রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষ্যে বিক্ষোভ সমাবেশে গত ৩০ শে ডিসেম্বর ২০২০ ইং তারিখে পুলিশের হামলায় শতাধিক ব্যাক্তি আহত হয়। এই ঘটনার পরপর পুলিশ বাদী হয়ে সেই সময় অনেক অজ্ঞাতনামা ব্যাক্তি ও একই পরিবারের একাধিক ব্যাক্তিকে মামলায় আসামী করলেও পরবর্তী সময়ে এই মামলার আসামী সংখ্যা বেড়েই চলছে। আমাদের সংবাদাদাতার মাধ্যমে জানা যায় যে এই মামলায় এখন একই পরিবারের প্রবাসী সদস্য সহ এখন আসামীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাতে। একই ঘটনা ঘটছে আরো অন্যান্য যত মামলা হয়েছে সেদিনের বিভিন্ন কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে, সেগুলোতেও। অন্যায়ভাবে সবাইকে বিভিন্ন মামলায় ফাসিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে বিএনপির যে অভিযোগ, সেই অভিযোগের সত্যাসত্য যাচাই করবার জন্যে এই প্রতিবেদক রূপনগরের মামলাটির ব্যাপারে অনুসন্ধান চালান।
ঘটনার বিবরণ থেকে জানা যায় যে গত ৩০ শে ডিসেম্বরে ২০২০ইং তারিখে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে মিরপুরের রূপনগরে এক্টি বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশের এক পর্যায়ে পুলিশ অতর্কিতে সমাবেশের উপর টিয়ার গ্যাস ও লাঠি পেটা করতে শুরু করে। যার ফলশ্রুতিতে ঘটনাস্থলেই প্রায় শতাধিক ব্যাক্তি আহত হয় এবং অনেককেই আহত অবস্থায় হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করে এবং এলাকার সাবেক সাংসদ জহির উদ্দিন স্বপনের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত উলিয়ার হোসাইন এবং তাঁর ভাগ্নি-পুত্র এনামুলকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে একই দিনে এই একই মামলার এজাহারে উলিয়ারের প্রবাসী ভাগনে মোঃ শহীদুল ইসলামকেও এই মামলার আসামী করা হয়। এই ছাড়াও যুক্তরাজ্য প্রবাসী আরেক ব্যাক্তি মোঃ মইন উদ্দিন চৌধুরীকেও আসামী করা হয়। এদের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে এরা কেউ-ই সেদিন বাংলাদেশে ছিলেননা।
পুলিশের সূত্রে জানা গেছে অজ্ঞাতনামা আসামীর নাম আগের থেকেই এই মামলায় থাকার ফলশ্রুতিতে পুলিশ পরবর্তী সময়ে তাদের ইচ্ছেমত আসামীর নাম বসিয়ে নিচ্ছে এবং ক্রমাগত বিএনপি সমর্থক যাকে-তাকে বিশেষ করে উলিয়ার হোসাইনের পরিবারকে হয়রানি করছে।
সাম্প্রতিক সময়ে এই মামলায় উলিয়ারের আরেক ভাই আওলাদ হোসাইনকেও এই মামলার আসামী করা হয় যিনি বর্তমানে জামিনে রয়েছেন বলে জানা যায়। এদিকে উলিয়ার হোসাইন এবং এনামুল হক দুজনেই এই মামলায় জামিন পেয়েছেন। কিন্তু উলিয়ার আর আওলাদের ভাগ্নে শহীদুলের তিন ভাইকেও পরবর্তীতে মামলায় জড়ানো হয় – মোঃ মেজবাহ উল ইসলাম, মোঃ রফিকুল ইসলাম এবং শফিকুল ইসলামকে আসামী দেখিয়ে গ্রেফতার করা হয়, যাদের কেউই এখনো জামিন পাননি। একই পরিবারের এত সংখ্যক ব্যাক্তিকে একই মামলায় আটক কিংবা আসামী করায় শুধু রূপনগর নয়, সারা বাংলাদেশেই এই সংবাদ নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। এই ঘটনা সবক্ষেত্রেই ঘটছে। যাদের টার্গেট করা হচ্ছে, তাদের পুরো পরিবারের বিরূদ্ধেই পুলিশ দিয়ে আক্রমণ করা হচ্ছে বলে জানান এলাকার একজন উঠতি বিএনপি নেতা। গায়েবী মামলার অভিযোগ গত কয়েক বছর ধরে তীব্র হয়েছে এই সরকারের বিরূদ্ধে।
এই ব্যাপারে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সিনিয়ার নেতা রুহুল কবির রিজভী’র কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘অবস্থা এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে এই আম্মলায় আমাদের চেয়ার পার্সন দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কিংবা দেশ নায়েক তারেক রহমানকেও আসামী করা হলে আসলে আমরা অবাক হবো না। সরকার তার পেটোয়া পুলিশ বাহিনীকে নিয়ে যা করছে তা আসলে রাষ্ট্র পরিচালনা মনে হয়না। মনে হয় বাংলাদেশটা একটা নরকে পরিণত হয়েছে’
এই ব্যাপারে রূপনগর থানায় যোগাযোগ করা হলে থানার কোনো কর্মকর্তাই কথা বলতে রাজী হন নাই। তবে এই মামলাকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মামলা বলেই আখ্যায়িত করছেন এলাকাবাসী থেকে শুরু করে সকলেই।