম্বর স্বাক্ষী শেখ মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুধু আমার পরিবার নয়, খুলনাবাসী সবাই চান ওই হত্যা মামলার বিচার হোক।’ তবে আর যেন কোনোভাবেই মামলাটি স্থগিত করা না হয়, সেই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আদালতের কাছে অনুরোধ করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *