আওয়ামীলীগের দূর্নীতির অর্থ পাচার হচ্ছে

আওয়ামীলীগের দূর্নীতির অর্থ পাচার হচ্ছে

মশিউল হুসাইন খান/ যুক্তরাজ্য

টাকা তিনবার ক্ষমতায় আওয়ামীলীগ। ভোট চুরি করে তারা তাদের পছন্দের  মানুষকে বিভিন্ন এলাকার দায়িত্ব দিয়েছে। তাছাড়া সাধারন মানুষকে শোষণ করে প্রতিনিয়ত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে এই সরকার। আর এ কারনে বাংলাদেশ থেকে বিগত কয়েক বছর ধরে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। খোজ নিলে জানা যায়, দেশ থেকে বছরে অন্তত ৭০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সরকার কখনো পুঁজি পাচারের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি। করবে কিভাবে সরকার তো জানে এই সব তাদের দলের লোকজনই করছে। আর যারা পাচার করছে, তারা নিজেরা নিচ্ছে সাথে হাসিনাকে একটি বড় অংশ দিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া তার অন্য নেতারাও এর সহযোগী হিসেবে কাজ করছে বলে জানা যায়।

দেশের আর্থিক খাতগুলোতে খোজ নিলেই দেখা যায়, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে ফেরত না দেয়া, দুর্নীতি ও অপরাধের মাধ্যমে বিপুল অর্থ হস্তগত করা এবং শেয়ারবাজারসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের টাকা মেরে দেয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশে সম্প্রতি অনেকেইে আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছে।

বিগত ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে গত ১০ বছরে কয়েক হাজার লোক এসব উপায় অবলম্বন করে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকে বিদেশে এসব টাকা পাচার করে নিজেও সটকে পড়েছেন দেশ থেকে। তবে বড় অংশটি দেশেই থাকছেন এবং লুটপাট অব্যাহত রেখেছে। তবে বিদেশে গড়ে তুলেছেন অর্থের পাহাড়।

কারন তারাও মনে করেন, যদি এই জামিল সরকারের যখন পতন হবে, তখন জনগন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জবাব দিহিতো করতেই হবে। আর এই ভয়েই এই সব আওয়ামীলীগ নেতারা অর্থ বিদেশে পাচার করছেন।

১৯৯৬ ও ২০১০ সালের শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির মূল হোতা হিসেবেই সবাই তাকে চেনে। যার নাম সালমান এফ রহমান। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা এবং বেসরকারি আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান। দেশের শীর্ষ শিল্প গ্রুপ বেক্সিমকোর মালিক হলেও ব্যবসা বাণিজ্য নয়, বরং সরকারি ও ব্যাংকের অর্থ লোপাটের মাধ্যমেই বিলিয়নিয়ার হয়েছেন সালমান। গবেষণা সংস্থা হুরুন গ্লোবালের ২০১৭ সালের তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের শীর্ষ দুই হাজার ধনী ব্যক্তির মধ্যে তার অবস্থান ১৬৮৫তম এবং একইসঙ্গে বাংলাদেশের শীর্ষ ধনীও তিনি। কেবল দুই দফায় শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি থেকেই অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বর্তমানে চলমান ব্যাংক খাতের লুটপাটেও তিনি জড়িত বলে মনে করা হয়। আর তার লুটপাতের সঙ্গি হাসিনার বোন রেহানা। আর এই রেহানাকে ব্যবহার করে দিনের পর দিন অর্থ পাচার করছে তিনি। এই সব অর্থ রাখা হচ্ছে সুইচ ব্যাংকে।

প্রতিষ্ঠান সামিট গ্রুপের মালিক আজিজ খান । তার ভাই অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ফারুক খান আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম কমিটির সদস্য। সরকারের বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন ফারুক খান। দুই ভাই নানান উপায়ে জালিয়াতি করে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করার। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারিতে সামিট গ্রুপের কোম্পানি কেপিসিএল, ওসিএলের মাধ্যমে দেড় হাজার কোটি টাকা লুট করা হয়। বিদেশে অর্থ ও সম্পদ বিনিয়োগের জেরে বিখ্যাত পানামা পেপার্সেও নাম এসেছিল তাদের। ২০১৮ সালে সিঙ্গাপুর সরকারের বরাতে জানা যায় সে দেশের শীর্ষ ৫০ ধনীর মধ্যে আজিজ খান রয়েছেন ৩৪ নম্বরে। সেখানে তার সম্পদের পরিমাণ তখন ছিল প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এতো অর্থ পাচার করা হলেও হাসিনার গায়ে গায়ে থাকে আজিজ খান ও ফারুক খান।

সাইফুল আলম মাসুদ  যিনি কিনা এস আলম গ্রুপের মালিক তিনি। ১০ বছর ধরে সরকারের আনুকূল্য ভোগ করা আরেক শীর্ষ লুটেরা। গত বছর প্রতিষ্ঠানটিার ৩ হাজার ১৭০ কোটি টাকার কর মওকুফ করেছে সরকার। কিন্তু তাদের ঐতিহ্য মূলত লুটপাট ও পুঁজি পাচারের। সিঙ্গাপুরে নানা ধরনের ব্যবসা ও বাণিজ্যিক ভবন ক্রয়ের নিমিত্তে প্রতিষ্ঠানটি দেশ থেকে পাচার করেছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। ২০১৩ সালে এস আলম গ্রুপের নামে দুদক ব্যাংকিং খাত থেকে ১৭ হাজার কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ আনে। কিন্তু পরে আর এ নিয়ে কোনো মামলা এগোয়নি। কারন হাসিনাকে টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করেছেন এই এস আলম গ্রুপের সাইফুল আলম মাসুদ।

আওয়ামীলিগের আর এক ঘনিষ্ঠ ক্রিসেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান এমএ কাদেরসহ তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে এ ছাড়াও জনতা ব্যাংকের ৪ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ফেরত না দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। ভুয়া রপ্তানিসহ নানা প্রতারণার মাধ্যমে ব্যাংক থেকে এ অর্থ নিয়েছেন তারা। ব্যাংক থেকে নেয়া অর্থের বড় অংশই বিভিন্ন দেশে পাচার করেছেন ক্রিসেন্ট গ্রুপের কর্ণধাররা। তবে মাত্র ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাত ও বিদেশে পাচারের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা চালাচ্ছে দুদক। তবে খোজ নিলে জানা যাবে কয়েকশ হাজার কোটি টাকা রপ্তানীর নামে পাচার করেছে তারা।

ল৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা আত্মসাতের পর বিদেশে পাচার করা বিল্ডট্রেড গ্রুপ ও চ্যানেল নাইনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনায়েতুর রহমান কিন্তু সব সময় শুরুতে আওয়ামীলীগের গুনগান গাইতো তার চ্যানেলে। কেবল এবি ব্যাংক থেকেই ২ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন তিনি। ব্যবসা ও মিডিয়া জগতের রহস্যময় নাম এনায়েতুর রহমান বাপ্পী। এ প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ হিসেবে নেয়া অর্থের একটি বড় অংম এনায়েতুর রহমান সিঙ্গাপুরে পাচার করেছেন। দেশে থাকা তার অন্যান্য সম্পদও সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাচ্ছেন। পুঁজি পাচারের অংশ হিসেবেই তিনি পুরো পরিবার সিঙ্গাপুর নিয়ে গেছেন। কিন্তু তাকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করছে না কেউ। শোনা যায়, হাসিনার ছেলে জয়ের সাথে রেয়েছে এনায়েতুর রহমানের ভালো সম্পর্ক।

বিসমিল্লাহ গ্রুপের মালিক খাজা সোলেমান ২০১৩ সালে জনতাসহ কয়েকটি ব্যাংক থেকে প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা তুলে নিয়ে তা বিদেশে পাচার করেন এবং পরিবারসমেত বিদেশ পাড়ি দেন। পাচারকৃত ওই অর্থ দিয়ে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমীরাতের রাজধানী দুবাইয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছেন তারা। তবে এর বাইরে অনেক ব্যবসায়ী পরিবারের অর্থও হাতিয়ে নিয়েছেন তারা। এই অর্থের পরিমাণ এখনো শনাক্ত হয়নি। খাতুন বাজারের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সব মিলিয়ে তাদের বাজারে অন্তত তিন হাজার কোটি টাকার দায় আছে। এসব অর্থের একাংশ লন্ডন ও কানাডায় পাচার করা হয়েছে। আর তার সাথে আওয়ামীলীগ নেতা কাদেরের রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। খাজা সোলেমান একসময় ওবায়েদুর কাদেরের মেয়ে সাপ্লাই দিতো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *