মশিউল হুসাইন খান/ যুক্তরাজ্য
দেশে রাজা হাসিনা। আর তার সৈন্য ছাত্রলীগ। হাসিনা তার সৈন্যদের হুকুম দেয়, আর তার সৈন্যরা পালন করে। যদি সৈন্যরা কোথাও ধরা খেয়ে যায়, তখন আবার তাদের বিচারে কথা বলে লোক চক্ষুর আড়ালও করেন। তাই আমরা যারা সাধারন মানুষ তাদের একটিই প্রশ্ন দেশে কি কার্যত রাজনীতি আছে? তবে খবরের শিরোনাম এখন আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিয়ে প্রতিনিয়ত লেখা হচ্ছে। এই তো কয়েকদিন আগে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অভিযোগ করেছেন ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়নমূলক কাজ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ চাঁদা দাবি করেছেন। প্রশ্ন হলো- মেধা ও মননের সংগঠন ঐতিহ্যবাহী ছাত্রলীগের কেন এই পরিণতি? আর কোন সাহসেই এমন করছে তারা। আমরা সবাই জানি তাদের ক্ষমতা কোথা থেকে আসে। দলের বড় নেতারই যখন তাদেও ছত্রছায়া দিচেছন তখন তাদের অপরাধ করতে বা কি দোষ। কারন তারা তো ভাগ পায় তাই না।
ছাত্রলীগে এখন চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজির কালো মেঘে ডাকা। তারপরও দলটির প্রধান বলছে দলটি ঐতিহ্য ধারন করছে। ছাত্রলীগে কেন এই পচন? ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রব্বানী। তাদের কর্মকান্ডের কারনে ছাত্রলীগের বর্তমান নেতৃত্বের মতো এতো সমালোচনা বুঝিয়ে দেয় কিভাবে ছাত্রলীগ দেশটিকে গ্রাস করছে। তাদের খারাপ কাজ দিন দিন বেড়েই চলেছে।
গতকালও পত্রিকায় খবরের শিরোনাম হয়েছে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির অভিযোগ তুলেছেন। তার অভিযোগ বর্তমানের ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিপুল পরিমাণ চাঁদা দাবি করেছেন। ক্ষমতার শীর্ষ ব্যক্তিত্বের কাছে এই অভিযোগ দেয়ার পর ‘ছাত্রলীগ কমিটির’ এই বিতর্ক শুরু। এতো খাই খাই কেন।
দেশের অবস্থা এখন এমন যে ছাত্রলীগের নেতাদের দেখলে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন সাধারন মানুষ। এই বুঝি বিপদ আসলো! বর্তমান পরিস্থিতি এমন যে চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলদারিত্ব, হুমকি-ধমকি, ঘুষ, দুর্নীতি, চোরাচালান, হত্যা-সন্ত্রাস, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, এমন কোনো অপকর্ম নেই যে ছাত্রলীগের নেতাদের নাম নেই। এমনকি চুরি-ডাকাতি, এসিড নিক্ষেপ, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, মাদক ব্যবসা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের গায়ে হাত তোলা, শিক্ষকদের মারপিট সব খবরের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাদের নাম জড়িয়ে যাচ্ছে। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে তৃর্ণমূল পর্যন্ত একই চিত্র। যেখানে ছাত্রলীগ সেখানে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি আতঙ্ক। গ্রামগঞ্জের দাদি-মা-খালারা এক সময় ‘বর্গী এলো’ ভয় দেখিয়ে ছেলেমেয়েদের ঘুম পাড়াতেন। এখন ছাত্রলীগের নাম শুনলে হয়তো মানুষের মনের এমন অবস্থা হয়। আমরা হয়তো ভুলে যাইনি, ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে দর্জি বিশ্বজিৎকে ছাত্রলীগ নেতাদের কুপিয়ে হত্যার খবরটি। তাই বলি এখন দাদি-মা-খালারা ‘ছাত্রলীগ এলো’ ভয় দেখিয়ে শিশুদের খুম পাড়ান।
ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টালে দেখা যায় ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ ও প্রতিপক্ষের সাথে সংঘর্ষে ১২৫ জন নিহত হয়েছে। সংগঠনটির নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত হয়েছে অন্তত ৬০ জন। ছাত্রলীগের হাতে নিহত হয়েছে প্রতিপক্ষের ১১ জন এবং সাধারণ শিশু ও মানুষ নিহত হয়েছে ৫৪ জন। ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রতিপক্ষ্যের ওপর হামলা, চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তারের জন্য সংঘর্ষ, গোলাগুলি, টেন্ডারবাজি, দখল বাণিজ্য, মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, হলের সিট নিয়ন্ত্রণসহ নানা ইস্যুতে আলোচনায় আসছে সংগঠনটির নাম। পুরান ঢাকায় প্রকাশে দর্জি বিশ্বজিত হত্যাকান্ডের লোমহর্ষক দৃশ্যই শুধু টিভি পর্দায় দেশের মানুষ শুধু দেখেনি; বরিশালে কলেজের অধ্যক্ষকে চ্যাংদোলা করে পানিতে ফেলে দেয়া, রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গায়ে এসিড নিক্ষেপ, জাহাঙ্গীর নগরে ছাত্রী ধর্ষণে সেঞ্চুরি, সিলেটের এমসি কলেজের হোস্টেলে অগ্নিসংযোগ, সারা দেশে ছাত্রলীগের নেতা নামধারীদের নারী ধর্ষণ এবং ধর্ষণের দৃশ্য ধারণ করে ভিডিও প্রচার কাহিনী ফেসবুকে প্রকাশ পেয়েছে। কোথাও কোনো অঘটন ঘটলে ছাত্রলীগের ওই শাখা কমিটি ভেঙে দেয়া হয়; অভিযুক্তকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এটাই যেন অপরাধের শক্তি!
২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে দ্বিতীয়বার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ছাত্রলীগ তার এই অপকর্ম চালাচ্ছেন। তবে এখন সেই পচন ভয়াবহ পর্যায়ে চলে গেছে। সংগঠনটি কার্যত আওয়ামী লীগের কিছু নেতা লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সে সুযোগে সংগঠনটির নেতার অস্ত্রবাজি-চাঁদাবাজির মাধ্যমে বিত্তবৈভবের দিকে ঝুকে পড়েছেন। যার জন্য ছাত্রলীগে মেধা ও মননের জায়গা দখল করে নিয়েছে দুর্বৃত্তায়ন ও লোলুপতা। টেন্ডারবাজি, দখলদারিত্ব আর সন্ত্রাস যেন ছাত্রলীগের নামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। মেধাশূন্য হয়ে পড়ছে সংগঠনটির নেতৃত্ব; অথচ সেখান থেকে ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক নেতৃত্ব বের হয়ে আসার কথা। তাই আমার প্রশ্ন ছাত্রলীগ কি রাজনীতি করছে না। আমাদের মতো মানুষদের ভয় দেখিয়ে ক্ষমতা গ্রহন করছে।